নয়নতারা পর্ব ৬

#নয়নতারা_৬
#জেরিন_আক্তার_নিপা

আজ ইমনের বিয়ে। আজ সবথেকে খুশি লাগছে ঝিনুককে। ইলা ঝিনুকের হৈচৈ হাসিখুশি ভাব দেখে টাস্কি খেয়ে বসে আছে। ঝিনুক আপুকে কথাটা জিজ্ঞেস করবে নাকি করবে না এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে। শেষমেশ শাড়ি পরার সময় বলেই ফেলল,

—-আপু আজ বিয়ে তো ইমন ভাইয়ার। তুমি এত খুশি হচ্ছ কেন?’

ডান ভ্রু বাঁকিয়ে ঝিনুক ইলার দিকে তাকায়। বলে,

—-খুব বেশি খুশি হয়ে যাচ্ছি নাকি?’

—-হ্যাঁ। মাত্রার বাইরে বেশি রকমের খুশি।’

—-আচ্ছা তাহলে খুশিটাকে কমানোর চেষ্টা করছি।’

বলেই ঝিনুক নিজের শাড়ির কুঁচি ঠিক করায় মন দিল। ইলা অনেকক্ষণ ভেবে নক্ষত্রর বলা কথাটা ঝিনুককে জিজ্ঞেস করল,

—-আপু একটা কথা বলব?’

—-বল না।’

—-কোন কালে কি ইমন ভাইয়ার সাথে তোমার কিছু ছিল? মানে কাজিনের বাইরেও অন্যরকম সম্পর্ক।’

—-কোন কালে কী রে? ওর বিয়ের দুই সপ্তাহ আগে পর্যন্ত আমরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড ছিলাম।’

ইলার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লেও সে এতটা অবাক হত না। হতভম্ব হয়ে ঝিনুকের মুখের দিকে চেয়ে আছে সে। বয়ফ্রেন্ডের বিয়েতে কোন গার্লফ্রেন্ড এরকম নাচানাচি করতে পারে! এটাও কি সম্ভব? বুকের ভেতর থেকে মন বের করে ওর জায়গায় পাথর বসিয়ে নিয়েছে নাকি? একটু কষ্ট পাচ্ছে না। একটু কান্নাকাটি করছে না। কাউকে কিছু বুঝতেও দিচ্ছে। সুন্দর মত বয়ফ্রেন্ডের বিয়েতে নাচছে। হলুদ মাখাচ্ছে। মেহেদি দিচ্ছে। এখন বরযাত্রী যাবার জন্য সবার আগে রেডি হচ্ছে। ঝিনুক আপু মানুষ না অন্য কিছু! ইলাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঝিনুক বিরক্ত হলো। ধমকে উঠে বলল,

—হাঁ করে তাকিয়ে কী দেখছিস হ্যাঁ? আমাকে আগে কখনও দেখিস নি?’

—-তোমার বয়ফ্রেন্ড তোমার চোখের সামনে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করছে আর তুমি এখনো বেঁচে আছ! আমি হলে তো মরেই যেতাম।’

—আহ্! অত ন্যাকা ন্যাকা কথা বলিস না তো। যে আমাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে যেতে পারে তার জন্য আমাকে মরতে হবে নাকি? জীবন কি এতই সস্তা! কেউ একজন ছ্যাকা দিল সেই দুঃখে আমি হাত কাটি, গলায় দড়ি দেই, গাড়ি নিচে পড়ি। দূর! বেঁচে থাকলে ওরকম একশো ছেলে পাব। মরে গেলে পাব নাকি?’

—-তবুও…

—-তবুও তোর মাথা। আমি ওর সাথে ব্রেকআপ করিনি। ইমন নিজে করেছে।’

—-কেন?’

—-আমাদের ফ্রেন্ডস সার্কেলে একটাই ছেলে আছে। মেয়েগুলা যেমন আমার বন্ধু। তেমন ওই ছেলেটাও তো নাকি? ফ্রেন্ডদের মাঝে ছেলেমেয়ে বাচবিচার হয় নাকি বল। ও আমাকে বারণ করেছিল ওই ছেলের সাথে যেন ফ্রেন্ডশিপ না রাখি। এত সহজ নাকি? মুখে বললেই ফ্রেন্ডশিপ শেষ করে দেওয়া যায়! ইমন আমার জীবনে বয়ফ্রেন্ড হয়ে আসার আগে থেকে ওরা আমার ফ্রেন্ড। ছয় সাত মাসের বয়ফ্রেন্ডের জন্য আমি আমার কলেজ লাইফের ফ্রেন্ডদের ছেড়ে দেব! ওরা আমার সুখে দুঃখে পাশে থেকেছে। আমার মন খারাপের সময় ওরা আমার মন ভালো করার মেডিসিন হয়েছে। আমাকে কখনও ওরা দুঃখী দেখতে পারে না। ওরকম ফ্রেন্ডদের বয়ফ্রেন্ডের কথায় আমি ছেড়ে দেব! অসম্ভব। আমার যেমন ছেলে ফ্রেন্ড আছে তেমনি ওরও তো মেয়ে ফ্রেন্ড আছে। কই আমি তো ওর মত এতটা জেলাস হই না। ওকে কোনোদিন সন্দেহও করিনি। আমি যদি বলতাম তোমার মেয়ে ফ্রেন্ডদের সাথে তুমি কথা বলবে না। তাহলে কি সে আমার কথা শুনত? আর সবথেকে বড় কথা। আমরা ছোটবেলা থেকে দু’জন দু’জনকে চিনি। ও আমার সম্পর্কে এতটাও জানে না! আমি ওকে রেখে অন্য কারো সাথে চলে যেতে পারব এই কথা ও ভাবে কিভাবে? তাই আমি আমার মনের কথা সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছি। সে নিয়ে রাগ করেই তোর ভাই ব্রেকআপ করে দিয়ে বাবা মা’কে বিয়ের কথা বলে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে করছে। ভেবেছে আমি বাধা দেব। কষ্ট পাব। কান্নাকাটি করে বিয়ে ভেঙে দেব। নিজের ভুল স্বীকার করে ওর কাছে ক্ষমা চাইব। হুহ্, সেগুড়ে বালি। ওর কাছে ক্ষমা চাইতে আমার বয়েই গেছে। আমি অত সহজ মেয়ে না। ওকে নাকানিচুবানি খাইয়ে তবেই শান্তি পাব।’

একদমে কথাগুলো বলে থামল ঝিনুক। হাঁপাতে শুরু করেছে সে। ইলা হাসের ডিমের মত বড় বড় চোখে তাকিয়ে কথাগুলো শুনেছে। সত্যিই তো। ঝিনুক আপুর তো কোন দোষই নেই। যে বন্ধু গুলা বয়ফ্রেন্ড পেয়ে আগের পুরোনো ফ্রেন্ডশিপ ভুলে যায় ওরাই তো বেইমান। নক্ষত্র তাকে কখনো এরকম বলেনি। বললে সে-ও সহজে ছাড়বে না।

—-তুমি এখন কী করবে আপু? আজ তো ইমন ভাইয়ার বিয়ে হয়ে যাবে।’

—যাক। আমার অত ঠ্যাকা কিসের? আমিও ওর থেকেও হ্যান্ডসাম, ওর থেকেও মালদার পার্টি ধরে নিয়ে বিয়ে করে ফেলব। লাইফ সেট। ইমন তার বউকে নিয়ে সুখী থাকুক। ঝিনুক তার হাজবেন্ডকে। কালসাপ এক্সটার কথা বছরেও মনে করব না। ওর মত বদমেজাজির থেকে রেহাই পেয়ে আমি আরো বেঁচে গেলাম। সারাজীবন ওর নাখড়া দেখার চেয়ে ব্রেকআপ করাই হাজার গুণ ভালো।’

ইলা ঝিনুকের কথা ভেবে অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছিল। নক্ষত্রর সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নেয় সে। নক্ষত্র ইলাকে ধরে ফেলে।

—-কী হয়েছে তোমার? ধ্যান কোথায় হ্যাঁ?’

নক্ষত্র ইলাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলে ইলা এবার নক্ষত্রর দিকে তাকায়৷ কালো শেরওয়ানিতে নক্ষত্রকে সত্যিই রাতের আকাশের জমকালো নক্ষত্রের মতই লাগছে। ফর্সা গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। চুলগুলো ঠিক করেনি নাকি? কয়েকটা চুল সামনে এসে আছে। ইলা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নক্ষত্রকে দেখছে। নক্ষত্র ওকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে হাতে তুড়ি বাজাল।

—-হ্যালো মিস, কোথায় হারিয়ে গেলেন?’

শ্বাস ফেলে ইলা। বলে,

—-তোমাকে দেখছিলাম। আর ভাবছিলাম আমার সামনে তুমি অন্য মেয়েকে বিয়ে করছো তা দেখে আমার রি-অ্যাকশন কেমন হবে?’

—-অত ভেব না। তুমি ঝিনুক নও। আর আমিও ইমন নই। আমি জানি আমার ইলা জানু আমাকে ছাড়া অন্য কাউরে ভাবতেও পারে না। আমার বিয়ে দেখার আগেই তুমি উপরের টিকিট কেটে নিবে। আর যদিও ঝিনুকের মত নেচে গেয়ে ফূর্তি করতে পারতে তাহলে হয়তো আমিই কিছু করে বসতাম। ইমনের মত অত ধৈর্য আমার নেই। বুঝলে বাবু?’

নক্ষত্র ইলার দিকে এগোতে নিলে ইলা দুই হাত ওর বুকে ঠেকিয়ে বাধা দেয়।

—-খুব ভালোবাসা দেখাচ্ছ আজ। দেখব এই ভালোবাসা কয়দিন থাকে।’

—-সারাজীবন থাকবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। যতক্ষণ না শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছি ততক্ষণ আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসে যাব।’

সবাই শাড়ি পরেছে বলে নয়নতারাকেও শাড়ি পরতে হলো। শাড়ি সে একদম সামলাতে পারে না। ঘর থেকে বেরিয়েই কয়েকবার হুঁচট খেয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে দুইবার পড়ে যেতে নিচ্ছিল। কোনোরকমে নিজেকে বাঁচিয়েছে। এখন তো হাঁটতে গেলে শাড়ি পায়ের সাথে পেঁচিয়ে যাচ্ছে। এভাবে বিয়ে বাড়িতে গিয়ে কীভাবে হাঁটবে সে? সবার সামনে পড়ে গেলে তো ইজ্জতের ছিটেফোঁটাও থাকবে না। এমনিতেই ভালো জায়গায় উস্টা খেয়ে পড়ে যাওয়াটাও তার ট্যালেন্ট। সবাই তো বলে সে নাকি এখনো হাঁটাই শিখেনি। সামনে নক্ষত্রকে দেখে তাড়াহুড়ো করে অন্যদিকে যেতে নিচ্ছিল নয়নতারা। তখনই অঘটনটা ঘটে। শাড়ি পায়ের নিচে চলে গিয়ে হুড়মুড়িয়ে পড়ে যায় সে। নক্ষত্র তাকে ডাকতে নিচ্ছিল৷ ওকে পড়ে যেতে দেখে শব্দ করে হাসতে লাগল। এতে নয়নতারা আরও লজ্জা পাচ্ছে। নক্ষত্র ছাড়া এখানে অন্য কেউ ছিল না। কিন্তু সবথেকে বড় লজ্জা তো এই লোকের সামনেই পেল।

—-তারা! পড়ে গেলে নাকি হ্যাঁ! ‘

নক্ষত্র নয়নতারার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে। ওর পাশে এসে দাঁড়ায়৷ ওকে তীক্ষ্ণ চোখে দেখে। এক হাঁটুতে ভর দিয়ে নয়নের সামনে বসে।

—-তুমি আমাকে দেখলে সব সময় ওরকম ছুটে পালাও কেন হ্যাঁ? আমি বাঘ? তোমাকে খেয়ে ফেলব? দেখলে তো সব সময় ছোটার পরিণাম ভালো হয়না। পড়ে গেলে তো! আবার পা ভেঙেছে?’

লজ্জায় নয়নতারার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। পুরো বাড়ি জুড়ে এত এত মানুষ থাকতেও এর সামনেই বারবার অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে হয়!
নয়ন উঠতে নিচ্ছিল। তাতে আরও বিপদ হলো। শাড়ির কুঁচি খুলে গেছে। নয়নের যদি অদৃশ্য হওয়ার ক্ষমতা থাকত তাহলে এই মুহূর্ত থেকে সে অদৃশ্য হত, যতদিন না এই লোক বাড়ি থেকে না যেত ততদিন সামনে আসত না। যেহেতু তার এই ক্ষমতা নেই তাই শক্ত করে চোখ বন্ধ করে নিল। নক্ষত্র নয়নতারার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসছে। মনে মনে ভাবছে, তুমি কেমন লজ্জা পাও তোমাকে আরও লজ্জায় ফেলতে আমার ভালো লাগে।

—–কী হলো? উঠতে পারছো না? চলো আমি তোমাকে সাহায্য করি। আসো আমার হাত ধরে উঠো। দেখি তো আবার পা ভেঙেছে কিনা। আমি কিন্তু ডাক্তার। বুঝলে?’

নয়নতারা চোখ বুজে প্রায় বিড়বিড় করে বলল,

—-আপনি এখান থেকে যান।’

—-হ্যাঁ! যাব কেন? আমার সামনে একজন পড়ে গিয়ে ব্যথা পেল। পা-ও ভেঙে যেতে পারে। আমি ওরকম অবস্থায় ওকে সাহায্য করব না? ফেলে রেখে চলে যাব?’

—আপনি যান প্লিজ। আমার কোন সাহায্য লাগবে না।’

—-বললেই হলো লাগবে না! আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি তোমার সাহায্য লাগবে।’

নয়নতারার কান্না পাচ্ছে। লোকটা এরকম নাছোড়বান্দা কেন? ও এখন উঠে দাঁড়াতে গেলে ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে। শাড়ির কুঁচি খুলে আছে। লোকটাকে তো এই কথা বলাও যাবে না।
নয়নতারার কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে নক্ষত্রর মায়া হলো। তবুও ওকে জ্বালানোর লোভ সামলাতে পারল না।

—-বসে আছো যে! উঠো। চলো আমি তোমাকে রুমে দিয়ে আসি। তুমি একা উঠতে পারবে? নাকি আমি কোলে করে দিয়ে আসব?’

নয়নতারা কেঁদেই ফেলল। নক্ষত্র ভাবেনি এত সহজে নয়নতারা কেঁদে ফেলবে। মজা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে।

—-তারা! আরে এই মেয়ে কাঁদো কেন? আমি তোমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে যাব না৷ তুমি একাই যাও। সাহায্যও করব না তোমাকে। তবুও কান্না করে না প্লিজ। কেউ দেখলে কী ভাববে? ভাববে আমি তোমার সাথে অসভ্যতা করেছি। কাঁদে না প্লিজ। এইযে দেখো আমি চলে যাচ্ছি।’

বলতে বলতে সত্যিই নক্ষত্র নয়নতারার সামনে থেকে চলে গেল। নয়নতারা এদিকওদিক তাকিয়ে চোখ মুছল। তারপর সাবধানে শাড়ি হাতে ধরে উঠে দাঁড়াল।

বরযাত্রী রওনা হবার একটু আগে ওবাড়ি থেকে ফোন এলো। মুহূর্তে বিয়ে বাড়ির সব আনন্দ উল্লাস মিইয়ে গেল। বাড়ির বড়রা থতমত মুখে সবাই এক ঘরে বসে কিছু আলাপ-আলোচনা করছে। ছোট কাউকে সেই ঘরে যেতে দিচ্ছে না। বাড়িসুদ্ধ সব লোক রেডি হয়ে গরমের মাঝে আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবে? কনের বাড়িতে কেন রওনা হচ্ছে না এটাই ভেবে পাচ্ছে না কেউ।
ঝিনুক চিল মুডে এঘর ওঘর ঘুরাঘুরি করছে। নক্ষত্র ইলাকে একসাথে দেখে হেসে বলল,

—-গরমে কষ্ট হচ্ছে? এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত এনে দেই?’

ঝিনুক চলে গেলে নক্ষত্র ওর দিকে চেয়ে রইল। ইলা দম ফেলে বলল,

—-অধিক শোকে পাগল হয়ে গেছে।’

একটু পরেই সবাই জানল ইমনের হবু বউ কোন এক ছেলের সাথে আজ সকালে পালিয়ে গেছে। কথাটা শুনে সবার মাথায় যেন বাজ পড়েছে। বাড়ির পরিবেশটা কয়েক মুহূর্তের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেল। কারো মুখে কোন কথা নেই। শুধু ঝিনুকেই স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। নক্ষত্র ইলাকে বলল,

—-ঝিনুক এই কথাটা আগে থেকেই জানত।’

—-কীভাবে জানবে?’

—-যেভাবেই হোক জানত। তাই তো ও এত রিল্যাকড ছিল। এখনো দেখছ না কেমন খুশি। এমনটা হবে আগে থেকে জানত বলেই ও নিজে থেকে ইমনের বিয়ে ভাঙানোর জন্য কিছু করেনি। বরং নেচে গেয়ে খুশি থেকে ইমনকে জ্বালিয়েছে। ইমন বেচারা হয়তো এখনো জানে না ওর হবু বউ তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ভেগেছ।’

চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here