দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ পর্ব ৭

#দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ💖💖
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃতাবাসসুম_তোহা

রোদ্দুর ডুব দিলো তার অতীতের ভাবনায়,,,,

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, অতীত,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আমাদের এপার্টমেন্ট এর সামনের বড়ো প্লেগ্রাউন্ড এ ক্রিকেট খেলছিলাম। তখন বয়স হবে আমার ১২ কি ১৩ বছর।

মারলাম এক ছক্কা। বল শুন্যে উড়ছে আমরা সবাই ঐদিকেই তাকিয়ে আছি। হঠাৎ গেট দিয়ে আসছিলো এক ৭-৮ বছর বয়সি মেয়ে,, দুর্ভাগ্য হলো মেয়েটার, বলটা গিয়ে সোজা মেয়েটার মাথায় লাগলো। মাথায় হাত চেপে ধরে মেয়েটা জোড়ে জোড়ে কান্না করতে লাগলো। হয়তো আমাদের এপার্টমেন্ট এ আজ ই এসেছে। মেয়েটার কান্না শুনে একজন মহিলা আর পুরুষ পেছন থেকে ছুটে আসলো।আমার সাথে থাকা ছেলেগুলো ভয়ে দৌড়ে পালালো,,,কিন্তু আমি এতো ভিতূ ছিলাম না। গেলাম ওনাদের সামনে। মেয়েটা আমাকে দেখে আরো জোড়ে জোড়ে কান্না করতে লাগলো। হয়তো খুব বেশি -ই ভয় পেয়ে গেছে। মেয়েটার বাবা আমার দিকে শুধু অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। কিছু বললো না,,মনে হয় পড়ে আমার বাবার কাছে বিচার দিবে। কিন্তু আমার তাতে কি??🤢😏আমার বাবা আমাকে কিছুই বলবে না আমি জানি। আর এইটা আমার এপার্টমেন্ট। এখানকার মালিক আমরা। এইসব ভাবতে ভাবতে বাসায় এসে পড়লাম।

________________________________________________________________________________

পরের দিন বিকালবেলা,,,,ছাদে গেলাম গিয়ে দেখি কালকের সেই মেয়েটা ছোটা ছুটি করে খেলছে কিছু ছেলে – মেয়েদের সাথে। আমি ওদের সামনে গিয়ে দাড়াতেই মেয়েটা আমাকে দেখে ভয়ে দিলো দৌড়। আমিতো হা হয়ে তাকিয়ে আছি মেয়েটার যাওয়ার পানে। আমি কি এতোটাই ভয়ানক নাকি?? আমাকে দেখে এইভাবে পালানোর কি আছে?? তারপর থেকেই ঠিক করলাম,,,এই মেয়েকে আরো বেশী করে ভয় দেখাবো😁। পিচ্চি মেয়েটা ভয় পেলে আরো বেশী ভালো লাগে। একদম ইদুর হয়ে যায় ভয়ে।
এইভাবে গেলো আরো কিছুদিন মেয়েটার বাবা আমার আব্বুকে কিছু বলেনি। যাক বাচলাম!

১ সপ্তাহ্ ধরে মেয়েটাকে সেই পরিমান ভয় দেখালাম। খেলতে গেলে,,,রুম থেকে বেরিয়ে আসার সময়।রাতে বাইরে এলে ভুত সেজে ভয় দেখানো। আর মেয়েটার সাথে সবসময় কর্কশ গলায় আর রাগী চোখে তাকাতাম। এমন নয় যে মেয়েটাকে আমার কাছে ভালো লাগতো না। ভালো লাগতো কিন্তু সবচেয়ে বেশী ভালো লাগতো তাকে ভয় দেখিয়ে।

আর হা,,,এখানে এই মেয়েটাই হলো আমার তোতাপাখি,,আমার কায়নাত।

প্রায় একমাস এমন চললো। কিন্তু মেয়েটার নামই জানি না এখনো। আমি কাওকে জিজ্ঞাসাও করিনি। কারন আমি কারো সাথে বেশী মিশতে পছন্দ করি না।একদিন মেয়েটা ছাদ থেকে নিচে নামছিলো। আমিও তখন মাত্র ছাদে গেছি। মেয়েটাকে দেখে ডাক দিলাম।

এই মেয়ে দাড়াও!!!

মেয়েটা আমার কথা না শুনে এক পা এক পা করে এগিয়েই যাচ্ছে।এইবার আমি রাগে জোড়ে ধমক দিয়ে বললাম,

দাড়াতে বলেছি আমি!!!! মেয়েটা দাঁড়িয়ে গেলো।আমি মেয়েটার সামনে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম,,

তোমার নাম কি???

সে কাপা কাপা গলায় বললো,,,কা,,,কায়নাত।

কোন ক্লাসে পড়ো তুমি??

2 তে।

এ ছাড়াও আরো কিছু প্রশ্ন করলাম,,,মেয়েটা মাথা নিচু করেই সব প্রশ্নের উত্তর দিলো। একবার ও আমার দিকে ভুলেও তাকালো না।

এমন করে কেটে গেলো আরো একমাস,,,কায়নাত আমাকে অসম্ভব পরিমানে ভয় পায় কিন্তু এখন ইকটু আকটু কথা বলে আমার সাথে। মেয়েটা যখন আমার সাথে কথা বলতো আমি যা বলতাম তাই বলতে এর বেশি একটা কথাও তার মুখ দিয়ে বেড়তো না। তাই মেয়েটার নাম দিয়ে দিলাম তোতাপাখি। তোতাপাখি বলেই ডাকতাম তাকে। মেয়েটা ধীরে ধীরে আমার সাথে ববন্ধুসুলভ হয়ে উঠতে লাগলো। কিন্তু তার মনে আমার জন্য প্রচুর ভয় ও কাজ করতো, যা আমি ভালোই বুঝতে পারতাম।

ছয় মাসের মাথায়,, হঠাৎ একদিন বাবা বললো আমরা আর এখানে থাকবো না। আমাদের বাড়ি অর্থাৎ শাহরিয়ার ম্যানশনে চলে যাবো। আমার অনিচ্ছা থাকার সত্তেও ঐদিন আমায় চলে আসতে হয়েছিলো। কিন্তু মেয়েটা আমার মাথায় পুরো আষ্টেপৃষ্টে ছিলো।কিন্তু সে আমাকে মনে রেখেছে কিনা জানতাম না। কিছুতেই ভুলতে পারছিলাম না তাকে। না ভুলারি কথা কারন আমার অতোটুকু বয়সে মাত্র একজন সাথী ই হচ্ছিলো যার সাথে আমি কথা বলা শুরু করে করেছিলাম ,,খেলতাম,ভয় দেখাতাম, মজা নিতাম। কিন্তু তাকে নিজের বন্ধু ও বানাতে পারলাম না। এই ছয় মাসের স্মৃতি আমার মাথায় সবসময় ছিলো। তখন ভালোবাসা কি জিনিস বুঝতাম না। মনে করতাম সে আমার জীবনের প্রথম আধো ফ্রেন্ড। আধো ফ্রেন্ড বলার কারন হচ্ছে সম্পুর্ন বন্ধুত্ত হওয়ার আগেই তাকে ছেড়ে চলে আসি। তাই এই অর্ধেক বন্ধুত্তের কথা সবসময় আমার মাথায় ছিলো।

আমার বয়স যখন ১৯ তখন একবার নিজে থেকে সেই আধো ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম তাকে একবার দেখার জন্য। এতোদিনে আমিও অনেকটাই পালটে গেছি আর আমার জানা মতে তোতাপাখিটাও এখন একটু বড়ো হয়েছে হয়তো ১৫ বছরে পা দিয়েছে। ফ্ল্যাটটা যেহেতু আমাদের তাই সেখানে আমি গেলে কেও আমাকে কিছু প্রশ্ন করার সাহস পাবে না। গেলাম আমাদের এপার্টমেন্ট এ। গেট দিয়ে ঢুকার সময় ই কেনো জানি মনের ভিতর ধুকপুক হতে শুরু করলো,,, বুকে হাত দিয়ে এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছি সামনে। মনে ভয়, যদি তোতাপাখি না থাকে এখানে?? তাহলে কি হবে?? কিছু না ভেবে সোজা গেলাম ছাদে। দরজা ঠেলে ছাদে প্রবেশ করতেই কারো ওড়না এসে পড়লো আমার মুখে। মুখে একরাশ বিরক্তি ভর করলো কিন্তু সাথে সাথে হৃদস্পন্ধন হাজার গুন বেশী বেড়ে গেলো। কেও একজন দৌড়ে এসে আমার কাছে থেকে ওড়নাটা টান দিয়ে নিয়ে নিলো,,,আবার যেই দৌড় দিয়ে চলে যেতে নিবে,,তখনি খপ করে তার হাত ধরে ফেললাম। টেনে নিজের দিকে ঘুরালাম। মেয়েটা চোখ মুখ কুচকে,,, চোখ বন্ধ করে আছে। কী মায়াবিনী মুখ তার,, পাতলা ঠোট জোড়া অনবরত কাপছে আর কি যেনো মিন মিন করে বলে যাচ্ছে। খোলা চুলগুলো বিকেলের মিষ্টি বাতাসে এলোমেলো হয়ে গেছে। লাল থ্রি-পিস পরিহিত লম্বা চুলের অধিকারিণী,,, মায়াবিনী কে দেখে আমি যেনো এক মিনিটের জন্য এক অজানা ঘোরে চলে গেছিলাম। হঠাৎ মেয়েটার অস্পষ্ট কথায় নিজের জগতে ফিরলাম। মেয়েটা বলে যাচ্ছে,,,,

আ,,আল্লাহ্,,,,বাচাও। ছেরে দিতে বলো,,, জানোতো মা বকবে,,,আল্লাহ্ বা,,,বাচাও। একনাগাড়ে চোখ বন্ধ করে কথাগুলো বলেই যাচ্ছে।

এই মেয়ে কি বলে যাচ্ছো তুমি??? মেয়েটা এইবার চোখ মেলে তাকালো,,,এই কিশোরী মেয়েতো দেখি আমাকে পাগল করে দিবে,,,এই চাহুনি টা যে আমার বড্ড চেনা। তোতাপাখিটার মতো,,,সব কিছুই মিলে যাচ্ছে তার সাথে। এই কাপা কাপা স্বর, ভয় পাওয়া,,ডাগর ডাগর চোখ। মুখ ফস্কে বলেই ফেললাম। তোতাপাখি তুমি??

মেয়েটা অবাক নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,,পাখি হতে যাবো কেনো?? আমি তো কায়নাত,, তোতাপাখি না।

আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না এই তার তোতাপাখি। কিন্তু আফসোস তোতাপাখিটার তার কথা একটুও মনে নেই। হয়তো আমি বললে সে মনে করতে পারবে কিন্তু না,,, আমি এখন তাকে কিছু মনে করাতে চাই না। ঠিক সময় সব কিছু মনে করাবো,,,যেহেতু এখন আমার কাছে সে শুধু তোতাপাখি না সে আমার তোতাপাখি।শুধুই আমার,,,আমার ভাবনার মাঝেই কায়নাত আমার হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে পালালো। আনমনেই হাসলাম আমি,,,এখনো আগের মতই রয়ে গেছে। একটুও পালটায় নি।
চলে আসলাম সেখান থেকে,,,আর মনে মনে ঠিক করলাম কায়নাত শুধু আমার হবে। ওকে অন্যকারোর হতে দিবো না আমি। কিন্তু ও এখনো ছোটো তাই আর তখন বেশি কিছু করলাম না। শুধু একজন লোক লাগিয়ে ওর সব খবরা খবর জোগাড় করতে লাগলাম। জানতে পারলাম আমরা সেখান থেকে আসার পর পরই তার মা মারা জান। আর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। আর কিছুদিন আগে কায়নাতের বাবা ও মারা যায়। এখন শুধু কায়নাত আর তার মা এবং ছোটো সৎ বোন থাকে।

এইভাবে কেটে গেলো আরো ৭ বছর। ৭ বছরে আমি প্রায়শই আমার তোতাপাখিকে দেখতে যেতাম। ভার্সিটিতেও মাঝে মাঝে লুকিয়ে যেতাম তাকে দেখার জন্য। এতোগুলো বছরে যে তাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম আমি। শুধু অপেক্ষা ছিলো সঠিক সময়ের। কিন্তু হঠাৎ যখন জানতে পারি তার সৎ মা তাকে কোনো বয়স্ক লোকের সাথে বিয়ে দিচ্ছে,,, তখন আমি সব ভেবে এক উপায় বের করি। যাতে আমি কায়নাতকে বাচাতেও পারবো আর তাকে নিজের করেও পাবো। সেইদিন বিয়ের সময় পুলিশটাও আমি নিজেই পাঠিয়ে ছিলাম। তাদের বাড়ি ছাড়া আমিই করেছি। আর এইসবের কারন একটাই আমার মায়াবীনি তোতাপাখিটাকে নিজের কাছে আনা।
°
°
°
রোদ্দুরের হঠাৎ করেই কায়নাতের কথা মনে পড়ে গেলো,,, সেতো কায়নাতকে ছাদে রেখে এসেছে। এক ঘন্টা প্রায় হয়ে গেছে। বৃষ্টির বেগ যেনো আরো বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। সে আর দেরি না করে ,,, চটজলদি চেঞ্জ করে ছাদের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বেরোলো। বাইরে অনেক জোড়ে বিদ্যুত চমকাচ্ছে। রোদ্দুরের এখন নিজের উপরেই বেশি রাগ উঠছে। কেনো যে সে রাগের বসে কায়নাতকে ছাদে রেখে আসলো। ভেবে ভেবে সিড়ির রেলিঙে বাম হাত বাড়ি মারলো আর দ্রুত পায়ে উপরে যাচ্ছে। রোদ্দুর ছাদের দরজাটা খোলা দেখলো। কিন্তু সে তো বাইরে থেকে দরজাটা লাগিয়ে গিয়েছিলো। এইবার পুরো ছাদে একবার চোখ বুলালো কিন্তু নাহ্ কায়নাত তো এখানে নেই। সে দেড়ি না করে দ্রুত নিচে নামতে লাগলো।
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে

(সময় না পাওয়ার কারনে আমি প্রতিদিন গল্প দিতে ব্যার্থ। ক্ষমা করবেন আমাকে_💔🥀)

#_Farju_💜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here