তোমায় চেয়েছি পুরোটাই পর্ব -৪৩+৪৪

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৪৩
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

বিষন্নর কথায় মিষ্টি ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো বিষন্নর দিকে।বিষন্নও মিষ্টির দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিলো।রাগে মিষ্টির গা জ্ব’লে যাচ্ছে।

*

বিষন্নর বাবা রেডি হচ্ছেন মিটিং এর জন্য।পনেরো মিনিট বাদেই মিটিং শুরু হবে।এরমধ্যেই তার কাছে ফোন আসলো।তিনি রিসিভ করতেই ভারী গলায় কেউ একজন বললো

” স্যার আমি থানা থেকে ওসি বলছি,”

হঠাৎ থানা থেকে কল আসায় তার তেমন ভাবান্তর হলো না।তিনি ব্লেজারের হাতার ঠিক করতে করতে বললেন

” বলুন কি বলবেন ”

” আপনার ছেলেকে কিডনাফ করা হয়েছিলো,এখন আমাদের আন্ডারে আছে ”

” ও আচ্ছা ”

অফিসার হকচকিয়ে গেলেন।ছেলেকে কিডনাফ করা হয়েছিলো,বর্তমানে সে থানায়,এই খবর জানার পরেও কোনো বাবা শুধু ও আচ্ছা বলতে পারে সেটা অফিসারের দশ বছরের ক্যারিয়ারে কখনো শোনেনি।অফিসার আবারো বললো

” স্যার আেনি বোধহয় আমার কথা বুঝতে পারেননি ”

” আমি বাংলা যথেষ্ট বুঝি।এখন মিটিং আছে,রাখছি ”

” স্যার কিছু তো বলুন? ”

” কিচ্ছু বলার নেই।আপনার যা মন চায় করুন ”

তিনি ফোন কেটে দিলেন।অফিসার ফোন হাতে নিয়ে বসে রইলেন।ব্যাপারটা কি ঘটলো তিনি ঠিক বুঝতে পারছেন না।জেলের ভেতর বিষন্ন আর মিষ্টি দু’জনকেই রাখা হয়েছে।তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে বিষন্নর কাছে গিয়ে নাম্বারটা দেখিয়ে বললেন

” নাম্বারটা ভালো করে দেখুন তো,আমার মনে হয় নাম্বারে ভুল আছে ”

বিষন্ন জেলের ভেতর থেকে চোখ ছোট ছোট করে দেখে বললো

” নাম্বার ঠিক’ই আছে ”

অফিসার হতভম্ব হয়ে বললেন ” আপনার বাবা পাগল নাকি? ”

বিষন্ন স্বাভাবিক ভাবেই বললো ” পাগল হতে যাবে কেন? ”

” পাগল না হলে এরকম একটা খবর পেয়ে শুধু ও আচ্ছা বলে কেউ ফোন কেটে দেয়? ”

” আমায় কেন বলছেন? আমি কি জানি ”

অফিসার বেশ বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়লেন।বাবা,ছেলে দু’জনই মাথায় গন্ডগোল আছে এই ভেবে তিনি চেয়ারে বসে চায়ের অর্ডার দিলেন।

*

মিষ্টি চোখ ছোট করে তাকিয়ে কঠিন গলায় বললো ” এইসবের কি মানে ছিলো? ”

বিষন্ন মুখে হাবাগোবা ভাব এনে বললো ” কি?”

” কি জানো না? তখন সোজাসুজি বললে তো এতোকিছু হতো না ”

” আমার তো ভালোই লাগছে,কখনো থানায় আসিনি,ইচ্ছে ছিলো সময় পেলে আসবো।এখন সুযোগটা পেয়ে গেলাম ”

মিষ্টি ভ্রু কুচকে বললো ” ইচ্ছে করছিলো তাহলে একাই আসতে।আমায় কেন ফাঁসাচ্ছো? আমার এখানে দম বন্ধ লাগছে,আর কিছুক্ষণ থাকলে দম বন্ধ হয়ে ম’রে যাবো ”

” দোষ করলে তো শাস্তি পেতে হবে ”

মিষ্টি মুখ ভোতা করে বললো ” কিসের দোষ হ্যা?আমার যখন ইচ্ছে করবে তোমায় তুলে নিয়ে যাবো,মা’রবো,আদর করবো যা খুশি তাই করবো,এখানে দোষের কি আছে? ”

” আমার মাথা ঘুরাচ্ছে,বমি বমি পাচ্ছে ”

” দেখো এইসব ঢং একদম করবা না বলে দিলাম,অসহ্য লাগছে আমার ”

” আমি তো ইচ্ছে করলেই ছাড়া পেয়ে যাবো,মামাকে ফোন করলেই তিনি এনে নিয়ে যাবে,তোমার কি হবে তাই ভাবছি। আচ্ছা কিডনাফ করার শাস্তি কি? ”

কথা শেষ হতেই বিষন্ন মাথা উঁচিয়ে অফিসারকে বললো ” অফিসার,একটু এদিকে আসবেন? ”

অফিসার কাছে আসলেন।বিষন্ন কপাল কুঁচকে জিগ্যেস করলো ” কিডনাফের শাস্তি কি হতে পারে? ”

” মিনিমাম ছয় বছরের জেল তো নিশ্চিত ”

” ও আচ্ছা, ঠিক আছে ধন্যবাদ ”

মিষ্টি এইবার পুরো হকচকিয়ে গেলো।বিষন্ন কি সত্যি সত্যিই তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিবে নাকি?পরোক্ষনেই মিষ্টি নিজেকে মহা গাধি উপাধি দিলো।বিষন্ন কখনোই এমনটা করবে না।

রাত আটটায় বিষন্নর বাবা একজন উকিল পাঠিয়ে বিষন্ন মিষ্টি দু’জনকেই ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন।তারা দু’জনই এখন ফুটপাতে হাটছে।কুয়াশার চাদরে চারদিক ঢেকে গেছে।বিষন্নর পরনে পাতলা হাফ টি-শার্ট।রাস্তায় তেলচালিত গাড়ির গরম হাওয়াই এখন শেষ ভরসা।হুডি পড়ায় মিষ্টিকে ঠান্ডা ছুঁতে পারছে না।বিষন্ন ঠান্ডায় দুইহাত জড়োসড়ো করে বু’কে চেপে ধরে আছে।এইটুকু সময়ের মধ্যেই চারদিকে কেমন ভয়ঙ্কর জনমানবহীন শূন্যতা।শুধু রাস্তায় কিছুক্ষণ পরপর ট্রাক হনহন করে চলে যাচ্ছে।অনেকদূর হাঁটার পরেও কোনো রিক্সা চোখে পড়ছে না।বিষন্নর সাথে পাশাপাশি হাঁটতে মিষ্টির বেশ লাগছে,মৌনতা কাটিয়ে মিষ্টি বললো

” তোমার কি ঠান্ডা লাগছে? ”

বিষন্ন কাঁপতে কাঁপতে বললো ” না ”

মিষ্টি আর কিছু না বলে বিষন্ন ডান হাত নিজের হুডির বাম পকেটে রেখে শক্ত করে ধরে রইলো।বিষন্ন বাঁধা দিলো না,বাধ্য ছেলের মতো পকেটে হাত গুঁজে হাটতে লাগলো।মিষ্টি বিষন্নর নখে একটু পর পর চিমটি কাটছে আর প্রত্যেকবারই বিষন্ন হাত সরিয়ে নিতে চাইলে মিষ্টি আরো শক্ত করে চেপে ধরছে।

রাস্তার পাশে একটা বেঞ্চে দু’জনে বসলো।আর হাঁটতে ইচ্ছে করছে না।বিষন্নর হাত এখনো মিষ্টির হুডির পকেটে।মিষ্টি হঠাৎ হঠাৎ নখে চি’মটি দিচ্ছে।মৌনতা ভেঙ্গে বিষন্ন বললো

” ওভাবে তুলে নিয়ে যাওয়ার কারন কি? ”

” ভেবেছিলাম যত ভুল বুঝাবুঝি আছে সব মিটিয়ে নিবো।সেভাবে তো একান্ত সময় পাচ্ছিনা কথা বলার তাই ”

বিষন্ন স্বাভাবিক স্বরে বললো ” আমাদের কোনো ভুল বুঝাবুঝি নেই,”

” আছে, এভাবে আর কতদিন চলবে বলো তো? আমি আর পারছি না তোমার থেকে আলাদা থাকতে ”

” কেন একজনকে দিয়ে হচ্ছে না? নাকি মজা শেষ হয়ে গেছে? ”

বিষন্নর এরুপ কথায় মিষ্টির চোখে জল চলে এলো।নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। ইচ্ছে করছে বিষন্নর গালে ঠাস করে চ’ড় বসিয়ে দিতে।বিষন্ন মিষ্টির হুডির পকেট থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে আবারো বললো

” চলো একটা হোটেল রুম ভাড়া করি,তোমার তো একসাথে অনেককে……. ”

কথা পুরোটা শেষ না হতেই বিষন্নর গা’লে ঠাস করে একটা চ’ড় বসিয়ে দিলো মিষ্টি।মিষ্টির চোখ টলমল করছে।যেন কিছুই হয়নি এরকম ভাব নিয়ে বিষন্ন হাসলো।মিষ্টি কঠিন স্বরে বললো

” সমস্যা কি তোর হ্যা?মুখে যাই আসে তাই বলে যাচ্ছিস,মানছি আমার কিছু ভুল আছে,সেজন্য এতো জঘন্য কথা বলতেও তোর মুখে আটকাচ্ছে না? ”

বিষন্নও এবার যেন রেগে গেলো।একহাতে মিষ্টির গাল চেপে ধরে বললো

” সেটা যখন অন্য ছেলের সাথে ফ’ষ্টিন’ষ্টি করো তখন মনে থাকে না? ”

” ছিহ বিষন্ন,তোর ভাবনা যে এতোটা নিচ আমি আগে জানতাম না,”

” এখন তো সেটা মনে হবেই,আমার তো প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে, আর দরকার নেই।অন্য ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলো,তাও বাড়ি অব্দি এসে,বাহ্ ”

” বিষন্ন তুই ভুল ভাবছিস,ও শুধুই আমার অফিসে জব করে এর বেশি কিচ্ছু না ”

” শুধুই অফিসে জব করা কারোর সামনে টি-শার্ট পড়ে হ’ট সেজে যেতে হয় বুঝি? ”

” আমি টি-শার্ট পড়ে ছিলাম সেটা খেয়াল’ই ছিলো না,যখন মনে হলো তখন আর এক মুহুর্ত সেখানে দাড়াইনি ”

বিষন্ন হাসলো,তারপর তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো ” সেটা তুমিই ভালো জানো, আচ্ছা যাই হোক,ছেলেটা কি বললো? তোমার বু’ক খুব সুন্দর, এরকম কিছু বলেছিলো? ”

মিষ্টি ধপ করে বেঞ্চে বসে পড়লো। দু’হাতে চুল টানতে টানতে বললো

” বিষন্ন তুই এতো সাধারণ একটা বিষয়কে এতো বড় বানাচ্ছিস কেন আমি সেটাই বুঝতে পারছি না ”

” এটা সাধারণ?তাহলে অসাধারণ বিষয় কোনটা? বলো একটু শুনি,বলো বলো ”

” আমি তোকে ভালোবাসি ”

” ওহহ আচ্ছা,টাইম পাসের ভালোবাসা? ”

” বিষন্ন তুই আমায় ভুল বুঝছিস,আমি তোকে সবটা খুলে বলবো,একটু সময় দে আমায় প্লিজ? জাস্ট একটু সময় দে প্লিজ”

” বলো ”

কথাটা বলে বিষন্ন বেঞ্চে বসলো।পায়ে পা তুলে এক হাত গালে রেখে মাটির দিকে চেয়ে রইলো। মিষ্টি বলা শুরু করলো

” তোকে সেদিন বলেছিলাম তোর পাগলামিতে আমি সায় দিয়েছিলাম।এটা বলেছি কারন আমি জানি তুই আমায় ছাড়া কখনোই যেতে রাজি হইতি না।তাই যে করেই হোক আমার প্রতি তোর রাগ বাড়িয়ে দিতে এমনটা বলেছিলাম,যেন অন্তত আমার প্রতি রাগ করে হলেও তুই চলে যাস।তোর ক্যারিয়ারের জন্য এটা দরকার ছিলো।আমি জানি সেদিন এভাবে তোকে কষ্ট না দিলে তুই কখনোই যেতে রাজি হইতি না ”

বিষন্ন চুপচাপ শুনছে।মিষ্টি আবারো বললো

” হ্যা তারপরের ভুলটা আমার ছিলো,আমি সেটা স্বীকারও করছি।তবে শুধুই কি আমার দোষ ছিলো? তুই কি পারতি না একটা বার ফোন করতে? ”

বিষন্ন এইবার যেন রেগে ফেটে পড়লো।উঠে দাড়িয়ে প্রচন্ড এল লাথি বসিয়ে দিলো বেঞ্চে। আকষ্মিক বিষন্নর হিংস্র রুপ দেখে মিষ্টি কুঁকড়ে দাড়ালো।বিষন্ন হাত মুঠ করে রাগ কন্ট্রোল করে কিছুটা চেঁচিয়ে বললো

” আমি ফোন করবো? আমি? এতো বড় একটা কথা বলার পড়েও আমি আগে ফোন দিবো? নিজেকে কি মনে করো? ”

মিষ্টি ইতস্তত করে বললো ” মানে? কি বলছিস তুই? আমি তো তোকে ফোন করেছিলাম,বারবার রিং হচ্ছিল কিন্তু তুই ফোন ধরছিলি না।”

বিষন্ন কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেলো।মনে করতে লাগলো সেদিনটার কথা।সেদিনটার কথা বিষন্নর মনে রেখেছে,কেননা সেই রাতটা ছিলো সবথেকে কষ্টের রাত।তখনি মনে হলো সে যখন ওয়াসরুম থেকে বেড় হয়েছিল তখন তিশুর হাতে বিষন্নর ফোন ছিলো।তখন বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি বিষন্ন।তবে এখন বিষয়টা বেশ পরিষ্কার হয়ে গেলো।তারমানে বিষন্ন ঢ়খন ওয়াসরুমে ছিলো তখন মিষ্টির কল আসে।আর যেহেতু তিশু বিষন্নর প্রতি দূর্বল তাই কোনো মেয়ে ফোন দিয়েছে সেটা সে মানতে পারছিলো না।হয়তো তখনই মিষ্টির কল হিস্ট্রি ডিলিট করেছিলো যেন বিষন্ন বুঝতে না পারে যে কেউ ফোন দিয়েছিলো।বিষন্নর অন্যমনস্ক হওয়া দেখে মিষ্টি বললো

” কি ভাবছিস? ”

” না কিছু না।তুমি সত্যিই ফোন দিয়েছিলে? ”

” সত্যিই দিয়েছিলাম,আমার দিব্যি ”

” যখন দেখলে ধরলাম না তারপর তো দিতে পারতে ”

” হু পারতাম।আমি অপেক্ষা করলাম তোর ফোনের জন্য,যখন দেখলাম দুইদিন হয়ে গেলো অথচ তুই ফোন দিচ্ছিস না তখনই বিষয়টা আমার ইগোতে খুব হার্ট করলো।মনে একটা জেদ তৈরি হলো হলো যে তুই ফোন না দিলে আমিও দিবো না ”

” বাহ্,এই তোমার ভালোবাসা ”

” এটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো,আমি সেটা স্বীকার ও করি।এক পর্যায়ে নিজের ক্যারিয়ার নিয়েও কিছুটা ব্যস্ত হয়ে গেলাম।সাথে বাড়তে লাগলো ইগো।মনে হলো যে তুইও তো পারতি যোগাযোগ করতে,কিন্তু করিসনি।এরকম নেগেটিভ চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো ”

” সেদিন এয়ারপোর্টে কি একটা বার আসতে পারতে না? ”

” আমি গিয়েছিলাম।তোর জন্য অনেক সেজেছিলাম,শাড়ি চুড়ি পড়ে হুলুস্থুল একটা কান্ড বাঁধিয়ে ফেলছিলাম।কিন্তু শেষ পর্যন্ত তোকে দেখে যে আমার হঠাৎ কি হলো,ছুটে পালিয়ে এলাম বাহিরে ”

বিষন্ন চুপ করে আছে।কিছু বলছে না।চুপ হওয়া দেখে মিষ্টি বিষন্ন খুব কাছাকাছি গিয়ে বললো

” যা হয়েছে সব দোষ আমার।প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দে না, প্লিজ? আমি কথা দিচ্ছি আমি আর কোনো ভুল করবো না ”

বিষন্ন অন্যদিকে মুখ করে বললো ” তোমার কোনো ক্ষমা নাই,যাও ভাগো ”

বিষন্নর স্বরে ছিলো একটা আকাঙ্খা। জরিয়ে ধরার আকাঙ্খা। সেই আকাঙ্খা বুঝতে মিষ্টির সময় লাগলো না।শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বিষন্নকে।বুকে মাথা রেখে বললো

” আর কক্ষনো তোকে দূরে যেতে দিবো না,এভাবেই জরিয়ে ধরে থাকবো সারাজীবন ”

” সারাজীবন লাগবে না,আপাতত ধরে থাকলেই হবে।এখন ঠান্ডা একটু কম লাগছে ”

বলেই বিষন্ন হাসলো।মিষ্টিও হাসলো।এভাবে যেন কতক্ষণ সময় পার হয়ে গেলো অপরকে জাপটে ধরে দাঁড়িয়ে,তার হিসেব রইলো না।

রাত দশটা বাজে।দু’জনই হাটছে।মিষ্টির হুডির পকেটে আবারো বিষন্নর হাত।মাঝে মাঝে সেই হাতে মিষ্টি নরম পে’টে চিমটি কাটছে।মিষ্টির চোখ রাঙ্গিয়েও লোনো লাভ হচ্ছে না।দু’জনার মুখ হাসি হাসি।মিষ্টি বিষন্নর কাঁধে হাত রাখে বললো

” আচ্ছা বিষন্ন তোকে যে তুই করে বলি এটাতে কি তুই মন খারাপ করিস? ”

” না ”

” আচ্ছা,একটা সত্যি কথা বলবি? ”

” কি ”

” তুই ওখানে গিয়ে আমায় খুব মিস করতি, তাই না? ”

” একদম না ”

” এহহ, বললেই হলো নাকি, তাহলে ফোনে কান্না করতে করতে বলতিস, মিষ্টিকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে? ”

বিষন্ন থমকে দাঁড়ালো। ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো

” তুমি কিভাবে জানো? ”

” হিহিহি, আমি সব জানি বিষন্ন বাবু,”

বিষন্ন হকচকিয়ে গেলো। নীলুপু তো কথা দিয়েছিলো কখনোই মিষ্টিকে সেইসব কথা বলবেনা।তাহলে মিষ্টি কিভাবে জানলো? মিষ্টি হাসি চেপে রেখে বললো

” আমি নীলুর ফোন থেকে প্রায়ই তোকে ফোন করতাম।আর তুই নীলু ভেবে কথা বলতি ”

বিষন্ন মুখ ভোতা করে চেয়ে রইলো মিষ্টির দিকে।মিষ্টি বিষন্নর গাল টেনে দিয়ে বললো

” আমার বোকা জামাই একটা ”

বিষন্ন গাল ফুলিয়ে বললো ” ফোনে আমি কন্ঠস্বর চিনতে পারিনা,সবার গলা একই মনে হয়।এখানে বোকার কি আছে,আমি ইচ্ছে করে জেনে শুনে তো আর বলিনি ”

” হাহাহা,কি কি যেন বলতি? উমমম হু, মনে পড়ছে, কান্না করতে করতে বলতি,মিষ্টিকে দেখতে ইচ্ছে করছে,কথা বলতে ইচ্ছে করছে,কেমন আছে,আরো কত কি ”

বিষন্ন অন্যদিকে মুখ করে বললো ” আর তুমি সেসব শুনে মজা নিচ্ছিলে তাইতো? বুঝছি,এখন আরো ভালোভাবে বুঝায় দিলা তুমি এখনো আমার সাথে মজা করছো ”

চলবে?#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৪৪
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

বিষন্ন অন্যদিকে মুখ করে বললো ” আর তুমি সেসব শুনে মজা নিচ্ছিলে তাইতো? বুঝছি,এখন আরো ভালোভাবে বুঝায় দিলা তুমি এখনো আমার সাথে মজা করছো ”

” ধুর তুমি শুধু আমায় ভুল বুঝো,যাও তোমার সাথে কোনো কথা নাই ”

____________________

নীলু যে নদীর পাড়ে দাড়িয়ে সমুদ্রর জন্য অপেক্ষা করছে সেই নদীর নাম নীলকন্ঠা।নদীর জল বু’ক অব্ধি হবে,সূর্যের হালকা আলোয় বালু চিকমিক করছে।জলের ওপর সূর্যের আলো পড়ায় জলগুলিকে মনে হচ্ছে কাঁচের তরল।ঢেউয়ের উপরিভাগে তারার মতো অসংখ্য কিছু একটা জ্বলজ্বল করছে।বাতাসে নীলুর পরনের সাদা শাড়ির আঁচল উঠছে।নীলু তেমন শাড়ি পড়ে না,পড়লেই বাহিরে বেড় হয় না।আজ হয়েছে। বিশেষ মানুষটার জন্য নিজেকে বিশেষ ভাবে উপস্থাপন করতে সব প্রেমিকাই চাইবে।

নীলু হাতের চিকন বেল্টের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখলো।পনেরো মিনিট সময় পার হয়ে গেছে,সমুদ্র এখনো আসছে না।তবে অপেক্ষা করতেও তেমন খারাপ লাগছে না।ওইতো সমুদ্রকে দেখা যাচ্ছে।নীলুকে দেখেই দূর থেকে সে হাত নাড়লো,নীলুও হাত নাড়লো।

দু’জনই বসে আছে ঘাসের ওপর। নদীতে জল না থাকায় মাঝ নদীর বালুতে জন্মানো লম্বা লম্বা ঘাসে দু’জন প্রেমিক প্রেমিকার গুঞ্জন।চারদিকে শুধু বালুময়,অথচ এইটুকু অংশে যেন অলৌকিক ভাবে একটু ঘাসের জন্ম হয়েছে।সেখানে পাশাপাশি বসে আছে নীলু আর সমুদ্র।হয়তো প্রেমিক প্রেমিকার গভীর ভালোবাসার কথা শুনার জন্যই ঘাস গুলি উত্তপ্ত বালিতে জন্ম নিয়েছে।সমুদ্র বললো

” শাড়িতে তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে ”

নীলু হাসলো।কিছু বললো না।সমুদ্র আবারে বললো

” তোমার জন্য একটা ছোট্ট উপহার আছে ”

” কি উপহার? ”

সমুদ্র হাত বাড়িয়ে একটা ফুলের মালা দেখালো।মাঝারি সাইজের রক্তগন্ধা ফুলের মালা।নীলু মৃদু হেসে বললো

” তুমি পড়িয়ে দাও ”

সমুদ্র পরম যত্নে খোঁপায় মালাটা পেঁচিয়ে দিলো।বললো

” এইবার একদম পারফেক্ট লাগছে।মেয়েদের শাড়ির সাথে খোঁপায় ফুল না থাকলে ঠিক মানায় না ”

” হু,মেয়েদের বিষয়ে দেখি অনেক কিছুই জানো ”

” সে তো একটু আধটু জানতে হয়।মেয়েদের চুলে কোন ফুল সবচেয়ে বেশি মানায় জানো? ”

” বেলী? ”

” উহু,হলো না।মেয়েদের চুলে সবচেয়ে সুন্দর মানায় গাদা ফুল। অথচ মেয়েরা গাদা ফুলটাকেই এড়িয়ে চলে।গাদা ফুলের আরেকটা ভালো দিক আছে।বলোতো সেটা কি? ”

” কি?”

” এই ফুল সবসময় পাওয়া যায় ”

” আমরা কি ফুল নিয়েই কথা বলবো?”

” ওহহ সরি সরি।এই যায়গাটা কেমন লাগছে? ”

” অসম্ভব সুন্দর লাগছে ”

” নদীর জল শুকিয়ে গেলে আমি মাঝ নদীর বালিতে এসে সময় কাটাই।এখানে মজার একটা বিষয় ঘটে।এখানে থাকলে মনে হয় নিজের সাথে বসে আছি,চাইলেই নিজের সাথে কথা বলা যাবে এরকম একটা অনুভূতি তৈরি হয় ”

” হু,”

” অনেক্ক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখলাম, না? ”

” মাত্রই তো বিশ মিনিট।এইটুকু অপেক্ষা করা যেতেই পারে ”

” তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে নীলু ”

নীলু লজ্জায় শাড়ির আঁচলে মুখ ঢাকলো।কি আশ্চর্য!সুন্দরী হওয়ায় এই কথা নীলুকে অনেকেই বলে।কিন্তু সমুদ্রের মুখে এই কথাটা যেন এমুহূর্তে অন্যরকম মনে লাগলো।মনে হচ্ছে এই শব্দটার আগে এতোটা গভীরতা ছিলো না।নীলুর ইচ্ছে করছে সমুদ্রের হাত ধরে হাল্কা উত্তপ্ত বালির ওপর কিছুক্ষণ হাঁটছে। কিন্তু লজ্জায় বলতে পারছে না।দুদিন পর যার সাথে বিয়ে হবে,তাকে এতোটা লজ্জা পাওয়ার কারণ নীলু ঠিক বুঝতে পারছে না।সমুদ্র বললো

” নৌকায় উঠবে?”

নীলু সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেলো,এর আগে সে কখনো নৌকায় উঠেনি।সমুদ্র বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে নীলুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।নীলু হাত ধরে উঠে দাড়ালো।ইচ্ছে করেই সেই হাত ছাড়লো না।দু’জন এগিয়ে যাচ্ছে নৌকার কাছে।সমুদ্র মাঝিকে কিছু টাকা দিয়ে দু’ঘন্টার জন্য ভাড়া করলো।দু’জনে নৌকায় বসলো।মাঝি নৌকায় উঠতে চাইলে সমুদ্র মাঝিকে বললো,সে নিজেই চালাবে।

নীলু নদীর ঠান্ডা জলে হাত ছুঁইয়ে দিচ্ছে। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি।তবে ভয় ভয় ও করছে,কারণটা খুব সহজ,নীলু সাঁতার জানেনা।সমুদ্র তাকিয়ে আছে নীলুর দিকে।এই মেয়েটাকে সে কিভাবে কথাটা বলবে?আদৌও কি এই ভয়ঙ্কর কথাগুলি বলতে পারবে?।সমুদ্রর চেয়ে থাকা দেখে নীলু জলের ছিটে দিলো সমুদ্রর মুখে।দু’জনই হাসছে,নীলু বাচ্চা মেয়ের মতো শব্দ করে হাসছে।সমুদ্র অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো,হাসলে নীলুকে এতো সুন্দর লাগে কেন?।

দশ মিনিটের মতো নৌকায় থেকে দু’জনে নেমে গেলো।নীলু তো ভয়ে কান্না শুরু করেছিলো,যখন সমুদ্র হেসে হেসে বললো

” নীলু তুমি সাঁতার পারো? নৌকায় দেখো ফুটো দিয়ে জল জমা হচ্ছে, মনে হচ্ছে ডুবে যাবে ”

নীলু হকচকিয়ে তাকালো নৌকায় নিচের দিকে।সত্যি সত্যিই জজল জমা হচ্ছে। নীলু সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে খুব দ্রুত বললো

” আমি সাঁতার পারিনা,”

” সাঁতার পারো না তো নৌকায় উঠার আগে বলবে তো?”

নীলু আর কিছু বলতে পারছে না।শাড়ির আঁচল মুখে চেপে চোখ বন্ধ করে কান্না শুরু করলো।যখন চোখ মেললো তখন দেখলো নৌকা পাড়ে দার করানো।সমুদ্র ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে।নীলু দ্রুত সমুদ্রর হাত ধরে টেনে নৌকা থেকে নেমে সোজা রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। সমুদ্র হাসতে হাসতে বললো

” আমি তো শুধু ভয় দেখাচ্ছিলাম পাগলি,তুমি এতোটা ভয় পাবে কে জানতো ”

মিষ্টি চোখের জল মুছে বললো ” তুমি খুব পঁচা, আমি থাকবো না তোমার সাথে ”

একথা বলে নীলু হাঁটতে লাগলো।পেছনে পেছনে সমুদ্রও হাটছে।অনেকক্ষন বোঝানোর পর কানে ধরে ওঠবস করে মাফ চেয়ে নীলুকে শান্ত করা গেছে।সে এখন আপন মনে একেট পর এক ফুসকা মুখে দিচ্ছে।সমুদ্র কিছু বলতে গেলে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।সমুদ্রও চুপচাপ বসে বসে নীলুর ফুসকা খাওয়া দেখছে।টক স্বাদে যখন নীলু চোখ, কপাল কুঁচকে ফেলে তখন সমুদ্র ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।

রিক্সায় দুজন পাশাপাশি বসে আছে।সমুদ্র কয়েকবার নীলুর হাত ধরার চেষ্টা করেছিলো,কিন্তু প্রত্যকবারই নীলু হাত সরিয়ে নিয়েছে।নীলুর মনে এখন আনন্দের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে।এইরকম রাগ দেখাতে তার ভালো লাগছে।যখন দেখলো সমুদ্র আর গাত ধরার চেষ্টা করছে না তখন গাল ফুলিয়ে নীলু নিজেই সমুদ্র হাতে হাত রাখলো।

তারা দুজন অনেকক্ষণ রিকশায় ঘুরলো। নীলুকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে সমুদ্র সেই ভয়ঙ্কর কথাগুলো বলতে চাইলো।কিন্তু বলতে পারলো না।কেননা নীলু এখন তাকে জড়িয়ে ধরেছে।সমুদ্রর চোখে জল টলমল করছে।নীলু যে তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে! সে কিভাবে তাকে এই কঠিন কথাগুলো বলবে? তার কোনো অধিকার নেই নীলুর ভালোবাসাকে অপমান করার।

____________________

সকাল থেকেই বিষন্ন খুব ব্যস্ত।নীলুর আজ গায়ে হলুদ।তার একমাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা,অনেক দায়িত্ব। যদিও তার ওপর কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি তবুও সে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে।যারা ফুল দিয়ে সাজাচ্ছে তাদের ধমক দিয়ে বলছে,” এই ফুলগুলো এতো বড় কেনো?”। বিষন্নর কথায় যারা সাজানোর দায়িত্বে ছিলো তারা সবাই হতভম্ব হয়ে বললো ” স্যার,সাজানোর জন্য বড় ফুলগুলিই বেছে বেছে আনা হয়েছে “।বিষন্ন তখন মুখ ভোতা করে বলে ” আ,,তাই নাকি? “। ” হ্যা স্যার “।তখন উল্টে বিষন্ন বলে ” আপনারা সাজানো বাদ দিয়ে এতো কথা কেন বলতেছেন? “।

বিষন্ন মনে মনে বাবার ওপর খুব রেগে গেলো।বিড়বিড় করে বললো ” এতোবার বলার পরেও আমাকে কোনো কিছুর দায়িত্ব দেওয়া হলো না কেন? হোয়াই? আমি কি ছোট নাকি? বড় বোনের বিয়েতে দায়িত্বহীনতায় ঘুরে বেড়াচ্ছি,এইটা কোনো কথা? “।

বিষন্ন গাল ফুলিয়ে নীলুর ঘরের দরজা জোড়ে ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকলো।আশেপাশে না তাকিয়েই বিছানায় ধপাস করে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো।বিষন্ন যদি একবার তাকাতো তাহলে হয়তো বিষ্ময়ের চরমে পৌঁছে যেত।নীলুর বান্ধবীরা সবাই আকষ্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো।তারা শাড়ি পড়ছে এমন সময়ে বিষন্ন হুট করে ঘরে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পড়লো।বিষন্ন বিছানায় উপুড় হয়ে শোয়ায় নীলুর বান্ধবীদের অগ্নিদৃষ্টি বুঝতে পারছে না।বিষন্ন কিছুটা চেঁচিয়ে বললো

” এই নীলুপু।আমাকে কবে এই বাড়ির লোকজন বড় মনে করবে হ্যা? তোর বিয়ে, অথচ আমি কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছি না।মেয়ের ছোট ভাই এভাবে ঢ্যাংঢ্যাং করে ঘুরে বেড়াচ্ছে,এঔটা আমার জন্য কতোটা অপমানজনক সেটা বুঝতে পারছিস?”

নীলু চোখ গোলগোল করে বিষন্নর দিকে তাকিয়ে আছে।নীলুর একটা বান্ধবী বিষন্নর পাশে বসে বললো

” তোমার কোনো দায়িত্ব নেই কে বলেছে জান?আমায় শাড়ি পড়িয়ে দেওয়া তো তোমারই দায়িত্ব তাই না? এসো তো, আমায় শাড়িটা পড়িয়ে দাও ”

এমন কথায় বিষন্ন মাথা তুলে তাকালো।দেখলো পুরো ঘরে মেয়ে দিয়ে ভর্তি।সবার পরনে ছায়া,ব্লাউজ।বিষন্ন অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো।অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো নীলুর দিকে।নীলু রেগেমেগে বললো

” তুই আশেপাশে দেখবি তো নাকি? হুট করে ঢুকে পড়লি! ”

বিষন্ন কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো ” আ..আমি জানি নাকি তোমরা শাড়ি পড়তেছো ”

নীলুর আরেকটা বান্ধবী এগিয়ে এসে একটা শাড়ি এগিয়ে দিয়ে বললো ” এখন তো জেনে গেছো।নাও শাড়িটা পড়িয়ে দাও ”

বিষন্নকে আর পায় কে।এক দৌঁড়ে ওখান থেকে পগারপার।হঠাৎ মনে হলো,আচ্ছ ওখানে কি মিষ্টিও ছিলো নাকি?মিষ্টি থাকলে তো আমি গেছি।পরোক্ষনেই মনে হলো ” এভাবে বেড়িয়ে আসা ঠিক হলো না,এতো কিউট কিউট মেয়েদের শাড়ি পড়ানোর সুযোগটা কাজে লাগালে মন্দ হতো না।ইশশশশ কি মিসটেকটা করে ফেললাম।জীবনে একটা কমপক্ষে স্বরণীয় ঘটনা হয়ে থাকতো, আফসোস “।

বিকেলে বেঁধে গেলো আরেক কান্ড।পুরো বাড়িতে কান্নাকাটি,চিল্লাচিল্লিতে মাথায় উঠলো।নীলুকে তার বান্ধবীরা সবাই মিলে সাজিয়ে দিচ্ছে। সবার চেচামেচিতে নীলু ঘর থেকে বেড়িয়ে নিচে আসলো।দেখলো বিষন্ন সোফায় বসে আছে,তার পাশেই বসে মা ডাক্তারকে ফোন দাও,এম্বুলেন্সকে ফোন দাও বলে চেচামেচি করছে।বিষন্নর চোখ লাল,টপটপ করে জল পড়ছ।নীলু দৌড়ে বিষন্নর কাছে গিয়ে বসলো।বিষন্নর অবস্থা দেখে সে প্রচন্ড ঘাবড়ে গেলো,মুহুর্তেই চোখে জল চলে এলো।উদ্বেগের স্বরে নীলু বললো

” ভাই,এই ভাই,কি হইছে তোর? এই ভাই,হঠাৎ কি হলো তোর? ”

বিষন্ন কিছু বলছে না,শুধু গলায় হাত রেখে কিছু একটা গিলতে চেষ্টা করছে।সামনের টেবিলে শুকনো ভাত,জল।নীলু মা কে বললো

” মা বিষন্নর কি হইছে,ও এরকম করছে কেন? ”

মা কান্নার স্বরে বললো ” গলায় হা’ড় ফুটেছে।জল খাচ্ছে,শুকনো ভাত খাচ্ছে গবুও ভেতরেও যাচ্ছে না,বাহিরেও বেড় হচ্ছে না রে মা,”

নীলু দ্রুত পাউরুটি আনতে বললো।কেউ একজন রুটি এগিয়ে দিলো।রুটিটা বিষন্নকে না চিবিয়েই গিলতে বললো নীলু।এবং দেখা গেলো বিষন্ন বেশ স্বাভাবিক হয়ে গেলো।এইটুকুতেই যেন বাড়িতে মহাকান্ড বেধেছিল গেছিলো।নীলু রাগি স্বরে বিষন্নকে বললো

” এতোদিন শুনছি কাটা গলায় ফুটে,এখন দেখি হা’ড় ও ফুটে ”

বিষন্ন ঠোঁট ফুলিয়ে বললো ” কি আজব,আমি কি হাড়ের হাতে পায়ে ধরে বলছি? যে আমায় গিয়ে বসে থাক? ”

নীলু বিষন্নর মাথায় একটা গাট্টা দিয়ে বললো ” তুই বড় হবি কবে বল তো? ”

বিষন্ন নীলুর গাল টেনে বললো ” তোকে তো দারুণ লাগছে,একদম মনে হচ্ছে গুলুমুলু একটা ভূতনি।শেওড়া গাছ থেকে সদ্য নেমে এসছে ”

বিষন্নর কথায় নীলু রেগেমেগে বিষন্নর পিছু ধাওয়া করতে লাগলো।বিষন্নও সোফার ওপর দিয়ে লাফিয়ে দৌড় দিলো।পুরো বাড়ি দুই ভাইবোন দৌড়াদৌড়ি করছে,আর চেঁচামেচি করছে।বাইবোনের এই কান্ড দেখে বাড়ির সবাই হাসছে।এটাই হয়তো তাদের শেষ খুনসুটি।আজ রাতের পর থেকে হয়তে এভাবে আর তারা খুনসুটিতে মেতে উঠবে না।

আর কিছুক্ষণ পরেই গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হবে।সবাই মহা ব্যস্ত।ছোট বাচ্চাকাচ্চারা একজোট হয়ে ছোটাছুটি করছে।মেয়েরা সবাই খুব সেজেছে।মিষ্টি একটু আগে এসেছে।অফিসের কাজের চাপে সারাদিনে আসতে পারেনি।একদম সেজেগুজেই চলে এসছে।মিষ্টিকে আসতে দেখে নীলু মুখ অন্যদিকে করে বললো

” আমার বিয়েতে ফর্মালিটি মেইনটেইন করে কারো আসতে হবে না ”

মিষ্টি নীলুকে জড়িয়ে ধরে বললো ” আমি খুব সরি রে বান্ধবী,,এত্তো এত্তো সরি।প্লিজ মাফ করে দে ”

নীলু কিছু বললো না।রাগি রাগি একটা ভাব নিয়ে থাকলো।মিষ্টি মেরুন কালারের একটা লেহেঙ্গা পড়েছে।তবে মিষ্টিকে দেখে অন্যরা যে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে সেটা বেশ বুঝতে পারছে নীলু।নীলু বললো

” তোকে খুব সুন্দর লাগছে রে,”

” হু,তা তো লাগবেই।বিয়েতে ছেলেকে পটাতে হবে না? ”

বলেই মিষ্টি সহ সব বান্ধবীরা হিহি করে হাসলো।নীলুও হাসলো।শুধু এই কথাতে মুখ ভোতা করে রাগি দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো বিষন্ন।হাতে লাড্ডু নিয়ে নীলুর রুমের দরজায় আসতেই মিষ্টির কথাটা বিষন্নর কানে যেতেই বিষন্নর চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো।মনে মনে মিষ্টিকে বললো ” ছেলে পটাবি তাই না?দারা,পটানো বেড় করবো।কত্তোবড় সাহস,বলে কিনা ছেলে পটাবে।আর বোনও পাইছি একটা,এই কথায় দাঁত বেড় করে হাসছে।সব আমার কপাল ”

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here