নেশাটাই তুমিময় পর্ব -০৬

#নেশাটাই_তুমিময়
#পর্বঃ ০৬
#আবরার_আহমেদ_শুভ্র (Writer)

১১.(শেষাংশ)
‘ক্ কে আ্ আপনি?’ মুখে মাস্কে ঢাকা থাকার কারণে আগুন্তক লোকটাকে চিনতে পারলো না অনিমা। তাই ভয়ে চোখমুখ খিঁচে প্রশ্ন ছুড়ে মারলো আগুন্তক লোকটির দিকে। কিন্ত এতে যেন তার বিন্দুমাত্রই হেলদোলও নেই। সে একধ্যনেই অনিমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন হাজার বছরের তৃষ্ণা মিঠিয়ে নিচ্ছে একেবারেই একদেখাতে! কিন্তু তার রেসপন্স না দেখেই আবারও পাল্টা প্রশ্ন করলো অনিমা।

‘কে আপনি? এখানে এলেন কি করে?’ অনিমার বারবার এমন প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে আগুন্তক ব্যক্তিটি বলে উঠল,

‘এতো প্রশ্ন কেন করো অনুপাখি? আমার কাজটা আমায় করতে দাও না।’ চমকে উঠল অনিমা।

ভাবতে লাগলো, ‘এই সে সাইকো নয়তো? যে প্রতিদিন মেসেজ দেয়! তুর্যনকে যে মেরে তার এমন হাল করলো এই সেই ব্যক্তি নয়তো! না হতে এটা সম্ভব নয়, এই সে হতে পারেই না! কারণ সে ডাকে ফুলপরি বলে কিন্তু এই লোকটা তাকে অনুপাখি বলে ডাকছে যেটা তাকে তার ফারুপু মানে তুরনের স্ত্রী ফারিহা ডাকে। তাহলে কি ফারুপুর সাথে এই লোকটির কোনো যোগসূত্র আছে? না তা হবে কেন? কিন্তু কে এই লোক? কেন সে এখানে এসেছে?’ বারবার তার ছোট্ট মস্তিষ্কে এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। জমে গেলো অনিমা। ভয়ে মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না। সে যে চিৎকার করবে তারও শক্তি লোপ পেয়েছে অনেক আগেই। ভয়ে বারবার কথাগুলো তালগোল পাকিয়ে আসছে তার। সাথে থরথর করে কাঁপছে সে! অনিমার মনের এমন অবস্থা বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হলো না আগুন্তকটির। মুচকি হেসে একধাপ এগিয়ে এলেও অনিমা ঠিক একই জায়গায় স্থির হয়ে রইল। যেন সে এই দুনিয়াতেই নেই। কিন্তু যখন সে অনিমাকে আলতো করে ধরলো ঠিক সেই সময় ঘটল দূর্ঘটনা! মুখথুবড়ে লোকটির বুকে আছড়ে পড়ল সে। প্রথমে ঘাবড়ে গেলো লোকটি। মুখ তুলে দেখলো অনিমা ভয়ে সেন্সলেস হয়ে গেছে। বিড়বিড় করে বলে উঠল আগুন্তক লোকটি,

‘ওহ শীট! এ তো সেন্সলেস হয়ে গেছে! আমি কি বাঘ না ভাল্লুক! এতো ভয় পাওয়ার কি আছে ড্যাম ইট! নিজের পরিচয়টা দিলে হয়তো সে এতোটা ভয় পেতো না। না না, নিজের পরিচয়টা এতো সহজে দেয়া যাবে না। সামান্য ব্যাপারেই সেন্সলেস! তাহলে সামনে যেগুলো হবে সেগুলো সামলাতে পারবে কি করে? স্টুপিড গার্ল!’ তাড়াতাড়ি পার্লস চেক করে দেখলো সে, ভয়ের কোনো কারণ নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে। ফোন বের করে কাউকে ফোন করলো,
‘আপুই, ও সেন্সলেস হয়ে গেছে। তুমি যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি রুমে এসো।’

ওপাশ থেকে বলে ওঠল, ‘কি করে সেন্সলেস হলো ও হা!বাড়ীতে যে শুধু আমি, ও আর ছোটমা আছি সেটা তুই জানিস না? কয়বার বলতে হয় তোকে?’

লোকটি আবারও বলল, ‘ডোন্ট পেনিক, আমি ওর পার্লস চেক করেছি। সে আমাকে দেখে ভয়ে সেন্সলেস হয়ে গেছে। অল্পক্ষণের মাঝেই জ্ঞান ফিরবে। তাই বলছি রুমে এসে তোর ননদকে দেখ যাতে কেউ টের না পায়।’

ওপাশ থেকে আবারও বলে উঠল, ‘আচ্ছা, সাবধানে যাবি। কেউ যেন দেখে না ফেলে।’

‘হুম, আরেকটা কথা। আমার ডাক্তার হওয়াটা না আজ সফল হলো! আমি আমার প্রেয়সীর পার্লস চেক করে বুঝলাম যে সে ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছে।’

লোকটির কথা শোনে ওপাশের মানুষটি বেশ অবাক হলো, সেন্সলেস এর সাথে ডাক্তার হওয়া কিংবা পার্লস চেকের সম্পর্কটা কি! হিসেবটা মিলাতে না পেরে শেষে বলে উঠল, ‘আচ্ছা যা, পাগল কোথাকার।’ বলে ফোন রেখে দিয়ে দিয়ে দ্রুত রুমের বাইরে চলে এলো।

সে মুচকি হাসিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠল, ‘উফস, তাহলে ডাক্তার হওয়াতে বেশ ভালোই হলো! আজ আমার প্রেয়সীর কাজে লাগলাম। ডোন্ট ও্যরি অনুপাখি সবটাই ঠিক হয়ে যাবে। আমিই ঠিক করে দেবো সব। সবটাসময় তোমার পাশেই থাকবো।’ বলে কপালে উষ্ণ চুমু খেয়ে উঠে চলে গেলো সে। যাওয়ার আগে আলতো করে দরজাটা খুলে দিয়ে ঠিক যেদিক দিয়ে এই রুমে প্রবেশ করেছিলো সেদিকেই।

১২.
বেশ কিছুক্ষন পর চোখ খুলে তাকালো অনিমা। মাথাটা ভারি লাগছে বেশ। পাশে তাকিয়ে দেখলো ফারিহা ভাবান্তর হয়ে বসে আছে কিন্তু লোকটি আর নেই। ভাবতে লাগলো এতো অল্প সময়ে লোকটা গেলো কই? আর ফারুপু আসলো কি করে রুমে? সেতো দরজা আটকে দিয়েছিলো তাহলে? ধুর, লোকটা হয়তো খুলে দিয়ে চলে গেছে। তাই তাকে দেখে ওঠে বসার চেষ্টা করলো অনিমা। কিন্তু পারলো না।

অনিমাকে উঠতে দেখে ধমক দিলো ফারিহা, ‘এই মেয়ে, একদমই উঠবি না। পুরো শরীরটা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।’

অনিমা অস্ফুটরে স্বরে বলে উঠল, ‘কিন্তু…’ বলতে দিলো না ফারিহা। ‘আজ সারাদিনের জন্য তুই ঘরবন্দি। আর হে, সুস্থ হলে কাল থেকে কলেজ যাবি, কেমন?’

অবাক হলো অনিমা। কেউ কখনও এমন করে কখনও শাসন করে নি তাকে। ছোটমামির আদর সবসময় পেয়েছে। কিন্তু তিনি তাকে কখনও শাসন করেন নি কারণ সে কষ্ট পাবে বলে। দুচোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে লাগল তার। তার চোখে পানি দেখে রেগে গেলো ফারিহা, ‘এই অনুপাখি, কাঁদবি না একদম। তোর কান্না আমি একদম সহ্য করতে পারি না সেটা তুই ভালো করেই জানিস তাহলে কাঁদিস কেন?’

অনিমা ফারিহাকে জড়িয়ে ধরে হো হো করে স্বশব্দে কেঁদে দিলো,’ ফারুপু আমায় তুমি এত্ত ভালোবাসো? আ’ম সো প্রাউড অফ মি, কজ কেউ আমায় ভালোবাসে!’

ফারিহা তাকে বুকে জড়িয়ে নিলো, ‘পাগলী মেয়ে, তুই আমার ছোট্ট বোনের মতোন। তাই তোর প্রতি আমার ভালোবাসা থাকবে এটা স্বাভাবিক নয় কি? এখন ফ্রেশ হবি চল। আরেকটা কথা, আজ থেকে তোর বিষায়দময় কালো অতিতটার কথা একদমই মাথায় আনবি না কেমন? মনে রাখবি সেটা কেবল একটা ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন ছিলো যা তোর ঘুম ভাঙ্গার সাথেই উধাও। ওকে! যা শাওয়ার নিয়ে আয়, আমি তোর জন্য খাবারগুলো এখানে আনছি।’ বলে অনিমার দিকে একপলক তাকিয়ে চলে গেলো সে।

ফারিহার যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল অনিমা। কতসুন্দর করে তাকে বুঝিয়ে দিলো সে। মাথাটা হালকা উপর নিচ করলো অনি। যার মানে সে কখনও এই বিষায়দময় অতিতটার কথা মাথায় আনবেও না। তবে ভাবতে লাগল, ‘ফারুপু আমায় জিজ্ঞেস করলো না কেন আমি কি করে সেন্সলেস হয়ে গেছি? ধূর কি সব হাবিজাবি ভাবছি আমি হা? হয়তো আবারও ভয় পাবো বলে জিজ্ঞেস করে নি।’ তাই সে আস্তে আস্তে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।

১৩.
‘বারবার কল দিচ্ছিস কেন রে ভাই? একটা কাজে গেলাম সেটাও বুঝবি না তুই?’ হাতাটা ফোল্ড করতে করতে বলে উঠলো রুদ্ধ।

‘তা কোথায় ছিলি এতক্ষণ তুই? আর তুর মোবাইলটা বারবার বিজি দেখাচ্ছে কেন?’

‘বাবাই কল দিছে তাই হয়তো।’

‘তোর বাবা কি তোর প্রেমিকা? দোস্ত তুই আমারে কি বোকা বানাতে চাস? তা কাজ কি কিছু হলো?’

ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলে করল রুদ্ধ, ‘কি কাজ?’

‘ঐ যে অনির ব্যাপারে। বাই দা রাস্তা, তন্বীর ব্যাপারটা আমার না বেশ রোমাঞ্চিত করে ভাই।’

রুদ্ধের বেশ রাগ হলো এই কথাটা। রুদ্ধ চোখ ছোট করে বলে উঠল ‘অহন তুই আমায় সত্যি করে বলতো তন্বীকে কি তুই ভালোবাসিস? না অন্যকিছু? সে তোর মামাতো বোন হয়। আর অনিমার ব্যাপারে কিচ্ছু কি হবে?’

‘মামাতো বোন বলে কি বিয়ে করা যায় না? এটাও সত্য যে আমি তন্বীকে চাই। আমার নিজের করেই চাই!কজ, আই ফিল লাভ এবাউট হার!’

খুশি মনে জবাব দিলো রুদ্ধ, ‘ওকে দ্যটস সো গুড, আ’ম সো হ্যাপি। আচ্ছা অনির কাছে যানা ভাই! জানিস না তোর বোনের প্রতি কতটা অন্যায় হয় তোর মামাবাড়িতে?সবটাই ভালো তবে তোর মামাতো ভাইদের আমি কখনও ছাড়বো না।’

মামাতো ভাইদের কথা শোনে রেগে গেলো অহন,’ তুই কি ভেবেছিস তুই বাই চান্স তুই তাদের ছাড়তে পারিস, কিন্তু আমার ছোট্ট বোনটার মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার শোধ আমি সুধে আসলে পূরণ করে দেবো। হা, তবে কয়েকটা দিন যাক, তারপরে যাবো।’ তাদের কথার মাঝে রুদ্ধের ফোনটা বেজে উঠল। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে যা শোনলো তাতেই হাতের ফোনটা পড়ে গেলো তার। ধপাস করে অহনের পাশে বসে পড়ল সে। অহন রুদ্ধের ফোন হাতে নিয়ে কানের কাছে নিতেই সেও ঠিক একই কথা শোনলো। কথাটা শোনা মাত্রই নিস্তব্ধ হয়ে গেলো সে।

#চলবে কি?

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here