‘নিশীথচিত্র'(২)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে
রিনির মা রেহানা দিহানের জন্য নাস্তা পানি নিয়ে আসে।দিহান রেহানাকে সম্মানের সহিত সালাম জানিয়ে কুশল বিনিময় করে। রিনির দাদি এসে বেশ কিছুক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে দেয়।দিহানের বেশ ভালো লাগে।তার দাদিটা বহুত আগেই গত হয়েছেন।
রিনির দলবল বেশ কিছুক্ষণ আগেই চলে গেছে। সোফার কোণায় দাড়িয়ে আপাতত দিহানকে স্কান করতে ব্যস্ত।তার ভাবনা অনুযায়ী যেহেতু গ্রামের ছেলে… তাতে কথাবার্তা চলাফেরায় খ্যাতনেস থাকা উচিত ছিলো কিন্তু রিনি এমন কিছুই পায় নি।অবশ্য আগে এতোটা গোছানো ছিলো না। কথাবার্তা বেসভুসায় বেশ স্মার্টনেস প্রকাশ পাচ্ছে।
ব্লাক রেড কম্বিনেশন শার্ট সাথে জিন্স।লম্বা ফাইভ এইট।গায়ের রং টা খুব মিষ্টি হলদেটে। রিনির তৎক্ষনাৎ মনে হলো ” এই শালা জন্ডিসের ডেটওভার রোগী নয় তো? ঠোঁট ডার্ক রেড কেন? এতে বুঝবো কি? বিড়ি খায় নাকি সিগারেট খায়? ভাবনার বিষয়!!!
রিনির গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা চিন্তার মাঝেই মুনির হোসেনের ডাক।
— “জ্বি বাবা বলো।”
–” ও এতো দূরে থেকে জার্নি করে এসেছো আজ আর বাইরের ঘরটাতে থাকতে হবে না। মানে দোতলা বাড়ির পাশের দুই রুম বিশিষ্ট টিন সেটের ঘরটা দেখেছো সেটা আরকি।যদিও একদম পরিষ্কার করে রেখেছি তবুও আজ ক্লান্ত তুমি। তার থকে বরং ফ্রেস হয়ে এসে তারপর ভাত খেয়েই একটা ঘুম দিও কেমন?”
— “বাবা আমাকে ডাকলে আর তার সাথেই কথা বলছো?”
–“হ্যা দিহান বাবাকে নিয়ে যা। গেস্ট রুমটা দেখিয়ে দিয়ে আয়।কি কি লাগে এগিয়ে দিবি কেমন? আর শোন তোর বড় ভাইয়া হয় তাই ভাইয়া ডাকবি।”
এরপর বিরবির করে বলে “কাকে কি ডাকতে হয় আজও শিখিয়ে দিতে হচ্ছে।”
রিনি অত্যন্ত বিনিয়ের সাথে বলে
–” ওকে বাবা।আপনি আসুন ভাইয়া আসুন।”
আড়ালে ভেংচি কেটে নেয় রিনি যা দিহানের চোখ এড়ায় না।
দিহান রিনির এক্সপ্রেশন দেখে ভাবছে নাক টিপলে হাগু বের হয় সেই মেয়ের কি ভাব!!!!
রুমে এসে দিহান বিছানাতে গা এলিয়ে দেয়।তখন রিনি বেশ ভাব নিয়ে বলে ওঠে
— “এই ছেলে এই তোর পুরো নাম কি বে?”
দিহান চোখ বন্ধ করে রেখেছিল হঠাৎ এমন কথায় চোখ তুলে রিনির দিকে তাকায়
— “ওই ছেলে কানে যাচ্ছে না কথা?তোর পুরো নাম কি?”
দিহান উঠে বসে।এতো ক্লান্তিত পর এসব কথাবার্তায় মেজাজ খারাপ হয় দিহানের।অমর্ষ কন্ঠে বলে
— “বাইরে আংকেলের সামনে দিব্যি আপনি করে বলছিলি এখন তুই তে নামলো কেন? আমার পুরো নাম পরে বলবো। আগে তোর নাম বল।”
রিনি নাম বলে না।উল্টো ঘাড়ত্যাড়া জবাব দেয়
— “নামবে তোর কি?”
দিহান বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আবার বললো
— “তোর পুরো নাম কি?”
রিনি দুলতে দুলতে বলে
–” রাইনাতুন্নেসা রিনি।”
–” তো তুন্নেসা তুই কোন ক্লাসে পড়িস রে? সেভেন নাকি এইট?”
রিনি বড়সরো একটা ভেংচি কাটে অর্থাৎ এতো ছোট ক্লাসে কেউ পড়ে নাকি? বেশ বড় গলা করে জবাব দেয়
— “আমি সাড়ে নাইনে পড়ি।”
দিহান অবাক না হয়ে পারে না।সাড়ে নাইন ক্লাস আছে নাকি? মমার্থ বুঝতে পেরে বেশ হাসি পায়।এইটুকুন মেয়ে নাইনে পড়ে।
বেশ গম্ভীর চিত্তে বলে
–” তুন্নেসা আমি এতো ক্লাসে পড়েছি কিন্তু সাড়ে নাইনটাকে মিস করে গেছি।তুই এই ক্লাস টা পেলি কই?”
— “গাধা নাকি তুই? নাইনে উঠে ছয় মাস গেলেই তো তাকে সাড়ে নাই ক্লাস বলে।”
— “তাহলে নাইনে উঠে সাত মাস গেলে তাকে কোন ক্লাস বলে?”দিহানের হাসি উপচে পরতে চাইছে যেনো।
রিনু ভ্রু কুচকায়।
— “তুই হাসছিস কেন? মজা হচ্ছে আমার সাথে?”
— “ঐ পুচকি আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে।”
— “উত্তর জানি না হয়েছে? কিন্তু তুই আমাকে তুই করে কেন বলছিস?”
এবার দিহান এসে রিনির দিকে এগোয় কিছু টা।রাশভারি কণ্ঠে বলে
–“তো তুই আমাকে তুই করে কেন বলছিস?আমি তোর বড় না?নাকি আমার সাইজটা তোর সাইজের মতো লাগে?দুই আঙুল মেয়ে একটা।”
— “আমি দুই আঙুল? তোর বউ দুই আঙুল শয়তান ছেলে।”
— “আবার তুই?”
দিহান তেড়ে আসে।
— “হ্যা হ্যা তুই করেই বলবো। এভাবে বাঘের মতো আগাচ্ছিস কেন?ভালো হবে না কিন্তু”
রিনি খানিক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পরে
দিহানের বেশ হাসি পায়।তবুও রাগ চোখে বলে,
— “কিন্তু তোর মতো পুচকি আমায় তুই করে বললে আমার মহাভারত যে অশুদ্ধ হয়ে যাবে তার বেলায়?সো ফাস্ট করে আপনি বলে ফেল।”
— “হলে হবে।আমার কি?”
ভাবলেশহীন উত্তর।অবশ্য ভিতরে ভয় পাচ্ছে যতটা সম্ভব সাভাবিক রাখার চেষ্টা। ।নিজের ভাব বজায় রাখতেই হবে এটা মূল কারণ ।দিহানের দিকে এক দৃষ্টিতে দৃষ্টি দিলো রিনি। মোটামুটি কাছ থেকে দেখছে দিহানকে।অপুর্ব সুন্দর কিছু মনে হলো তার কাছে আর সেটা নিজের মনের অজান্তেই। মুখ দিয়ে যেনো আর কথা বের হচ্ছে না।
পিছিয়ে গেলো খানিক। দিহান ভয় দিতে আবার এগিয়ে এলো।।হুট করে রিনির হাত দুটো একহাতের মধ্যেই শক্ত করে ধরে।জীবনের প্রথম এমন অবস্থার মুখোমুখি হলো সে।নিরবচ্ছিন্ন ভাবে হাত দুট মুচরাচ্ছে তবে দৃষ্টি দিহানের মুখেই নিবদ্ধ। কি কিউট ফেস!!! কি ঝরঝরে সোজা চুল!!!!বেশ কয়টা চুল কপালে এসে পরে সৌন্দর্য দিগুণ হয়ে গেছে যেন।নাহ এভাবে আর থাকা যাচ্ছে না।এই ছেলের মধ্যে কি যেন আছে বিশেষ করে চোখ আর ঠোঁটের জন্য চেহারার মায়া দিগুন বেড়ে যায়।আজ প্রথম বার রিনির মনে হলো তার কেমন কেমন লাগছে।খুব কেমন কেমন!!
এটা প্রকৃতির সাভাবিক খেলা যা সম্পর্কে অবগত নয় রিনি।বুঝ ক্ষমতা আসলেই অপরিপক্কতা আসে।
— “তুই করে বলবি আর আমাকে?” দিহানের কন্ঠে ধমকের সুর।
রিনি আওয়াজ ছোট করে বলে
–” না না আর বলবো না।ছাড় এবার তাহলে, সরি থুক্কু ছাড়ুন আমার অসস্তি হচ্ছে এভাবে ছাড়ুন বলছি।”
রিনির চোখ মুখ খিচিয়ে বন্ধ করে কথা বলা বেশ ভালো লেগে গেলো দিহানের। মুচকি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে
–” বয়স কতো? ”
— “সাড়ে চৌদ্দ। ”
— “এই মেয়ে তোর সব কিছু কি সাড়ের ঘরে থাকে?”
— “থাকলে থাকে সর তুই”
–” আবার তুই?”
–“সরি সরি।সরুন ভাইয়া”
— “এ বাবা ডিরেক্ট ভাইয়া? যাক প্রমোশন হচ্ছে তাহলে,,,, ছেড়ে দিলাম যা।”
রিনি যেনো জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে এমন একটা নিশ্বাস নিলো।তরিঘরি করে রুম থেকে বেড়োতে গিয়ে আবার বাধা পেল।পিছন থেকে কেউ চুল টেনে ধরেছে। দিহান ছাড়া আর কেউ না রিনি বুঝতে পেরেছে।তখনই দিহানের গলা,
— “এই মেয়ে বাইরের কোন ছেলে আসলে লাফাতে লাফাতে সামনে যাওয়া কেমন অভ্যাস? আর যাবি না।থ্রিচিপ পরে যাবি উইথ ওড়না আর তা না হলে যাবি না।আমার সামনে অন্তত আসবি না।তোর নলার মতো ঠ্যাং দেখতে আমি একদম চাই না একদম না। বুঝেছিস? মাথায় ঢুকেছে?”
রিনি পিছনে দিহানের দিকে না ঘুরেই দুবার মাথা নাড়ায়।অর্থাৎ সম্মতি দিয়েছে এমন।দিহান চুল ছেড়ে দিলো।
রিনি তারাতারি করে রুম ত্যাগ করে।দিহান হেসে দেয় তারপর দরজা চাপিয়ে জামা খুলে টি-শার্ট গায়ে দেয়।জিন্স খুলে ট্রাউজার পরছে ঠিক এমন সময় দরজার বাইরে থেকে আওয়াজ আসে।
— “এই দিহান এই আমি তোকে ভয় পাই?হ্যা? একটা টিপস দি শুন লুঙ্গি পর বাতাস ঢুকবে অনেক বাতাস।জার্নি করে এসেছিস চিল করতে পারবি বুঝলি তো?”
দিহান দরজা খুলে কাউকে পায় নি।কি সাহস ভাবা যায়? পুচকি মেয়ে তোকে বাতাস খাওয়াচ্ছি দাড়া।কাকে বুঝালো এতক্ষণ সে? আবার যেই লাউ সেই কদু!!কি আজব!!হুহ!!
দিহান তাড়াতাড়ি গোসলের জন্য বাথরুমে প্রবেশ করে।এ নিয়ে আপাতত ভাবতে চায় না সে।
চলবে,
✔
❌