তোর হতে চাই পর্ব ৪

#তোর_হতে_চাই
#Ariyana_Nur
#Part_04

সকাল বেলা নিচে নামতেই সোফায় বসে থাকা তাহের রহমান কে দেখে তোহফা স্টেচু হয়ে দাড়িয়ে রইল।তাহের রহমান,আসলাম সাহেব,আদিয়াত এর সাথে সোফায় বসে হেসে হেসে কথা বলছে।তাহের রহমান চোখ সামনে দিকে পরতেই দেখে তোহফা জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে আছে।তোহফাকে এক যায়গায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে তাহের রহমান নিজের জায়গা থেকে উঠে তোহফার সামনে গিয়ে তোহফার মাথায় হাত বুলিতে বলল……

—কেমন আছিস মা?শরীর মন ভালো তো?তুই ছাড়া বাড়িটা পুরো ফাকা ফাকা লাগেরে।এক মুহূর্তও ভালো লাগছিলো না বাড়িতে।কাল শরীরটা ভালো না থাকায় আসতে পারিনি।তাই আজ তোর টানে সকাল সকাল এখানে এসে সবাইকে ডিস্টাব করলাম।

আসলাম সাহেবঃকি যে বলেন না বেয়াই সাহেব।আপনার মেয়ের বাড়ি। যখন মেয়েকে দেখতে ইচ্ছে হবে চলে আসবেন।এখানে ডিস্টাব করার কি আছে।

তাহের রহমান আসলাম সাহের কে সুন্দর একটা হাসি উপহার দিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল…….

—বুঝলেন বেয়াই সাহেব!মেয়ে হল ঘরের লক্ষী।মেয়ে ঘরে থাকলে ঘর এমনিতেও আলোকিত হয়ে যায়।বাবার কাছে সব মেয়েরাই রাজকন্যা।নিজের কলিজা ছিড়ে রাজকন্যাটাকে পরের ঘরে রেখে থাকতে যে কেমন লাগে সেটা এখন বুঝবেন না।যখন নিজের মেয়ে পরের ঘরে পাঠাবেন তখন বুঝবেন।

কথাটা শেষ করে তাহের রহমান চাপা নিশ্বাস ফেলল।চোখের কোনে পানির ছিটে ফোটাও না থাকলেও উপরের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি আটকানোর ভান করল।

তাহের রহমানের কাজে তোহফা মনে মনে তাচ্ছিল্য হেসে বলল…….

—আপনার এই ভালো মানুষের মুখোশ এর আড়ালের খারাপ মানুষের মুখোশটা যে না দেখবে সে কোন দিনও আপনার ব‍্যপারে ভালো ছাড়া দু’কথা খারাপ বলতে পারবে না।

______

তাহের রহমান তোহফাকে তাদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন‍্য মুখে মুখেই জোরাজুরি করছে।তোহফা মনে মনে ভাবছে, তার এই মিথ‍্যে আদিখ‍্যেতায় যদি বাসার সবাই রাজি হয়ে যায় তখন কি হবে?তখন তো তাতে যেতেই হবে।তোহফা মনে মনে পণ করছে মরে যাবে তার পরেও দ্বিতীয় বার ঐ বাসায় আর পা রাখবে না।

আদিয়াত শশুর এর সাথে কিছুক্ষন কথা বলে অফিসের যাওয়ার জন‍্য রেডি হতে চলে গেলো।তোহফা এতোক্ষন আড়াল থেকে আদিয়াতকে পর্যবেক্ষণ করছিলো।আদিয়াত কে রুমের দিকে যেতে দেখে মনে মনে কিছু একটা ভেবে নিল।কিছুক্ষন পর সে ও সবার চোখ ফাকি দিয়ে রুমে চলে গেলো।তোহফা রুমে ঢুকে দেখে আদিয়াত আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে।তোহফা গুটিগুটি পায়ে আদিয়াতের পিছনে গিয়ে দাড়িয়ে কাচুমাচু করে কাপা কাপা গলায় বলল……

—একটা কথা বলার ছিলো।

আদিয়াত এতোক্ষন আয়নায় মাধ্যমে তোহফার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছিলো।তোহফার কথা শুনে অবিশ্বাস্য সুরে বলল……

—তুমি কথা বলছো তাও আবার আমার সাথে?ভুল শুনছি না তো?

আদিয়াতের কথা শুনে তোহফা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল।আদিয়াত পিছনে ঘুরে তোহফার মুখোমুখি দাড়িয়ে বলল……

—বল কি বলবে।

তোহফা মিনমিনে গলায় বলল…..

—আমি ঐ বাড়িতে যাব না।

—তো আমি কি করবো?

—কিছু একটা বলে না করে দিন।তার পরেও ঐ বাড়িতে পাঠাবেন না।

আদিয়াত কপালে ভাজ ফেলে বলল……

—মেয়েরা বিয়ের পর বাবার বাড়ি যাওয়ার জন‍্য হুলস্থুল লাগিয়ে দেয় আর সেখানে তুমি বলছো যাবে না।কাহিনী কি?

আদিয়াতের কথা শুনে তোহফা ছলছল নয়নে আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে বলল…..

—মেয়েরা বাবার বাড়ি যাওয়ার জন‍্য হুলস্থুল করলেও কোন অত‍্যাচারের জেলখানায় যাওয়ার কথা ভুলেও ভাবে না।

কথাটা বলে তোহফা,আদিয়াতের কোন কথা না শুনে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

______

আদিয়াত রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখে সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে।আদিয়াত একটা চেয়ার টেনে সেখানে গিয়ে বসতেই তাহের রহমান বলল……

—তোহফা বসে আছিস কেন?জামাই বাবাজিকে নাস্তা দে।সব সময় তার খেয়াল রাখবি। মনে রাখবি ক্ষুধার জ্বালায় মরে গেলেও জামাই বাবাজিকে না খাইয়ে কখনো খাবার মুখে তুলবি না।

তাহের রহমান ভেবেছিল তার কথায় সবাই খুশি হবে।তাকে অবাক করে দিয়ে আসলাম সাহেব হাসতে হাসতে বলল……

—কোন আদিম যুগের নিয়ম শিখিয়ে দিচ্ছেন আপনি মেয়েকে?এখন কার মানুষ হয়ে আপনি পরে আছেন সেই আদিম যুগ নিয়ে।এই যুগের মানুষ হয়ে আপনার মুখে এসব কথা মানায় না বেয়াই সাহেব।

তাহের রহমান মনে মনে কিছুটা অপমান বোধ করলেও মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখে কথা ঘুরাতে বলল…….

—তা বেয়াই সাহেব আমি কিন্তু একা যাচ্ছি না মেয়ে,জামাই দু’জনকেই সাথে করে নিয়ে যাব।

আসলাম সাহেবঃওরা গেলে যাবে তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।

আদিয়াত,তোহফার দিকে তাকিয়ে দেখে তোহফা মুখটা মলিন করে বসে আছে।আদিয়াত কিছু একটা ভেবে বলল……

—সরি।আমার আফিসে আর জরুরী মিটিং আছে।তাই আমি যেতে পারবো না।

তাহের রহমানঃতাতে কি হয়েছে।আমি তোহফাকে এখন নিয়ে যাই তুমি অফিস শেষে না হয় চলে যেও।

তাহের রহমানের কথাটা শুনেই তোহফা ভীত চোখে আদিয়াতের দিকে তাকালো।আদিয়াত,তোহফার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে বলল……

—তা তো যাওয়া যেত কিন্তু আমি তো জানতাম না যে আপনি আজ ওকে বাসায় নিয়ে যাবেন।তাই না জেনে আমি আমার কিছু কলিগদের ইনভাইট করেছি।তা না হলে……।

আদিয়াতের কথা শুন তোহফার ঠোটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠল।

তাহের রহমান মন খারাপের ভান করে বলল……

—তাহলে আর কি করার।আমি অসুস্থ মানুষ সব সময় তো আর আসতে পারবো না।তুমিই তোহফা কে নিয়ে সময় করে বাড়ি থেকে ঘুরে এস কেমন।

আদিয়াত মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে হ‍্যা বলল।

______

তোহফা লাগেজ থেকে নিজের কাপড় বের করে কাবাডে রাখছে।আদিয়াত নিজের কাপড় সাইড করে রেখে তোহফার কাপড় রাখার যায়গা করে রেখেছে।আর অফিসে যাওয়ার আগে ওয়ার্নি দিয়ে গেছে যে, কাবাডে আজ কাপড় গুছিয়ে না রাখলে সব কাপড় রুমের বাহিরে ফেলে দিবে।আদিয়াতের থ্রেড খেয়ে তোহফা আদিয়াত যেতে না যেতেই কাজে লেগে পরেছে।

—ভাবিইইই! কি করছেন?

পিছন থেকে মিতুর কথা শুনে তোহফা হাতের কাপড়গুলো কাবাডে রেখে মিতুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল……

—এইতো কাপাড়গুলো একটু গুছিয়ে রাখছি।

—আপনি করতে গেলেন কেন ভাবি?আমায় বলতেন আমি করে দিতাম।

—সমস‍্যা নেই।হয়ে গেছে।

মিতু সোফায় আয়েশ করে বসে বলল…..

—খালাম্মা একটু বাহিরে গেছে।আমাকে পাঠিয়েছে আপনার সাথে গল্প করতে।তাই তো চলে আসলাম।

তোহফা,মিতুর পাশে বসে বলল……

—গল্প তো হবেই কিন্তু তার আগে এই আপনি আপনি বাদ দিতে হবে।তা না হলে গল্প বাদ।

মিতু খুশি হয়ে বলল…….

—ঠিক আছে এখন থেকে আমি আপনাকে তুমি করেই বলবো।

মিতুর কথার তোহফা মিতুকে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিল।

_______

আনিশা,তাহমিদা কেন্টিনে বসে রয়েছে।আনিশা,তাহমিদার জন‍্য বাসা থেকে যে খাবার এনেছে সেগুলো তাহমিদা গপাগপ করে খাচ্ছে।আনিশা,তাহমিদার দিকে পানির বোতল বাড়িয়ে দিয়ে বলল……

—আস্তে আস্তে গিল।তোরটা কেউ খেতে আসছে না।

তাহমিদা মুখের আধা চিবানো খাবার গিলে বলল……

—তোরে দিয়ে বিশ্বাস নেই।কখন যেন খাবারের উপর হামলে পরিস।তাই তোর হামলে পরার আগেই সাবার করার চেষ্টা করছি।

আনিশা,তাহমিদার বাহুতে চাপড় মেরে বলল……

—কুত্তী,বান্দরন্নী আমার বিল্লি আমারেই বলে মেও।ছোছা বিলাই আবার কইছ খাবার আননের কথা।তোরে ভালো কইরা খাবার আইনা খাওয়ামু।

—হায়রে কি দিন কাল আসলো।কিছু মানুষ অন‍্যকে খাবার খাইয়ে তাদের হজম করার আগেই খোটা দিয়ে দিয়েই তাদের পেটের খাবার হজম করিয়ে দেয়।

পিছন থেকে কথাটা ভেসে আসতেই আনিশা চটজলদি পিছনে তাকাতেই পিছনের মানুষটাকে দেখে কিছুটা জোর গলায় বলল…….

#চলবে,

(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।রি-চেইক করা হয়নি।ধন‍্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here