– রামিম পাগল হইছিস তুই? নিজের বোনকে কেউ বিয়ে করে?
– বাবা তুমি যা ইচ্ছা বলো আমি তিন্নিকেই বিয়ে করবো। কি তিন্নি করবিনা আমাকে বিয়ে?
তিন্নি চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলো।
আরো কয়েকবার প্রশ্নটা করলাম তিন্নি চুপ।
– তিন্নি তুই বলবি নাকি মারবো তোকে আমি?
হঠাৎ ঠাঁস করে একটা শব্দ হলো তারপর সব চিৎকার বন্ধ।
কোলাহল থেমে থমথমে শান্ত একটা পরিবেশ বিরাজমান হলো।
তিন্নি চলে গেলো নিজের রুমে।
রামিম ঠায় দাড়িয়ে রইলো।
কামরুল সাহেব বুঝলেন ছেলে পথভ্রষ্ট হয়েছে নইলে তিন্নিকে কিভাবে বিয়ের কথা বলে?
ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত মারা হলো রামিমকে।
ব্যাথায় শরীর ছেড়ে দিছে রামিম।
নাজনীন বেগম বাদে বাড়ির সবাই শক্ত।
তিন্নিও কিছু বলছেনা। বলবে কেনো? হোক পালিত বোন তবে বোন তো?
বোনকে কিভাবে বিয়ের কথা বলে?
দোতলা বাড়ির ওপরের তলায় পাশাপাশি রুমে থাকে রামিম তিন্নি।
রামিমের বয়স যখন দু বছর তখন তিন্নির বাবা একটা মেয়েকে নিয়ে আসেন বাড়িতে।
তিন্নি মেয়েটার বয়স তখন ১ বছর মাত্র।
গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটে বাবা মা মারা যায়।
তিন্নির বাবা মা পালিয়ে বিয়ে করার কারনে কোনো পরিবারই এই মেয়েটাকে বোঝা বানাতে চায়নি।
নাজনীন বেগমের মেয়ের খুব শখ ছিলো আর কামরুল সাহেবের বন্ধুর পরিবারে এত বড় একটা দূর্ঘটনার পর তিন্নি মেয়েটার ভবিষ্যতের কথা ভেবেই নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন।
নিজের মেয়ের মত করেই মানুষ করেছেন তিন্নিকে।
আজ ২৩ বছর ধরে মেয়েটাকে আগলে রেখেছেন তিনি।
মেয়েটা দেখতে খুবই সুন্দর হয়েছে, বিয়ের প্রস্তাব আসছে রোজই।
এরই মধ্যে একটা ছেলেকে বেশ পছন্দ হয়েছে তার।
ছেলে ব্যাংকে চাকরি করে।
ভালো বেতন। দেখতে শুনতেও ভালো।
এতদিন আগলে বড় করে একটা ভালো ছেলের কাছে তুলে দিতে পারলেই তার শান্তি।
এর মধ্যে রামিম এই কাহিনী করলো।
লোকে জানলে কি বলবে? কেউ কি বিয়ে করবে মেয়েটাকে?
ছেলেটাকে মেরে নিজেও ঠিক নেই।
আড়ালে কেঁদেছেন কয়েকবার।
রামিম চুপচাপ ওপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
পাশের রুমটাই তিন্নির রুম।
সে কি বুঝতে পারছেনা আমার প্রচুর কষ্ট হচ্ছে?
ডাক্তার এসে ঔষুধ দিয়ে গেছে। আপাতত পরিবেশ স্তব্ধ। নিঃশব্দে কেঁদে চলেছেন নাজনীন বেগম আর কাজের মহিলাটা।
এ বাড়িতে শব্দ করে কান্না করা নিষেধ।
কান্নাকাটির শব্দ শুনতে ভালোলাগেনা।
কাজের মহিলার নাম রহিমা বেগম।
(আমরা তাকে রহিমা কাকি নামে সম্মোধন করি?)
রহিমা কাকি আজ ২০ বছর যাবত এই বাড়িতে কাজ করছেন।
কাজের লোক কেউ ভাবেনা। পরিবারের একজন সদস্য হয়ে গেছেন তিনি।
পুরো পরিবার সহ এ বাড়িতেই থাকেন তারা।
তার স্বামি ড্রাইভার।
তাদেরও প্রেমের বিয়ে। রামিমকে দুজনেই নিজেদের ছেলে ভাবেন আর তিন্নিকে মেয়ে।
রামিমও সময় পেলেই কাকির হাতে মাখা ভাত খেয়ে আসে।
নিজের হাতে খেতে ইচ্ছে করেনা তার।
হয় মা নয়তো কাকি দুজনের কেউ তাকে খাইয়ে দিবেই। মাঝে মাঝে তিন্নির কাছে বায়না ধরে,
– আজ তুই খাইয়ে দিবি নয়তো খাবোনা আমি।
– প্রতিদিন তো কাকির হাতেই খাস আজ আবার আমি কেনো?
উত্তর দেয় তিন্নি।
রামিম জবাব না দিয়ে খাবার টেবিল থেকে উঠে দাড়ায়।
তিন্নি পিছে পিছে যায়,
– আয় খাইয়ে দেই।
দুজনের এমন মিষ্টি ভালোবাসায় পরিবারের কেউ রাগ করেনা বরং খুশিই হয়।
একটা সময় কামরুল সাহেব ভাবতো মেয়েটাকে কি ছেলের বউ করে রেখে দিবে?
সময় বদলায়, মনের ভিতর শঙ্কা হয়,
লোকে কি বলবে? নিজের মেয়ের মত মানুষ করেছি যে।
নাজনীন বেগম রামিমের পাশে বসে বাতাস করছে আর কাঁদছে।
এ কান্নায় প্রান নেই,নিষ্প্রাণ।
রামিমের ইচ্ছা হয় তিন্নি কি করছে সেটা জানতে।
তিন্নি একবারো আসেনি তাকে দেখতে।
ডাক্তার ঔষুধ দিয়ে গেছে।
খাওয়ার পর খেতে বলেছে,
আজ মা বা কাকির হাতে খেতে ইচ্ছে করছেনা।
তিন্নির হাতে খাবে সে।
পাশের রুম থেকে তিন্নি শুনলো কথাটা।
খাবার আনলো তিন্নি।
রুমে ঢুকতেই রামিম স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো।
তবে তিন্নিকে আজ অন্যরকম লাগছে।
চোখমুখ ফুলে গেছে কিছুটা।
হয়তো ভালোবাসি বলেনি কেউই তবে কি ভালোবাসা থাকতে পারেনা দুজনের মাঝে?
রামিম কখনো বলেনি, বলেনি তিন্নিও।
তবে মনে চেপে রেখেছে অফুরন্ত ভালোবাসা।
দুজনেই জানে সত্যিটা যে তিন্নি তার আপন বোন না।
এমন কত গোধূলি গেছে,
তিন্নি রামিমের রুমের পাশে যেতেই একটা শক্ত হাত হ্যাঁচকা টান মেরে তিন্নিকে শক্তভাবে আলিঙ্গন করেছে।
কতবার ঠোঁটের খুব কাছে গিয়েও স্পর্শ করা হয়নি।
কতবার তিন্নির গরম নিঃশ্বাস রামিমের মুখের ওপর পড়েছে তার হিসেব নেই।
প্রাইভেটে পা দিয়ে পা ছোঁয়ার প্রতিযোগিতা কতবার হয়েছে তারও হিসেব নেই।
এগুলা নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
তবে ভালোবাসি বলা হয়নি কখনো।
তিন্নি রুমে ঢুকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয় রামিমকে।
ইশশ ছেলেটাকে কিভাবে মেরেছে। গালে লাল দাঁগ পড়ে গেছে। তিন্নি ছলছল চোখে বলে,
– রামিম তোর আর আমার মাঝে অনেক শক্ত একটা দেয়াল, সম্পর্কের দেয়াল। তুই আমি চাইলেও এ দেয়াল ভাঙতে পারিনা। পাগলামি করিসনা।
– তুই ভালোবাসিস না আমাকে?
দম বন্ধ হয়ে আসে তিন্নির।
কি উত্তর দিবে সে?
গল্পঃ #দেয়াল
পর্ব – ১
লেখকঃ Ramim_Istiaq