#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ৪৫
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
(কোনো ক্রমেই কপি করবেন না)
ছাদের পুরোটা জুড়ে লাইটিং করা। লাল, নীল, হলুদ,সবুজ বিভিন্ন রঙের লাইটে ঝলমল করছে ছাদের আনাচে-কানাচে। আহসান, জিসান ও রেজওয়ান বেশ কিছুক্ষণ আগে রেডি হয়ে ছাদে চলে এসেছে। রিমির রেডি হতে সময় লাগবে বলে তাকে ফেলেই চলে আসতে বাধ্য হলো আহসান। আর জিসান তো জান্নাতকে কিছু বলার প্রয়োজনবোধ করে না। সে স্বাধীন। তাই অপেক্ষা করারও প্রয়োজন হয়না তার।
এক পর্যায়ে ধৈর্যহারা হয়ে আহসান বলে ফেলে,
‘মেয়েরা এত সময় লাগায় কেন বলতো?’
রেজওয়ান হাসি মিশ্রিত কন্ঠে বলল, ‘জানি না ভাই। তবে আমি যে কবে এভাবে বউয়ের জন্য ওয়েট করবো? সেই আশায় আছি। তবে আমাদের জিসান মনে হচ্ছেনা জান্নাতের জন্য অপেক্ষা করছে বলে। তাইতো দিব্বি বসে ফোন চালাচ্ছে।’
জিসান রেজওয়ানের কথায় কান দিলনা। ডোন্ট কেয়ার ভাব করে ফোনের স্ক্রিনেই তাকিয়ে রইল।
এরই মাঝে একজন ওয়েটার আসলো একটা বড় ব্যাগ নিয়ে। এসেই রেজওয়ানের উদ্দেশ্যে বলল, ‘স্যার নিয়ে এসেছি।’
রেজওয়ান তড়িঘড়ি করে ওয়েটারের হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে তাকে বিদায় জানানোর পর পরই ব্যাগটা ছাদের এক কোণে লুকিয়ে রাখলো। রেজওয়ানের অদ্ভুত কান্ডে আহসান আশ্চর্য না হয়ে পারলো না। তাই আহসান কিছুটা এগিয়ে গিয়ে রেজওয়ানের পিঠ থাপড়ে শুধালো, ‘কি আছে এই ব্যাগে?’
রেজওয়ান খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে,
‘ড্রিংকস।’
‘হোয়াট!’
‘তোর,আমার আর জিসানের জন্য। একটু এঞ্জয় তো করাই যাই বল?’
‘একদমই না। আমি এসবে ইন্টারেস্টেড না। আর জিসানও ড্রিংকস করবে না।’
‘জাস্ট একটুখানি ব্রো। তাছাড়া একটা দিনই তো। বারবার তো বলছি না।’
‘নো ওয়ে, দাদিয়া খুব বেশি অপছন্দ করেন এসব। একবার বাপি ড্রিংকস করেছিল কানাডা থাকাকালীন। দাদিয়া জানতে পেরে বাপিকে চামচ দিয়ে মেরে চামচই ভেঙে ফেলেছিল। সত্যি বলতে আমার কখনো ইচ্ছে হয়নি এসব টেস্ট করার। তুই জিসানের সাথে শেয়ার করতে পারিস। আমাকে বাদ দে।’
রেজওয়ান মুখশ্রী বিকৃত করে বলল, ‘বেকডেইটেড কোথাকার হুহ।’ তারপর রেজওয়ান জিসানকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তুইতো ড্রিংক করিস! নাকি আহসানের মতো তুইও সাধু?’
জিসান গলা পরিষ্কার করে বলল, ‘আমারও এসব পছন্দ না। সো দ্বিতীয়বার এসব ছাইপাঁশের প্রসঙ্গ নিয়ে আমার কাছে আসবি না বলে দিলাম।’
‘কিসের ছাইপাঁশ জিসান?’
রিমির কন্ঠে সবাই ছাদের গেইটের দিকে তাকায়। দেখলো রিমি,জান্নাত,তিয়াসা একসাথেই দাঁড়িয়ে আছে। রেজওয়ান ঢোক গিয়ে বলল, ‘এমনি ভাবি। আসলে আমি জিসানকে বলেছিলাম চেস খেলি ভাবিরা যতক্ষণ না আসে। তবে জিসান খেলতেই চাচ্ছে না। তাই কথার প্রসঙ্গে ওটা বলেছে।’
আহসান আর জিসান একে অপরের দিকে চোখাচোখি করে দুজনই হো হো করে হেসে উঠল।
‘এখানে হাসার কি হলো হুম?’ জিজ্ঞেস করল রিমি।
আহসান এগিয়ে গিয়ে বলল, ‘আপনাদের স্বাগতম মিস ওয়ার্ল্ডরা। এখনি ক্যাট ওয়াক হবে। আপনারা রেডি তো?’
রিমিসহ জান্নাত আর তিয়াসাও আহাম্মক হয়ে চেয়ে রইলো আহসানের দিকে। জান্নাত আশ্চর্যান্বিত মুখে জিজ্ঞেস করে, ‘তুই কি বলছিস ভাইয়া? আমরা কি মিস ওয়ার্ল্ডের কম্পিটিশন করতে এসেছি নাকি যে ক্যাট ওয়াক করবো?’
‘স্যরি ভুল হয়েছে। তুই আর রিমি হচ্ছিস মিসেস ওয়ার্ল্ড আর তিয়াসা হচ্ছে মিস ওয়ার্ল্ড। তোদের মেয়েদের এত সময় কেন লাগে বুঝলাম না!’
‘ভাবি তো রেডিই ছিল। কিন্তু আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিতে গিয়ে লেট করে ফেলে। দোষ আমার রে। স্যরি আমি।’
পাশ থেকে রেজওয়ান বলে ওঠে, ‘তোমাদের সকলকে আসলেই খুব বিউটিফুল লাগছে। মিস ওয়ার্ল্ড কম্পিটিশনে গেলে মন্দ হবে না। তোমরা ট্রাই করতে পারো।’
‘একদমই না। আমার বেগম সাহেবা আমার ওয়ার্ল্ডের রানী হলেই যথেষ্ট। দুনিয়ার কেউ না চিনলেও হবে। দেখি আমার বেগম সাহেবার সুন্দর হাতখানা।’ এই বলে আহসান ওর ডান হাত রিমির দিকে বাড়িয়ে দিল। রিমি ওর হাত বাড়িয়ে দিলে আহসান ওর বুক পকেট থেকে রিং বের করে খুব যত্ন করে রিমির মধ্যমা আঙুলে রিং পড়িয়ে দিল। তারপর গান ধরল,
রাতের সব তারা আছে,দিনের গভীরে।
বুকের মাঝে মন যেখানে,রাখবো তোকে সেখানে।
তুইকি আমার হবি রে।
মন বাড়িয়ে আছি দাঁড়িয়ে, তোর হৃদয়ে গেছি হারিয়ে, তুই জীবন মরণ সবই রে।
তুইকি আমার হবি রে।
কয়েক কলি গেয়ে আহসান সকলের সামনে রিমির হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁট ছোঁয়ালো। উপস্থিত সকলেই চুপচাপ চেয়ে রিমি ও আহসানের রোমান্স দেখছে। তবে রিমি যেন শকড। কারণ ও জানেই না আহসানের গানের গলা মারাত্মক আকারে ভালো। আজই প্রথম শুনলো। তাই আহসানের কাজে লজ্জা না পেয়ে প্রচন্ড ভাবে অবাক হয়েছে। সকলের হাত তালি দেওয়ার শব্দে রিমি ভাবনার সুতো কেটে বাস্তবে ফেরে। রিমি অধরে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে বলল,
‘বাহ! বেশ ভালো কন্ঠ তো তোমার।’
তখনই জান্নাত বলল, ‘ভাইয়া গিটারও বাজাতে পারে। গানও গাইতে পারে। কেন তোমাকে বলেনি?’
‘না কিছুই বলেনি আমাকে। আমি কে যে আমাকে বলবে?’ এই বলে ভেংচি কেটে রেলিং এর ধারে চলে গেল রিমি।
‘যাঃ বাবা, ভাবির আবার কি হলো রে ভাইয়া?’
জান্নাতের কথার পর পরই তিয়াসা বলল,
‘মেবি ভাইয়া কখনো গানের কথাটা জানায়নি বলে রাগ করেছে। ভাইয়া তুমি গিয়ে আপুর রাগ ভাঙাও নইলে পার্টির বারোটা বাজবে। জানোই তো আপুর জেদ সম্পর্কে!’
পরমুহূর্তেই আহসান চলে গেল রিমির রাগ ভাঙতে। আহসান চলে যাওয়ার পর রেজওয়ান জিসানের উদ্দেশ্যে বলে, ‘এবার জিসানের পালা। আহসান ব্রোতো রোমান্সের দিক দিয়ে পাশ করে গেল। এবার তুইও কিছু দেখা আমাদের। দেখি তুই জান্নাতকে কতটা ভালবাসিস!’ কথাটা রেজওয়ান বেশ কৌতুক করেই বলল।
জান্নাত মাটির দিকে চোখ নামিয়ে রেখেছে। আর জিসান! সেতো একবার তিয়াসার দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার জান্নাতের দিকে। জান্নাত এক দিকে চলে গেল তো তিয়াসা অন্যদিকে। দুজনের মুখেই কালো অন্ধকার ছেয়ে আছে।
রেজওয়ান কিছু আঁচ করতে না পেরে জিসানকে জিজ্ঞেস করে, ‘কি হলো বলতো জান্নাতের? ও এভাবে চলে গেল কেন? আর ভাবির বোনই বা হনহনিয়ে চলে যায় কেন? কিছুই বুঝলাম না। তুই কি ভাবছিস? কি মনে হয়?’
‘কি ভাববো? আমি জানি না।’
‘জানিস না? একটা কথা বলবো বলবো ভেবেও বলা হয়ে ওঠেনি। একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি তুই?’
‘না।’ স্পষ্ট না বলে দিল জিসান।
‘তুই না বলতে চাইলেও তোকে বলতে হবে। তুই বলেছিলি কার যেন প্রেমে পড়েছিস। সেই মেয়েটা কে বলতে পারবি? আর তাকে কি এখনো ভালবাসিস? তুইকি জান্নাতকে এখনো মেনে নিতে পারছিস না?’
‘আমাকে এসব প্রশ করে লাভ নেই। আমি কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দেব না। আর একটা প্রশ্নের কথা বলে তিনটা প্রশ্ন অলরেডি করে ফেলেছিস।’
‘আচ্ছা তুই শুধু বল জান্নাতকে মেনে নিতে পেরেছিস কি না? তোদের মধ্যে কি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক আছে?’
‘আমি বললাম তো জানি না।’ জিসানও বিরক্ত হয়ে অন্যদিকে পা বাড়ালো।
অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে রিমির অভিমান ভাঙতে সফল হলো আহসান। দুজনে মিলে চাঁদ দেখছে হাতে হাত রেখে। আচমকাই একজন ওয়েটার কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে ওদের নিকট যায়। গিয়ে বলে,
‘স্যার-ম্যাম ক্যান ইউ হ্যাভ কোল্ড ড্রিংকস?’
আহসান রিমি দুজনই বলল, ‘নো।’
পরমুহূর্তেই ওয়েটারটি ইচ্ছে করে রিমির গায়ে গ্লাসে থাকা কোল্ড ড্রিংকস ঢেলে দিল। রিমি ও আহসান অন্যদিকে চেয়ে ছিল বলে লক্ষ্য করেনি কিভাবে এসব হলো। রিমির পুরো শাড়ি ভিজে গিয়েছে। আহসান ওয়েটারকে ধমকা ধামকি করলে রিমি আহসানকে থামিয়ে নেয়। তারপর চেঞ্জ করে আসবে বলে ব্যাগ থেকে রুমের চাবি নিয়ে ব্যাগটা আহসানের হাতে ধরিয়ে নিচে চলে গেল। রিমি এক এক করে সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে। রুমের কাছে আসতেই সহসা কারো জুতোর শব্দ রিমির কানে এলো। রিমি আশে পাশে তাকিয়ে বলল, ‘কাউকে দেখছি না। কিন্তু জুতোর শব্দ তো পাচ্ছি। হ্যাঁ দক্ষিণ দিক দিয়ে শব্দটা আসছে। কেউ কি আমার এদিকেই আসছে নাকি?’
জিসান, জান্নাত ও তিয়াসা যার যার মতো ছাদের ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। জান্নাত আহসান ও রিমির যুগলবন্দী দেখে ভাবছিল জিসান আর ওর সম্পর্কটাও যদি এমন হতো! তাহলে কতই না ভালো হতো। হঠাৎ করে রেজওয়ান জান্নাতের কাছে গিয়ে বলল, ‘তোরা কেমন কাপল কি জানি? একেকজন একেক জায়গায়। এটা কোনো কাপল হলো? প্রথম এমনটা দেখছি।’
জান্নাত কিছু বলল না। তবে যথাসম্ভব চেষ্টা করলো চোখের পানি আটকে রাখার।
কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে রেজওয়ান আবারও বলল, ‘আমি আর কিছুই বলবো না তোদের। যাই হোক, তোকে বেশ সুন্দর লাগছে শাড়িতে। তবে তোর শাড়ির নিচের দিক দিয়ে কুঁচকে আছে মনে হচ্ছে। দাঁড়া আমি ঠিক করে দিচ্ছি। জান্নাত মানা করার আগেই রেজওয়ান জান্নাতের শাড়ি নিচ থেকে ঠিক করে দিল। তারপর একের পর এক কথা বলতে থাকলো জান্নাতের সাথে। জান্নাত বিরক্ত হলেও পারছে না রেজওয়ানকে তাড়িয়ে দিতে। তবে মনে মনে খুব বেশি অসহ্য লাগছে ওর রেজওয়ানকে। একটুও নিতে পারছে না।
আহসান বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরও রিমির আসার নাম-গন্ধ পেল না। এবার যেন ওর মাথায় চিন্তার বাঁজ ভেঙে পড়ে অপেক্ষা করতে করতে।
‘কি ব্যাপার! এখনো আসছে না কেন রিমি? এত টাইম লাগে নাকি? এত সময় লাগার কথা নাতো! ঘুমিয়ে পড়েছে! নাকি কিছু সমস্যা হয়েছে? নাহ, গিয়ে দেখতে হবে আমাকে।’
সাতপাঁচ না ভেবে আহসানও নিচে নেমে গেল।
এইদিকে জিসান রাগে ফুসছে শুধু। রাগের বেগ কন্ট্রোল করতে না পেরে জিসান ড্রিংক করতে বাধ্য হলো। অতিরিক্ত ড্রিংক করায় নাক মুখের হাল বেসামাল হয়ে গিয়েছে জিসানের। চোখের সামনে জান্নাত আর রেজওয়ানকে একসাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খুব রাগ হচ্ছে জিসানের। মনে হচ্ছে কেউ ওর বুকের মধ্যে ছুরি চালাচ্ছে বারংবার। এক পর্যায়ে জিসান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। দু কদম এগিয়ে রেজওয়ানের পাশ কেটে জান্নাতের হাত ধরে নেয়। তারপর কিছু না বলেই জিসান জান্নাতকে টানতে থাকে। জান্নাত জিসানের এরুপ আচরণের কারণ না বুঝে কি হয়েছে জানতে হাজারটা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় জিসানের দিকে। জিসান যেন কোনো প্রশ্নেরই তোয়াক্কা করলো না। কারণ সেটার প্রয়োজনবোধ হলো না তার কাছে।
#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ৪৬
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
(কোনো ক্রমেই কপি করবেন না)
জিসান জান্নাতের একটা কথারও সাড়াশব্দ বা উত্তর দিচ্ছে না। তার কাজ সে করেই যাচ্ছে। জান্নাতকে টানতে টানতে নিজেদের রুমে চলে আসলো। তারপর দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরে দাঁত চেপে বলল, ‘রেজওয়ানের সাথে এত মাখামাখি কিসের তোর হুম? এত কিসের আলাপ করিস তোরা?’
জান্নাতের নাকে খুব বাজে একটা স্মেল গিয়ে বারি খাচ্ছে। সেটা যে জিসানের থেকে আসছে তা জান্নাত বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে। এতটাই বাজে স্মেল যে জান্নাত ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছে না। তাই হাত দিতে নাকমুখ চেপে ধরেছে। মুখে হাত রেখেই সে বলল,
‘তুমি কি খেয়েছো? এত বাজে গন্ধ কেন আসছে তোমার কাছ থেকে? ছি! দূরে যাও। আমার মাথা ঘোরাচ্ছে।’
জিসান দেয়ালে ঘুষি মেরে বলল, ‘আমি কাছে আসলে ভালো লাগে না, মাথা ঘোরায়। আর রেজওয়ান কাছে গেলে হাসিতে আত্মহারা হয়ে যাস তাইনা?’
‘পাগলের মতো আবল-তাবল বকবে না বলে দিলাম। অবশ্য এখন তোমাকে আধপাগল বলা যায়। ঠিকমতো কথা বলার শক্তি পাচ্ছো না, কিন্তু আমার উপর জোর খাটানোর সময় শক্তি ঠিকই চলে আসে।’
‘সত্যি কথা বললে গায়ে লাগে তাইনা? তোর রুচি খুব খারাপ। যেই মেয়ে পরপুরুষের সাথে রঙ রসিকতা করতে পারে, সে কেমন তা খুব ভালো করেই বুঝে গিয়েছি।’
জান্নাত শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জিসানকে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা দূরে সরে গেল। তারপর বলল, ‘আমি তো তোমার কেউ না। তাহলে আমাকে নিয়ে জেলাস কেন হচ্ছো বলোতো?’
জিসান পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল, ‘১০ টা মানুষের সামনে তোকে বিয়ে করলাম আর তুই বলছিস তুই কে আমার? তুই আমার বিয়ে করা স্ত্রী।’
‘বিয়ে! এটা কোনো বিয়ে হলো? তুমি তো আমাকে ভালোই বাসো না। তাহলে কিসের স্ত্রী আর কিসের বিয়ে?’
‘এটা কি স্বাভাবিক নয়? তুই যেভাবে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করলি, সেভাবে কি কোনো বিয়ে হয় নাকি? তাহলে ভালবাসা কোথা থেকে আসবে বলতে পারিস?’
‘তাইতো! ভালবাসা তো আসার কথা না। কারণ তুমিতো তিয়াসাকে ভালবাসো। আমাকে না।’
জিসান তেড়ে গেল জান্নাতের দিকে। তারপর জান্নাতের দুই বাহু ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলল,
‘হ্যাঁ আমি তিয়াসাকেই ভালবাসি। কিন্তু তুই মাঝখানে এসে সব কিছু ঘেটে দিলি। তোর জন্য আজ এই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছি আমি।’
‘আমি যদি এতটাই খারাপ হই, আমাকে যদি ভাল নাই বাসো, তাহলে আমায় অন্য কারো সাথে দেখলে হিংসা হয় কেন তোমার? কেন রেগে যাও তুমি? তিয়াসাকে ভালবাসো যখন, ওকেই বিয়ে করো তাহলে। আমারই ভুল হয়েছে। না বুঝে বিয়ে নামক পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে এভাবে ছেলেখেলা করা উচিত হয়নি আমার। আমি আবেগে পড়ে সত্যিই অনেক ভুল করেছি। তুমি আমাকে যত জলদি সম্ভব ডিভোর্স দিয়ে দাও। মুক্তি নিয়ে নেও আমার থেকে। চলে যাও তোমার তিয়াসার কাছে। আমি আর আটকাবো না তোমায়।’
জিসান আর নিতে পারলো না জান্নাতের কথাগুলো। পাল্টা কিছু বলার শব্দ ভান্ডারও যেন নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। তাই সে জান্নাতের কাছ থেকে পিছিয়ে আসলো। মাথা চক্কর দেওয়ায় দু হাত দ্বারা মাথা ঠেসে ধরে। জান্নাত জিসানের অস্বাভাবিক অবস্থা দেখে তড়িঘড়ি করে ধরে নিল জিসানকে। তারপর জিসানকে আস্তে আস্তে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিল। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই জিসান গোঙরাতে শুরু করে। জিসান বিড়বিড় করে কি বলছে তা বোঝার মতো না। জান্নাত জিসানের মুখের কাছে কান পেতেও কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। ফলে আর বৃথা চেষ্টা না করে জিসান যাতে কায়দা মতো ঘুমোতে পারে সেই ব্যবস্থায় লেগে গেল।
_______________
রিমিকে কোথাও দেখতে না পেয়ে আহসান পাগলের মতো দিশেহারা প্রায়। পুরো রিসোর্ট খোঁজা শেষ। রিসোর্টের প্রতিটি রুম ব্যতীত এমন একটা কোণাও যে আহসান রিমিকে খোঁজেনি। রিমিকে খোঁজার ক্ষেত্রে তিয়াসা আর রেজওয়ানও সাহায্য করছে। তিয়াসা ইতোমধ্যে কান্না শুরু করে দিয়েছে রিমির জন্য। আহসানও ভেঙে পড়েছে অনেকটা। চোখ মুখে লাল আভা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে আহসানের। শুধু পারছে না তিয়াসার মতো হাউমাউ করে কাঁদতে। রেজওয়ান আহসানকে শান্তনা দিতে বলল,
‘তুই চিন্তা করিস না। ভাবি নিশ্চয়ই এদিকেই আশেপাশে কোথাও আছে।’
আহসান বলল, ‘আশেপাশে কোথাও আছে মানে? কোথায় আছে? ও জলজ্যান্ত একটা মানুষ। কোনো ছোট-মোটো বস্তু নয় যে দেখা যাবে না। ভাই তুই ভালো করে সকল সিসিটিভি ফুটেজ দেখ। সেখানে হয়তো কিছু পাওয়া যাবে।’
‘আর কত দেখবো? তুইতো দেখলি সব সিসিটিভি ফুটেজ। তাছাড়া তোদের রুমের বাহিরে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো নেই। কি করার এখন?’
‘আমাদের এখানে আসাই ঠিক হয়নি। কি জানি আমার রিমি কোথায় আছে! আচ্ছা আমরা রিসোর্টের সবগুলো রুম চেক করলে কেমন হয় বলতো?’
‘কি বলছিস ভাই? এভাবে রাত-বিরেতে কারো রুম চেক করতে কিভাবে যাওয়া যায় বলতো? মানুষ রেগে যাবে। এরকম করলে আমাদের রিসোর্টের নাম খারাপ হয়ে যাবে। কেউ বুকিং করাতে চাইবে না আর।’
‘তুই নাম নিয়ে পড়ে আছিস! আমার স্ত্রী গুম আর তুই কিনা!’ আহসান পুরোই পাগলের ন্যায় হয়ে গিয়েছে। নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে তাই।
‘ভাই তুই শান্ত হ। আমরা কিছু ভাবি কিভাবে কি করা যায়। পুলিশে ইনফর্ম করলে ভালো হয় বল?’
‘পুলিশ আসতে আসতে অনেক দেড়ি হয়ে যাবে। তার থেকে আমি যেটা বলেছি তাই শোন। আর নাহলে রিসিপশনিস্টকে জিজ্ঞেস কর আননোন কেউ বা কাউকে রিসোর্টের ভেতর দেখেছে কিনা।’
রেজওয়ান তৎক্ষনাৎ রিসিপশনিস্টকে কল দিয়ে আসতে বলল। তার থেকে জানতে পারলো ঘন্টা খানেক আগে দুটো মেয়ে এসেছিল। গতকাল রুমবুক করে আজ এসে পৌঁছেছে তারা। তাও আবার মুখ ঢেকে। মেয়ের কথা জানতে পেরে আহসান কিছুটা সন্দেহ করতে পারলো। সাথে ভয়ে আহসানের হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। তাই আর সময় নষ্ট না করে সবাইকে নিয়ে সেই মেয়ে দুটোর রুমের দিকে পা বাড়ালো। সাথে করে ডুপ্লিকেট চাবিটাও নিয়ে নিল, কাজে লাগতে পারে বলে।
#চলবে,,