#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ৩৩
মিহানের মম মানে মায়া তার বয়সি মহিলাদের সাথে আড্ডা দিতে বসেছে। নানান বিষয় নিয়ে তর্ক বিতর্ক হাসি-ঠাট্টা করছে। কথার প্রসঙ্গে মিহানের বড় ফুপি মানে তনুর ছোট জা বলল,
—” ভাবী আপনার হবু বৌমার সম্পর্কে যা শুনেছি তা কি সত্যি?”
মায়া কপাল ভাঁজ করে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
—” কী কথা শুনেছেন ভাবী?”
তনুর ছোট জা আয়েশ করে বসে বলল,
—” আপনার হবু বৌমার সাথে করেছে যে বাচ্চাটাকে নিয়ে এসেছে। তাকে নাকি সে দত্তক নিয়েছে?”
মায়া কপালে ভাঁজ সরিয়ে হাসি মুখে বলল,
—” হ্যা ভাবী আপনি ঠিকই শুনেছেন।”
তনুর ছোট জা থমথমে মুখে বলল,
—” তা আপনারা কিছু বলেননি ওকে? কিছুদিন পর আপনাদের বাড়ির বউ হতে চলেছে সে। এমন সিদ্ধান্ত মানায় না তাকে। আর ঐ বাচ্চাটা, কী জানি নাম তার? হ্যা মিরান, তাকে নিয়ে এতো আদিখ্যেতা কী আছে? ওর বাবা-মা কে? কোন ধর্মের? এসব কিছু না জেনে কী করে দত্তক নিলে নেয় আমি বুঝিনা বাপু।”
তনুর ছোট জার কথা শুনে পরিবেশ কেমন থমথমে অবস্থা হয়ে যায়। তনু ওর জার দিকে তাকিয়ে বলল,
—” এসব কী কথা বলছো ভাবী? মিরা যা করেছে একদম ঠিক করেছে। ওইটুকু বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে কেউ ভালো না বেসে থাকতে পারবে? তুমি আর এ বিষয় নিয়ে কথা বল না ভাবী।”
মায়া হাসিমুখে বলল,
—” ভাবি আমরা মিরার সিদ্ধান্ত শুধু খুশি নই, মিরার এমন সিদ্ধান্তে আমরা গর্ববোধ করি। আর মিরার মত একটা মেয়ে আমাদের বাড়ির বউ হতে চলেছে ভাবলেই বুক ফুলে ওঠে। রইল বাকি মিরানের কথা? সবথেকে বড় কথা হলো ও একজন মানুষ। এর থেকে বড় পরিচয় আর হতে পারে না। আশাকরি আপনি আমার কথা বুঝতে পেরেছেন।”
মায়া কথায় শুনে তনু মুখ টিপে হাসে। মায়া একনজর তনুর ছোট জার দিকে তাকিয়ে আবার পুনরায় আড্ডায় মন দেয়।
_________________
ঘড়ির কাটায় রাত নয়টা ছুঁই ছুঁই। মিহান আর মিরা দাড়িয়ে আছে ওদের গ্রামে একটা ব্রিজের উপর। মিরান ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই ওকে গাড়িতে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে মিরা। দুজনের মাঝে নিস্তব্ধতা। মিরা ব্রিজের পাশে দাঁড়িয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। আর মিহান তার জানপাখি কে দেখে তার তৃষ্ণা মিটাছে। চাঁদের আলোতে মিরার সৌন্দর্য যেনো আরো কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মিরা নিস্তব্ধতা ভেঙে নদীর পানির দিকে তাকিয়ে বলল,
—” কবে ফিরবে মেডিকেল ক্যাম্প থেকে?”
মিহান মিরার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে ধীর গলায় বলল,
—” দুই সপ্তাহ পর।”
মিরা বিষন্ন মনে বলল,
—” দুই সপ্তাহ? আগে কেনো বলনি আমায় তোমার মেডিকেল ক্যাম্পের কথা?”
মিহান মিরার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
—” তুমি মন খারাপ করবে তাই বলিনি।”
মিরা বিষন্ন চোখে তাকিয়ে বলল,
—” এখন কী আমার মন খারাপ হচ্ছে না?”
মিহান মিরার থেকে চোখ সরিয়ে বলল,
—” কি করবো বলো। আমার তো যেতে হবে। আমাদের হসপিটাল থেকে প্রতিবছর মেডিকেল ক্যাম্পের জন্য সিলেটে যায়। এ বছরেও যাবে তাই আমাকেও তাদের সাথে যেতে হবে।”
মিরা রাগ দেখিয়ে বলল,
—” তাই বলে কাল যাবে আর এখন আমাকে জানাচ্ছো? মম, পাপা জানে এসব?”
মিহান মাথা নেড়ে না বলে। মিরা হতবাক হয়ে বলল,
—” বাহ! বলো তো, কেউ কিছু জানে না উনি চললেন সিলেট।”
মিহান জিব্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
—” তারা জানে প্রতি বছর এই সময় আমি মেডিকেল ক্যাম্পে যাই।”
মিরা মিহানের কথার উত্তর না দিয়ে চোখ সরিয়ে নদীর পানির দিকে তাকিয়ে থাকে। মিরা খুব অস্থির লাগছে। মিহানের যাবার কথা শুনে বুকের ভিতর কেমন করছে মিরার। মিহান মিরার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। দু কদম এগিয়ে গিয়ে মিরাকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
—” মাত্র দুই সপ্তাহ তো দেখতে দেখতে কেটে যাবে। কোনো সমস্যা হলে পাপাকে অথবা ডেনি ভাইয়া কে বলবে। এই দুই সপ্তাহ ভার্সিটিতে যাওয়ার দরকার নেই। বাড়িতেই থেকো মিরানকে সময় দিও। আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো। আমার জন্য একদম চিন্তা করো না। আমি কি বলছি তুমি বুঝতে পারছো।”
মিহান বুকে মুখ গুজে অস্পষ্ট স্বরে বলল,
—” হুম।”
মিহান মিরার মুখ উঁচু করে ওর চোখের দিকে তাকায়, ঘোরলাগা কন্ঠে বলল,
—” খুব কষ্ট হবে এই দুই সপ্তাহ তোমাকে ছেড়ে থাকতে।”
মিরা মিহানের চোখের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলল,
—” না গেলে হয় না?”
মিহান হেসে মিরার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলল,
—” না জানপাখি যেতে হবে আমায়।”
মিহান চোখ বন্ধ করে মনে-মনে বলল,
—” আমি জানপাখি তুমি আমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছো। আমাকে নিয়ে তুমি কিছু ফিল করো। কিন্তু মুখে স্বীকার করছ না। আমার যাওয়ার কথা শুনে তোমার চোখ মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। তুমি একদম চিন্তা করো না, সিলেট থেকে এসেই তোমাকে আমার মনের কথা বলে দেবো।”
মিরা মিহানকে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল,
—” ঠিক আছে মন খারাপ করবো না আমি। শোনো, কিছুদিন পর বড় মামা আর বড় মামীর ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি, তাই আমি এখান থেকে যাওয়ার পর সোজা মামা বাড়ি যাবো। কিছুদিন ধরে বড় মামী অভ্র ভাইয়ার বিয়ের জন্য প্রেসার ক্রিয়েট করছে তার ওপর। ভাইয়া বড় মামার ভয়ে নীলা আপুর কথা সাহস করে কিছু বলতে পারেনি। তাই এখন যা করার আমাকেই করতে হবে।”
মিহান হেসে বলল,
—” বাহ! বাহ! আমার গুন্ডি দেখি সব পারে।”
মিরা চোখ বড় বড় করে বলল,
—” আমি গুন্ডি?”
মিহান সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
—” তা নয়তো কী? ছোটবেলার কথা মনে নেই কিছু হলেই ঠাস ঠাস থাপ্পড় লাগিয়ে দিতে আমাকে।”
মিরা মুখ বাঁকা করে বলল,
—” হুর।”
মিহান মুচকি হেসে বলল,
—” আচ্ছা ছাড়ো এসব কথা। এখন আমি তোমাকে যা জিজ্ঞেস করছি তাই বলো।”
মিরা চোখ ছোট ছোট করে বলল,
—” কী কথা?”
মিহান কপাল ভাঁজ করে বলল,
—” অভ্রর না কোন মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলো? তার জন্য তো নীলা সুইসাইড করতে চেয়েছিলো?”
মিরা অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
—” একথা তুমি জানো কী করে?”
মিহান মিরার দিকে একনজর তাকিয়ে বলল,
—” ডেনি ভাইয়া বলেছে।”
মিরা ছোট করে বলল,
—” ওহ, তুমি যা শুনেছ সব ভুল শুনেছ। প্রথমে আমিও তাই মনে করেছিলাম। শুভর কাজিন ইশা মানে যাকে নিয়ে এত কাহিনী। শুভ আর মিশু মিলে ইশার সাথে বাজি ধরে ফেসবুকে ওমন একটা পোস্ট করেছিলো অভ্র ভাইয়ার ফোন থেকে। অভ্র ভাইয়া প্রথমে এসব কিছু জানতো না পরে জেনেছে।”
মিহান গম্ভীর গলায় বলল,
—” এই আজকালকার ছেলেমেয়েদের এক সমস্যা। সবকিছুতে বাজি ধরা চাই। বাজি ধরে প্রেমের জলে ফাঁসানো। বাজিতে যেতে হয়ে গেলে একবার ফিরেও তাকাবেনা তার দিকে।”
মিরা কথা ঘুরানোর জন্য বলল,
—” অনেকক্ষণ হলো এসেছি এখানে। এখন যাওয়া দরকার আমাদের। না হলে বাড়িতে সবাই চিন্তা করবে। মিরানও ঘুমিয়ে গেছে অনেকক্ষণ।”
মিহান মিরার কথায় সায় দিয়ে বলল,
—” হ্যা, ঠিক বলেছ। এখন আমাদের যাওয়া দরকার। না হলে মমের কাছে বকা খেতে হবে। এতক্ষণ তো চাঁদের আলোকে বেশ ছিলো। এখন আবার মেঘ করেছে আকাশে।”
মিরা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
—” হুম। এখন চলো না হলে বৃষ্টি শুরু আর দেখতে হবে না।”
মিহান হাঁটা শুরু করে বলল,
—” চলো তাহলে।”
মিরা ঘাড় নাড়িয়া মিহানের সাথে পা মিলিয়ে।
_________________
মিহান মিরাকে নিয়ে বাড়ির পেছনে পুকুর ঘাটে বসে আছে। দুজনের মন খারাপ। ভীষণ রকম মন খারাপ। একটু পরে রওনা দেবে দুজন দুই প্রান্তে, একজন ঢাকা তো অন্যজন সিলেট। বাড়ির আর সবাই গাড়ীতে জিনিসপত্র তুলছে। মিহান মিরাকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর মিরা মিহানের বুকের সাথে লেপ্টে চোখ বন্ধ করে আছে। মিহান মিরার মাথায় হাত দিয়ে বলল,
—” জানপাখি এবার যেতে হবে আমাদের। সবাই অপেক্ষা করছে।”
মিরা মিহানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বলল,
—” হুম, চলো। আর আমি যা বলেছি তোমার মনে থাকবে তো?”
মিহান হেসে মিরার হাতে চুমু দিয়ে বলল,
—” মনে থাকবে মহারানী। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবো। সময় মতো ঘুমাবো। আর খুব তাড়াতাড়ি তোমার কাছে ফিরে আসবো। তাই তো?”
মিরা মিহানের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
—” হুম।”
#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ৩৪
আজ চারদিন হতে চললো মিরা মিহানকে ছাড়া আছে। এই চার দিনে মাত্র দুইবার মিহানের সাথে কথা হয়েছে মিরার। নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে ইচ্ছে থাকলেও মিহান মিরার সাথে তেমন যোগাযোগ করতে পারে না। এই কয়দিনে মিরা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছে মিহান ঠিক ওর কতটা জুরে আছে। মিরা এইসব ভেবে আনমনে হেসে দেয় বারান্দায় দাঁড়িয়ে। হঠাৎ শব্দ শুনে মিরা পিছন ফিরে তাকায়, নিশু আর মিশু দুজন দুজনের হাত ধরে ঢং করতে করতে বলল,
—” আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে।
একতারাটির একটি তারে
গানের বেদন বইতে নারে
তোমার সাথে বারে বারে
হার মেনেছি এই খেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে।
আমার এ তার বাঁধা কাছের সুরে
ওই বাঁশি যে বাজে দূরে।
গানের লীলার সেই কিনারে
যোগ দিতে কি সবাই পারে
বিশ্বহৃদয়পারাবারে রাগরাগিণীর জাল ফেলাতে–
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে।
মিরা ওদের দিকে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে বলল,
—” কী হলো তোরা আবার গান শুরু করলি কেনো?”
মিশু এসে মিরার পাশে থাকা চেয়ারে বসে বলল,
—” কী করবো বলো? তুমি এই বাড়িতে এসেছো পর থেকে কেমন মনমরা হয়ে থাকো সব সময়। আমাদের সাথে ভালো করে কথা বলো না। আর দুই দিন পর যে বড় মামনি আর বড় বাবাইয়ের ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি সে খেয়াল আছে তোমার? সারাক্ষণ তো আমাদের জিজুর কথা ভাবো বসে বসে। তাই তোমার বিরহে আমরা গান গেয়েছিলাম।”
মিরা চোখ বড় বড় করে বলল,
—” খুব ফাজিল হয়েছিস তো দুটোতে। এখন আবার বড় বোনের সাথে ফাজলামি শুরু করেছিস।”
নিশু এসে মিরার পাশে বসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
—” বড় বোনের সাথে করবো না তো কার সাথে ফাজলামি করবো তুমি বলো?”
মিরা ভাবার অভিনয় করে বলল,
—” তা ঠিক, বড় ভাই বোনদের সাথে ফাজলামি করবো না কাদের সাথে করবি। কিন্তু তোরা দুজন হঠাৎ আমার রুমে?”
মিশু ছোট নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
—” বড় মামনি আর বড় বাবাইয়ের ম্যারেজ অ্যানিভার্সারির জন্য কিছুতো প্লান করা হয়নি তাই না? তাই এই বিষয় নিয়ে তোমার সাথে আলোচনা করতে এলাম আমরা।”
মিরা মৃদু কণ্ঠে বলল,
—” তোরা তো চিন্তা করিসনা ছোটমামা সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে। আর বাকি সব ঠিক ছোটমামী অভ্র ভাইয়া আর শুভ দেখছে।”
নিশু চিন্তিত হয়ে বলল,
—” কই মামনি তো আমাদের কিছু বলেনি এ বিষয়ে?”
মিরা নিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,
—” হয়তো ভুলে গেছে তো কাজের মাঝে।”
নিশু নিজের মাথা চুলকে বলল,
—” হবে হয়তো!”
মিশু মিরার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
—” ছাড়ো ওসব কথা। মিরান কখন ঘুম থেকে উঠবে? ওকে ছাড়া আমার একটুও ভালো লাগছে না।”
মিরা মুচকি হেসে বলল,
—” একটু আগেই তো ঘুমিয়েছে। আরও কিছুক্ষণ পর ঘুম থেকে উঠবে। তখন খেলিস ওর সাথে যত খুশি।”
মিশু মুখ গোমড়া করে বলল,
—” হুম।”
মিশুর গম্ভীর মুখ দেখে ওরা দুজনে হেসে দেয়। মিরা হাসি মুখে বলল,
—” থাক তোরা দুইজন। আমি বড় মামীর কাছে যাচ্ছি।”
মিরা ওদের উত্তরের অপেক্ষা না করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
__________________
মিহান কাজ শেষ করে কিছুক্ষণ আগেই ফিরেছে। তার কলিগ ডাক্তারদের সাথে নিচের রেস্টুরেন্টে চলে যায় বিকেলের জন্য হালকা পাতলা কিছু খেতে। ওদের খাবার মধ্যে ডক্টর নিজাম উপস্থিত হয়। তাকে দেখে ডক্টর ইব্রাহিম খোঁচা দিয়ে বলল,
—” এসে গেছে আমাদের মধ্যে নতুন বর। মেডিকেল ক্যাম্পে এসেও বউয়ের সাথে কথা বলার কমতি নেই। মিনিট টু মিনিট সব ইনফর্ম করছে তাকে।”
ডক্টর ইব্রাহিমের কথা হবে হেসে দেয়। ডক্টর নিজাম হালকা হেসে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
—” কি করব বলো? বিয়ে হতে না হতেই মেডিকেল ক্যাম্প পড়ে গেলো। ওর সাথে কথা না বলে ও তো বাড়িতে মন খারাপ করে বসে থাকবে।”
মিহান খাবার রেখে ডক্টর নিজামের দিকে তাকিয়ে বলল,
—” নিজাম তুমি কী সিম ব্যবহার করছো? আমি এখানে এসেছি পর থেকে আমার সিমে নেটওয়ার্ক ই পাওয়া যাচ্ছে না।”
ডক্টর নিজাম মৃদু গলায় বলল,
—” আমি তো জিপি সিম ব্যবহার করি।”
মিহান কপাল ভাঁজ করে বলল,
—” এর জন্যই বোধহয় সমস্যা হচ্ছে। আমার আবার জিপি সিম নেই।”
ডক্টর ইব্রাহিম ওদের দিকে উদাসীন চোখে তাকিয়ে বলল,
—” এক রোমিও বোধহয় কম ছিলো, এখন আর এক রোমিও তার পাগলামী শুরু করেছে।”
মিহান তার কথা শুনে মৃদু হেসে বলল,
—” তুমি তো সবই জানো আমার ব্যাপারে। মিরাকে কত বছর পর নিজের কাছে পেয়েছি। কোথায় ওর সাথে এখন একটু সময় কাটাবো তা না করে এখন মেডিকেল ক্যাম্প করে বেরোচ্ছি।”
মিহানের সবাই জোরে হেসে দেয়। হাসি থামিয়ে ডক্টর নিজাম বলল,
—” সত্যি কথা বলতে কী? ভালবাসার মানুষের থেকে দূরে থাকা যে কত কষ্টের, একমাত্র যারা দূরে থেকেছে তারাই জানে।”
মিহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
—” তা ঠিক।”
মিহান ওদের কথা আর কান না দিয়ে মনে মনে বলল,
—” কবে দেখতে পাবো তোমার মায়াভরা মুখটা? খুব মিস করছি জানপাখি তোমায়। খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি আমি তোমার কাছে। I Love You Janpakhi.”
__________________
মিরা এসে কিচেনের সামনে দাঁড়ায়। তাকিয়ে দেখ আবার বড় মামী আর ছোট মামী বিকেলের জন্য খাবার তৈরি করছে। মিরা এগিয়ে গিয়ে তাদের পাশে দাড়িয়ে বলল,
—” কী করছো তোমরা?”
ছোট মামী মিরার দিকে তাকিয়ে বলল,
—” এই তো তোদের জন্য নাস্তা তৈরি করছি। কেনো কিছু বলবি?”
মিরা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
—” বলতে তো চাই। কিন্তু তোমরা তো এখন বিজি।”
বড় মামী ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
—” কী বলবি বলে ফেল না।”
মিরা বড় মামী হাতে থাকা কাজ ছাড়িয়ে নিয়ে তার হাত ধরে বলল,
—” আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।”
বড় মামী ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে বলল,
—” কাজ করছিলাম তো। টেনে আনলি কেনো আমায়? আচ্ছা, বল কী বলবি আমায়?”
মিরা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—” মামী তুমি তো অভ্র ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখছো তাই না? কিন্তু তুমি কী জানো অভ্র ভাইয়া এক মেয়েকে ভিশন ভালোবাসে?”
মিরার বড় মামী মিরার কথায় অবাক হয়ে যায়। অবাক হওয়ারই কথা। তার ছেলে একটা মেয়েকে ভালোবাসে অথচ তিনি জানেন না। তিনি অবাক কণ্ঠে বলল,
—” না তো আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। অভ্রও আমায় এই বিষয়ে কিছু বলেনি।”
আজ থেকে ছোট মামী বলল,
—” তা মেয়েটা কে শুনি।”
মিরা ওর বড় মামীর দিকে তাকিয়ে বলল,
—” ভাইয়া তোমাদের ভয় কাউকে কিছু বলতে পারেনি। তাই আমায় বলেছে।”
বড় মামী ধীর গলায় বলল,
—” সেসব তো বুঝলাম কিন্তু মেয়েটা কে?”
মিরা জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
—” নীলা আপু।”
বড় মামী আর ছোট মামী চমকে একসাথে বলল,
—” নীলা!”
মিরা মাথা নেড়ে হ্যা বলে। কিছুক্ষণের মধ্যে পরিবেশ থমথমে হয়ে যায়। হঠাৎ করে মিরার বড় মামী হেসে দিয়ে বলল,
—” নীলা মেয়েটা তো বেশ শান্তশিষ্ট ভদ্র। ওকে পছন্দ না হওয়ার কী আছে। আমি আগে থেকেই নীলাকে বেশ পছন্দ করি। আমি মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম অভ্র যদি বিয়েতে মত দিতো তাহলে নীলাদের বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতাম।”
মিরা হাসি মুখে বলল,
—” তোমার কোনো আপত্তি নেই মামী?”
বড় মামী মিরার গালে হাত দিয়ে বলল,
—” আপত্তি কেনো থাকবে? আমি কালই ওদের বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।”
পাশ থেকে ছোট মামী বলল,
—” তাহলে এবার তোমার ছেলের বিয়ে হতে যাচ্ছে?”
বড় মামী হেসে দিয়ে বলল,
—” হ্যা।”
ছোট মামী মিরার থুতনি ধরে বলল,
—” তোর বিয়েটা কবে হবে? আমাদের জামাই তো ছোটবেলা থেকে তোর জন্য পাগল।”
মিরা লজ্জা পেয়ে বলল,
—” ধ্যাত, মামী তুমিও না।”
মিরা লজ্জা ওখান থেকে চলে গেলে, ওর মামীরা তা দেখে হেসে দেয়।
চলবে….💙
চলবে….💙