নোনাজলের শহর পর্ব ৮+৯

৮+৯
নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ

পর্ব- ৮
অনুপ্রিয়ার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে, তার ভাই কি করে এমন একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটাতে পারে। সে এক বছর এর বেশি বিয়ে করেছে কাউকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি।সেটা তাও ঠিক ছিল কিন্তু একটা বাচ্চা মেয়েকে,উফফ আর কিছু ভাবতে পারছে না। রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই চোখ পড়ে মুমুর দিকে,
মিষ্টি চেহারার মেয়েটা আদিবের এক হাত জড়িয়ে ধরে ভীতু ভীতু চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।অনুপ্রিয়ার তাকানো দেখে দ্রুত নিচের দিকে তাকায় মুমু, আড়- চোখে আদিবের গাল দেখার চেষ্টা করে, ব্যাথা পেয়েছে মনে হয়।

অনুপ্রিয়া স্বাভাবিক হয়ে তার ছেলেকে বলল,”স্বাক্ষর তোমার মনিমামা কে বলো সে যেন এইমুহূর্তে আমার সামনে থেকে চলে যায়।”

আদিব হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে, বড় আপু তার গায়ে হাত তুলেছে? আসলেই কি সত্যি?আবার এখন চলে যেতে বলছে।সবকিছু কেমন অবাস্তব মনে হচ্ছে।সেকি চলে যাবে?অস্ফুট শব্দে বলল,”আমি কি সত্যি চলে যাব?”অনুপ্রিয়া কটমট করে আদিবের দিকে তাকালো যার অর্থ একপা বাইরে রাখ কুচিকুচি করে কাটবো।

“দুই মিনিটের মধ্যে ডাইনিং টেবিলে আই, আমি ব্রেকফাস্ট করবো” বলেই গটগট করে হেটে চলে গেল অনুপ্রিয়া।আদিব মৃদু হাসলো সে জানে তার বোন একটুও রাগ করে থাকতে পারে না। মুমু এখনো আদিবের হাত ধরে লেপ্টে দাড়িয়ে আছে,তার মাথায় কিছু ঢুকছে না এদের কারসাজি।

অনুপ্রিয়া প্লেটে খাবার সার্ভ করতে করতে মুমুকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করল,”নাম কি তোমার?” মুমু আস্তে করে বলল,”মিশিকা রহমান মুমু,(বলে আদিবের দিকে তাকিয়ে আবার বলল) না মানে মিশিকা মাহমুদ মুমু” উত্তর শুনে মৃদু হাসলো অনুপ্রিয়া।

মুমুর বেশ ভালো লেগেছে সুন্দরী মহিলা কে, অনেক যত্ন করে খায়িয়ে আবার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেছেন।এখন সে স্বাক্ষরের রুমে বসে আছে, স্বাক্ষর মনি মামি বলে তার আর্ট বুক এটা সেটা দেখাচ্ছে।যখন থেকে জানতে পেরেছে এটা তার মনি মামি বার বার ডাকছে।মুমুর কাছে ডাকটা খুব মিষ্টি লাগছে।কিছুক্ষণ পরে অনুপ্রিয়া মুমুকে নিজের ঘরে নিয়ে যায়।মুমুকে পাশে বসিয়ে মুমুর চোখ টেনে দেখে হাতে স্টেথোস্কোপ লাগাতে লাগাতে বলল, “তুমি কি জানো আমি তোমার কে হই?” মুমু একবার আদিবের দিকে তাকালো,সে ভাবলেশহীন ভাবে বসে ফোন টিপতে ব্যাস্ত।তারপর মাথা নেড়ে না জানালো।অনুপ্রিয়া হেসে বলল,”আমি এই গাধাটার বড় বোন, মানে তোমার বড়ো ননদ বুঝলে?” মুমুও হেসে মাথা নাড়ালো।

মুমুর ভীষণ মন খারাপ,সে আরো কিছুক্ষণ আপুর কাছে থাকতে চেয়েছিল।কিন্তু গাধাটা, না না রাগী গাধাটার জন্য হয়নি।রাগী গাধাটা জোর করে নিয়ে এসেছে,তাই সে রাগ করে আছে।খাবে না সে মোটেও খাবে না,ডাকলেও যাবে না।

“মুমু আমি আর একবার বলছি খেতে আই” আদিবের রাগ হচ্ছে, বাচ্চা মেয়ে বিয়ে করার জ্বালা কথায় কথায় অভিমান।উফফ…. আজ আস্ত রাখবো না।রেগে রুমে এসে দেখে মুমু বিছানার উপর বালিশ কোলে বাবু হয়ে বসে আছে। দুই হাত থুতনিতে ঠেকিয়ে গাল ফুলিয়ে ভ্রু কুঁচকে আদিবের দিকে তাকিয়ে আছে। উফফ, এই মেয়ে এত্তো কিউট হয়ে বসে আছে কেন? আদিব সোজা গিয়ে বালিশ টা ফেলে টুপ করে মুমুর নাকে একটা কামড় দেয়। ব্যাথায় “আহহ” করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিব তাকে কোলে তুলে হেটে খাবার টেবিলে নিয়ে বসিয়ে দেয়।মুমু তখনও তার নাক ডলছে।মুমু খাবো না বলার আগেই আদিব বলে উঠে, “ঝটপট খেয়ে ঔষধ খাবি,আর একটা কথা বললে সারারাত দমবন্ধ চুমু দিব।” (শয়তানি হাসি দিয়ে)
মুমু থ্রেট শুনে লক্ষি মেয়ের মতো খেয়ে নেয়।

ভালোবাসা,খুনসুটিতে বেশ কাটছে মুমুর দিন।মাঝে মাঝে আদিবের সাথে ঘুরতে যায়।রুপাকে আদিবের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর থেকে সে আদিবের ফ্যান হয়ে গেছে। তারা প্রায় প্রায় আদিবের ক্যাম্পাসে যেয়ে মিমন আর আদিবের সাথে দেখা করে আসে।মুমু তো যেয়েই ভাইয়ের হাত ধরে বসে থাকে আর রুপা ও আদিব মুমুকে নিয়ে মজা করে।আদিবের সব বন্ধুরাই মুমুর সম্পর্কে জানে।মিমনের বোন প্লাস আদিবের বাচ্চা বউ হিসেবে তাকে সবাই খুব আদর করে।সবাইকে ভালো লাগলেও সৃজা আপুকে তার ভালো লাগে না।কেমন যেন আদিব ভাইয়ার পাশে পাশে ঘেঁষে থাকে, কাধে হাত রাখে।মুমুর ভীষণ রাগ হয়,আজকে তো খ্যা খ্যা করে হেসে হেসে আদিবের কাঁধে লুটিয়ে পড়ছিল।

আদিবের ক্লাস না থাকায় মুমুর সাথেই ফিরছে। কিন্তু ম্যাডামের কোনো কারণে রাগ হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। অন্যসময় বাইকে উঠলে লেপ্টে বসে আজ কাঁধটাও ভালো করে ধরছে না।বড় আপু গিফট করেছে বাইকটা মুমুকে নিয়ে তার বাসায় যখন তখন যাওয়ার জন্য। কিন্তু রাগ করলো কি নিয়ে, ইদানিং এই মেয়ের নাকের ডগায় রাগ ঝুলে থাকে বোঝা দায় কি নিয়ে রাগ।কিছু দিন আগে হঠাৎ মুখ ফুলিয়ে বলল,”তুমি আমাকে তুই কেন বলো? আব্বু তো আম্মুকে তুমি বলে দুলাভাইও তো আপুকে তুমি বলে।” আদিব তখন বলেছিল বলতে ভালো লাগে তাই কিন্তু ম্যাডামের ইচ্ছা তাকে যেন তুমি বলা হয়।

এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় পৌঁছে যায়। মুমু রাগে গজগজ করে ভিতরে এসেই ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে বসে আছে। আদিব ভিতরে এসে দেখে মুমু মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।মেয়েটা দিন দিন আরো সুন্দর হয়ে যাচ্ছে,আগের থেকে উজ্জ্বল হয়ে গেছে।হালকা মোটা হয়ে বেশ কিউট কিউট হয়ে গেছে।সাদা কলেজ ড্রেস পড়ে দুই কাধে বেনি করা রাগে নাকটা ঘেমে উঠেছে।আদিব মৃদু হেসে রুমের ভেতরে এসে বিছানার সাইড টেবিলে বাইকের চাবি রেখে মুমুর সামনে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,”আমার মুমুপাখিটা কি রাগ করেছে?”

“আমি কোনো পাখি ফাঁকি নই” পানি না নিয়ে রেগে বলল মুমু।মুমুকে রাগাতে ভীষণ ভালো লাগে আদিবের।তাই বলল,”তাহলে কি মুমু ঢেঁড়স বলবো” মুমু কটমট করে তাকালো।আদিব আবার বলল, “পছন্দ হচ্ছে না, আচ্ছা তাহলে মুমুকাক ডাকবো,ঠিক আছে? ” মুমু রেগে আদিবের হাতের থেকে গ্লাস নিতে গেল,আদিব চট করে গ্লাস রেখে দিয়ে মুমুকে জড়িয়ে ধরে পিছনে থেকে।কাঁধ থেকে বেণি সড়িয়ে একটা গভীর চুমু দেয়, কাঁধে নাক ঘষতে ঘষতে বলল,”কিসের জন্য রাগ হয়েছে বলো?” আদিবের এমন করায় মুমু চুপসে যায়। আগে কেমন অস্বস্তি লাগলেও ইদানিং কেমন ভালো লাগা কাজ করে।চেয়েও মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছে না মুমু।কিছু না বলায় সামনে ঘুড়ায় মুমুকে। মুমু চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে মৃদু হেসে টুপ করে নাকে একটা চুমু খায়। মুমু চোখ খুলে দেখে আদিব তার দিকে হেসে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে “বলো কি হয়েছে?”

মুমু আদিবের টিশার্টের বোতাম নাড়তে নাড়তে বলল, “তুমি সৃজা আপুর সাথে কথা বলবে না,একটু আকটু বলবে কিন্তু একদম পাশে দাঁড়াবে না।” এতক্ষণ ভ্রু কুঁচকে মুমুর কথা শুনছিল কথা শেষ হতেই হু হা করে হেসে দিল।আদিবের হাসি দেখে মুমুর আবার রাগ হয়ে গেল সে আদিবের হাতের বাঁধন খুলতে মোড়ামুড়ি শুরু করে।আদিব হাসতে হাসতে মুমুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, “আচ্ছা কালই সৃজাকে বলে দিব ও যেন একদম আমার আশেপাশে না আসে।”

পরের দিন মুমু কোচিং থেকে বের হয়ে দেখে কোচিং এর সামনের পেয়ারা মামার দোকানে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পেয়ারা মাখমাখা খাচ্ছে মিমন,আদিব ও সৃজা।রুপাকে নিয়ে সেও যায় সেখানে।আদিব মুমুকে দেখে বলল,”আজ দেরি হলো যে” মুমু বলল, “এমনিতেই ”
আদিব খেতে খেতে বলল,” মিমন তোর গার্লফ্রেন্ড কে বলিস সে যেন আমার আশেপাশে না আসে, আমার বাচ্চা বউয়ের পছন্দ না কোন মেয়ে আমার আশেপাশে আসুক।”

একথা শোনার সাথে সাথে মিমন কাশতে শুরু করে, সৃজা দ্রুত পানি নিয়ে মিমনকে দেয়।মুমু অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আবার আদিবের দিকে তাকায়, সে ভীষণ মনোযোগ দিয়ে পেয়ারা খাচ্ছে।মনে হচ্ছে পেয়ারা না খেলে পেয়ারা গুলো তার নামে থানায় মানহানীর মামলা করবে।বজ্জাত ছেলে সৃজা আপুর সামনে আমাকে লজ্জায় ফেলল,কিন্তু কি বলল ভাইয়া কে? মুমু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকালো।মিমন জোর করে হেসে বলল,”মনি আসলে কি হয়েছে,আমি বলবো বলবো করে বলা হয়নি” মুমু থাকবে না, আর এক মুহূর্ত থাকবে না সে। রুপার হাত ধরে সোজা হাটা শুরু করে।মিমন কি করবে ভেবে ফট করে মুমুর সামনে কান ধরে দাড়িয়ে যায় “মুমুমনি ভুল হয়ে গেছে রে রাগ করিস না আর হবে না।”

চলবে

নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ

পর্ব-৯

“শালা কেস খায়িয়ে এখন আবার পকেটও ফাঁকা করলি” আদিবের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল মিমন।

আদিব সিক কাবাবে একটা কামড় দিয়ে বলল,” ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আম নট ইউর শালা। তোর বোন জামায়ের শালাটা কে ভেবে দেখ, মাথামোটা শালা।দুই ভাই-বোনের ই মাথামোটা।(বলেই চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়)

মিমন মুমুর অভিমানের পালা শেষে আদিব সবাইকে ট্রিট এর কথা বলে রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসে বলেছে আজকের ট্রিট মিমনের গোপন প্রেম ধরা খাওয়ার জন্য তাই মিমনই বিল দেবে। আর খাবার টেবিলে বসে তারা গল্প করছিল।কিন্তু সে ভুলে গেছিল মুমুও তার সাথে আছে। হাসির শব্দে আস্তে করে চোখ খুলে দেখে সৃজা আর রূপা হাসছে।মিমনও ঠোঁট চেপে হাসছে, আদিবের তাকানো দেখেই নিজের গলার কাছে হাত নিয়ে মাডার সাইন দেখালো। আড়চোখে মুমুর দিকে তাকালো,মুমু তার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যার অর্থ আমি মাথামোটা? আদিব মুমুর দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো।মুমু কিছু না বলেই রাগের সাথে নিজের খাবার খেতে শুরু করে।

রাস্তায় একটা কথাও বলেনি মুমু বাসার সামনে বাইক থামতেই পট করে নেমে হাঁটা ধরে,আদিবও তার পিছনে আসে।রুমে ঢুকে ব্যাগ টেবিলের উপর শব্দ করে রাখে, বেণি খুলে আলমারি থেকে ড্রেস বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।আদিব চুপচাপ তার কাজকর্ম দেখছিল, কিন্তু মেজাজ খারাপ হয়ে গেল পানির শব্দে।রাত গোসল করলে জ্বর-সর্দি হয় মুমুর সেটা ও ভালো করেই জানে। দ্রুত ওয়াসরুমের দরজা নক করে আদিব।” মুমু দরজা খোল,এখন গোসল করবি না।” মুমুর কোনো সাড়া না পেয়ে আরো রাগ হচ্ছে আদিবের। “মুমু দরজা খোল নইলে ভেঙে ফেলবো কিন্তু, এখন যদি গোসল করিস আস্ত রাখবো না বলে দিলাম ”

রাগে আদিবের কান লাল হয়ে গেছে,কপালের রগ ভেসে উঠেছে।রাগে দরজাতে দুইটা লাথি মেরে বিছানায় বসে থাকে। কিছুক্ষণ বাদে মুমু ভেজা চুলে বের হয়ে আসে। লম্বা চুল গুলোর একটাও ভিজতে বাকি নেই।দেখেই মেজাজ আরো বিগড়ে গেল, দাড়িয়েই মুমুকে থাপ্পড় দিতে গিয়েও থেমে যায়।মুমু ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিল, চোখ মেলার সাথে সাথেই আদিব বাম হাতটা পিছনে মুচড়ে ধরে মুমুকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। দাতে দাঁত চেপে বলে,” জ্বর হোক সেদিনের থেকেও বেহাল অবস্থা করবো আমি, মাইন্ড ইট।” বলেই মুমুকে ছেড়ে দেয়। মুমুর তো ভয়ে আত্না আগেই পালিয়েছে। ওয়াসরুমের দরজা নক করে থ্রেট করার সময়ই মুমুর জানের পানি শুকিয়ে সাহারা মরুভূমি হয়ে গেছিল। কিন্তু ততক্ষণে সে তো পুরো ভিজে গেছিল তাই বের হতে পারেনি। এখন যদি জ্বর আসে, সেদিনের কথা ভেবেই ফাঁকা ঢোক গিলল মুমু।

রান্নাঘর থেকে দুধ গরম করে নিয়ে আসে আদিব।দুধের গ্লাসটা মুমুর এক হাতে ধরিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়, অন্য হাত থেকে তোয়ালে টা নিয়ে সারা চুলে পেচিয়ে দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে মুমু মাথায় তোয়ালে পেচিয়েই শুয়ে পড়েছে। ডান কাত হয়ে শুয়ে থাকায় বা কাঁধের তিলটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।আদিব পিছন থেকে মুমুকে জড়িয়ে ধরে তিলটার উপর চুমু দেয়,কাঁধে নাক ঘষতে ঘষতে বলল, “তোয়ালে টা পেচিয়ে শুয়েছো কেন? ঠান্ডা লেগে যাবে তো।” মুমু আদিবের এমন স্পর্শে তার হাত খামচে ধরে ছিল, কিন্তু প্রশ্ন শুনে ঘুরে অভিমানী সুরে বলল, “আমি তো মাথামোটা তা…..” কথা শেষ করার আগেই আদিব মুমুর ঠোঁট জোড়া বন্ধ করে দেয়,মুমুও আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে।খানিকক্ষণ পরে ছেড়ে মুমুর কপালে কপাল ঠেকিয়ে আদিব নেশাক্ত কন্ঠে বলল,” মুমু, তোর প্রত্যেক টা তিল ছুঁতে ইচ্ছা করছে, ছুঁতে দিবি আমায়? আদিবের নেশাময় কন্ঠ শুনে মুমুর সারা শরীর থরথর করে কাপছে। কাঁপা কাঁপা হাতেই আদিবের গলা জড়িয়ে ধরে মুমু।

আজানের মধুর ধ্বনিতে ঘুম ভেঙে যায় মুমুর, আদিব তাকে দুই হাতে জাপটে ধরে ঘুমচ্ছে।রাতের কথা মনে পরতেই ভীষণ লজ্জা লাগছে তার,রাতে ভালোবাসার এক অন্যরকম রাজ্যে নিয়ে গেছিল তাকে আদিব। আদিবের বুকে টুপ করে একটা চুমু খায় মুমু, সাবধানে আদিবের হাত সরিয়ে উঠে পরে। ফ্লোরে পা ফেলতেই কোমড় থেকে পা পর্যন্ত অসহ্য ব্যাথায় ওখানেই পড়ে যায়।”উহ… মা গো” বলে আত্নচিৎকার দেয়।মুমুর আওয়াজে ধড়ফড় করে উঠে বসে আদিব। বিছানায় নাই দেখে অন্যপাশে তাকাতেই দেখে ফ্লোরে হাটু ভেঙে কোমড় চেপে বসে আছে মুমু। বুকটা ধুক করে উঠে, তবে কি আবার মুমুকে কষ্ট দিয়ে ফেলল।দ্রুত উঠে মুমুকে কোলে করে বিছানায় বসিয়ে দেয়। “মুমু নিচে পড়লি কি করে?? কোমড় চেপে ধরে আছিস কেন, কোমড়ে কি ব্যাথা করছে?? অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো আদিব।

আদিবের টলটলে চোখ আর অস্থিরতা দেখে নিজেকে সামলে নেয় মুমু।মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টেনে আমতা আমতা করে বলল, “আসলে নামতে গিয়ে পড়ে গেছি। আমাকে একটু ওয়াশরুমে দিয়ে আসো তো, হাটতে ইচ্ছা করছে না।” আদিব মুমুর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঝট করে মুমুকে কোলে করে ওয়াশরুমে দিয়ে আসে,তারপর মুমুর জামা কাপড় দিয়ে দরজা টেনে বেরিয়ে আসে।অনেকটা সময় নিয়ে ফ্রেশ হয় মুমু, দরজা খুলতেই আদিব আবার ঝট করে কোলে তুলে নেয়।মুমু ভাবছে সে কি এতক্ষণ দাড়িয়েই ছিল।

মুমুকে বিছানায় হেলান দিয়ে বসিয়ে কোমড়ের পিছনে হট ব্যাগটা সেট করে দেয়।সাইড টেবিল থেকে একটা বাটি নিয়ে মুমুর হাতে ধরিয়ে দেয়। বাটিতে সুপ নুডলস দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় আদিবের দিকে।আলমারি থেকে কাপড় নিতে নিতে বলল, ” বাটি ফাঁকা না হলে আস্ত রাখবো না।” বলেই সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে যায় আদিব। সকাল সকাল এরকম ঝোল ঝোল নুডলস দেখেই গা গুলচ্ছে মুমুর, কিন্তু রাগী গাধাটা এক গাদা ভালোবেসে কষ্ট করে তার জন্য বানিয়েছে মনে করে খেতে শুরু করে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মুমুর হাত থেকে বাটিটা নিয়ে আপুর সাজেস্ট করা ঔষধ খায়িয়ে দেয় মুমুকে।

আদিব-মুমুর চড়ুই সংসার অজস্র ভালোবাসা, খুনসুটি আর মিষ্টি ঝগড়াতে চলছে। গতমাস থেকে আদিবের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে, থিওরি শেষ হলেও প্রাকটিকাল রয়েছে।প্রতি মাসে মুমুকে বাড়িতে নিয়ে গেলেও গত দুই মাস যাওয়া হয়নি। মিমন আর আদিবের মাথা নষ্ট করে দিচ্ছে বাড়িতে যাওয়ার জন্য, না পেরে আদিব নিজে গাড়িতে তুলে দিয়েছে মুমকে। বড় দুলাভাই গতমাসে মুমুকে একটা ফোন গিফট করেছে,গাড়িতে উঠার বিশ মিনিট পর পর ফোন দিচ্ছে আদিব। রেগে বলেছে আর কল দিলে ফোন অফ করে দিবে।তারপর থেকে ফোন না দিয়ে মেসেজ দিচ্ছে।হনুমান টা এত কেন ভালোবাসে তাকে??ভেবেই মুমু ফিক করে হেসে দেয়, পাশে বসা আন্টি টা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই হাসি বন্ধ করে দেয় মুমু।

দুই দিন হলো মুমু বাড়িতে গেছে,কিন্তু আদিবের সবকিছু অসহ্য লাগছে।তাই সে ব্যাগপত্র গুছিয়ে মিমনের হলে চলে এসেছে।ভরদুপুরে আদিবকে তলপিতলপাসহ নিজের রুমে দেখে মিমন অবাক হয়ে বলল, ” তুই এভাবে এখানে কেন??” আদিব ব্যাগপত্র রেখে বিছানায় ফট করে শুয়ে বলল,” তোর মাথামোটা, অসভ্য বোনটা তো আমাকে ফেলে চলে গেছে, এখন আমি থাকবো কি করে?” আদিবের কথা শুনে মিমন
হুহা করে হেসে দেয়। হাতের কাছ থেকে বালিশ টা নিয়ে মিমনের দিকে ছুড়ে মেরে আদিব বলল,” হাসিস না, আমার পরীক্ষা খারাপ হোক তোর বোনকে আস্ত রাখবো না।” মিমন বালিশ টা জড়িয়ে ধরে হাসতে হাসতে বলল,” ঠিক আছে।”

আজ এক সপ্তাহ হলো মুমু বাড়িতে এসেছে।প্রচুর ব্যাস্ত, মা-কাকি এটা সেটা খাওয়াতে খাওয়াতে তাকে মোটা করে ফেলছে। আব্বু তো প্রতিদিন তার পছন্দের এটা সেটা এনে দিচ্ছে।আর মুগ্ধ তো সব সময় লেজের মতো সাথেই থাকে।উমম…এতো ভালোবাসা।অন্যদিকে রাগী গাধাটা সাত দিনে সাতাইশ হাজার থ্রেট দিয়েছে…হি হি হি।

আগামী পরশু স্বাক্ষরের বার্থডে, সে তার ফ্রেন্ডদের তার মনি মামিকে দেখাবে তাই বার ফোন করছে। তাই মুমু কালই চলে যাবে তবে হনুমান টাকে জানাবে না সারপ্রাইজ দেবে ভেবেই মুচকি হাসলো।মিমনকে ফোন করে বলেছে যেন আদিবকে না জানাই তার আসার কথা।আব্বু তাকে আজকে সকালেই বাসে তুলে দিয়েছে। আদিবের আজই শেষ পরীক্ষা,হল থেকে বের হয়েই শ্বশুর বাড়ি যাবে বলে মিমনের রুমে এসে ব্যাগ গোছাচ্ছে।মিমন অনেক বুঝিয়ে থামাতে না পেরে মুমুর আসার খবর বলে দেয়।খবরটা শুনেই মিমনের উপর ঝাপিয়ে পড়ে, দুই জনের একটা ছোট যুদ্ধের পর মিমনকে ছেড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,”তোর বোন আসুক,আমাকে ছেড়ে আমার শ্বশুর বাড়ি বেড়ানো ছুটাবো, আর সারপ্রাইজও বের করবো।”

তিন ঘন্টা যাবত মুমুর ফোন বন্ধ,মিমনের ভীষণ টেনশন হচ্ছে।তার থেকেও টেনশন হচ্ছে আদিবকে দেখে। রাগে নাক মুখ লাল হয়ে আছে, রুমের মধ্যে পায়চারি করছে আর মুমুর ফোনে বার বার কল দিচ্ছে। হঠাৎ দাড়িয়ে মিমনকে বলল,”তোর বোনকে আমি আজ খুন করবো” প্রতিউত্তরে মিমন জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো।

বাস কাউন্টারে এসে বাবার বলা বাসের সুপারভাইজার, হেলপার সকলকে মুমুর ছবি দেখিয়েও কিছু জানতে পারে নি মিমন ও আদিব।বাবাকে জানিয়েছে তিনিও বার ফোন করছে।হঠাৎ আদিব মিমনের হাত ধরে টলটলে চোখে বলল, ” তোরা কি আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ায় জন্য মজা করছিস?? প্লিজ এমন মজা করিস না আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।”

চলবে

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here