নীল চোখ পর্ব -০৩

#গল্পঃনীল_চোখ।
#পর্বঃতিন।
#লেখাঃMd_Tarajul_Islam(Shihab)

মাঝরাতে তিশা অনুভব করলো কে যেন ওর গলা শক্ত করে চেপে ধরলো।তিশা ঘুমের মধ্যে গলা থেকে ওর হাত সরানোর চেষ্টা করে চলেছে কিন্তু সেটা সে পারছে না।তারপর তিশার কানের কাছে কেউ যেন দাঁতে দাঁত চেপে বলছে,
->তোর স্বামী আমার বউকে স্পর্শ করেছে এর শাস্তি স্বরুপ আমি তোকে মেরে ফেলবো।
তিশা কথা শুনে ভয়ে মনে মনে সে যত দোয়া পারে সব একসাথে পড়তে লাগলো।আর তখন হঠাৎ ওর গলা থেকে হাত সরে গেলো।তিশা তখনই চোখ খুলে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।তিশা জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে আর একটু হলে যেন ওর দম বেরিয়ে যেত।তিশা রুমের লাইট জ্বালিয়ে উঠে চারদিক তাকালো দেখলো কেউ নেই।মনে মনে ভাবলো,এটা কি সত্যি ছিলো নাকি সে স্বপ্ন দেখেছে বুঝতে পারছে না।কিন্তু ওর গলাটা কেমন যেন ব্যথা করছে,আর ভিতরটা শুকিয়ে গেছে।একটু পানি খেলে ভালো হতো।তিশা টেবিলের ওপর তাকিয়ে দেখলো আজ সে পানি আনতে ভুলে গেছে।তাই পানি খাওয়ার জন্য রুম থেকে বাইরে আসলো।
তিশা পানি খাওয়ার পর মনে মনে ভাবছে,তাকে স্বপ্নে এমন কথা বলার কারনটা কি?আয়ান কার বউকে স্পর্শ করেছে যার কারনে কেউ এমন কথা বলতে পারে?নাকি ওই অধরা মেয়েটির কারনে কেউ এমন কথা বলেছে?তবে অধরা কি আগে অন্য কারো স্ত্রী ছিলো?পরক্ষণেই তিশা নিজের মাথায় চড় মেরে বলল,ধুর সামান্য একটা স্বপ্ন দেখে সেটা নিয়ে কি সব যা তা ভাবছি।আসলেই আমি একটা পাগল।
“তিশা এত রাতে এখানে দাড়িয়ে আছো কেন?”
তিশা ওর শাশুড়ি রত্না বেগমের কথা শুনে চমকে উঠলো।তারপর ওর শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলল
->এই তো মা পানি খাওয়ার জন্য উঠেছিলাম।
->ও।আচ্ছা ঠিক আছে শুয়ে পড়ো।
->হুমম।
তিশা ওর রুমে গিয়ে শুয়ে দরজা ভালো করে বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
সকালবেলা তিশা ঘুম থেকে উঠার পর থেকে ওর গলা খুব ব্যথা করছে।সকালের নাস্তা শেষে যখন আয়ান ওর কাছে এসে কপালে একটা চুমু দিলো।তারপর কি যেন বলতে যাবে তার আগে সে উত্তেজিত কন্ঠে বলল
->তিশা তোমার গলায় কি হয়েছে?তোমার গলা এমন লাল আর জখম আছে কেন?
তিশা নিজেও অবাক হলো আয়ানের কথা শুনে।তার মানে রাতের বেলা সত্যি কেউ ওর গলা চেপে ধরেছিলো আর এজন্য বোধ হয় এখন ওর গলা ব্যথা করছে।কিন্তু কে ওর গলা চেপে ধরবে সে তো দরজা বন্ধ করে ঘুমায়।তিশাকে চুপ থাকতে দেখে আয়ান বলল
->কি হলো তিশা আমি তোমায় কিছু বলেছি।
তিশা ঈষৎ হেসে বলল
->এমনিতেই হয়তো।
আয়ান তখন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তিশার দুই বাহু চেপে ধরে বলল
->আমার কিন্তু খুব ভয় করছে তিশা।তুমি আবার নিজের কোনো ক্ষতি করবে না তো?
->ধুর বোকা নিজের ক্ষতি কেন করবো?তুমি শুধু শুধু টেনশন করছো।তুমি কাজে যাও আমি ঠিক আছি।
আয়ান আর দুই একটা কথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে কিন্তু তার আগে আরো একবার তিশার দিকে ঘুরে বলল
->আমি তোমাকে একটা কথা কয়েকদিন ধরে বলতে গিয়েও বলতে পারছি না।
->কি কথা?
->আমি যখন রাতে ঘুমিয়ে পড়ি তখন মাঝরাতে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায় তাহলে আমি অধরাকে কোথাও দেখতে পাই না।
->হয়তো বাথরুমে যায়।
->না।বাথরুমে যেতে হলে দরজা খুলে বাইরে আসতে হয়।কিন্তু দরজা ভিতর থেকেই বন্ধ থাকে আর অধরাকে কোথাও পাওয়া যায়না।
কথাটা শুনে তিশা একটু অবাকই হলো।তিশা বলল
->তাহলে কোথায় যায় সে?
->জানি না।আরেকটা ব্যাপার হলো প্রথমদিন থেকে দেখছি ওর চোখ হতে মাঝে মধ্যে নীল রংয়ের আলো বের হয়।
তিশা তখন মনে মনে ভাবলো,এরকম তো সে নিজেও একবার দেখেছে তাহলে কি অধরা সত্যি সাধারন কেউ নয়?তিশা বলল
->আচ্ছা ঠিক আছে তুমি কাজে যাও।আমি দেখবোনি ব্যাপারটা।
আয়ান কাজে চলে গেলো।তিশাকে এবার অধরার ব্যাপারটা বেশ ভাবিয়ে তুলছে,এতদিন হয়ে গেলো অধরার বিয়ে হয়েছে অথচ ওর পরিবারের কেউ তো এই বাসায় একবারো এলো না,কেন?এমনকি সে মা হতে চলেছে সে খবর পাওয়ার পর তো একবার হলেও আসার কথা কিন্তু আসেনি তো?তিশা রত্না বেগমের কাছে গিয়ে বলল
->মা একটা কথা বলার ছিলো আপনাকে?
->হ্যাঁ বলো কি কথা?.
->অধরার এতদিন হয়ে গেলো বিয়ে হয়ে এই বাড়িতে এসেছে কিন্তু আজও ওর মা-বাবা এই বাড়িতে বেড়াতে এলো না কেন?
->আসলে উনারা কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকে তাই এখানে আসার সময় পায়নি।
->কি এমন কাজ করে যে মেয়ের বাড়িতে আসার সময় হয় না।অধরা মা হতে চলেছে এটা বাসায় জানিয়েছেন?
->আছমা বলেছে সম্ভবত।
রত্না বেগমের চোখ তিশার গলার দিকে যেতে তিনি বললেন
->একি তিশা তোমার গলায় এমন দাগ হলো কি করে?
তিশা তখন রত্না বেগমকে সব বললেন।সব শুনে তিনি বেশ চিন্তিত হয়ে গেলেন।তিশা বলল
->আপনি চিন্তা করবেন না আমার কিছু হবেনা।
->এমন হওয়া কিন্তু মোটেও ভালো লক্ষণ না।
->হুমম।চিন্তা করেন না কিছু হবে না।

অধরা গর্ভবতী হবার পর থেকে দরকার ছাড়া রুম থেকে বের হয়না।প্রায় সব খাবার তিশা দিয়ে আসে।এতে অধরা তিশার ওপর বেশ খুশি।আজ দুপুর বেলা তিশা অধরার রুমে খাবার দিতে যাওয়ার সময় ওর রুমের দরজার কাছে যেতে শুনতে পেলো অধরা কাকে যেন বেশ রাগী গলায় বলছে,
->তুমি তিশার কিচ্ছু করবে না বলে দিলাম।তোমার কারনে আমার বউ হয়ে আসতে হয়েছে।একবার বাচ্চাটা আসতে দাও তারপর যা করার করবে তার আগে ওদের কিচ্ছু করবে না।এতে হীতে বিপরীত হবে।
তিশা এসব কথা শুনে বেশ চমকে গেলো তারমানে কেউ সত্যি সত্যি ওর গলা চেপে ধরেছিলো।আর যে ওর গলা টিপে ধরেছিলো তাকে অধরা নিজেও চিনে,এমনকি বাচ্চা হওয়ার পর এদের ক্ষতি করবে?।কিন্তু অধরা এখন কার সাথে কথা এই মুহুর্তে তো ওর হাতে কোনো ফোনও নেই।তাহলে কি কেউ আছে এখন ওর সামনে?তিশা আবার দেখতে লাগলো অধরা এবার দাঁত কটমট করতে করতে বলছে
->তুমি যাকেই কথা দিয়ে থাকো না কেন সেটা তোমার ব্যাপার।তুমি এই মুহুর্তে চলে যাও।কারন নয়তো আমরা ধরা পড়ে যাবো।
এটা বলে অধরা ঘুরে তাকালো আর তখনি তিশা অধরার ভয়ংকর এক চেহারা দেখতে পেলো।চোখ দুটো নীল।মুখে অনেক রকমের ক্ষতের দাগ।মুখের দুইপাশে বড় বড় দুটো দাঁত।তিশা ভয়ে পিছন দিকে সরে আসলো।মনে মনে ভাবছে এটা কারা এসেছে এই বাড়িতে,এরা তো সাধারন কোনো মানুষ না।এখন কি করবে সে?
তিশা ওর রুমে ফিরে এসে বসে পড়লো বিছানার ওপর।সে ভাবতে পারছে না যে ওদের বাসায় মানুষ রুপি এক ডাইনি ঢুকে পড়েছে।এমন সময় অধরা চিৎকার করে ডাকলো
->আপু তোমার বাবুর ক্ষিদে পেয়ে খাবার খাওয়াবে না তাকে?দেখে সে পেটের মধ্যে কত ডাকাডাকি করছে।
অধরার ডাকে তিশা হুশে ফিরে আসলো।মনে মনে ভাবছে এখন ইচ্ছা না থাকলেও ডাইনিটাকে খাবার দিতে যেতে হবে।কিন্তু এরা কি উদ্দেশ্য এখানে এসেছে।বাচ্চা হলে এরা কি করতে চায়?হাজার রকমের প্রশ্ন তিশার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।অধরা যেদিন থেকে জানতে পেরেছে,যে সে মা হতে চলেছে তখন থেকে সে তিশাকে বলে,”এটা শুধু আমার একার না তোমারও বাবু”।আর এজন্য সে এভাবে ডাকলো।তিশা নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো আর ঠিক সেসময় রত্না বেগম তিশার রুমে এসে ঝাড়ি মেরে বলল
->এখন বেলা কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে তোমার আরো কখন মেয়েটাকে খেতে দিবে শুনি?এই অবস্থায় এত বেলা পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হয় হ্যাঁ?নিজের তো হয়নি বুঝবে কি?
কথাটা শুনে তিশা বেশ কষ্ট পেলো।নরম সুরে বলল
->ভুল হয়ে গেছে মা।এখনি খাবার দিচ্ছি।
তিশা অধরার কাছে খাবার দিলো।অধরা কি সুন্দর বাচ্চাদের মতো করে খাবার খাচ্ছে,আর তিশার রান্নার প্রশংসা করছে।এটা দেখে কে বলবে যে,সে একটা মানুষ নামের ডাইনি।

তিশার এই জিনিসগুলো দেখতে ইচ্ছা করছে না।তাই ভাবলো কয়েকদিন বাড়ি থেকে ঘুরে আসলে মন্দ হয় না।তিশা গিয়ে রত্না বেগমকে বললেন
->মা আমার বাসায় যেতে মন চাইছে যদি অনুমতি দেন তো যাবো।দুই একদিন থেকে আবার চলে আসবো।
রত্না বেগম কথাটা শুনে কেমন যেন মুখ বাঁকা করলেন।তারপর আবার ভাবলো,এখন ঘুরে আসুক তারপর বাচ্চা হলে তো আর যেতে পারবে না।তাই বললেন
->ঠিক আছে।তবে বেশিদিন থেকো না কিন্তু।
->আচ্ছা মা।
তিশা আয়ানকে ফোন করে ব্যাপারটা জানালো।তাই আয়ান এক পরিচিত সিএনজি চালককে ঠিক করে দিলো তিশাকে বাসায় পৌছে দেওয়ার জন্য।তিশা বাসায় এসে দরজায় নক করতে দরজা খুলে দিলো ওর চাচাতো বোন খুশি।তিশা একটু অবাক হয়ে বলল
->কি রে তুই কবে আসলি?
খুশি মুখ বাঁকা করে বলল
->আজই এসেছি।তোরও আজই আসতে হলো?
->হুম মা-বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলে তাই চলে এলাম।
খুশি আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তিশার মা লায়লা বেগম দৌড়ে এসে বলল
->মা কখন আসলি তুই?
->এই তো মা এখনি এলাম।
তিশার মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো।তিশা অনেকদিনপর নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।ওদের এসব কর্মকান্ড দেখে খুশি মনে মনে ফুলছে।হঠাৎ তিশার চাচি অর্থাৎ খুশির মা এসে বলল
->তিশা মা কেমন আছিস তুই আর এরকম শুকিয়ে গেছিস কেন?
->এমনি চাচি।
->যাকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে সে কি কোনো কাজ করে নাকি তোকে দিয়ে সব করিয়ে নেয়।
এরকম আরো অনেক কথা বললো ওরা সবাই।একসময় তিশার চাচি বলে উঠলো
->এরকমটা যদি তোর সাথে না হয়ে আমার মেয়ের সাথে হতো তাহলে আমি অনেক খুশি হতাম।
কথাটা শুনে খুশি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।তিশা বলল
->এমন বলবেন না ছোটো আম্মু।সবাই ভালো থাক।
তিশাকে অনেকদিন পর বাসায় দেখে সবাই অনেক খুশি হয়েছে।কিন্তু খুশি মোটেও খুশি হতে পারেনি।খুশি মেয়েটা একদম অন্যরকম।ওরা দুইজন প্রায় সমবয়সীই।খুশির বিয়ে কিছুদিন যাবৎ হয়েছে।কিন্তু শশুড়-শাশুড়িকে সে একদম দেখতে পারে না।এই নিয়ে প্রায় অশান্তি হয় আর তাই সে বাবার বাড়ি চলে আসে।খুশি চায় তার সব কাজ কর্ম ওর শাশুড়ি করে দিক।সে সারাদিন নিজের মতো করে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কথা বলে সময় কাটাবে।কিন্তু ওর শশুড়ের পরিবার ধার্মিক হওয়ায় এসব মানতে নারাজ।আর এটাই অশান্তির কারন।

চলবে,,,,,,।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here