#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ৩৯
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
কলেজ ছুটি হলে তিয়াসার বেস্ট ফ্রেন্ড টয়া তিয়াসাকে জোর করে রাজী করালো তার সাথে শপিং মলে যাওয়ার জন্য। রিকশা থেকে নেমে ওভারব্রিজ হয়ে তারা মেইন রাস্তার ওপারে গেল। কিছুটা হাঁটলেই শপিং মল পর্যন্ত পৌঁছে যাবে তারা। অকস্মাৎ নিঃশব্দে থমকে দাঁড়ালো টয়া। তিয়াসা টয়ার কাজে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘এভাবে দাঁড়িয়ে পড়লি কেন?’
‘আরে ওই দেখ আমাদের স্কুলের লেজার টাইমের সেই ভেলপুরিওয়ালা মামাটা।’
হাত দিয়ে সামনের দিকে ইশারা করে বলে টয়া। টয়ার চোখে মুখে উত্তেজনার আভাস স্পষ্ট। টয়ার সাথে তিয়াসাও যেন যোগ হলো।
‘হ্যাঁ তাইতো! ওই মামাটাই তো। স্কুলেও যাওয়া হয়না, সাথে ওনার স্পেশাল ভেলপুরিও কপালে জোটে না।’
‘উদাস হসনা। আজ অনেকদিনের অভ্যাস তাজা করি চল। আফসোস টা পুষিয়ে নেওয়া যাক।’
তিয়াসা টয়ার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে চলে গেল ভেলপুরির খাওয়ার উদ্দেশ্যে।
৩০ মিনিট হয়ে গেল। এর মধ্যে তিয়াসা আর টয়া মিলে ভেলপুরিওয়ালার সব ভেলপুরি সাফ করে ফেলল। তারা দুজন আরও চাইলে ভেলপুরিওয়ালা মাথায় হাত তুলে বলে,
‘ওরে আব্বাগো! তুমরা এত বড় রাক্ষস! আমার কাছে খাওনের মতো খালি কয়ডা কাচা মরিচ আর বাটি-চামচই আছে পইরা। পারলে এইগুলোও খাইয়া তামাতামা কইরা ফেলাও।’
তিয়াসা আর টয়া একে অপরের দিকে চোখাচোখি করে হো হো করে হেসে দুজনে একসাথে বলল, ‘আমরা তো মজা করছিলাম মামা।’
ভেলপুরিওয়ালা হাত নাচিয়ে বলল,
‘কিন্ত আমি মজা করি নাই আম্মাজানেরা। তুমরা যেই গতিতে সব খাইয়া ফেলাইলা, মনে হইতাছিল আমি বানাইতে দেড়ি করছি। একবারে সব আগে থেইক্যা সাজানো থাকলে তুমরা ২মিনিডো লাগাইতা না সবগুলা ভেলপুরি শেষ করতে।’
আগেরবারের চেয়ে এবার আরও শব্দ করে হেসে উঠলো দুই বান্ধবী। তিয়াসা হাসি থামিয়ে বলল, ‘কত দিতে হবে মামা?’
লোকটি খানিক ভেবে বলল,
‘কত দিবা? দেও ৬-৭শ।’ তিনি শুধু দাম বলে থেমে যাননি। আরও কিছু কথা যোগ করলেন, ‘তুমরা দুইজনে ভাগে দেও সাড়ে ৩শ কইরা।’
‘আচ্ছা। ঠিক আছে মামা।’
তিয়াসা তার কথা শেষ করা মাত্রই টয়া চোখ গরম দিয়ে বলে ওঠে, ‘কি ঠিক আছে? আমি তোকে জোর করে এত দূর নিয়ে আসলাম৷ আর তুই সামান্য ভেলপুরি কি খেলি, তার দাম দিতে চাচ্ছিস?’
‘থাকনা, সমস্যা নেই।’
‘তোর সমস্যা না থাকলেও আমার আছে। ভাব আজ তোকে ট্রিট দিলাম আমি।’
‘বললাম তো লাগবে না।’
এই নিয়ে দুজনের মধ্যে তুমুল কথা-কাটাকাটি বেঁধে গেল। তা দেখে বিরক্ত হয়ে গেল লোকটি।
‘আম্মাজানরা আমার দেড়ি হইয়া যাইতাছে। এইহানে দাঁড়াইয়া থাহার সময় নাইকা।’
তিয়াসা আর পেরে উঠল না টয়ার জেদের কাছে। টয়া ব্যাগ পেগ হতে টাকা বের করে বিদায় দিল লোকটিকে। তারপর আবারও হাঁটতে লাগলো। হাঁটার দরুন তিয়াসা জিজ্ঞেস করল, ‘তুই এতগুলো টাকা ক্যাশ কেন এনেছিস বলতো?’
‘হু?’ বলল টয়া।
‘হু! এটা উত্তর হলো? তুই মামাকে টাকা দেওয়ার সময় তোর ব্যাগে অনেকগুলো টাকা দেখলাম। এতগুলো টাকা কেন এনেছিস?’
‘আজ স্পেশাল ডিসকাউন্ট প্যাকেজ অফার আছে। তাই বাড়ি থেকে বেশি টাকা চেয়ে আনলাম।’
‘তুইতো তোর বাবার ক্রেডিট কার্ড নিয়ে যাস যদি ধারেকাছে কোথাও কেনাকাটা করিস। তবে আজ এত দূরে এসেও কার্ড না এনে ক্যাশ? তাও আবার এত!’
‘আজ দেয়নি বলে আনতে পারিনি। তাছাড়া আমরা এত দূরে আসবো সেটা আমি কাউকে জানাই নি অবধি।’
‘কিহ! তুই না জানিয়ে এসেছিস? এখন যদি সব দোষ আমার ঘাড়ে আসে তাহলে?’
‘কিছুই হবে না। বি পজেটিভ।’
‘ছাতা পজেটিভ। যাজ্ঞে, মোট কত এনেছিস তুই?’
‘বিশ হাজার মাত্র।’ টয়া বেশ ইজিলি ভাব করে বলে ফেলল যেন।
‘বিশ হাজারকে মাত্র বলছিস? আমার আব্বু-আম্মু হলে পারলে বিশটা লাথি দিত। তোর বাবা মা কিছু না ভেবেই দিয়ে দেয় নাকি?’
‘আরে না। বলেছি কলেজ থেকে চেয়েছে। তাই দিল। নইলে কি আর দিত?’
‘আমি ভুল করেছি তোর সাথে এসে। আমাকে মাফ কর। তুই একা যা আমি বাড়ি ফিরে গেলাম।’
‘এমন করিস না প্লিজ! ওইখানে গর্জিয়াস আর এক্সপেন্সিভ কিছু ড্রেসের উপর আকর্ষণীয় ছাড় দিচ্ছে। পুরো ৩০%ছাড়।’
‘তো? এইজন্য মিথ্যে বলে টাকা আনতে হবে? এসব অভ্যাস ভালো না।’
‘আচ্ছা আর কখনো এমন করবো না বাবা। এই প্রথম আর এই শেষ।’
এসব কথার মাঝেই একজন লম্বা চিকন মতো লোক ছোঁ মেরে টয়ার হাত থেকে ব্যাগ ছিনতাই করে পালিয়ে গেল। তিয়াসা রাগ করে অন্যদিকে ফিরে ছিল বলে দেখতে পায়নি। এদিকে টয়া থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো টা যেন টয়ার মাথার উপর দিয়ে গেল। সে তব্দা খেয়ে তাকিয়ে ছিল। পরমুহূর্তে ঘটনাটি ঠাওরে উঠে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,
‘আমার ব্যাগ,,আমার ব্যাগ নিয়ে গেছে ওই লোকটা।’
তিয়াসা হতচকিত হয়ে গেল। বুঝে উঠতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কি বললি?’
টয়া আতংকিত কন্ঠে বলল, ‘ছিনতাই করে পালালো আমার ব্যাগ।’ এই বলে দৌঁড় লাগালো টয়া। চলতি গাড়ির ভেতর দিয়েই দৌঁড়াচ্ছে টয়া। তিয়াসা তার পেছনে। তবে রাস্তার সাইড দিয়ে। টয়ার আশেপাশে,সামনে-পেছনে কোনো বাস বা বড়সড় টাইপের গাড়ি ছিল না। কিন্তু তাও তিয়াসা ভয় পাচ্ছে আর টয়ার পেছনে ডাক ছেড়ে ছুটছে। সহসা একটা বাইকের সাথে বারি খেয়ে ছিটকে অন্যপাশে পড়ে টয়া। তিয়াসা চিৎকার দিয়ে টয়ার কাছে চলে যায়। টয়ার ভাগ্য ভালো সামনের প্রাইভেট গাড়িটা ওর উপর দিয়ে চলে যায়নি। তাড়াতাড়ি ব্রেক কষায় বেঁচে গেল টয়া। তবে বাইকের আঘাত সাথে পাকা রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়ায় বেশ কয়েক জায়গায় আঘাতপ্রাপ্ত হয় সে। সাথে সাথে জ্ঞান হারায় টয়া। তিয়াসা ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে টয়ার নাকে মুখে পানি ছিটাতে লাগলো। সামনের প্রাইভেট গাড়িটায় ড্রাইভিং সিটে বসে আছে জিসান। সময়মতো ব্রেক কষে কোনমতে হাপ ছেড়ে শ্বাস নিল, এই ভেবে যে তার দ্বারা কোনো অঘটন ঘটেনি। মানুষের ভীড় সাথে রাস্তায় পড়ে থাকা মেয়েটিকে দেখতে গাড়িতে ঘাপটি মেরে বসে থাকলো না জিসান। সে ধীর পায়ে জনসমাগমের ভেতরে ঢোকার জন্য এগিয়ে যায়।
_____________________
রিমি আহসানের সাথে শ্বশুরবাড়ি ফিরে এসেছে আজ নিয়ে প্রায় ৩দিন হলো।
দুপুরের দিক দিয়ে নিজ গলায় গুনগুন গানের সাথে জামাকাপড় ভাজ করছে রিমি। সদ্য শাওয়ার নিয়ে এসেছে৷ চুলে টাওয়াল পেচানো। কাজের মাঝে পেছন থেকে আহসান রিমিকে জড়িয়ে ধরায় গুরুতর ভাবে ভয় পেয়ে গেল রিমি। রিমি ওর সামনে থেকে হাত দুটো দেখেই বুঝে গেল যে এটা আহসান। তাই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,
‘কি শুরু করেছো হুম? আজ এই সময়েই বা এলে কেন?’
আহসান কিছু না বলে রিমির ঘাড়ে নাক ঘষে যাচ্ছে। রিমি যেন রীতিমতো অবাক হয়ে যাচ্ছে আহসানের কান্ডে। এই প্রথম রিমি আহসানকে নিজের এতটা কাছে আসতে দেখলো। রিমি আবারও বলল, ‘বলবে প্লিজ তোমার কি হয়েছে?’
আহসান নিঃশব্দে রিমির চুলগুলো উন্মুক্ত করে দিল তোয়ালের দখল থেকে। তারপর রিমিকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে রিমির গালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো। পরেরবার বেশ শব্দ করে চুমু খেল রিমির অন্য গালে। আচমকাই রিমির সারা শরীরে শিহরণ জাগালো আহসানের অবাধ্য কাজটা। রিমি পুনরায় কিছু বলবে তার আগেই আহসান ওর আঙুল রিমির ঠোঁটে স্থাপন করলো। তারপর নেশাক্ত কন্ঠে বলল,
‘তুমি এত সুবাস কেন ছড়াচ্ছো হুম? রুমে পা ফেললাম কি কেমন নেশা নেশা লাগছে আমার।’ বলেই হাত সরিয়ে আনলো রিমির ওষ্ঠদ্বয় থেকে।
রিমি মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল, ‘তুমি শর্ত ভুলে যাও কেন মাঝে মাঝে?’
‘দোষ অবশ্য তোমার। যাই হোক আমার বেশ ভালো লাগছে তোমার এই স্নিগ্ধ রূপ দেখে।’
‘ধ্যাত, বেশি বেশি। কি করতে এসেছো তুমি?’
আহসান রিমির দুবাহুতে হাত রেখে বলল,
‘ওয়েল, দাদিয়া বলল আমরা কোথাও ট্যুরে যাব। তাই ডিসকাশনের জন্য জরুরি তলব দিল।’
‘ফ্যামিলি পিকনিক! বেশ হবে বলো?’
‘জ্বি না ম্যাম। আমি,তুমি,জিসান আর জান্নাত। মানে হানিমুনে যাচ্ছি এই চারজন।’
‘ইশ! তুমি এত নির্লজ্জ কেন বলোতো? তুমি দাদিয়াকে এসবের জন্য রাজী করিয়েছো তাহলে?’
‘কে বলেছে হুম? দাদিয়া নিজ থেকেই বলেছে।’
‘নিজ থেকে?’
‘এভাবে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। আমার দাদিয়া ব্যাকডেইটেড নয়। আমার মম-বাপির হানিমুনের সময়ও আমার দাদিয়াই প্লান করে সব ব্যবস্থা করেছিলেন।’
‘সত্যি?’
‘হুম, সত্যি।’
‘তো আমাদের জন্য কি প্লান করেছেন দাদিয়া?’
‘সেটা এখন তুমি আর আমি যাব তার কাছে। তারপর শুনবো।’
‘ওহ, আচ্ছা।’
‘আচ্ছা বললেই হবে না। ওইখানে গিয়ে আমাকে একটু ভালবাসতে হবে কিন্তু!’
‘যাওতো তুমি। পারবো না আমি।’
‘দেখা যাবে।’ বলে ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটালো আহসান।
#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ৪০
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
মোটা ফ্রেমের চশমাটা রুমাল দিয়ে আলতো করে মুছে চোখে জড়াল মুনতাহা। হাস্যজ্বল মুখের হাসিটায় বিরতি না দিয়ে বরং আরেকটু বাড়ালো আহসান আর রিমিকে তার রুমে দেখে। আর বলল,
‘এইতো চলে এসেছে আমার পাখিরা।’
আহসান মুনতাহার পাশে গিয়ে বসল। তারপর বলল, ‘তুমি ডাকলে না এসে কিভাবে পারি হুম?’
‘তা-যা। তো আমি ভেবে ফেলেছি তোরা কোথায় যাবি হানিমুনে।’
‘কোথায়?’
‘সাজেক ভ্যালি।’
‘ওয়াও, কিন্তু এটা কোথায়? আমি তো নাম শুনিনি।’
আহসান তার কথা শেষ করার পর পরই রিমি বলে ওঠে, ‘দেশে থাকলে না চিনবে? ছিলে তো সাদা চামড়াদের সাথে।’
‘ঠিক বলেছিস রিমি। আমি ওদের সাথে ছিলাম বলে জান্নাত আর আহসান বাংলা ভাষাটা মনে রেখেছে। কিন্তু তুই দূরে দাঁড়িয়ে কেন? তুইও আয়। আমার পাশে বসে কথা বল।’
রিমি যেতে যেতে বলল, ‘কি অদ্ভুত এই মানুষটা! জায়গা চিনে না আবার বলে ওয়াও! জানো দাদি? উনি এখানকার কিছুই আগে চিনতো না। আমি চিনিয়েছি।’
‘ওমা তাই নাকি রে?’
‘হুম তাই। কিন্তু এখন আমার ভয় লাগছে।’
‘কেন রে?’ জিজ্ঞেস করে মুনতাহা।
‘সাজেক গেলে উনি যদি হারিয়ে টারিয়ে যায়! তাহলে কি হবে ভেবেছো?’
‘তাইতো রে! তাহলে উপায়?’
‘উপায় আর কি? আমার বউবতী আছে তো। ও যেভাবে বলছে আমি হারিয়ে যাব, তাতে এটা স্পষ্ট যে সে সব চেনে।’
রিমি নাক ফুলিয়ে বলল, ‘চিনিই তো। আমি আর তিয়াসা দুজনই চিনি।’
আহসান ও মুনতাহা একসাথে বলল,
‘কিভাবে?’
‘আমার কত ফ্রেন্ড তার হাসবেন্ডকে নিয়ে গিয়েছে। এটা কি আজকের কথা নাকি?’
আবারও আহসান ও মুনতাহা একসাথে জিজ্ঞেস করলো, ‘তাহলে কবের?’
রিমি খানিক কৌতুক করে বলতে লাগল, ‘অনেক অনেক দিন আগের কথা। এই বছর খানেক। আমার একটার পর একটা বান্ধবী পটাপট বিয়ে হয়েই যাচ্ছে। তারপর হানিমুনে গেল। এক জোড়া কাপল এদিকে যায় তো আরেক জোড়া অন্যদিকে। মানে একজন সাজেক আরেকজন গেছে হয়তো সেন্টমার্টিন। খেয়াল নেই। তো ওরা এত কুয়ারা করে ফটো তুলে স্ট্যাটাস দিয়েছে কি বলবো? রাগে শরীরের রক্তগুলো কিলবিল করছিল শুধু। তোদের হাসবেন্ড বা ওয়াইফ আছে বলে এত ঢং করে,ঘটা করে দেখাতে হবে নাকি অন্যদের? আমার রাগ দেখে তো তিয়াসা জিজ্ঞেস করে বসে আপু তোর কি হয়েছে? আমি ওকে রাগের কারণটা বলার পর ও আমাকে আইডিয়া দেয় ফেক আইডি খুলে ঢঙ্গী আর ঢঙ্গাগুলার কমেন্ট সেকশনে গিয়ে ইচ্ছা মতো ধুলাই করি। তাই করি। তারপর গিয়ে রাগটা পরম শান্তিতে নেমে আসে। ওদের ঢং টাও কমে। স্ট্যাটাস দেওয়াও কমায়।’
আহসান মুনতাহা দুজনেই হেসে কুটিকুটি। পরমুহূর্তেই আহসান বলল, ‘তুমি এত হিংসুটে! জানতাম নাতো?’
‘আরে সেটা না। ঘুরতে গেছে ভালো কথা তাই বলে দুই মিনিট অন্তর অন্তর স্ট্যাটাস দিতে হবে নাকি? জানো না, একটা দুই টাকার সেন্টারফ্রুট কিনে ক্যাপশন দেয় আমরা যা খাব ভাগ করে! আজব তো? এটা ভাগ করলে থাকে কি? আমি কমেন্ট করলাম ভাই আপনারা আমার থেকে আরও দুই টাকা নিয়ে আরেকটা কিনে খান। তাও এত ছ্যাঁছরামি করবেন না। মানে এত ঘন ঘন ফালতু ক্যাপশন+পিক আপলোড দেয় যে কি বলল হুহ!’
রিমি যেন আগুনের ফুলকি হয়ে উঠল। মনে হচ্ছে এই বুঝি নাক মুখ দিয়েও আগুন ছুটবে।’
মুনতাহা রিমির মাথায় হাত দিয়ে বলে, শান্ত হ বোন। তুইও এবার ঘুরতে গিয়ে আহসানের সাথে স্ট্যাটাস দিস কেমন?’
‘আমি পাগল নাকি? আমি ঘুরবো নাকি এসব করবো? তাছাড়া আমার হাসবেন্ড এর নজর লাগবে। আমার কালনাগিনী বান্ধবীগুলোর তো নজরের কথা আর কি বলবো?’
‘উমম বুঝলাম, তোর কত চিন্তা আমার দাদুভাইটাকে নিয়ে?’
‘সেতো থাকবেই। একটা মাত্র স্বামী আমার।’ রিমি কথাটা বলে আহসানের দিকে তাকাল। আহসান চোখ টিপ মারতেই পরক্ষণে রিমি ওর চোখ অন্যদিকে স্থাপন করে প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, ‘তো দাদি তুমি জিসান আর জান্নাতকে জানাবে না?’
‘হুম রাতে জানাবো।’
‘আচ্ছা।’
‘আমি কি বলি, আমাদের সাথে তিয়াসাকে নিলে কেমন হয়?’ আহসান বলল।
রিমির মুখের রঙ বদলে গম্ভীর হয়ে গেল। তিয়াসাকে নিলে জিসান আর জান্নাতের মধ্যে ঝামেলা হতে পারে। এই ভেবে রিমি বলে, ‘দরকার নেই। আমরা কাপল যাচ্ছি। ও গিয়ে কি করবে?’
‘তিয়াসা ছোট মানুষ। ভালো লাগবে গেলে। ওর মন ভালো থাকে না ইদানীং। আমার মনে হচ্ছে নতুন কিছু দেখলে ওর ভালো লাগবে।’
‘আমি বললাম তো তিসুর যেতে হবে না।’
পাশ থেকে মুনতাহা জোর গলায় বলে, ‘গেলে তোদের রোমান্সে বাঁধা দেবে বলে নিতে চাসনা তাইনা? এসব ভাবলে হবে নাকি? আহসান ওর একমাত্র শালিকে নিয়ে যেতে চায়, তাতে তোর কি?’
‘কথাটা শালির না দাদিয়া। জান্নাতের মতো তিয়াসাও আমার ছোট বোন। এখন অবধি কোনো বায়না করেনি তিয়াসা আমার কাছে। আমি জানি ওর মুড সুইং হয়ে থাকে। আমাদের সাথে আনন্দ মজা করলে বোধয় ভালো লাগবে। তাই আমি ওকে নিয়েই যাব।’
রিমি আর কথা বাড়াতে পারলো না। তাই হার মানতে হলো তাকে।
____________________
জিসান ক্লিনিক থেকে রওনা দিল টয়ার বাড়ির উদ্দেশ্যে। পেছনের সিটে টয়া আর তিয়াসা বসা। টয়ার তেমন কোনো ক্ষতি না হলেও শরীর বেশ ক্লান্ত সাথে বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা অনুভব করছে। টয়ার জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত তিয়াসা ওকে নানান উপদেশ দিল। যেমনঃ বড়দের মিথ্যে বললে এমনই হয়, অতিরিক্ত চালাকি ভালো না, খারাপ কাজের ফল খারাপই হয় সবসময় ইত্যাদি ইত্যাদি। আর টয়া বসে বসে বিনা শব্দে তিয়াসার উপদেশ গিলে গেল। জিসানও টয়ার মতো নিঃশব্দে তিয়াসার কথা শুনে গেল ড্রাইভ করতে করতে। টয়ার বাসা অবধি পৌঁছে গেলে টয়াসহ তিয়াসাও নেমে পড়ে। জিসান তিয়াসাকে কিছু না বললেও টয়াকে বলল,
‘আপনি মেডিসিনগুলো খেয়ে নেবেন। তাহলে ইনশাআল্লাহ খুব ফাস্ট সুস্থ হয়ে যাবেন।’
টয়া ব্যথা নিয়েও কোনমতে হাসলো। তারপর বলল, ‘থ্যাংকস ভাইয়া। আপনি আমার অনেক বড় উপকার করলেন।’
জিসান আর কিছু বলে না টয়াকে। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। সে তিয়াসার দিকে একটাবার তাকায়ও না। এমনকি এখন পর্যন্ত জিসান তিয়াসার সাথে একটা কথাও বলেনি। তিয়াসা প্রথমে জিসানকে দেখে বেশ রেগে গিয়েছিল। ভেবেছিল আবারও জিসান পাগলামো করবে। কিন্তু তিয়াসার ভাবনা পাল্টে দিয়ে জিসান কোনো টু শব্দও করেনা। তিয়াসা জিসানকে দেখার পর থেকে ভাবছিল এই মনে হয় জিসান ওকে ফোর্স করা শুরু করে দেবে। কিন্ত প্রতিবারই ভুল প্রমাণিত হয় তিয়াসা। জিসান শুধু টয়াকে ক্লিনিক ও বাড়ি অবধি নিয়ে আসায় যতটা কথা বলেছে। তবে যা বলেছে সম্পূর্ণ টয়াকে নিয়ে। একজন অচেনা মানুষ হলে যেমন ভাব ভঙ্গি করবে, ঠিক তেমনটাই জিসানের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে। বারতি কোনো কথা বলেনি সে।
তবে তিয়াসা যেন শকড! এই জিসান তিয়াসার কাছে অচেনা কেউ। তিয়াসা টয়ার সাথে নেমে গেল তাও জিসান কিছু বলেনি তাকে। বরং জিসান ওর সামনে দিয়ে চলে যায় গাড়ির ধোঁয়া উঁড়িয়ে। সব মিলিয়ে আশ্চর্য না হয়ে পারলো না তিয়াসা।
তিয়াসা শুধু একটা কথাই বলল, ‘স্ট্রেঞ্জ! এতটা বদল! একটাবার বলল না আমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দেবে কিনা? এটিটিউড তো ভালোই। তবে আমার খুশি হওয়ার বদলে এত রাগ আর খারাপই বা লাগছে কেন? উনি আমাকে পাত্তা না দিলে আমার কি? আমার কি আসে-যায় তাতে?’
#চলবে,