তোমার মনের মধ্যিখানি পর্ব -৪০+৪১

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪০

আহনাফ গাড়ির সিটে বসে সিল বেল্ট বেঁধে তাকাল নিঝুমের দিকে। নিঝুমও বাঁধছে নিজের সিট বেল্ট! কিঞ্চিত হেসে বলল, “প্রথমে কোথায় যাবে বলো।

“শপিং মলে যাওয়া যাক।

“মুভি দেখবে!

“দেখা যেতেই পারে।

“আচ্ছা, চলা যাক তাহলে।

গাড়ি স্টার্ট দিল আহনাফ। নিঝুম গাল হাত রেখে বাইরে তাকাল। ঠান্ডা বাতাস বলে দিচ্ছে আবহাওয়ার কথা। আকাশের দিকে তাকাল নিঝুম। হাত এগিয়ে বাইরে দিতেই বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। আহনাফ বলে উঠল, “কাঁচ টা বন্ধ করে দাও।

“এভাবেই থাকুক না আহনাফ, ভালো লাগছে।

“আচ্ছা নিঝুম একটা কথা বলো তো!

নিঝুম মুখ ফিরল। আহনাফ তার দিকে ফিরে আবারো সামনে তাকাল। নিজেকে প্রস্তুত করে স্পষ্ট স্বরে বলল, “তুমি কেন এলে, বিশেষ কোন দরকার ছিল আজ।

“বিশেষ কোন দরকার,‌হ্যাঁ তা তো অবশ্যই ছিল।

“কি সেই কথা!

নিঝুম হেসে এবার জানালা দিয়ে মুখ বের করল। পেছনের দিক একবার তাকাল। গাড়িটা ফলো করছে তাদের, আর নিঝুম জানে কে আছে গাড়ির ভিতর। হেসে উওর দিল, “পরে বলব!

আহনাফ কথা বাড়াল না। হয়তো এই উওরটার জানাই ছিল তার। শপিং মলে একটু ঘোরাঘুরি, আইসক্রিম খেতে খেতে পুরো শপিং মল ঘুরে দেখা। শেষে দুজন মিলে একসাথে লাঞ্চ, নিঝুম খুব মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে। খাবারটা দারুন লেগেছে তার। আহনাফ পানির গ্লাস হাতে নিয়ে বলল, “খাবার ভালো লেগেছে তোমার।

“হুম হুম! ( মাথা নাড়িয়ে চামচে একটু খাবার নিয়ে এগিয়ে দিল আহনাফের সামনে। আহনাফ হেসে মুখ বাড়িয়ে খাবার মুখে তুলল।)

আহনাফ বলে উঠল, “রাতে এর চেয়ে বড় সারপ্রাইজ আছে।

“আপনি রেঁধে খাওয়াবেন।

“বুঝলে কি করে?

নিঝুম হেসে উঠলো। একনজর হাসির দিকে তাকিয়ে আহনাফও খাওয়া শুরু করল। একটা সময় সেও নিঝুমের মতো খাইয়ে দিল তাকে।

বিকেলটা কাটল তাদের পার্কে। আহনাফের হাতে কয়েকটা বেলুন! এগুলো সবই নিঝুম কিনে তার হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। এখন সে কিনছে বাবল। একটু একটু করে ফুলিয়ে যাচ্ছে এগুলো। কয়েকটা পিচ্চি ছেলে মেয়ে দৌড়ে সেগুলো ধরার চেষ্টা করছে। একটা কাঠগোলাপের মালা কিনে দিল আহনাফ। নিঝুম সেটা মাথায় পড়ে বলল, “নিন কয়েকটা ছবি তুলে দিন আমার।
আহনাফও খুশি মনে কয়েকটা ছবি তুলে দিল। দু’জনে একসাথে সেলফিও তুলল। সত্যি বলতে নিঝুমের সাথে সময় কাটানোর এই মুহূর্তটা দারুন লাগছিল তার কাছে। সন্ধ্যা নামতেই আহনাফ নিঝুমের‌ হাত ধরে উঠিয়ে বলল, “চলো!

“আহনাফ আরেকটু বসি।

“না না, অনেক দেরি হয়ে গেছে। উঠো, আরেকদিন নিয়ে আসবো তোমায়।

“এই সত্যি!

বলেই একলাবের উঠে পড়ল নিঝুম। আহনাফ হেসে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো। নিঝুম পেছন আর আশপাশ তাকাতে তাকাতে চলতে লাগল। দুজনেই বাসায় এসে পৌঁছাল। পুরো বাড়িটা অন্ধকার, বসার ঘরটা শুধু আলোকিত। ডিম লাইট জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। বাড়িতে কেউই নেই, নিঝুম সোফায় বসতে বসতে বলল, “ইফাও কি নেই।

“না, ও একটু বাইরে গেছে।

“আজ রাতে কি ফিরবে না।

আহনাফ চায়ের কাপটা নিঝুমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “না!

“আচ্ছা আহনাফ, আপনি কি এজন্য আজ আমায় এখানে নিয়ে এসেছেন।

“একদম’ই না। সবকিছু প্ল্যান করার পর জানলাম ও আজ থাকবে না। থাকলে বেশ মজা হতো।

“ঠিক বলেছেন!

বলেই মাথার কাঠগোলাপ টা খুলে রাখল নিঝুম। আহনাফ হেসে বলল, “তুমি অনেক ক্লান্ত তাই না।

“একদম’ই না, খুব ফুরফুরে লাগছে। আজ অনেকদিন পর ঘুরতে বেড়িয়েছি জানেন।

“আমি খানিকটা আন্দাজ করতে পারছি তুমি কি বলবে আমায়।

“আপনি বুদ্ধিমান, আর অশান্ত বোকা। এই আমাকে বলুন তো আপনাদের বন্ধুত্ব কি করে হলো।

“আজ না, বলবো আরেকদিন।

এমন সময় রান্না ঘর থেকে আওয়াজ এলো। আহনাফ ছুটে গেল সেখানে। তার পিছু পিছু গেল নিঝুমও। খানিকক্ষণ পর ফু দিয়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছে সে।

সময় পার হলো, গেলো আরো কিছু সময়। অশান্ত ক্লান্ত শরীরে প্রবেশ করল আহনাফের বাড়িতে। মেইন দরজাটা খুলাই ছিল, এটা অবাক করার মতো কিছু ছিল না। শান্ত’র দিনটা আজ তেমন একটা ভালো কাটে নি। সারাদিন ঘরে শুয়ে শুয়ে কাটিয়েছে। নিঝুম আজ আহনাফের সাথে বেড়িয়েছে এটা তার ধারণা। কিন্তু তার ধারণা সত্যি হলো কয়েকপা এগিয়ে। নিঝুম এখনো এখানে, শুধু তাই না। বেশ কাছাকাছি দুজনেই, প্রথমে ডেটে জড়িয়ে ধরা যায় কিন্তু ওতোটা কাছে কি কখনো আসা যায়। তার উপস্থিতি দু’জনের কেউই পায় নি এটা বুঝে গেল। আবারো নিঃশব্দে বেড়িয়ে গেল শান্ত। মনের কষ্ট গুলো যেই পাথর দিয়ে চেপে রেখেছিল নিমিষেই তা যেন সরে গেল। কষ্ট গুলোকে দমিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ল।

——-

আহনাফ গাড়ি নিয়ে ছুটে গেল ঘটনা স্থলে। ছুটে খানিকটা সামনে আসার পর’ই থমকে গেল তার পা। রাস্তার মাঝখানে রক্তা*ক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কেউ। সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে তাকে। এর অর্থ কি, এর অর্থ সে মা*রা গেছে। তবে কি শান্ত…. ভাবনা ভাববার আগেই পিছুতে গিয়ে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেল আহনাফ। তার শরীরটাও কেমন যেন ঝিমিয়ে গেল। একজন পুলিশে*র কনস্টেবল এসে তার হাতটা চাদরের মাঝে লুকিয়ে রাখল। আহনাফ এতোক্ষণে স্পষ্ট চোখে সেই হাতে শান্ত’র ব্রেসলেট দেখেছে। খানিকক্ষণের জন্য চোখ বুলাল তার হাতেও। চোখ যেন ভিজে উঠছে মুহুর্তেই। থিতুনি বেয়ে কখন অশ্রু গুলো গড়িয়ে পড়ল টের পাওয়া গেল না। তবুও মন মানতে চাইলো না। আহিম, আফিন আর নীলাভ্র এই মাত্র দৌড়ে এলো। আফিন গেল পুলিশের লোকের সাথে কথা বলতে। আহিম আর নীলাভ্র ব্যস্ত আহনাফ কে সামলাতে। কোন কথাই বলছে না আহনাফ। আফিন কথা বলার কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো। আহিম তাকে দেখেই কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল,”কি বলেছে।

আফিনের চোখ মুখ লাল হয়ে আসছিল। নীলাভ্র ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, কথা শোনার জন্য সবাই প্রস্তুত হয়ে পড়ছে। আফিন ধরা গলায় বলল, “শান্ত’র‌ কার এক্সিডেন্ট হয়েছে। একটা ট্রাক খুব খারাপ গাড়ি উল্টে দিয়েছে তার। সিটবেল্ট পড়ে ছিল না বলে আরো বেশি জঘম হয়েছে তার শরীর!

নীলাভ্র শুকনো ঢোক গিলে বলল, “শান্ত এখন কোথায়?

আফিন কথা বলল না। কঠিন চোখে সামনের লাশের দিকে তাকিয়ে রইল। সবার শরীরে শিহরণ বয়ে গেল। কেমন যেন একটা ঝটকা খেশ সবাই । আফিন ক্রমশ কান্না থামানোর জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে। শব্দ করে শ্বাস নিয়ে বলল, “সব কিছু গাড়িতেই ছিল। আর ওই একটাই বডি ছিল। তো তারা বলছে…

আহনাফ কঠিন গলায় বলে উঠল, “ওটা শান্ত না!

আহিম কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই চেঁচিয়ে উঠলো আহনাফ। জোড় গলায় কথা বলতে লাগল, যা সবসময় সে করে না। উঠে দাঁড়াল লাশ টা দেখার জন্য। আহিম আর নীলাভ্র কোনমতে তাকে সামলিয়ে ধরল। পুলিশের ওখান থেকে দুজন ছুটে এসেও বলল, অ্যাম্বুলেন্স আসছে, লাশ তখন তোলার সময় দেখানো হবে।

আহনাফের মুখ চোখ লাল হয়ে গেল মুহুর্তেই। তেড়ে গেল পুলিশের লোকদের কাছে। সামলানো কঠিন পড়ছে তাকে। কোনমতে সামলানো যাচ্ছে না। একটি কথা বার বার বলে যাচ্ছে, “এটা শান্ত না, এটা শান্ত হতেই পারে না।
এমন সময় হঠাৎ পেছন থেকে কারো জড়ানো গলা ভেসে এলো। চারজন’ই থমকে গেল গলা শুনে। আহনাফ যেন একটু গম্ভীর হয়ে গেল, একটু আগেই নিজের নাম শুনল সে। তাও শান্ত’র‌ গলা থেকে। পিছন ফিরে তাকাল সবাই। শান্ত দাঁড়িয়ে জড়োসড়ো হয়ে। তার দৃষ্টিতে শুধুই অবাক। আবারো বলে উঠল সে, “আহনাফ তুই,‌তোরা সবাই এখানে!

আফিন শান্ত বলে চেঁচিয়ে উঠে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। আহিম আর নীলাভ্রও ছুটে গেল। থমকে দাঁড়িয়ে রইল আহনাফ।‌ তার বুকের ভেতরটা এতোক্ষণ যে হা হা করছিল তা কিছুটা হলেও শান্ত। আহিম হাসি আর কান্না একসাথে করে বলে উঠল, “তুই বেঁচে আছিস শান্ত, কিছু হয়নি তোর, কিছু না!

শান্ত অবাক এখনো, সে তো ম*রতে গিয়েছিল কিন্তু ম*রেনি। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আহনাফের দিকে। আহনাফ ঢোক গিলে এগিয়ে এলো এবার। সরে গেল তিনজন’ই । শান্ত আহনাফ বলে ডাক দিবে তার আগেই আহনাফ জোরে ধাক্কা মারল শান্ত কে। কয়েক পা পিছিয়ে গেল শান্ত। আহনাফ কাঁদছে, এটা দেখেই হতভম্ব সে। শান্ত এগিয়ে যেতেই আহনাফ আবারো তাকে ধাক্কা মেরে বলল, “আসবি না তুই আমার কাছে।

“আহনাফ, কি হলো?

আহনাফ রেখে শান্ত’র কলার ধরে বলল, “কি হয়েছে তুই জানিস না, হাতের ব্রেসলেট কোথায় তোর, হাতের ব্রেসলেট কোথায়।
শান্ত’র‌ মনে পড়ল তখন রেগে ব্রেসলেট গাড়িতেই খুলে রেখেছিল সে। সে কিছু বলবে তার আগেই আহনাফ রেগে একটা ঘুসি মেরে বসল। আহিম আর নীলাভ্র এসে ধরল তাকে। আফিন গেল শান্ত’র কিছু। আহনাফ চেঁচিয়ে উঠে বলল, “কি ভাবিস তুই নিজেকে। কি তুই হ্যাঁ , কি তুই। সারাটা দিন আমি এত্তোবার কল করলাম একবারও ধরলি না। এমনকি কল ব্যাকও করলি না। কি মনে করিস তুই তোকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। তুই একজন’ই আছিস আমার জীবনে‌। পুলিশের ফোন পেয়ে কিভাবে ছুটে এসেছি জানিস। আমার কি হাল হয়েছিল।

শান্ত এগিয়ে এলো। আহনাফ ততোই তাকে দূরে সরিয়ে দিতে লাগল। শান্ত বলে উঠল, “আহনাফ সরি,‌দেখ আমি বুঝতে পারি নি। সত্যি আমি বুঝতে পারি নি। এমন কিছু হবে আমার ধারণাতেই ছিল না। আমি..

হুট করেই আহনাফ জড়িয়ে ধরল তাকে। জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। আহনাফ বলে উঠল,”কাল শুধু তোর নামটা নেই নি বলে এতোটা রেগে তুই। কথাও বললি না আমার সাথে। আমার বলাতে না বলাতে কি আসে শান্ত। তুই নিজে কি জানিস না তুই আমার জন্য। আহনাফের জন্য সবার আগে শান্ত, এছাড়া আর কেউ কি আছে। এটা তোকে আলাদা করে বলতে হবে আবার আমার।

শান্ত ঠিক কি বলবে বুঝতে পারল না। সে শুধু আহনাফ কে জড়িয়ে ধরে “সরিই” বলে গেল। তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো কিছু স্মৃতি! ছোট বেলাকার কিছু ঘটনা। মনে পড়ল, যখন সবাই তাকে ছেড়ে চলে গেছিল তখন এই আহনাফ’ই একজন ছিল তার পাশে। তাকে এতোটা ভুল কিভাবে বুঝতে পারল সে। খুব বড় ভুল হয়ে গেছে তার। এই ভুলের বশেই আরেকটা বোকামি করতে যাচ্ছিল সে। মনে করতে লাগল তখনকার সেই কথা, দাঁড়িয়ে ছিল অভাবে ছাদের উপর। হাওয়া বয়ে যাচ্ছিল নির্বিকারে। শুকনো ঢোক গিলল শান্ত। এক পা এগিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল সে। ভেবেই নিয়েছে এখন কি করবে সে। হঠাৎ করেই তখন চোখের সামনে ভেসে উঠল আহনাফের মুখ। হেসে তাকেই দেখছে সে। চোখ মেলে তাকাল শান্ত। কানে বাজলো আরেক কণ্ঠ! “এই অশান্ত”! নিঝুমের ডাক শুনে পিছনে ফিরতেই ধপাস করে পড়ে গেল ছাদে। খানিকটা ব্যাথাও পেল পিছনের দিকে। এতোক্ষণ কি করতে যাচ্ছিস এটা মুহুর্তেই বুঝতে পারল না। কোনমতে ছাদের এক কোনে বসে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল সে। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে তার চোখ লেগে এসেছিল এটা আর বুঝতে পারল না। কিন্তু যখন চোখ মেলল‌ তখন বেশ শোরগোলের শব্দ পেল।

পুলিশের বড় বাবু ছিল শান্ত’র পিছনেই। তিনিও “সরি” বললেন সিউর না হয়েই এই খবর জানানোর জন্য। জানা গেল শান্ত’র গাড়িটা চুরি হয়ে গেছিল। তখন তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে চাবি গাড়ির ভেতর’ই ছিল। এমনকি তার ফোন, ব্রেসলেট, মানিব্যাগ সবকিছুই। এক্সি*ডেন্ট এরপর সবকিছু তাই লা*শের কাছ থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে ধারণা হলো এটাই শান্ত। যদিও পুলিশ এবার সিউরলি জানালো এটাই চোর ছিল। এছাড়া তিনি অভিভূত হলেন এতোক্ষণ পাঁচ বন্ধুর পাগলামি দেখে। পাঁচজন’ই হেসে উঠলো।

আহনাফ গাড়ি থামাল শান্ত’র বাসার সামনে। শান্ত গাড়ি থেকে নামতে যেতেই আহনাফ বলে উঠল, “আমিও আসি।

“কান্না কাটি আর ভালো লাগছে না, যা বাসায় যা।

আহনাফ অভিমানী স্বরে বলল, “কিন্তু ফ্ল্যাল্টের চাবি।

“পকেটেই আছে আমার।

“আচ্ছা সাবধানে থাকিস, আমি সকালে আবারো আসবো।

“কেন,‌জড়িয়ে ধরে কাঁদতে।

আহনাফ চোখ ঘুরিয়ে বলল, “গাড়ির তো বারোটা বেজেছে, ভার্সিটি যাবি কি করে?

“বাইক আছে বাসায়। সেটা করেই যাবো। এছাড়া কাল পুলি*শের কাছেও যাওয়া লাগবে। ওই ব্রেসলেট টা আনতে হবে।

আহনাফ গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল, “দরকার নেই ওটার। আমি তোকে আরেকটা কিনে দেবো। মৃ*ত মানুষের জিনিস এনে আবার পড়তে ঢং কতো! খুলতেই গেলি কেন?

শান্ত হেসে আহনাফের গাল টেনে বলল, “আহ রাগ করিস না, আমি তো..

“সর, তোর ঢং দেখার আর ইচ্ছে নেই। গেলাম আমি।

“আচ্ছা যা, কিন্তু আর যাই বলিস, আমার গাল এখনো ব্যাথা করছে। কি ঘু*সিটা মারলি তুই।

আহনাফ মুখ ভেংচি কেটে বলল, “ঔষধ খেলেই সব ঠিক হবে।

জবাবে হাসল শান্ত! গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল আহনাফ। আহনাফ কে আজ কাঁদতে দেখে অনেকটা অবাক সে। এমনভাবে আগে কখনো কাঁদতে দেখেনি। তিশা চলে যাবার সময়ও না! আবারো কিঞ্চিত হাসল সে। সামনে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটতে লাগল।

ফ্ল্যাটের সামনে এসে খানিকটা থতমত খেয়ে গেল নিঝুম কে দেখে। সে বড় করে হামি ছেড়ে শান্ত কে দেখে বলল, “অশান্ত! আপনি এসেছেন। কোথায় ছিলেন এতোক্ষণ জানেন কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি! দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার পা ব্যাথা হয়ে গেছে।

শান্ত নিশ্চুপ হয়ে দেখতে লাগল নিঝুম কে। এই মেয়ে টা এখানে কেন এবার। চলে এসেছে তার ক্ষত বাড়াতে। তখনকার সেই মুহুর্ত আবারো ভেসে উঠলো তার সামনে। শান্ত কিছু না বলে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, “তুমি এখানে!

“হ্যাঁ, আমি এখানে। জানেন কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। সেই কখন থেকে, এতো গুলো কল করেছি আপনাকে। একটাও ধরলেন না কেন? কতো কথা আছে আপনার সাথে জানেন। আপনি..

“নিঝুম!

নিঝুম নিশ্চুপ হয়ে গেল। অবাক চোখে তাকিয়ে রইল শান্ত’র দিকে। নিজের নামটা শুনতে এতোটা কুৎসিত লাগে, এই প্রথমবার মনে হলো তার। শান্ত আবারো বলল, “অনেক রাত হয়ে গেছে, বাসায় চলে যাও। আমি খুব ক্লান্ত কিছু শুনতে ভালো লাগছে না আমার।

“কিন্তু অশান্ত আমি….

কথা শেষ হবার আগেই শান্ত ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। নিঝুম এতোটা অবাক আগে কখনো হলো না। অশান্ত এভাবে তাকে ইগনোর করল। খানিকটা ব্যাথিত হলো সে। শেষে পা বাড়াল বাড়ি ফেরার দিকে। কিন্তু বার বার পিছন ফিরে তাকাল এই আশায় শান্ত যদি দরজা খুলে বলে, “এই চশমিস কোথায় যাচ্ছো? কিন্তু আশাটা আর পূরণ হলো না।

শান্ত দরজায় আড়ি পেতে দাঁড়িয়ে রইল। নিঝুম চলে যাবার পর সেও সামনে ফিরল। তাকিয়ে দেখল অমি দৌড়ে ছুটে এসেছে তার কাছে। শান্ত মৃদু হাসল। তার অনুভূতি গুলো না হয় চাপায় পড়ে থাক। যেখানে চশমিসের মনেই অশান্ত’র জন্য কিছু নেই সেখানে তাঁর অনুভুতির কোন দাম নেই। ভালোই হয়েছে আহনাফ কে কখনো বলে নি এসব কথা। বললে আজ কি হতো?

—–

পরদিন খানিকটা অন্যমনস্ক ভাবেই হেঁটে ভার্সিটিতে ঢুকতে যাচ্ছিল নিঝুম। তার মনটা এখনো পড়ে আছে শান্ত’র নিঝুম বলে ডাকাতে। গেটের সামনে আসতেই কয়েক জনের সাথে ধাক্কা খেল নিঝুম। নিজ থেকেই সরি বলতে লাগল তাদের। এগুলো ভার্সিটির কিছু উটকো ছেলে। নিঝুম কে দেখেই হাসতে লাগলো তারা। তাও গা জ্বালানো হাসি। খানিকটা বিরক্ত হয়ে পথ থেকে সরতে বলল। কিন্তু সরল না উল্টো হাসতে লাগলো।‌ নিঝুম নিজ থেকেই আবার ওপথে যেতে নিবে অমনি ছেলেগুলো রাস্তা দখল করে নিল। নিঝুম রেগে গিয়ে বলল, “কি হচ্ছে টা কি, সামনে থেকে সরুন।

“সিনিয়র তোমার, ভাই বলে ডাকো।

“আচ্ছা ভাইয়ার দল গুলো সামনে থেকে সরুন এবার।

“এভাবে এভাবেই সরে যাবো নাকি।

“মানে?

“যাও , ভাইদের জন্য ওই ওখান থেকে চা নিয়ে আসো।

“কিহহ? আমি!

“হ্যাঁ আপামনি, তুমি!

বলামাত্র একজন এসে তার চোখ থেকে চশমা খুলে ফেলল। নিঝুম কিছু বলার আগেই আরেকজন তাকে রাস্তার মাঝখানে ছেড়ে দিয়ে এলো। নিঝুম হতভম্ব হয়ে গেল। এতো টুকু সময়ের মধ্যে এসব কি হচ্ছে তার সাথে। চেঁচিয়ে বলে যাচ্ছে, “ভাইয়া, আমার চশমাটা দিন। আমি চোখে কিছুই দেখতে পারছি না।

ছেলে গুলোর হাসির শব্দ আসতে লাগল। নিঝুম মাঝ রাস্তায় দাঁড়ানো। সে ঠিকই টের পাচ্ছে আশপাশ দিয়ে গাড়ি ধেয়ে যাচ্ছে। তার চোখে সবকিছুই ঝাপসা গাড়ির হর্নের আওয়াজ তার মাথা গুলিয়ে দিচ্ছে। কিছুই দেখতে পারছে না। হঠাৎ করেই একটা গাড়ি ধেয়ে এলো তার দিকে। নিঝুম স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কেউ ছুটে এসে সরিয়ে আনলো তাকে। আঁত*কে উঠল নিঝুম। নিঝুমের বাহু শক্ত করে ধরে বলল, “ঠিক আছো তুমি!

“আহনাফ, আপনি!

আহনাফ শব্দ করে শ্বাস ফেলল। একবার গেটের দিকে চোখ বুলিয়ে নিঝুমের হাত ধরে রাস্তার এপারে এলো। হাঁপিয়ে উঠলো আরেকজন। গাড়ির হ্যান্ডেলে বারি মার*ল খুব জোরে‌। ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিঝুমের দিকে। আহনাফ আজ না আসলে নিঝুম কে এখানেই… সহ্য হয় না নিঝুম কে, কোনভাবে সহ্য হয় না। সবকিছু শেষ করে দিয়েছে এই মেয়ে। সবকিছু!

আহনাফ এগিয়ে এসে সামনের ছেলেটার কলার ধরে বলল, “চশমা কোথায়?

পিছনের ছেলেটা কিছু বলতে নিল, কিন্তু আহনাফের দৃষ্টি দেখে চুপ হয়ে গেল। ইশারায় চশমা টা দিয়ে দিল। আহনাফ চশমা হাতে নিয়ে নিঝুমের দিকে এগিয়ে দিল। অনেকটা ভয় পেয়েছে নিঝুম, কাঁপা কাঁপা হাতে চশমা পড়ে নিল সে। শব্দ করে শ্বাস ফেলে তাকিয়ে রইল সামনের ছেলেগুলোর দিকে। আহনাফ এবার জিজ্ঞেস করল, “ঠিক আছে তুমি?

নিঝুম মাথা নাড়ল। আহনাফ চোয়াল শক্ত করল। ছেলেগুলোকে লক্ষ্য করে বলে উঠল, “এমনটা করতে কে বলেছে!

“কককেউ বলে নি, আমরা নিজেরাই…

কথা শেষ করবার আগেই আহনাফ এক পা আগালো। পেছনের ছেলেটা ভয়ে দ্রুত বলে উঠল, “শান্ত! শান্ত বলেছে এমনটা করতে।

আহনাফ ভ্রু কুঁচকে বলল, “শান্ত, শান্ত বলেছে এমনটা করতে? কিন্তু কেন?

“আমরা কি জানি, ওকে জিজ্ঞেস করো।

বলেই তারা ছুটে চলে গেল। আহনাফ হতবাক আর নিঝুম নিস্তব্ধ। মুখ ফুটে শুধু একবার বলল, “অশান্ত!
#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪১

আহনাফ বিচলিত হয়ে নিঝুম কে বলতে লাগলো, “নিঝুম এটা শান্ত’র কাজ না। ও এমনটা কেন করবে? তুমি জানো তো শান্ত কে।

নিঝুম অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আহনাফের দিকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ছেড়ে দিন আহনাফ, যার যা ইচ্ছা সে করুক।

“তোমার সাথে কি আবার শান্ত’র ঝগড়া হয়েছে।

“জানি না! আচ্ছা আমার ক্লাস শুরু হবে, আমি গেলাম।

এড়িয়ে চলে গেল নিঝুম। আহনাফ তা বেশ বুঝতে পারল। কিছু একটা কি তবে হয়েছে তার আর শান্ত’র মাঝে।

ছেলেগুলো ভবনের পেছনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করছে। একজন ভয়ে এখনই আধমরা হয়ে যাচ্ছে। পাশের ছেলেটা পর পর সিগারেট টানছে। ওদিকের আরো তিনটা ছেলে। একটা পানির বোতল শেষ করে ফেলেছে তো বাকি দুজন দাঁড়িয়ে দেখছে হাতের চিরকুট টাকে। ভয়ে যে ছেলেটা হাঁফিয়ে উঠেছে সে চেঁচিয়ে বলে উঠল, “তোরা এতো চুপচাপ কেন আছিস, কিছু বলছিস না কেন?

“কি বলবো?

“কি বলবি মানে, শান্ত যদি এসে আমাদের এসে জিজ্ঞেস করে তখন।

ওদিক থেকে একটা ছেলে বলে উঠল, “আমার মনে হচ্ছে না তা করবে।

“তবুও যদি করে,

“করলে করবে। তখন আমরা এই চিরকুট দেখিয়ে দেবো।

“কাজটা করা একদম উচিত হয় নি আমাদের।

“ভাগের টাকা নেবার সময় তো একথা বলিস নি।

“আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি, তবুও এসবে আমি নেই।

“ফালতু বকবক বন্ধ কর শা*লা। একটা ভিতুর ডিম তুই।

“ভিতুর ডিম হই আর যাই হই, একটা মানুষ এখনই ম*রে যেতে পারতো। এটা ভেবে দেখেছিস তোরা!

সাথে সাথেই নিশ্চুপতা নেমে। ভয়ে ছেলেটা এবার অস্থির হয়ে উঠল। তার চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা এগিয়ে এসে বলল, “আচ্ছা ম*রে নি তো, তুই এবার এসব চিন্তাভাবনা বাদ দে। নে সিগারেট খা।

“তোর ইচ্ছে হচ্ছে তুই খা। আমার ভালো লাগছে না কিছু।

“আরে এতো টেনশন কেন করছিস। একবার টান দে দেখবি সব টেনশন শেষ হয়ে গেছে।

ছেলেটা চোখ বুলিয়ে তাকাল পাশের জনের দিকে। চোখের আশ্বাস দিতেই সেই ছেলেটা সিগারেট হাতে নিয়ে বলল, “ডেভিল গ্যাং কে কেউ ফাঁসানোর চেষ্টা করছে , এজন্য তারা আমাদের ব্যবহার করছে। তোরা বুঝতে পারছিস না, ডেভিল গ্যাং’র বিপক্ষ নিয়ে নিজের বি*পদ টেনে এনেছি আমরা। আর যদি শান্ত একবার জানতে পারে তার নামে আমরা এসব বলেছি তাহলে আমাদের হাল কি হবে তোরা ভাবতে পারছিস না।

চিরকুট হাতে ছেলেটা হেসে বলল, “এমন ভাবে বলছিস মনে হচ্ছে গাধার পিঠে চড়িয়ে পুরো শহর ঘুড়িয়ে আনবে।

হেসে উঠলো সবাই একসাথে। হঠাৎ কেউ বলে উঠল,‌”না তা অবশ্য করবে না কিন্তু চোখ বেঁধে ঠিক’ই মাঝ রাস্তায় ছেড়ে দেবে। চলন্ত গাড়ি এসে ছোটাছুটি করবে তোমাদের আশেপাশে!

থতমত খেয়ে সামনে তাকিয়ে রইল সবাই। হাতের সিগারেট মুখে দেবার আগেই পড়ে গেল নিচে। নিঝুম কে এখানে দেখে সবাই অস্থির। কিন্তু দ্রুত তা সামলে একটা ছেলে বলে উঠল, “তততুমি এখানে, এখানে কি করছো?

“সেটা বলতেই তো এসেছি। তোমরা কি ভাবলে অশান্ত’র নামে যতসব আজেবাজে বকে দেবে আর আমি বিশ্বাস করে নেবো।

“আমরা কোন আজেবাজে বকে নি, আমাদের যা বলা হয়েছে আমরা তাই করেছি।

কাঁপা কাঁপা স্বরে কথাগুলো বলে উঠল। নিঝুম তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, “এতো ঘামছো কেন? তোমাদের কি মনে হয় আমাকে। আমি ইমমেচিউর হতে পারি তবে বোকা নই। এতো সহজে বোকা বানিয়ে দেবে আমায়। একবার গিয়ে তোমাদের নামে বলবো আমি অশান্ত’র কাছে। কি ভাবছো এতো দিন অশান্ত চুপচাপ আছে বলে সব শেষ। ভুলে গেছো ডেভিল গ্যাং কতোটা ভ*য়ংকর।

ভয়ে আঁতকে উঠল এপাশের ছেলেটা। বলতে গেলে একভাবে হাত পায়ে ধরে বসল নিঝুমের। কাকুতিমিনতি করে বলতে লাগল, “দয়া করো, তুমি শান্ত কে কিছু বলো না। আমি সব সত্যি বলে দিচ্ছি।

আশপাশের ছেলেগুলো চেঁচিয়ে উঠল তখন। ছেলেটা ভয়া*র্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেখানে। নিঝুম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠল , “তাহলে আমাকে বলো, এই কাজ করতে কে বলেছে তোমাদের!

ছেলেটা কিছু বলতে নেবে তার আগেই চিরকুট হাতের ছেলেটা বলে উঠল, “তানিশা! তানিশা বলেছে এমনটা করতে।

নিঝুম কপাল কুঁচকালো। পেছন থেকে তানিশা বলে উঠল, “আমার ব্যাপারে কিছু বলছো বুঝি।

ছেলেগুলো এবার সবাই থতমত খেয়ে গেল। তানিশা বাঁকা হেসে বলল, “কি হলো, মনে হচ্ছে খুব ভয় পেয়েছ?

নিঝুম হেসে পিছনে তাকালো। তানিশা সামনে এগিয়ে এলো। ছেলেটার হাত থেকে চিরকুট টা কেড়ে নিয়ে পড়তে লাগল। তারা যেমনটা করছে ঠিক তেমন ভাবেই বলা হয়েছে। শেষে শান্ত’র‌ নাম নেবার কথাও বলা আছে। আর নিচে.. একটা ছেলে বলে উঠল, “এখানে তোমার নাম লেখা। তুমিই পাঠিয়েছো এই চিরকুট আমাদের।

তানিশা চোখ ঘুরিয়ে তাকাল। কঠিন গলায় বলে উঠল, “আমি নিজের হাতে পাঠিয়েছি তোমাদের। কি হলো বলো?

মাথা নিচু করে ফেলল প্রত্যেকে। একজন শুধু মিনমিনিয়ে বলল, “না।

“তাহলে!

ছেলেগুলো শুকনো ঢোক গিলল। নিঝুম চিরকুট টা চেয়ে বলল, “এদিকে একটু দাও। হাতের লেখাটা দেখি!

“দেখে লাভ নেই, কম্পিউটারে টাইপিং করা হয়েছে। যে এমনটা করেছে সে বেশ চালাক।

নিঝুম মুখ তুলে তাকাল তানিশার দিকে। আজ হঠাৎ তানিশা কে ভীষণ ভাবে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। এই চিরকুট দেখেও তানিশার কাছ থেকে ভরসা নড়তে চাইছে না। একটা ছেলে বলে উঠল, “তানিশা আমি সত্যি বলছি, এটা কেউ একজন আমাদের ব্যাগে রেখে গেছিল। নিচে তোমার নাম দেখে আমরা ভেবেই নিয়েছিলাম এটা তুমি।

তানিশা শব্দ করে শ্বাস ফেলে তাকিয়ে রইল ছেলেগুলোর দিকে। তার এই দৃষ্টির অর্থ “চলে যাও এখান থেকে।”‌ ছেলেগুলোও তড়িখড়ি করে পালিয়ে গেল। নিঝুম হঠাৎ বলে উঠল, “এটা কে করেছে?

“এটা খোঁজ করার দায়িত্ব কি তুমি আমার বলছো?

তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জিজ্ঞেস করল তানিশা। নিঝুম মুচকি হেসে বলল, “তোমার বন্ধুর নামে বদনাম করছে। দায়িত্ব টা কি তাহলে তোমার নাহ!

“বন্ধু কি শুধু একাই আমার।

জবাবে নিঝুম হাসল। চোখের চশমা ঠিক করে চলে যেতে নিল। পেছন থেকে তানিশা বলে উঠল, “শোন নিঝুম! আমার তোমাকে একদম সহ্য হয় না, একদম না।

“আমি জানি সেটা, কিন্তু তুমি তোমার বন্ধু কে ঠিক’ই বাঁচাতে চাইবে তাই নয় কি?

“কি বলতে চাও?

“আমি এটা বলতে চাই এই কাজটাও তার, যে সেই পোস্টার গুলো ছাপিয়ে ছিল। তখনো আঙুল তোলা হয়েছে তোমার উপর। এবারও তাই, এর অর্থ শ*ত্রু শুধু আমার বা অশান্ত’র নয় তোমারও।

“হঠাৎ তোমার এতো ভালোমানুষীর কারণ কি?

“আমি তো বারবার’ই ভালো মানুষ।

“আহনাফের সঙ্গ পেয়ে দেখছি খুব কথা বলতে শিখছ।

নিঝুম আবারো হাসল। তানিশার দৃষ্টি বারবার চোখ রেখে বলে উঠল, “লুকিয়ে লুকিয়ে অন্যের ডেট দেখতে যাওয়া কিন্তু ভালো না তানিশা।

তানিশা চোয়াল শক্ত করল। নিঝুম কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। তানিশা ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এই মেয়েটাকে একদমই সহ্য হয় না তার, একদমই না। যদি না শান্ত আর আহনাফ এই মেয়েটাকে পছন্দ করতো তাহলে এমন হাল করে ছাড়তো দেখার মতো হতো। আপাতত নিঝুম কে নিয়ে পরেও ভাবা যাবে, তার আগে একে খুঁজে বের করা দরকার। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সবটাই শুনেছিল। ভাবতে অবাক লাগছে, সে যেই হোক, সবসময় শান্ত কে টেনে আনতে চায় কেন? শুধুই কি শান্ত, একইভাবে টেনে আনতে চাইছে তাকেও। এক ঢিলে দুই পাখি মারা*র ব্যবস্থা! খুব চালাক এ, খুব! দ্রুত খুঁজে বের করা দরকার। চিরকুট টা পকেটে গুঁজে সামনে বাড়ল তানিশা। তার বন্ধুর ক্ষতির কথা কখনো ভাবতে পারে না , যে ক্ষতি করতে চাইবে তাকে কিভাবে ছেড়ে দিবে।

নীলাভ্র বসে ছিল বটগাছের নিচে। আজ তাদের আড্ডা জমছে না, কেউই নেই। চোখ বুলিয়ে ওদিক তাকাতেই দেখল আহিম আর তিথি কে। ইদানিং দুজনের বেশ ভাব জমেছে। তারা বসে লুডু খেলছে, এতো কিছু থাকতে শেষে কিনা ফোনে বসে লুডু খেলা। মাথা ঝাঁকিয়ে এপাশ তাকাতেই দেখল নিঝুম কে। খানিকটা হতচকিয়ে গেল। নিঝুম হাত নেড়ে বলল, “হাই!

“হাই! কিন্তু তুমি এখানে..

“আপনাকে আমার একটু দরকার ছিল?

“কেন বলো তো, হঠাৎ আমাকে কি দরকার?

“বলছি বলছি, তার আগে বলুন, আপনি এখানে একা বসে কেন? মন খারাপ?

“না..

“তাহলে!

“কিছুই না, তুমি বলো।

“আচ্ছা আপনি কি ওই বাচ্চা ছেলেটার খোঁজ পেয়েছেন।

“কোন বাচ্চা ছেলে?

“ওই পোস্টার, মনে পড়েছে।

“এই নিঝুম তুমি কি মেজিশিয়ান!

“হুম হুম মনে হয়। কেন বলুন তো?

“কারণ বাচ্চাটার খোঁজ আমি পেতেই চলেছি, আর তুমিও এখন এসেই জিজ্ঞেস করলে।

“সত্যি, গ্রেট! খুব ভালো কাজ করেছেন তো।

“আমি করেই থাকি, ব্যাপার না। তা এসব আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছো? আহিম কে করো?

নিঝুম মাথা ঘুরিয়ে আহিম দেখলো। ফিরে এসে বলল, “তিনি তো খুব ব্যস্ত।

“মহাব্যস্ত, দেখতে পারছো না।

“হুম, কিন্তু এই কাজটা আমি আপনাকেই দেবো

“কিসের কাজ?

“ছেলেটাকে যদি পেয়ে যান তাহলে আমাকে আগে জানাবেন ‌

“কেন?

“আছে আছে, দরকার আছে। আছে বলেই বলছি।

“কি এমন দরকার? তুমি কি কাউকে সন্দেহ করেছ?

নিঝুম খানিকটা ভেবে, “না, তবুও। আর হ্যাঁ আপনি শুধু আমাকেই জানাবেন।

“আমাকে শান্ত ভেবে থাকলে ভুল করছো?

নিঝুম উঠে দাঁড়াল। এক গাল হেসে বলল, “আপনি আমাকেই জানাবেন।

“ভুলে যাও?

নীলাভ্রের পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে আবারো তার মুখের সামনে ধরল। ফোন লক খুলল। নীলাভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। নিঝুম ফোনটা আগের জায়গায় রেখে বলল, “আমাকে আগে ফোন করবেন, ঠিক আছে।

“আরে আজব তো।

“আমি এমনই …

বলমাত্র নিঝুম চলে গেল। নীলাভ্র ফোন হাতে নিয়ে চেঁচিয়ে বলল, “আমি কিন্তু তোমাকে কল করবো না, মনে রেখো।

নিঝুমের তেমন কোন ভাবান্তর হলো না, নীলাভ্র খানিকটা থমকে গেল। তার কাছে মনে হতে লাগল এই মেয়েটা আসলেই ভয়া*নক।

——

“এই এই অশান্ত!

শান্ত শুনেও না শোনার ভান করে চলে যেতে নিল। নিঝুম দৌড়ে এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে গেল।

“কি হচ্ছে কি? রাস্তা থেকে সরো।

“দাঁড়ান দাঁড়ান, আগে আপনি বলুন।

“কি?

“আপনি আমায় ইগনোর করছেন?

শান্ত প্যান্টের পকেটে হাত রেখে মুখ ঘুরিয়ে নিল। নিঝুমও ওদিকে এসে শান্ত’র সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “সত্যি সত্যি ইগনোর করবেন বলে ভেবে রেখেছেন।

“সামনে থেকে সরো তো, তোমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আমার।

“অশান্ত!

ধমক দিয়ে বসল নিঝুম। শান্ত হতভম্ব, কিছু বলতে নিবে এর আগেই নিঝুম হাতের ইশারায় তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “এই থামুন, আমার নাম নিবেন না। আপনার মুখে আমার নামটা শুনতে যে কি বিশ্রী লাগে আপনি নিজেও জানেন না, বুঝলেন। আর হ্যাঁ শুনে রাখুন, নিঝুম কে কখনো কেউ ইগনোর করে না। নিঝুম ইগনোর করে। তাই আমি আপনাকে ইগনোর করছি। আল্লাহ হাফিজ!

অতঃপর মুখ ফুলিয়ে চলে গেল নিঝুম, শান্ত পেছন ফিরে তাকে দেখতে লাগল। কি বলে গেলো এই মেয়ে, তার নাম নিয়েছে, সত্যি’ই কি চশমিস কে সে নিঝুম বলে ডেকেছিল? কিন্তু কখন? ঠিক মনে করতে পারল না। মেসেজ করল আহনাফ কে। কোথায় সে?

উওর এলো খানিকক্ষণ পর, আহনাফ ছাদে। শান্ত সেদিকে পা রাখল।

নিঝুম হন হন করে ছাদের উপর উঠল। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে। দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে আসার ফল এইটা। আহনাফ পিছন ফিরে নিঝুম কে দেখে বলল, “আরে তুমি!

ধপাস করে বসে পড়ল আহনাফের পাশে। আহনাফ চোখ বুলাল নিঝুমের দিকে। বলে উঠল, “রাগ নাকি তুমি!

“রাগে আমার শরীর জ্বল*ছে, বুঝতে পারলেন।

“ঝগড়া করেছ শান্ত’র সাথে।

“অশান্ত! উফফফ অসহ্য, আহনাফ আপনি আমায় বলুন তো এর সাথে আপনি কিভাবে থাকেন। দুটো মিনিট যদি শান্তিতে উনার সাথে থাকতে পারি না। আপনি জানেন, আপনার এই বন্ধুর নাম অশান্ত হওয়া দরকার ছিল। ভুলে কেউ শান্ত রেখে দিয়েছে।

“শান্ত’র মা ওর এই নাম রাখে।

বলেই মুচকি হেসে তাকাল নিঝুমের দিকে। নিঝুমের রাগ সামান্য কমলো বলে মনে হলো। আহনাফ পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল, “মাথা ঠান্ডা করো, যেই গরম হয়েছে এতে তো ডিম সিদ্ধ হয়ে যাবে।

“ডিম ভাজা আমার প্রিয়..

“আচ্ছা আচ্ছা বেশ তো তোমার ইচ্ছা।

নিঝুম হেসে উঠলো। তার দেখাদেখি হাসি ফুটলো আহনাফের মুখেও। শান্ত উপরে এসে দুজনকে এভাবে দেখতে পেয়ে নিঃশব্দে নিচে নেমে গেল। এবার বোধহয় ওদের দুজনকে একসাথে দেখার অভ্যাস করে নিতে হবে। কষ্ট গুলো কমাতে হবে।

নিঝুম আবারো বলে উঠল, “আচ্ছা আহনাফ, শান্ত ওর মা বাবার সাথে থাকে না কেন?

আহনাফ কিছুক্ষণ চুপ থেকে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। নিঝুমের দৃষ্টি আহনাফের উপর। উওরের আশা এখনো করছে সে। আহনাফ কিঞ্চিত হেসে বলল, অনেক বড় কাহিনী! ( নিঝুমের দিকে ফিরে ) শুনবে তুমি!

নিঝুম হাতের ঘড়ির দিকে তাকাল। গতরাতে আব্বু তার আর হিনার জন্য একইরকম দুটো ঘড়ি এনেছে। ছাই রঙের উপর সোনালী রঙের কাজ করা ঘড়ির উপর। আহামরি তেমন কিছু না। তবে নিঝুমের বেশ পছন্দ হলো। নিঝুম হেসে বলল, “অনেক সময় আছে!

আহনাফ হেসে আবারো আকাশের দিকে তাকাল। নিঝুমও তাকাল। এক ঝাঁক কাক উড়ে যাচ্ছে দল বেঁধে।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here