তোমার মনের মধ্যিখানি পর্ব -১৩+১৪

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৩_ও_১৪

[
কিছুদিন আগে,

শান্ত বেশ একাই ছিল লাইব্রেরী রুমে, তার কানে হেডফোন আর হাতে একটা বই! শান্ত বেশ মনোযোগ দিয়েই বই টা পড়ছিল। তখনই একটা মেয়ে এসে বসল শান্ত’র পাশে। শান্ত তার উপস্থিতি টের পেলো। চোখ ঘুরিয়ে মেয়েটার দিকে তাকাল। গালে হাত দিয়ে শান্ত কেই দেখছে সে। চারপাশ তাকিয়ে বুঝতে পারল এখানে আর কেউই নেই। শান্ত এবার উঠে দাঁড়াল চলে যাবার জন্য। কিন্তু হঠাৎ করেই মেয়েটা এসে তার সামনে দাঁড়াল। বেশ অবাক হলো শান্ত। মেয়েটা হাতের ইশারায় শান্ত’র কানের হেডফোন সরাতে বলল।‌ শান্ত শব্দ করে শ্বাস ফেলে হেডফোন সরিয়ে জিজ্ঞাসা করল,

“হোয়াট!

“কেমন আছো শান্ত?

“ভালো!

বলেই যেই না শান্ত যেতে নিবে তখন’ই মেয়েটা তার হাত ধরে বসল। শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়েটার হাত ধরে নিজের হাত সরিয়ে নিল। মেয়েটা এবার শান্ত’র সামনে এসে দাড়িয়ে বলল,

“শান্ত আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই!

“কি?

“আসলে শান্ত.. শান্ত আমি ভালোবাসি তোমায়!

শান্ত কথাটার তেমন একটা পাত্তা দিল না। মেয়েটা এবার খানিকটা নরম স্বরে বলে উঠল,
“কি হলো শান্ত কিছু বলো!

“আমি তোমাকে আগেও যাই বলেছি এখনো তাই বলবো।

“শান্ত আমি সত্যি ভালবাসি তোমায়

“কিন্তু আমি ভালোবাসি না!

“তুমি এমনটা কিভাবে করতে পারো। তুমি জানো একমাত্র তোমার জন্য আমি এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।‌ শুধু মাত্র তোমার জন্য।

“কিন্তু আমি তোমাকে এসব কিছুই করতে বলি নি। তাই নয় কি?

অতঃপর শান্ত আবারো চলে যেতে নিলে মেয়েটা এসে শান্ত’র সামনে দাঁড়াল! মেয়েটার নাম তমা। মেয়েটার সাথে শান্ত’র পরিচয় তানিশার বার্থ ডে পার্টিতে। এরপর থেকে এই মেয়েটা পিছু পড়ে আছে তার। তানিশার পরিচিত বলেই এখনো তাকে কিছু বলতে পারছে না শান্ত।

“তমা সামনে থেকে সরে দাঁড়াও!

“না আজ আমি আমার উওর এখান থেকে নিয়েই যাবো

“আমি আমার উওর আরো আগেই বলে দিয়েছি!

তমা ভ্রু কুঁচকে নিল। ঠিক কয়েকদিন আগেই দেখেছিল নিঝুমের হাত ধরে শান্ত কে নিয়ে যেতে।‌ যদিও জানে শান্ত’র সাথে তার তেমন কিছু নেই। তানিশাই বলেছে কথাটা তবুও ভয় হচ্ছে শান্ত কে হারানোর।

তমা শান্ত’র কাছে এসে দাঁড়াল। তাকিয়ে রইল শান্ত’র চোখের দিকে। হঠাৎ করেই তার ঠোঁট দুটো এগিয়ে দিয়ে দিল সে। শান্ত তৎক্ষণাৎ তার বাহু ধরে ছিটকে তাকে দূরে সরিয়ে বলল,

“এরকম কিছু করবার চিন্তা ভাবনা মোটেও করো না।

বলেই বের হয়ে গেল শান্ত।‌ তখনই পেছন থেকে ডাক দিল তমা! শান্ত’র‌ নামটা অনেক জোরেই নিল। শান্ত রেগে পিছন ফিরতেই তমা নিজের জামার হাতের অংশ ছিঁড়ে ফেলে।‌ ঠোঁটের লিপস্টিক লেপ্টে দেয় সে। মাথার চুল এলোমেলো করে চিৎকার করতে থাকে। অতঃপর এক নিঃশ্বাসে বলে,

“তুমি যদি আমায় ভালোবাসতে রাজি না হও তাহলে এখন চিৎকার চেঁচামেচি করে সবাইকে ডেকে আমি বলবো, তুমি আমায় মলেস্ট করতে চেয়েছ! আর তুমি কিন্তু জানো আমার বাবা খুব নামকরা একজন উকিল।‌ছাড় পাবে না তুমি!

শান্ত হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে কপালটা ঘসল। অতঃপর নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলে আগাতে লাগল সে। তমা দৃঢ় ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। কথার নড়চড় হবে না আজ। জ্যাকেট টা তমা গায়ে দিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে তমা’র হাতে দিয়ে বলল, “ফাইন! কাল এসে প্রপোজ করো আমায় ফুল দিয়ে। তখন সবার সামনে বলবো আমি!

শান্ত’র মুখে এই কথা শুনে খুশিতে আত্মহারা তমা। মুহূর্তেই শান্ত কে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার কথা বলতে থাকে সে। শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে থাকে।

তমা বেরুতেই সবাই অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার গায়ে শান্ত’র জ্যাকেট! তানিশা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে তমা’র দিকে। কি হলো ব্যাপারটা। তমা নাচতে নাচতে তানিশা’র কাছ দিয়েই যায়। ঘটনাটা আড়াল হয় আহনাফের চোখ থেকে।‌শুধু শান্ত কে দেখে একবার জিজ্ঞেস করে,

“তোর জ্যাকেট কোথায়?

“ফেলে দিয়েছি!

অতঃপর আহনাফ ভ্রু কুঁচকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল। শান্ত উঠে চলে গেল। আর কিছু জিজ্ঞেস করল না আহনাফ। নীলাভ্র, আফিন সবাই ছুটে এলো শান্ত’র কাছে। এক প্রশ্ন সবার, “তার জ্যাকেট তমা’র কাছে কি করছে।‌‌ শান্ত তখন সবার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল। এই হাসির রহস্য সবাই বুঝতে পারল!

অতঃপর পরদিন,

তমা আজ বেশ সাজগোজ করল। একটা বেবী পিংক কালারের টপস পড়ল। তার হাতের কাছে একটা লাল গোলাপ! সেটা হাতেই এগিয়ে আসছে সে শান্ত’র দিকে। ক্যাম্পাসের সকালের সামনে শান্ত’র সামনে হাঁটু গেড়ে বসে প্রপোজ করল তাকে। অনেক দিনের বাসনা আজ পূর্ণতা পাবে তার। এদিকে সবাই আতংকে আছে। শান্ত’র আজ কিছু না কিছু তো করবেই! তমা শ্বাস ফেলে মুচকি হেসে বলল,

“আই লাভ ইউ শান্ত!

শান্ত শব্দ করে হাসল। তমা’র হাত থেকে ফুল নিয়ে হাসতে লাগলো সে। পেছনের নীলাভ্র, আফিন আর আহিম সবাই জোরে জোরে হাসতে লাগল। যেন খুব মজার কিছু ঘটেছে। তমা কিছুই বুঝতে পারল না। উঠে দাঁড়াল সে। জিজ্ঞেস করে বসল, “কি হয়েছে শান্ত, তোমরা সবাই হাসছো কেন?

শান্ত জবাব দিল না। ফুল টা আহিমের হাতে দিয়ে নীলাভ্রের হাত থেকে কোক নিয়ে তমা’র মাথায় ঢালতে লাগল। তমা ভড়কে গেল। কোন কিছু বুঝতে পারছে না। তমা বলে উঠল,

“শান্ত, এসব কি করছো? তুমিই তো বললে, আমি যেন সবার সামনে ফুল দিয়ে তোমাকে প্রপোজ করি আর আমি সেটা করেছি!

শান্ত হাসল। হেসে বলল, “ইয়াপ! ফুলললল! ডু ইউ নো হোয়াটস দ্যা মিন অফ ফুললল!

“তু…. তুমি আমাকে বোকা বানালে শান্ত!

“এতোক্ষণে ঠিক ধরেছ তুমি, তবে আফসোস অনেকটা দেরি করে!

“শান্ত তুমি এমনটা করতে পারো না।

“কিন্তু আমি তো করবো!

বলেই তমা কে ধাক্কা দিয়ে ওদিকে এসে দাঁড়াল সে। তমা মাটিতে বসে পড়ল ধপাস করে। কাঁদতে লাগলো সে। শান্ত বলে উঠল, “এতোটুকু তো তোমার প্রাপ্য ছিল!

বলেই তার উপর এক বালতি রঙ ঢেলে দিল। অতঃপর তমা’র সামনে বসে বলল, আমাকে ভয় দেখানোর আগে ভাবার দরকার ছিল। আমি আর কেউ না শান্ত, এতো সহজে তোমায় ছেড়ে দেবো এটা তুমি ভাবলে কি করে বলোতো!

তমা কাঁদতে কাঁদতে আবার বলল, “তুমি এমনটা করতে পারো না শান্ত!

তখন তানিশা এসে উপস্থিত হলো। বলে উঠল, “আহ দেরি করে ফেললাম নাকি।

আফিন বলে উঠে, “না শো সবে শুরু হলো!

দিয়া হেসে বলে, “তাহলে তো সেলিব্রেশন করতেই হয়!

রিয়া হাতে কেক’র দেখিয়ে বলল, “আমি কেকও নিয়ে এসেছি!

তানিশা হেসে সেই কেক টা তমা’র মাথায় ফেলে দিল। উপস্থিত সবাই থমকে দাঁড়িয়ে আছে। আজ আরেকটা মেয়েও গ্যাং ডেভিলের হাতে শিকার হচ্ছে। আফিন লাফ দিয়ে গাছের ডাল থেকে কয়েকটা পাতা ছিঁড়ে তমা’র উপর ছড়িয়ে দিল। হাসির ভেঙ্গে পড়ল সবাই!

আহিম বলে উঠল, “না না আরেকটা জিনিস তো এখনো বাকি আছে! ফুললল!

বলেই সেই গোলাপ টা তমা’র মাথায় রেখে দিয়ে বলল, “আহ! এখন একদম ঠিক লাগছে।

তমা মাথা তুলে শান্ত’র দিকে তাকাল। শান্ত তাচ্ছিল্য হাসি হেসে বলল, “ইউ আর এ গ্রেট ফুল!

নীলাভ্র ক্যামেরা হাতে ছবি তুলতে লাগল। তমা আর বসে রইল না এবার। উঠে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো সে। তমা’র সকল বন্ধুরা দূর থেকে এসব কান্ড দেখতে লাগল কিন্তু কেউই ছুটে এলো না। তমা চোখ তাদের উপরও পড়ল। তমা কে দেখেই সবাই পিছিয়ে গেল! কাঁদতে কাঁদতে গাড়িতে এসে বসল তমা!

বর্তমানে,
আহনাফ গাড়ির দরজায় কড়া নাড়ছে। শান্ত গাড়ির স্ক্রিন সরাতেই আহনাফ বলল, বের হ!

অতঃপর শান্ত বের হলো। আহনাফের হাতে দুটো কোল্ড ড্রিক! শান্ত’র দিকে একটা বাড়িয়ে দিল সে। শান্ত হাতে কোল্ড ড্রিক নিয়ে বসল গাড়ির উপর। দুজনেই গাড়ির উপরে বসা। রাত কম গভীর হয় নি। আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“তা এখন কি করবি, শুনলাম তমা’র বাবা নাকি প্রিন্সিপাল কে কল করেছে!

“ওহ!

“এবার কিন্তু তোকে পানিশমেন্ট দেবে। যদি ভার্সিটি থেকে বের করে দেয়।

“তুইও বের হয়ে যাবি!

হাতের ক্যান নিয়ে শান্ত’র মাথায় বারি মেরে আহনাফ বলল, “মজা করছিস?

“আরে না আমি সিরিয়াস! ওই ভার্সিটিতে আমি না থাকলে তুই কি করবি!

বলেই দাঁত বের করে হেসে দিল! আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “তুই আজ অবদি সিরিয়াস হবি না।

“এখানে সিরিয়াস হবার কি আছে? আমি ভাবছি অন্য কথা?

“নিঝুমের কথা!

“মিস চশমিশ! আহ ( গালে হাত দিয়ে) খুব জোরে চড় মেরেছিল আমায় গাল এখনো ব্যাথা করছে!

ঠান্ডা ক্যানের বোতলটা শান্ত’র গালে ধরে আহনাফ। শান্ত লাফিয়ে উঠে বলে, “পাগল হলি?

আহনাফ হেঁসে বলে, “গরম ছিল ঠান্ডা করে দিলাম!

“যা এখান থেকে! কাল কি হবে সেটা নিয়েই ভাবতে থাক।

“হ্যাঁ এসব তো আমাকেই এখন ভাবতে হবে!

“ভার্সিটির কেউ কিছু বলবে না চিল, কিন্তু ইফা!

“ও দেবে না। কিন্তু তবুও ভয় হচ্ছে। তমা’র বাবা কিন্তু নামকরা একজন উকিল। তার নাম ডাক আছে।

“থাকুক। তার মেয়ে আমার নাম বদনাম করতে চেয়েছিল তাই আমিও এমনটা করেছি! ( অতঃপর আহনাফের দিকে এগিয়ে এসে ) তোর কি মনে হয় আমি ভুল করেছি।

আহনাফ কিঞ্চিত হেসে শান্ত’র মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,‌
“চুল গুলো উসকোখুসকো আজ গিয়ে শ্যাম্পু করবি!

শান্ত খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে আহনাফের মুখের দিকে। অতঃপর দুজনেই হেসে উঠে জোরে!

—–

ভার্সিটির পরিবেশ আজ বেশ শান্ত। প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে পুরো গ্যাং ডেভিলের সদস্য। এছাড়া তমা আর তমার বাবা। এক কোণায় দাঁড়ানো ইফা, তিথি আর নিঝুম। এছাড়া আরো কিছু স্টুডেন্ট!

তমা’র বাবা বলে উঠে, “আর কতোক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে আমাদের!

প্রিন্সিপাল স্যার বলে উঠল, “এই তো শান্ত’র বাবা এলেই শুরু হবে। আপনি আর একটু ওয়েট করুন।

শান্ত বলে উঠে, “স্যার তিনি আসবেন না আপনার যা বলার বলুন।

তমা’র বাবা একবার তাকাল শান্ত’র দিকে। অতঃপর প্রিন্সিপাল স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল, “স্যার, আপনি কি সিউর ও কবীর চৌধুরী ছেলে! আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। যদিও তার সাথে ঘনিষ্ঠ নই তবুও লোকমুখে তাকে চিনি। বেশ সুনাম আছে তার। তার এই সন্তান হয় কি করে?

প্রিন্সিপাল স্যার জবাব দিতে পারেন না। শান্ত কথায় ফোড়ন কেটে বলে, “আমারো বিশ্বাস হয় না উনি আমার বাবা!

তমা’র বাবা হতবাক হয়ে গেলেন। আহনাফ শান্ত কে খোঁচা দিয়ে চুপ করতে বলল। শান্ত মুখ টিপে হাসল। স্যারের দরজায় কড়া নাড়ল কেউ। স্যার আসতে বলাতে আদনান স্যার দরজা খুলে বলেন, “স্যার শান্ত’র অভিভাবক এসেছে। আমি নিয়ে এসেছি।

“আসুন স্যার। আপনার অপেক্ষায় ছিলাম!

“সরি স্যার আমার ক্লাস ছিল তাই একটু দেরি হলো।

অতঃপর স্যার ভেতরে এলেন। তার পিছন পিছন একটি লোক ঢুকল। তিথি নিঝুম কে খোঁচা মেরে বলতে লাগল,

“আদনান স্যার কে কি হ্যান্ডসাম লাগছে দেখছিস!

নিঝুম এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। এই মেয়ের শুধু আদনান স্যার আর আদনান স্যার। ইফা’র কানের কাছে গিয়ে নিঝুম ফিসফিসিয়ে বলল, “উনি শান্ত’র বাবা!

“না, উনার এসিস্ট্যান্ট, রায়ান আংকেল! কবীর আংকেল বোধহয় দেশে নেই!

রায়ান সাহেব ভেতরে এসে প্রথমে স্যার কে সালাম দিল। নিঝুম তার দিকে তাকাল।‌বয়স কম হবে না, অশান্ত’র‌ বাবা’র‌ মতোই হবে বোধহয়। রায়ান সাহেব শান্ত’র দিকে ফিরল। প্রিন্সিপাল স্যার দাঁড়িয়ে গেলেন। তাকে বসতে বললেন। অতঃপর বসতে বসতে বলেন, “স্যার আপাতত দেশে নেই, সেজন্য আমাকে আসতে বলেছেন।

“জানি আমি। কথা হয়েছে আমার সাথে। তবুও যে আপনি এলেন তাই ধন্যবাদ আপনাকে।

“জ্বি! শান্ত ঠিক কি করেছে?

“আপনাকে আমি তার আগে একটা জিনিস দেখাই!

অতঃপর সেই পোস্টার দেখানো হলো। রায়ান সাহেব সেটা দেখলেন। তমা কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছে। তমা’র বাবা বলে উঠেন, “আমার মেয়ে কে নিয়ে শেষে কি না এসব! কি করে হয় স্যার এমনটা।

প্রিন্সিপাল স্যার তমা’র বাবার উদ্দেশ্য বলেন, “আপনি উত্তেজিত হবেন না শান্ত হোন।

“পারছি না, মেয়েকে এভাবে কষ্টে থাকতে দেখে পারছি না।

রায়ান সাহেব বলে উঠেন, “এটা কি শান্ত’র কাজ বলে আপনি মনে করেন।

প্রিন্সিপাল স্যার বলে উঠেন, “আপাতত! তবুও আমি আপনার সামনেই শান্ত কে জিজ্ঞেস করছি,‌ “শান্ত এটা কি তোমার কাজ!

শান্ত বলে উঠে, “হুম আমার কাজ!

উপস্থিত সকলে অবাক। রায়ান সাহেব ভ্রু কুঁচকে তাকান শান্ত’র দিকে। প্রিন্সিপাল স্যাল জিজ্ঞেস করেন,”কেন করলে এমনটা তুমি?

শান্ত চুপ হয়ে রইল। আহনাফ ঢোক গিলল। সে বলতে চাইছে কিন্তু এরকম কথা সবার সামনে কিভাবে বলবে তা বুঝে উঠতে পারছে না। রায়ান সাহেব বলে উঠেন, “আপনি না হয় ভিকটিম কে জিজ্ঞেস করুন। সে তো অবশ্যই জানবে এর কারণ!

তমা’র বাবা তখনই রেগে বসেন। বলেন, “আমার মেয়েটাকে এখনো ছেড়ে দিচ্ছেন না দেখি। এখানে এসেও ওকে এসব জিজ্ঞেস করে মানসিক ভাবে আঘাত করছেন।

রায়ান সাহেব বলেন, “এমনটা একদম’ই না! আপনি ভুল বুঝছেন। ও ভিকটিম বলেই কথা বলবে। আমি শুধু কারণ জানতে চাই!

তমা নিজের হাত খামচে ধরে। এখন যদি লাইব্রেরীতে ঘটা তখনকার কথা উঠে আসে। কি হবে তখন? ভাবতেই গা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তমা’র। আদনান স্যার বলে উঠেন, “ঠিক বলেছেন। তমা তুমি বলো ঠিক কি কি হয়েছিল তোমার সাথে। এসব পোস্টার কে টানিয়েছে? কেন টানিয়েছে? তোমার সাথে শান্তর’ই বা কি হয়েছিল!

তমা এখনো চুপ। নিঝুম বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে? তমা কেন চুপ? কিছু বলছে না কেন সে?

এদিকে রায়ান বলে উঠে, “তা স্যার শান্ত’র উপর যখন দোষ দেওয়া হচ্ছে আমি কি জিজ্ঞেস করতে পারি, আপনারা কেউ কি দেখেছিলেন শান্ত কে এই পোস্টার গুলো দেওয়ালে লাগাতে বা শান্ত’র কোন বন্ধু কে।

তমার বাবা বলে উঠে, “আপনি আবার এসব কি বলছেন? যেখানে শান্ত নিজেই স্বীকার করলো সেখানে আপনার এই অযথা যুক্তির কারণ কি?

রায়ান সাহেব হেসে বলল, সেটা তো আমিও বলতে পারি আপনার মেয়ে কেন কিছু বলছে না। যদি শান্ত’ই সব কিছু করে থাকে তাহলে ও কেন কিছু বলছে না। কিসের ভয় তার? আপনি সাথে থাকার পরও ভয়!

তমা এবার কাঁপতে লাগলো। চোখ বন্ধ করতেই মনে পড়ল এখানে আসার আগে তার আর আহনাফের কথা।‌আহনাফ তাকে ধমকায় নি। শুধু এতটুকু বলেছিল, “দোষ যেমন শান্ত করেছে তেমন তুমিও করেছে। তো এখানে যদি শান্ত’র দোষী প্রমাণ হয় তখন আমি তোমার কথা সবার সামনে বলবো। আর একটা কথা, তুমি হয়তো ভুলে গেছো আমাদের লাইব্রেরীতে সিসি টিভি ক্যামেরা আছে। তাই আমি যা বলছি তা যে মিথ্যে না এটা প্রমাণ করতে আমার সময় লাগবে না!

তমা’র হতবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে রইল। আহনাফ কথা গুলো বলেই চলে গেলো। তার শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। কোনমতেই নিজের বাবা’কে সবার সামনে এভাবে অপদস্থ করতে পারবে না সে। আদনান স্যার, প্রিন্সিপাল স্যার আবারো জিজ্ঞেস করল। তমা এবার বলে উঠল, “শান্ত কিছু করেনি!

উপস্থিত সবাই অবাক হলো। শান্ত ও খানিকটা থতমত খেলো। নিঝুম বলে উঠল, “তুমি এসব কি বলছো? কাকে ভয় পাচ্ছ তুমি। মিথ্যে কেন বলছো?

শান্ত কপাল কুঁচকে তাকাল নিঝুমের দিকে। নিঝুম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে তাকিয়ে রইল। তার শরীর রাগে কাঁপছে। তমা মিথ্যে কেন বলছে। এদিকে তমা আবারো বলে উঠে, “আমি মিথ্যে বলছি না। শান্ত কিছু করেনি। বললাম তো আমি।

প্রিন্সিপাল স্যার বললেন, “তুমি এসব কি বলছো?

“যা বলছি ঠিক বলছি। আমি তো একবার এই কথা বলি নি শান্ত সব করেছে। তাহলে আপনারা কেন ওর ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন।

তমা’র বাবা তমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, তমা! মা কি হয়েছে?

“বাবা কিছু হয় নি।

“তাহলে কি করেছে এসব?

“আমি জানি না, আর জানতেও চায় না। বাবা আমি আর এখানেও থাকতে চাই না। এখানে আমি আর পড়বো না।

বলেই তমা উঠে চলে গেলো। তিথি নিঝুম কে বলল, “ব্যাপারটা কি হলো?

“জানি না! ইফা তুই কিছু জানিস?

“বলতে পারছি না!

অতঃপর তারা তিনজন বেরিয়ে গেল তমা’র পিছন পিছন। রায়ান সাহেব হেসে বলেন, তা স্যার আর কিছু বলবেন।

প্রিন্সিপাল স্যার কোন জবাব দিলেন না। তমা’র বাবা রেগে উঠে চলে গেলেন। আপাতত এখানেই থেমে গেল সবটা!

বাইরে রায়ান আংকেল শান্ত’র সাথে কথা বলতে এলেন, “কেমন আছো শান্ত বাবা!

“ভালো তুমি!

“হুম ভালো। কিন্তু…

“আর কিছু জিজ্ঞেস করার নেই আমার।

বলেই শান্ত চলে গেল।‌ রায়ান সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন!

—–

নিঝুম, ইফা আর তিথি হাঁটছে একসাথে। তমা’র পিছন পিছন গিয়েছিল তারা। নিঝুম বার বার জিজ্ঞেস করার পর তমা শুধু একটা কথাই বলল, “সব দোষ আমার!

নিঝুম কথাটার অর্থ বুঝল না। সে ভেবেই যাচ্ছে। ইফা নিঝুম কে উদ্দেশ্য করে বলে, “এবার ভাবা বন্ধ কর?

“আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

“সব কিছু বুঝতে নেই নিঝুম।

তিথি বলে উঠে, “হ্যাঁ তাই তো। যার যার ব্যাপার তারা দেখুক না। আমরা এসব দেখে কি করব বল তো।

নিঝুমের মন মানলো না তখনও। হুট করেই সামনে এসে হাজির হলো শান্ত। নিঝুম কে দেখে একগাল হেসে বলল, “হাই চশমিশ!

নিঝুম চমকে উঠলো। শান্ত বলে উঠল, “মনে আছে তোমার গতকালের কথা। আমার কিন্তু বেশ মনে আছে।

“আমি যা করেছি ঠিক করেছি

“হুম তা ঠিক আছে। তবে কতোটুকু ঠিক করেছো তুমি?

নিঝুম ঢোক গিলল। শান্ত হেসে বলল, “হাম তোমার জন্য..

পেছন থেকে আহনাফ ডেকে উঠল তখন, “শান্ত!

শান্ত পেছন ফিরল। আহনাফ শান্ত’র দিকে এগিয়ে এসে বলল, “চল!

“যাচ্ছি কিন্তু আমার..

“শান্ত আমি আসতে বলেছি!

শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অতঃপর নিঝুমের দিকে ফিরে বলল, “আচ্ছা যাও আজকের দিনের জন্য ছেড়ে দিলাম তোমায়। তবে রাতের ঘুম হারাম করছি তোমার। আগামীকাল তোমার জন্য খুব বড় সারপ্রাইজ আছে! ঠিক আছে টাঠা ঝুম ঝুমাঝুম ঝুম!

বলেই চলে আহনাফের সাথে চলে গেল শান্ত। নিঝুম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তাদের চলে যাবার দিকে। তিথি নিঝুম কে জড়িয়ে ধরে বলল, “ভয় পাস না জান আমি আছি তোর সাথে!

ইফাও একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরল তাকে। নিঝুম হেসে উঠলো!

প্রিন্সিপাল স্যার বেশ অবাক। কেন জানি সবকিছু্ই এলোমেলো লাগছে তার কাছে। ক্লাসরুমে শান্ত আর আহনাফ যেতে নিতেই তিনি এসে দাঁড়ালেন তাদের সামনে। আহনাফ কে বললেন চলে যেতে। শান্তও আহনাফ কে চোখের ইশারায় চলে যেতে বলল। আরমান সাহেব হাঁটতে লাগলেন। তার সাথে হাঁটতে লাগলো শান্তও‌। অতঃপর বলে উঠেন ,

“শান্ত আমি কিন্তু জানি কাজটা তুমিই করেছ?

“আমি তো এটা স্বীকার করছি স্যার!

“স্যার না আংকেল বলো!

শান্ত হেসে বলল, “আমি সত্যি বলছি তমা কে আমি কিছু বলে নি। আমি নিজেও জানি না ও কেন এমনটা করল।

আরমান সাহেব শান্ত’র মাথায় হাত রেখে বলল, “অনেকটা স্নেহ করি তোমায় আর বিশ্বাস ও!

শান্ত হাসল। কেন জানি আরমান সাহেবের মন বলতে লাগল শান্ত সত্যি বলছে। শান্ত’র চোখে তিনি মিথ্যে দেখতে পারছেন না। অতঃপর দুহাত পিছনে নিয়ে বলেন, “অনেকদিন আমাদের বাসায় আসো না, আজ রাতে এসো!

“আপনি রান্না করবেন!

আরমান সাহেব হেসে চলে গেলো। শান্ত হেসে ক্লাসের দিকে পা বাড়াল!

——

অশান্ত’র ধমকানি কাজে দিয়েছে। নিঝুমের রাতের ঘুম আসলেই হারাম হয়েছে। সারারাত রাত শুধু অশান্ত কে নিয়েই চিন্তা করলো সে। সত্যি কি কাল ভার্সিটিতে তাকে কিছু করবে শান্ত। তো কি? সে ভয় পায় না শান্ত কে। আর এইবার কোন ভুল কাজও করেনি। যা করেছে ঠিক করেছে। তাই ভয় পাবে না সে। যা কিছুই হোক না কেন পুরোপুরি ভাবে মোকাবেলা করবে শান্ত’র সাথে হুম!

অতঃপর সকাল বেলা একটু দেরি করেই উঠলো সে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছে। নিজেকে মনোবল দিচ্ছে। না আজ ভয় পাবে না সে। কিন্তু যদি তার সাথে সত্যি সত্যি উল্টোপাল্টা কিছু করে ফেলে তখন। নিঝুম ভাবতে লাগল। অতঃপর মাথা ঠান্ডা করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

ভার্সিটিতে ঢোকার আগে ফোনের রেকর্ডিং অন করল নিঝুম। এটাই একমাত্র পথ বাঁচার। যদি আদৌও তার সাথে কিছু একটা হয়ে যায় তখন এই রেকর্ডিং হবে তার প্রমাণ!

গুটি গুটি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে নিঝুম। না সবকিছু ঠিকঠাক’ই লাগছে তার। ডেভিল গ্যাং’র কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। নিঝুম ঢোক গিলল। হাতের ফোনটা কে শক্ত করে ধরল। ক্লাসের দিকে রওনা হলো সে। আশপাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে যেতে লাগল সে। আজ কোন ভাবেই শান্ত’র ফাঁদে পড়া যাবে না। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে হঠাৎ করেই একটা পোস্টার পড়ল তার চোখে। নিঝুম চোখের চশমা ঠিক করে পোস্টার টা দেখতে লাগলো। কেন জানি পোস্টারে থাকা মেয়েটাকে তার মতোই লাগছে দেখতে। একটু ভালো মতো দেখতে গিয়ে বুঝতে পারল এটা আসলেই তার ছবি। কিন্তু তার ছবি এখানে এলো কোথা থেকে। কেই বা পেলো এটা। ছবির ভেতর তার চশমা গুলো সাইজে একটা বড়। তাকে দেখতে পুরো জোকার জোকার লাগছে। পাশ দিয়ে আবার লেখাও আছে, মিস চশমিশ!

শান্ত অবশেষে এই ফাঁদে ফেলল তাকে। নিঝুম রেগে পোস্টার টা ছিঁড়ে ফেলল। মনে হচ্ছে না তেমন কেউ দেখেছে। কারণ পোস্টার নিচে কোথায় ছিল না। এখান থেকেই বোধহয় শুরু। এরকম লাইনে আরো কয়েকটা পোস্টার ছিঁড়তে ছিঁড়তে একটা ক্লাসরুমের সামনে এসে পড়ল সে। ঢোক গিলে তাকাল ক্লাসরুমের দিকে। শেষ পোস্টার ক্লাসরুমের দরজায় লাগানো আর কোথায়ও লাগানো নেই। কেন জানি মনে হচ্ছে এটা কোন ফাঁদ।

দাঁড়িয়ে ঢোক গিলছে নিঝুম। কি করবে, পোস্টার টা কি তুলে ফেলবে। কিন্তু তুলে ফেলতে গিয়ে যদি আগের বারের মতো এবারও তাকে টেনে ভিতরে নিয়ে যায় তখন! দীর্ঘশ্বাস ফেলল নিঝুম। একটু ভেতরের দিকে উঁকি মেরে আবারো পিছন চলে আসে। না কেউ তো আসছে না। আবারো উঁকি মারে। কয়েকবার এরকম করার পরও কিছুই দেখলো না সে‌। অতঃপর শুকনো ঢোক গিলে যেই না পোস্টার ছিঁড়তে গেলো অমনি কেউ তার হাত ধরল। নিঝুম চিৎকার করে উঠল,

“নাআআআ! অতঃপর…

#চলবে….

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here