#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব:১৪
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
তিথির বুকের ভিতর বেদম প্রহর শুরু হতে লাগল। সামনে থাকা মানুষটির দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে। বাচ্চা মেয়েটি দৌড়ে গিয়ে সাদের কোলে গিয়ে উঠলো। সাদ বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো,
-রুশা মা, তুমি আমাকে না বলে চলে এসেছ কেন?(সাদ)
রুশা সাদের কথার কোন উত্তর না দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে তার গালে চুমু খেয়ে খিলখিল করে হেসে দিয়ে বলে উঠলো,
-দেখো বাবা, মাম্মাকে পেয়ে গিয়েছি। (রুশা)
তিথি রুশার মুখে থেকে মাম্মা ডাক শুনে অবাক হয়ে উঠলো। তার কাছে সবকিছু যেন বিষাদ ময় লাগছে। তিথি এক মুহূর্তও এখানে থাকতে পারবে না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো সাদের কাছে থেকে দূরে চলে যাবে। কান্না মাখা কন্ঠে রুশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-বাই, রুশা। ভালো থেকো। (তিথি)
বলেই তিথি হাঁটতে শুরু করল। সাদ রুশাকে কোলে থেকে নামিয়ে আইসক্রিমের স্টলে বসিয়ে দিয়ে আসলো। তারপর দৌড়ে গিয়ে তিথির কাছে এসে খপ করে তিথির হাত টেনে ধরল।
হঠাৎ করে হাতে টান অনুভব করতেই তিথি ঠাই দাড়িয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করে প্রিয় মানুষটি ছোঁয়া অনুভব করতে লাগল। কিছুক্ষণ নিরব রইলো চারপাশ। নিরবতা কাটিয়ে সাদ মলিন কন্ঠে বলে উঠলো,
-তিথি, কথা বলবে না আমার সাথে? আজ ও কি আমাকে ক্ষমা করতে পারো নি? (সাদ)
পাঁচ বছর পর সাদের কন্ঠেস্বর কানে যেতেই তিথির বুকটা ধক করে উঠলো। সাদের দিকে মুখ করে নত দৃষ্টিতে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো,
-কেমন আছেন? (তিথি)
তিথির প্রতিউওরে সাদ ব্যথা যুক্ত কন্ঠে বলতে লাগলো,
-ভালো নেই। তোমাকে ছাড়া একদমই ভালো নেই। (সাদ)
সাদের মুখ থেকে এমন কথা আশা করে নি তিথি।নত দৃষ্টি সরিয়ে সারাসরি সাদের মুখ পানে চাইলো সে।অবাক দৃষ্টিতে কর্কশ গলায় বলে উঠলো,
-আপনার ওয়াইফ থাকতে এমন কথা বলছেন কেন? রুশার দিকে তাকিয়ে এমন কথা বলতে লজ্জা লাগল না আপনার? (তিথি)
তিথির কথা শুনে সাদ মুচকে হেসে বলে উঠলো,
-তারমানে তুমি আজও আমাকে ভালোবাসো? (সাদ)
সাদের কথা শুনে তিথির বুকের ভেতর যন্ত্রণা শুরু করে দিল। চোখ দুটো জলে ছলছল করে উঠলো। যেকোনো সময় জলসাগর থেকে টুপ করে তিথির গাল বেয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়বে। তিথি অতিকষ্টে নিজেকে শক্ত রেখে ভাঙা গলায় বলে উঠলো,
-ছিঃ, আপনি বিবাহিত হয়েও এমন আজেবাজে কথা বলছেন কি করে? নিজের ওয়াইফের কথা একবারও মনে পড়ছে না আপনার ? (তিথি)
তিথির কথায় সাদ আট্ট হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
-বউ থাকলে তো? (সাদ)
সাদের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারল না তিথি। চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে বিষ্মিত কন্ঠে বলে উঠলো,
-আপনার বউ নেই মানে? রুশা আপনার মেয়ে না? তাহলে রুশার মা কে? (তিথি)
তিথির প্রশ্নে সাদের চোখ দুটোতে এক নিমিষেই জলে ভরে উঠলো। রুশার দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগল,
-রুশা আমার নিজের মেয়ে না। আমার ভাইয়ের মেয়ে। (সাদ)
তিথি একটা ঢোক চেপে উওজিত হয়ে বলে উঠলো,
-তাহলে রুশা আপনাকে বাবা বলে ডাকল কেন? (তিথি)
তিথির কথায় সাদ মলিন হেসে বলে উঠলো,
-রুশার বয়স যখন ছয় মাস তখন ভাবি আর ভাইয়া একসাথে রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। তারপরে থেকেই রুশা আমার কাছে থাকে। আমাকে বাবা বলে ডাকে।আমিই ওর বাবা আমিই ওর মা। (সাদ)
সাদের কথা যেন বিশ্বাস করতে পারছে না তিথি। নিজেকে আর শক্ত রাখতে পারল না সে। ইচ্ছে মতো কান্না শুরু করে দিল।
তিথিকে কাঁদতে দেখে সাদ বলে উঠলো,
-পাগলী, তুমি কাঁদছ কেন? ( সাদ)
তিথির কানে কোন কথা ঢুকল না। সে নির্লজের মতো কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো,
-আপনি এখনো বিয়ে করেন নি কেন? (তিথি)
সাদ মনে মনে এই প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে খুশি মনে বলতে লাগল,
-তোমাকে পাবার আশায়। তুমি কি জানো, যেদিন আমি তোমার ভালোবাসার মূল্য না দিয়ে চলে এসেছি, সেদিনের পর থেকে আমি তুমি নামক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছি। সময় যত পাড় হয়েছে আমি তত তোমাতে আসক্ত হয়ে পড়েছি। এমন কোন রাত নেই যে আমি তোমাকে নিয়ে ভাবি নি। (সাদ)
সাদ কিছুটা সময় চুপ থেকে আবারও বলতে লাগল,
-তুমি ভাবতে পারো, আমি কেন তোমার কাছে ফিরিনি? কেন তোমাকে বলিনি যে, আমিও তোমাকে ভালোবাসি? কারন আমি ভাবতাম তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছো। বাল্য কালের আবেগ কে কাটিয়ে উঠছো। কিন্তু আমি আজ তোমাকে দেখে বুঝতে পারলাম তুমি এখানেও আমাকে ভুলতে পারো নি।
তিথি সাদের কথা শুনে ঠাস্ করে মাটিতে পড়ল। সাদ তিথিকে বসে পড়তে দেখে, সেও তিথির পাশে বসে পড়ল। তিথির মায়া ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ,
-অনেক অনেক ভালোবাসি তোমাকে তিথি। জানি না তুমি আমাকে কি ভাববে। তবুও আমি তোমাকে স্বার্থপরের মতো জিজ্ঞেসা করছি, তুমি কি আমার রোগের ঔষধ হবে। আমি যে ঔষধ ছাড়া দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছি। শুধু মাএ রুশার জন্য কনোমতে বেঁচে আছি। আমার জীবনে যদি রুশা না থাকত তাহলে কবেই হয়তো মারা যেতাম। (সাদ)
সাদের কথায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে তিথি। চারপাশে শীতল হাওয়া বইছে। যার ফলে তিথি কেঁপে কেঁপে ওঠছে। সে গভীর চিন্তায় মত্ত। এত বছর পর নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে ‘ভালোবাসি’ কথাটি শুনে বাকরুদ্ধ সে। কিছু বলার ভাষা নেই তার কাছে। সে নিজেও যে গভীর ভাবে সাদ নামক রোগী আক্রান্ত। যেই রোগটা তিথিকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে।
এদিকে,
ত্বকি ভাইয়া আমার হাত নিজের হাতে মধ্যে নিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে উঠলো,
-সরি, তখন তোর উপর অনেক রাগ হয়েছিল। তাই নিজের রাগ কন্ট্রোল রাখতে পারি নি। (ত্বকি)
আমি মনোযোগ দৃষ্টিতে হাতের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া স্লাইড করাতে অদ্ভুত রকমের অনুভূতি হচ্ছে। তার ছোঁয়া পেয়ে প্রচন্ড অস্থির লাগছে আমার।
,,
ত্বকি গভীর দৃষ্টিতে মেঘার হাত পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। হঠাৎ ঘোর মাখা কন্ঠে বলে উঠলো,
-তুই কি বুঝিস না, তোকে ব্যথা দিলে তোর চেয়ে দ্বিগুণ ব্যথা আমি অনুভব করি। (ত্বকি)
ভাইয়ার এমন কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। একটু পরেই ভাইয়া আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
-বই বের কর। রসায়ন বইটা বের করে রিভাইছ কর।(ত্বকি)
কথাটা বলেই ভাইয়া আমার থেকে দূরে সরে বসল। আমি বই বের করে ভাবতে লাগলাম, কি হলো ভাইয়া। রেগে গেলেন কেন।
,,
ত্বকির সারা শরীর ঘেমে গিয়েছে। তার কাছে কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে। নিজের প্রতি বিরক্ত সে। সে ভাবছে, মেঘার প্রতি নরম হলে তাকে চলবে না। নাহলে মেয়েটা নিশ্চই পড়ালেখা ছেড়ে দিবে। ফলস্বরূপ মেয়েটা খারাপ রেজাল্ট করবে।
আমি পড়া শেষ করে ভাইয়া বললাম,
-শেষ। (মেঘা)
মেঘার কথায় ত্বকির ঘোর কাটল। সে পকেট থেকে ফোন বের করে মেঘার হাতে দিয়ে বলল,
-ফোনের এই রসায়ন প্রশ্নটা করে দে। বই দেখে লিখবি না কিন্তু। আমার একটু কাজ আছে তাই বাইরে যাচ্ছি। এসে যেন দেখি সব করা শেষ। (ত্বকি)
বলেই ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি মোবাইলের স্কিনের প্রশ্নটা করতে শুরু করলাম। প্রশ্নটা খুব একটা কঠিন ছিল না। অনেক সহজ ছিল তাই করতে বেশি সময় লাগল না।
প্রশ্ন শেষ করে দশ মিনিট ধরে বসে আছি। এখনো ভাইয়া বাইরে থেকে আসে নি। চুপচাপ বসে ছিলাম। মনে মধ্যে ইচ্ছে হলো ভাইয়া ফোনের গ্যালারিতে ঢুকতে। তাই সাথে সাথে দেরি না গ্যালারিতে ঢুকে পড়েলাম। গ্যালারি লক থাকায় উল্টো পাল্টা পাসওয়ার্ড দিয়ে খুলতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু গ্যালারি খুলল না। ভাইয়া নিজের নামের পাসওয়ার্ড দেয় নি। খুলতে না পেরে মনটা খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ উদাসীন মনে নিজের নাম পাসওয়ার্ডে বসাতে, গ্যালারি খুলে গেল। সাথে সাথে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।
(চলেবে)
#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব:১৫
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
সাথে সাথে আমার হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে গেল। আমি মেনে নিতে পারছি না, যে ভাইয়া আমার নামে পাসওয়ার্ড দিয়ে রেখেছে। তাহলে কি ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে? যদি আমাকে তার পছন্দ হতো, তাহলে কি কখনো আমার উপর রাগ করতে পারত? দূর আমার কোথাও ভুল হচ্ছে।
ত্বকি রুমের মধ্যে ঢুকে মেঘাকে হা করে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকতে দেখল। সে ধীরে ধীরে মেঘার পাশে গিয়ে বসল। মেঘা ব্যাপক পরিসরে চিন্তায় মগ্ন, ত্বকি রুমের মধ্যে আছে তা মেঘার ধারনার ভাইয়া। ত্বকি কিছুক্ষণ মেঘাকে পর্যবেক্ষণ করে ভালো করে খেয়াল করে দেখল তার ফোন নিচে পড়ে রয়েছে। নিজের ফোনটা নিচে পড়ে থাকতে দেখে ত্বকি প্রচন্ড রেগে গেল। মেঘাকে জোরে ধমক দিয়ে বলে উঠলো,
-স্টুপিড, কোথায় ঢুবে আছিস তুই? (ত্বকি)
ভাইয়ার হঠাৎ ধমকে আমি ছিট্টে উঠলাম। চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটল। নিজেকে সামলে অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম।
-আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? নিচে দিকে তাকিয়ে দেখ। (ত্বকি)
ভাইয়ার কথা মতো নিচে তাকাতেই ভয়ে আমার মাথার মধ্যে ব্যথা শুরু করে দিল। আজকে নির্ঘাত আমার কপালে দুঃখ আছে। তাড়াতাড়ি করে নিচে থেকে ফোন টা তুলে ভাইয়ার সামনে ধরলাম। আমর হাত কাঁপছে। সে আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
ত্বকি মেঘার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
-প্রশ্নটা সলভ করেছিস? (ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
মেঘাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে ত্বকি বিরক্তি নিয়ে বলল,
-কি বলছি শুনতে পাচ্ছিস না? খাতা দে। (ত্বকি)
ত্বকি মেঘার কাছে থেকে খাতা নিয়ে দেখতে লাগল।
অনদিকে,
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। তিথির বান্ধবী উপমা তাকে রেখে বাসায় চলে গিয়েছে। তিথি স্থির হয়ে বসে আছে। পাশে বসে সাদ পলকহীন দৃষ্টিতে তিথির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কিছুটা সময় যেতে, তিথি সিদ্ধান্ত নিল, সে সাদর প্রস্তাবে রাজি হবে না। যে করেই হোক। মনকে শক্ত রেখে, তিথি আস্তে করে উঠে দাঁড়াল। একবারও সাদের দিকে তাকিয়ে দেখলা না সে। কোন কথা না বলে হাঁটতে শুরু করল।
তিথির হঠাৎ করে উঠে যাওতে সাদ ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছে। চাপা কষ্ট নিয়ে তিথির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়েছে সে।
তিথি সামনে দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। আশেপাশে কোন দিকে একটি বার তাকিয়ে পর্যন্ত দেখছে না। হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। তার মনে হলো কেউ তাকে আষ্টেপৃষ্টে শক্ত করে ধরে রয়েছে। ভালো করে খেয়াল করে দেখল, ছোট রুশা তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। তিথি রুশাকে না চাইতে কোলে তুলে নিল। আদর মাখা কন্ঠে বলে উঠলো,
-কি হয়েছে মামুনি? (তিথি)
রুশা শক্ত করে তিথির গলা জড়িয়ে ধরল। কান্না করে দিয়ে বলে উঠলো,
-মাম্মা, তুমি কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? আমার কাছে থাকবে না। আমি যে তোমাকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না, মাম্মা। (রুশা)
রুশার মুখে মাম্মা ডাকটা তিথিকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। কেন রুশা তাকে মাম্মা বলে ডাকল?
তিথির রুশার কথা কি উওর বলবে বুঝতে পারছ না। সে যে এতটুকু সময়ে রুশার মায়াতে আটকে গিয়েছে তা বুঝতে বাকি রইল না তার। তিথি রুশা কান্না সহ্য করতে পারছে না। আনমনে সে বলে উঠলো,
-আমি এখন থেকে তোমার কাছে থাকব। কেঁদে না সোনা। (তিথি)
রুশা কান্না থামিয়ে বলে উঠলো,
-সত্যি? (রুশা)
-হুম, তিন সত্যি। আজকে থেকে আমি তোমার কাছে থাকব। (তিথি)
তিথির আর রুশার কথা শুনে সাদ যেন প্রাণ ফিরে ফেল। এত সহজে যে, তিথি রাজি হয়ে যাবে তা ভাবতে পারে নি সে। সাদ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, আর কোনদিন ও সে তিথিকে কষ্ট দেবে না। এতদিনের সব কষ্ট ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিবে।
,,
তিথি রুশাকে কোলে নিয়ে ছোফাতে বসে আছে। তার ঠিক সামনে বসে আছে সাদ। সাদের মুখোমুখি বসে আছে ত্বকির বাবা। তিনি গম্ভীর মুখে সাদকে পর্যবেক্ষণ করছে। ঠান্ডা এসির হাওয়াতেও সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছে সাদের। এভাবে প্রস্তুতি ছাড়া বিয়ে করতে এসে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে সে।
মেঘাকে পড়া দিয়ে, মায়ের ডাক শুনে বসার ঘরে এলো ত্বকি। ছোফাতে সাদ বসে থাকতে দেখে রাগে সারা শরীর গিরগির করে উঠলো তার। নিজের রাগ কন্ট্রোল রেখে কর্কশ গলায় বলে উঠলো,
-সাদ সাহেব, কেমন আছেন? (ত্বকি)
ত্বকির কথার ধরন মোটেও পছন্দ হলো না সাদের। সে ছোফা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল। হাল্কা হেসে দিয়ে বলে উঠলো,
-ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন? (সাদ)
ত্বকি সাদের কথার কোন উত্তর দিল না। চুপ করে ছোফায় যেয়ে বসল। ত্বকির মা ত্বকির পাশে এসে বসল। ত্বকির হাতটা ধরে অনুরোধ শুরে বলে উঠলো,
-ত্বকি বাবা, তোকে একটা কথা বলার ছিল। (ত্বকির মা)
-হুম। (ত্বকি)
-বাবা, আমি চায় আজকে সাদ আর তিথির বিয়েটা করিয়ে দিতি। আমার শেষ ইচ্ছে মনে করে রাজি হয়ে যা। (ত্বকির মা)
ত্বকি তার মায়ের এমন কথা শুনে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল। নত দৃষ্টিতে আস্তে করে বলে উঠলো,
-তোমারা যা ভালো মনে কর। (ত্বকি)
বলেই ত্বকি নিজের রুমে চলে এলো। রুমে এসেই গম্ভীর কন্ঠে মেঘাকে বলে উঠলো,
-তোকে আর পড়তে হবে না। মায়ের কাছে যা। (ত্বকি)
ভাইয়ার এমন কথা শুনে আমি অবাক। এত তাড়াতাড়ি পড়া শেষ করতে বলছে। আম্মুর কাছেই বা যেতে বলছেন কেন? হয়তো আমাকে দরকার। তাই আমি ভাইয়ার কথা মতো আম্মুর কাছে চলে এলাম।
বসার ঘরে এসে, ছোফার উপর অপরিচিত মানুষ দেখে আমি রুমে ফিরে আসার জন্য পা বাড়াতেই আম্মু বলে উঠলো,
-মেঘা, (ত্বকির মা)
-জী। (মেঘা)
-এখানে আয় তো। (ত্বকির মা)
আমি মাথা নিচু করে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি শুরে বলে উঠলো,
-সাদ বাবা, এই যে এটা হচ্ছে আমার ত্বকির বউ। (ত্বকির মা)
সাদ একপল মেঘার দিকে তাকিয়ে দেখল। তারপর তিথির দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে রইল।
ত্বকির মা মেঘাকে আড়াল করে নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
-মেঘা, আজকে তোর তিথি আপুর বিয়ে। যা গিয়ে তিথির রুমটা একটু গুছিয়ে দিয়ে আয় তো। (ত্বকির মা)
আম্মুর কথা শুনে আমি থমথম হয়ে। আজকে নাকি তিথি আপু বিয়ে। আমার মানতে কষ্ট হচ্ছে। আমি আম্মুর কথা মতো তিথির আপুর রুম গুছিয়ে দেওয়া জন্য আপুর রুমে এলাম।
,,
মেঘাকে তিথির রুমে পাঠিয়ে ত্বকির মা ত্বকির রুমে এলো। সে দেখল, ত্বকি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
-ত্বকি, তুই কি আমার সিদ্ধান্তে রাগ করেছিস? (ত্বকির মা)
হঠাৎ মায়ের কন্ঠ শুনে ত্বকি চোখ মেলে তাকাল। ত্বকির মা আবারও বলে উঠলো,
-দেখ বাবা, আমি মা হয়ে তিথি কষ্ট মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি তো বুঝি, আমার মেয়েটা যে সাদকে খুব ভালোবাসে।
-নিশ্চুপ (ত্বকি)
-তুই দেখিস বাবা তোর বোন সাদের সাথে সুখে থাকবে। (ত্বকির মা)
ত্বকির নিজের মায়ের কথা রাগী গলায় বলে উঠলো,
-সাদ যদি আবার আমার বোনকে কষ্ট দেয় তাহলে ওকে আমি কি করব আমি নিজেও জানি না। (ত্বকি)
ত্বকির মা ত্বকির কথার ধরন দেখে বুঝতে পারল যে, ত্বকি রাজি হয় গিয়েছে।
,,
আজকে রাতেই সাদ আর তিথির বিয়ে সম্পন্ন হলো। সাদ যে পোষাক পড়ে ছিল তাই পড়ে আছে। কিন্তু তিথিকে জোর করে তার মা শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছি। তিথির বাবা ডিসিশন দিয়েছে, যে মেঘার পরীক্ষার পর বড়ো করে অনুষ্ঠান করবে। সাদের পরিবারের সবারও এতে কোন আপত্তি নেই। সাদের পরিবার বলতে, তার মা আর রুশা। দু-দিন হলো সাদের মা তার বড়ো খালার বাড়ি ঢাকার উওরেতে গিয়েছে। তাই সাদ তার মাকে বিয়েতে উপস্থিত রাখতে পারল না।
আমি তিথি আপুর কোলে থেকে রুশাকে নিয়ে ভাইয়ার রুমে চলে এলাম। ঢুলতে ঢুলতে ভেতরে ঢুকে রুশাকে বিছানায় শুয়ে দিলাম। ভাইয়া আড় চোখে আমাকে দেখছেন। রুশাকে শুইয়ে দেওয়া পর হঠাৎ আমার সাথে বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে গেল। রুশার নিচে আমার সম্পন্ন ওড়না চলে গেল। ভাইয়ার সামনে এমন খারাপ পরিস্থিতি পড়ব কখনো ভাবিনি। লজ্জায় আমার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে লাগল। ভাইয়া দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি আমার দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে,,,
(চলবে)
[মাঝেমাঝে রিচেক দেওয়া সময় পায় না, তাই বানান ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]