#দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ 💖💖
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃতাবাসসুম_তোহা
গালে হাত দিয়ে হতভম্বের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছি।আচমকা রোদ্দুরের এমন ব্যাবহার আমার বোধগম্য হচ্ছে না।মাথা তুলে কিছু জিজ্ঞাসা করতে নিবো তখনি রোদ্দুর গট গট করে ঘরের বাইরে চলে গেলো। আর এক দন্ডও সেখানে দাড়ালো না। পাশে থাকা সোফায় ধপ করে বসে পড়লাম। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। রোদ্দুর এমন কিছু একটা করে বসবে আমি তা কল্পনাও করতে পারিনি। সবেই তো মাত্র তার প্রতি কিছু অনুভব করা শুরু করেছিলাম আমি। শুরু হওয়ার আগেই যে তা শেষ হয়ে যাবে কে জানতো।চোখের পানি গালে পড়তেই,,,″আহ্″ করে উঠলাম। জ্বলছে আমার গাল। রোদ্দুর যেই গালে চড় মেরেছে সেখানে খানিকটা আঁচড় লেগেছে তাই এমন জ্বলছে।মলিন মুখে বসা থেকে উঠে পড়লাম।
…
রোদ্দুর একটা অন্ধকার ঘরে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে বড়ো ফ্রেমে বাধানো একটা পুরোনো ছবি। বাইরের জ্যোৎস্নার আলো জানালা ভেদ করে ছবিটার উপর পরছে। রোদ্দুর হাটু গেরে বসে পড়লো তার সামনে,,,
কেনো মা?? আমার সাথেই এমন কেনো হয়?? যাকে ভালোবাসি সেই আমাকে ধোকা দেয়। আমার ভালোবাসার কি কোনো কমতি আছে?? তুমি বলো,,,,তোমাকে এতো ভালোবাসি আর তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো। এখন যাকে আমি আমার সবটুকু দিয়ে ভালোবাসতে চাই সে কেনো আমার ভালোবাসাটা বুঝে না!! কেনো???? বলেই আর্তনাদ করে উঠলো রোদ্দুর। হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পেছনে ঘুরে তাকায় রোদ্দুর,,,
কার জন্য এতো আর্তনাদ করছো রোদ্দুর যে তোমাকে ভালোইবাসে না??তোমার এমন অবস্থা আমি এই প্রথম দেখলাম রোদ্দুর। দুই দিনের একটা মেয়ের,,,,
চুপ করো নীরা। এইসব আমার আর কায়নাতের ব্যাপার,, আর স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। বসা থেকে উঠে দাড়ালো রোদ্দুর।
হুম,এইটা তোমার আর কায়নাতের ব্যাপার জানি। কিন্তু আমিতো তোমার বন্ধুর মতো তাই তোমাকে বললাম। আর কি বললে? স্বামী-স্ত্রী!! তোমরা কি আদেও এখনও স্বামী-স্ত্রী হতে পেরেছো?? শুধু কাগজে কলমে নামে তোমরা স্বামী-স্ত্রী এর বেশী কিছুই না সেটা আমি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছি রোদ্দুর।
নীরার প্রতিটি কথায় রোদ্দুরের রা
শরীর রাগে রি,রি করছে। রোদ্দুর দাতে দাত চেপে বললো,,,
″নীরা তোমাকে চুপ করতে বলেছি চুপ করো। আমি আমার ধৈর্য হারাতে চাইছি না।আর এতো রাতে তুমি এখানে কি করছো!! জানো না এই ঘরে সবার আসা এ্যালাওড না!!!″ জোড়ে চেচিয়ে বললো রোদ্দুর। নীরা রোদ্দুরের ধমকে কেপে উঠলো।
″এভাবে কেনো ধমক দিলে!!″ বলেই রোদ্দুরকে একপ্রকার জাপটে ধরলো নীরা। এই দৃশ্য কায়নাত দরজার সামনে থেকে দেখে ফেললো সাথে সাথে হাত থেকে কাচের জগটা মেঝেতে পরে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো। আচমকা এমন শব্দে রোদ্দুর নীরাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো। দরজার দিকে তাকিয়ে কায়নাতকে দেখতে পেলো,,,
″দেখো কায়নাত!!তুমি যা ভাবছো,,,, রোদ্দুরের কোনো কথা না শুনে একপ্রকার দৌড়ে চলে আসলাম সেখান থেকে।
রোদ্দুরও ছুটলো কায়নাতের পিছনে।
……
″আমি পানি নেওয়ার জন্য নিচে এসেছিলাম সাথে রোদ্দুরকে খুজতেও। তাই পানির জগ হাতে রোদ্দুরকে সারা বাড়ি খুজেছি শেষে এই কর্নার এর রুমটা থেকে আওয়াজ পেয়ে এখানে এসে যে এমন একটা দৃশ্য দেখতে হবে তা আমার কল্পনার অতীত ।″
……
″আব জ্বালেগা আগ!!!!″ কথাটা বলেই জোরে হেসে দিলো নীরা।
তুমি এতো নিকৃষ্ট ব্যাক্তি আগে জানতাম না নীরা!!
কথাটা কানে বাজতেই নীরা নিজেকে স্বাভাবিক করে পিছনে তাকিয়ে,,,ঘাবড়ে যায়!! সামনে নেহাল দাঁড়িয়ে আছে।
ত্,,তুমি!!!! এখানে কি করছো। বলেই নিজের হাত কচলাতে থাকে নীরা প্রচন্ড ঘাবড়ে গেছে তা তার ভঙিতা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
ভালো সাজার আর দরকার নেই নীরা। তুমি রোদ্দুর আর কায়নাতের মাঝে দুরত্ব তৈরী করতে চাইছো তাই না???সকালে আমার আর কায়নাতের ছবি তুলতে দেখেছি তোমায় আর এখনকার এইসব ঘটনা। কি চলছে টা কি তোমার মাথায়?? হা??
″কি চলবে কিছুই না″ খানিকটা ঘাবড়ে গিয়ে।
খবরদার মিথ্যা বলার চেষ্টাও করোনা। একটু এগিয়ে এসে বললো নেহাল,,
″হ্যাঁ!! চাইছি দুরত্ব তৈরী করতে। আমার সহ্য হয়না রোদ্দুরের পাশে কাওকে। ভালোবাসি আমি ওকে″ বলেই দুই হাত দিয়ে নিজের মাথা চুল চেপে ধরলো নীরা। উন্মাদের মতো বলে যাচ্ছে,,,রোদ্দুর আমার,,,শুধুই আমার,,,ওর আশেপাশে শুধু আমার অস্তিত্ব বিরাজ করবে আর কারো নায়ায়ায়া। দরকার হলে অন্য অস্তিত্বকে ভস্ম করে দিবো আমি।
″শান্ত হও নীরা। এমন পাগলামি করে তুমি রোদ্দুরকে কখনো পাবে না। আর রোদ্দুর কায়নাতকে ভালোবাসে। সে কখনো তোমার দিকে ফিরেও তাকাবে না। তাই তোমার উচিত ওদের মাঝ থেকে সরে যাওয়া। ″ কথাগুলো শেষ করে চলে যেতো নিলো নেহাল,,,,
″ভালোতো তুমিও বাসো কায়নাতকে!! ভুলতে কি পারবে তাকে ???″
নীরার কথাটা তীরের মতো লাগলো নেহালের বুকে। ঘার বাকিয়ে নীরাকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,,
″আমার ভালোবাসায় হিংস্রতা নেই নীরা। সুযোগ আছে, সময় থাকতে শুধরে যাও″ বলে নেহাল চলে গেলো।
নীরা রাগে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে চোখ বুজে ফেললো। সেই অবস্থাতেই মুখে এক চিলতে বাকা হাসি টেনে বললো,″ভুলবে তো সে!″
______________________________________________
দৌড়ে ঘরে এসে দরজা আটকিয়ে দিলাম।নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছি না,,,রোদ্দুর আর নীরা!!! ভেবেই ডুকরে কেদে উঠছি । কেনো এমন করলো রোদ্দুর আমার সাথে। রোদ্দুর বার বার দরজা ধাকাচ্ছে।
″কায়নাত দরজা খোলো। এমন বাচ্চামো করো না। কায়নাত ভালোভাবে বলছি দরজাটা খুলে দাও। ″ আমি ওনার কোনো কোথায় কান দিচ্ছি না। এই মুহুর্তে আমি কাদতে ব্যাস্ত। আমার কারো কথায় দিকে হুশ্ নেই। রোদ্দুর এইবার রাগে আরো জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগলো,,,,
″কায়নাত আমার রাগ উঠিও না, শেষবারের মতো ভালোভাবে বলছি দরজাটা খোলো।আমি চাই না মাঝ রাতে সবার ঘুম ভেঙে যাক আর তারা এইসব দেখুক। ″
………[এইবারো দরজা খুললাম না]
″কায়নাত″ জোড়ে ধমক দিয়ে বললো। কেপে উঠলাম আমি। না চাইতেও ভয়ে দরজাটা খুলে দিলাম। খোলার সাথে সাথে রোদ্দুর হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকে পড়লো,,,দরজাটা কোনোমতে লাগিয়ে জড়িয়ে ধরলো আমায়। তারপর পাগলের মতো আমার গালে চোখে মুখে চুমু দিতে লাগলো। আমাকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তার বুকে হৃদস্পন্ধন যে হাজার গুন বেরে গেছে বুঝতে পারছি আমি।
″এইভাবে কেও ভুল বুঝে ?? ″সবসময় এমন করো কেনো তুমি হ্যা?? জানো,,,,আমি কতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এইভাবে দরজা বন্ধ করে রাখায়। বুঝো কিছু তুমি?? হ্যা?? না কিছুই বুঝো না তুমি।
-বুঝা লাগবে না আমার। ছাড়ুন আমাকে। যান আপনি নীরার কাছে আটকাবো না,,, আমি।
– বুঝতে হবে আজ তোমায়। আমার মনের এই ভয় আমি আর নিতে পারছি না। মুখ তুলে তাকাতে নিলাম। দিলো না তাকাতে আবার বুকে শক্ত করে চেপে ধরলো। বলা শুরু করলো,,,
আমি এতোদিন তোমায় কিছুই বলিনি। জানি তোমার মনে হাজারো প্রশ্ন। তোমারা বাড়ি হারিয়েছো কিভাবে জানলাম? হুট করে আমি তোমায় বিয়ে কেনো করলাম? এতো রাগ কেনো দেখাই? অন্য কারো সাথে তোমাকে মিশতে কেনো দেই না? এইসব প্রশ্ন তোমার মনে ঘুরপাক খায় অনবরত।
হুম উনিতো ঠিকি বলছেন। আমার মনে এইসব প্রশ্ন শুরু থেকেই ছিলো। মুখ ফুটে বলে দিলাম,,,
কেনো করলেন এইসব?
বলবোতো আজ আমি সব কিছুই পরিষ্কার করে দিবো কারন এখন আমি তোমার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাই আর আমি চাই না আমার এই ভালোবাসা অন্যকারোর হয়ে যাক।″ ভালোবাসা″ শব্দটা শুনেই থমকে গেলাম। ভালোবাসি আমি ওনাকে?? রোদ্দুর আবার বলা শুরু করলেন,,
এক এক করে রোদ্দুর পুরোনো সব কথা বলে দিলো। রোদ্দুর ওকে সেই ছোটো থেকে চিনে এই কথাটা শুনে কায়নাত আরো বেশী শকড হলো।
আ,,আপনি সে,, সেই রোদ্দুর?? কাপা কাপা গলায় বললাম,,,
রোদ্দুর আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার দুই বাহু হাত দিয়ে ধরে বললো,,,হুম,,,মুখে তার সেই মারাত্মক সুন্দর হাসিটা বজায় রেখে। চোখ সরিয়ে নিলাম আমি। অজানা অভিমান ভর করলো আমার মনে। কেন বলেননি এতোদিন.? আগে এইসব বললে কি তার খুব বেশী ক্ষতি হয়ে যেতো। মুখ ঘুরিয়ে নিলাম অন্যদিকে। রোদ্দুরে আবার পিছন থেকে আমায় জড়িয়ে ধরলেন। আমার ঘারে থুতনি রেখে বললো,,,
উহু!! তোতাপাখি আমার। অভিমান করো না গো প্লিজ। সরি তো আমি। এতোদিন না বলার কারন ছিলো। তখন তোমার মনে আমার জন্য এক বিন্দু পরিমান অনুভূতি ছিলো না। আর তখনি যদি আমি এইসব বলে দিতাম তুমি নিরঘাত আত্মসম্মানের কারনে আমাকে ছেড়ে যেতে।
″আমি এখনো যেতে পারি″ অভিমানি সুরে বললাম।
রোদ্দুর আমার ঘারে আরো গভীরভাবে মুখ ডুবিয়ে দিলেন। কেপে উঠলাম আমি।
″উহু″,,,এখন তুমি কোথাও যেতে পারবে না তোতাপাখি। ভালোবাসো যে আমাকে। আর এই ভালোবাসা খুবই শক্ত ভাঙবে না কখনো।
কে বলেছে আপনাকে ভালোবাসি?? ভালোবাসি না আমি আপনাকে। আপনার মতো লোককে ভালোবাসা যায় না। বলেই এক ধাক্কায় আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিলাম আমি।
যদি নাই ভালোবাসো তাহলে নীরার সাথে আমাকে দেখে এমন রিয়েক্ট কেনো করলে? ইনফেক্ট যতোবার নীরার সাথে আমাকে দেখেছো ঠিক ততোবারই জেলাস কেনো হয়েছো?
নীরার নাম শুনেই আমার কিছুক্ষন আগের ঘটনা মনে পড়ে গেলো,,,,কেদে দিলাম আমি। আমার এমন আচমকা কেদে উঠায় রোদ্দুর ঘাবড়ে গেলো। ব্যস্ত হয়ে আমার কাছে এসে পড়লো,,,
কি হলো কায়ু???? কান্না করছো কেন?? আমি কি একটু বেশী বলে ফেলেছি?? সরি আর কিছু বলবো না আমি। এই কান ধরছি তুমি কেদো না প্লিজ।
রোদ্দুরের বুকে কিল ঘুষি দিতে দিতে বললাম,,,আপনি পচা খুবি পচা একটা লোক। আমাকে আপনি ভালোবাসেন বলছেন?? কেমন ভালোবাসা আপনার যে ভালোবাসার মানুষের গায়ে হাত তুলেন আবার অন্য একটা মেয়েকে রাত বিরাতে জড়িয়ে ধরে রাখেন। এ কেমন ভালোবাসা আপনার। কথা বলছি আর ডুকরে কেদে উঠছি আমি। রোদ্দুর আমাকে কিছু বলছে সেইদিকে আমার একটুও হুস নেই। আমি তার বুকে কিল ঘুষি দিতে ব্যাস্ত। আচমকা রোদ্দুর তার ঠোঁট দুটো আমার ঠোঁটের মাঝে ডুবিয়ে দিলো। বুঝতে পেরে এক ধাক্কায় সড়িয়ে দেই।
কি করছেন এইসব?? মুখে হাত দিয়ে বললাম।
তুমি তো চুপই হচ্ছিলে না তাই আর কি এই ব্যবস্থা। আর তখন নীরা আমাকে জোর করে জরিয়ে ধরেছিলো আমি ইচ্ছে করে ধরেনি। আর ধরলেও বা তাতে তোমার কি?? তুমিও তো,,,!!!আচ্ছা যাই হোক এখন আমি পুরোনো কথাকে টেনে আমাদের বর্তমানকে নষ্ট করতে চাই না। তাহলে??!!
ভ্রুকুচকে তাকালাম তার দিকে,″কি তাহলে?″
″ভালোবাসো না বলছো??″ কাচুমাচু ফেস করে বললো রোদ্দুর। কিছু না ভেবে মিশে গেলাম তার বুকে,,,″ভালোবাসি নাকি জানিনা। কিন্তু আপনাকে ছাড়া যে এখন আমি আর থাকতে পারবো না!! সেইটা খুব ভালোভাবেই জেনে গেছি,,মি:শাহরিয়ার!! ″
রোদ্দুর আমার গালে তার দুই হাত রেখে কপালে ছুঁইয়ে দিলো তার ভালোবাসার পরশ!!চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি।
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে
#_Farju _💙
(গঠনমুলক মন্তব্য আদেও কি পাবো?!😑😑)