তোমায় চেয়েছি পুরোটাই পর্ব -০৭

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৭
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

আন্টি ছাদের দরজা খুললেন।দেখলেন মিষ্টি একা দারিয়ে আছে।আন্টি সন্দেহপ্রবণ স্বরে বললো

” মিষ্টি,ছাঁদে কেউ ছিলো নাকি? ”

” কই না তো আন্টি, কে থাকবে? ”

” আমি যে শুনলাম কে যেন কথা বলছিলো ”

” আমিই কথা বলছিলাম আন্টি,বাবা মায়ের সাথে কথা বলছি,ওই যে দূর আকাশে ওনারা, ওদের সাথে কথা বলছিলাম ”
আন্টি এখনে সন্দেহ নিয়ে আমায় দেখছেন।,দরজা খোলার শব্দে বিষন্ন উপায়ন্তর না পেয়ে ট্যাঙ্কের মধ্যে ঢু*কে পড়েছে।আন্টি আমার সাথে টুকটাক কথা বলছে আর চারপাশে তাকাচ্ছে, তিনি দেখছেন সত্যিই কেউ আছে কি না।

“বলেছি না বিকেল ৬টার পর ছাঁদে আসা নিষেধ”

” সরি আন্টি,আমি রুমে যাচ্ছি ”

আন্টির ভয়ে রুমে চলে আসলাম।বিষন্ন ট্যাঙ্কেই আ*ট*কা প*ড়ে আছে,ইসস ওর ঠান্ডা লেগে যাবে তো।দরজার ফাঁ*ক দিয়ে দেখতে চেষ্টা করলাম, আন্টিকে দেখা যাচ্ছে না,মনে হলো চলে গেছে।ছাঁদের দরজায় তালা মে*রে চলে গেছেন।আমার কাছে আরেকটা চাবি বানানো ছিলো,সেটা দিয়ে তালা খুলে ছাঁদে গেলাম।ট্যাঙ্কের ঢাকনা খুলতেই বিষন্ন বোয়াল মাছের মতো বড় বড় হা করে নিশ্বাস নিচ্ছে।ওকে ধরে বাইরে বের করলাম।বে*চা*রা ভিজে একাকার।মুখ হা করে হাঁপাচ্ছে। আমার খুব হাসি পেলো।মুখ চেপে হাসছি দেখে বিষন্ন রাগি দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে।আমি হাসি বন্ধ রেখে বললাম

” যেমন এসেছিলো,এখন বোঝো মজা,আন্টি চলে গেছে,তুমি প্লিজ এখন চলে যাও,”

” ওই মহিলা এতোরাতে আসে কেন,ওর কি পে*ট খারাপ নাকি? ”

” হ্যা পে*ট খারাপ,রাতে খাওয়ার পর হাটাহাটি না করলে খাবার হজম হয় না।তুমি এখন যাও প্লিজ ”

আমার এরকম সস্তা রসিকতায় বিষন্ন হাসলো।আমিও হাসলাম।এই মুহূর্তে নিজেকে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। যার খুশী থাকার সবকিছু আছে।

বিষন্ন চলে গেলো।রুমে ঢু*কে দরজা বন্ধ করে দরজার কপাট ধরে বড় বড় নি*শ্বাস ফেলতে লা*গলাম।খুব জোড় বাঁচা বেঁচে গেছি।আন্টি দেখলে কি হতো ভেবেই হাত পা জমে আসছে।

____________

বো*র*খা*টা এমন কেন? বারবার পায়ে আটকে যাচ্ছে, এইটুকু সিঁড়ি নামতেই মনে হচ্ছে নাক মুখ স*মান করে ফেলবো।সামনে দারোয়ানকে দেখা যাচ্ছে,।এই দারোয়ান খুব প্যা*রা দেয়,যেমন আসার সময় বললো

” আফা এতো রাইতে আফনে বাইড়ে কেমনে গেলেন,গেট তো বন্ধ,”

আমি চুপ করে রইলাম।দারোয়ানকে ওভারটেক করার চেষ্টা করলাম,উনি আমার সামনে এসে বললেন

” আফা আফনে ভেতরে যাইতে পারবেন না,এতো রাতে বাইরে থেকে আসলে ম্যাডামরে খবর দিয়া তারপর যাইতে বলছে।আফনে দারান,আমি ম্যাডামরে ফোন দিতাছি ”

এই ব্যা*টা*র কাজ দেখে প্রচন্ড রাগ লাগছে।তবে এদের সামলানো কোনো ব্যাপার না।ওনার হাতে এক হাজার টাকা ধরিয়ে উপড়ে চলে এসেছিলাম।এখন যাওয়ার সময় কোনো নাটক শুরু করবে কিনা কে জানে।এসব ভাবতে ভাবতেই দারোয়ান বললো

” আফা কই যান? ”

চুপ করে রইলাম।আমি ওনাকে এড়িয়ে যেতেই উনি সামনে দারিয়ে বললেন

” আফা রাইত,বেরাইতে বাইড়ে যাওন নিষেধাজ্ঞা আছে ”

আগেরবারের মতো হাতে টাকা গুজে দিয়ে বেড়িয়ে আসলাম।পাঁচশ দিয়েছিলাম,মানলো না,শেষে এক হাজার দিয়েই বেড়িয়ে আসলাম।একদম দম বন্ধ লাগছে।হোস্টেল থেকে দূরে চলে এসছি,এখন এটা খুলা যেতে পারে। খু*লতেই হঠাৎ দেখলাম সামনে একটা মধ্যে বয়স্ক লোক টকটক করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি হেসে বললাম, ” কি চাচা, অবস্থা ভালো তো? প্রেমে পড়ার কি একটা জ্বা*লা দেখছেন? বো*র*খা পড়ে ঘুরতে হয় “।কথা শেষ হওয়ার আগেই লোকটা কাঁ*পতে কাঁ*পতে রাস্তায় প*ড়ে গেলো।লোকটার অল্প ভ*য়েই ফি*ট হওয়ার রো*গ আছে বোধহয়।

বাইকটা হোস্টেল থেকে একটু দূরে এখানে স্টান্ড করে রেখেছিলাম।ফোনে দেখলাম রাত দশটা চল্লিশ বাজে।ওহহহ শিট,এতোক্ষণে তো বাবা অফিস থেকে চলে এসেছে,আজ আমার কপালে বোধহয় শনি নাচছে।বাইক স্টার্ট দিয়ে ঝড়ের গতিতে বাড়িতে আসলাম।

বাবা খাবার টেবিলে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন।তার সামনে মা ঘুমঘুম চোখে বসে আছে।বুঝতে পারলাম আজকে কথা শুনতে হবে।এক পা এক পা করে রুমের দিকে যেতেই বাবা ডাকলেন

” বিষন্ন, এই দিকে আসো ”

আমি কাছে এসে দুইহাত পেছনে রেখে দারালাম।বাবাকে আমি সীমাহীন ভয় পাই।কেন ভয় পাই সেটা আজোও বুঝতে পারিনা,বাবা কখনো আমার গা*য়ে হাত তোলেন না,তবুও কেন জানি বাবাকে খুব ভয় লাগে।ভয়ে ভয়ে বললাম

” বাবা কিছু বলবে? ”

” এতো রাত অব্দি ঘোরাফেরা ঠিক না,দিনকাল ভালো না, বাইক নিয়ে গিয়েছিলে? ”

” আ…মানে….হ্যা বাবা ”

” কতোবার বলেছি বাইক আ*স্তে চালাবে? আমার কথা কি তোমার কা*নে যায় না? ”

” বা..বাবা,আমি তো বাইক আ*স্তেই চালিয়েছি আজ ”

” তুমি যখন যাও তখন আমি সিগারেটের দোকানটায় ছিলাম।এতো জোড়ে তুমি চলে গেলে যে সেই চলে যাওয়ার বাতাসে লাইটারের আ*গু*ন নিভে গিয়েছিলো,”

” সরি বাবা আর কখনো এমন হবে না।এই যে কা*নে ধ*রছি ”

” কানে ধরতে হবে না,খেয়ে নাও,তোমার মা খাবার নিয়ে বসে আছে ”

বলেই বাবা খবরের কাগজ হাতে নিয়ে চলে গেলো।আমি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মাকে বললাম

” মা আজকে খাবো না,খেতে ইচ্ছে করছে না ”

” একটু খানি খেয়ে নে বাব,রাতে খিদে লাগবে তো ”

খাবার প্লেট থেকে এক টুকরা শশা মুখে দিয়ে রুমে চলে আসলাম।সব চাপ যেন আজকেই একসাথে এসে গেছে।ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।ফ্রেশ হয়ে আসতেই ফোনটা বেজে উঠলো।মিষ্টি ফোন করেছে, ফোনটা রিসিভ করতেই মিষ্টি বললো

” ফোন ধরতে এতো লেট হয় কেন?কয়বার ফোন দিয়েছি,ধরছিলি না কেন? ”

” ওয়াসরুমে ছিলাম ”

” বাড়িতে পৌঁছে তো জানাবি নাকি? আর আমি এখানে চিন্তায় চিন্তায় মরে যাচ্ছি ”

” কিসের চিন্তা? ”

” এতো রাতে কিভাবে যাবি সেটা নিয়ে চিন্তা হবে না? ”

” বাইক নিয়ে গিয়েছিলাম,তোমাদের হোস্টেলের সামনে যে চায়ের দোকানটা আছে,ওখানে রেখেছিলাম।আর আমি ছোট নাকি যে একা আসতে পারবো না? ”

” ছোটোই তো,পিচ্চি ছেলে,আচ্ছা রাখলাম”

” রাখবে কেন, একটু কথা বলি ”

” কি কথা? ”

” একটা ছেলে,একটা মেয়ে কি নিয়ে কথা বলে জানোনা? ”

” জানতে চাই না আমি,রাখলাম,গুড নাইট,”

” এইইই শুনো ”

” কি হলো আবার ”

” কাল কখন আসবে ? ”

” কোথায় আসবো? ”

” আমায় পড়াতে,”

” আমি তোকে পড়াবো না,তোর পাগলামি যতদিন বন্ধ না হবে আমি তোর সামনেও যাবো না,ফোন রাখলাম ”

” তাহলে কিন্তু আবার চলে যাবো তোমার ওখানে,আর এবার গিয়ে কিন্তু দু*ষ্টা*মি করবো বলে দিলাম ”

” এসব কি ধরনের রসিকতা বিষন্ন? ”

” আচ্ছা আর করবো না,তোমার দরজার কাছে যে টেবিলটা আছে ওখানকার ড্রয়ারটা চেইক করে ঘুমাও,গুড নাইট ”

________________

ফোনটা কাটতেই কেমন যেনো মনটা খারাপ হয়ে গেলো।আমার অবচেতন মন কি বিষন্নের এ ধরনের রসিকতা আশা করছে?মন চাইছে যেন বিষন্ন এরকম রসিকতা করতেই থাকে? কিন্তু কেন এমন মনে হচ্ছে? আমি কি ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছি নাকি?

টেবিলের ড্রয়ারটা খুলতেই দেখলাম এত্তোগুলা আমার পছন্দের চকলেট,সাথে একটা বকুল ফুলের মালা।সাথে একটা চিরকুটে লেখা,আমার মিষ্টি পাখিটার জন্য। এই ছেলেটা সত্যিই পা*গ*ল।এতো বড় হয়েছে তবুও পিচ্চি স্বভাব থেকেই গেছে।ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুতেই একটা মেসেজ আসলো।বিষন্ন মেসেজ দিয়েছে,মেসেজে লেখা ” টি-শার্টে তোমায় খুব কিউট লাগে,বিয়ের পর আমরা সেইম টি-শার্ট পড়বো “।

মেসেজটা পড়ে মনেই অজান্তেই লজ্জায় হেসে ফেললাম।এই ছেলেটা এমন সব কর্মকান্ড করে!ছেলেটা এতো পা*গল কেনো?

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম সে খেয়াল নেই।তিশার ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম,তিশা বললো, কিরে ভার্সিটি যাবি না?। আমি উঠে বসলাম।দেখলাম তিশা একদম রেডি।ফোনে সময়টা দেখলাম,ক্লাসের এখনো তিন ঘন্টা দেরি।

” এখনো তো তিন ঘন্টা বাকি, এতো তারাতাড়ি সেজেগুজে কই যাচ্ছিস?”

” একটা ছেলের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি দোস্ত, এক মাস থেকে কথা হয়,আজকেই প্রথম দেখা করতে যাচ্ছি,”

” ও আচ্ছা, ”

” তোর শাড়িটা পড়েছি,আমার শাড়িটায় ভা*জ পরেছে,তুই মাইন্ড করিস না দোস্ত ”

” রিকশায় সাবধানে উঠবি ”

” থ্যাংস দোস্ত,তুই হলি আমার কেয়ারিং ক*লি*জার বান্ধবী ”

” তোকে বলছি না,রিকশার পে*রেকগুলা খুব বি*প*জ্জ*নক,কা*প*ড়ে লাগলেই ছিঁ*ড়ে যায়,তাই সাবধান ”

তিশা রা*গি দৃষ্টিতে তাকিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলো। আমি ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে রেডি হয়ে নিচে নামলাম ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য।আজকের আকাশটা খুব সুন্দর,সূর্যের আলোয় চারপাশটা চকচক করছে।একটা রিকশাকে দার করিয়ে রিকশায় উঠলাম।আজকের সবকিছু এতো সুন্দর কেন?ভাঙ্গা রিকশাটাকেও সুন্দর লাগছে,।রিকশাওয়ালা মামা রিকশা টান দিতেই কোথা থেকে যেনো উড়ে এসে আমার পাশে বসলো একটা ছেলে। আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম……..

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here