#দ্বিতীয়_বসন্ত
#পর্বঃ০৪
#Arshi_Ayat
কাঁচের স্বচ্ছ জানালা দিয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই কতোগুলো পাইন গাছ,দু’টো জোড়া রাধাচূড়া আর কয়েকটা নারকেল গাছ দেখা যাচ্ছে।সবচেয়ে কাছের নারকেল গাছটায় একটা কাকের বাসা দেখা যাচ্ছে।বাসাটা খালি।দৃষ্টিটা আরেকটু প্রখর করতেই অদূরে কয়েকটা পুরোনো বাড়িও লক্ষ্য করা যায়।এরমধ্যে একটা বাড়ি একতলা বাকিগুলো তিন,চার তলা সামনে কয়েকটা টিনের ঘরও দেখা যাচ্ছে।তবে রাস্তাটা দেখা যাচ্ছে না।দৃষ্টিটা ঘুরতে ঘুরতে আকাশে গিয়ে ঠেকলো।আজ আকাশ পরিষ্কার,পরিচ্ছন্ন।বৃষ্টির ‘ব’ ও নেই।একটি রৌদ্রময় দিন।সূর্য মাথার ওপর আজ চড়াও হয়ে উঠেছে।নিজের বিছানা থেকে অহি সামনের জানালা দিয়ে এতক্ষণ এগুলোই পর্যবেক্ষণ করছিলো।হঠাৎ তার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে অহর্নিশ ঘরে এসে বলল,’অহি,আমি হাসপাতালে যাচ্ছি।আপনার কিছু প্রয়োজন পড়লে আম্মুকে বা মনিষার মা কে বলবেন।’
অহর্নিশের কথাগুলো শুনলেও অহি অহর্নিশকেই লক্ষ্য করছিলো।দেখতে সুপুরুষই বটে,চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ।ফর্মাল পোশাকে আরো সুন্দর লাগছে।কিন্তু সে হাসপাতালে যাবে কেনো?অহির মনে কৌতুহল জাগলো।কৌতুহল চেপে রাখা বড় দায়!তাই অহি জিগ্যেস করেই ফেললো,’আচ্ছা আপনি হাসপাতালে যাচ্ছেন কেনো?’
অহর্নিশ ঠোঁট প্রশস্ত করে হেসে বলল,’আমি ডাক্তার।আর রবিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে আমার ডিউটি আছে তাই আমাকে এই সময়টায় রোজই আমাকে হাসপাতালে যেতে হয়।’
‘ওহ!আবার আসবেন কয়টায়?’
‘সন্ধ্যা সাতটার মধ্যেই চলে আসবো।’
‘আচ্ছা।’
‘জ্বি,আর শুনুন আপনার বোধহয় বিরক্ত লাগতে পারে একা বসে থাকতে।তাই আমার ট্যাব টা দিয়ে গেলাম।যেকোনো মুভি,ড্রামা বা অন্যকিছু দেখতে পারেন।’
অহর্নিশ অহিকে নিজের ট্যাবটা দিয়ে দিলো।অহি ডানহাতে সেটা রাখলো।ডান হাত ছাড়া শরীরের আর কোনো অঙ্গই ও নাড়াতে পারে না।খুব অসহায় লাগে নিজেকে!
অহির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অহর্নিশ চলে গেলো।ও চলে যেতেই অহি আবারও বাইরের দিকে তাকালো তবে এবার আর বাইরের কিছুতেই ওর মনোযোগ নেই এবার ও ভাবছে নিজের কথা।কে ও?কোথা থেকে আসলো?আর এই ছেলেটাই বা এতো সেবা করছে কেনো ওর?এসব কিছুই ভাবছে অহি কিন্তু এসব ভাবনার কোনো আদি বা অন্ত নেই।
জৈষ্ঠ্যমাসের দুপুরের কড়া রোদে মানুষের প্রাণ জেরবার হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।যেনো সূর্য মাথার এক হাত ওপরে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে।এসির মধ্যেও গরম লাগছে অহর্নিশের।মাত্রই বায়ান্ন নাম্বার ওয়ার্ডের রোগীকে চেক-আপ করে নিজের কেবিনে ফিরলো।গদিতে আরাম করে বসে মা’কে ফোন দিলো।দু তিন বার ফোন হতেই মিসেস অনামিকা রিসিভ করলো।
‘হ্যালো মা,খেয়েছো তোমরা?’
‘হ্যাঁ তুই খেয়েছিস?’
‘না এখন খাবো।শোনো অহিকে খাবার দিয়েছো?’
‘অহিকে?’কিছুটা উৎসুক্য হয়ে বললেন মিসেস অনামিকা।
‘আরে ওই যে অচেনা মেয়েটা!ওর নাম অহি দিয়েছি।যেহেতু ওর কিছু মনে পড়ছে না সেহেতু এখন ডাকার জন্য আপাতত এই নামটাই রেখেছি।’
‘ওহ!হ্যাঁ তোমার অহিকে খাবার দেওয়া হয়েছে।’মিসেস অনামিকার গলায় তাচ্ছিল্যের ভাব স্পষ্ট।
অহর্নিশ সেটা বুঝেও কিছু বলল না।মিসেস অনামিকাই আবার বললেন,’শোনো অহর্নিশ এবার একটু অতি পরোপকারী ভাবটা বাদ দাও।দু’দিন বাদে তোমার বিয়ে দিবো আমরা।নিজেকে গোছাও।’
‘মা দয়া করে এখন বিয়ে বিয়ে করে মেজাজের হালুয়া করে দিও না।আমার যখন মনে হবে বিয়ে করা প্রয়োজন আমি তোমাদের বলবো।আর সবে মাত্র একবছর হলো জয়েন করেছি।এখনই এতো প্যারা দিও না।’
‘আচ্ছা যা ভালো বোঝো করো কিন্তু পরে যেনো আফসোস না হয়।আর জলদি খেয়ে নিও।’
‘আচ্ছা।’
বলেই অহর্নিশ ফোনটা রেখে দিলো।প্রতিদিন এসব কথা শুনতে শুনতে প্রায় বিরক্ত সে।তবুও ওর বিরক্তিটা কারো চোখেই পড়ে না সবাই নিজেরদের মতো প্যারা দিয়েই যাচ্ছে।অহর্নিশ বিড়বিড় করতে করতে খাওয়া শুরু করলো।
ডান পাশে কাত হয়ে অহি শুয়ে আছে না ঘুমিয়ে আছে একটু আগে দুপুরের খাবার খেয়েই ঘুমিয়েছে।খাবারটা মনিষার মা খাইয়ে দিয়েছে।যাবার সময় অবশ্য অহর্নিশ ওকে বলে গিয়েছিলো।অহর্নিশ যাবার পর একবার মনিষার মায়ের সাহায্যে ওয়াশরুমে গিয়েছিলো অহি।তারপর আবার ওনার সাহায্যেই বিছানায় এসেছে।এই বাড়িতে অহর্নিশ আর এই মনিষার মা’কেই দেখেছে অহি ও হ্যাঁ সকালে একবার অহর্নিশের মাও এসেছিলেন তবে এরপর আর তার ছায়াও পড়ে নি এ ঘরে।
অহি মনোযোগ সহকারে একটা উপন্যাস পড়ছিলো অহর্নিশের ট্যাব থেকে।ও এতোটাই মনোযোগী ছিলো যে কখনো অহর্নিশ এসে পাশে বসেছে সেদিকে খেয়াল নেই।হঠাৎ পড়তে পড়তেই খেয়াল হলো পাশে কারো উপস্থিতি।বই থেকে চেখ তুলে তাকাতেই দেখলো অহর্নিশ স্মিত হেসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।ওকে হাসতে দেখে অহি জিগ্যেস করলো,’হাসছেন কেনো?’
‘আপনার মনোযোগ দেখে।প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে আমি বসে আছি আর আপনার এখন খেয়াল হলো।’
অহর্নিশের কথা শুনে অহি একটা লজ্জা পেয়ে বলল,’আসলে উপন্যাসের ক্লাইমেক্সে ছিলাম তো তাই খেয়াল করি নি!’
‘তাই!আচ্ছা কোন উপন্যাস পড়ছেন।একটু নামটা বলুন।’
‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সোনালী দুঃখ।’
‘বাহ!তো এখন কাহিনির কোথায় আছেন?’
‘একটা ক্রিটিকাল জায়গায় আছি।ত্রিস্তানের অসুখ হয়েছে এখন কি রাজকুমারী সোনালী আসবে না ওর কাছে?জানেন আমার এই জায়গায় খুব খারাপ লাগছে।যদি রাজকুমারী সোনালী না যায়?
‘কি মনে হয় যাবে?’অহর্নিশ অহির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।
‘জানি না।ভালোবাসা সত্যি হলে যাবেই।’অহি দৃড়কন্ঠে বলল।
‘আর যদি না যায় তাহলে কি ভালোবাসা সত্যি না?’
অহি মরিয়া হয়ে বলল,’প্লিজ এভাবে বলবেন না।’
‘আচ্ছা বলবো না।পরে কি আমাকে জানাবেন কিন্তু!’
‘আচ্ছা।’
এরপরই কিছু একটা মনে হতেই অহি আবার জিগ্যেস করলো,’আপনি কখন এলেন?’
‘এইতো পনেরো মিনিট হয়েছে।’
‘ওহ!’
‘হ্যাঁ।আপনার জন্য একটা জিনিস এনেছি।’
‘কি?’
অহর্নিশ অহিকে অপেক্ষা করতে বলে নিজের ঘরে গেলো।পাঁচ মিনিট পর একটা দু’টো ক্রাচ নিয়ে এসে বলল,’এখন থেকে এগুলো তে ভর দিয়ে অল্প অল্প করে হাটার চেষ্টা করতে হবে।প্রতিদিন হাঁটলেই আপনি আবার আগের মতো হাটতে পারবেন।’
‘কিন্তু আমি তো।হাত পা ই নাড়াতে পারি না।’
‘পারবেন।চেষ্টা করলে সবই সম্ভব।’
অহর্নিশ ক্রাচগুলো দেয়াল সাথে দাড় করিয়ে রেখে অহির পাশে গিয়ে বসল।তারপর বলল,’এখন থেকে আমরা সন্ধ্যার ব্যায়াম করবো আর সকালে হাঁটতে বের হবো।’
‘আচ্ছা।’অহি সৌজন্য হেসে জবাব দিলে।
‘তাহলে এবার শুরু করা যাক।’
এটা বলেই অহর্নিশ অহির বাম হাত মুভ করানো শুরু করলো।হাতের কব্জিতে হালকা একটু চাপ দিলেই অহি ব্যাথায় চোখ মুখ খিঁচে ফেলে।অহর্নিশের খারাপ লাগে তবুও স্বাভাবিক হতে হলে এগুলো সহ্য করতেই হবে।ঘন্টাখানেক হাতের ব্যায়াম করে।রাতের খাবার খাইয়ে অহির ঔষুধগুলো খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেতে গেলো।খাওয়া শেষ করে নিজের ঘরে গিয়ে অহির লকেট’টা সাথে নিয়ে আবারো অহির ঘরে গেলো।অহি এখনো ঘুমায় নি চুপচাপ শুয়ে ছিলো অহর্নিশকে দেখে উঠতে নিলেই ও থামিয়ে দিয়ে বলল,’ওঠা লাগবে না।’
এটা বলেই অহির লকেট’টা ওর হাতে দিয়ে বলল,’দেখো তো কিছু মনে পড়ে কি না।’
অহি লকেট’টা হাতে দিয়ে দেখলো লকেটের একপাশে ওর ছবি আরেকপাশে একটা মহিলার ছবি।অহি চোখ বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করলো।কিন্তু না আবদ্ধ চোখের নিচে সবই অন্ধকার।কিছুই দেখা যাচ্ছে না।অহি চোখ খুলে ফেললো।চিন্তিত মুখে বলল,’না আমার কিছুই মনে পড়ছে না।’
‘সমস্যা নেই।আস্তে আস্তে মনে পড়বে।এতো চাপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’
অহি কিছু বলল না।লকেট’টা অহর্নিশকে দিয়ে দিলো।ক্রমশ চিন্তারা দলা পাকিয়ে মেঘের মতো কুন্ডলী করে মাথার চারদিকে ঘুরছে।নিজেকে নিজেই চিনতে না পারাটা কতোটা যাতনার সেটা অহি বুঝতে পারছে।
অহি ঘুমিয়ে গেছে ভেবে অর্হনিশ লাইট বন্ধ করে চলে গেলো।অহর্নিশ চলে যেতেই অহি আবারও চোখ খুললো।অন্ধকারে চোখ মেলেই শুধুই অন্ধকার দেখলো।
—————-
ভোর ছয়টা বাজে।অহর্নিশ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর জগিং স্যুট পরে অহির ঘরে আসতেই দেখলো অহি বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে।অহর্নিশ ঘরে এসেই বলল,’আরে!তুমি কখনো উঠলে?’
‘এই তো পাঁচ/সাত মিনিট হবে।’স্নিগ্ধ হেসে জবাব দিলো অহি।
‘আচ্ছা তাহলে ফ্রেশ হয়ে চলো আমরা বের হই।’
অহি মাথা নেড়ে সায় দিলো।অহর্নিশ ওকে উঠতে সাহায্য করলো।বলতে গেলে অহির শরীরের প্রায় সমস্ত ভরই অহর্নিশের হাতে।অহির ডান হাতে একটা স্কেচ দিয়ে বাম হাতটা অহর্নিশ নিজের কাধে নিয়ে একহাতে অহির কোমর চেপে ধরলো।
#দ্বিতীয়_বসন্ত
#পর্বঃ০৫
#Arshi_Ayat
অহর্নিশদের বাড়ি থেকে বের হতে কয়েকটা গলি পড়ে।গলিগুলোর অবস্থা তেমন ভালো না।দুর্বোদ্ধ চক্রগ্রহের মতো গলি,ক্ষয়ে যাওয়া,রংচটা সারি সারি একতলা দু’তলা বাড়ি।এই গলিগুলো পেরিয়েই সুন্দর একটা রাস্তা পাওয়া গেলো।মাটির রাস্তা,দুপাশে পুকুর আর গাছপালার বেশ চমৎকার লাগছে পরিবেশটা।গাছে গাছে দু’একটা শালিক,কাকাতুয়াও দেখা যাচ্ছে।একদম সকাল হওয়ায় মানুষজনও নেই।অহিকে সামলাতে অহর্নিশের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।একটা মেয়েকে হাটাতে এতো কষ্ট!প্রায় অনেক কষ্টে বাড়ি থেকে কিছুটা দূর এনেছে অহিকে।তাতেই অহির অবস্থা কাহিল।বারবারই বসে পড়তে চায়।অহর্নিশ অহির কষ্ট হচ্ছে দেখে ওকে একটা গাছের গোড়ায় পা দুটো লম্বা করে বসিয়ে দিলো।তারপর বলল,’খুব কষ্ট হচ্ছে?’
‘হ্যাঁ।অনেক!’দাঁত মুখ খিচে।ডান হাত দিয়ে পায়ের ওপর হাত বুলাতে বুলাতে বলল অহি।
‘আচ্ছা।একটু জোরে জোরে শ্বাস নাও।আর পানি খাও।’
অহর্নিশ পকেট থেকে একটা ছোটো বোতল বের করে দিলো।আসার সময় সে এটা পকেটেই নিয়ে এসেছিলো।অহর্নিশের কথা মতো একটু পানি খেয়ে আর একটু স্বাভাবিক হয়ে বলল,’এবার বাসায় ফিরে যাই।আর এগুলে বোধহয় ফিরতে পারবো না।’
‘হ্যাঁ আমরা বাসায়ই ফিরবো।তুমি আরেকটু বসো।’
আরো কিছুক্ষণ বসার পর আবারো ওরা চলতে শুরু করলো কিন্তু একটু যেতেই অহি পড়ে যেতে নিলো।অহর্নিশ শক্ত করে ধরে ফেললো ওকে।অহি হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,’আমি আর পারবো না।ভিষণ কষ্ট হচ্ছে আমার।’
অহর্নিশ উপায়ন্তর না পেয়ে ক্রাচ গুলো মাটিতে রেখে অহিকে কোলেই নিয়ে নিলো।অহর্নিশের এহেন কান্ডে অহি দুইমিনিট তব্দা মেরে রইলো।ওই দু’মিনিট অহর্নিশ চলতে শুরু করে দিয়েছে।আকষ্মিকতার রেশ কাটিয়ে অহি বলল,’একবারে কোলেই নিয়ে নিলেন?’
‘কি করবো বলুন?এছাড়া উপায়ও নেই।’
অহি এবার খানিকটা রসিকতা করে বলল,’আপনার বউ কিন্তু রাগ করবে।’
অহির কথা শুনে অহর্নিশ একবার অহির দিকে তাকালো।তারপর ঠোঁট প্রশস্ত করে হেসে বলল,’নাহ!রাগ করবে না।একটা অসুস্থ মানুষকে সাহায্য করছি।এতে রাগের কিছু নেই।আর এমনিতে তাকে তো প্রতিদিনই কোলে নিবো তারটা মিস হবে না।তাই সে রাগ করবে না।’
অহর্নিশের কথা শুনে অহি কিছুটা উচ্চ স্বরেই হাসলো।হাসির দমক কমে আসতেই বলল,’বাহ!আপনি তো দেখছি দারুণ রোমান্টিক।তা বিয়ে শাদী করবেন কবে?’
‘আপনি পাত্রী রেডি করতে পারলে আজকেই করবো।’
অহি আবার হাসলো।সারাটা পথ দু’জনে হাসি,ঠাট্টা করতে করতেই আসলো।কিন্তু বাড়ির সামনে আসতেই সতর্ক হয়ে গেলো দুজনেই কিন্তু বিপত্তি আরেক জায়গায় বসার ঘরে যদি এখন অহর্নিশের বাবা অথবা মা থাকে এবং তাদের সামনে দিয়েই অহিকে কোলে নিয়ে যেতে তাহলে প্রচুর লজ্জায় পড়তে হবে কিন্তু এছাড়া উপায় কি!
অহর্নিশ দরজার সামনে এসে দেখলো দরজা খোলা আর ভেতরে পূর্ব চৌধুরী আর মিসেস অনামিকা চা পান করছে আর কথা বলছে।অহর্নিশ পা দিয়ে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকতেই বাবা মা দুজনই ওর দিকে এমন ভাবে চাইলো যেনো কোনো পাপা কর্ম সম্পাদন করে মাত্রই ঘরে ফিরেছে।কোনোমতে বাবা মায়ের চাহনী উপেক্ষা করে অহর্নিশ দ্রুত অহির ঘরে চলে গেলো।ঘরে এসে ওকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল,’আপনি থাকুন।আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।’
এটা বলেই ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলো অহর্নিশ।অহি পা গুলোতে হাত বুলাতে বুলাতে অপেক্ষা করতে লাগলো।অপেক্ষার প্রহর বেশি লম্বা হলো না অহর্নিশ তাড়াতাড়িই ফিরলো ওর হাতে অহির ক্রাচ দু’টো।এবার অহি বুঝলো অহর্নিশ কোথায় গিয়েছিলো।ক্রাচ দুটো দেয়ালের সাথে লাগিয়ে রেখে অহর্নিশ বলল,’আমি মনিষার মা’কে বলে দিচ্ছি আপনাকে রেডি করে দিতে।আমরা আজকে হসপিটালে যাবো।’
‘কেনো?’
‘আপনাকে থেরাপি দিতে হবে।আমাকে কালকে ফিজিওথেরাপিস্টের সাথে কথা হয়েছে।তোমার হাত পায়ে দু’দিন অন্তর অন্তর থেরাপি দিতে হবে।সাথে ব্যায়ম আর প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটলে এক দেড় মাসেই পুরোপুরি সুস্থ হতে পারবে তবে এটার পরিশ্রম আর ধৈর্য থাকতে হবে।’
‘আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো।’
‘গুড।আচ্ছা আমি রেডি হয়ে আসছি।’
বলেই অহর্নিশ চলে গেলো।অহর্নিশ যাওয়ার পাঁচমিনিট পরই মনিষার মা আসলো অহিকে রেডি করতে।
নিজের ঘরে চা খেতে খেতে ফোন দেখছিলো অহর্নিশ।পূর্ব চৌধুরী তখনই রুমে আসলেন।বাবাকে দেখে অহর্নিশ ফোনটা রেখে ওনার দিকে তাকয়।কারণ ভাবভঙ্গিই বলে দিচ্ছি সিরিয়াস কিছু বলতে এসেছে এবং সেটা যে অহিকে নিয়েই তা আর বলতে!কিন্তু না অহর্নিশের ধারণাকে চুরমার করে পূর্ব চৌধুরী বললেন,’অহর্নিশ মাস ছয়েক পর সেঁজুতি আর ওর মা বাবা আসবে বাংলাদেশ থেকে।’
‘কেনো?’
‘কেনো মানে?তোমাদের বিয়ের কথা বলতে।’
‘কিন্তু আমি তো সেঁজুতিকে বিয়ে করবো না।’অহর্নিশ কাটকাট গলায় বলল।
‘কেনো?কি সমস্যা?সেঁজুতি ভালো মেয়ে,বংশমর্যাদাও আমাদের সমপর্যায়ী।তোমার মায়ের,আমার দু’জনেরই সেঁজুতিকে পছন্দ।’
‘কিন্তু আমার তো পছন্দ না বাবা।’
‘তোমার কি কোনো পছন্দ আছে?’পূর্ব চৌধুরী সরাসরিই প্রশ্ন করলেন।
‘না।’সংক্ষিপ্ত এই জবাবটা দিয়েই অহর্নিশ উঠে দাড়ালো।পূর্ব চৌধুরী গম্ভীর স্বরে বললেন,’তাহলে আমাদের পছন্দে বিয়ে করতে সমস্যা কি?তোমার তো নিজের পছন্দও নেই।’
অহর্নিশ শেষের কথাগুলোর উত্তর না দিয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
অহি রেডি হয়ে বিছানাতেই বসে ছিলো।অহর্নিশ ঘরে এসে বলল,’সব কাজ শেষ?’
‘হ্যাঁ শেষ।’
অহর্নিশ আর অহি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বের হলো।
অহিকে থেরাপি দিয়ে নিজের চেম্বারে নিয়ে আসলে অহর্নিশ। নিজের গদিতে বসিয়ে পা দু’টো উচু একটা টুলে রাখলো।তারপর নিজেও একটা পেশেন্টের চেয়ারে বসলো।এরইমধ্যে চা চলে এলো।অহর্নিশ আসার সময় চায়ের কথা বলে এসেছিলো।একটা কাপ অহিকে দিয়ে বলল,’চা টা খেয়ে আমরা বের হবো।আপনাকে বাসায় দিয়ে আমি আবার চলো আসবো।’
অহি কিছুটা মন খারাপের গলায় বলল,’আমার জন্য আপনাকে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে।’
‘এটা আমার দায়িত্ব আর এটাই পেশা।’
চা শেষ করে অহর্নিশ অহিকে বাসায় নিয়ে এলো।তারপর আবার হাসপাতালে চলে গেলো।
এভাবেই দিনগুলো কাটছে।আস্তে আস্তে অহি সুস্থ হয়ে উঠছে।এখন নিজে নিজেই হাঁটাচলা করতে পারে কিন্তু কষ্ট হয় অনেক!তবুও যে পারছে এটাই বেশি!সপ্তাহে তিনবার নিয়ম করে অহর্নিশ থেরাপি দিতে নিয়ে যায়।প্রতিদিন ব্যায়াম আর সকালে হাটাহাটি তো আছেই।তবে ব্যাপারগুলো ভালো লাগছে না অহর্নিশের বাবা মায়ের।ছেলে একটা নাম,পরিচয়হীন মেয়ের পিছনে ঘুরছে বিষয়টা ভালো লাগার মতোও নয়!
আজ রবিবার।বন্ধের দিন।সারা সপ্তাহের মধ্যে এই দিনটায় কেবল একটু আরাম আয়েশ করা যায় কিন্তু আজ তাও করা যাবে না।অহর্নিশের ছোট ফুপুর বাড়ি জলপাইগুড়ি।ওনারা আজ ওদের দাওয়াত দিয়েছে।খুব করে বলে দিয়েছে যেনো অহর্নিশও আসে।কিন্তু কাল রাত থেকে অহির জ্বর তাই অহর্নিশ যেতে নারাজ।তবে বাসায় থাকলে বাবা মায়ের জোরাজোরি তে যেতে বাধ্য!তাই চালাকি করে জরুরি কাজের কথা বলে সকাল সকালই বেরিয়ে পড়লো সে।
ছেলেকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ওনারা একাই চলে গেলেন।এদিকে বাবা মা যাওয়ার পর অহর্নিশ আবার বাসায় চলে এলো।অহির রুমে এসে দেখলো মেয়েটা ঘুমাচ্ছে।আজকে আর হাঁটতে যাওয়া হলো না।কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে তবে এখন কম।অহর্নিশ আদুরে কন্ঠে ডাক দিলো,’অহি,উঠুন।সকাল হয়ে গেছে।আপনার ঔষধ খেতে হবে।’
অহি নড়াচড়া করে পিটপিট করে চোখ খুলে একবার অহর্নিশের দিকে তাকিয়ে আবার ঘুমিয়ে গেলো।অহি কান্ড দেখে অহর্নিশ হেসে ফেললো।এবার অহির হাত ধরে বলল,’অহি,এবার উঠে পড়ুন।খেয়ে আবার ঘুমাবেন।’
হাই তুলতে তুলতে অহি উঠলো।তারপর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে ঔষধ খেয়ে বিছানায় এসে বসলো।অহর্নিশও আসলো থার্মোমিটার নিয়ে।থার্মোমিটারে চেক করে দেখতে পেলো এখন জ্বর নেই।অহর্নিশ বলল,’আবার ঘুমাবেন?শরীর দুর্বল লাগছে?’
‘না ঘুম আসছে না।আপনি যান নি আপনার ফুপুর বাসায়?’
‘না।আমি গেলে আপনার খেয়াল রাখবে কে?আপনাকে একা রেখে যাওয়া সম্ভব না আমার পক্ষে।’
‘তবুও আপনার বাবা মা কিন্তু রাগ করলো।যাওয়া উচিত ছিলো আপনার।’
‘সমস্যা নেই।কাল একবার গিয়ে আসবো।’
কিছুক্ষণ গল্প করে অহর্নিশ আর অহি হাঁটতে বের হলো।একটু কষ্ট হলেও অহি এখন নিজে নিজেই হাঁটতে পারে তবে আস্তে আস্তে হাঁটতে হয়।অহর্নিশও অহির সাথে আস্তে আস্তেই হাঁটে।
ঘন্টাখানেক হেঁটে ওরা বাসায় ফিরলো।আজ মনিষার মা আসে নি।বাবা মা ও বাসায় নেই।রান্নাবান্নাও হয় নি।তাই অহর্নিশ ঠিক করলো আজ ও রান্না করবে।অহিকে জিগ্যেস করলো,’কি খাবেন বলুন।আজ আমি রান্না করবো।’
অহি একটু হেসে বলল,’আপনি রান্না পারেন?’
‘হ্যাঁ।যখন হোস্টেলে বন্ধুদের সাথে থেকেছি তখন বুয়া সপ্তাহে ২ দিন আসতো না।আর ওদিকে বুয়া পাওয়াও যেতো না।তাই আমরা কয়েকমাস বুয়া রেখে পরে বাদ দিয়ে দেই।পাঁচ বন্ধু ছিলাম।ক্লাস শেষ করে এসে পাঁচজনেই রান্নার কাজ করতাম।দুজনে কাটতো,দুজনে রাঁধত,আর একজন মশলাপাতি, বাসনকোসন ধুয়ে দিতো।তো এভাবেই আমরা সবসময় রান্না করে খেয়েছি।ওই সময় থেকেই রান্না করতে পারি।’
‘বাহ!তাহলে তো খেতেই হয়।ডাক্তার যখন শেফ!’এটা বলেই অহি হাসলো।আর অহির হাসির সাথে অহর্নিশও যোগ দিলো।তারপর দুজনে মিলে ঠিক করলো আজ খিচুড়ি হবে।ভুনা খিচুড়ি!অহি কাজ না করলেও কিচেনে একটা চেয়ারে বসে অহর্নিশকে সঙ্গ দিয়েছে।কখনো কথা বলে বা কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করে আবার কখনো দুজনেই গলা ছেড়ে গান গেয়ে।গান গাইতে গিয়ে অহর্নিশ বুঝলো অহির গলা ভালো।গান ভালো গাইতে পারে।মোটামুটি রান্না শেষের দিকে।অহর্নিশ এক চামচ নিয়ে অহির সামনে ধরে বলল,’দেখুন তো কেমন হয়েছে?’
অহি খেয়ে মুগ্ধ নয়নে অহর্নিশের দিকে চেয়ে রইলো।অহর্নিশ কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,’খারাপ হলো?’
‘আরে না!এত্তো ভালো হইছে!কি বলবো!আমার মনে হয় না এতো ভালো রান্না আমি কখনো খাইছি।’
অহর্নিশ একটু লজ্জা পেয়ে হেসে বলল,’ধন্যবাদ।’
‘আমার এখন হিংসা হচ্ছে খুব।’
‘কেনো?’অহর্নিশের গলায় কৌতুহল।
‘এই যে আপনি এতো সুন্দর রান্না পারেন।আপনার বউ তো সোনায় সোহাগা!ওর আর রান্না না পারলেও চলবে।যার স্বামী এতো ভালো রান্না পারে তার আর কি লাগে!’
অহর্নিশ হেসে বলল,’আমার বউ রান্না না পরলে সমস্যা নেই।শিখিয়ে দিবো।মাঝেমধ্যে আমিও রান্না করবো।প্রচলিত একটা রীতি না ছাই আছে যে পুরুষদের নাকি রান্না করা মানায় না।হেন!তেন!আরো কতোকিছু।কিন্তু আমার মনে হয় রান্না একটা আর্ট।যা সবাই পারে না।’
অহি অহর্নিশের কথায় আরো একবাট মুগ্ধ হলো।ওর বলতে ইচ্ছে হলো,’আপনার কথাগুলোও একটা আর্ট।এতো সুন্দর করে বলেন কি করে!’
কিন্তু মনের কথাগুলো মনেই রেখে দিলো।থাক অন্য একদিন বলা যাবে।
দুপুরে জমপেশ খাওয়া দাওয়া হলো।খাওয়া শেষে অহি বলল,’আপনাদের ছাঁদে যাওয়া যায় না?’
‘হ্যাঁ যায় তো!আপনি যাবেন?’
‘হ্যাঁ একটু দেখার ইচ্ছে ছিলো।’
‘আচ্ছা তবে চলুন।’
অহর্নিশ আর অহি ছাদে যাওয়ার জন্য সিড়িতে উঠতেই অহি ‘আহ!’ করে একটা মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠলো।অহর্নিশ চিন্তিত হয়ে বলল,’কি হয়েছে অহি?’
‘রগে টান পড়েছে।ব্যাথা করছে ভিষণ।’
অহর্নিশ দ্বিতীয়বারের মতো আবারও আচমকাই কোলে নিলো অহিকে আর অহিও দ্বিতীয়বারের মতোই চমকে গেলো।ছাঁদে এনে অহিকে দোলনায় বসিয়ে দিলো।তারপর ওর পায়ের কাছে বসে বলল,’এখনো ব্যাথা করছে?’
‘না এখন করছে না তেমন।’
‘হয়তো!উঁচুনিচু একটু সমস্যা হবে।সিড়িতে একটু দেখেশুনে হাটবেন।’
‘আচ্ছা।কিন্তু আমি বুঝলাম না আমি কি এতোই পাতলা যে আপনি আমাকে হুটহাট কলে নিয়ে ফেলেন।আপনার কষ্ট হয় না?’
অহির কথা শুনে অহর্নিশ একটু উচ্চ স্বরেই হাসলো।হাসির গতি কমতেই বলল,’আপনার ওজন কতো হবে বড়োজোর ৪৫ কেজি।এর বেশি হবে না।আর ৪০ কেজি একটা চালের বস্তা হয়।আগে যখন পড়াশোনা করতাম তখন বাসায় চালের বস্তা গলির মুখ থেকে আমাকেই আনতে হতো।কারণ গলিতে রিকশা আসতো না।৪০ কেজির বস্তা আনতে পারলে ৪৫ কেজির মেয়ে উঠানো কোনো ব্যাপারই না।’
এবার অহি খিলখিলিয়ে হাসলো।অহির হাসির সাথে অহর্নিশের হাসিও যোগ হলো।
অহর্নিশদের ছাঁদে বিভিন্ন জাতের গোলাপ আছে।এগুলে সব অহর্নিশের লাগানো।গোলাপ ছাড়াও রক্তজবা,বেলি,রজনী,করবী,ডালিয়াসহ বিভিন্ন জাতের ফুল আছে।অহি ফুলগুলো দেখতে দেখতেই একটা গোলাপ ফুলে চোখ আটকে পড়লো।অর্ধ পরিস্ফুটিত গোলাপটা যেনো অহির দিকেই চেয়ে আছে।অহি অহর্নিশকে ডেকে বলল,’আপনার গাছ থেকে একটা গোলাপ নিতে পারি?’
‘জ্বি অবশ্যই।কোনটা চাই আপনার?’
‘ওই যে ডান পশের কোণায় আধফোটা গোলাপটা।ওটাই লাগবে।’
অহর্নিশ গোলাপটা নিয়ে আসলো।কিন্তু অহির হাতে দিলো না।বলল,’এটা আপনার খোঁপায় সুন্দর লাগবে।’
‘কিন্তু আমি তো খোপা করতে পারি না।’
‘আমি পারি।মাঝেমধ্যেই আম্মুর খোপা করে দেই আমি।’
‘আচ্ছা তাহলে আপনি খোঁপা করে।খোপায় ফুলটা গুঁজে দিন।’
অহর্নিশ অনুমতি পেয়ে অহিকে খোঁপা করে দিয়ে।খোঁপা ফুলটা গুঁজে দিলো।সামনে থেকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে অহিকে।অহর্নিশ অহির কয়েকটা ছবি তুলে ফেললো।অহি নিজেও নিজের ছবিগুলো দেখে মুগ্ধ হলো আসলেই সুন্দর লাগছে।
সন্ধ্যার সময় আস্তে আস্তে অহর্নিশের হাত ধরে অহি ছাঁদ থেকে নামলো।এখন কোনো সমস্যা হয় নি।অহিকে নিজের রুমে দিয়ে এসে হোটেলে সন্ধ্যার নাস্তা অর্ডার করে দিলো।
নাস্তা আসতে আসতে অহর্নিশ অহিকে ব্যায়াম করাতে লাগলো।প্রায় দেড় ঘন্টা ব্যায়াম করার পর আজকের মতো সমাপ্ত হলো।এরফাকেই নাস্তা ডেলিভারি দিয়ে গেছে।নাস্তা করতে করতেই অহর্নিশের কল এলো।ওর এক বন্ধু ফোন দিয়েছে।জরুরি কথা আছে নাকি!এখনি দেখা করতে হবে।অহর্নিশ অহিকে বলে বাইরে চলে গেলো।ও বেরুনোর তিন/চার মিনিট পরই কলিং বেল বাজতেই অহি কষ্ট করে দরজা খুললো।অহর্নিশের বাবা মা এসেছে।মিসেস অনামিকা বাসায় এসেই অহিকে জিগ্যেস করলেন,’অহর্নিশ আসে নি এখনো?’
অহি পড়ে গেলো বিপাকে।কি বলবে?মিথ্যা বলবে নাকি সত্যি?এখন তো অহর্নিশও বাসায় নেই।অহি এগুলো ভাবতে ভাবতেই পূর্ব চৌধুরীর চোখ পড়লো পিৎজার প্যাকেটের দিকে।উনি ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলেন,’এটা অর্ডার দিয়েছে কে?’
অহি ভয় পেলো!একটা বড়সড় ঢোক গিলে কিছু বলতে নিলেই অহর্নিশ পেছন থেকে বলল,’আরে তোমরা চল আসছো!’
অহর্নিশকে দেখে অহি কিছুটা স্বস্তি পেলো।এখন ও ই সব সামলাবে।পূর্ব চৌধুরী অহর্নিশকে দেখে বললেন,’এতক্ষণ কোথায় ছিলে তুমি?’
‘বন্ধুদের সাথে।ওদের সাথে অনেকদিন পর দেখা হলো আজ।’
‘তোমার ফুপি খুব মন খারাপ করেছে।’মিসেস অনামিকা বললেন।
‘আচ্ছা মা আমি ফুপির সাথে কাল দেখা করে আসবো।’
এভাবে কথা বলতে বলতেই পিৎজার কথা ধামাচাপা পড়ে গেলো আর অহর্নিশও কৌশলে পিৎজার প্যাকেটগুলো সরিয়ে ফেললো।
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ।