নিশির সংসার পর্ব ৬

#নিশির_সংসার
#৬ষ্ঠ_পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy

পরের সপ্তাহে বিয়ের কথা পাকা করতে নিশিতাদের বাসায় যায় নিলয়ের চাচা।
পবিত্র জুম্মার দিন বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হয়।

নির্দিষ্ট দিনে ছোটখাটো আয়োজনের মাধ্যমে মসজিদে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বিয়ের কাজ শেষ হওয়ার পরে নিশিতার ভাই নিলয়ের হাত ধরে বলে — ভাই আমার বোনটা অতীতে যে কষ্ট পেয়েছে সে কষ্ট তুমি ভালোবাসা দিয়ে মুছে দিও,,তুমি আর আমার বোনটাকে কষ্ট দিও না,,আমার বোনটা অনেক ভালো,,তুমি শুধু ওকে সুন্দর ভাবে সব কিছু বুঝিয়ে দিও ও সব কিছু করতে পারবে,,আমার আদরের বোনটাকে কখনওই কষ্ট দিও না,,

নিলয় হেঁসে বলে — আপনি নিশ্চিত থাকুন,,আমি আমার সাধ্যমতো নিশিতাকে সুখী রাখার চেষ্টা করবো। আমি আমার দ্বারা কখনো নিশিতাকে কষ্ট পেতে দিবো না।আপনি আমার উপর সম্পুর্ন ভরসা রাখতে পারেন!

নিলয়ের কথা শুনে নিশিতার ভাই খুশি হলো।

বাসর ঘরে বসে আছে নিশিতা।নিলয়ের ছোট বোন নিশিতার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যায়।যার ফলে গুটিসুটি মেরে নিলয়ের অপেক্ষায় বসে আছে নিশিতা।।

অপেক্ষার প্রহর শেষ করে রাত ১২টার দিকে যখন নিলয় রুমে প্রবেশ করলো, তখন নিশিতার বুকের ভেতরে ধুক ধুক শদ্ব বেরে যায়।

নিলয় ধীরে ধীরে নিশিতার দিকে আসতে থাকে আর ওদিকে নিশিতার বুকের ভেতর ধুকধুকানি বাড়তেই থাকে,,নিলয় নিশিতার সামনে এসে দাঁড়িয়ে সালাম দিলে নিশিতা ভয়ে ভয়ে সালামের জবাব দিলো।
নিলয় নিশিতার ভয়ার্ত তা দেখে একা একাই মুচকি হেঁসে নিশিতার পাশে বসে নিশিতার দুহাত জড়িয়ে ধরতেই নিশিতার শরীর কেপে উঠে,শরীর ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে থাকে।
নিলয় নিশিতার থুঁতনি ধরে বলে — কি ভয় পাচ্ছো আমাকে?

নিশিতা কিছু না বলে একটু নড়েচড়ে বসে।

নিলয় আবার জিজ্ঞেস করে — কি হলো ভয় পাও আমাকে!ভয় করছে এখানে!

— নিশিতা উপরে নিচে মাথা ঝাঁকুনি দেয়।

নিলয় হালকা হেঁসে বলে — আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।আমি বাঘ ও না ভাল্লুকও না,,আমি সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত,,আমি তোমার মতন একজন মানুষ,তাই মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে ভয় না পাওয়াই উত্তম।

নিশিতা এবার কিছুটা সাহস সঞ্চয় করলো।

নিলয় আবার বললো — চলো নামাজ পরে নেই,,গল্প করার অনেক সময় পাবো, এখন নামাজ পরে নেই,,যাও বাথরুমে গিয়ে ভারী কাপড় গয়না ছেরে ফ্রেশ হয়ে আসো।

নিলয়ের কথা মতো নিশিতা বাথরুমে গিয়ে ভারী জামা ও গয়না ছেরে সাধারন পোষাক পরে অজু করে আসে।

অজু সেরে বাথরুম থেকে রুমে আসতেই নিলয় একটা গিফটের প্যাকেট নিশিতার দিকে এগিয়ে দেয়।নিশিতা খানিকটা অবাক হয়ে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তা দেখে নিলয় বলে — কি প্যাকেটটা কি হাতে নিয়ে দাড়িয়েই থাকবে নাকি খুলে দেখবে।

নিশিতা খাটের উপর বসে প্যাকেটটা খুলে দেখে ২টা কালো বোরখা,হিজাব,নিকাব,,হাত ও পা মোজা, একটা তসবিহ, একটা জায়নামাজ আর সাথে কয়েকটা ইসলামিক বই আছে।যা ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেটে গুছিয়ে ভরা ছিল।

নিলয় অজু করে রুমে এসে হাত মুখ মুছতে মুছতে নিশিতাকে বলে — কি আমার সামান্য গিফট পছন্দ হয়েছে?

নিশিতা এবার হেঁসে বলে — এটা তো সামান্য না!এটাই বাসর রাতে আমার পাওয়া শ্রেষ্ঠ গিফট,, কল্পনাতে যা চেয়েছিলাম আজ মনে হয় তাই পেলাম।ইনশাল্লাহ, সামনে হয়তো কল্পনাগুলা বাস্তবে রুপান্তরিত হবে!

নিলয় নিশিতার কাধে হাত রেখে বলে — ইনশাল্লাহ, আমি আমার সর্বোত্তম চেষ্টা করবো তোমার সাজানো কল্পনাগুলা সত্যি করে তোমাকে সুখী করতে।

নিশিতা কিছু না বলে মুচকি হাসলো।

দুজন নামাজ পরে আল্লাহর কাছে দাম্পত্য জীবনের জন্য দোয়া করলো।।

দোয়া শেষে নিলয় টেবিলের ড্রয়ার থেকে ১লক্ষ টাকা এনে নিশিতাকে দেয়।

নিশিতা অবাক হয়ে বলে– এত টাকা কিসের?

— তোমার মোহরানার টাকা!

— ওহ,কিন্তু আজকাল তো তেমন কেও মোহরানা দেয়না!আপনি দিলেন যে?

— কারন এইটা তোমার হক। এইটা আল্লাহর হুকুম।
আল্লাহ তায়ালা বলেন — সূরা আন নিসা { আয়াত: ৪}

উচ্চারণঃ ওয়া আ-তুন নিছাআ সাদুকা-তিহিন্না নিহলাতান ফাইন তিবনালাকুম ‘আন শাইইম মিনহু নাফছান ফাকুলূহু হানীআম মারীআ।

অর্থঃ আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।

যেখানে আল্লাহ তায়ালা নিজে স্ত্রীদের মোহরানা দিতে বলেছে সেখানে আমি কি করে আল্লাহর আদেশ অমান্য করি?

নিলয়ের এমন আচরণ দেখে নিশিতা মনে মনে আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করলো।
এরপর নিলয়কে জিজ্ঞেস করলো — কিন্তু আপনার চাচা তো যৌতুকের কথা বলেছিলেন কিন্তু পরে আবার নিজেই যৌতুক ছাড়া বিয়ের প্রস্তাব দিলেন কেনো?

— আমি চাচাকে অনেক ভাবে বুঝিয়েছিলাম কিন্তু তিনি কিছুতেই যৌতুক ছাড়া বিয়েতে সম্মতি দিবেন না,,আর আমার বাবা মারা যাওয়ার পর তিনিই আমাদের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন,,তাই আমিও তার অমতে যেয়ে বিয়ে করতে চাইনি,তাই তাকে রাজি করানোর জন্য বিভিন্ন ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করছি কিন্তু তিনি কিছুতেই বুঝতে চাইতেন না।তিনি শুধু তোমার নানান দোষ বের করতেন আর বিয়েতে যৌতুকের দাবি করতেন।
তাই কোন উপায় না পেয়ে আমার চাচাতো বোন নিলাদ্রীর বিয়েতে নিলাদ্রীর বর আর শ্বশুরের সাহায্য নেই,,যার ফলে নিলাদ্রীর বিয়ে উপলক্ষে যৌতুক দাবি করে চাচাকে চাপ দিতে থাকেন নিলাদ্রীর শ্বশুর,,যার চাপ সইতে না পেরে চাচা নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পারে আর আমার আর তোমার যৌতুক বিহীন বিয়েতে রাজি হয়।

— যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করি?

— আরে কিছু মনে করার কি আছে?তুমি আমার স্ত্রী, আমার সব বিষয়ে জানার অধিকার তোমার আছে!বলো কি কথা!

— আপনার আগের স্ত্রী আপনাকে ডিভোর্স দিলো কেনো?

চলবে……………………………………???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here