#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৪+৫ [দুইটি পর্ব একসাথে ]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
এখন আঙ্কেলকে কিভাবে বোঝাবো যে আমি আর কখনোই ওই বাড়িতে যাবো না? বিষন্নকে ভুল পথ থেকে সরিয়ে আনতে ওই বাড়িটা আমার জন্য নিষিদ্ধ,কিভাবে বলবো সেটা? আবারো ফোনের ওপাশ থেকে আঙ্কেল বললো
” মিষ্টি মা ”
” হ্যা আঙ্কেল ”
” তোমার যদি কোনো সমস্যা থাকে তো আমায় বলতে পারো,সঙ্কোচ করার কোনো প্রয়োজন নেই ”
” ইয়ে মানে আঙ্কেল, মানে আমি, ”
” তুমি তো জানোই মা,বিষন্নের সামনের মাসেই কলেজে টেস্ট পরিক্ষা। আর সামনে এইচএসসি পরিক্ষা ”
আমি বুঝতে পারছি না আঙ্কেলকে কি বলবো।ওনাকে কি বলবো? যে বিষন্ন আমায় ভালোবাসে?পড়তে বসলে ম্যাথ না করে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে? প্রেম,ভালোবাসা নিয়ে উদ্ভট উদ্ভট সব প্রশ্ন করে।এসব কি আঙ্কেলকে বলবো? নাহ্ এসব কি ভাবছি আমি? আঙ্কেল কেন,কাউকে এই বিষয়ে বলা যাবে না।ফোনের ওপাশ থেকে আঙ্কেল বললেন
” তুমি চাইলে ব্রেক নাও,এটা আমার ভেবে বসো না যে আমি তোমায় চাপ দিচ্ছি ”
” না না আঙ্কেল, আপনি কি যে বলেন।আমি একটু ঝামেলায় পড়েছি, আসলে সামনে আমারো পরিক্ষা তো,তবে আমি যাবো, আপনি একদম চিন্তা করবেন না ”
” আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি খেয়েছো?
” না আঙ্কেল,এখনো খাইনি,”
” কি বলো,সকাল নয়টা বাজে,এখনো খাওনি কেন? এক কাজ করো,বাড়িতে চলে এসো,একসাথে নাস্তা করবো ”
” আঙ্কেল আমার ভার্সিটিতে ক্লাস আছে তো,আমি ক্যান্টিনে খেয়ে নিবো,অন্য কোনোদিন নাহয় আপনার সাথে খাবো ”
” আচ্ছা ঠিক আছে ”
ফোনটা রেখে দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।আঙ্কেলকে পরিক্ষার বিষয়টা মিথ্যে বলায় মনটা খুব খারাপ লাগছে।এই মানুষটাকে কেন যানি আমার মিথ্যে বলতে ইচ্ছে করে না,এমনকি তার কোনো কথাও ফেলতে ইচ্ছে করে না।
ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম।গত দুইদিন থেকে হোস্টেলে রান্নার বুয়াটা আসছে না,তাই সকালের নাস্তাটা ক্যান্টিনেই করি।প্রতিদিনের মতো আজকেও ক্যান্টিনে নাস্তা করে কলাভবনের সামনে আসতেই দেখলাম অন্তু মুখ গুজে বই পড়ছে।এখানে আসার প্রধান কারন হলো অন্তুকে খুজে বেড় করা।এই ছেলেটা আমায় খুব পছন্দ করে।আমি যে এটা বুঝি সেটা কখনো ওকে বুঝতে দিই না।যতো সম্ভব পারি ওর থেকে দুরে দুরে থাকার।তবুও আজ প্রয়োজনে ওর কাছে যেতে হলো। ওর কাছে গিয়ে বললাম
” হাই অন্তু ”
” হাই,মিষ্টি যে,কেমন আছো,বসো বসো, কখন এলে? রোদে পুরে গেছো একদম ”
” আজ মোটেও রোদ ওঠেনি অন্তু, সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ছে।আকাশ একদম মেঘাচ্ছন্ন ”
” ওহহহ লক্ষ্য করিনি,বই পড়ছিলাম তো ”
” সে যাই হোক,তোমার জন্য একটা টিউশনির ব্যাবস্থা করে দিতে পারি।বেশ মোটা অঙ্কের টাকা পাবে,সাথে প্রতিদিন ভিন্ন করমের বিস্কুটের সাথে চা,কফি।রাজি থাকলে বলো,নাহলে অন্য কাউকে ঠিক করবো ”
” না,না অন্য কাউকে বলতে হবে না।আমি রাজি।আমিও চাচ্ছিলাম টিউশন করাতে,ভালোই হলো তুমি অফার করলে।আর হ্যা,আমার প্রথম টিউশনির টাকা দিয়ে তোমায় নিয়ে ডিনার করবো আচ্ছা? ”
” আচ্ছা সেটা পরে দেখা যাবে।এই কাগজে ঠিকানা লেখা আছে।সময় মতো চলে যেও ”
” আচ্ছা তোমার নাম্বারটা দাও,আমি যদি খুজে না পাই তাহলে ফোন করে জেনে নিতে পারবো ”
” আমাকে পড়াতে যাবে না তুমি।যাকে পড়াবে তার নাম্বার লেখা আছেই।আমি যাই, ক্লাস আছে ”
অন্তু কিছু বলতে গিয়েও বললো না।যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ওর সামন থেকে চলে আসলাম।অন্তুকে বলার কারন হচ্ছে অন্তু আমাদের ডিপার্টমেন্টের টপ দশ জনের একজন।সারাক্ষণই পড়ছে,ওর কাছে বিষন্নকে দিলে বিষন্ন ভালোই পড়বে।
পরপর দুইটা ক্লাস করে খুব টায়ার্ড লাগছে।নীলুটাও আজ ভার্সিটিতে আসেনি।তাই একা একা আরো বোরিং ফিল হচ্ছে।হোস্টেলে যাওয়ার জন্য ক্যাম্পাস থেকে গেইটের দিকে হাঁটছি।তখনই ভার্সিটির সিনিয়র জুনায়েদ ভাইয়ের ডাক কানে এলো।শুনেও না শুনার ভান করে জোড়ে হাটা দিলাম।উনি দৌড়ে আমার সামনে এসে বললেন
” কি হলো মিষ্টি, সিনিয়র ভাই ডাকছে আর তুমি চলে যাচ্ছো যে? ”
” ভাইয়া আমি শুনতে পাইনি।ডাকছিলেন নাকি? ”
” হ্যা।আজকাল চোখে পড়ছে তুমি ছেলেদের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলছো।নামের মতো তুমিও মিষ্টি একটা মেয়ে,তোমার আগবাড়িয়ে কথা বলা মানায় না”
জুনায়েদ ভাইকে কলেজে সবাই প্রায় সবাই চেনে।রাজনীতি,এবং কলেজের সব মারপিটেই প্রায় তার দেখা পাওয়া যায়।ইদানিং তার কথা বলার ধরন আমার ভালো ঠেকছে না,মনে হচ্ছে ওনার বাজে মতলব আছে।তাই যতটা পারি এড়িয়ে চলি,।আমি বুঝতে পারলাম না উনি কোন ছেলের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলার কথা বলছেন।নিচু স্বরে বললাম
” কোন ছেলের কথা বলছেন? ”
” ওই যে দেখো বাইকের সাথে বাধা।চিনতে পেরেছো? ”
বলেই উনি ওনার বাইকের দিকে নখ তুলে দেখিয়ে দিলেন।দেখলাম সেখানে অন্তুকে বেঁধে রাখা হয়েছে,তার মুখ দিয়ে র*ক্ত পড়ছে।চোখ ফুলে আছে। আমি হতভম্ব হয়ে বললাম
” ওকে এইভাবে কে মেরেছে? ”
” আমি।তুমি আগ বাড়িয়ে যার সাথেই কথা বলবে তার অবস্থা এমন হবে বুঝলে? ”
ওনার উদ্দেশ্য ভালোই বুঝতে পারলাম।এখন ওনার চোখ আমার ওপর পড়েছে।আমি কিছু না বলে ওখান থেকে চলে আসলাম।মনে মনে ভিষন রাগ হতে লাগলো।এসব ছেলেদের জন্য মেয়েরা ভার্সিটির মতো যায়গাতেও সেইফ না।
বিকেলে আমার হোস্টেলের ছাঁদে চার বান্ধবী মিলে আড্ডা দিচ্ছি।ঈশা ওর বয়ফ্রেন্ডের পাগলামিগুলি বলছে,সেটা শুনে নীলু আর তিশা হাসিতে ফেটে পড়ছে।আমি গম্ভীর হয়ে রেলিং ধরে দারিয়ে আছি।কেন জানি খুব বিষন্নবোধ হচ্ছে।আমার চুপ থাকা দেখে তিশা আমার পিঠে হাত রেখে বললো
” কিরে মিষ্টি,মন খারাপ নাকি তোর? ”
” না রে,এমনিই ”
নীলু বললো ” মিষ্টি কলেজে গিয়েছিলি আজ? ”
” হ্যা,তোরা কেউ গেলি না কেন? ”
ঈশা বললো ” কাল সারারাত সিহাবের সাথে ঝগড়া করে ভোরে ঘুমিয়ে গেছি দোস্ত,ও কি করেছে জানিস, কাল…..”
ঈশার কথা থামিয়ে দিয়ে নীলু বললো ” তোদের নিব্বা নিব্বির প্রেমর কথা বন্ধ করবি? ”
তিশা আবারো বললো ” মিষ্টি, তোকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে, কিছু কি হয়েছে ভার্সিটিতে? ”
” দোস্ত আমি বিপদে পড়ে গেছিরে,আমাদের কলেজের ওই সিনিয়র ভাইটা আছে না? জুনায়েদ? ”
ঈশা বললো ” জুনায়েদ আবার কি,বল জানো*য়ার,কি করেছে ও? তোকে কিছু বলেছে নাকি? ”
” তেমন কিছু বলেনি,আমার মনে হয় এবার উনি আনার পেছনে পড়েছেন।”
নীলু আঁতকে উঠে বললো ” কি বললি? ওই বেয়া*দপ ছেলেটা তোর পেছনে পড়লো? ”
তিশা বললো ” ওই ছেলের জন্য কতো মেয়ের সর্বনাশ হয়েছে।কিছুদিন আগেও তো একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।আমাদের ডিপার্টমেন্টের ফর্সা করে একটা মেয়ে আছে না? কি যেন নাম ”
ঈশা বললো ” ওর নাম দীপা।মেয়েটার জীবনটাই শেষ করে দিয়েছে।জানে*য়ারটা ভিডিও এমনভাবে করেছে যে শুধু দীপাকেই দেখা যাচ্ছে।ইচ্ছে করে ওর……. ”
” ঈশা প্লিজ চুপ কর,প্লিজ।এসব কেন বলছিস,আমার এমনিতেই চিন্তা হচ্ছে,।প্লিজ এসব কথা বাদ দে ”
ঈশা চুপ করলো না।ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো,” ভিডিওটা আমার কাছে আছে,দেখবি নাকি?দারা বেড় করছি, এক মিনিট ”
বলেই ফোনের লকটা খুললো।আমি ওখান থেকে চলে আসলাম। আমি জানি ঈশা এখন থামবে না।এই মেয়েটা প্রচন্ড বাড়াবাড়ি করে সবসময়।ওর বেশিরভাগ কথা ও কাজ অশ্ল*লীল।
_______________________
বিষন্ন বসে আছে মোটু,বাটু ধরনের একটা লোকের সামনে।লোকটার গাল একদিকে ফুলে আছে।এখন থেকে ইনিই বিষন্নকে পড়াবে।বিষন্নের মাথায় আগুন জ্বলে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছে ” মিষ্টি,আমার হাত থেকে বাঁচার জন্য তুমি অন্য টিউটর ঠিক করেছো?এবার দেখো মিস মিষ্টি, তোমার কি অবস্থা করি ”
চলবে?
#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৫
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
পড়ার টেবিলে চুপচাপ বসে আছি।আমার সামনে বসে আছে আমার নতুন টিউটর।বিরক্তি নিয়ে একপলক তাকালাম।দেখেই মনে হচ্ছে গাধা টাইপ, বইয়ের বাহিরের কোনো কিছু নিয়ে তার পেট ব্যাথা নেই।উনি খুকখুক করে কেশে বললেন
” আমি অন্তু।ইংরেজি নিয়ে অনার্স করছি ঢাবি তে।তোমার নাম কি? ”
” বিষন্ন ”
” নামের মধ্যেই কষ্ট।যাই হোক,আমায় মিষ্টি পাঠিয়েছে বললো তোমায় টিউশনি করাতে।আর আমায় ভাই বলে ডাকলেই হবে ”
কি করবো এখন আমি? এর দারা কি কোনো খেলা যেতে পারে?।ইয়েস,পেয়েছি,এবার একেই বানাবো আমার দাবা বোর্ডের ঘোড়া।এর দারায় মিষ্টির ওপর নজরদারি করানো যাবে।মিষ্টি ভার্সিটিতে কোন ছেলের সাথে কথা বলে,কে ওর পেছনে ঘোরে সব জানতে পারবো এই গাধার মাধ্যমে।এখন তাহলে শুধু একে হাতে আনতে হবে।আমি একটু ঝুকে এসে বললাম
” অন্তু ভাই, মিষ্টিকে কেমন লাগে আপনার? ”
অন্তু ভাইকে দেখে মনে হলো লজ্জা পেয়েছে।উনি বললেন ” ওই আর কি, ভালোই ”
” কেমন ভালো লাগে ? রিকশায় একসাথে বসার মতো?”
অন্তু ভাই এইবার আরো লজ্জা পেলো। হেসে হেসে বললো ” আরেহ না,কি যে বলো ঠিক তেমন না ”
” তাহলে কেমন? ”
” ওই, অ্যা,আরে বুঝো না ”
” বুঝলাম। তা মিষ্টিও কি আপনাকে পছন্দ করে নাকি? ”
” আরেহ না, ও তো আমার সাথে বেশি কথাই বলে না।সারাক্ষণ এড়িয়ে চলে ”
মনে মনে ভাবলাম,বেঁচে গেলি অন্তু গাধা।যদি বলতি মিষ্টি তোর সাথে কথা বলে,সময় দেয়,তাহকে এতোক্ষণে তোর কি যে হতো কল্পনাও করতে পারতি না। অন্তু গাধাটা হঠাৎ সিরিয়াস হয়ে প্রশ্ন করলো
” আচ্ছা, মিষ্টি তো তোমার সিনিয়র।তাহলে তুমি নাম ধরে বলছো কেনো? ”
” সবসময় ডাকি না,যখন ও সামনে থাকে তখন আপু বলতে হয়।আর মাঝেমাঝে ইচ্ছে করেই নাম ধরে ডাকি,তখন মিষ্টি কি করে শুনবেন? ”
অন্তু গাধাটা মনে হলো শুনতে খুব আগ্রহী।আমার দিকে হালকা ঝুঁকে এসে বললো
” কি করে? ”
” গাট্টা ”
” মানে? ”
” মাথায় একটা গাট্টা মেরে বকে,কখনো গাল টেনে লাল করে দেয়।সুন্দরী একটা মেয়ে গাল টেনে লাল করে দিচ্ছে বিষয়টা কিন্তু মন্দ না,কি বলেন? ”
” সেটা ঠিক বলেছো”
” আপনাকেও মিষ্টি কখনো এরকম কিছু করেছে নাকি?”
” না তো”
” তাহলে যে বললেন ঠিক? আচ্ছা যাই হোক,মিষ্টি মেয়েটাকে আপনার কেমন লাগে সেটা বলেন,দরকার হলে আমি আপনাদের সেটিং করে দিবো,সত্যি বলছি ”
” সত্যি বলছো? ”
” একদম”
” আসলে মিষ্টি তো আমাকে সহ্য করতেই পারে না,আমি ডাকলেও শুনে না ”
” সুন্দরী মেয়েদের অহংকার থাকা অপরাধ না।আচ্ছা, মিষ্টি কি অন্য ছেলের সাথে ঘোরে,বা কথা বলে নাকি? শুধু বলেন,তারপর দেখেন আমি কি করি ”
” না, তেমন তো কারো সাথে কথা বলে না।তবে কলেজের সিনিয়র জুনায়েদ ভাই ইদানিং ওর পিছে পড়েছে বুঝলে, ”
কথাটা শুনে মাথায় র*ক্ত উঠে গেলো।মাথায় শুধু একটা নাম বাজতে থাকলো,জুনায়েদ,জুনায়েদ,জুনায়েদ।গম্ভীর স্বরে বললাম
” জুনায়েদ কে? ”
” রাজ*নী*তি করে,বিরাট পাওয়ার।সব মার*পিট, ঝামেলায় ওর দেখা পাওয়া যায় ”
” মিষ্টির পেছনে পড়েছে মানে? মিষ্টিকে বিরক্ত করে? ”
” সেটা জানিনা।কাল যখন মিষ্টি আমায় টিউশনির কথা বললো তারপর উনার দলের একজন এসে আমায় মারতে শুরু করলো।তারপর মিষ্টিকে ডেকে কি যেন বললো।আমি জিগ্যেস করলাম কেন আমায় মারছে,ওরা বললো, মিষ্টির সাথে কথা বলেছি জন্য মারছে ”
” এই ব্যাপার? জুনায়েদ নাম,তাই না,আচ্ছা ”
” গালটা এখনো ফুলে আছে,”
অন্তু গাধাকে তাহলে হাতে আনা গেলো।এখন ও আমায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছে।নইলে নিজের মার খাওয়ার বিষয়টা এতো সহজে কেউ বলতে পারে না।আমার মনে হচ্ছ সারা শরীরে আগুন জ্বলা শুরু হয়েছে,সেই আগুন দাউদাউ করছে।আর মাথায় শুধু জুনায়েদ নামটা বেজেই যাচ্ছে।জুনায়েদ,তুই যেই হোস না কেন,তোর সময় ফুরিয়ে এসছে,তুই বিষন্নের কলিজায় হাত দিস,কত্তোবড় সাহস তোর।দেরি করা ঠিক হবে না,এর একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। অন্তু গাধাটা বলে উঠলো
” আমি আজ আসি, কাল থেকে পড়া শুরু হবে,”
” কাল আসার দরকার পড়বে না।কারন মিষ্টি নিজেই পড়াতে আসবে”
গাধাটা মনে হলো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে।চুপচাপ চলে গেলো।একটুপর নীলু আপু ঘরে ঢুকলো।হাতে ট্রে-তে করে নাস্তা।ঘরে এসে বললো
” কিরে বিলু,তোর টিউটর কই? ”
” চলে গেছে ”
” ও মা, পনেরো মিনিটও হলো না, ওমনি চলে গেলো? ”
” বাদ দে।আপু এখানে বসতো ”
নীলুপুর হাত থেকে ট্রে নিয়ে টেবিলে রেখে ওকে বিছানায় বসিয়ে বললাম
” আচ্ছা আপু আমি দেখতে কেমন? ”
” ছ্যাদরের মতো ”
” ধূর মজা করিস না তো,আমি এখন সিরিয়াস ”
” আচ্ছা যা আমিও সিরিয়াস ”
“আচ্ছা আপু তোর বান্ধবীরা রিলেশন করে? ”
” হ্যা করে,কেন? ”
” সবাই করে? আই মিন,কেউ বাদ নেই? ”
” হ্যা সবাই’ই তো রিলেশন করে।না করার মধ্যে আছি আমি আর মিষ্টি ”
” তুই সত্যি বলছিস? মিষ্টি রিলেশন করে না তুই সিওর নাকি? ”
” মোটামুটি,ও কখনো আমার কাছে কথা লুকায় না।অতিরিক্ত সুন্দরী মেয়েদের বয়ফ্রেন্ড থাকে না, এটা জানিস না? ”
কথা শেষ করে আবারো বললো ” ওয়েট ওয়েট,এসব বলার মানে কি? তুই তো কখনো এসব বলিস না,।ওহহহহহ ভাইয়ু, তুমি কি কারো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছো নাকি? ”
” আরে না, কি যে বলিস ”
” শয়তান আমার কাছে লুকিয়ে লাভ হবে না,দেখা যাবে শেষমেশ আমি ছাড়া গতি নেই।চটপট বলে ফেল মেয়েটা কে ”
” আরে না তেমন কিছুই না,এমনিই শুনলাম ”
” আচ্ছা, তাই নাকি?”
অনেকক্ষন বোঝানোর পরে নীলু আপুকে বিদেয় করতে পারলাম।খুব ঘুম পাচ্ছে কেন জানি।দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম ভাঙলো সন্ধা ৭ টায়।উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্যা*ন্ডেজটা ভালোভাবে হাতে পেচিয়ে বাইকের চাবিটা হাতে নিলাম।মিষ্টির এমন আচরনের একটা শাস্তি হওয়া দরকার।প্রথমত আমার হাতের এই অবস্থা সেটা দেখেও চুপ করে আছে,একবারও দেখতে আসেনি।দ্বিতীয়ত অন্য টিউটর ঠিক করেছে।এতো সাহস পেলো কোত্থেকে? কি ভেবেছে বিষন্ন চুপ করে থাকবে? নেভার,ইউ আর রং মিস মিষ্টি, আই এম কামিং বেবি,বি রেডি!।মিশন মিষ্টি! স্টার্ট নাও।
চাবিটা হাতে নাচাতে নাচাতে নিচে নামতেই দেখলাম সদর দরজা দিয়ে মা আসছেন।আমায় দেখে সুটকেস ওখানেই রেখে দিয়ে দৌড়ে আমায় জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো।মনে মনে ভাবলাম ” মিশন মিষ্টির দফারফা করে ছাড়লো,কখন ছাড়া পাবো কে জানে! “।
প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে মায়ের সামনে সোফায় বসে আছি।মা আমার হাতে ফু দিচ্ছেন, আর কান্না করছেন।দেখে মনে হচ্ছে আমার হাত পুরে যায়নি,আমি অক্কা পেয়েছি।পাশেই নীলু আপু দারিয়ে মিটিমিটি হাসছে।আমি করুন দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম,কিন্তু ও ভেংচি কাটলো।ইশারায় বুঝালাম যে এখান থেকে ছাড়িয়ে দিতে পারলে চকলেট আনবো।এবার মনে হচ্ছে কাজ হয়ে যাবে।
মায়ের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।একমাত্র ছেলে হওয়ায় আমার প্রতি মায়ের ভালোবাসা সীমাহীন। তাইতো সামান্য বিষয়েও এতে উত্তেজিত হয়ে পড়েন।বাইকে স্টার্ট দিলাম।
বাইক থামালাম নীল রঙ্গ করা একটা বাড়ির সামনে।তিনবার হর্ণ বাজালাম।এই বাড়িতে শুভ্রা থাকে।শুভ্রা আমার ক্লাসমেট। খুব ভালো বন্ধুত্ব আমাদের।ওকে বলা হয়েছে এই সময়ে আমি আসবে,তিনবার হর্ণ বাজালেই যেন চলে আসে।সেরকম’ই হলো।হর্ণ বাজাবোর সঙ্গে সঙ্গেই শুভ্রা গেট খুললো।মনে হলো গেইটের পেছনেই এতোক্ষণ দারিয়ে অপেক্ষা করছিলো কখন গেট খুলবে।
রাস্তায় নিয়নের বাতি জ্বলছে।সেই আলোয় শুভ্রাকে খুব সুন্দর লাগছে।এই মেয়েটা বিষন্নকে সাঙ্ঘাতিক পছন্দ করে,কিন্তু ভয়ে বলতে পারে না কখনো।বিষন্নও তার আবেগটা বুঝতে পারে না,আবার হতে পারে বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান করে থাকে।শুভ্রা হাতের ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বললো
” এখন বোরখা দিয়ে কি করবা? ”
আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম।এই রকম প্রশ্ন যে শুভ্রা করবে সেটাতো স্বাভাবিক, কিন্তু এটার কি উত্তর দিবে সেটাতো আগে ভেবে রাখিনি।বেশ মুশকিলে পড়ে গেলাম।মাথা কাজ করছে না এখন কি বলবো।আমতা আমতা করে বললাম
” ধরে নাও সারপ্রাইজ,”
” ও আচ্ছা।বাড়িতে এসো,চা খেয়ে যাবে ”
” আজ না শুভ্রা,এক যায়গায় যেতে হবে, অন্য কোনোদিন আসবো ”
” কবে আসবে? ”
শুভ্রা এতো আনন্দে আত্মহারা হয়ে কথাটা বললো যে আমায় অনিশ্চা শর্তেও বলতেই হলো যে দু একদিনের মধ্যেই আসবো।বাইক স্টার্ট দিলাম,শুভ্রা এখনো দারিয়ে আছে,তার চোখে গভীর কৌতুহল।
____________________
মিষ্টি একটা বই পড়ছে।বঙ্কিমচন্দ্রের একটা উপন্যাস। আর তার বেডে শুয়ে আছে তিশা।তিশা হলো মিষ্টির রুমমেট।সে গভীর মনোযোগ দিয়ে ফোনে কি যেন দেখছে,তার চোখের পাতা ও নড়ছে না,এতোই মনোযোগ দিয়ে দেখছে।দরজায় টুকটুক করে শব্দ হলো।কেউ কড়া নাড়ছে।মিষ্টি তিশাকে বললো
” তিশা দেখতো কে”
” এখন পারবে না দোস্ত,একটা সিরিজ দেখছি,রোমান্টিক তার সাথে প্রচুর হ*ট। ঈশা দিয়েছে ”
মিষ্টি রাগি স্বরে বললো ” তুইও দিন দিন ঈশার মতো হয়ে যাচ্ছিস, ”
” এতে রাগার কি আছে?একদিন তো জামাইয়ের সাথে এসব করতেই হবে,আগে থেকে জানা থাকলে সমস্যা হবে না বুঝলি,তুই দেখবি? ”
” তুই দেখ,ফোনে ঢুকে যা ”
দরজায় আবারে টকটক করে টোকা পড়লো।মিষ্টি বিছানা থেকে নামতেই তিশার ফোনের স্ক্রিনে চোখ পড়লো।চোখ পড়তেই লজ্জায় মিষ্টি চোখ অন্য দিকে সরিয়ে নিলো। স্ক্রিনে দেখলো একটা ছেলে আর একটা আ*প*ত্তিকর অবস্থায় সময় কাটাচ্ছে।মিষ্টি দরজা খুলতেই দেখলো বোরখা পরিহিত একটা মহিলা,শুধু চোখ দুইটা দেখা যাচ্ছে। তিনি হুট করে ঘরে ঢুকে পড়লেন।মিষ্টি কিছুটা অবাক হয়ে বলল
” কাকে চান? ”
বোরখার আড়ালে থাকা বিষন্ন ঘরের চারপাশটা দেখছে।মেয়েদের ঘরে এই প্রথম সে ঢুকলো।নিজের বোন নীলুর ঘরেও সে নিতান্ত প্রয়োজন না হলে ঢোকেনা।বিষন্নের চোখ পড়লো বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা তিশার ওপর।ওর একটা পা ঝু*লে আছে ফ্লোরে,বাম হাত চেয়ারের সাথে ভর করে দিয়েছে। একটা গেঞ্জি পরেছে,বু*কে কোনো ও*ড়না নেই, পড়নের প্লাজু হা*টুর ওপর অব্দি উঠে গেছে।সে গভীর মনোযোগ দিয়ে ফোনে কি যেন দেখছে।বিষন্ন ইতস্তত হয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
মিষ্টির দিকে তাকাতেই বিষন্ন হতভম্ব হয়ে গেলো।সে কখনো এই অবস্থায় মিষ্টিকে দেখেনি।মিষ্টির পরনে একটা মেরুন কালারের গেঞ্জি, ঢি*লেঢা*লা প্লাঃজু,গলায় কোনো ও*ড়*না নেই।ওড়না না থাকায় মিষ্টির ধব*ধবে বু*ক টা বিষন্নের চোখে আঁটকে গেছে।বিষন্ন অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মিষ্টির উ*ন্মু*ক্ত গ*লা*র দিকে।
চলবে?