তোর চোখে আমার সর্বনাশ
৬.
নাহিয়ান কাজ শেষ করে রুম থেকে বের হয়ে করিডরের রেলিঙের পাশে দাঁড়ালো। নিচের দিকে তাকিয়ে যা দেখল মাথা গরম হয়ে যায়। রিশাব কথায় কথায় ফারাহ্ কে টাস্ করছে। ফারাহ্ অস্তিত্বে সরে বসলে ও দ্বিতীয় বার রিশাব ওই কাজ টাই করে। এদিকে নাহিয়ান রা’গে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য। চোয়ালে শক্ত করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ফারাহ্ দিকে। মেয়েটা এমনি ফটফট করে আর এখন চুপ। আকস্মিক গম্ভীর শান্ত গলায় বলল ,
” ফারাহ্ রুমে আয় আমার হলুদ শার্ট খুঁজে পাচ্ছি না। ”
কথা শেষ করে দ্রুত পায়ে রুমে চলে যায়। ফারাহ্ সবার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে উপরের যাওয়ার উদ্দেশ্যে বসা থেকে উঠে। সিড়ির দিকে পা বাড়ালো। রুমে ডুকে অবাক হয়ে যায় ফারাহ্। বিস্ময় দৃষ্টিতে নাহিয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে মারে ,
” এসব কি নাহিয়ান? ”
” দেখতেই তো পাচ্ছিস কি আমাকে জিজ্ঞেস করছিস কেনো? ”
নাহিয়ানের কাছ থেকে গা ছাড়া জবাব পেয়ে রা’গ হল ফারাহ্। পরক্ষণে মাথায় এলো নাহিয়ান তো হলুদ শার্ট পরে না। কারণ হলুদ , লাল পরুষের জন্য হারাম। তাহলে হলুদ শার্ট কোথায় থেকে এলো। অতিরিক্ত জিদ্দে কিড়মিড় করতে লাগলো। নিজেকে যথাযথ শান্ত করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল ,
” রুমের এই অবস্থা করলেন কেনো? ”
” আমার ইচ্ছে হয়েছে করেছি তোর কি? ”
বলে কাবার্ডে কি জানি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। খুঁজছে কম সব এলোমেলো করছে বেশি। ফারাহ্ গলা উঁচিয়ে বলল ,
” দেখুন আপনি কিন্তু বেশি করছেন? কি লাগবে আমাকে বলুন খুঁজে দিচ্ছি। ”
” নো নিড। ”
” ওকে ফাইন , সব এলোমেলো করা বন্ধ করুন। ”
” করবো আমার রুম আমার কাবার্ড আমি যা ইচ্ছেই করতে পারি। ”
” ও হ্যালো রুম টা এখন একার আপনায় নয় ওকেই এখানে আমার ভাগ ও আছে। ”
নাহিয়ান ক্ষি’প্ত হয়ে বলল ,
” বের হয় আমার রুম থেকে সাথে আমার জীবন থেকে ও , আউট। ”
শেষের শব্দ টা এতো জোরে বলেছে ফারাহ্ কেঁপে উঠল। নাহিয়ানের বলা কথা গুলো ক্রমশ ফারাহ্ হৃদয়টা ক্ষ’তবিক্ষ’ত করে দিচ্ছে। একে তো নিজে ডেকে আনলো রুমে এখন নিজেই চলে যেতে বলছে। লোকটা আসলে চায় কি? পর মুহূর্তে ভেজা ঢোক গিলে তাচ্ছিল্যে হেসে বলল ,
” চলে যাওয়ার জন্য আসি নাই। না আপনার রুমে না আপনার জীবনে। ”
তী’র্য’ক চাহনীতে তাকালো ফারাহ্ স্বাভাবিক মুখশ্রীর দিকে। নাহিয়ানের রা’গ যেনো তর তর করে বেড়ে চলছেই। এত কথা বলে মেয়ে টা তাও চুপচাপ হজম করে। চলে যায় না কেনো ওর লাইফ থেকে। দাঁতে দাঁত চেপে রুম ত্যাগ করল। ফারাহ্ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুম গোছাতে লেগে পড়ে। হুট করে হাতের কাছে একখানা ছবি পায়। ছবি টা আর কারো নয় তারা। নাহিয়ানের কাবার্ডের তারা ছবি দেখে অবাক হওয়ার কথা নয়। তারপরে ও কোথাও একটা কিন্তু থেকে যায়। নিজের স্বামীর কাছে কোনো মেয়েই আরেক মেয়ের ছবি সহ্য করতে পারবে না। ছবি টা রাখতে গিয়ে কি মনে করে উল্টো দিকে ঘুরালো। কিছু লেখা আছে উল্টো দিকে।
“ তারারানী আমি চাই না তোমায় ঠোকাতে। কিন্তু কি করবো বলো সবাই চায় পিচ্চি কে আমি বিয়ে করি। আর পারছি না নিজের সাথে লড়তে। তাই বিয়ে করতে রাজি হলাম। তুমি কিছু মনে করও না হ্যাঁ। আমি তোমার ছিলাম তোমার আছি তারারানী। ”
ছবি টা ঠিক জাগায় রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ফারাহ্। বারবার নিজেকে অ’পরা’ধী মনে হয়। আচ্ছা ও নাহিয়ানের লাইফ থেকে চলে গেলো তো মন্দ হয় না। না না তা কি করে হয়। আর যাই হোক মামনি , বাবাই কত আশা করে নাহিয়ান কে ওর হাতে তুলে দিয়েছে। আর ও কি না স্বার্থপরে মতো কি না কি ভাবছে। কিন্তু আর কত সহ্য করতে পারে ও ‘ ও তো একজন মানুষ। কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়ল। ও তো চায় নি নাহিয়ানের জীবন সঙ্গি হতে। ওকে এক প্রকার জোর করে নাহিয়ানের সাথে বেঁধে দিল। তাহলে! তাহলে ওকে কেনো প্র স্তা তে হচ্ছে কেনো? কে দিতে পারবে এই কেনোর উত্তর কে? নাহিয়ান। বিয়ের হওয়ার পর থেকে লোক টা ওর সাথে ভু’লে ও কথা বলছে না ঠিক মতো। প্রয়োজন ছাড়া টুঁ শব্দ টি ও করে না। মাথায় অতিরিক্ত চাপ ফেলায় হঠাৎ করে ব’মি করে দিল। এ’ক্সি’ডেন্ট হওয়ার পর থেকে ওর এই অবস্থা। মাথায় জোর দিতে পারে না।
এদিকে রিশাব বারবার টাইম দেখছে ফারাহ্ সে কখন রুমে গেলো। এতক্ষণ কি করছে। নাহিয়ান ও নিচে। কিছু না ভেবে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে আসল। রুমে নকড করে ডুকে পড়ল রুমে। ড্রেসিং কক্ষের মাঝ খানে ফারাহ্ বসে কাঁদতে দেখে হকচকিয়ে উঠল রিশাব। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে ফারাহ্ পাশে বসে বাহুতে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করল ,
” ফারাহ্ আর ইউ ওকে? ”
ক্লান্ত চোখে তাকালো ফারাহ্। কিছু বলতে নিবে কেউ একজন ওকে হ্যাঁচকা টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। চেনা জানা পারফিউমের ঘ্রাণ বলে দিচ্ছে লোক টা কে হতে পারে। চোখ বন্ধ করে মিশে আছে নাহিয়ানের সাথে। খানিক আগে রিশাব কে রুমের দিকে আসতে দেখে অবাক হল নাহিয়ান। ফারাহ্ এক মাত্র উপরে রুমে আছে আর বাকি সবাই নিচে। এক প্রকার ছুটে আসল রুমে। এসে দেখে রিশাব ফারাহ্ ডান হাতের উরু ধরে রেখেছে। মুহূর্তে মাথা গ’রম হয়ে যায়। শিরা-উপশিরায় বহমান রক্তও যেনো নিজের স্বাভাবিক গতি বেগ হারিয়ে অস্বাভাবিক হারে বইতে আরম্ভ করে। বুকের ভিতর অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করল। আকষ্মিক কি ভেবে ফারাহ্ কে এক ঝাটকায় রিশাবের কাছ থেকে দূরে নিয়ে আসে। শরীর নড়ে উঠায় গড়গড় করে ফের ব’মি করে দিল ফারাহ্। তাও নাহিয়ানের গায়ের উপর। ভর্তা চোখে তাকালো নাহিয়ানের দিকে এই বুঝি ঝা’ড়বে ওকে। না ঝা’ড়লো না ওকে ভু’ল প্রমাণ করে দিয়ে কোলে তুলে নিল নাহিয়ান। ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে পানি দিয়ে সুন্দর করে মুখ পরিষ্কার করে দিল। অতঃপর পুনরায় কোলে তুলে বের হয়ে আসল ওয়াশরুম থেকে। বেডে স্বযত্নে শুয়ে দিয়ে রিশাব কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
” রিশাব তুমি এখন আসতে পারো। ”
রিশাব অবাক , আশ্চর্য। কি হল এতক্ষণ সব মাথার কয় ফুট উপর দিয়ে গেছে তা অজানা। ধাধস্ত হয়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে। নাহিয়ান হাঁক ছেড়ে ফাতেহ মামা কে ডাকল ,
” ফাতেহ মামা। ”
মিনিট ঘুরিয়ে আসার আগেই ফাতেহ হাজির হলো। নাহিয়ানের অবস্থা দেখে মুখ খুলে কিছু বলতে নিচ্ছিল তার আগেই নাহিয়ানের কথার আওয়াজ ফেল ,
” এগুলো পরিষ্কার করে এক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে আসো। ”
” আচ্ছা ভাগনে। ”
নাহিয়ান ফারাহ্ একপকল দেখে ফ্রেশ হতে আসল। মেয়ে টা তো একটু আগে ও হাসউজ্জ্বল ছিল। হুট করে এমন নেতিয়ে পড়ল কেনো? অতসত ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হয়ে এলো। এরই মধ্যে ফাতেহ শরবত দিয়ে যায়। নাহিয়ান ডোর লকড করে ফারাহ্ মাথার পাশের বসল। চোখ বুজে শুয়ে আছে মেয়ে টা। নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। শরীরের নড়চড় নেই। ভিতরের টা কেঁপে উঠল নাহিয়ানের। গলা শুকিয়ে আসছে৷ কাঁপা কাঁপা হাতে ফারাহ্ কে ছুতে যাবে তখই ফারাহ্ চোখ মেলে তাকালো। শুকনো হাসিয়ে দিয়ে বলল ,
” ভয় পাবেন না এত তাড়াতাড়ি আপনাকে মুক্তি দিচ্ছি না। ”
হাত গুটিয়ে নিল নাহিয়ান। মেয়ে টা তার না বলা কথা ও বুঝে ফেলে। গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গম্ভীর সুরে বলল ,
” শরবত টুকু খেয়ে নাও ভালো লাগবে। ”
উঠে বসল ফারাহ্। গ্লাসের দিকে তাকিয়ে ভা’ঙা গলায় বলল ,
” খেতে মন চাইছে না আমি এমনি ঠিক আছি। ”
মেজাজ বিগ’ড়ে গেল নাহিয়ানের। ঠিক মত কথা ও বলতে পারছে না আবার বলে কি না ঠিক আছে! ফারাহ্’র থুতনি ধরে মুখ টা উঁচ করে বলে উঠে ,
” চুপচাপ খেয়ে নাও ফারাহ্ রা’গী ও না আমায়। ”
অতি বিস্ময়াবিষ্ট ফারাহ্। নাহিয়ানের কন্ঠ স্বর ঠান্ডা ভালোবাসা মিশ্রিত। বুক চিরে তীব্র আর্তচিৎকার বের হয়ে আসছে এই নাহিয়ান কে তো আমি চেয়ে ছিলাম। মিষ্টি প্রেমময় কথা টুকু কে অগ্রাহ্য করতে পারলো না ফারাহ্। নিঃশব্দে খেয়ে নিল শরবত টুকু। নাহিয়ান শ্বাস নিয়ে বলল ,
” ঘুমাও সন্ধ্যার আগে ডেকে দিবো আমি No more talk. ”
ফারাহ্ ধীরে সুস্থে বেডে গা এলিয়ে দিল। নাহিয়ান ফারাহ্ চুলে কিছু ক্ষণ হাত বুলিয়ে দিয়ে উঠে চলে যায়। ফারাহ্ চোখ বন্ধ অবস্থা হাসল অনেক দিন পর তার শান্ত নাহিয়ান ভাইকে ফেল।
_____
নাহিয়ান বাড়িতে নেই বিশেষ কাজে বাহিরে গেছে। কিছু সময় আগে পপি এসে ডেকে তুললো ফারাহ্ কে। নাহিয়ান নাকি বলে গেছে সন্ধ্যার সময় ডেকে দিতে। আর কফি দিয়ে যেতে।কফি খেয়ে মাগরীবের সালাত আদায় করে নিচে নেমে এলো ফারাহ্। সিড়ি থেকে নেমে বামে ঘুরে কিচেন ঘরে গেলো। সানজিদা ফারাহ্ কে দেখে মিষ্টি হেসে বলল ,
” এখন কেমন লাগছে ? তোর বুড়িপাখি। ”
” ভালো , কি বানাচ্ছো? ”
” চিকেন শর্মা , ফুড মিক্সড তৈরি হয়ে গেছে ফ্রিজে_। ”
আকষ্মিক ফাতেহ চিৎকার করে বলল ,
” ইয়াদ আয়্যা। ”
ফারাহ্ , সানজিদা হতবম্ভ হয়ে এক সাথে উচ্চারণ করল ,
” কি? ”
” শর্মা ছে ইয়াদ আয়্যা। ”
এবার ফারাহ্ জোরপূর্বক হেসে জিজ্ঞেস করল ,
” কি এসেছে? ”
” শর্মা আন্টিকে। আমার শর্মা আন্টি। ”
ফারাহ্ হতাশার নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। সানজিদা ঠোঁট চেপে হেসে প্রশ্ন ছুড়ল ,
” ফাতেহ মামা তোমার আন্টির নাম বুঝি শর্মা? ”
” হ্যাঁ বইনজ্বি আমার আন্টির নাম শর্মা খাতুন। ”
” বয়স কত? ”
” ষাটের ঘর পেরিয়ে গেছে বছর তিনেক আগে। ”
” তার মানে ৬৩ বছর , আর তুমি উনাকে এখন ও আন্টি ডাকো? ”
” হো , আমার আন্টি খুব স্মার্ট জো’হি। ”
” ওহ। ”
বলেই কাজে মন দিন সানজিদা। মাঝে মাঝে ফাতেহ মামার চিৎকার শুনে ওদের হার্ট বিট ফেল করতে গিয়ে বেঁচে যায়। সুফিয়ান এসে বলল ,
” আপু ভাইয়ারা আব্বুরা চলে এসেছে নাস্তা দাও। ”
” দিচ্ছি। ”
সুফিয়ান ফারাহ্ গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল ,
” একা একা বুট খাচ্ছিস আমি কি ম’রছি নাকি? ”
ফারাহ্ একটু সরে দাঁড়ালো , কিচেন কেবিনেটের উপর বসে সুফিয়ান কে আড় চোখে দেখে প্রতুত্তরে বলল ,
” আমি কি বলছি তুই ম’রছোস? ”
” না তা কছ নাই , তা একা একা দাঁড়িয়ে কি ভাছিলি? ”
” কিছু না। ”
” নাহিয়ান ভাইয়ের সাথে ঝগ’ড়া করেছিস?”
” হ্যাঁ আমি তো ঝ’গড়ার মেশিন সারাক্ষণ ঝগ’ড়া করি! ”
মুখ বাঁকিয়ে কেবিনেটের উপর থেকে নেমে সুফিয়ানের হাতে সব বুট দিয়ে চলে আসল ড্রয়িং রুমে। আসার সময় চিকেন মোমোর ট্রেই নিয়ে এলো। সুফিয়ান তাজ্জব বনে দাঁড়িয়ে আছে। ফারাহ্ পিছনে পপি , সানজিদা ও এলো। শর্মা আর ফুড মিক্সড ‘এর ট্রেই নিয়ে। তিন জনে নাস্তা সার্ভ করে ওরা ও বসল। সুফিয়ান হেলতে দুলতে এসে ডিভানের এক কোণে বসে পড়ে। খাওয়ার মাঝে আফজাল সারাফাত বললেন ,
” সানজিদা রিশাব কোথায় ওকে দেখছি না যে? ”
” জানি না বাবা সে বিকেলে বের হয়ে গেছে। ”
ফারাহ্ বাঁকা চোখে তাকালো নাহিয়ানের দিকে চোখ মুখ শক্ত করে শর্মা চিবুচ্ছে। গিরগিটি জোওড়া ভাই। সেকেন্ডে সেকেন্ডে রঙ বদলায়। সার্ভ করার সময় স্বাভাবিক দেখে ছিল আর এখন! আজব লোক। গিরগিটি যদি বিদায় না নিত নাহিয়ান কে দেখে এক চামচ সয়াবিন তেলে ডুবে মরতো। খাওয়া প্রায় শেষের দিকে ফাতেহ চা, কফি নিয়ে এলো। যারা চা খাবে তাদের চা দিল। আর কফি প্রেমিদের কফি দিয়ে নিযে এক কাপ চা নিয়ে বসল ডিভানে। হুট করে শামিমা আখতার বলে উঠলেন ,
” ফাতেহ আমি বাজারের লিস্ট করে দিব তুই বাজারে যাস আর শুন তর তাজা টাটকা দেখে সবজি আনবি। সকালে ভোরে গেলে পাবি ভালো ভালো সবজি। ”
মিরাজ শব্দ করে হেসে বলল ,
” মামনি তুমি ও না তোমার পাতানো ভাই উঠবে সকাল সকাল জোক্স!”
ফাতেহ উঠে দাঁড়িয়ে নালিশের সাথে বলল সবাই কে ,
” দেখো সবাই এ নাকি আমার ভাগনে সবার সামনে আমার মজা উরায়! ”
” মজা কই উরালো যেটা সত্যি সেটাই বলেছে। ”
সুফিয়ানের কথা গাল ফুলিয়ে সবার দিকে আরেক পলক তাকালো ফাতেহ। সকলে ফাতেহর মুখ ভঙ্গি দেখে ঠোঁট চেপে হাসছে। সুফিয়া হানজালা সিরিয়াস হওয়ার চেষ্টা করে বললেন ,
” মিরাজ , সুফিয়ান কাকে কি বলছো তোমরা? ফাতেহ কে! আচ্ছা ঠিক আছে কাল সকালে তোমরা যাচ্ছো বাজারে। ”
সুফিয়ার মুখে এমন কথা শুনে মিরাজ , সুফিয়ান দু’জনে এক সাথে চেঁচিয়ে উঠল ,
” নাআয়ায়ায়া। ফাতেহ মামা তো খুব ভোরে বাজারে যায়। ”
ফাতেহ ভাব নিয়ে বলল ,
” দেখতে হবে না আমি কে! ”
ফাতেহর ভাব দেখে সকলের মাঝে এক দপা হাসির রোল পড়ে গেলো। ফাতেহ আসলেই খুব ফানিং একটা মানুষ। ভাগ্য করে এমন বিশস্ত কর্মী পায় অধিকাংশ মালিকে।
____
রাত প্রায় নয়টা লিভিং রুমে বসে এক মনে টিভি দেখছে ফারাহ্ । তার পাশে বসা শামীম। দু’জনে মোটু পাতলু দেখছে। আর হাসতে হাসতে একজন আরেক জনের উপর পড়ছে। ঠিক সে মুহূর্তে রিশাব আসল। শামীম কে বলল ,
” শামীম তোমাকে তোমার আম্মু ডাকছে যাও। ”
” আচ্ছা চাচ্চু। ”
ভদ্র ছেলের মতো চলে গেল। শামীম ফারাহ্ পাশে বসল। ফারাহ্ টিভিতে এইতোই বিভোর ওর আশে পাশে কিচ্ছু হচ্ছে বলে বুঝতেই পারছে না। মোটু নাম্বার ওয়ান , টু কে বেদ’রা’ম ধোলাই দিচ্ছে এমন সিন দেখে হাসতে শুরু করল ফারাহ্। পাশে শামীম আছে মনে করে একটু হেলও ওর দিকে। সাথে সাথে শরীরে ঝাটকা খেল। শমীম তো এত বড় নয়। ঝট করে দূরে সরে যায়। রিশাব কে দেখে বিব্রতবোধ করল।
” কি হচ্ছে এখানে? ”
শক্ত কন্ঠের আওয়াজ শুনে রীতিমতো কাঁপা কাঁপা শুরু হয়ে গেলো তার। চুক্ষ জোড়া ঘুরিয়ে ডোরে স্পেসের দিকে তাকালো। নাহিয়ান! তার যম উফফফ শীট লোক টা যখনই আসে তখনই ওর আশে পাশে এই রিশাব থাকে। ফের চেনা পরিচত আওয়াজ ,
” ফারাহ্ উঠে আয় কাম ফাস্ট। ”
পা দুটো ডিভান থেকে মেঝেতে নামিয়ে জুতো পরে এগিয়ে গেলো নাহিয়ানের দিকে। ফারাহ্ নাহিয়ানের সন্নিকটে আসতেই বাঁ’হাত চেপে ধরল নাহিয়ান। অতঃপর হাঁটা শুরু করে রুমের উদ্দেশ্যে। ফারাহ্ ও তাল মিলিয়ে হাঁটছে নাহিয়ানের সাথে। মনে মনে দো’আ দুরুদ পড়ে নিতে ভু’লছে না। এখন আবার কি শা’স্তি মিলবে! আল্লাহ মাওলা।
#চলবে
®️আহমেদ মুনিয়া
•••••×কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ×