#দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃফারজানা_তাবাসসুম
!!
সব ঠিকঠাক করে সাজিয়ে রাখবে। কোনো কিছুর কমতি যেনো না হয়।
-জ্বি! স্যার। একদম আপনি যেভাবে যেভাবে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন আমরা সেভাবেই কাজ করছি।
গুড। তাহলে রাখি,,সন্ধ্যার আগে যেনো সব গোছানো থাকে।
ফোনটা কেটে মুচকি হাসলো রোদ্দুর। পাশের দেয়ালটায় হেলান দিলো।মুখে মুচকি হাসি বজায় রেখেই ধীরে ধীরে বললোঃ
″আর কিছুটা সময়ের অপেক্ষা,,, তোতাপাখি″
!!
রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো নীরা। নেহালের শেষ উক্তিটা তার মোটেও পছন্দ হয়নি।
″কাকে ″কীট″ বললো নেহাল। আমাকে? আমি কীট। ওর সাহস কি করে হয় আমাকে এইভাবে অপমান করার। ″
সামনের ঘরটায় নজর পরতেই নীরার মুখে শয়তানি হাসি আসলো।||″ হুম! নেহাল একদম ঠিক বলেছো। কীট হলেও যে সে কীট না বিষাক্ত কীট আমি। নজর যার দিকে পড়বে,,, এই কীটের বিষাক্ত বিষের শিকার যে তাকেই হতে হবে′||
″আসতে পারি?″
শুয়ে শুয়ে একটা গল্পের বই পড়ছিলাম। কারো ডাকে দরজার দিকে নজর গেলো আমার। নীরা সহাস্যমুখে দাঁড়িয়ে আছে।তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার আমার দিকেই। আমিও আমার মুখে হাসির রেখা টেনে তাকে ভিতরে আসতে বললাম।
কেমন আছো কায়নাত?
″এইতো দেখতেই পারছো। ″
জ্বর কমেছে?
″হুম,,, অনেকটাই কমে গেছে।″
……
নীরা কেমন উৎসুকভাবে ঘরের চারদিকে চোখ বুলাচ্ছে।বুঝতে বাকি রইলো না, রোদ্দুরকেই খুজছে সে।
কাওকে খুজছো? নীরা।
নাহ্, মানে। রোদ্দুরকে যে দেখছি না। ও কি ঘরে নেই? উত্তরের আসায় আমার দিকে তাকিয়ে জলদি করে কথাটা বলে ফেললো।যেনো আমার এই প্রশ্নের অপেক্ষাতেই ছিলো।
না,,উনি সকালে কোথায় যেনো বেরিয়েছেন।
ওও,,,তা বলে যায়নি তোমায়।
নাহ্,,বইয়ের পাতায় চোখ ডুবিয়ে উত্তর দিলাম।
………….……
″সব ঠিক আছেতো তোমাদের মাঝে?″
নীরার এমন প্রশ্নে আমার ভ্রুজোড়া কিঞ্চিৎ কুচকে এলো। বই থেকে চোখ সরিয়ে তার দিকে নজর স্থির করে বললামঃ
ঠিক না হওয়ার কি কিছু হয়েছে? নীরা!!
আমার কথায় কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো নীরা তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আমতা আমতা করে বললোঃ
নাহ্,,,আমি এমনেতেই জিজ্ঞাসা করলাম আর কী। আচ্ছা তুমি বিশ্রাম নাও। আমি এখন আসি তাহলে। কথাগুলো বলেই দ্রুত পায়ে ঘর থেকে চলে গেলো নীরা।তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন।
এই মেয়েটা অদ্ভুত। সত্যিই অদ্ভুত। সারাদিন কি চলে এর মাথায় কে জানে!!!
!!
ঘরে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না। তাই ধীর পায়ে উঠে দাড়ালাম। জ্বর এর কারনে হাত-পায়ে বেশী জোর পাচ্ছি না। তাও ধীরে ধীরে রিফার ঘরে গেলাম। রিফার সাথে বসে কিছুক্ষন কথা বললাম। কথার মাঝেই ওকে জিজ্ঞাসা করলামঃ
রিফা আমার জন্য তোমাদের পিকনিক টাই মাটি হয়ে গেলো।তুমি রাগ করেছো তার জন্য? রিফা সহাস্যমুখেই উত্তর দিলোঃ
না ভাবী। রাগ করতে যাবো কেনো? বরং আমাদেরই ভুল হয়েছে, তখন তোমাকে ওভাবে যেতে দেওয়াটা ঠিক হয়নি।
না , না রিফা।এতে তোমাদের কোনো দোষ নেই। খামোখা আমার জন্য তোমার অনুশোচনা করার প্রয়োজন নেই। আমার তখন যাওয়াটা উচিৎ হয়নি।
উচিৎ হয়নি সেটা তখন বুঝলেই পারতে। তাহলে আর আমাদের এমন মরা হয়ে থাকতে হতো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কড়াগলায় কথাগুলো ব্যাক্ত করলেন মিসেস:শাহরিয়ার।
আহ্,,মাম্মা এইভাবে কেনো বলছো তুমি ভাবীকে।
রিফা,,উনি ঠিকি বলেছেন। আমার জন্যই তো আজ তোমাদের পিকনিক করাটা হলো না। তোমরা পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও। কথাগুলো বলেই সেখান থেকে চলে আসলাম আমি। রিফার আম্মু আমার দিকে একবার বিরক্তির দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন। ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় রিফার আওয়াজ শুনতে পেলাম। ″মাম্মা, ভাবীকে এইভাবে বলাটা কি খুবি দরকার ছিলো। পিকনিক না হলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো″
এই রিফা মেয়েটা সত্যিই আমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে। সবসময় আমার পক্ষ নিয়েই কথা বলে। চোখের কোনের পানি হাতের উলটো পিঠ দিয়ে মুছে,,ঘরের দিকে পা বাড়ালাম।
!!
ঘরের বেলকনির ধারে একটা চেয়ার নিয়ে বসে আছি। আর এটা ওটা নানান ভাবনা এসে ভীর জমাচ্ছে মাথায় আর মনে। তখনি কপালে কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। মাথা উচু করে উপরে তাকিয়ে দেখি রোদ্দুর একহাত পকেটে গুজে সামনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।কিছুক্ষন পর আমার দিকে একটা ব্যাগ বাড়িয়ে দিয়ে বললেনঃ
জ্বর নেই এখন। সন্ধ্যায় এইটা পড়ে রেডি হয়ে থেকো।
ভ্রুকুচকে তার দিকে তাকালাম।
কেনো পড়বো?
উনি চোখ মুখ শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ
এতো কথা কেনো বলো। যা বলেছি তাই করবে। গেলাম আমি এখন।
কোথায় যান?
রোদ্দুর আমার দিকে শুধু একবার তাকালেন।কোনো উত্তর না দিয়ে চলে গেলেন। সাথে সাথে আমার মুখে বিরক্তিরা এসে ভীড় জমলো।
কি ভাবে কি উনি নিজেকে? যখন যা বলবে তাই হবে? পড়বো না আমি এইসব। যাবোনা কোথাও। হুহ্,,ছুড়ে ফেলে দিতে নিলাম ব্যাগটা,, কিন্তু পরে কিছু একটা ভেবে আর ফেললাম না। খুললাম ব্যাগটা। ব্যাগের ভেতর একটা কালো শাড়ি, কিছু কালো চুড়ি, কালো শাড়ির সাথে মিলিয়ে কানের দুল। আর একগুচ্ছ বেলীফুলের মালা। সাথে একটা চিরকুটও আছে । চিরকুটটা হাতে নিলাম, সেখানে লেখা।
প্রিয়তমা❤️
আমি জানি আমার এই দুই দিনের আচরন তুমি মোটেও সহ্য করতে পারোনি।আমারও যে কম খারাপ লেগেছে তা কিন্তু নয়। কষ্ট আমারও লেগেছে, ব্যাথা আমিও পেয়েছি।যখন তোমাকে খুজে পাচ্ছিলাম না,তখন আমার মনের মাঝে ঠিক কি রকম ঝড় বয়ে গেছে তা ব্যাক্ত করতে আমি ব্যার্থ।কিন্তু আমি চাই সবকিছু ভুলে আবার সবটা নতুন করে শুরু করতে । তুমি কি চাও তা??
উত্তর হ্যা হলে এইসব পড়ে আমার মনের প্রেয়সী সেজে চলে এসো…………….. এই ঠিকানায়।
❤️❤️
মুচকি হাসলাম আমি। যাবোতো আমি রোদ্দুর, শুরু করবো আবার সবটা।
______________________________________________________________________________________
!!
পিটপিটিয়ে চাইলাম আমি। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে সময় দেখলাম ৭টা প্রায় বাজতে চলচলো। আমি এতোক্ষন যাবৎ ঘুমিয়ে ছিলাম আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। যাই হোক এখন ঐসব ভাবার সময় আমার কাছে নেই। তারাতাড়ি তৈরী হয়ে রোদ্দুরের কাছে যেতে হবে আমায়। ওয়াশরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে আসলাম।
!!
সাড়ারুম খুজে তন্নতন্ন করে খুজেছি কিন্তু রোদ্দুরের দেওয়া একটা জিনিস ও খুজে পেলাম না আমি। কিছুক্ষন বসে থেকে কোনো উপায় না পেয়ে আলমারি থেকে অন্য শাড়ি নিয়ে পরে ফেললাম। আর নিজেকে যতটা সম্ভব পারি সাজিয়ে তুললাম। তারপর বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে।বাড়ির ড্রাইভারকে আগে থেকেই বলে রেখেছিলো। আমি সেটা করেই চলে গেলাম আমার কাংখিত জায়গায়।
!!
একটা রিসোর্ট এর সামনে এসে নামলাম।ধীর পায়ে সামনের দিকে যেতে লাগলাম আমি। লাল নীল বিভিন্ন সাজের বাতি দিয়ে সুন্দর করে লাইটিং করা। রিসোর্টের বাগানের মাঝের এক জায়গায় বেশী আকর্ষণীয় করে সাজানো। আমি ঐদিকেই পা বাড়িয়ে যেতে লাগলাম। হাসি মুখেই সেই স্থান পর্যন্ত গেলাম,সেখানে পৌছানো মাত্র মুখের হাসি নিমিষেই গায়েব হয়ে গেলো।
!!
#চলবে
(আজকের পর্বটা গুছিয়ে লিখতে পারিনি তার জন্য দুঃখিত)
রিচেক হয়নি ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে_____
#_Farju_💙