#তোর_শহরে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-১৮
সারা আর কথা না বাড়িয়ে সামনের দিকে পা’ বাড়ালো। ঠিক সেই সময় আদিল সাহেব সারাকে বললেন, দাঁড়াও।
সারা দাঁড়িয়ে পরলো।
আদিল সাহেব নিচে এসে বললেন, আমি শুধু জানতে চাই কি এমন কারণ যার জন্য তোমাকে এভাবে রায়হানকে সাথে করে বাসায় আসতে হলো?
সারা রায়হানের হাত ছেড়ে দিয়ে আদিল সাহেবকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। উপস্থিত সবাই হতভম্ব। এতোক্ষণ ধরে স্ট্রং ভাবে কথা বলা মেয়েটা কেমন অবুঝের মতো কাঁদছে! আদিল সাহেব সারার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,আমাকে না বললে বুঝবো কি করে? আমার মেয়েটা কেনো এই কাজ করতে বাধ্য হলো?
সারা হিচকি তুলতে তুলতে বললো বড় আব্বু রায়হানের মা কতকাল মারা গেছেন। এটা জানার পরেও কিভাবে তাকে আমি একা ছেড়ে দেবো? তাই তোমাদের কাছে নিয়ে এসেছিলাম।
– আচ্ছা বুঝলাম এবার কান্না থামা। আদিল সাহেব তানিমকে উদ্দেশ্য করে বললো, জানো তোমার আর তন্ময়ের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? তুমি কিছু জানতে না চেয়ে নিজের বোনের গায়ে হাত তুলে ফেললে,আর এখানে তন্ময় থাকলে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করতো কি হয়েছে আমাকে বল!
তানিম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, নিজের ভুলের জন্য নিজেই অনুতপ্ত। আদরের বোনের গায়ে হাত তুললো তাও তুচ্ছ কারণে।
সারা বললো বড় আব্বু তুমি ভাইয়াকে কিছু বলো না।
আদিল সাহেব তানিমকে বললেন, যাও রায়হানকে নিজের সাথে নিয়ে যাও ওর মানসিক শান্তি দরকার।
আর সবাই শুনে রাখো আগামীকাল সন্ধ্যায় ঘরোয়া ভাবে আমি রায়হান আর সারার বিয়েটা সেরে ফেলতে চাই! কারোর কোন আপত্তি আছে?
সবাই নিশ্চুপ। সাবাইকে চুপ থাকতে দেখে আদিল সাহেব বললো,তাহলে আশাকরি সবাই রায়হানের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে।বলেই স্থান ত্যাগ কারার আগে বললেন সবাই নিজের রুমে যেয়ে ঘুমিয়ে পরো।
______________________________________________
কাক ডাকা ভোরে তন্ময়কে ডেকে তুললেন সাজু বেপারি।এমনিতে রাতে ভালো ঘুম হয়নি। চোখমুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট
কপাল কুঁচকে সামনে তাকাতেই চোখ পরলো সাজু বেপারি দিকে। রাতে ঘুমিয়ে ভুলেই বসেছিলো সে কোথায়।
সাজু বেপারি দাঁত বের করে হেসে বললেন, এহন উঠতে অইবো।আমার লগে মসজিদে যাইতে অইবো। নামজের পরে হগলতের লগে দেহা করামু। আমার হবু জামাই বইলা কথা। হগলতের জানতে অইবো না।
তন্ময় উঠে অজু করে সাজু বেপারির সাথে মসজিদে নামজ পরে, সবার সাথে কথা বলে আবার তার সাথে বাসায় ফিরলো।
সাজু বেপারি বললেন যাও হাতমুখ ধুয়ে আহ।
হালিমা বেগম সকালে নানা রকমের পিঠা বানিয়েছেন
তন্ময় অল্প কিছু খেলো। খাওয়া শেষ করে বলল,আঙ্কেল এবার আপনার উত্তর -টা শুনে আমাকে যেতে হবে।
– তুমি একা যাবা নাকি? আমরা হগলতে যামু তুমি রেডি হও আমরাও রেডি হই।
– আঙ্কেল আপনার উত্তর-টা
– আরে মিয়া কি আঙ্কেল ফাঙ্কেল কও এহন থিকা আব্বা কইবা বুঝছো।
তন্ময় বিষম খেলো,হালিমা বেগম পানি এগিয়ে দিয়ে বলে, নেও বাবা পানি খাও। তন্ময় গ্লাসের পানিটুকু এক চুমুকে শেষ করে বলে,তাহলে আপনারা রেডি হন আমি বাহিরে আছি।
– ঠিক আছে বাবা যাও গ্রামডা ঘুইরা দেহো।
তন্ময় বাসা থেকে বের হয়ে আসলো। মনে মনে বললো,এবার কি করবা মিস শুকনো লঙ্কা। আমি আসছি তুমি রেডি থাকো। সকালে গ্রামের মনোরম পরিবেশ তন্ময়ের দৃষ্টি আকর্ষিত করলো। শহরে এমন সবুজে ঘেরা কোলাহল মুক্ত নিরিবিলি পরিবেশ পাওয়া দুষ্কর। ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। সাথে নিজের কয়েকটা সেলফি তুলো নিলো। এরমধ্যেই সাজু বেপারিরা রেডি হয়ে চলে আসলো। সবাই মিলে রওয়ানা দিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে।
______________________________________________
সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা, তাই অনু আর মাহি বেলা করে উঠলো ঘুম থেকে। আজ কলেজে যাওয়ার ইচ্ছে নেই তাই দেরি করে ওঠা। অনু দু’কাপ কফি করে এক কাপ মাহিকে দেয় অন্য কাপে নিজেই চুমুক বসায়। দু’জনেই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। ধোয়া ওঠা কফির মগে চুমুক দিতে দিতে মাহি বললো,রিম ঝিম এ ধারতে চায় মন হারাতে।
অনু ভ্রু কুঁচকে বলে, তোর ইদানীং খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে মনে হয়!
এই আমি কি তোর মতো নাকি! আমি হলাম ইয়াং একটা মেয়ে কলেজ শেষ করে ভার্সিটিতে পড়ি এখন প্রেম করবো না কবে করবো?
– তুই কি প্রেম করতে গ্রাম থেকে শহরে এসেছিস।
– আহারে ইয়ার তুই সেই আন্টি-ই রয়ে গেলি। আরে একটু তো আপডেট হ।আর আমি কি দশটা প্রেম করতে চাইছি নাকি! একটা প্রেম করবো।
– ওই রাখতো তোর প্রেমের পেঁচাল আমি ভাবছি ওই তন্ময় এখন কি করছে।
– হাউ রোমান্টিক জানু। তুই যে আমার কথা মেনে তন্ময় ভাইয়াকে একসেপ্ট করবি ভাবতেই পারছি না।
– আরেরররর ড্রামা কুইন অফ যা। এখানে মানা না মানা আসলো কোথা থেকে। ওই বেডা নিমপাতা আমার বাসায়, যেয়ে না জানি কি, কি বলছে। সেটাই ভাবছি।
– দূরররর দূরে গিয়া ম*র। কই আমি ভাবলাম তোরও হয়তো প্রেম প্রেম পাচ্ছে। তুই নিজেই নিমপাতা তন্ময় ভাইয়া তো ভালোবাসার লাড্ডু।
– ওই ভালোবাসরা লাড্ডু তুই রেখে দে।
– তারে হৃদ মাঝারে রাখবো ছেড়ে দেবো না। ছেড়ে দিলে এমন দুলাভাই আর তো পাবোনা।
অনু মাহির মুখ চেপে ধরে বলে, বইন তুই চুপ যা। আমি আছি আমার জ্বালায় আর তুই আছিস রঙে।
– মনে রঙ লেগেছে বসন্ত এসেছে, খুশিতে মেতেছে জীবন।
অনু রাগ দেখিয়ে বারান্দা ছেড়ে চলে গেলো। মাহিও পিছু পিছু গেলো পেছন থেকে অনুর গলা জড়িয়ে ধরে বলে, সরি জানু আর মজা করবো না। এই কান ধরছি।
– যা সর তোর সরি আমার লাগবেেনা। তুই আরো গান বলে বেড়া।
– আর বলবো না আয় দু’জন মিলে টেনশন করি। ওই ময় তোর বাসায় যেয়ে কি তাল গোল পাকিয়েছে।
– এক কাজ কর তুই সে সব নিয়ে ভাবতে থাক আমি ততক্ষণে রান্নাটা সেরে আসি।
– আচ্ছা শোন আজ সবজি খিচুড়ি আর ভর্তা কর। এই বৃষ্টিময় ওয়েদারে দারুণ জমে যাবে।
– জো হুকুম প্রেমের রানী। অনু রান্না ঘরে চলে গেল৷মাহি অনুর মোবাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করে এফবিতে কিছু ফ্রেন্ড এড করে, সাথে তন্ময়কে খুঁজে নিয়ে তাকেও এড করে নেয়। তারপর তন্ময়ের প্রোফাইল ঘাটতে যাবে। কিন্তু আপসোস প্রোফাইল লক। মাহির মেজাজটাই বিগড়ে গেলো।মনে মনে বলছে তুই ছেলে মানুষ তোর প্রোফাইল থাকবে আনলক। না তুই মেয়েদের মতো প্রোফাইল লক করে রেখেছিস। দূর যত্তসব ভাব নেয়া মানুষ-জন।
______________________________________________
তানিম সকাল সকাল হাঁটতে হাঁটতে পার্কে চলে এসেছে।সে এক বিষাদের অনলে পুড়ছে, একে তো নিজের প্রথম অনূভুতি ভুল মানুষের জন্য। দ্বিতীয়তো নিজের বোনের গায়ে প্রথম হাত তোলা। হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে পরলো। কয়েকজন সেদিকে বাঁকা চোখে তাকালো। যদিও এই মূহুর্তে কে কি ভাবলো তা দেখার বা বোঝার অবস্থায় নেই তানিম।
মেঘা আজ সকাল সকার বেড় হয়েছে গাড়ি নিয়ে। আজকে তার মনে রঙ লেগেছে। এ যেনো এতো বছরের ভালোবাসাকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দ। মনের সুখে যাচ্ছিলো উদ্দেশ্য তানিমদের বাড়ি। গাড়ি চলছে আপন গতিতে স্লো-মোশনে একটা চলছে।
তোমাকে খুঁজে পাই ও নীল আকাশে
পাই যে খুঁজে ওই মিষ্টি বাতাসে। গানের তালে তালে
কল্পনার শহরে আনাগোনা করছে মেঘা। এমন সময় মোবাইলের রিংটোনে মেঘার ঘোর কাটে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে তার বাবা কল করছে। কল ব্যাক করবে এমন সময় চোখ গেলো এক ফুলবিক্রেতার দিকে। ড্রাইভারকে গাড়ি থামিয়ে সব ফুলগুলো কিনে নিলো। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য দিয়ে ফুল গুলো কিনে নিলো। ফুলগুলো হাতে নিয়ে ঘ্রাণ নিবে এমন সময়…….
#চলবে
আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছো সবাই? গল্প কিন্তু শেষের পথে।এই পর্যন্ত কেমন লাগলো জানাবে কিন্তু 🥰
ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰