#তোমার_নিরব_অভিমানীনি(১৫)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
আমরা মুসলিম তাই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করি কিংবা জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করি না কেন আমাদের ইসলামীক জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক। এবং ইসলামের বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করা আবশ্যক। তাই এই প্রশ্ন অহেতুক বলে আমার মনে হয়।
রাদ শাহমাত অনিমেষ চাহনিতে চেয়ে রইল নজরাত এর দিকে। এই মুখশ্রীর দিকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায় অথচ সে কিনা ভুল করেও মেয়েটার দিকে তাকাতো না।
নজরাত এর দৃষ্টি নত তবুও উপলব্ধি করতে পারছে রাদ শাহমাত তার দিকেই তাকিয়ে আছে। এতে খানিকটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছে নজরাত এর তবুও কিছু বলছে না সে। উঠে গিয়ে বুক সেলফ থেকে সাতকাহন বইটা নিল।
বিভিন্ন ঝামেলার কারণে এখনো অবধি বইটা পড়ে শেষ করতে পারেনি নজরাত। ঠিক করল আজকে শেষ করবেই।
নজরাত বইয়ে মনোযোগ দিলে, দুজনের মাঝে নিরবতা বিরাজ করে। রাদ শাহমাত পূর্বের ন্যায় বসে থাকে ডিবানে। মাঝে মাঝে খেয়াল করে নজরাত মুচকি মুচকি হাসছে। নিশ্চয়ই গল্পের কোনো কাহিনী নিয়ে হাসছে।
যা দেখতে মন্দ লাগছে না তার। ইচ্ছে করছে এমনি করে দেখে জীবন পার করতে। কি অদ্ভুত ইচ্ছে!
পঁয়ত্রিশ মিনিটের মত পেরিয়ে গেল। কাছের একটা মসজিদ থেকে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত হতেই নজরাত মাথায় কাপড় দিল। এশার নামায এর আযান হচ্ছে।
নজরাত বই বন্ধ করে আযান এর ধ্বনিতে মনোযোগী হল। সবটাই অবলোকন করে চলেছে রাদ শাহমাত। আযান শেষে রাদ শাহমাত বলল,
—” খেয়াল করলাম আযানের সময় আপনি ঠোঁট নেড়ে কিছু বলছেন।
—” হুম। আযানের জবাব দিচ্ছিলাম।
—” জবাব! মানে?
নজরাত টেবিলে হাত ভর করে রেখে তার উপর থুতনি ঠেকিয়ে বলল,
—” প্রশ্ন, আযানের জবাব কিভাবে দিতে হয়?
উত্তর: মুয়াজ্জিন আযানে যা যা বলবে তাই বলতে হবে, শুধুমাত্র হাইয়্যা আলাস সালাহ ও হাইয়্যা আলাল ফালাহ বললে জবাবে সেটা না বলে বলতে হবে ” লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।”
অর্থ:- আল্লাহর প্রেরণা দান ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার শক্তি নেই।
এটা হচ্ছে আযানের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি।
প্রশ্ন: আযানের জবাব দিলে কি প্রতিদান পাওয়া যাবে?
উত্তর: রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যে ব্যক্তি খালেস অন্তরে আযানের জবাব দেয়, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। [১]
সুবহান আল্লাহ! জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।
মাত্র ২ /৩ মিনিটে এতো সহজে করা যায় এমন একটা আমল হেলাফেলা করে বাদ দেওয়া ঠিক হবে না। আর এর জন্য তো আলাদা করে কোনো দোয়া মুখস্থ করতে হচ্ছে না। শুধু মুয়াজ্জিনের সাথে সাথে অন্তরে বিশ্বাস ও খেয়াল রেখে কথাগুলো বলা।
★ আযানের জবাব দেওয়ার পরে যে একবার দরুদে ইব্রাহিম ও এর পরে আযানের যেই সূরা আছে তা পাঠ করে তার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শাফায়াত করা জরুরি হয়ে পড়ে।
রাদ শাহমাত সবটা মনোযোগ দিয়ে শুনে। তারপর চলে যায় কক্ষ ছেড়ে। নজরাত বই গুছিয়ে রেখে নিজের রুমের দিকে এগুলে রাহার সাথে দেখা হয়। রাহা চোখে দুষ্টু হেসে বলল,
—” দু’জনে কি করছিলে হুম? নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে ভাব হয়ে গেছে?
—” সে আশায় বালি। তোমার নিরামিষ মার্কা ভাই এতো সহজে পটবে না বুঝলে? এর জন্য অনেক ব্যাগ পেতে হবে আমাকে।
নজরাত এর কথায় রাহা করুন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। নজরাত ফিচেল হেসে বলল,
—” মন খারাপ করো না। নামায পড়েছো?
—” উঁহু না।
—” চলো একসাথে পড়বো?
রাহা খুশী হয়ে বলল,
—” আচ্ছা চলো।
রাদ শাহমাত মসজিদে গিয়েছে নামায পড়তে। এ কথা কেউ জানে না। সাজেদা চৌধুরী জানতে পারলে হয়তো খুশীতে কেঁদে দিতেন।
নজরাত এর কথা গুলো শুনে রাদ শাহমাত এর কিছুটা হলেও পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। ঠিক করেছে আজকের এশার নামায দিয়েই শুরু করবে নতুন করে। যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন রাব্বে কারিমের ইবাদত পালন করার চেষ্টা করবে ইনশা আল্লাহ। এই মিছে দুনিয়ার মোহে আকৃষ্ট হয়ে কতোই না পাপ করেছে। তবে নজরাত এর কথায় ভরসা পেয়েছে সে। নজরাত কোরআন এর আয়াতের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিল,
আল্লাহ বলেন, ‘যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা স্বীয় জীবনের প্রতি অবিচার করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে। [২]
নামায পড়ে ফাঁকা রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে হেঁটে চলে রাদ। গন্তব্য তার অজানা। আজকাল পা’প গুলো কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাকে। শীতের প্রকোপে চারিদিকে অন্ধকার শুধু তার অবস্থানে রাস্তার নিয়ন আলোয় মৃদু আলোকিত। হাঁটতে হাঁটতে অনেক খানি চলে এসেছে। আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পাচ্ছে না। শীতের তান্ডবে শরীর ঠান্ডা বরফের মতো জমে গেছে। পা দুটো অবশ হয়ে আসছে।
গভীর রাতে বাসায় ফিরলে দরজা খুলে দিল নজরাত। রাদ শাহমাত বাসায় ফিরছে না বলে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে বসে বই পড়ছিল সে। তাই রাদ শাহমাত কে বেশিক্ষণ দরজার বাহিরে অপেক্ষা করতে হলো না।
রাদ শাহমাত এর শরীর শীতে কাঁপছিল। নজরাত লক্ষ্য করে কোমল স্বরে বলল,
—” এই শীতের মধ্যে বাহিরে কি করছিলেন? নিশ্চয়ই এখন শরীর খারাপ করছে? আপনি তাড়াতাড়ি রুমে যান। আমি কফি বানিয়ে এক্ষুনি আসছি।
প্রতিউত্তরে রাদ শাহমাত কিছু বলল না, কোন রকম শরীর টাকে বয়ে নিয়ে গেল রুম পর্যন্ত। তারপর কম্বল গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণের মধ্যে নজরাত কফি হাতে রুমে এসে রাদ শাহমাত কে ডেকে তুলে। এই মুহূর্তে গরম কফির ভীষণ প্রয়োজন ছিল তার। কফি খাওয়ার পর নজরাত বিষন্ন গলায় বলল,
—” এখন কেমন বোধ হচ্ছে? আগের থেকে বেটার লাগছে?
রাদ শাহমাত খানিকটা উদাস হয়ে ভাবলো,
—” এই মেয়েটা কি সত্যি মানুষ? নাকি মানুষ রুপি জীন, পরী!
নানা রকম অদ্ভুতুড়ে, উল্টো পাল্টা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায় রাদ শাহমাত এর।
_______
দেখতে দেখতে রাহা আর রূপক এর বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। এ পর্যন্ত একটা কথাও রূপক রাহা’র সাথে বলেনি। রাহা বুঝতে পারে রূপক পূর্বের ঘটনা গুলো নিয়ে রে’গে আছে এখনো। রাহা ঠিক করে বিয়ের পর রূপক এর অভিমান ঠিক ভাঙ্গিয়ে নিবে।
দুই পরিবারে বিয়ের তোরজোর চলছে। ঘর সাজানো থেকে শুরু করে শপিং করা সব কিছু। নজরাত কোন দিক সামলাবে ভেবে পায় না। এদিকে এ বাড়ির বউ অন্য দিকে বাবার বাসায় মেয়ে বলতে কেউ নেই। রাদ শাহমাত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চাপা জরুরি গলায় বলল,
—” আমি এই দিকে সামলে নিব। আপনি বরং ও বাড়ি চলে যান। আপনার বাসায় তো তেমন কেউ নেই। তাদের এই মুহূর্তে আপনাকে খুব প্রয়োজন।
নজরাত এর স্বপ্নাচ্ছন্নের মতো লাগলো। স্নিগ্ধ ও গভীর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রাদ শাহমাত এর দিকে। তার এমন গাড় দৃষ্টিতে বেসামাল বেচারা রাদ শাহমাত। এই মুহূর্তে একটু দুষ্টুমি করতে ইচ্ছা হলো তার। তাই
শুকনো কাশি দিয়ে বলল,
—” বড় বড় চোখ দুটো দিয়ে যেভাবে তাকিয়ে আছেন মনে হয় যেন ভয় দেখানোর ফন্দি আঁটছেন!
রাদ শাহমাত এর এহেন মন্তব্যে নজরাত এবার তার ঘন কালো পল্লব গুলো বার কয়েক ঝাপটায়। নেত্রজোড়া ছোট ছোট করে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এদিকে রাদ শাহমাত তার স্ত্রীর একেক বার একেক রকম রুপ দেখে বিমোহিত হয়ে, মুগ্ধ নয়নে, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
______
নজরাত শ্বাশুড়ি মায়ের থেকে অনুমতি নিয়ে বাবার বাসায় চলে আসে। নজরাত কে দেখতে পেয়ে সাজ্জাদ হোসেন ভীষণ আনন্দিত হলেন। বাড়িতে বিয়ে অথচ কারো কোন আনন্দ উচ্ছ্বাস নেই। এমন হলে তো বিয়ে বলে মনে হয় না। এখন মেয়ে এসে গেছে, পুরো বাড়িটা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠবে। নজরাত এসেই বাবার থেকে সব কিছু জেনে নিচ্ছে কি কি কাজ সারা হয়েছে ইতিমধ্যে। আর কি কি বাকি আছে। তারপর ভাইয়া কে সারপ্রাইজ দিতে তার রুমে গিয়ে চিৎকার করে উঠল। সকাল সকাল এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনায় চমকে লাফিয়ে উঠে রূপক। অসহায় দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেই ছোট্ট বেলার মতো বোনটা তার আরামের ঘুম খানা ভেঙ্গে দিল….
______
রেফারেন্স:-
[১] (সহিহ মুসলিম,হাদিস ৩৮৫)
[২] (সুরা নিসা, আয়াত : ১১০)
______
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।