#তোমাতেই_ইতি
#আয়েশা
পর্ব-১০
পূরণ ভাইয়ের কোনও খোঁজ নেই গত দুদিন যাবত।ফুফুকে জিজ্ঞেস করলেই বলে একটা দরকারী কাজে গেছে।
ইচ্ছের সব বিরক্ত বিরক্ত লাগছে,কি এমন কাজ তার?ইচ্ছের জানামতে পূরণ ভাই কোনও কাজই করেনা।আর করলেও ইচ্ছে বুঝি জানতোনা!সব সময় বিছানা আর বালিশের সাথে সম্পর্ক তার।মাঝে মধ্যে বন্ধুদের সাথে হালকা আড্ডা আর ভার্সিটিতে আনাগোনা।এর বেশি কিছু করে বলে ইচ্ছে কোনওদিন শুনেও নি।
সেই যে ইচ্ছেকে দেখতে এসেছিল,আর কথা হয়নি।অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিল একটা কল করবে কিন্তু কি বলবে না বলবে ভেবে পাচ্ছে না।আসলে ভেবে পাওয়া টেবে পাওয়া কিছুনা।ইচ্ছের ভয় করছে প্রচুর ভয় করছে।কারণ প্রত্যেকবার এমন ভাল কিছু হওয়ার পর ইচ্ছের সাথে খারাপ কিছুই হয়।ইচ্ছে সেদিনের সেই মুহুর্ত টার পর আর খারাপ কিছু হোক সেটা চায়না।
এই দুদিন ইচ্ছে খোপাটা খুলেনি।ইচ্ছের রোজ গোসল করা হয় নিয়ম মাফিক।কিন্তু পরদিন জ্বরের জন্য গোসল টা মিস গেলেও এর পরের দিন জ্বর ছেড়ে দেয়া গায়ে একটা জ্বরের গন্ধ লেগে আছে।ঘামছে শুধু তাই না চাইলেও গোসল টা করা জরুরী হয়ে গিয়েছিল।তবুও সে খোপাটা খুলেনি।পরম যত্নে সে একটু একটু করে মাথায় পানি ঢেলেছিল।যেন কোনও প্রকারেই না খুলে।তারপর খুব যত্নে মাথার পানি মুছে ছিল।যদিও খোপা থেকে টুপটাপ পানি ঝরে জামার পেছনের দিকটা ভিজে যাচ্ছিলো,স্বর্নাপুরা তো মজা নিতে এক পা ও পিছে হটেনি।
আজ তো খুলতেই হবে।বিকেলেই মা রাগারাগি করল চুল কেন আচড়াচ্ছে না।কেমন সন্ন্যাসী দের মত লাগছে নাকি!
তাছাড়া আজ ইচ্ছের জন্মদিন,আজ আর না খুলে উপায় নেই।বাবাকে অনেক করে বুঝিয়েছে বাবা ছোট করে একটা কেক নিয়ে আসো আর ঘরে ঘরে বিরিয়ানি রান্না করো হালকা ডেকোরেট কর এতেই হবে কিন্তু না বাবা বলে স্বর্নাপুরা আছে এমনি এমনি কি আর করা যায় নাকি।ওরা তো একটু আনন্দ পাবে বলে বসে আছে।
আগের বারের চেয়ে এবার একটু বেশিই উৎসাহ দেখাচ্ছে মা!কেন কে জানে?
একটু পর পর এসে বলে যাচ্ছে,
-ইচ্ছে একটু পার্লারে যাবি?ফেসিয়াল টা নাহয় করে আয়!
তোর মত মেয়েরা কত সাজগোজ করে।
ইচ্ছের সব অসহ্য অসহ্য লাগছে।মনে মনে বলছে, আমার বরের আমাকে পেত্নীর বেশেও ভাল লাগে,তোমার এত টেনশান নিতে হবে না মা!
ওদিকে তায়েফ ভাইয়ের থেকে ফোন নিয়ে পূরণের নাম্বারে কল করলো ইচ্ছে।নিজের ফোন থেকে বারকয়েক কল করেও যখন ধরছিলো না ইচ্ছের কান্না পেল খুব।পরে স্বর্নাপু তায়েফ ভাইকে বলে ফোনটা এনে দিল।
রিং হচ্ছে আর ইচ্ছের বুকের ভেতর হাসফাস হচ্ছে।আশ্চর্য এখানে সেই গানটা সেট করে রাখা!কিভাবে পারে রাতদিন চব্বিশ ঘন্টা এই গানটা শুনতে?
রিসিভ করতেই ইচ্ছের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসার সাথে গলাটাও যেন জমে গেল।কথাও বেরোচ্ছে না,সব আটকে আসছে।
-হ্যালো!
-হ্যালো!হ্যালো!তায়েফ ভাই?
-আমি বলছি।
ওদিক থেকেও চুপ এদিক থেকেও চুপ।যেন চারপাশে সুনশান নিরবতা বিরাজ করছে। শুধু ফোনের এপাশ আর ওপাশ থেকে নিঃশ্বাস আদান প্রদান হচ্ছে!
ইচ্ছেই না থাকতে পেরে বলে উঠল,
-আপনি কি আজও বাসায় আসবেন না?
শুন আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে,তাই আসতে পারছি না।পারলে সত্যিই আসতাম।
ইচ্ছের মুখ দিয়ে আর কথা বেরোচ্ছে না।এর মধ্যেই টুপটাপ কয়েকটা বড় বড় অশ্রুর ফোটা গড়িয়ে পড়ল।
এত মন খারাপ করে থাকতে হবে না।গিফট পৌছে যাবে।ডেলিভারি ম্যান গেলেই রিসিভ করে নিবি।আর একটা চিরকুট ও আছে বুঝলি।সেখানে যা যা আছে, লক্ষী মেয়ের মত সব শুনবি।
ইচ্ছের কিচ্ছু বলতে ইচ্ছে করছে না।মনে মনে বকা তো আছেই।
লাগবেনা আমার কোনও কচুর গিফট। আপনি আসলেই হবে।আমার যে কোনও গিফট ই চাই না।বিশ্বাস করুন পূরণ ভাই আপনি যদি একবার আপনাকে আমার করে দেন আমার আর কিচ্ছু চাই না!
গোসল করার সময় ওই লাক্সের সুগন্ধি যুক্ত সাবান টাও লাগবে না।
কাপড় কাচার সাবানটা গায়ে মেখে নেব।ভাতের চালগুলো এনে দিলেই হবে শুধু।
খালি একটু নুন দিলে হবে কারণ ইচ্ছে নুন ছাড়া খেতে পারে না।
আবার মনে মনে বলে উঠে না না না,নুন ও লাগবেনা।খালি আপনি এসে সামনে বসে থাকবেন।আপনার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ইচ্ছে দু দু প্লেট নুন ছাড়া সাদা ভাত খেয়ে নিতে পারবে।
পুরোটা রাত বিছানা ছাড়া ছাদে কাটিয়ে দিতে পারবে যদি সেদিন কার মত ইচ্ছের কোলে মাথা রেখে ঘুমান।
আর পুরো মাসে একবার করে মাথায় তেল দিয়ে চুল বেধে দিলেও হবে ইচ্ছে পুরো একমাস সেটা টিকিয়ে রাখতে পারবে।
কি আজগুবি কথাবার্তা সব।আজগুবি হলে আজগুবি পূরণ ভাইয়ের জন্য ইচ্ছে সব পারবে।প্রেমে পড়লে সব এমন রঙিন রঙিন ই মনে হয় বুঝি?
আর না পড়লে সব রঙহীন ধূসর!
-ইচ্ছে কিছুই তো বলছিস না! আমি কি রাখবো?
-রাখুন না, আমি কি বলেছি নাকি রাখতে হবে না!
পূরণ ভাই উচ্চস্বরে হেসে উঠতেই ইচ্ছের সব মন খারাপি উদাও হয়ে গেল।যেন সে এই মুহুর্তে সব দেখতে পাচ্ছে পূরণ ভাইয়ের হাসি মাখা মুখটাও!
আনমোনে কখন নিজের মুখে হাসি আসলো ইচ্ছে বুঝতেই পারেনি!
রেগে আছিস?রাগলে তোকে কেমন দেখায় জানিস?হিসু কন্যা!
ইচ্ছের আজ একটুও রাগ হলো না এই কথাটা শুনে?বরং বেশ ভাল লাগলো।এত আদর নিয়ে কেউ যদি তাকে হিসু কন্যা বলে ডাকে তবে ডাকুক না।ইচ্ছে আজীবন কান পেতে থাকবে এই ডাকটা শুনার জন্য,সেটা যতই বিচ্ছিরি হোক না কেন?আদর মাখা তো!
-একটুও রাগ করিনি আমি!
-এ আমি কি শুনছি!সত্যি না মিথ্যে?আজ আমাদের ইচ্ছেমতির ইচ্ছের বদল হলো ক্যামনে?হিসুর কথা শুনেও সে কিনা রাগ করেনি!
শুন!সে যতই রাগ করিস বা না করিস আমি কিন্তু টাকাটা তোর বরের কাছ থেকে নেবোই!
এত টাকার প্যান্ট আমার!এমনি এমনি ছেড়ে দেব নাকি?টাকা পেলেই প্যান্ট টা তোর বরের।সেটা এবার তোর বর পরুক কিংবা তোদের বাচ্চা!
ইচ্ছে মনে মনে বলল,
সেই বরটাও আপনি পূরণ ভাই আর বাচ্চা টাও হবে আমাদের!
দেখিস অনেক বড়লোক ঘরে বিয়ে দেব তোকে, মাথায় করে রাখবার জন্য নয় সব টাকা উসুল করার জন্য।পাশ থেকে মিতু এসে বলল,
-তোমার মুখে জয় হোক পূরণ ভাই!তুমি দেখ ইচ্ছেপুর বরের অনেক অনেক টাকা হবে,আর আমরা বিন্দাস ঘুরে বেড়াবো।আফটার অল শালী মানেই তো আধি ঘরওয়ালী!
তাই না ইচ্ছেপু?
ইচ্ছে হুট করে মিতুকে চড় মেরে বসল।
সবাই এমন কান্ডে হতবাক!
পূরণ ভাইও বোধহয় বুঝতে পেরেছে তাই কলটা কেটে দিয়েছে।
স্বর্নাপু ভ্রু কুচকে বলল,
তুই ওকে মারলি কেন ইচ্ছে?
ওকে কে বলেছে!মুখের কথাই লাগুক কথাটা বলতে?
তুমি জানো স্বর্নাপু!
পূরণ ভাই যখন অসুস্থ হয়ে হসপিটাল ছিল, আমি ফুফুকে শান্তনা দেয়ার জন্য বলেছিলাম।
-তুমি দেখ ফুফু পূরণ ভাই ঠিক ভাল হয়ে যাবে।
ফুফু তখন বলতো তোর মুখের কথাটাই লাগুকরে ইচ্ছে,তোর মুখের কথাটাই লাগুক!
এখন যদি মিতুর কথাটা লেগে যায়?
কি হবে আমার!
স্বর্নাপু নিলু মিতু সবাই অবাক!মেয়েটা এত পাগল কবে হয়ে গেল।যদিও স্বর্নাপু সব ঝামেলা মিটমাট করে তাদের ভাব করে দিয়েছে তবুর ইচ্ছের মনে খুতখুত রয়েই গেল।কান্নায় চারিপাশ ঝাপসা হয়ে আসছে,আর যেন পূরণ ভাই পালটে না যায় প্লিজ!
প্রয়োজনে সে সারাজীবন পূরণ ভাইয়ের হিসুকন্যা নামটা শুনতে রাজী আছে।পূরণ ভাই যদি চায় তবে সে নিজেই টিউশনি করিয়ে তার প্যান্টের টাকা দিয়ে দেবে।তবুও সে পূরণ ভাইকে হারাতে পারবে না।
আমরা হয়তো মনে করি যার সাথে আমাদের সব সময় ঝগড়ার সম্পর্ক সে আমাদের শত্রু কিন্তু না!মাঝে মাঝে দেখা যায় সব চাইতে ভালবাসার মানুষটার সাথেই ঝগড়া টা একটু বেশিই হয়।তবে সব ক্ষেত্রে না!কিছু কিছু ক্ষেত্রে।
অপেক্ষার প্রহর ই যেন শেষ হচ্ছে না ইচ্ছের।মুখে না বললেও মনে মনে অধীর আগ্রহে বসে আছে কবে ডেলিভারী ম্যান আসবে?কি দিবে পূরণ ভাই!তার জীবনের এই প্রথম গিফট সে পাবে এর আগে যে পায়নি তেমনটা না!পেয়েছে তবে বাবা মা ফুফু আর খালামণিদের থেকে কিন্তু একান্ত নিজের একটা মানুষের থেকে এই প্রথম ই তো!
#তোমাতেই_ইতি
#আয়েশা
পর্ব-১১
প্রাণ দিতে চাই,
মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষণ দিতে চাই
তোমাকে, ওওওওও তোমাকে
স্বপ্ন সাজাই
নিজেকে হারাই
আর দুটি নয়নে রোজ নিয়ে সুতে যাই তোমাকে,ওওওওও তোমাকে
জেনেও তোমার আঁখি
চুপ করে থাকে,
রোজ দুই ফোঁটা যেন আরও ভাললাগে
গানে,অভিসারে
চাই শুধু বারেবারে
তোমাকে,ওওওওও তোমাকে
তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কিভাবে বোঝাই ভালবাসি…..
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে
রঙ মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সেই রঙ দিয়ে তোমাকে আঁকি
আর কিভাবে বোঝাই ভালবাসি…….
মন খারাপিতেও এই গানটা শুনতে ইচ্ছের ভীষণ ভাল লাগে।হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে একপ্রকার দৌড়ে বেরোলো ইচ্ছে।সামনে থেকে আসা কেকের ট্রে টা প্রায় পড়তে পড়তে বাচলো।
ইচ্ছের সেদিকে কোনও ধ্যান জ্ঞান নেই।ক্যাটারিং এর লোকটা অনেকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।কে বলবে এই মেয়েটার আঠারো বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে।যেন নয় দশ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে নিজের জন্মদিন উপলক্ষে দৌড়ে বেড়াচ্ছে।আজকাল কার মেয়েদের বুঝা,বয়স আর ব্যবহারের ফারাক করাটা বড্ড দায় হয়ে যায়।
দরজা খুলতেই ইচ্ছের মুখে হাসি ঝলমল করছে। প্রায় একপ্রকার ঝাপিয়ে বুকেটা নিয়ে নিল।
সামনে থাকা ব্যাক্তিটি মহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।সাদা গ্রাউন্ড পরা মাথায় সাদা পাথর আর মুক্তোর তাজ পড়া একটা ছোট গোলগাল মুখের মেয়ে যার কাধ অবদি চুল।চোখে মুখে উজ্জ্বলতায় হিরের মত চকমক করছে।যেন বহু কাঙ্ক্ষিত একটি জিনিস পেয়ে সে এখন পরী বেশে পরিরাজ্যে নিজের আসন পেতে বসেছে।
আপনা আপনিই সামনে থাকা ব্যক্তিটির মুখে হাসি ফুটে উঠল।যাকে দেখলে আপনা আপনিই মুখে হাসি চলে আসে তাকে আর আলাদা করে কাউকে হাসানোর প্রয়োজন আছে কি?একদম না।
ইচ্ছে ফুলের বুকে টা হাতে নিয়ে চিঠি খুজতে খুজতে যখন পেলোনা।তখন একরাশ বিরক্তি এসে মুহুর্তেই সূর্যের আলোর মত ঝকমকে মুখটাতে মেঘ দিয়ে ঢেকে দিয়ে অন্ধকার নামিয়ে দিল।
-এই পার্সেলটাতে কি কি অর্ডার দেয়া ছিল?সব ঠিকমত ডেকিভারি দিতে আসছেন তো?
অবাক হয়ে লোকটি বলল,
-ডেলিভারি!কিসের ডেলিভারি?
আরে আপনাদের কাজই এটা ঠিকঠাক মত অর্ডার টাও পৌছে দিতে পারেন না অথচ অর্ডার দেয়ার সাথে সাথেই আপনাদের কাকুতি মিনতি শুরু হয়ে যায়, ভাল দেখে একটা রিভিউ দিয়ে আসবেন আমাদের পেইজে প্লিজ!
রিভিউ না ছাই দেবো!
এক্ষুনি বলুন আপনাদের পেইজের নাম কি?
আজ খুব ভালো করে একটা রিভিউ যাবে!
বলেই ইচ্ছে রাগে ফোসফাস করছে।
এখানে চিঠি থাকার কথা ছিল সেটা কই?
লোকটি আমতা আমতা করে বলল,
-দেখুন আপনি ভুল ভাবছেন আমি ডেলিভারি দিতে আসিনি এখানে।ইচ্ছের বার্থডে পার্টিতে ইনভাইটেশন পেয়ে এসেছি।
ইচ্ছে জিহবায় কামড দিল।ইশ!কি ভুলভাল বকে ফেলল!
ওর নামতো জানে লোকটা, কই ইচ্ছে তো আগে কখনও দেখেছে বলে মনে পড়ছে না।!
আপনি ইচ্ছেকে চিনেন?
না, এই প্রথম আসা আমার।
আপনি ইচ্ছের কে হন?কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল।কারণ লোকটি বলল তিনি ইচ্ছেকে চেনেন,কই ইচ্ছে তো দেখেনি কভু!
লোকটি লজ্জা পাওয়া মুখ নিয়ে কাচুমাচু করে দাড়াল।তারপর বলল,
এখনও কিছু হইনা।আমি ওর আম্মুর ইনভাইটেশন পেয়ে এসেছি তিনি আমার আন্টি হন।
ইচ্ছে খানিকটা ঘাবড়ে গেল।মা সকাল থেকেই কেমন রেগেমেগে আছে।না জানি এটা শুনলে কি করে আবার!তাই হুট করে বলল,
আম্মুকে কিছু বলবেন না প্লিজ!
লোকটি আবারও অবাক হল।কি বলবোনা?
এই যে আমি আপনাকে ডেলিভারি ম্যান বানিয়ে দিলাম বলেই ইচ্ছে হেসে লুটেপুটে পড়ছে কিন্তু মুহুর্তেই সামলে আবার চিন্তিত মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,কবে আসবে চিঠি?
লোকটা ঠায় দাঁড়িয়ে ইচ্ছের হাসি দেখছে আবার চিন্তিত মুখ দেখে কনফিউশান এ ভুগছে।এই রোদ তো এই বৃষ্টি!ইন্টারেস্টিং।
বুঝতে বাকি রইলো না আর এই মেয়েটাই ইচ্ছে!এখন কি সে জেছে গিয়ে পরিচিত হবে?না ব্যাপারটা কেমন দেখায় বরং একটু ভাবসাব নিয়ে পরিচিত হওয়া যাক।আফটার অল ফিয়ান্সি বলে কথা!মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে ভেতরে গেল লোকটা।
কিছুক্ষণ দাড়াতেই মা ডাকাডাকি শুরু করল,বড্ড বিরক্ত লাগছে ইচ্ছের।উফফ কেন যে আজ তার জন্মদিন হতে গেল?
ভালো দেখে একটা দিনে জন্মদিন হলেও তো হত!পূরণ ভাই নাই সে দিনই কেন তার জন্মদিন হতে গেল?
পাশ থেকে মিতু বলল,
সেটাই তো আল্লাহর উচিত ছিল যেদিন যেদিন পূরণ ভাই বাসায় থাকবে সেদিন সেদিন ইচ্ছেপুর জন্মদিন দেয়া। ইচ্ছেপুর সব ইচ্ছে পূরণ করে দেয়া দরকার ছিল আফটার অল আজ তার বার্থডে!এই উইশ টা পূরণ করলেই পারতো!
বরং ইচ্ছেকে তার পূরণ টাই দিয়ে দিক।
ইচ্ছে পেছন ঘুরে তাকাতেই মিতু আবার গালে হাত দিয়ে ভয়ে চুপসে গিয়ে বলল,
আজও কি ভুল বলে ফেললাম?
ইচ্ছে হেসে উঠে জড়িয়ে ধরে বলল।নারে!
স্যরি সেদিনকার জন্য।আসলে টেনশানে মাথা ঠিক ছিল না।
ইটস ওকে ইচ্ছেপু আমি বুঝিতো ইটস লাভ কেইস!ভালবাসা আর যুদ্ধক্ষেত্রে সব জায়েজ!তাই না?
বাহ বেশ বড় বড় কথাও শিখে গেছিস দেখছি। ছোটা প্যাকেজ বাড়া ধামাকা বলেই হাসলো দুজন।
কিছুক্ষন বাদেই সবাই এসে হাজির না চাইতেও ইচ্ছেকে সাজানো গোছানো জায়গায় দাড়াতে হল।সামনে ক্যাকের ট্রে,,টেবিলে সাজানো গুছানো বেলুন আর ফুলের ডেকোরেটের সাথে আইস্ক্রিম চকলেট আর নানান জিনিসে ভর্তি।ইচ্ছের ছোটবেলায় ও বোধহয় এত আয়োজন করা হয়নি!যতটা না আজ করা হয়েছে।
ইচ্ছের এত এত মানুষ আর এত আয়োজনের ভিড়েও নিজেকে বড্ড একা একা লাগছে।
খুব করে কেউ একজনকে মিস করছে।ভেতর থেকে তার অনুপস্থিতির বারবার জানান দিচ্ছে,দেখুন আপনি বিহীন আমি কতটা নিঃস্ব!
আচ্ছা কেন এমন হয়?হুট করে কেউ একজন এসে গোছালো জীবন টাকে অগোছালো করে দিয়ে যায়!তার না থাকাটাই কেন এতটা একাকিত্ব বোধ জাগায়।বাকি সবাই ও তো ইচ্ছের আপনজন।ইচ্ছের বাবা মা স্বর্নাপু,নিলু,মিতু,ফুফু,খালামণিরা সবাই!
তবুও কেন ইচ্ছের মন খারাপিতে সবটা ছেয়ে যাচ্ছে।এত আয়োজন আজ তার নিজের জন্যই তবুও কেন সব অসহ্য লাগছে?
ইচ্ছের বাবার ডাকে তার ধ্যান ভাঙলো।
কেক যে কাটতে হবে তাকে অথচ গলা দিয়ে নামবে না তার।কেক কাটার সাথে সাথেই সবার নজর ইচ্ছের উপর,করতালিতে সবার মুখে একই কথা,
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ!হ্যাপি বার্থডে টু ইউ!হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার ইচ্ছে,হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
সবার নজর ইচ্ছের উপর থাকলেও ইচ্ছের নজর শুধু বাইরে এখনও ডেলিভারি টা দিতে আসেনি!একে একে বাবা মাকে খাওয়ানোর পর মা খুব জোরাজুরি করল যাকে ইচ্ছে ডেলিভারি ম্যান বানিয়ে দিল তাকে খাওয়াতে। তার নাম সজল!
মা বাব ইচ্ছেকে খাওয়াতে চাইলেও ইচ্ছে সামজ্জস্যতা বজায় রাখতে শুধু ঠোঁটে ছুইয়ে নিল।যেই সজল ইচ্ছের মুখের সামনে কেক ধরবে অমনি কলিং বেলের আওয়াজে ইচ্ছে এক প্রকার ছুট লাগাতেই গায়ের সাথে ধাক্কা লেগে কেকটা নিচে পড়ে গেল।সজল হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলো কিছুটা অপমান বোধ লাগলেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো।
বাচ্চা একটা মেয়ে ইটস ওকে,বলে নিজেলে শান্তনা দিলো।
দরজা খুলতেই শুধু একটা প্যাকেট এগিয়ে দিল।ইচ্ছের এবার আরও মন খারাপ করল।একটা ফুলের বুকে দিলে কি হত?
আবার ভাবলো ইচ্ছের তো এসব চাই না তবুও কেন মন খারাপ করল।আসলে প্রিয় মানুষের কাছে প্রত্যাশা টা একটু বেশিই থাকে যদিও আমরা মুখে হাজার বার বলনা কেন আমার কিচ্ছু লাগবে না তবুও যদি তারা হুট করে ছোট একটা ফুল ও এনে দেয় মনে হয় গোটা ফুলের রাজ্য তার সামনে এনে দিয়েছে।
প্রিয়রা কেন এত অপ্রিয় হয়ে যায় মাঝে মাঝে?
অপ্রিয়ই হবে যখন তবে প্রিয়ই বা কেন বলা হয়!
কেন স্বাভাবিক লাইফ টাকে কখনও আনন্দঘন মুহুর্ত বানিয়ে নিজেকে সব চাইতে সুখী বলে মনে করিয়ে দেয় আর কেনই বা মনের সাথে পুরো শরীরটাকেও মাঝে মাঝে বিষিয়ে দেয়।মনে হয় সে না হলেও চলবে না আমার অথচ তাকে মনে করেই করেই এত ব্যাথার পাহাড় জমায়!
মানুষ সত্যিই অদ্ভুদ!মানুষ চাইলে সব পারে?বিশেষ করে প্রিয় মানুষগুলো!কারণ আমরা আগে সুযোগ দিয়ে দেই যে!
চলবে