তোমাতে করিবো বাস পর্ব -৪৪+৪৫

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৪৪
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনি যে বাবা মায়ের খুব আদরের এবং আদরে আদরে গড়ে তোলা বাঁদরনি মেয়ে তা খুব ভাল ভাবেই জানতেন বাপ্পির মা।
আর পাঁচটা শাশুড়ির মতন খুঁত খুঁজলেন না তিনি,তিনি শুধু দেখলেন তার আদরের ছেলে এই মেয়েটির ঠিক কোন গুণটি দেখে ঘরে তুলতে চাইছে।খুঁজতে গিয়ে দেখলেন তটিনির কোনো গুণ না,তাকে মনে ধরেছে বলেই বাপ্পি তাকে বিয়ে করতে রাজি!
তটিনিকে ঠিক পছন্দ কিংবা অপছন্দ নয়!তিনি পুরোটাই ছেড়ে দিয়েছিলেন নিজের ছেলের উপর।সংসার টা তো সে করবে।
পাড়া প্রতিবেশী থেকে প্রায় কম বেশি সব খবরই তিনি জেনে গেছিলেন!তটিনি কি কি কাজ পারে আর কি পারেনা।
জামাকাপড় ধোয়ার কথা সবার আগে জেনেছিলেন। আর তাই আজ জেনেবুঝেই কাজটা তিনি ওর ঘাড়ে সঁপেছেন।নিজের জন্য না হোক,স্বামীর জন্য না হোক অন্তত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তো এই ছোট ছোট কাজগুলো শেখা জরুরি।

বাপ্পি ভিডিও কলে তটিনিকে শিখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে ধুইতে হয় জামাকাপড়। যদিও সে নিজেও জানেনা।সবসময় চাকরবাকররাই তার জামাকাপড় ধুয়ে দিতো।কে জানতো তার এই না জানা এই সময়ে এসে ভারী পড়বে!
যাই হোক!দুই সুতায় তালমিল পাকিয়ে সে তটিনিকে দিয়ে তার সব জামা ধোয়াতে সক্ষম হয়েছে।
তটিনি কপালের ঘাম মুছতে মুছতে গিয়ে ছাদেও মেলে দিচ্ছে।এই কড়া রোদে মাথা ঘুরছে তটিনির।জীবনে এমন কড়া রোদে আধ ঘন্টার মতন এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জামাকাপড় মেলতে হয়নি তাকে।
উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসে উচ্চবিত্ত পরিবারে ঢুকে জামাকাপড় ধুইতে হবে এটা তটিনি কখনও ভাবেনি।কপালের ঘাম মুছতে গিয়ে যখন সে বাপ্পির শেষ শার্টটা হাতে নিলো তখন তার মনে আসলো একদিন সে আসিফকে বলেছিল’ভাইয়া আপনি আমায় বিয়ে করেন,আপনার সব জামাকাপড় ধোয়ার দায়িত্ব কেবল আমার।শুধু একবার বিয়ে করেন।মাথায় করে রাখবো’

সেই মানুষটা বিয়ে করেনি,সেই কথাগুলোর হ্যাঁ বা না জবাব ও কখনও দেয়নি।তারপর অন্য একজন বিয়ে করলো তাকে।তাহলে সে কেন এই মানুষটাকে মাথায় করে রাখছেনা?এই মানুষটার জামাকাপড় ধুতে তার এত কিসের ক্লান্তি?

সবগুলো রোদে দিয়ে খালি বালতিটা নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে চোখের সামনেটা কিরকম যেন ঝাপসা হয়ে আসলো।মূহুর্তেই চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসে তার।
যখন সে চোখ খুললো আশেপাশে মানুষের ভীড় চোখে পড়লেও সবার আগে যার চোখজোড়া ঝলকে উঠতে দেখেছে, সে মানুষটা বাপ্পি।
সে কিছুই বললোনা।মুখটা চিন্তিত রেখে তটিনির দিকে তাকিয়ে আছে কেবল।

পাশেই দাদি বসে হিসেব করছেন বিয়ের কতদিন হলো,এত জলদি গর্ভবতী হবার কারণ তার মাথা দিয়ে ঢুকছেই না।পরে ভাবছেন বিয়ের আগে ওদের দুজনের কিছু হয়েছে কিনা।তা নাহলে এত জলদি প্রেগন্যান্ট হওয়া প্রায় অসম্ভব।
দূরে বাপ্পির মা মনে মনে আফসোস করছেন।আজ তার জন্য তটিনির এমনটা হলো,মনে মনে ভয় ও পাচ্ছেন বাপ্পি আর ওর বাবা না জানি তাকেই দোষারোপ করেন এসবের জন্য।

তটিনি উঠে বসতেই বাপ্পির বাবা হনহনিয়ে ওর সামনে এসে বললেন,’এবার বলো তো মা!ঠিক কি হয়েছিল?’

‘আমি ছাদে জামাকাপড় দিয়ে নামতে গেলাম,ওমনি মাথা ঘুরে উঠে।তারপর তো আর কিছু মনে নেই’

এবার বাপ্পির বাবা বাপ্পির মায়ের দিকে তাকালেন।চোখটা রাঙিয়ে ওখান থেকে চলে গেলেন তৎক্ষনাৎ।বাপ্পির মা ও একটু পর নিরুদ্দেশ হলেন সেই জায়গা থেকে।
দাদি তখনও গণনা করছিলেন।করতে করতেই তিনিও রুম ছাড়লেন।বাপ্পি সবাই চলে যাওয়ায় গিয়ে দরজা লাগিয়ে আবার তটিনির কাছে এসে বললো,’সকালে তো আমার সামনেই বাস্তা করলা।তাহলে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেলে কেন?রোদে বেশিক্ষণ ছিলে?’

‘হ্যাঁ,অনেক চিন্তাভাবনা করছিলাম ঐ রোদে দাঁড়িয়েই আর তাই হয়ত!’

‘এদিকে বাকিরা যা নয় তা ভাবছিল।আমি তো বিপদে পড়েছিলাম।বিয়ের অল্প কদিনে বউ কিভাবে প্রেগন্যান্ট,সেটা কিভাবেই বা ডিসকাস করবো তা নিয়ে সংশয়ে ছিলাম।’

‘এগুলা ভাবার কি আছে।মাথা কি শুধু গর্ভবতী হলেই ঘোরে?’

‘নতুন বউয়ের মাথা ঘুরানো আলাদা জিনিস।ও তুমি বুঝবেনা।শুয়ে থাকো।
যাক ভালই,তোমার মাথা ঘুরানো নিয়ে আমার অফিস হাফ টাইমে ছুটি নিতে পারলাম।এবার তোমার সাথে সাথে আমিও আরাম দিবো খানিক’
———
আসিফের বন্ধু রিমনের পরিবার কেমন যেন!রিনি সালাম দিলো কিন্তু কেউ সালাম নিলো না।কেউ বলতে তখন আসিফের সেই বন্ধু রিমনের মা আর বোনই ছিলেন।বাকিরা বাহিরে!
রিনি সালাম দিয়ে অনেকক্ষণ দাঁত কেলিয়ে ছিল তারপরেও তাদের কোনো নড়বড় না দেখে ওখান থেকে চলে যায় আসিফের পিছু পিছু।
আসিফ তাকে নিয়ে সেই কাঙ্ক্ষিত রুমে চলে আসে।এর আগে এখানে আরেকটা দম্পতি ছিল।তাদের আবার চার বছরের একটা দুষ্টু ছেলে ছিল।ছেলেটা হাসির বিষয় হলেও কাঁদতো,কাঁদার বিষয় হলে আরও বেশি কাঁদতো।মোট কথা সে কান্না ছাড়া কিছু জানতোনা।সারাদিন চব্বিশ ঘন্টা সে কাঁদতেই থাকতো। এমন হয়ে গেছিলো যে এই চারজনের মাথা খারাপ হয়ে যেতো ওর কান্নার আওয়াজে।মা বাবাও কেমন!ছেলেকে কাঁদিয়ে রাখতো।শাসন করতোনা।বাচ্চা মানুষ কাঁদবেই,কিন্তু এই বাচ্চা সারাক্ষণ কাঁদতো।শেষে বাধ্য হয়ে তারা বাড়িওয়ালার কাছে অভিযোগ করে।এখন সেই দম্পতি উপরের তলায় থাকে।

খাট,টেবিল চেয়ার সবই আছে।পুরোনো,বেশ পুরোনো।এগুলা নাকি রিমনদের।যাই হোক আসিফ খাটের উপর ব্যাগটা রেখে বসতেই খাটটা কেমন নড়ে উঠলো।রিনি ভয়ে আর বসলোনা।কে জানে যদি ধপ করে ভেঙ্গে যায়?

রিনির গলা শুকিয়ে আছে।একটু পানির জন্য বুকের ভেতরটা হাঁশপাশ করছে।বাহিরে বেরিয়ে টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে খেয়ে পাশে তাকাতেই সে দেখলো রিমনের ছোট বোন রাইদা ওকে দেখছে।মেয়েটার বয়স সতেরো/আঠারো হবে।গায়ের পোশাক আশাকে ভদ্রই মনে হয়।সে রিনিকে ভাল করে দেখছিল।রিনি ভাবছে তার পোশাক হয়ত ঠিক নেই।তাই তাড়াহুড়া করে গ্লাসটা রেখে সে নিজের গায়ের দিকে তাকায়।সবই তো ঠিক আছে তবে এভাবে দেখার কি আছে!
—–
‘আম্মা আমার মনে হয় এরা বিবাহিত না।দেখেছো মেয়েটা কিরকম ছোট?ছেলেটাকেও তো অনেক কম বয়সী লাগে!এরা জামাই বউ হয় কি করে?আমাদের আর বাড়িওয়ালাকে ঠকাচ্ছেনা তো?রিমন ভাইয়া ভাল করে খোঁজ নিয়েছে?’

‘ঠিক বলেছিস।আমারও তাই মনে হচ্ছে।আচ্ছা রিমন আসুক ‘

রিনি আসিফের জন্য ও পানি নিয়ে এসেছে।এসে দেখে আসিফ তোষক নিচে বিছিয়ে দিচ্ছে।রিনিকে দেখে জানালো এই খাট শোয়ার যোগ্য না।দুইজনে বসলেই ধপাস করে ভেঙ্গে যাবে।তাই আজ নিচেই শুবে তারা।

সে সময় রিমনের বোন এসেছিল দেখতে।নিচে তোষক পাততে দেখে সে আবার এক দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে বললো,’মা জানো? এরা আসলেই বিয়ে করেনি।দেখলাম আলাদা বিছানা পাততেছে!সিনেমার মতন।একজন খাটে শোবে আরেকজন নিচে!তারপর এক বৃষ্টির দিনে মেয়েটার শীত করবে।ছেলেটা তাকে জড়িয়ে ধরবে তারপর গালতিসে মিসটেক হয়ে যাবে’

রিমনের মা ইয়া বড় বড় চোখ করে কোমড়ে আঁচল গুজে হনহনিয়ে চলে আসলেন ওখানে।ততক্ষণে আসিফ বিছানা পেতে রিনিকে নিয়ে বসেও পড়েছে ওখানে।

ওদের দুজনকে রণচণ্ডী রুপ ধারণ করতে দেখে সে বললো,’কি ব্যাপার আন্টি?কিছু হয়েছে নাকি?’

‘নিচে বিছানা পাতলে কেন?’

‘ঐ আসলে আপনাদের খাট তো একটু নড়বড়ে!’

‘কিসের নড়বড়ে?তোমাদের আগে যে দম্পতি রয়ে গেলো, তারা তো বেশ ঘুমিয়েছে’

‘আমরা তো পারবোনা।খাট ধরেই দেখুন!মনে হয় এক্ষুনি ভেঙ্গে পড়বে’

আসিফের কথায় ষোলআনা সন্দেহ জাগলো রিমনের মা মিসেস মোস্তফার মনে।
তাই তিনি কাছে গিয়ে ধপ করে খাটে বসলেন,রাইদার ও সন্দেহ হচ্ছিল,আর তাই সেও এসে মায়ের পাশে বসলো।
খাটটা ভাঙ্গতে পাঁচ সেকেন্ড ও লাগলোনা।ধপাস করে বিকট আওয়াজে মা মেয়ে নিচে পড়ে গেছে।আপাতত হয়ে আছে চিটপটাং।

আসিফ আর রিনি ক্যাবলার মতন ওদের পড়ে যাওয়া দেখলো।

রিনি ওমনি ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,’এককারি 😂’

মিসেস মোস্তফা শুয়ে শুয়ে রিনির দিকে মাথা তুলে চেয়ে বললেন,”এককারি মানে কি?এই মেয়ে তুমি কি হাসলে?’

আসিফ থতমত খেয়ে বললো,’এককারি মানে একদমই ঠিক হয়নি এভাবে পড়ে যাওয়া।আপনি ভুল ভাবছেন আন্টি’

চলবে♥তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৪৫
লেখনীতে-আফনান লারা
.
দমফাটা হাসি রোধ করে,রিনি কাছে এসে মিসেস মোস্তফার হাত ধরলো তাকে তোলার জন্য।তিনি উঠতে চাইলেন,রিনিও উঠাতে চাইলো কিন্তু তিনি উঠতে পারলেন না।ওজন বেশি না তার মতে।এই সত্তর পঁচাত্তরের কাছাকাছি।
রিনি টানতে টানতে কাহিল হয়ে যাবার পরেও উঠাতে না পেরে আসিফের দিকে তাকায়।আসিফ চায়নি হাত ধরতে,কিন্তু এখন এমন পরিস্থিতি যে সে না উঠালে তিনি উঠতে পারবেননা।
তাই বাধ্য হয়ে উঠে এসে সে ওনাকে ধরে তুললো।আসিফের খুব একটা কষ্ট হয়নি তবে হাতের কব্জি গুলা কেবল ম্যাচম্যাচ করছে,যেন মটর করে হাঁড় ভেঙ্গে যাবে কিছুক্ষণ পরই!
এই মহিলা বসার পরই তো খাট ভেঙ্গে যাবার কথা।তা নাহয়ে রাইদা বসার পরই ভাঙ্গলো!
আসিফ আর রিনি দেয়াল ঘেঁষে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো ওনাদের দিকে চেয়ে।ওনারাও আর কিছু বললেননা।পড়ে থাকা ভাঙ্গা খাটটা দেখতে দেখতে চলে গেলেন দুজনে।রিনি দরজা লাগিয়ে আসিফের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠলো।আসিফ ঐ জায়গাতে দাঁড়িয়ে থেকে রিনিকে হাসতে দেখছে।মেয়েটা এ কদিনে হাসি প্রায় ভুলেই গেছিলো।ওকে ওরকম ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিনি হাসি থামিয়ে কানের পাশের চুলগুলোকে কানের পেছনে নিয়ে নিজের ব্যাগটা খোলে।ভেতর থোকে তোয়ালে নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে।আসিফ ভাবছে এই ভরদুপুরে তারা খাবে কোথায়!
এই রিনা খান তো খাবার দিবেনা!হাবভাবে বেশ বোঝা যাচ্ছে।তাছাড়া তাদের থেকে আশা করাটা এক প্রকার ছোটলোকি। এই ভেবে মানিব্যাগটা নিয়ে আসিফ বেরিয়ে গেলো পাশের একটা হোটেল থেকে দুপুরের খাবার কিনে আনতে।
রিনি মুখ ধুয়ে বেরিয়ে আসিফকে না দেখে নিচে পাতানো তোষকে বসে পড়ে।বাহিরে বের হলেই ঐ দুজন গলা চেপে ধরবে তা বুঝতে পেরে সে আর বাহিরে গেলোনা,এখানে বসেই আসিফের অপেক্ষা করতে লাগলো।তাদের এই রুমটাও দেখতে বেশ পুরোনো।এত পুরোনো দালানের ভাড়া এত বেশি কেন!তাও সাবলেট!
দেয়ালে আঁকিবুকি কত কি!
এতসব দেখতে দেখতে রিনির কানে আসলো সেই বাচ্চাটির কান্নার আওয়াজ।কি সাংগাতিক!
উপরের তলা থেকে এত জোরে আওয়াজ আসছে।আর সেই বাচ্চা এখন এই মূহুর্তে এখানে থাকলে কানের পর্দা তো ফেটে যাবার কথা!ভাগ্য ভাল আমাদের সাথে ওরা সাবলেটে থাকে নাই।নাহয় বধির হবার আশঙ্কা ছিল।
——-
আসার পথে কাছেই বেশ কয়েকটা হোটেল দেখতে পেয়েছিল আসিফ।এখন সেদিকটায় যাচ্ছে।অনেক ভেবেচিন্তে সারির প্রথম হোটেলটাতেই ঢোকে।
সে গিয়ে অর্ডার দেয় এক পিস চিকেন আর এক পিস তেলাপিয়া মাছ,সাথে দুই প্লেট ভাত প্যাকেট করে দিতে বলে।তার গড়গড় করে বলে যাওয়া অর্ডারটা ওয়েটার শুনলো চুপচাপ, তারপর গলার গামছাটা তুলে কপাল মুছতে মুছতে বললো,’আমরা প্যাকেট দিই না’

‘সেকি!কেন?’

‘ভীড় দেখছেন?এই ভীড়েই সব মাছ তরকারি শেষ হয়।তাহলে প্যাকেট দিয়ে বারতি খরচ কেন রাখবো? ‘

‘সেকি। এ কেমন নিয়ম!জীবনে তো শুনি নাই’

‘তো এখন শুনে নিন’

‘আচ্ছা আমি নাহয় সামনের দিকে গিয়ে দেখি’

‘যান যান।
সব এক নৌকার মাঝি!কেউ প্যাকেট দিবেনা।খেলে এখানেই বসে খেতে হবে’

ওয়েটারের কথা আসিফ কানে তুললোনা।এক এক করে সারির সবকয়টা হোটেলে সে ঘুরলো।সবার এক কথা।আসলে তাদের কথা সত্য।হোটেল গুলোতে উপচে পড়া ভীড়।

মাথা চুলকে ফোন হাতে নেয় আসিফ।তারপর মনে আসে রিনির ফোন নেই।তাকে কলটা দেবেই বা কি করে।
তাই আবার সোজা হাঁটা ধরলো সে।

বাসায় ফিরে দরজায় হাত রেখে বুঝলো ইতোমধ্যে কেউ দরজা লক করে ফেলেছে।তাই বাধ্য হয়ে কলিংবেলে চাপ দিয়েছে।কিন্তু ঐ কিপটা আজগরের বাড়ি বলে কথা।কলিংবেল থাকা স্বপ্নের ব্যাপার হলেও দূ্রভাগ্যবশত সেটি নষ্ট।
দাঁতে দাঁত চেপে দরজার কড়া নাড়তে থাকে আসিফ।
রাইদা বেশ শুনতে পেয়েছে সেই আওয়াজ। কিন্তু সে খুলবেনা।কারণ এই দরজার কড়া নাড়ার আওয়াজ তার পরিচিত না।সুতরাং সে খুলবেনা।

রিনি শুনে সে ছুটে আসে খোলার জন্য।এসে খুলতেই দেখে আসিফ ওপারে।সে ভেতরে আসতে আসতে বললো,’দরজা খুলিসনি কেন এতক্ষণ? ‘

‘আঁই তো হবে হুইনছি এতক্ষণ হুনি ন।আর এই মাইয়া তো মনে হয় ভয়রা’

রাইদা চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকলো।রিনির কথা না বুঝলেও ভয়রার মানেটা সে ঠিক বুঝেছে।দরজা খোলা তার অপরাধ বলে আপাতত চুপ থাকলো।ভয়রা বলার পালটা জবাব সে পরে একদিন দিয়ে দিবে।

আসিফ ভেতরের রুমে এসে রিনিকে বললো তৈরি হয়ে নিতে।তারপর হোটেলে গিয়ে খাবে।রিনি ভ্রু কুঁচকে বললো এখানে নিয়ে আসলো পারতো সে।হোটোলে বসে খেতে ভাল লাগেনা তার।

‘চেয়েছিলাম।কিন্তু ওরা দিবেনা,ওদের নিয়ম নাই’

রিনি মাথা নাড়িয়ে গায়ে ওড়নটা টেনে আসিফের সাথে চললো।ওদের দুজনকে বের হতে দেখে রিমনের মা ফোন নিয়ে কল করলেন আজগর সাহেবকে।

আজগর সাহেনের ফ্ল্যাট—

১৯৭৯সালের একটা ল্যান্ডলাইন টেলিফোন বাজছো।তার তারগুলোতে কামড়াকামড়ির দাগ।দাগগুলো আজগর সাহেবেরই।ছোট কালে খুব বদমাইশ ছিলেন তিনি।সব রেখে এই ল্যান্ডলাইনটাই কামড়াতেন।যাই হোক এতক্ষণ তিনি বাজার থেকে আনা ছোট ইলিশমাছ কাটা দেখছিলেন।বড় ইলিশের যে দাম!
অবশ্য বড় ইলিশ কেনার টাকা তার পকেটে থাকলেও তিনি কিনবেন না।কিপটা কেন বলা হয় তাকে!

মাছ কাটছেন তার স্ত্রী জাকিয়া।ফোনের আওয়াজ পেয়ে উঠে এসে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মিসেস মোস্তফা ফিসফিস করে বললেন,’স্যার জলদি আমাদের বাসায় আসেন’

‘আসবোনা।আমি মাছ কাটা দেখতেছি।আসলে কি লাভ?মাসের ভাড়া দিবেন?’

‘না তো’

‘তবে কেন আসবো?সিঁড়ি বেয়ে নামলে কত শক্তি খরচ হয় জানেন?’

‘সিঁড়ি বেয়ে উঠলে শক্তি খরচ হয় জানতাম।সিঁড়ি বেয়ে নামলে শক্তি খরচ হয় তা নতুন শুনলাম।যাই হোক,একটু দ্রুত আসুন।গোপন বৈঠক আছে’

‘এত কষ্ট করে চারতলা থেকে দোতলায় আসবো।খিধে পাবেনা?সেই তো এসে আবার আমার বাসার বিসকুট খেয়ে পেট ভরাতে হবে’

‘ভাইরে ভাই ঠিক আছে। আমি নাস্তা করাবো।আপনি জলদি আসুন’
——–
হোটেলে রিনি বাদে বাকি সব পুরুষ মানুষ।রিনি সামনে ভাত রেখে ও খেতে পারছেনা।তার অস্বস্তি বোধ হচ্ছে ভীষণ।এর আগে এত এত মানুষের ভীড়ে সে খায়নি কখনও।এদিকে আসিফ গপাগপ গিলে যাচ্ছে।
খাবার সময় সে আশেপাশে তাকায়না,কিন্তু রিনির খাবারের দিক লক্ষ রাখতে হবে ভেবে একবার সে মাথা তুলে তাকালো।তাকিয়ে দেখলো ভাত যতটা দিয়েছিল ততটাই আছে।সে ছুঁয়েও দেখেনি।বারবার মুখে ওড়না চেপে ডানে বামে তাকাচ্ছে।

‘কি হলো রিনি?খাচ্ছিস না কেন?’

‘শরম লাগে,এই বেডাগুন কেইন্না করি রেনি রইছে’

আসিফ ডান পাশে তাকিয়ে দেখলো মধ্য বয়সী একজন আঙ্কেল রিনির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নোহারী খাচ্ছেন।এমন ভাবে খাচ্ছেন যেন হাঁড়টা গরুর না,রিনির’

আসিফ অমনি এক ধমক দিয়ে বললো,’কি দেখেন চাচা?আরেকটা বিয়ে করবেন?করেন!কাবিন এক কোটি দিতে হবে।পারবেন?’

লোকটা দাঁত কেলিয়ে বললো,’কেন পারমুনা।অবশ্যই পারমু।আমার চাউলের ব্যবসা থেইকা প্রতি মাসেই আসে পঞ্চাশ লাখ।’

‘আহা চাচা, পুরা কথা তো শুনবেন।আমার বউরে এক কোটি টাকা কাবিন দিয়ে বিয়ে করে সাথে আবার আমাকেও নিয়ে যেতে হবে।এই মেয়েটা আবার আমাকে ছাড়া থাকতে পারেনা,ঘুমাতে পারেনা।বাল্যকালের বিবাহ তো!আমি নাহয় আপনাদের মাঝে শুবো।শর্তে রাজি হলে বিয়ে করতে পারেন।’
———
তটিনি বাহিরে গিয়ে বাপ্পির মাকে লক্ষ করছে।তিনি রেগে আগুন হয়ে আছেন তার কারণ হলো বাপ্পির বাবা ওনাকে খুব বকেছেন তটিনিকে দিয়ে জামাকাপড় ধুইয়েছে বলে।
তটিনি ওনাকে বারবার দেখছে কারণ সে মাফ চাইবে।জামাকাপড় ধুইতে দেয়া কোনো অপরাধ না।বরং সে কাজটা পারেনা এটা তার অপরাধ।কিন্তু বাপ্পির বাবা মাঝ দিয়ে ওনাকে বকতে গেলেন কেন সেটাই মাথায় ঢোকেনা ওর।

তটিনিকে অনেকক্ষণ ধরে ডাইনিংয়ের পাশের পিলারটা জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন উনি।সে নড়ছেইনা।এদিকে ওর এভাবে তাকিয়ে থাকা তাকে রান্নায় মন বসাতে দিচ্ছেনা কিছুতেই।শেষে ধমক দিয়ে বললেন,’কি সমস্যা? ‘

‘আন্টি আমি দুঃখিত’

‘দুঃখিত হতেই হবে।নিজের ছেলের বউয়ের দোষে আমাকে বকা শুনতে হবে তা জানলে দামড়া ছেলেটাকে দামড়াই রেখে দিতাম।খাল কেটে কুমির আনতাম না’
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here