#নিশির_সংসার
#শেষ_পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy
অচেনা নাম্বারের কল রিসিভ করে কথা বলার পরই নিশিতার হাত থেকে ফোনটা পরে যায়।
কারন,ফোনটা করেছিল নিশিতার আগের স্বামী নেহাল।
নিশিতা যখন ফোন রিসিভ করে সালাম দিলো,, তখন ওপাশ থেকে বললো — কি স্বামী সংসার নিয়ে খুব সুখেই আছো দেখি?
— মানে কে আপনি?আর কি জন্যই বা ফোন দিয়েছেন?
— কি বলছ এসব,তুমি আমাকে চিনতে পারছ না?আমি তো প্রাক্তন স্বামী নেহাল!
— কি,আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায় আর আমাকে ফোন দিছেন কিজন্য?
— তোমার নাম্বার তো আগে থেকেই সেইভ করা ছিল।তা স্বামী সংসার নিয়ে কি সুখে থাকলে হবে?আমার দিকটাও তো দেখতে হবে তাই না?
— মানে,কি বলছেন আপনি?
— বলছি যে তুমি আমার ঘরের লক্ষি ছিলে,,তুমি থাকতে আমার সব কিছুই ঠিক ছিল কিন্তু তুমি চলে যাওয়ার পর আমার সবকিছুতেই অশান্তি চলে এসেছে।তাই বলছি তোমাকে আবার আমি চাই!
— মুখ সামলে কথা বলুন,আমার এখন স্বামী আছে,সংসার আছে।আমার স্বামী আপনার মতন অমানুষ আর নিষ্ঠুর না যে তাকে ছেরে আমি আপনার কাছে যাবো। আর কি বললেন,আমি কিসের লক্ষি ছিলাম?
লক্ষি হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি নাম,যা কোনো মুসলিমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না।
— সে যাই হোক,আমি এখন তোমাকে চাইই চাই,,তুমি আমার কাছে কবে আসছো তাই বলো?
— আপনার এই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে,, কখনওই তা পূরন হবে না।আমার স্বামীর আপনার থেকে অনেকগুন ভালো। তার নখের সমান যোগ্যতাই আপনার নাই।আর আপনার সাথে ফালতু কথা বলার সময় আমার নেই,আমি রাখছি আর ভুলেও আমাকে কখনওই ফোন দিবেন না!
— এই এই ওয়েট, এখন বুঝলাম তোমার স্বামীই তোমার কাছে সব।তাই আমার কাছে তোমাকে আনতে হলে তোমার স্বামীকেই আগে খতম করতে হবে।
নিশিতা ভয়ে ভয়ে বললো — কি, কি বললেন,কি খতম করবেন?
নেহাল হেঁসে বললো — কি আর খতম করবো! তোমার স্বামী কে, তোমার স্বামী কে শেষ করে দিলে তুমি আপনা আপনিই আমার হাতের মুঠো চলে আসবে।চিন্তা করো না বেশি সময় লাগবে না,তোমার স্বামীর অফিস তো বিকেলেই ছুটি হবে,,আমি যাচ্ছি তাকে খতম করতে,পারলে আমার হাত থেকে তোমার স্বামী কে বাঁচাও!বলেই নেহাল নিজেই ফোন কেটে দিলো।
এদিকে নেহালের কথা শুনে নিশিতার হাত থেকে ফোনটা ফ্লোরে পরে গেলো।
কিছুক্ষন পর নিলয়কে ফোন করে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বলে নিশিতা।নিলয় এর কারন জানতে চাইলে নিশিতা এ বেপারে কিছু না বলে শুধু বলে — আপনি প্লিজ আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসেন!
নিশিতার কথায় সম্মতি দিয়ে নিলয় বলে — ওকে, আমি দেখি ছুটি নিয়ে আসতে পারি কি না!
নিশিতা ফোন রেখে অজু করে যোহরের নামাজে দাঁড়িয়ে পরল।
নামাজ শেষে অনেক্ষন মুনাজাতে কান্না করে নিলয়ের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় তার জন্য দোয়া করলো।
নিলয়ের চিন্তায় নিশিতা দুপুরের খাবার না খেয়েই বিভিন্ন দোয়া দরুদ,জিকির পাঠ করতে লাগলো।
যতই সময় যাচ্ছে ততই নিশিতার দুশ্চিন্তা বেরে চলছে।
বিকেলের দিকে কেও একজন নিশিতার ফোনে কল করলো।
মোবাইলের রিংটোনের শব্দ শুনে নিশিতার বুকের ভেতরে ধুকধুকী শব্দ বেরে গেলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো এই বুঝি কোনা দুঃসংবাদ এসে পরল।
নিশিতা ভয়ে ভয়ে কাপা হাতে নাম্বার না দেখেই ফোন রিসিভ করে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো — কে?
— কি রে নাম্বার চিনছিস না?
নিশিতা এবার ভয়ে ভয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো ভাইয়া ফোন দিয়েছে।
নিশিতা মৃদ্যু কন্ঠে বললো — ওহ ভাইয়া তুমি!তা কি জন্য ফোন দিলে?
— যার জন্যই দেই,কিন্তু তোর কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেনো, কিছু হয়েছে,কোনো সমস্যা?
— না ভাইয়া এমনি,,কি জন্য ফোন দিলে তাই বলো,বাসায় কি কেও অসুস্থ?
— আরে না,একটা দুঃসংবাদ জানাতেই তোকে ফোন দিলাম?
এবার নিশিতার চোখের কোনে মেঘ জমে গেলো, এই বুঝি মেঘ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ হবে।তবুও কাপা কন্ঠে বললো — কি দুঃসংবাদ ভাইয়া?
— আরে নেহাল,তর আগের স্বামী কিছুক্ষন আগে বাইক এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে,,আমি এইমাত্র আমার এক বন্ধুর কাছে থেকে খবর পেলাম!নিলয়কেও বললাম!
নিশিতার চোখে থেকে এবার সত্যি সত্যি বৃষ্টি বর্ষন হতে লাগলো,, এই কান্না যে দুঃখের না এই কান্না যে সুখের।
নিশিতা মনে মনে বলে উঠলো — ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিওন।
আবার ভাইকে জিজ্ঞেস করলো — নিলয় কোথায় আছে!
— নিলয় তো ছুটি আনতে স্যারের কাছে গেলো,, আমাকে বললো তুই নাকি আজকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরতে বলেছিস!
— হুম,আচ্ছা ভাইয়া এখন রাখছি,পরে আমি ফোন দিবো!
— আচ্ছা রাখ তাহলে।
নিশিতা ফোন রেখেই সেজদায় লুটিয়ে পরে আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করে নিলো।
আসরের নামাজের পর মুনাজাতে আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করে নিলয়ের কল্যানে দোয়া করলো।
আজ নিশিতার ডেলেভারি ডেট।নিশিতা শুয়ে আছে হাসপাতালের বেডে আর নিলয় পাঁয়তারা করছে নিশিতার বেডের বাহিরে।
দীর্ঘক্ষণ পর যখন অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হলে নিলয় দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে নিশিতার কথা জিজ্ঞেস করলে,ডাক্তার হাঁসি মুখে বলে — আপনাদের মেয়ে হয়েছে,,এখন মা ও মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছে,,আপনারা গিয়ে দেখে আসতে পারেন!
নিলয় খুশি মনে বলে উঠলো – আলহামদুলিল্লাহ্।
১৮ বছর পর……………………
আজ নিলয় ও নিশিতার মেয়ে রাওহাকে দেখতে আসছে পাত্র পক্ষ।
অনেকে নিলয়কে বলেছিল এত তাড়াতাড়ি মেয়ে বিয়ে না দিতে।কিন্তু নিলয় তাদের কথা না শুনে তাদের বুঝিয়ে বলে দিয়েছে যে,,রাসুল (সাঃ) বলেছেন– তিন কাজে কখনো দেরি করতে নেই।
(১)নামাজের সময় হলে যথাশীঘ্রই নামাজ আদায় করা।
(২)যথাশীঘ্রই মৃত ব্যক্তির জানাযা দেওয়া।।
(৩)বিবাহের উপযুক্ত হলে ছেলে মেয়ের বিবাহ দেওয়া।
তাই রাওহা যাতে কোনো প্রেম ভালোবাসায়,জেনায় জরিয়ে না পরে সেজন্য নিলয় রাওহার ১৮ বছর হতেই তাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।
পাত্র পক্ষ রাওহাকে দেখে পছন্দ করলেও নিলয়ের কয়েকজন আত্নীয় পাত্রকে পছন্দ করেনি।কারন,পাত্র নিম্নবিত্ত ঘরের সন্তান,অল্প বেতনের চাকুরি করে।
কিন্তু নিলয় আগে রাওহার মতামত জানতে চেয়েছে।কারন
আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পূর্ব বিবাহিতাকে তার সুস্পষ্ট অনুমতি না নিয়ে এবং কুমারীকে তার সম্মতি না নিয়ে বিবাহ দেয়া যাবে না। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! তার (কুমারীর) সম্মতি কিভাবে নেয়া যাবে? তিনি বললেন, সে নীরব থাকলে।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩৩৬৪।
রাওহা নিশ্চুপ থেকে বিয়েতে মতামত জানিয়েছে।
তাই নিলয়েরও এই বিয়েতে আর কোন আপত্তি নেই।
যারা পাত্রকে পছন্দ করেনি তাদের উদ্দেশ্যে নিলয় বলে –দ্বীনদার কিন্তু ‘গরীব ’
একটি ছেলে বিবাহের
প্রস্তাব নিয়ে এল। কিন্তু
পাত্রি পক্ষ প্রস্তাবে
রাজি হল না।
=> আরেকটি বে-নামাজি
এবং ফাসেক চরিত্রের
ছেলে কিন্তু সে ‘ধনবান ’
প্রস্তাব নিয়ে এল। তার
প্রস্তাবে তারা রাজি হয়ে
গেল। তারা বলল, আমরা
আশা করছি ছেলেটি
হেদায়াত হয়ে যাবে, ভাল
হয়ে যাবে।
এই যুক্তি তো প্রথম
ছেলেটির ব্যাপারেও
দেয়া যেত যে, আশা করা
যায় আল্লাহ তাকে ‘ধনবান ’
করে দিবেন। হেদয়াতের
মালিক ও সম্পদ প্রদানের
মালিক কি এক আল্লাহই
নন?
মহান আল্লাহ্ বলেন-
“তোমাদের মধ্যে যারা
বিবাহহীন, তাদের বিবাহ
সম্পাদন করে দাও এবং
তোমাদের দাস ও
দাসীদের মধ্যে যারা
সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও।
তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে
আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে
তাদেরকে সচ্ছল করে
দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়,
সর্বজ্ঞ।
সুরা আন নুরঃ ৩২।
কিন্তু আসল ব্যাপার হচ্ছে
মানুষ ধন-সম্পদের ব্যাপারে
নগদ-নগদ চায়, আর
দ্বীনদারী বাকির খাতায়
পরে থাক। রাসূল (সাঃ)
বলেন, যদি দ্বীনদার ও
চরিত্রবান কোন যুবক
তোমাদের কাছে বিবাহের
প্রস্তাব নিয়ে আসে, তবে
তার সাথে তোমাদের
মেয়ের বিবাহ দিয়ে দাও।
যদি তোমরা তা না কর, তবে
পৃথিবীতে বড় ধরণের
ফেতনা হবে বড় ধরণের
ফাসাদ হবে। [তিরমিযী,
মিশকাত হা/৩০৯০]
মুহাম্মাদ (সাঃ) খালিফা
হওয়া সত্ত্বেও তিনি আলী
(রাঃ) মত দরিদ্র পাত্রের
সাথে তার আদরের কন্যা
ফাতিমা (রাঃ) কে বিবাহ
দেন অথচ তার চেয়ে অনেক
ধনী ব্যক্তির সাথে তিনি
দিতে পারতেন কিন্তু তিনি
দেননি। এই ব্যাপার গুলো
কি আপনারা বুঝেন বা
চিন্তা-ভাবনা করেন??
নিলয়ের কথা শুনে যারা এই পাত্রের বেপারে অমত করছিল তারা নিশ্চুপ হয়ে গেল।
নির্দিষ্ট দিনে রাওহার বিয়ে হয়ে গেল একজন নিম্নবিত্ত দ্বীনদার ছেলের সাথে।
বিয়ের পর নিশিতা নিলয়কে বলে — আমাদের মেয়ে কি সুখী হবে?নাকি আমার মেয়ের ও একই অবস্থা হবে?
নিলয় নিশিতার দুগালে হাত দিয়ে বলে — ইনশাআল্লাহ,আমাদের মেয়ে সুখী হবে।কারন, ছেলেটি গরীব হতে পারে কিন্তু দ্বীনদার।একজন দ্বীনদার ছেলের কাছে যদি কোনো মেয়ে সুখী হতে না পারে তাহলে আর কোথাও সে সুখী হতে পারবে না।টাকা পয়সা থাকলেই সুখী হওয়া যায়না।বর্তমানে সবাই শুধু টাকা পয়সাওয়ালা ছেলে খুঁজে, কিন্তু তারা এটা বুঝে না যে টাকা পয়সার মাঝে সব সুখ থাকে না।পাত্র যদি দ্বীনদার হয় তাহলে সে গরীব থাকলেও তার কাছে সুখী হওয়া যায়,,তাকে নিয়ে জাহান্নাম থেকে বেঁচে জান্নাতে যাওয়া যায়।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন — খারাপ সঙ্গী জাহান্নামের কারন হতে পারে।
তাই পাত্র ধন্যাট্য হওয়ার চেয়ে দ্বীনদার হলে ইহকাল পরকাল দু জাগায়ই সফল সুখী হবে।
নিশিতা নিলয়ের বুকে মাথা রেখে বলে — হুম,তাই জেনো হয়,,আমাদের মেয়ে জেনো সুখী হয়।
নিলয় নিশিতার কপালে চুমু দিয়ে বলে — ইনশাআল্লাহ আমাদের মেয়ে সুখী হবে।
— আমিন।
— হুম,ছুম্মা আমিন❤❤❤❤❤
♥♥♥♥♥সমাপ্তি♥♥♥♥♥
(
মাশাল্লাহ আপনার গল্পটি পড়ে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো। ইনশাল্লাহ এরকম আরো গল্প দেবেন আশা করি।