দেয়াল পর্ব ৯

#দেয়াল
পর্ব – ৯
লেখকঃ Ramim_Istiaq
.
তিন্নি সহ্য করতে পারেনা।
কয়েক ফোঁটা পানি গাল বেয়ে রামিমের ঠোঁটের ওপর এসে পড়ে।
নোনা পানির স্বাদ পায় রামিম তবে সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন এসবের কিছু মনে থাকবেনা তার।
যদি ঘুমিয়েও মানুষ দেখতে পেতো তবে লুকানোর কিছু থাকতোনা।
আপন মানুষটা যে তার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে সেটা জানা যেতো।

মাথার পাশে বসে কাঁন্না করার চাইতে মনে হয় ভালোবাসি বলাটা বেশি সহজ ছিলো।
শুধু রামিম – তিন্নি নয়, ভালো নেই এই পরিবারের কেউই। সেই হাসি – ঠাট্টা, আনন্দ কোনোটাই নেই।
মানুষগুলা কেমন যেনো মৃত। এই মানুষগুলার আচরনে পরিবর্তন এসেছে এসেছে টুনিরও।
আগের মেয়েটা অনেক দুষ্টামি করতো এখন গম্ভীর থাকে। আসলে ছোটরা বড়দের দেখেই শিখে, এই মেয়েটাই হয়তো বড় হয়ে একদিন বলবে – প্রেম ভালোবাসা ভালোনা এসব করলে মানুষ মারা যায়।
বাইরেও ভেতরেও, তারপর চশমাটা খুলে আড়ালে চোখ মুছে ভাববে রামিম আর তিন্নির কথা।

বড় আজব লাগে তাইনা?
পৃথিবীর নিয়মই এটা নাহ পৃথিবী না প্রকৃতি।

রামিমের ঘুম ভাঙে, উঠে বসে সে।
রুমটাতে একটা বাজে রকমের গন্ধ আসছে সহ্য হচ্ছেনা তবে ক্ষণিক পরেই বুঝতে পারলো তার মুখ থেকেই বেরুচ্ছে গন্ধটা।
মাথা ঝিমঝিম করা গন্ধ,মাদকতার গন্ধ এমনই।
পাশে বসে দেখে তিন্নি পাশে বিছানায় মাথা রেখে আধশোয়া অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে।
মেয়েটা তো সিগারেটের গন্ধই সহ্য করতে পারেনা এই গন্ধ কিভাবে সহ্য করছে কে জানে!
রামিম রুম স্প্রে মেরে তিন্নির গালে হাত রাখে।
একটা চুমু আজ খেতেই হবে নইলে ইচ্ছাটা অপূর্ণ থেকে যাবে রামিমের।
যদিও অবৈধ, তবে বৈধ কিছু তো কেউ মানলো না এটুকুতে ক্ষতি কি?
রামিম তিন্নির কপালে একটা চুমু খায়।
দির্ঘ একটা চুমু। দম নেয়না রামিম।
শ্বাস বন্ধ করে রাখে আর ভাবে যদি এভাবেই মৃত্যু হয়ে যেতো তবে কতইনা ভালো হতো।

দম ফুরিয়ে যায়, না চাইলেও নিশ্বাস নেওয়া হয়।
অথচ এভাবে শ্বাস বন্ধ করে শেষ নিশ্বাসটা ফেলতে পারলে সব দুঃখ ঘুচে যেতো।

রামিম ব্রাশ হাতে নেয়।
আরেকবার তিন্নির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
এ হাসি আনন্দের নয়, শত বেদনামিশ্রিত না পাওয়ার হাসি।
এ হাসি বিজয়ের নয়, কিছু মানুষের মন রক্ষার্থে পরাজয়স্বীকার করা হাসি।

ওয়াশরুমে যেতেই তিন্নি চোখ মুছে।
ঘুমায়নি সে, জেগেই ছিলো।
ভালোবাসাটা মিথ্যা নয়, মিথ্যা এই সমাজের নিয়ম।
দুটো মানুষ এতটা ভালোবাসে নিজেদের কিন্তু সমাজ?
সমাজ বলে, ভাই বোনের আবার ভালোবাসা কিসের?
পৃথিবী ধংসের সময় হয়েছে নইলে কি এসব দেখতে হয়?

কিন্তু পৃথিবীতেই যে অহরহ পরকীয়া হচ্ছে, একজনের বউ দশজনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করছে আবার একজনের স্বামিও কত মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে।
সমাজে এটা নিষিদ্ধ নয়, গোপনে সবই চলছে আর এদিকে ভাই বোন না হওয়া সত্তেও দুটো মানুষকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সাজাটা দেওয়া হচ্ছে।

তিন্নি মেয়েটার খুব ইচ্ছে হচ্ছে রামিমকে নিয়ে পালানোর।
কাল বিয়ে আজ এসব চিন্তা ভাবনা কোনোভাবেই মাথা থেকে নামাতে পারছেনা তিন্নি।
মায়া বেড়ে গেছে ছেলেটার প্রতি।
তিন্নি ভাবে শেষ মুহুর্তে একটা অলৌকিক কিছু হোক, মিলে যাক দুজনে।

রাত হয়েছে, বাড়ি ভর্তি মেহমান।
নিচে সবাই আড্ডা দিচ্ছে, কত আনন্দ করছে সবাই।
কামরুল সাহেবকে দোতলা থেকে লক্ষ্য করে রামিম।
সেও অনেক খুশি, সবার খুশি মাটি করে দিয়ে তিন্নিকে নিয়ে পালাবেনা সে।
এই পরিবারে হাসিখুশিটা বজায় থাকুক রামিম নাহয় সবার হাসির কারন হয়ে নিজে কেঁদে যাবে।
তবে এ বাড়িতে কয়েকজন মানুষের মুখে হাসি নেই,
রোস্তম মিয়া,নাজনীন বেগম আর রহিমা কাকী।

তিন্নির তো ভিষন ব্যস্ততা, শাড়ি, গহনা আর নানারকম জিনিস নিয়েই সে ব্যস্ত হয়ে গেছে।
এত মানুষের মাঝেও রামিম আজ একা।
এটাই একাকীত্ব, আশেপাশে পুরো পৃথিবী থাকতেও যখন মনে হয় আমি একা আসলে সেটাই একাকীত্ব।

খালাতো ভাই বোনেরা এসেছে।
রামিমকে জোর করে ছাদে নিয়ে গেলো।
মদ্যপান এ বাড়িতে নিষিদ্ধ নয়, কোনো বড় অনুষ্ঠানের সময় বিলেত থেকে আনানো হয় কয়েক বোতল মদ।
এবারো এসেছে তারই দু বতল নিয়ে ছাদের গেট লাগিয়ে দিলো শোভন, অনিক, রাহাত।

এই ছেলে তিনটাকে রামিমের খুব একটা পছন্দ না তবে আজ বড় আপন মনে হচ্ছে।
ওরা তিনজনে একবতল খুলে, রামিম একটা খুলে।
শোভন অবাক না হয়ে পারেনা।
আগেরবার যখন এসেছিলো তখন হাফ গ্লাস খাওয়ার আগেই পড়ে গিয়েছিলো রামিম।
আজ পুরো বোতল খুলে নিলো।

ওসব ভাবার সময় নেই নেশার জিনিস সামনে রেখে এতকিছু ভাবতে হয়না।
সব ভাবনা দুর করার জন্যই তো এসব।

গুড়গুড় করে মেঘ ডাকে।
হঠাৎ বৃষ্টি নামলে ভালোই হয় রামিম ছেলেটার চোখের পানি কেউ দেখবেনা।
মাথা ভারি হয়ে আসে চারজনের।
ছাদে চার হাত পা ছড়িয়ে চার জন চারদিকে শুয়ে আছে আর মনের অব্যক্ত কথাগুলো গড়গড় করে বলে যাচ্ছে একেকজন।
নেশার ঘোরে মানুষ সত্য কথা বলে তবে সকাল হলে এসব কিছু কারোরই মনে থাকবেনা।

সকাল হয়, রন্টি মামা বউ সহ এসেছে।
রামিম আরেকবার কামরুল সাহেবের দরজায় কড়া নাড়ে।
হাসিমুখে দরজা খুলে দেয় কামরুল সাহেব,

– কিছু লাগবে?
– বাবা,
– হ্যা বল।
– আমার তিন্নিকেই চাই।
পায়ে ধরে ফেলে রামিম।
আজ না হলে কোনোদিন নয়।
– বাবা দুইটা মানুষের জিবন নষ্ট করে দিয়োনা, তিন্নি কখনো ভালো থাকবেনা আমাকে ছাড়া।

কামরুল সাহেব রাগান্বিত কন্ঠে জবাব দেন,
– তিন্নি কখনো বলেছে তোকে? ও আমার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করবে আর সুখেই থাকবে।
– তিন্নি বলেনি তবে,
– পা ছাড়, এটা কখনো সম্ভবনা।

তিন্নি এসে দাড়ায় কামরুল সাহেবের পাশে।
সেও জবাব দেয়,
– রামিম এসব পাগলামি করে লাভ নেই আমি তোকে ভাইয়ের মতই দেখেছি সবসময়। বিয়েটা ভাঙিসনা, আমি হাতজোর করছি তোর কাছে।

অবাক হওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকেনা রামিমের।
যার জন্য নিজের আত্নসম্মান জেদ সব ভুলে এসে দাড়ালো সেই বললো ভাইয়ের মতো আর কিছু বলার থাকতে পারেনা তার।

তিন্নি বেশিক্ষণ দাড়ায়নি সেখানে কথাটা বলেই রুমে চলে গেছে।
আজ কাঁন্না করার উপায় নেই বাড়ি ভর্তি মানুষ।
কিছুক্ষণ পর হয়তো ছেলেপক্ষের লোকও চলে আসবে।

হতে পারে কিছু মানুষের জিবনের সমাপ্তি আজই।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here