# ধ্রব
অরিত্রিকা আহানা
অন্তিমপর্ব
পুরো একমাস তেরো দিন পর যখন এয়ারপোর্টে ধ্রুবকে রিসিভ করতে গেলাম খুশিতে আমার কেঁদে ফেলার দশা! উত্তেজনায় ছটফট করছিলাম! বুকের ভেতর তখনো ঢিপঢিপ করছিলো।
সকাল দশটায় ওর ফ্লাইট ঢাকাতে এসে পৌছানোর কথা! দশটা বিশে এসে পৌঁছালো। দূর থেকে ওকে দেখে ‘ধ্রুরু্রু্ব’ বলে চেঁচিয়ে উঠলাম। সাথে সাথেই আত্মীয়স্বজনরা সবাই ওর দিকে দৌঁড়ে লাগালো। প্রেগন্যান্সির কারণে আমি দৌড়াতে না পারলেও দ্রুত হেটে ওর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। ধ্রুবর নিষেধ শুনে থমকে যেতে হলো। ইশারায় আমাকে জায়গায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে বললো। ও নিজেই আমার দিকে আসছিলো কিন্তু আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবদের ভিড়ে মাঝপথেই চাপা পড়লো। পাক্কা দশমিনিট বাদে আন্টি আমার হাত ধরে টেনে ধ্রুবর কাছে নিয়ে গেলেন। আত্মীয়স্বজনদের সরিয়ে দিয়ে বললেন,”দেখি সবাই সরো। আগে নিশাতের সাথে দেখা করতে দাও!”
দেখলাম! দীর্ঘ একমাস তেরো দিন পর ধ্রুবকে দেখলাম! কর্তনের অভাবে ওর খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলো বেশ বড়ো হয়ে গেছে। চোখমুখবেশ শুকিয়েও গেছে। তবে গালভর্তি হাসি! আমার চোখের পলক পড়লো না! দুচোখ ভরে দেখলাম আমার মানুষটাকে! হাত দিয়ে ছুঁলাম! ওকে আর আমাকে মাঝখানে দাঁড় করিয়ে আত্মীয়স্বজনরা সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে শুরু করলো। আনন্দে আমি কেঁদে ফেললাম! ধ্রুব বাধা দিলো না। মুচকি হেসে ফিসফিস করে বললো,”ক্রাই অ্যাজ মাচ অ্যাজ ইউ ক্যান। বাট আই উইল মেইক সিউর দ্যাট ইট উইল বি দ্যা লাস্ট ক্রাই অফ ইউর লাইফ! অনেক কেঁদেছো। এবার শুধু হাসবে!”
এবার ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করেই কেঁদে দিলাম। আন্টিও কাঁদছিলেন। স্নেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে থেকে বললেন,”আল্লাহ তোকে হাজারবছর বাঁচিয়ে রাখুক মা। সারাজীবন আমার ছেলেটাকে এভাবেই ভালোবাসবি!”
ধ্রুব আমার কাঁদোকাঁদো মুখটার দিকে চেয়ে হেসে উঠে বলল,”সবই ঠিক আছে। কিন্তু এই ধ্রুরু্রু্রু্ব টা কি? মনে হচ্ছিলো তুমি আমার নাম ধরে ট্যাক্সি চালাচ্ছিলে!”
আমি কাতর মুখে আন্টির দিকে তাকালাম। তিনি দুষ্টু হেসে বললেন,”এখনো সময় আছে তুই বললে আবার আমেরিকাতে পাঠিয়ে দেবো। রাজি?”
ধ্রুবর দিকে তাকালাম। সকৌতুকে আমার দিকে চেয়ে আছে। মুখে মিটিমিটি হাসি! ভ্রু নাচিয়ে বললো,”যাবো?” লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম। আমার অবস্থা দেখে সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। আন্টি আমাদের দুজনের পেছনে রেখে আত্মীয়স্বজন সবাইকে নিয়ে সামনে এগোলেন। আমি নতমুখে দাঁড়িয়ে রইলাম। ধ্রুবর চোখে চোখে রাখতে লজ্জা লাগছিলো। ও আমার মুখোমুখি ঝুঁকে চোখে চোখ রেখে বললো,” কি ব্যাপার তুমি এত লজ্জা পাচ্ছো কেন?” আমি মাথা নাড়িয়ে না বোঝালাম। ধ্রুব আমার হাত চেপে ধরলো। খুব শক্ত করেই ধরলো। মুচকি হেসে বললো,”চলো!” অদ্ভুতপ্রশান্তি নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় ফিরলাম। পুরোটা সময় ধ্রুব আমার হাত ধরে বসে ছিলো এবং কিছুক্ষন পরপরই একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে আমাকে দেখছিলো।
বাসায় আত্মীয়স্বজনদের ঢল নেমেছে। ধ্রুবর ফেরার খবর শুনে ওকে একনজর দেখার জন্য নিকটস্থ, দূরবর্তী আত্মীয়স্বজনরা সব ছুটে এসেছে। হাস্যকলচ্ছ্বাসে পুরো ঘর সরগরম! ধ্রুব সবার মধ্যমণি হয়ে বসেছে। হাসিমুখে সবার সাথে গল্প করছিলো। এদিকে সবার জন্য নাশতা, পানি রেডি করতে করতে আমার জান বের হয়ে যাওয়ার দশা। আন্টি যেহেতু জার্নি করে এসেছে তাই তাকে রান্নাঘরের ঝামেলায় জড়ালাম না। তরু অবশ্য বেশ হেল্প করেছে! সারাদিন আমার সাথে রান্নাঘরেই ছিলো।
ও নাশতা রেডি করে দেওয়ার পর ড্রয়িংরুমে সবার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় শুনলাম ধ্রুবর এক নানু খুব গম্ভীর গলায় ওকে বোঝাচ্ছে,”মায়ের মনে কখনো কষ্ট দিবা না ভাই! যতই বউ, বউ করো না ক্যান, মায়ের মত আপন দুনিয়ার বুকে আর কেউ নাই! মা হইলো গিয়া অমূল্য রতন!”
তার এমনটা বলার কারণ হচ্ছে তিনি এসেই খবর পেয়েছেন ধ্রুবর সাথে আমি আমেরিকাতে যাই নি। অতএব তিনি ধরে নিয়েছেন বউ হিসেবে আমি খুবই স্বার্থপর! ধ্রুবর বিপদের সময় আমি তার সাথে ছিলাম না। তাই তিনি খুব ধৈর্যসহকারে ধ্রুবকে বোঝাচ্ছেন,”বিপদের সময় তোমার সাথে কে ছিলো?.. মা-ই তো? ছেলের অসুখের খবর শুনে মায়ের মন তো মানে নাই। বউয়ের কি? জামাই একটা গেলে আরেকটা পাবে! তাই বউ যাওয়ার দরকার হয় নাই। কিন্তু মা তো ছেলে গেলে ছেলে পাবে না! তাই সে না গিয়ে থাকতে পারে নাই! একটা কথা সবসময় মনে রাখবা ভাই, বউ থাক বা না থাক বিপদে আপদে মা-ই কিন্তু সবসময় পাশে থাকবে। তাই খবরদার, ভুলেও কখনো মায়ের অবাধ্য হইয়ো না। মনে থাকবো?
ধ্রুব আমাকে দেখে মিটমিট করে হাসতে হাসতে বললো,”জি নানু থাকবে। আপনি একদম ঠিক বলেছেন। জামাই মরে গেলে বউয়ের কি! বউতো ঠিকই আরেকজনকে বিয়ে করবে সুখে সংসার করবে।”
আন্টি মুখটিপে হাসছেন! নানু আগেকার যুগের মানুষ! আপাতদৃষ্টিতে তার কাছে যেটা সঠিক বলে মনে হয়েছে তিনি তাই বলছেন।
আর ধ্রুবর তো কাজই হলো আমার মেজাজ খারাপ করা। আমাকে রাগিয়ে ও কি আনন্দ পায় আমি বুঝি না। যাইহোক আপাতত অনেক কাজ পড়ে আছে তাই আমি এ নিয়ে মাথা ঘামালাম না!
ধ্রুবর কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে নানু আরো মনোযোগ সহকারে ওকে বোঝাতে শুরু করলো। এবং ধ্রুব আদর্শ ছাত্রের মত তার কথা শুনে গেলো!
বিকেলবেলা মেহমানরা সবাই চলে যাওয়ার পর পুরো বাসা ফাঁকা হয়ে গেলো। কিন্তু আমার হাতের কাজ শেষ হলো না। সব কাজ গুছিয়ে ফ্রি হতে হতে অলরেডি দশটা বেজে গেলো। ধ্রুব বেশ কয়েকবার ডাইনিং এসে আড়চোখে আমাকে দেখে গিয়েছিলো।
কাজ শেষ করে রুমে ঢুকে দেখলাম ধ্রুব খাটের ওপর বসে আছে। হাতে ফোন। আমার দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে পুনরায় ফোনে মনযোগ দিলো। সারাদিনের ক্লান্তি, ঘর্মাক্ত শরীর! অস্বস্তি লাগছিলো। ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকলাম। ধ্রুব বারান্দায় চলে গেলো।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চুল ঠিক করছিলাম। বারান্দায় চোখ পড়তেই দেখলাম ধ্রুব আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ওর সেই গাত্রজুলুনিদায়ক হাসি! কিন্তু আমার কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে গেলো। আবছা আলোতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওর মুখটা! কত পরীক্ষা, কত সাধনা, কত কষ্টের পর সৃষ্টিকর্তা আবার আমাকে এই মুখটা দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। প্রাণ ভরে দেখলাম!
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,”কি?” সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিলাম। কৃত্রিম রেগে যাওয়ার ভান করে বললাম,”হাসছো কেন?”
ধ্রুব ভেতরে ঢুকলো। আমার পাশে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে করতে ফের হাসলো। সামান্য ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো,”তুমি পুরো গোল হয়ে গেছো নিশাত! আপ টু বটম একেবারে ফুটবলের মত গোল! দেখে মনে হচ্ছে তোমার পেটে হাতির বাচ্চা ঢুকেছে!”
আমি চুল থেকে চিরুনী ছাড়িয়ে আয়নার ভেতর দিয়ে ওর দিকে চেয়ে রইলাম। আশ্চর্য! ধ্রুবর চোখে মুগ্ধতা এবং ঠোঁটে সেই বিদঘুটে সুন্দর হাসি।
আরো একটা জিনিস স্পষ্ট আঁচ করতে পারলাম ধ্রব আমাকে রাগানোর প্ল্যান করছে। আমি কিচ্ছু করলাম না। ধ্রুবকে আমার চেনা আছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমার মেজাজ খারাপ হবে ধ্রুব ততক্ষন পর্যন্ত আমার মেজাজ খারাপ করার চেষ্টা চালিয়েই যাবে। এবং আমার মেজাজ যত বেশি করে খারাপ হবে ধ্রুব সেটা আরো বেশি করে খারাপ করতে চাইবে! সুতরাং মুখ বন্ধ নিশাত! বিছানায় চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।
ধ্রুব কাছে এসে বসলো। এরপর কি হবে তাও আমার জানা আছে। মুচকি হাসলাম! ধ্রুব উশখুশ করছে। চাদরটাকে আরো ভালোভাবে গায়ের সাথে প্যাচিয়ে নিয়ে চুপ মেরে শুয়ে রইলাম। ধ্রুব চাদর সরিয়ে নরম গলায় বললো,”এই গরমে চাদর গায়ে দিয়েছো কেন? ঘাম শুকিয়ে বুকে কফ বসে যাবে তো!”
নিঃশব্দ হাসিটা বেশ চওড়া হলো। যাইহোক এত তাড়াতাড়ি গলে গেলে চলবে না নিশাত। ধ্রুবকে সোজা করতে হলে আরেকটু টাইট দিতে হবে।’ তেতে উঠে বললাম,”যাক। তোমার তাতে কি? আমার মত হাতিকে নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না!”
–“আমি না করলে করবে টা কে? তোমার কি আরো তিনচারটা জামাই আছে যে তারা এসে তোমার জন্য চিন্তা করবে।”
মনে মনে ধারণা করে রেখেছিলাম ওর মুখ থেকে এমন কিছুই শুনবো। এই ছেলে আমাকে রাগানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। রাগবো না, রাগবো না বলেও রাগ হলো। এতগুলো দিন বাদে এসেছে আজকে তো একটু ভালোবাসা যেত! কিন্তু না অপরপাশে যখন ধ্রুব তখন ঝগড়া তো হতেই হবে! দাঁতকিড়মিড় করে বললাম,”ঠিক! আমার তিনচার জামাই কেন নেই এটাই আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ! কেন আমি আরো তিনচারটা বিয়ে করলাম না! আমার তো তিনবেলা নিয়ম করে তিনটা বিয়ে করা উচিৎ! যাতে আরো তিনটা হাতির বাচ্চা পেটে নিয়ে ঘুরতে পারি!”
ধ্রুব অট্টহাসি ঠেকিয়ে মৃদু হাসলো।
চাদর সরিয়ে আমার দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো,”নো মিসেস রাগি হাতিনী ম্যাডাম, আপনার সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে আপনি এখনো আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করেন নি! সেই বিকেল থেকে আপনার জন্য আমি কতটা ছটফট করছি সেটা আপনি বোঝেন না? এত দেরী করে কেন এসেছেন?”
আমি মনে মনে খুশি হলাম। মুখে বললাম,”ঢং!”
ধ্রুব আমার রাগের পাত্তা না দিয়ে চাদরটা নিজের মাথার ওপর দিয়ে চাদরের নিচে ঢুকে গিয়ে বলল,”আসো একটু জড়িয়ে ধরি!”
—“না!”
—“কি না?”
—“জড়িয়ে ধরতে পারবা না।”
ধ্রুব আমার মাথায় তার চিবুক ঠেকিয়ে আধশোয়া হয়ে বললো,”তোমার কি মনে হয় তুমি বললে আমি শুনবো?”
অতঃপর আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই দস্যুটা বজ্র কঠিন আলিঙ্গনে আমাকে বেধে ফেললো। দুষ্টু হেসে ফিসফিস করে বললো,”এটাই তো চাইছিলে! এখন না করছো কেন? নটি গার্ল!”
বুকের ভেতর ছলকে উঠলো! ধ্রুব আমার না বলা কথাগুলো কি করে বুঝে যায়! ওর চোখে সেই পুরোনো সম্মহোন। ওর সেই হাসিমুখ!
কত অপেক্ষার পর এই দৃষ্টি, এই হাসিটার দেখা পেলাম। চোখে পানি চলে এলো। ধ্রুব অবাক হলো। ওর রিয়েকশন দেখে ব্যাকুল ভাবে কান্না শুরু করে দিলাম।
ধ্রুব কোন প্রশ্ন করলো না। বোধকরি আমার কান্নার হেতু ওর অজানা নয়। চুপচাপ আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আমার কান্না থামছিলোই না। দুহাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছিলাম। ধ্রুব আরো কাছে ঘেঁষলো! খুব কাছে। আমার অশ্রুসিক্ত চোখের পাতায় চুমু খেয়ে বিষন্ন গলায় বললো,”নো মোর ক্রায়িং! প্লিজ! ইউ হ্যাভ ফিলড মাই হার্ট উইথ ইউর আনকন্ডিশনাল লাভ! নাউ ইট’স মাই টার্ন! এবার আমার পালা। আর তোমার চোখের পানি দেখতে চাই না। ইট হার্টস মি মোর দ্যান এনিথিং!”
মন্ত্রমুগ্ধের মত ওর দিকে চেয়ে রইলাম। ও মুচকি হেসে বললো,”তাই বলে কম ভালোবাসলে কিন্তু হবে না! আমি কিন্তু ছেড়ে দেবো না। ঠিক আদায় করে নেবো।” আমি মৃদু হেসে বললাম,” তোমাকে আমি তোমার চাইতে বেশি ভালোবাসি!”
ধ্রুব অদ্ভুতভাবে ভ্রু নাচালো। শয়তানির ইঙ্গিত! দাঁত বের করে বলল,”তাই?” আমি চোখমুছে সোজা হয়ে বসলাম।
উঠে বসতে না বসতেই মাথাচক্কর দিয়ে উঠলো। চারদিক ঘুরপাক খেতে শুরু করলো। ধ্রুব আসার খুশিতে আজকে সারাদিন ঠিকমত খাওয়া দাওয়া হয় নি। তাই মাথা ঘুরছে! পিঠ টানটান করে বসে স্থির হওয়ার চেষ্টা করলাম। ধ্রুব আমাকে টেনে আবারো শুইয়ে দিয়ে আমার গায়ের ওপর খুব সাবধানে হাত পা তুলে দিয়ে বললো,”কান্না থামিয়েছো ভালো কথা। কিন্তু উঠে বসেছো কেন?” বমি বমি ভাব হচ্ছিলো। ক্লান্ত কন্ঠে বললাম,”আমার বমি আসছে!”.
ধ্রুব খুশিতে গদগদ মুখ করে বললো,”বলো কি? এখনো তো পেটের টাই ডেলিভারি হয় নি। নতুন করে আবার সুখবর? ওয়াও!”
একে বমি আসছে তারপর ধ্রুবর উদ্ভট কথাবার্তা! মেজাজ খিঁচড়ে গেলো। ফুঁসে উঠে বললাম,”তুমি আমাকে ছাড়বে নাকি তোমার গায়ে বমি করে দেবো?”
—“করো! আমার আপত্তি নেই! আমার সাথে সাথে বিছানা বালিশও ভরবে!”
—“আমার সত্যি সত্যি বমি আসছে ধ্রুব। আমি কিন্তু সিরিয়াসলি তোমার গায়ে করে দেবো!”.
ধ্রুবর কোনরকম নড়চড় হলো না। হবেও না। কারণ বিছানা বালিশও ভরলে আমাকেই সাফ করতে হবে! হার স্বীকার করে কাতর কন্ঠে বললাম,দোহাই তোমার! প্লিজ!
ধ্রুব মুচকি হেসে হাত পা সরিয়ে নিলো। আমি রাগে গজগজ করতে করতে বিছানা থেকে নামার সময় অনুভব করলাম ধ্রুবর সাথে বকবক করতে করতে বমির ভাব কেটে গেছে! কনফিউজড হয়ে ওয়াশরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। ধ্রুব আমার পেছন পেছন উঠে এলো। চোখ পাকিয়ে বললো,”মিথ্যেবাদী! তোমার নাকি বমি পাচ্ছিলো?”
আমি জবাব দিলাম না। ধ্রুব দুষ্টু হেসে বললো,”ও আচ্ছা সিগনাল দিচ্ছো? কিন্তু এত সুন্দর বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে রোমান্স কেন?” আমি হতবাক! আমার সব কাজের, সব কিছুর এমন উদ্ভট, আজব মিনিং ওর মাথায় আসে কি করে?
মনে মনে হাসলাম। মুখে যতই রাগ দেখাই না কেন এই আধাপাগল, সদানন্দ, কৌতুক প্রিয় ধ্রুবটাই আমার সমস্ত সত্তা জুড়ে বিরাজ করছে! ওর গম্ভীরমুখ আমার হৃদয়ে বিনা সুঁচে হুল ফোটায়! অশান্তির তীব্র ঝড় তুলে দেয়! আমি সহ্য করতে পারি না। আবারো হাসলাম!
এবং বরাবরের মত এবারেও ওকে বুঝতে দিলাম না। ওয়াশরুমে ঢুকে ঠাস করে ওর নাকের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললাম,”অসভ্য, নির্লজ্জ!” ভেতর থেকেই ধ্রুবও অট্টহাসির আওয়াজ কানে এলো। চেঁচিয়ে উঠে বললো,”বেরোও আগে! তারপর দেখাবো নির্লজ্জ কাকে বলে, কতপ্রকার ও কি কি! আজকে তুমি শেষ সুন্দরী!”
চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুমের আয়নার দিকে চেয়ে আপনমনে কিছুক্ষন হাসলাম। দরজায় টোকার আওয়াজ পড়লো। খুলতেই দেখলাম ধ্রুব দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। ওয়াশরুমে ঢোকার সময় ওড়নাটা খাটের ওপর রেখে গেছিলাম! ধ্রুব আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার তাকিয়ে মৃদু শিষ দিলো! ঠোঁটে দুষ্টু হাসি! ফের শিষ দিলো। ওর শিষ দেওয়ার ধরণ দেখে হেসে ফেললাম! ব্যস! বাকিটা অসভ্যটা নিজেই করলো। একঝটকায় আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিজ্ঞের মত মাথা নাড়িয়ে বললো,”বুঝি বুঝি! সবই বুঝি! কোলে উঠবে আগে বললেই তো হত! ওয়াশরুমে ঢোকার কি দরকার ছিলো?” প্রতিবাদ করলাম না! একটা মুহূর্তও নষ্ট করতে চাইলাম না। কতদিন পর ধ্রুবকে কাছে পেয়েছি! লাজুক হেসে ওর বুকে মুখ লুকালাম!
তারপর দেখতে দেখতে পাঁঁচটা বছর কেটে গেলো। ধ্রুবর কোন পরিবর্তন হলো না। আগে একা আমাকে জ্বালাত এখন আমার ছেলেকে সহ জ্বালায়। ওর অত্যাচারে আমরা মা ছেলে অতিষ্ঠ! বাচ্চা ছেলেটার সাথে পর্যন্ত খোঁচাখুঁচি করে!
সেদিন দুপুরে ধ্রুব বাসায় ছিলো না। স্নিগ্ধ সোফায় বসে টিভিতে কাটুন দেখছিলো। আর নিজে নিজে হাততালি দিচ্ছিলো। অসভ্যটা কোথা থেকে এসে হুট করেই ছেলের প্যান্টটা টেনে খুলে দিলো। ব্যস! শুরু হলো স্নিগ্ধর গলা ফাটিয়ে চিৎকার। আন্টি বিছানার ঝাড়ু নিয়ে ধ্রুবর পেছনে তাড়া করে বললো,”বদমাইশ! বাচ্চা ছেলেটাকে পর্যন্ত শান্তি দিবি না। আজকে তো পিঠের ছাল তুলে ফেলবো! অসভ্য ছেলে, দাঁড়া তুই!” ধ্রুব নির্লজ্জের মত হেসে উঠে বললো,”বাতাস লাগবে!”
আমি রাগতে গিয়েও হেসে ফেললাম। এদিকে স্নিগ্ধ সজোরে চেঁচিয়ে যাচ্ছে! এর অবশ্য একটা কারণ আছে। ধ্রুব যতবার ওকে রাগাবে ততবার বাইরে নিয়ে যাবে। হাত ভর্তি গিফট নিয়ে বাপ ছেলে ফিরে আসবে। তাই স্নিগ্ধ যত বেশি করে চেঁচাবে তত ফায়দা!
ধ্রুব মিথ্যা সান্ত্বনার সুরে বললো,”আহারে কে খুললো আমার ছেলের প্যান্ট! কার এতবড় সাহস! কে করলো এই সর্বনাশ!”
তারপর হাত বাড়িয়ে স্নিগ্ধকে কোলে তুলে নিতে চাইলো। মিষ্টি হেসে বললো,” প্যান্ট যখন খুলেই গেছে আর কেঁদে লাভ কি? তারচেয়ে চলো আমরা বাইরে থেকে ঘুরে আসি!”
স্নিগ্ধ রাজী হলো না। বেচারার প্রেস্টিজ ইস্যু! মানসম্মানে হাত লেগেছে। অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিলো। আমি আর আন্টি মুখটিপে হাসলাম! ধ্রুব ওর ছোট্ট নরম তুলতুলে শরীরটাকে শূন্যে তুলে কাধে চড়িয়ে নিয়ে বললো,”না গেলে আবার খুলে দেবো!”
স্নিগ্ধ বেচারা ভয়ে,আতংকে চুপ করে গেলেও লক্ষ্য করলাম ধ্রুবর গলা জড়িয়ে ধরে কি যেন ভাবতে শুরু করেছে। ধ্রুবর মুখে শয়তানি হাসি! আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাপ ছেলের মতিগতি পর্যবেক্ষন করছিলাম। স্নিগ্ধ হঠাৎ ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,”প্যান্ট খুলে দিলে আমিও তোমার কাধে হিসু করে দেবো!”
আমি এবং ধ্রুব অবাক হয়ে একে অপরের দিকে চাইলাম! দুজনেই হেসে ফেললাম! ধ্রুব স্নিগ্ধর হাতে আলতো চাপড় মেরে বললো,”সাব্বাস ব্যাটা এই না হলে আমার ছেলে! বুক ফুলিয়ে বল তো ব্যাটা তোর বাপের নাম কি?” স্নিগ্ধ হাসিমুখে বললো,”ধুব্ব!”
ধ্রুব শুধরে দিয়ে বললো,”ধুব্ব নয় তোর বাপের নাম ধ্রুব। মনে থাকবে?”
স্নিগ্ধ দুদিকে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো। তারপর বাপ ছেলে দুজনেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। ওদের হাসি আমার সারা শরীরে অদ্ভুত শীতলতা ছড়িয়ে দিলো! সস্তির নিশ্বাস ফেলে সৃষ্টিকর্তার কাছে আবারো মনে মনে প্রার্থণা করলাম এই হাসি যেন চির অম্লান থাকে, অটুট থাকে ভালোবাসার বন্ধন!
.
.
.
.
সমাপ্ত
Just assume…. অনেক অনেক সুন্দর হয়েছে গল্পটা।
Ki bolbo bujty parcina.sotti pocondyr jinish haranur por firy pawar anondo jy pai sa bojy
এতো বেশি সুন্দর না হলে ও হতো 🙂সত্তি মানে বলে মনে হয় বুঝাতে পারবোনা কতটা সুন্দর হয়েছে ধ্রুবোর দুষ্টামি গুলো বেশি আনন্দ দিয়েছে জাস্ট অসাধারন😍😍😍😍😍😍