#পদ্ম_ফুলের_অভিমান ২+৩
#লেখীকা_নাফিসা_আনজুম
২
মামি:পদ্মমা একটা সুন্দর অর্থ দেখে নাম বল না
পদ্ম:মামি ভাবিকে জিজ্ঞেস করো ওনাদের কোনো পছন্দের নাম আছে কি না
মামি:হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলছিস,শুপ্তি তোমার কোনো পছন্দের নাম আছে কি
আমি এবার অভ্র ভাইয়ার ভাবনা ছেড়ে ওর বউ কি যেনো নাম,শুপ্তি। হ্যাঁ মামি বলেছিলো শুপ্তি। ওর দিকে তাকালাম,,শ্যামলা গায়ের রং হলেও চোখঁগুলো টানা টানা,লম্বা আমার মতোই হবে 5.3। মূখে ছোট ছোট অনেক দাগ আছে, মনে হচ্ছে তেল গেছিলো ছিটে। চোখেঁর নিচে ডেবে গেছে,অনেকদিন না ঘুমিয়ে থাকলে যেমনটা হয় ঠিক তেমন। কিন্তু কেনো আমার ভালোবাসার মানুষটা না হয় আমার পাশে ছিলো না কিন্তু এই মেয়ের তো ছিলো,তাহলে এর চেহারায় এতো মলিনতা কেনো।
হটাৎ করেই শুপ্তি জবাব দিলো, মা আমার মেয়ের নাম অবনি রাখলে কেমন হবে। মানে আপনাদের যদি পছন্দ হয় তাহলে,বলেই আসতে আসতে বিছানায় আমার পাশে এসে বসলো মেয়েটা।
অবনি নামটা শুনে বুকের মাঝে চিনচিন করে উঠলো। এই নামটা কেনো বললো এই মেয়েটা। আমার পছন্দের নাম এর মূখে কেনো। তবে কি অভ্র ভাইয়া একে বলেছে যে আমার সাথে সম্পর্ক ছিলো। তাহলে মেয়েটা আমাকে দেখে কোনো রিয়েক্ট কেনো করছে না। এমন ভাবে আছে মনে হয় আমাকে চেনেই না।
মামি: না না আমাদের আবার পছন্দ হবে না কেনো।মা পদ্ম নাম না টা ভালোই আছে তাই না। অভ্রর মেয়ে অবনি।
পদ্ম: হ্যাঁ মামি নামটা সুন্দর, এই বলে অবনিকে মামির কোলে দিয়ে ওখান থেকে চলে আসলাম। চোখেঁর পানি আর বাঁধা মানছে না। কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে, তিনবছরে তো আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। মেডিকেল এ চান্জ পেয়ে অনেকটা হালকা হয়েছিলো সেই কষ্ট। কিন্তু এখন যেনো নতুন করে সব জেগে উঠেছে। তাহলে কি আমি এতোদিনেও সেই কষ্টগুলো ভূলতে পারি নি। শুধুমাত্র সময় চলে গেছে জন্য কষ্টগুলো সাফল্যের চাপে ঢাকা পরেছিলো। কিন্তু এখন ওর বউ আর বাচ্চাকে দেখে সব যেনো বের হয়ে আসছে।বুক ফেটে যাচ্ছে আমার। কি করবো আমি, এই দিনটা দেখার জন্যই কি এতোদিন পর নানুবাড়িতে আসছিলাম আমি।
আগে কেউ কেনো বললো না আমাকে যে অভ্র বিয়ে করেছে,ওর বউয়ের বাচ্চা পেটে। আগে থেকে জানলে হয়তো এতো কষ্ট হতো না আমার। অভ্র ভাইয়ারে আমি তো হতে চেয়েছিলাম এই সন্তানের মা। তবে কেনো এই মেয়েটা। মন চাচ্ছে এই মেয়েটাকে ঘর ধাক্কা দিয়ে বের করে দেই,কেনো আমার জায়গা দখল করে নিয়েছে, কেনো আমার কাছ থেকে অভ্র ভাইয়া কে কেড়ে নিয়েছে। আমার অভ্র, সারাজীবন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো আমাকে।
ঘরের দরজা লাগিয়ে ঘুমানোর কথা বলে কতোক্ষন কেদেছি মনে নেই।তারপর চোখঁ লেগে এসেছে। সন্ধ্যার আগে আগে ঘুম ভেঙেছে, উঠে মনে হচ্ছে চোখঁ দিয়ে কিছু দেখতে পাচ্ছি না, আয়নার সামনে গিয়ে দেখি দুই চোখঁ ফুলে গিয়ে বন্ধ প্রায়। কাঁদলেই যে এমন হয় । চোখের নিচে ওপরে সব ফুলে থাকে। এই অবস্থায় বাহিরে যাওয়া যাবে না। আমি আসছি বলে হয়তো অনেকেই এসেছে দেখা করতে। নানি নিশ্চয় বলেছে এখন পদ্ম ঘুমিয়েছে সন্ধ্যায় এসো। নানু বাড়ি গ্রামে, এখানে এসে আগে সবাই মিলে কতো মজা করেছি। প্রত্যেক বিকেলে সবাই মিলে নদীতে গেছি। সবার বাড়ি থেকে রাগ হলে সবাই আমার ওপর দিয়ে পার হয়ে যেতো,বলতো পদ্ম আমাদেরকে নিয়ে গেছে। আর কেউ কিছু বলতো না।আমাদের সাথে ছিলো অভ্র ভাইয়া।ভাইয়া থাকলে সবাই আরো বেশি করে ঢং করতো।মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগতো আমার।কি দরকার সবার সাথে এতো মেশার।শুধু আমার সাথে থাকলেই তো হয়। তবে সেই দিনগুলিই ভালো ছিলো অনেক। এই তিন বছরে অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোটোগুলা এই তিন বছরে ওনেক বড় হয়ে গেছে। অনেকদিন পর দেখে চেনাই যায় না।
ঘর থেকে বের হয়ে আসতে আসতে চোখঁ বুলিয়ে নিলাম বাহিরে কে কে আছে,মামিরা সবাই দেখি কাজ করছে আর কয়েকজন অভ্র ভাইয়ার ঘরে কথা বলছে। সুযোগ বুঝে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। কিন্তু দরজা লাগিয়ে ভেতরে তাকাতেই ডুকরে কান্না পেলো,
অভ্র ভাইয়া শুধু একটা থ্রি কোয়াটার আর ঘারে একটা টাওয়াল রাখা অবস্থায় দাড়িয়ে আছে। মাথা থেকে পানি পরছে,মুখ ও ভেজা, অপূর্ব সুন্দর সুদর্শন যুবকের মতো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওনার মূখের দিকে তাকিয়ে আর কান্না আটকাতে পারলাম না, এই এই মানুষটা আমার কেনো হলো না, আল্লাহ কেনো এমন করলে আমার সাথে। মোনাজাতে তো শুধু এনাকেই চেয়েছিলাম আমি। অথচ এই মানুষটাকে ছোয়ার অধিকার আমার নেই। এনার শরীরে অন্য কারো ছোয়া। এই সুন্দর হাতগুলো তো আমার হবার কথা ছিলো। কিভাবে বোঝাবো এই কষ্ট আমি।
কান্না করতে করতে হেচকি উঠে গেছে, অভ্র ভাইয়া এখনো ঐ অবস্থায় দাড়িয়ে আছে। কিভাবে এতো কঠর হয়েছে উনি।
অতীত,,
আগে তো আমার একটু মন খারাপ হলেই না খেয়ে থাকতো, আমাকে দেখার জন্য স্কুলর সামনে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতো। আমি বের হলেই বলতো, তোর জন্য দাড়িয়ে থাকতে থাকতে কোমর ব্যথা হয়ে গেছে। বিয়ের পর কোমর টিপে দিবি।
আমি লজ্জায় লাল হয়ে বলতাম, ছিহ আমাকে কোমর দেখাতে তোমার লজ্জা করবে না।
এএহহহ আইছে লজ্জাবতি, বউয়ের কাছে কিসের লজ্জা
বউ কথাটা শুনে আরো লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলতাম, উনি মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলতো লজ্জা পেলে যে পদ্ম ফুলকে সদ্য ফোটা ফুটন্ত ফুলের মতো অপূর্ব সুন্দর লাগে সেটা কি সে জানে। মন চায় ছুয়ে দেই।
আমি মন দিয়ে ওনার কথা শুনতাম ।
আজ খুব বেশি আফসোস হচ্ছে সেই দিনগুলোর জন্য। কেনো সুখের সময় তারাতারি শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কষ্টের দিনগুলো কাটতেই চায় না।
বর্তমান,,
এখন আর নিজের কান্নার শব্দ নিজেই পাচ্ছি না,শুধু মাঝে মাঝে একবার করে ভেতর থেকে একটা শব্দ আসছে। যেটা আমি চাইলেও আটকাতে পারছি না। মুখ দিয়ে কোনো কথাও বের হচ্ছে না। চেয়েছিলাম সামনাসামনি অভ্র ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করবো আমার দোষ কি ছিলো,কিন্তু এখন তো দেখছি আমার কথায় বের হচ্ছে না। পানি খেতে হবে আমার,অভ্র ভাইয়াকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে কল থেকে পানি নিয়ে হাত দিয়েই খেলাম। এখানে কল আছে আর মটর আছে। মামিদের বাথরুম রুমে সেগুলোতে বেসিন আছে কিন্তু এটাতে নেই।নানির রুমেও আছে।কিন্তু সবাই বাহিরে থাকলে এটাতেই বেশি আসে। আমি নানির রুমের পাশের রুমে ছিলাম এতোক্ষন আর সেই রুম থেকে এই বাথরুমটা কাছে হয় জন্য এটাতেই আসলাম।
পানি খেয়ে,চোখেঁ মুখে পানি দিয়ে নিলাম এর মধ্যে অভ্র ভাইয়া হাত ধরে বলতেছে দেখো পদ্ম ফুল আমাকে ভূল বুঝিও না,তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
কেনো জানি না এই কথাটা আমার সহ্য হলো না,অভ্র ভাইয়া আমার সাথে এভাবে কেনো কথা বলছে,তুমি করে বলছে আমাকে। এক ঝাটকাতে হাত সরিয়ে নিয়ে বললাম,
আপনার সাথেও আমার অনেক কথা আছে মিস্টার অভ্রনীল চৌধুরি।
আমার মুখ থেকে এমনভাবে কথাটা মনে হয় ওনার হজম হলো না।ছোট ছোট চোখঁ করে তাকিয়ে বললো,
তুমি অমার সাথে এভাবে কেনো কথা বলছো পদ্ম ফুল
কিভাবে কথা বলবো আপনার সাথে,কথা বলা সেখাবেন আমাকে,কিভাবে মানুষকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঠকাতে হয় সেভাবে কথা বলতে হবে নাকি।
আর হ্যাঁ আমাকে পদ্ম ফুল বলে ডাকবেন না, এই নামটা আপনার মুখে মানায় না।
একসময় তো আমি ডাকতাম এই নামে, তখন তো এভাবে বলো নি
একসময় বলতেন,সেই সময় এটা না, সময় চলে গেছে,দিন বদলে গেছে। আর সাথে মানুষগুলোও
আমি মনে মনে না চাইলেও কথাগুলো বলে চলছি, এদিকে আমার হাটু পর্যন্ত কাঁপছে, কেনোনা আমি এভাবে বড় করে কারো সাথে কখনো বলি নি। আজ কিভাবে বলছি জানি না। অভ্র ভাইয়া অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু বাথরুমে তো আর এতোক্ষন থাকা যাবে না। তার ওপর এই বাথরুমে সবাই আসতে পারে।তই হনহন করে বাথরুম থেকে চলে আসলাম।
৩
বাথরুম থেকে রুমে এসে এতোক্ষনে ঘটে যাওয়া কথাগুলো মনে পরতে লাগলো। হাতের যেখানে অভ্র ভাইয়া ধরেছিলো সেই জায়গাটার দিকে তাকালাম। কি এমন হতো যদি স্পর্শটা রিকোয়েস্ট এর না হয়ে ভালোবাসার হতো। এখানে ধরে বলছিলো, পদ্ম ফুল ভূল বুঝিও না,কিছু কথা আছে। কিন্তু কথাটা যদিও হতো পদ্ম ফুল আজ পালাবে কোথায়,আজ তোমাকে আমার ভালোবাসার কাছে হার মানতেই হবে।আবারো এসব ভেবে ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে।
ছিহ ছিহ এসব আমি কি ভাবছি। যে মানুষটা ঠ*ক প্র*তা*র*ক তাকে নিয়ে এসব ভাবছি আমি। না না আমি আর কিছুতেই ভাববো না এই মানুষটার কথা। এসব ভেবে চোখঁ মুছে বাহিরে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। কিন্তু আবারো আমার এই বে*হায়া মন ওনার কথাই ভাবতে শুরু করলো। দেখতে তো মাশাআল্লাহ সেই মানুষটার ভেতরে এমন কেনো। কিছুতেই ভূলতে পারছি না। না তো ঘৃ*ন্যা করতে পাচ্ছি। এমন কেনো হচ্ছে আমার। আমি কেনো ভূলতে পাচ্ছি না। কেনো বার বার হিং*সা হচ্ছে ঐ শুপ্তি নামের মেয়েটার ওপর। তাহলে আমি কি প*চাঁ
মেয়েদের মতো হয়ে গেলাম। যারা অনের স্বামীকে দেখে জ্বলে। না আমি তো এমন না। আমি কখনো ওদেরকে আলাদা করবো না। আমি কাল সকালেই চলে যাবো এখান থেকে। আমি আবারো চলে যাবো ঢাকায়। আর কখনো আসবো না নানু বাড়িতে। তাহলেই এই ঠ*ক প্র*তা*র*ক মানুষটাকে কখনো দেখবো না আর।
নিজেকে অনেকটা স্বাভাবিক করে নিয়ে বাহিরে গেলাম। গিয়ে দেখি অনেকেই আছে,মামিরা রান্না করছে। আমার নিজের দুই মামি আর নানু, নানি এনারা এক জায়গায়। আর অভ্র ভাইয়ার আব্বু একাই আমার আম্মুর চাচাতো ভাই। অভ্র ভাইয়ার দাদু মারা গেছে দাদি আছে। মানে ওটাও একটা নানি হয়।বাহিরে যারা যারা ছিলো তাদের আর মামিদের সাথে কথা বলে ঐ নানির রুমের দিকে গেলাম।কাল সকালে উঠেই চলে যাবো। তাই আজ গিয়ে দেখা করে আসি। নানির ঘরে যেতেই নানি বললো,
-কে পদ্ম
-হ্যাঁ নানি, কেমন আছো
-ভালো আছি রে বুবু, তুই কেমন আছিস (নাতনিদের বোন সমন্ধ করে বুবু ডাকে)
-আমিও আছি ভালো
-আমি জানি রে বুবু, তুই ভালো নেই
-এসব কি বলছো নানি ভালো আছি তো আমি
-আমি আগেই জানতাম যে অভ্র দাদু ভাই আর তুই দুজন দুজনকে ভালোবাসিস। অভ্র অনেকবার আমার ঘরে এসেও কথা বলেছে। কিন্তু হটাৎ করে যে এমন একটা কাজ করে বসলো তা একদম ঠিক করে নি ও
কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছি জন্য নানি আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
আমারো ইচ্ছা ছিলো আমার পদ্ম ফুলের মতো একটা নাতবউ হবে, সেটা পদ্ম ফুল হলে তো কথায় নেই, যে সবার সাথে মিশবে,যার মধ্যে কোনো হিংসা নেই,কোনো কথা বললে হেয়ালি করবে না, দেখতেও পরীর মতো, সেই হিসেবে আমার পদ্ম যে একেবারে একশোতে একশো ছিলো।
কিন্তু তুই মন খারাপ করিস না বুবু, তোর ভাগ্যে রাজপুত্রের মতো একটা রাজকুমার আসবে। যে সাত সমুদ্র পারি দিয়ে তোকে নিয়ে যাবে তার রাজ্যে। কারন একটা কথা মনে রাখবি যে যেমন তার কপালে তেমনি জুটে রাখছে।
নানির কথাগুলো শুনে ভালো লাগছে,, কিন্তু আদৌও কি এমন কেউ আছে যে আমাকে আমার মতো করে বুঝবে। যে তার ভালোবাসা দিয়ে আমার কষ্টের দিনগুলি ভুলিয়ে দিতে পারবে। নাকি আমি কখনো ভূলতেই পারবো না অভ্র ভাইয়াকে। কিভাবে ভূলবো আমি যে এই মানুষটাকে মনের গহীন থেকে ভালোবেসেছি।
নানি: শোন পদ্ম,একটু আগে অভ্র আমার কাছে এসেছিলো। আমি অভ্রের চোখঁ, মুখ কথা বলা দেখে বুঝেছি যে ও ভালো নেই, কাউকে কষ্ট দিয়ে বেশিদিন ভালো থাকা যায় না। আমার নাতি বলে যে ওর গুন গাইবো এমন মানুষ আমি নই। আমি জানি তোকে হারিয়ে ও খুব বড় ভূল করেছে। মানুষের টাকা,পয়সা আজ আছে কাল নেই কিন্তু ভালোবাসার মানুষটা একবার হারিয়ে ফেললে তাকে ফেরানোর সাধ্য নেই। তাই যে থাকতে মূল্য দিতে পারবে না তার থেকে হারিয়ে যাওয়া অনেক ভালো।
তোকে শক্ত হতে হবে, কাঁদলে বা ভে*ঙে পরলে চলবে না,একজন সফল ডাক্তার হতে হবে তোকে।সবাইকে দেখিয়ে দিতে হবে কারোর জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না। অধিক ভালোবাসার পর যদি মানুষটা না বোঝে তাহলে তাকে কোনোভাবে বোঝানো যাবে না। তখন তাকে ইগনোর করতে হবে,তাহলেই বুঝবে। ভালোবাসা কোনো পুতুল খেলা না যে যখন যাকে ভালোলাগলো তার সাথে করবো। আর বউ চাই সতি সাবিত্রী। এমনটা হবে না,যে স্বামী বিয়ের আগে অন্য মেয়ের কাছে যাবে,পরে দেখবে তার বউয়ের ও প্রেমিক ছিলো।তখন সে নিজের ভূল বুঝতে পারবে যেমনটা অভ্র এখন বুঝতেছে।
অভ্র ভাইয়া ভালো নেই শুনে চোখঁ ভিজে গেলো, কেনো ভালো নেই মানুষটা, ভালোবেসে বিয়ে করেছে,বউ,বাচ্চা সবই তো কাছে আছে। তাহলে আর কিসের অভাব। আমার কথাই যদি মনে হবে তাহলে অন্যখানে বিয়ে কেনো করেছিলো। বিয়ে করার আগে কি ভাবে নি। নানির কথাই ঠিক,আমাকে শক্ত হতে হবে দেখিয়ে দিতে হবে আমিও বাঁচতে পারি,শুধু বাঁচতে না নিজের পরিচয় নিয়ে তাকে ছাড়াও বাঁচতে পারি আমি।
কিন্তু নানির শেষের কথা গুলো বুঝলাম না, নিজের বউয়ের প্রেমিক ছিলো,যেমনটা অভ্র বুঝতেছে এই কথাটা কেনো বললো নানি। নানিকে জিজ্ঞেস করলাম, নানি অভ্র ভাইয়া কি আমার সাথে সম্পর্ক করার সময় অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলতো,
হুমম রে পদ্ম বলতো, সেটা আমি আগে শুনলে হয়তো তোকে সাবধান করতাম কিন্তু আমি আগে বুঝিনি বুবু। আমাকে ক্ষ*মা করে দিস।
নানির চোখেঁ পানি দেখে আবাক হলাম,নিজের নাতির কথাগুলো কিভাবে আমাকে বলে দিলো,অন্য কেউ হলে হয়তো চেপে যেতো,কিছু বলতে চাইতো না।কিন্তু এমন কিছু না করে আমাকে বলে দিলো।
আমি নানির হাত ধরে বললাম,তোমার কোনো দোষ নেই নানি। যা হয় ভালোর জন্যই হয়। যে মানুষটা একসাথে একাধিক রিলেশন করে আমি যে তার বউ হই নি এটাই অনেক। না হলে হয়তো আমাকে পস্তাতে হতো। তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে বের হয়ে আসলাম।
রাত প্রায় এগারোটা,,খাওয়া দাওয়া করে ঘরে এসেছি আর বের হই নি। নানি এতোক্ষন চিল্লাচিল্লি করলো, আজকেই এসেছে কাল কেনো যাবে, তিনবছর পর আজ এসেছে তবুও কাউকে না বলে,আজ তোর মামা বড় মাছ,নদীর মাছ কিছুই পায় নি, পছন্দ মতো খাওয়াতেই পারলাম না এখোনো,বিয়ে হলে স্বামী যে কেমন হয়, নানু বাড়িতে আসতে দিবে কি না সেটা কি আমরা জানি নাকি। এখনে কোনো যাওয়া নেই। পনেরোদিন থাকবি আমার সাথে। তিনবছরের দেখা মন ভরে দেখে নেবো তোকে। তোর পছন্দের সব খাবার খাওয়াবো তারপর যাওয়া।
মামা মামিরাও যাওয়ার কথা শুনে একদম না করে দিয়েছে।
আসলে নানা নানিরা বুঝি এমনি হয়। আসলেই খাওয়ার দিকটা একদম ঠিক থাকা চাই। কি খাবো কি খাবোনা সব যেনো মুখস্থ করে রাখে। মামা মামিও খুব ভালো,আমি আসলে আমার খাবার যেনো সবার আগে,টাইমে টাইমে সব করে দেবে। চুল আচরিয়ে দেবে,তেল দিয়ে দেবে,মাথা ধুয়ে দেবে, গোছল শেষে কাপরটাও ধুয়ে দেবে, আমি ধুলেই বকা দিয়ে বলবে বিয়ে হলে কি আমরা কেউ যাবো তোর কাজ করতে, এখন একটু করে দেই,তা না আগে আগে করিস।
কিন্তু কিভাবে বোঝাবো,আমি যতো থাকবো ততো কষ্ট পাবো। যখনি মনে পরতেছে অভ্র ভাইয়া আর শুপ্তি এক ঘরে আছে তখনি যেনো চোখেঁর জল আর বাঁধা মানছে না।
তবে এতোটা খা*রা*প ছিলো এই মানুষটা। আমার সাথে সম্পর্কের সময় অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলতো। কিন্তু আমি বো*কার মতো ওনাকে বিশ্বাস করেছি। আমার কখনো মনেই হয় নি যে এই মানুষটা আমাকে ঠকাতে পারবে। কি নিখুঁতভাবে কথা বলেছে আমার সাথে। মনেই হয় নি ওনার মনে এমন থাকতে পারে।
পরেরদিন খুব সকালেই ঘুম ভেঙে গেলো,আমাদের বাড়ি তো রাস্তার সাথেই, রাতে দিনে সবসময় গাড়ির হর্ন,মানুষের কোলাহল এসবে ভর্তি থাকে। ফুপির বাসা রাস্তার সাথে না হলেও শহরের মধ্যে,গাছপালা কম পাখির ডাক ও বেশি শোনা যায় না। আর নানু বাড়ি গ্রামে, চিরদিকে গাছপালায় ভর্তি, পুকুর জমি। তাই অনেকদিন পর আজকের সকালটা বেশ ফুরফুরে মনে হচ্ছে।পাখির কিচিরমিচির ডাক আর সকালের মৃদু বাতাসে ঘরের পর্দাগুলো উরছে। আমি উঠে গিয়ে জালানা থেকে পর্দা সরাতেই চোখঁ গেলো উঠানের শেষ মাথার সবুজ ধানক্ষেতে, মনে হয় কিছুদিন আগে জমিতে ধানগাছ লাগিয়েছে, পুরো মাঠ একদম সবুজ হয়ে আছে, মনটা আর মানলো না আসতে আসতে দরজা খুলে বেরিয়ে আসলাম বাহিরে। কালকে সবার কথা শুনে বুঝেছি আজকে আমাকে কেউ যেতে দেবে না। আর মামাদের ওপর দিয়ে তো কথাও বলতে পারবো না। কমপক্ষে দুইদিন থাকতে হবে আমাকে। সবার কথা ভেবি না হয় দুটো দিন মানিয়ে নেবো।
আমি সবুজ ধানখেতে এসে কয়েকটা সেলফি উঠালাম। ছবির ক্ষেত্রে শহরের বড় বড় দালানকোঠার চেয়ে গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য অনেক সুন্দর। ছবির পেছনের জায়গা সুন্দর হলে ছবি ভালো হয়। তাছাড়া আর কবে নানু বাড়িতে আসবো কি না জানি না,এই সৌন্দর্য ফোনে থাকলে সবসময় দেখতে পাবো।
সেলফি তোলা হলে ছবিগুলা দেখার সময় দেখলাম রাত একটার দিকে ফুপি কল দিয়েছিলো। রাতে ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো জন্য বুঝতে পারি নি। তাই এখন কল করলাম এতো রাতে কেনো কল দিয়েছিলো কারো কিছু হয়েছে নাকি।
কল দেওয়ার সাথে সাথেই ফুপি রিসিভ করলো,
-সালামি দিয়ে বললাম কেমন আছো ফুপি
-আমি খুব ভালো আছি রে পদ্ম, জানিস তোর নিলয় ভাইয়া দেশে আসছে। আমাকে কাল বলেছে। তাই রাত্রেই তোকে জানানোর জন্য কল দিছিলাম।
নিলয় ভাইয়া আসছে,নিলয় আমার ফুপাতো ভাই পড়াশুনার জন্য বাহিরে ছিলো। আমি ফুপির বাড়িতে যাওয়ার একবছর আগে চলে গেছে। আমি দেখেছিলাম পাঁচ বছর আগে। এখন চেহারাটা অতো মনে নেই। বাড়িতে একগুলা ছবি ছিলো সেগুলো প্রায় পাঁচ-ছয় বছর আগের। ফুপি ভিডিও কলে কথা বলার সময় অনেকবার ডেকেছে কিন্তু আমার ভিডিও কলে কথা বলতে লজ্জা লাগে,আমি সামনেই থাকতাম না বেশি। অডিও কলে বলেছিলাম কয়েকবার।
চলবে,,
#ভূল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।❌কপি করা নিষেধ ❌