#তোমার_স্মৃতি
#পর্বঃ০৫
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
তখন হঠাৎ তার হাতের আংটির দিকে নজর পরে। এটা তাকে রোহান গিফট করেছিলো। আংটিটাতে একবার হাত বুলিয়ে চুমু খেল। তার এছাড়া কোনো উপায় নেই। মাসের শেষ প্রাইভেট পড়িয়ে যে টাকা পায় সেটাও শেষ। আর সেখান থেকে এখন টাকা পায়নি সে। সে তার হাত থেকে আংটিটা খুলে একহাজার টাকাটা হাতে নিয়ে বাহিরে বেরিয়ে এলো। বাড়িআলা লোকটির হাতে দুটো জিনিস দিয়ে বলল
“হয়েছে আপনার এবার দয়া করে একটু শান্তি দিবেন আমাকে।”
লোকটি মুখ বাকিয়ে চলে গেল।
সানজিদা ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। টলমল পায়ে হেটে সোফার কাছে গিয়ে ধপ করে বসে পরলো সে। হাত দিয়ে মাথার চুলগুলো আকরে ধরে চোখ বন্ধ করে রইলো সে। কি করবে এখন সে কোথায় যাবে কাল সে। শশীর বাসায় যাবে কিন্তু ওর বাসাটা তো ছোট। ভালো লাগছে না তার। আর থাকবেই কয়েকদিন তারপরও এতো ঝামেলা কেন। সে যে সহ্য করতে পারছে না। তার হাত পা কাঁপছে। মাথাটা ঝিম ধরে আছে তার। সারা দুনিয়া যেন ঘুরছে তার।
শশী বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নেয়। তারপর তার ফোনটা হাত নিয়ে সানজিদাকে কল দেয়। কিন্তু সানজিদা কল রিসিভ করছেনা। শশীর মধ্যে ভয় কাজ করতে লাগলো। কারণ সবসময় সানজিদা প্রথমে কল রিসিভ না করলেও দ্বিতীয়বারে সে কল রিসিভ করে। কিন্তু আজ সাতবারের উপর কল দিয়েছে সে কিন্তু সানজিদার কোনো রেসপন্স নেই। সানজিদার ঘুমও এতোটা গভীর না যে এতোবার কল করার পর সে ধরবেনা। আচ্ছা ওর কি কিছু হয়েছে।
শশী পাগলের মতো ছুটে যায় সানজিদার বাসায়। তার চাচা চাচি শশীকে আটকাতে চাইলেও সে ছুটে আসে। দরজায় দাড়িয়ে ডাকতে লাগলো সানজিদাকে। কিন্তু সানজিদার কোনো রেসপন্স নেই। ওর হাত পা কাঁপছে। টেনশনে গা ঘেমে একাকার অবস্থা। হঠাৎ আর ফোনটা বেজে ওঠে। সে দেখলো অপরিচিত একটা নাম্বার। সে রিসিভ করলো না। কিন্তু পরপর দুইবার কল আসতেই সে রিসিভ করে নিলো। শশী কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল “কে বলছেন!”
নিবিড় অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো “মিস শশী আমি নিবিড় বলছি। এই সানজিদা ফোন ধরছে না কেন! তুমি কি কিছু জানো।”
শশী বলল “জানিনা আমি সানজিদার বাসার সামনে দাড়িয়ে আছি। কিন্তু ওর কোনো খবর নেই। প্রায় আধঘন্টা হয়ে গেল আমি ওকে ডাকছি। কিন্তু ওর কোনো রেসপন্স নেই।”
নিবিড় বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে পরলো। ও “কিহ” বলে চিল্লিয়ে উঠলো। ও অস্থির হয়ে বলল “আমি আসছি তুমি ওখানেই থাকো।” বলেই নিবিড় কল কেটে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় রওনা হলো সানজিদার বাসার দিকে। দ্রুত ড্রাইভ করে সে সানজিদার বাসার সামনে এসে পৌছালো সে।
—————–
সানজিদা পিটপিট করে চোখ খুললো। চারপাশে চোখ রাখতেই সে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলো। তার জ্ঞান ফিরতেই তার কেবিনে থাকা নার্স “ডা. নিবিড়” বলে চিল্লাতে চিল্লাতে বাহিরে চলে গেল। সানজিদা খুব কষ্টে ওর মাথা ধরে উঠে বসে। এমন সময় কাউকে হন্তদন্ত হয়ে কেবিনে আসতে দেখে সে চোখ তুলে তাকাতেই নিবিড়কে দেখতে পেল। নিবিড় একটা সস্থির নিশ্বাস ফেলে সানজিদার কাছে এগিয়ে গেল। সানজিদা বলল
“আমি এখানে কিভাবে আসলাম। আর কে আনলো আমাকে।”
নিবিড় মাথা নিচু করে বলল “আমি আপনাকে নিয়ে এসেছি।”
সানজিদা বলল “মানে কিভাবে কি?”
নিবিড় বলল “বাদ দিন তো এগুলো। এখন বলুন তো আপনার শরীর কেমন লাগছে।”
সানজিদা বলল “হুম ভালো কিন্তু”
নিবিড় বলল “কোনো কিন্তু না এখনই শশী আসছে খাবার নিয়ে আপনি চুপচাপ খেয়ে নিবেন।”
সানজিদা কিছু বলল না চুপ করে রইলো।
ওদের কথারমধ্যেই শশী চলে আসে। শশী আসতেই নিবিড় একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়। শশী ধীর পায়ে সানজিদার দিকে এগিয়ে এসে ওর পাশে থাকা টুলটিতে বসে পরে। ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স বের করে তা থেকে খাবার বের করে সানজিদার মুখের সামনে খাবার ধরে। সানজিদা শশীর হাত ধরে নেয়। সে বলল “আমার কিছু জিনিসপত্র ছিল ওই বাসায় নিয়ে আয় তো। সকালের মধ্যেই আমাকে ওই বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে।”
শশী ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল “তোর জ্ঞান ছিলনা প্রায় দুইদিন।”
সানজিদা বলল “কিহ”
শশী বলল “হুম আর আমি আগেই তোর সেই জিনিসগুলো নিয়ে এসেছি। ওগুলো আমার কাছেই আছে। টেনশন নিস না এখন খেয়ে নে।”
সানজিদা বলল “আমার প্রাইভেট গুলো”
শশী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল “আমি ফোন দিয়ে বলে দিয়ে তুই আর পড়াতে পারবিনা।”
সানজিদা বলল “কিহ তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস। না করে দিলি কেন তুই!”
তখনই নিবিড় কেবিনে প্রবেশ করে বলল “তোমার যে শরীরের অবস্থা তাতে তুমি আর আগের মতো ছোটাছুটি করতে পারতে পারবে না।”
সানজিদা বলল “তাহলে টাকা কোথায় থেকে আসবে। আমাকে কি কেউ বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে। এই স্বার্থপর দুনিয়ায় কে টাকা দিবে আমাকে। আর যেই কয়দিনই বেঁচে থাকিনা কেন থাকা খাওয়ার জন্য তো টাকার প্রয়োজন।”
শশী এবার বলল “আমি যা প্রাইভেট পড়াই তার থেকে না হয় আরো পড়াবো।”
সানজিদা বলল “তুই আর কতো ঋণী করবি আমাকে। আমি আর পারছিনা এতো ঋণ নিতে। আর পারছিনা।” সানজিদা অনেক হাইপার হয়ে গেল। নিবিড় আর কোনো উপায় না পেয়ে সানজিদাকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে।
নিবিড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “ওকে নিয়ে আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।”
শশী বলল “আপনি এমন একটা মেয়েকে কেন ভালোবাসলেন। যার জীবন অনিশ্চিত। যে কতোদিন বাঁচবে তার কোনো ঠিক নেই। কেন জড়ালেন ওর মায়ায় বলেন তো!”
নিবিড় মাথা চেপে ধরে বলল “জানিনা আমি কিছু জানিনা। আমি ওর অতীতটা জেনেও ওকে ভালোবাসি। আমি ওর না পাওয়া ভালোবাসাটা কোনোদিন বুঝতেই দিবো না। আমি যে করেই হক ওকে বাঁচাবো। যা করতে হয় তাই করবো কিন্তু ওকে আমি বাঁচাবোই। আমার ওকে যে চাই।”
শশী বলল “আপনি পাগলামী করছেন কেন! আর ও তো রোহানকে ভালোবাসে। সে কোনোমতেই আপনাকে মেনে নিতে পারবেনা।”
নিবিড় একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল “আমার ভালোবাসাতেই হবে”
শশী বলল “আপনি সত্যিই পাগল হয়ে গিয়েছেন। একটা ডিভোর্সী মেয়েকে বিয়ে করলে সবাই তো সানজুকেই কথা শুনাবে।”
নিবিড় বলল “আমি ঢাল হয়ে দাড়াবো ওর পাশে। আমাকে একমাস সময় দেও এরমধ্যেই আমি ওর মন জয় করে নিবো।”
শশী আর কিছু বলল না চুপ করে রইলো। সে বলার মতো আর কিছু খুঁজে পেল না। নিবিড় একপলক সানজিদার দিকে তাকিয়ে ওখান থেকে চলে এলো। গাড়ি করে হাসপাতালের কিছু দূরে থাকা একটা লেকের পাশে চলে এলো সে। ধুপ করে বকুল গাছের নিচে বসে পরলো সে। গাছের সঙ্গে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো সানজিদা জীবনে এতো কষ্ট কিভাবে সহ্য করেছে। ও ভাবতে লাগলো সানজিদার বাসায় যাওয়ার সেইদিনের কথা।
চলবে….
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)