#নিশির_সংসার
#৮ম_পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy
নিলয় আর নিশিতা যখন বাসে বসে আছে তখন ঘটলো এক বিপত্তি,,কারন নিলয়ের পেছনের ছিটে বসে আছে নিলয়ের পরিচিত একজন আর অপর পাশে বসে আছে কয়েকজন বখাটে ছেলে।
বখাটে ছেলেগুলা কোনো মেয়েকে উদ্দেশ্য করে খারাপ কথা বলছে,,নিলয় একবার নিশিতার দিকে তাকিয়ে দেখল নিশিতা স্বাভাবিক ভাবেই বসে আছে।গায়ে কালো বোরখা, হিজাব, নিকাব,হাতে পায়ে কালো মোজা পরা আছে।
নিলয় ভাবতে লাগল ছেলেগুলা কাকে উদ্দেশ্য করে এমন বাজে কথা বলছে আর গান গাইছে।কিছুক্ষণ পর নিলয় পেছনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো নিলয়ের এলাকারই এক বড় ভাই বসে আছে আর তার পাশে বসে আছে তার স্ত্রী। তিনি টাইটফিট সালোয়ার কামিজ,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, মাথার চুলগুলা খুলা,,নিলয় এক মুহুর্ত দেখেই চোখ সরিয়ে নিলো। নিলয়ের বুঝতে বাকি রইল না যে,ভাইয়ের বউকে দেখেই বখাটে ছেলেগুলা এমন করে বাজে মন্তব্য করছে,শিষ দিচ্ছে গান গাচ্ছে,,একজন আবার তার কাছে ঘেষারও চেষ্টা করছে।
নিলয় ছেলেদের কয়েকবার বাজে কথা বলতে নিষেধ করলেও তারা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও একই কথা বলতে থাকে।
বাস যখন গন্তব্যে থামল,তখন বাস থেকে নামার সময় সেই মেয়েটিকে বখাটেদের একজন ইচ্ছা করেই গায়ের সাথে ধাক্কা দেয়।কিন্তু বাসের মধ্যে এত মানুষ থাকলেও তার প্রতিবাদ কেও করেনা।নিলয় নিশিতাকে নিয়ে সবার পরে বাস থেকে নেমে গিয়ে এলাকার সেই ভাইটিকে ডাক দিয়ে রাস্তার একপাশে নিয়ে গিয়ে বলে — ভাই শুনুন একটা কথা বলি।কিছু মনে করবেন না।
লোকটি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।
নিলয় লোকটির কাধে হাত রেখে বললো — আপনার স্ত্রী একান্তই আপনার সম্পদ।তাই আপনি কি চান আপনার সম্পদে মসা মাছি,ধুলোবালি পড়ুক?
— না তো তা চাইবো কেনো?
— তাহলে স্ত্রী কে এভাবে খুলামেলা নিয়ে বাসা থেকে বের হইছেন কেনো”দেখলেনই তো বখাটে ছেলেগুলা ভাবিকে উদ্দেশ্য করে কি বললো, আবার গায়েও ধাক্কা দিলো। কই আমার স্ত্রীও তো আমার সাথে আপনাদের সামনের ছিটেই ছিলো,, কই কোনো ছেলে তো আমার স্ত্রী কে নিয়ে বাজে কথা বললো না,কেও এসে ধাক্কা দিলো না।
লোকটি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।
— ভাবিকে কটু কথা বলার পেছনে দোষগুলা বখাটে ছেলেগুলার একা না,আপনাদের কর্মকান্ডের ফলেই ওরা এরকম করে মজা পায়।তাই নিজের সম্পদকে নিজ দায়িত্বে হেফাজত রাখুন,,ভাবিকে পর্দায় রাখুন,দেখবেন কেও খারাপ নজরে তাকাবেও না কেও কটু কথাও বলবে না।আর আল্লাহর রহমতও থাকবে,,কেননা নামাজ রোজার মতন পর্দাও ফরজ।
কিছু মনে করবেন না ভাই,আপনাকে বুঝানোর জন্যই এতগুলি কথা বলতে হলো,বলেই নিলয় নিশিতার হাত ধরে পথ হাটতে লাগলো।
নিশিতা শুধু নিলয়ের সাথে পথ হাটতেছে কিন্তু তার কানে লোকটিকে বলা কথাগুলা নিশিতার কানে বাজতেছে।
নিশিতা মনে মনে ভাবলো,এভাবেই আপনি আমাকে সারাজীবন আগলে রাখবেন,কখনওই এই হাত ছেড়ে দিবেন না,,তাহলে যে আমি একেবারে নিঃশ্ব হয়ে যাবো।
বাসায় ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়।নিলয় ও নিশিতা দুজনে মাগরিবের নামাজ আদায় করে নেয়।
রাতে যখন নিলয় আর নিশিতা খেতে বসে তখন নিলয় নিজ হাতে খাবার মেখে নিশিতার দিকে এগিয়ে ধরে!
নিশিতা কিছুক্ষণ নিলয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে,তা দেখে নিলয় নিশিতাকে বলে — কি হলো,খাবে না?
নিশিতা মাথা কাত করে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়।
নিশিতার মুখে খাবারের লোকমা দিয়ে নিলয় বলে — জানো নিশিতা হাদিসে আছে যে স্বামী তার স্ত্রী কে এক লোকমা ভাই খাইয়ে দিবে, আল্লাহ ঐ স্বামীর ছগীরা গুনাহ মাফ করে দিবেন।আবার যে স্ত্রী তার স্বামী কে এক লোকমা ভাত খাইয়ে দিবে আল্লাহ ঐ স্ত্রীর ছগীরা গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং প্রতি লোকমা ভাতের বিনিময়ে স্বামী স্ত্রী উভয়ের আমলনামায় ১০০০ নেকী লিখা হবে।{মুসলিম শরিফ}
আবার অন্য হাদিসে আছে — যে ঘরে স্বামী স্ত্রী একই প্লেটে খাবার খাবে,যতক্ষণ পর্যন্ত খাবার খাবে ততক্ষণ পর্যন্র স্বামী স্ত্রী উভয়ের আমলনামায় নেকি লিখা হবে!{তিরমিযী}
নিশিতা বলে উঠলো — সুবহানআল্লাহ।
অতঃপর নিশিতা নিলয়ের মুখে ভাতের লোকমা তুলে দিলে নিশিতাও নিলয়ের মুখে ভাতের লোকমা তুলে দিলো।
যখন দুজন ঘুমাতে গেলো তখন নিলয় নিশিতাকে ডেকে বললো — এদিকে আসো!
নিলয়ের ডাকে নিশিতা যখন নিলয়ের কাছে গেলো তখন নিলয় নিশিতাকে এক টানে বুকে নিয়ে শুয়ে পরলো।
তাতে নিশিতা লজ্জা পেয়ে আরও গভীরভাবে বুকে মাথা রাখলো।
নিলয় নিশিতার বেপার বুঝতে পেরে বললো — এই যে লজ্জাবতী, এতো লজ্জা পেতে হবে না।
আমি জানি একজন পুরুষের বুকেই নারীর সর্বোচ্চ নিরাপদে থাকে,,যদি সেই পুরুষটি ধার্মিক এবং সৎ চরিত্রবান হয়।
নিশিতা নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বললো — হুম,এখন ঘুমান অনেক রাত হইছে,,ফজরে আবার উঠতে হবে।
— আচ্ছা ঘুমাই,তার আগে একটা কাজ সেরে নেই,বলেই নিলয় নিশিতার কপালে আলতোভাবে চুমু খেলো।
নিলয় নিজের গাল ইশারা করে নিশিতাকে চুমু দিতে বললে নিশিতা অসম্মতি জানায়।
তা দেখে নিলয় বলে — চুমু না দিলে তোমারই লস,আমার কোনো কিছুই না।
নিশিতা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে — আমার লস মানে?
নিলয় হেঁসে বলে — মানে হলো,যে স্বামী তার স্ত্রী কে একবার চুমু দিবে এবং যে স্ত্রী তার স্বামী কে একবার চুমু দিবে,প্রতিটি চুমুর বিনিময়ে স্বামী স্ত্রী উভয়ের আমলনামায় ১০০ নেকি লিখা হবে।{মুসনাদে আহমদ }
নিলয়ের কথা শেষ হতে না হতেই নিশিতা নিলয়ের গালে চুমু দিয়ে নিলয়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললো।
নিলয় খানিকটা মুচকি হেঁসে নিশিতাকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
ফজরের আজানের আগে নিশিতার ডাকে ঘুম ভাঙলো নিলয়ের।তাকিয়ে দেখে নিশিতা এক হাতে ভর করে নিলয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তাতে নিশিতার চুলগুলা নিলয়ের মুখের উপর সামান্য ভাবে দুল খাচ্ছে।কিন্তু নিলয়কে হঠাৎ চোখ খুলতে দেখে নিশিতা লজ্জা পেয়ে উঠতে যাবে এমন সময় নিলয় নিশিতার হাত ধরে টান দেয়,যার ফলে নিশিতা নিলয়ের টান সামলাতে না পেরে নিলয়ের উপর পরে যায়।নিলয় নিশিতাকে দুহাতে জরিয়ে ধরে বলে — কি লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখা হচ্ছে তাই না?
নিশিতা কিছু না বলে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।কিন্তু নিলয়ের শক্তির সাথে কিছুতেই পেরে উঠতে পারে না নিশিতা।
নিলয় আবার বললো — কি হলো বললে না, এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিলে!
— কি আবার দেখব,আপনাকে দেখছিলাম।
— আগে কখনো দেখনি আমাকে?
— দেখেছি কিন্তু এভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখিনি।ঘুমন্ত অবস্থায় আপনাকে অনেক সুন্দর লাগে।
নিলয় হেঁসে বললো — তাই নাকি?
— হুম,এবার উঠুন তো,,আজান দিয়ে দিবে।
— উঠবো তার আগে বলো এত আমার কাছে এত লজ্জা কেনো তোমার?
— উফফ, জানিনা,এবার উঠুন।
নিলয় উঠতে উঠতে বললো — হুম,সারাজীবন আমার কাছে এরকম লজ্জাবতী হয়েই থেকো,,কেননা একজন নারীর সর্বশ্রেষ্ঠ গহনা হলো তার লজ্জা।{মা ফাতিমা (রাঃ)}
নিলয় ফ্রেশ হয়ে অজু করে আসলে নিশিতা নিজ হাতে নিলয়কে নামাজের জন্য প্রস্তুত করে দেয়।
তা দেখে নিলয় বলে — কি বেপার,আমার লজ্জাবতী আজ এত যত্ন করছে আমার!
— কই এতো যত্ন করছি!
— সে তো দেখতেই পারছি,,ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললে আবার নামাজের জন্য প্রস্তুত করে দিলে যে?
— কারন, যে স্ত্রী তার স্বামী কে সকালে ঘুম থেকে জাগিয়ে পবিত্র করে, ফজরের নামাজের জন্য মসজিদে পাঠিয়ে দেয়,,ঐ স্ত্রীর জন্য স্বামীর অন্তরে আল্লাহর তরফ থেকে ভালোবাসার নূর পয়দা হয়।{বুখারি}
নিলয় হেঁসে বললো — যাক তাহলে আজ থেকে তোমার প্রতি ভালোবাসাটা আরও বৃদ্ধি পাবে।
নিলয়ের কথা শুনে নিশিতা এবার না হেঁসে পারলো না।
— হাসো,হাসো, বেশি করে হাসো!
— বেশি হাসবো কেনো?
— কারন,যে স্বামী স্ত্রী উভয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাঁসি দিবে,তাদের প্রতিটি হাসিতে স্বামী স্ত্রীর উভয়ের আমলনামায় ১০ টি করে নেকি লিখা হবে।{আবু দাঊদ}
দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হেঁসে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করলো,,
তারপর নিলয় মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো,,এরকম একজন স্বামী দেওয়ার জন্য মনে মনে নিশিতা আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করলো।
সকালে নিলয় অফিসে যাবার পরপরই নিশিতার ফোনে নিশিতার ভাইয়ের ফোন আসলো।
নিশিতা ভাইকে সালাম দিলো। নিশিতার ভাইও সালামের জবাব দিয়ে বললো — তোর আগের স্বামীর খবর শুনেছিস!
— কেনো ভাইয়া,তার আবার কি হইছে,তার সাথে তো আমার কোনো যোগাযোগ নেই!
— তোর আগের সেই মাদকাসক্ত স্বামী একজনকে খুন করেছে……………
ভাইয়ের মুখে একথা শুনে ভয়ে নিশিতার গলা শুকিয়ে যায়……………………………………
চলবে………………………………???