পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব :২৫
ওয়ালেট আর গাড়ির চাবি নিয়ে রায়হান ফিরে আসতেই দেখে সাদিয়া ইকবাল হাসান এর সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। সাদিয়া ওই জানোয়ার, ধর্ষকটার সাথে কেন? আর কোথায় যাওয়ার জন্য ইশারা করছে সে সাদিয়াকে? ফিসফিস করে কথাটা বেলেই, দৌড়ে সেদিকে এগোলো রায়হান।
হঠাৎ তাকিয়ে দেখল ইকবাল সাদিয়ার হাত ধরে টানছেন। মাথায় রক্ত উঠে গেল রায়হানের। ইকবাল হাসানকে ঘুরিয়ে স্বজড়ে তার মুখের মধ্যে ঘুষি মারতেই এক হাত পিছিয়ে গেল সে। আশেপাশের লোকজন এবার তাকাল সেদিকে। অন্যকিছু পারুক আর না পারুক তামাশা দেখতে ঠিকই পারে তারা। সাদিয়া এক হাতে ধরে আছে রায়হানকে। রায়হান ইকবালকে মাটিতে ফেলে গলা চেপে ধরে রেখেছে। সাদিয়া নিজের শক্তি দিয়ে টানছে রায়হানকে কিন্তু কিছুতেই রায়হানের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না। আসেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলো সব তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে কিন্তু কেউ একজনও ধরছে না বা ঝগরা থামানোর চেষ্টা করছে না।
সাদিয়া চিৎকার দিয়ে সাহায্য চাইতেই কিছু লোক এসে টেনে তুলল রায়হানকে। ইকবাল হাসানের যেন আরেকটু হলে ধম বের হয়ে যেত। রেস্টুরেন্টে এর ম্যানেজার পুলিশ কল করতেই ইকবাল হাসান চলে গেলেন সেখান থেকে। যদি রায়হান সব কিছু বলে দেয় পুলিশকে! সাদিয়া যদি এখনকার ঘটনা বলে দেয়! সেটা ভেবেই স্থান ত্যাগ করল সে।
গাড়িতে বসেই সাদিয়া রায়হানকে বকাবকি শুরু করল। রায়হান চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। সাদিয়া প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। “কেন ঝগড়া করলেন আপনি? ওই লোকটা যদি আপনার কোন ক্ষতি করে দিত? কেন পাগলামো করতে গেলেন আপনি? লোকটাকে তো মেরেই ফেলেছিলেন। যদি মারা যেত? আল্লাহ।” একনাগাড়ে কথাগুলো বলে একটা বড়সড় নিশ্বাস নিল সাদিয়া।
রায়হান এতক্ষণ কিছু না বললেও এখন চুপ থাকতে পারল না। বলল, “মেরে ফেলাই উচিৎ ছিল শুয়োরটাকে। কেন বাঁচালে তুমি? ”
সাদিয়া এবার কাতর স্বরে বলল, “তাকে মেরে আপনি জেলে যেতে চান? আমাদের কথা একবার ভাববেন না?আপনার কিছু হলে আমার কি হবে? বাবা-মা, সবার কি অবস্থা হবে ভাবতে পারছেন?”
সাদিয়ার কথার উত্তর দিতে পারল না রায়হান। মনে মনে বলল, “শুয়োরটা যে একটা ধর্ষক সেটা জানলে তুমি এ কথা কখনোই বলতে না সাদিয়া। প্রতি বছর দেশ থেকে কত শত কুকুর নিধন করা হয় কিন্তু এসব কাপুরুষ ধর্ষক নামে কুকুরদের নিধনের জন্য কেউই কিছু করছে না। তাই বলে কি আমিও তাদের মত বসে থাকবো? আসলে নিজেকে নিয়ে ভাবতে চাই না আমি কিন্তু তোমাদের কারণে ভাবতে হয়।”
রায়হানের চুপ থাকা দেখে সাদিয়া ফের প্রশ্ন করল। বলল, “কি হলো বলুন? নিজেকে নিয়ে না ভাবলেও আমাদের নিয়ে তো ভাবতে পারেন।”
রায়হান সাদিয়ার কথা এড়িয়ে গেল। হঠাৎ মনে আসা প্রশ্নটা করে বসল। বলল,
—“ওই জানোয়ারটা তোমার হাত ধরে কেন টানছিল? তুমি আসেপাশে থাকা লোকজনদের ডাকতে পারলে না? সেইজন্যই বলেছিলাম আমার সঙ্গে চলো।”
সাদিয়া এবার নড়েচড়ে বসল। বলল, “উনি বারবার আমাকে গাড়ির সামনে এগোতে বলছিল তার সাথে। আমি ‘না’ করাতে হঠাৎ কেমন রেগে যায়। আমার হাত ধরে টেনে বলে, সামনে এগোতে। ”
সাদিয়ার কথায় রেগে গেল রায়হান। গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরল। গাড়িতে জোরে জোরে দুটো লাথি মেরে বলল, “ওই শালাকে পেলে আমি জানে মেরে দিব।”
সাদিয়া এতক্ষণ রায়হানকে বুঝালেও এখন রায়হানের উপর রেগে গেল। বলল, “আবার মেরে ফেলার কথা বলছেন? হ্যাঁ, মানলাম উনি আমার সাথে ইভটিজিং করেছে কিন্তু এতগুলো মানুষের সামনে তো তর উনি কিছু করতে পারত না। তাই না?”
রায়হান সাদিয়ার দিকে একবার তাকাল। সাদিয়া এই রাতের অন্ধকারে চাঁদের আলোয় রায়হানের চোখের পানি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। তা দেখে, সাদিয়া কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি রায়হান এসে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিল। রায়হান যেন শরীরের সব শক্তি দিয়ে জরিয়ে ধরে আছে সাদিয়াকে, যাতে কেউ কেঁড়ে নিতে না পারে তার কাছ থেকে। সাদিয়ার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই রায়হানের। রায়হান এবার সাদিয়াকে ছেরে দিল ওর গালে আলতো হাত রেখে কপালে চুমু এঁকে দিল। সাদিয়া চোখ বন্ধ করে অনুভব করল রায়হানের সেই ভালোবাসার স্পর্শ। এ যে এক অদ্ভুত অনুভূতি, একটা অন্যরকম পাওয়া সাদিয়ার কাছে। রায়হান নমনীয় ভাষায় বলল,
—“আমার যে খুব ভয় করে সাদিয়া তোমাকে নিয়ে। এক মূহুর্তের জন্য তুমি চোখের আড়াল হলে মনে হয় এই বুঝি তোমাকে আমি হারিয়ে ফেললাম। নিজের অজান্তেই কেন যে এই ভাবনাটা আসে জানা নেই সাদিয়া। তোমাকে হারানোর ভয় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আমায় সারাক্ষণ। তোমাকে ছাড়া আমি নিজেকে এক মূহুর্তও ভাবতে পারি না।”
“ভালোবাসা গভীরতা হয়তো এমনই। ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলার ভয় কুঁড়ে কুঁড়েই খায় সবসবয়। ভাববেন না, আমি কখনো আপনাকে ছেড়ে যাব না। হয়তো আপনার ভালোবাসার টানে কোথাও যেতেই পারবো না। তাছাড়া আমিও যে আপনাকে ভালোবাসি।” মনে মনে কথা বলল সাদিয়া।
রায়হান ফের সাদিয়াকে জরিয়ে ধরল। বলল, “আমাকে কখনো তুমহ ছেড়ে যাবে না সাদিয়া। কথা দাও? তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।”
সাদিয়া রায়হানকে ঠেলে ওর ঠোঁটে আঙুল রাখল। বলল, “এই কথা আর কখনো বললেন না।”
—“তাহলে তুমি আমাকে কথা দাও! কখনো আমায় ছেড়ে যাবে না।”
সাদিয়া রায়হানের কাধে ভর দিয়ে পায়ের আঙুল দিয়ে একটু উঁচু হয়ে দাঁড়াল। রায়হানের কপালে আলতো চুমু এঁকে দিয়ে বলল, “কথা দিলাম।”
সাদিয়া এমনটা করবে ভাবতেই পারেনি রায়হান। ঘটনাটা কি সত্যি ঘটলো বিশ্বাস হচ্ছে না রায়হানের। এক মূহুর্তের জন্য মনে হয়েছে সবকিছু পেয়ে গেছে সে।
সাদিয়া লজ্জা পেয়ে গাড়িতে গিয়ে বসল। রায়হান মুচকি হেসে ওর পিছু গাড়িতে গিয়ে উঠে বসল। সাদিয়া দেকে তাকিয়ে দেখল, সাদিয়া বাইরে তাকিয়ে আছে। মুচকি হেসে গাড়ি স্ট্রাট দিল সে।
।
।
।
হৃদয় বসে বসে অপেক্ষা করছে মিমের কিন্তু মিমের কোন দেখা নেই। হৃদয় কিছুক্ষণ পর পর ছাদের দরজায় তাকিয়ে দেখছে এই বুঝি মিম এলো। হৃদয় ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল ৯টা বেজে গেছে। মিমের ৮টায় এখানে আসার কথা ছিল। নিচে গাড়ির শব্দে ছাদের কিনারায় গিয়ে দেখলো, গাড়ি থেকে ভাইয়া ভাবি নামছে। ঠিক তখনি ছাদের দরজায় ঢেলে ভিতরে ঢুকল মিম। দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকাতেই চোখ আঁটকে গেল হৃদয়ের।
কি অপূর্ব সুন্দর লাগছে মিমকে! খয়েরী পাড়ের কালো শাড়িরটাতে খুব ভালো মানিয়েছে। কানের দুলদুটো যেন ওর খোলা চুলের মাঝো লুকোচুরি খেলছে। কাজল কালো চোখদুটো সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেরিয়ে দিয়েছে। পিচ্চি মেয়েটাকে শাড়িতে কেমন বর বড় মনে হচ্ছে। ভাবতেই মুচকি হাসলো হৃদয়।
মিম চারিদিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হলো। রঙিন বাতি ব্যবহার করা হয়েছে পুরে ছাদের রেলিং জুরে। ফুলের গাছগুলো থেকে শুরু করে ফলের গাছগুলোতেও ছোট ছোট রঙিন বাতি দিয়ে পেঁচিয়ে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়েছে হৃদয়। ছাদের এক কোনে টেবিল বসানো সাথে দুটো সিংগল সোফা। তার নীচে এবং চারোদিকে গোলাপের পাঁপড়ি ছেটানো। মিমের মাথায় কিছু আসছে না। এত কম সময়ে সবকিছু কিভাবে করল হৃদয়?
সবশেষে চোখ পড়ল হৃদয়ের উপর ফর্মাল লুকে খুব সুন্দর লাগছে হৃদয়। মিম মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল হৃদয়ের দিকে। হৃদয় এগিয়ে এসে মিমের হাতটা ধরলো। মিমকে নিয়ে সোফায় বসালো। বলল,
—“আমি তো ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আসবে না।”
—“একটু দেড়ি হয়ে গেল? দুঃখীত।”
বলে মিম তাকালো হৃদয়ের দিকে। হৃদয় অপলক তাকিয়ে আছে ওর দিকে। মিম অস্ফুটে জিজ্ঞেস করল,
—” এত কম সময়ে এতকিছু কিভাবে করলেন? ”
মিমের কথায় হুঁশ ফিরল হৃদয়ের। বলল,
—“এইতো এমনি হয়ে গেল আরকি।”
—-” খুব সুন্দর হয়েছে। তবে এত কষ্ট না করলেও পারতেন।”
—” তোমার মুখের হাসি দেখার জন্য এটা তো কিছুই না। ”
হৃদয় কথায় লজ্জা পেল মিম। হৃদয় দেশলাই জ্বালিয়ে টেবিলে থাকা মোমবাতি গুলো জালিয়ে দিল। তারপর শান্তি কন্ঠে বলল,
—“তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে মিম।”
হৃদয়ের কথায় মিম কিছু বলল না। মুচকি হেসে চারিদিকে তাকালো। মিমের কোন সাড়া না পেয়ে হৃদয় শার্টের কলার ঠিক করে দুষ্টামি করে বলল,
—“তোমার মতলব তো ভালো দেখছি না। ”
মিম অবাক হয়ে তাকালো। জিজ্ঞেস করল, “মানে?”
—“এত সুন্দর করে সেজেছ কেন?”
—“কোথায় সাজলাম? শুধু কাজল দিয়েছি চোখে আর আপনার কথা মতো শাড়ি, কানে দুল পড়েছি।”
—” তাহলে এত সুন্দর লাগছে কেন তোমাকে? ইচ্ছে তো করছে এখনি বাসার কাজী ডাকাই নয়তো তোমাকে নিয়ে কাজী অফিস চলে যাই।”
মিম হৃদয়ে দুষ্টামী এবার বুঝতে পারল। “আপনাকে তো আমি আজ মেরেই ফেলবে।”, বলে উঠে হৃদয়ের দিকে এগোল। হৃদয় মিমের কান্ড দেখে হাসলো, বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। হৃদয়কে হাসতে দেখে, মিম ওর বুকে আলতো ঘুষি মারতে যাবে তখনি হৃদয়, ওর হাত ধরে টেকে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে ধরল মিমকে।
।
।
।
বাসায় এসে সাদিয়া ফ্রেশ হতে রুমে চলে গেল। রায়হান মাকে ডেকে খাবার পেকেট তার হাতে তুলে দিল। রেহেনা বেগম ছেলেকে জিজ্ঞেস করল,
—” এগুলো আবার আনতে গিয়েছিস কেন? ”
—” যা বাবা, আমরা দুজন রেস্টুরেন্টের ভালো ভালো খাবার একা একা খাবো আর তোমরা বাসার খাবার খাবে এটা আমি হতে দিব?”
—“ধুর বোকা। বাসার খাবার তো কি হয়েছে? মেয়েটাকে নিয়ে একদিন কোথাও ঘুড়তে বের হেয়েছিলি তার উপরে এসব ঝামেলার কোন দরকার ছিল কি? ”
—” আমার কাছে সাদিয়া যেমন তোমরা দুজনও ঠিক সেইরকম। আমি তিনজনকেই খুব ভালোবাসি মা।”
—“পাগল একটা। আমি কি কিছু বলেছি এ নিয়ে ? আমি জানি আমার ছেলে কেমন।”
—“আচ্ছা শোন, তোমার আর বাবার পছন্দমত খাবার এনেছি। হৃদয়েরটাও এনেছি কিন্তু মিম কি খায় আমি জানি না সাদিয়া যা বলছে তাই…..
রায়হানকথা শেষ করতে পারল না সাদিয়া তারাহুরো করে এসে বলল,
—“মা আমাকে দিন আমি টেবিল খাবার সাজিয়ে দিচ্ছি। ”
রেহানা বেগম সাদিয়াকে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি কলিং বেল বেজে উঠল। রায়হান গিয়ে দরজা খুলতেই পাশের বাসর এক আন্টি রায়হানের দিকে একবার তাকিয়ে হুড়মুড়িয়ে ভিতরে ঢুকে গেল। চেঁচিয়ে সবাইকে ডাকতে লাগল। আমজাদ চৌধুরী, রেহেনা বেগম, সাদাদিয়া সবাই আসতেই সে বলল,
—“এটা কি কোন ঘড় নাকি অন্য কিছু? বর ছেলে বিয়ে করে নিয়ে আসল ধর্ষিতা মেয়েকে আর ছোট ছেলে বাড়ির আশ্রিতার সাথে নষ্টামি করছে।”
রেহানা বেগম ভদ্রতার সহিত বলল, “কি হয়েছে আপা? কি সব আজেবাজে বলছেন? ”
মহিলার কথা শুনে সাদিয়ার চোখ বেয়ে পনি পরতে লাগল। ধর্ষিতারা ধর্ষণ হয় একবার কিন্তু সামাজের নিম্নমস্তিষ্কের মানুষগুলোর কাছে বারবার, প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হয়। এসব মানুষ সমাজের নোংরা কীট ছাড়া আর কিছুই না। তাদের জন্য বহু ধর্ষিতা ধর্ষণের পর বাঁচতে চেয়েও ফাসিতে জুলে পরে।
রায়হান পুরোতরে রেগে গেল। বলল, ” ভদ্রভাবে কথা বলেন। আর একটা বাজে কথা বললে ভুলে যাব আপনি আমাদের প্রতিবেশী। সাদিয়া আমার স্ত্রী কোন ধর্ষিতা না। আর আমার ভই কিসের নষ্টামি করছে শুনি? ”
মহিলা সাপের মতো রাগে ফুঁসতে লাগল। বলল, “হুহহ, আসছে ভদ্রমানুষ আমার। চলো আমার সাথে নিজেরাই দেখতে পারবা।”
মহিলা আগে আগে হেঁটে ছাদের দিকে যেতে লাগল। সাবাই তার পিছু পিছু চলল। মহিলা সিরি বেয়ে ছাদে উঠতে যাবে তখনি রায়হান সবকিছু আন্দাজ করতে পারল। ভাবলো, “উনি হয়তো হৃদয় আর মিমকে ছাঁদে দেখেই এখানে অশান্তি বাঁধাতে এসেছে। মনে মনে সব পরিকল্পনা করে ফেলল মহিলাকে জব্দ করার।
মহিলা পা দিয়ে লাথি মেরে খুলতেই; মহিলা সহ সবাই হৃদয় আর মিমকে দেখল, একে আপরে জরিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। জোরে দরজার খোলার শব্দে হৃদয় আর মিম দুজন তাড়াতাড়ি দুদিকে চলে গেল। মলিহা রেহানা বেগমকে ইঙ্গিত করে বলল,
—” নেও দেখ এবার কি নষ্টামি হচ্ছে। কি রায়হান বাবাজি দেখেলে তো এবার?”
মহিলার কথার জবাবে আমজাদ চৌধুরী কিছু বলতে যাবে রায়হান ইশারায় তাকে চুপ থাকতে বলল। রেহানা বেগম মুখ খুলার আগেই রায়হান মিহিলাকে কটুক্তি করে বলল,
—“আপনি কি তাহলে রাত বিরেতে মানুষের বাসায় কোথায় কি হচ্ছে তাই নিয়ে পরে থাকেন নাকি? এসব ছাড়া কোন কাজ নেই? বয়স তো কম হয়নি তাও সন্তানের বষসী ছেলেমেয়েদের অন্তরঙ্গ অবস্থায় কি করে তা দেখেন! লজ্জা থাকা উচিৎ।”
রায়হানের কথায় মা-বাবা সহ সবাই খুব লজ্জা পেয়ে গেল। তবে রায়হানের কাছে মহিলাটিকে কথা শোনানোর অন্য কোন উপায় ছিল না। মহিলা এতক্ষণ কর্কশ কন্ঠে কথা বললের এখন আস্তে করে বলল,
—“আমি তো ছাদে উঠেছিলাম বিকালে ঘরে না নিয়ে যাওয়া কাপড়গুলো নিতে। তখনি এসব দেখে তোমাদের জানাতে আসলাম।”
মূহুর্তেই মহিলার কি জেন হলো সে আবার গলা চওড়া করে বড় বড় গলায় বলতে লাগল, ” এই নষ্টামি তখন দেখিই বলতে আসলাম। তোমাদের জন্য তো দেখছি আর এখানে থাকা যাবে না। ঘড়ের ভিতর এসব নষ্টামি চলবে আবার বাইরে থেকে কেউ কিছু বলতে আসলেই দোষ। বাবাগো বাবা ছেলের মুখের কথা শুনলে গায়ের লোম পরে যায় এমন। রেহানা কি ছেলে গো তোমার।”
—“ওরা তো কোন নষ্টামি করছে না। ওদের বিয়ে ঠিক হয়েছে। এইতো পরুশ বাদেই ওদের বিয়ে। তাই একা একটু কথা বলতে এসেছে। এখানে আপনি এমন কি দেখলেন কিছু বুঝলাম না। আগে সবকিছু জেনে বুঝে তারপর করো উপর আঙুল তুলবেন আগে না। আপনি কিছু না জেনে না শুনে এতকিছু কিভাবে বললেন? আপনাকে দেখে আমি সত্যি অবাক হচ্ছি।”
আমজাদ চৌধুরী এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার বললেন। আগে নিজের ছেলেমেয়েকে ঠিক কর তারপর অন্যকে বলতে আসিস। আর কিছু বললাম না। রাত হয়েছে বাসায় যা।
মহিলা কিছু না বলে মাথা নীচু করে চলে গেল সেখান থেকে। রায়হান বাবা-মা আর সাদিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, “তোমরা নীচে গিয়ে ড্রয়িং রুমে বসো আমি ওদের নিয়ে আসছি।
সবাই চলে গেল রায়হান ওদের উদ্দেশ্য করে বলল,
—” চলো দুজন। চিন্তা কোন কারণ নেই আমি সব সামলে নিব। আর তোমাদের বিয়েটা দুদিন পরই হচ্ছে নয়তো ওই মহিলা এটা নিয়ে কত কি গুজব ছড়াবে ভাবতেও পারবে না।”
রায়হান চলে গেল। হৃদয় একবার মিমের দিকে তাকাতেই দেখলো মিম কাঁদছে। হৃদশ ওর কাছে গেল ওর হাতদুটো শক্ত করে ধরে বলল, “কি হলো কাঁদছো কেন?”
মিম শব্দ করে কাঁদতে লাগল এবার। অস্ফুটে বলল,
—“সবাই কি ভাবছে আমাকে নিয়ে?”
—“কি ভাববে কিছুই ভাববে না। বরং তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছ শুনলে বাবা মা অনেক বেশি খুশি হবে। এবার কান্না থামাও জান আর চলো।”
—“আমি যাবো না আপনি যান।”
—“তুমি না রায়হান ভাইয়াকে বড় ভাইয়া বলে ডাকো তার কথা শুনবে না? সে যে তোমাকে যেতে বলে গেল। চলো প্লিজ।”
—“সবাই কি ভাবছে? কিছু বললে?”
“আরে কিছু বলবে না। ” বলে হৃদয় ওর হাতে দরে টেনে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে লাগল। ”
চলবে…..
আগামী পর্বের কিছু অংশ :-
সাদিয়াকে অপহরণ করা হয়েছে। সাদিয়াকে বাঁচানোর জন্য ধর্ষকের কথা মত ফাঁসির দড়িতে ঝুলে পরল রায়হান।
[#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ২৬ ( এলার্ট ১৮+ )
“সাদিয়াকে আজ অপহরণ করে রায়হানকে উচিৎ শিক্ষা দিব ভেবেছিলাম। শালার সামনেই ওর বৌউকে পূনরায় ধর্ষণ করে আমার বন্ধুদের খুনের প্রতিশোধ নেব বলে ভেবেছিলাম কিন্তু শালা আমার সব প্লান ভেস্তে দিল। ” বলেই রাগে গজগজ করতে লাগলো ইকবাল হাসান।
তখন মাটিতে পরে যাওয়তে পিঠ ছিলে গেছে তার। কোমরেও ব্যাথা হচ্ছে প্রচুর। ড্রয়িং রুমে থেকে নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় পরে চেঁচিয়ে স্ত্রীকে ডাকতে লাগল সে বলল, “ইলা, ইলা, কোথায় তুমি? উফ খুব পেইন হচ্ছে। ইলা?”
ইকবাল হাসান এর চেঁচামেচি শুনে মেয়েকে খাওয়ানো রেখে দৌড়ে সেখানে আসল ইলা। ইকবাল হাসান ইলাকে দেখে বিশ্রী একটা গালি দিয়ে বলল, “কোথায় থাকো তুমি?”
ইলা শন্ত ভাবেই জবাব দেয়। বলে, “মেয়েকে খাওয়াচ্ছিলাম। ডাকছো কেন বলো? কি দরকার?”
ইমরান হাসান পরনে থাকা শার্টটা খুলে ফেলল উবু হয়ে শুয়ে বলল, “কোময়ে একটু মুভ লাগিয়ে দাও তো। আর পিঠ মনে হয় ছিলে গেছে, কেমন জ্বলছে। এটকু ক্রীম লাগিয়ে দাও। ”
ইলা এখনো শান্তভাবে জবাব দিল। বলল, “কিভাবে হলো এসব? আবার কি কুকাজ করে, মার খেয়ে এসেছেন?” বলে ড্রয়ার খুলে মেডিসিন খুজতে লাগল।
ইমরান হাসান তার কথায় রেগে গেল। শোয়া আবস্থায় থেকেই বালিশটা ছুড়ে মারল ইলার দিকে। বলল, “জানিস না কি আর কুকাজ করতে পারি? তোর বোনকে ভা* দিতে গিয়েছিলাম। ”
ইলা এখন আর শান্ত থাকতে পারল না। রেগে উত্তর দিল, “মুখ সামলে কথা বলো। আমাকে নিয়ে যা ইচ্ছে বলো কিছু বলবো না কিন্তু আমার পরিবারকে নিয়ে আগেও বলতে নিষেধ করেছি আর এখনো করছি। এর ফল ভালো হবে না।”
ইকবাল হাসান এবার ব্যাথা নিয়েই উঠে বসল। রাগে গজগজ করতে করতে বলল, “তো কি বলবো? আমি কোতায় গিয়েছিলাম তা তোকে বলতে মাগী কোথাকার। আমার কি কোন কাজ থাকতে পারে না? সব তোকে বলতে হবে নাকি?”
ইলা তার কথা শুনে হাসলো। চেঁচিয়ে বলল, “বলবেই বা কিভাবে? দিনে কতটা মেয়ে পাচার করো তা কি আর বউকে বলতে পারবে? হয়তো তুমি মেয়ে পাচারকারী কেউ জানতে পেরে গেছে তাই আজ এ হাল করে দিয়েছে । একদম বেশ হয়েছে।
আমার বাড়িরলোক তোমার এসব জানলে হয়তো তোমার কাছে আমাকে কখনো ফেরত পাঠাতো না। আমিও আমাদের ছোট মেয়েটার দিকে তাকিয়ে তোমার কাছে চলে এসেছি। নয়তো কবেই ডিভোর্স পেপারে পাঠিয়ে দিতাম তোমার কাছে।
ইকবাল হাসান রেগে বড় বড় চোখ করে ইলার দিকে তাকিয়ে ধমকির শোরে চেঁচিয়ে বলল, ” ইলা….তুই এখন আমার হাতে মার খাবি বলে দিলাম।”
এ কথা শুনে ইলা নিজেও চেঁচিয়ে বলল,” এবার বাসায় চলে গেলে আর তোর বাপও আমাকে এ বাড়িতে নিয়ে আসতে পারবে না। তোর বিরুদ্ধে সব আমি পুলিশকে জানাবো। আমি ডিভোর্স দিয়ে দিব তোকে। আমার বাপ ভাই ভিকারী না বুঝেছিস। তারা আমাকে সারাজীবন তাদের কাছে রেখে খাওয়াতে, পড়াতে পারবে।
ইলাকে এই রুপে এই প্রথম দেখছে ইকবাল। এর আগে কত টর্চার করেছে। মেরে মেরে হস্পিটালে পর্যন্ত পাঠিয়েছে কিন্তু ইলা এমনভাবে কথনোই কথা বলেনি। আজ তুই তুই করে কথা বলছে, পুলিশকে সব জানিয়ে দিবে বলছে আর ডিভোর্স দিবে বলছে?
ইকবাল হাসান জানে ইলা সব মুখ বুঝে সহ্য করলেও মুখে যা বলে তাই করে। এর আগে তার শত প্রমাণও পেয়েছে। ইলা চলে গেলে কোন সমস্যাই ছিল না ইকবাল হাসানের কিন্তু বাহিরের খাবার খেয়ে সে অসুস্থ হয়ে পরবে সমস্যাটাই এখানে। নয়তো ইলার মত কত মেয়েকে সে প্রতিদিন প্রতিরাতে বিছানায় নিয়ে যায় তার হিসাব নেই।
ইলা এখনো বলেই চলছে একের পর এক ইকবাল হাসানের কুকৃর্তীর কথা। ইকবাল হাসান ইলার সেই কথাটা শুনে এখনো চুপ করে বসে আছে নয়তো ইলাকে আজ মেরে হাসপাতালে পাঠাত সে। তবুও বলল সে, “থামো।”
ইলা চেঁচিয়ে বলল, “থামবো কেন? তুমি একটা মেয়ে পাচারকারী। কত মেয়ে জীবন নষ্ট করে চলছ দিনের পর দিন। আজ আমি আর চুপ থাকবো কেন? ভেবে দেখো কি তোমার ঘড়েও একটা পাঁচ বছরের মেয়ে আছে? কিভাবে পারো একটা মেয়ের বাবা হয়েও অন্য মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলতে? এখন তো আমার মনে হয় তুমি শুধু মেয়ে পাচারকারী নও সাথে ধর্ষকও। কেননা মাসে একদিনও তুমি আমার সাথে ঘেষোঁ না। হয়তো মেয়ে পাচার করার আগে তাদের ধর্ষণ করে তারপর পাঁচার করে দাও। আর সেই কারণেই আমার কাছে আসো না।”
ইকবাল হাসান আর নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারল না। “ইলা” বলে চেচিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ইলার গলা চেপে ধরল দুইহাতে। ইলার দম বন্ধ হয়ে আসছে নিজেকে ইকবালের কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ইলকবাল ধাক্কা দিয়ে ইলার গালে সজোড়ে চড় মারতেই ছিলটে মেঝেতে গিয়ে পরল সাদিয়া।
পাঁচ বছরে ছোট্ট মেয়েটি দরজার ফাঁক দিয়ে এসব দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগল। মেয়েটি “মা” বলে একটা শব্দ করতেই ইকবাল তাকালো সেদিকে। বাবার রাগী চাহনি দেখে দৌড়ে সেখানে থেকে চলে গেল ছোট্ট মেয়েটি।
ইকবাল হাসান প্যান্ট থেকে বেল্ট খুলো একের পর এক আঘাত করতে লাগল ইলাকে। ইলা মাগো, বাবাগো বলে চিৎকার করতে লাগল। ছোট মেয়িটি বাথরুমে লুকিয়ে এসব শুনে ভয়ে কাঁদতে লাগল।
মারতে মারতে কাল্ত হয়ে বসে পরল ইকবাল হাসান। শর্ট গায়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। ইলার মৃতের মত দেহের দিকে তাকিয়ে থুথু ফেলল। পা উচিয়ে ইলার তলপেটে বরাবর অঘাত করে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। ইলার বিকট চিৎকার আসেপাশে প্রতিবেশীদের কান পর্যন্ত পৌছাল এবার।
।
।
।
হৃদয় আর মিম ছাদ থেকে নেমে আসার আগেই রায়হান ড্রয়িং রুমে এসে বাবা-মাকে বলল, ” হৃদয়কে বিয়ে করতে মিম রাজি হয়েছে। তাই আমিই ওদের ছাদে একটু একা কথাবার্তা বলতে পাঠিয়েছিলাম। ভাবলাম কতাবার্তা বলে নিজেরা একটু ফ্রী হোক। আর ওদের ব্যাপারটা আমি জানতাম তোমাদেরও কিছুদিনের মধ্যে জানবো বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু হৃদয় বলে ও নাকি তোমাদের সারপ্রাইজ দিতে চায় তাই আমি ব্যাপারটা বলে উঠতে পারিনি এ কয়দিন।”
রায়হানের কথায় মাঝেই সাদিয়া বলল, “আমিও এই বিষয়টা জানতাম মা, বাবা।”
রায়হান বলল, “এটা কোন বিষয় না সাদিয়া। মা-বাবা তোমাদের বলছি। তোমার ছেলের এত পরিবর্তন কিন্তু এই মিমের কারণে। মিমকে হৃদয় খুব ভালোবাসে। ুখন যেহেতু মিম ওকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে তোমরা ওদের কিছু বলো না। ওরা আসলে এমন কিছু বলো না যাতে ওরা অপ্রস্তুত হয় না অসস্তীতে পরে। এমনিতেই অনেক লজ্জিত ওরা।”
আমজাদ চৌধুরী তখন মিম হৃদয়কে মেনে নিয়েছে দেখে খুশী হলেও। রেহেনা বেগম কিছুটা কষ্ট পেয়েছিল তিনি মা হয়েও কিছু জানেননি বলে কিন্তু বড়ছেলের মুখে হৃদয়ের সারপ্রাইজের কথা শুনে মনে মনে নিজেকে বকলেন। এবং ছেলের প্রতি খুশিও হলেন।
আমজাদ চৌধুরী বড় ছেলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, ” আমরা খুশি হবো না কেন? আমি প্রথম থেকেই চেয়েছিলাম মিমকে আমাদের কাছেই নিজের ছেলের বউ করে রেখে দিতে। ওর কারণে আমাদের ছোট ছেলে রাত দিনোর মত পরিবর্তন হয়েছে। আমার দুই ছেলের মধ্যে আবার ভাব ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। সাদিয়া আর মিমকে একসঙ্গে দেখলে সবসময় মনে হয় মিম এ বাড়ির বউ হয়ে আসলে আমাদের বাড়িটা সবসময় হাসিখুশি, শান্তিতে থাকবে। আমি আর কি বলবো? আমরা অনেক খুশি বাবা। ”
রেহানা বেগম স্বামীর কথাগুলো মুগ্ধ হয়ে শুনলো। “সত্যি! মিম সাদিয়ার মত এ বাড়ির যোগ্য একজন বউ।” ভাবলেন তিনি।
রায়হান বাবার কথা শুনে হাসলো। বাবার পাশে গিয়ে বসে মাকে উদ্দেশ্য করে বাবাকে বলল, “তুমি খুশি হলে কী হবে? তোমরা বিবিজান হয়তো খুশি না।”
—“কে বললো আমি খুশি না? বড় ছেলে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে পারিনি । তাই ভেবেছি বড় ছেলের বিয়ের অনুষ্টান আর ছোট ছেলের বিয়ে একদিনই হবে।”
রায়হান মায়ের মুখে এমন একটা কথা শুনবে ভাবেনি। আজ কিছু ধর্ষেক কারণে কতগুলো মানুষের স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু তা একে একে সব পূরণ হতে চলেছে সাদিয়া আর রায়হানের। রায়হান একবার সাদিয়ার দিকে তাকাল দেখল সাদিয়া চোখে পানি জ্বলজ্বল করছে যেন একটু হলেই গড়িয়ে পরবে।
হৃদয় আর মিম বাইরে দাঁড়িয়ে রেহানা বেগম আর আমজাদ সাহেবোর কথা সবটাই শোনল। হৃদয় মিমকে বলল, ” দেখলে তো মা বাব কি বললো? তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিলে। এবার ভিতরে চলো।”
হৃদয় আর মিম ভিতরে ঢুতেই রায়হান বলল, “কিরে,তোরা ওখানে দাঁড়িয়ে কেন। এদিকে আয়। আর বাবা ওই মহিলাকে তো পরেরদিন হৃদয় আর মিমের বিয়ের কথা বললাম এখন ওইদিনে বিয়ে না হলে তো উনি প্রতিবেশী সবাইকে বলে বেড়াবে। বলছিলাম যে ওইদিনই যদি বিয়েটা হতো?”
আমজাদ চৌধুরী ছেলের কথার উত্তরে বলল, “হ্যাঁ। ওইদিনই হবে সমস্যা কি? আমাদের তো কোন সমস্যা নেই। ”
রায়হান আস্ত করে বলল, “অনুষ্ঠান করলে এতসব আয়োজন দুইদিন কিভাবে সম্ভব?”
উত্তরে আমজাদ চৌধুরী বলল, –“হ্যাঁ, সম্ভব।
সাদিয়ার বরাবরই এইসব অনুষ্ঠানের কাজকর্ম ভালোলাগে। তাই খুশিতে বলে ফেলল, “আমরা সবাই একটু খাটাখাটুনি করলেই হয়ে যাবে। তাছাড়া আমি আছি তো। ”
সাদিয়ার শেষ কথাটুকু শুনে রায়হান শব্দ করে হেসে ফেলল সাথে হৃদয়, রেহানা বেগম আর আমজাদ চৌধুরীও।
।
।
।
সাদিয়া আজকে খুব আনন্দের দিন। আজ ওর প্রিয় ছাত্রীর বিয়ে ঠিক হয়েছে এমন একটি ছেলের সাথে যে মিমকে খুব ভালোবাসে। আজ ওর ভালোবাসার মানুষটার ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। সাবাই কত খুশি।
কিন্তু এই খুশি সাদিয়া ধরে রাখতে পারছে না বারবার ওই ইকবাল হাসানের কথা মনে পরছে। ” কেন তাকে দেখলে এত অসস্তী হয় আমার? কেন উনি আমাকে আজ বারবার গারিতে গেয়ে বসতে বলছিল? কি মতলব ছিল তার? তার সাথে না যেতে চাওয়ায় রেগে গেল কেন? আমার সাথে ওইভাবে তইতুকারী করে কথা বলছিল কেন? আর হাত ধরেই বা তার সাথে কেন ডাকছিলো?” এসব বারবার ভাবনাতে আসছে। যা ওর আনন্দ খুশি মাটি করে দিচ্ছে।
রায়হান ছোট ভাইয়ের ঘরে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল এতক্ষণ। ঘরে এসে দেখল সাদিয়া ঘরে কোথাও নেই। বাথরুমে খুঁজে সাদিয়াকে না পেয়ে বারান্দায় উঁকি দিতেই দেখল, বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে সাদিয়া। পা টিপে টিপে সাদিয়া কাছে গেল সে। পিছন থেকে একবার সাদিয়া বলে ডাকও দিল কিন্তু সাদিয়ার থেকে কোন সাড়া সে পেল না। রায়হান আরেকটু এগিয়ে গেল পেছন থেকে সাদিয়াকে জরিয়ে ধরল। পেটের উপর কারো স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠল সাদিয়া। রায়হান ওর ঘারে মাথা রেখে বলল, “কি এত ভাবছো?”
সাদিয়া অস্ফুটে নিজের অজান্তেই বলল, “ওই ইকবাল হাসানের কথা। কেন উনি আমার সাথে এমন করেছিল আজ।”
রায়হান বুঝতে পারল সাদিয়া সেই ব্যাপারটা নিয়ে খুব চিন্তিত। কিন্তু রায়হান চায় না সাদিয়াকে কোন চিন্তায় রাখতে তাই মনে মনে কিছু পরিকল্পনা করে বলল,
—“ওহ ইকবাল হাসানের কথা বলছো? ”
রায়হানের কথায় সাদিয়ার হুঁশ ফিরল। বলল, “না মানে তেমন কিছু না।”
—“আরেহ একটু আগে উনি ফোনকল করেছিল। আমার কাছে মাফ চেয়ে বলল, উনি নাকি হৃদয়ের কাছে তোমার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ শুনেছিল তাই তোমার সাথে দুষ্টামি করে আজ তোমাকল একা দেখে ভয় পাওয়ানোর জন্য টেনেটুনে গারিতে উঠাতে চাইছিল। আর আমি না বুঝেই লোকটাকে মেরেছি তখন। মোটেও উচিত হয়নি আমার এমনটা করার। পরে আমিও তার কাছে মাফ চেয়ে নিলাম না জেনে না বুঝে তাকে আঘাত করার কারণে। কি একটা অবস্থা বলো?”
—“এসব কেমন ধরণের মজা? ”
—“আচ্ছা বাদ দাও তো এসব। কাল অনেক কাজ আছে ঘুমাবে চলো?”
“হুম”, বলে সাদিয়া ঘরে যাওয়ার জন্য উদ্যোত হতেই রায়হান পিছন থেকে ওর হাতটা ধরল। সাদিয়া পিছনে ফিরে রায়হানের দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাল।
রায়হান কাতর স্বরে বলল, “আজ তোমার কাছে কিছু চাইলে আমাকে দিবে সাদিয়া? আজ বড্ড বেশি ইচ্ছে করছে তোমাকে ভালোবাসতে। আমি কখনো চাইনা তোমাকে কোন কিছুর জন্য জোর করতে আর কখনো চাইবোও না। আমি জানি তোমার মানসিক অবস্থাটা আর সেই কারণেই নিজেকে সমলে রেখেছি কিন্তু বিশ্বাস করো আমি পারছি না নিজেকে আঁটকে রাখতে। আমার ধৈর্যের আর কত পরিক্ষা নিবে তুমি? আমি যে আর পারছি না। কেণ দূরে সরিয়ে রাখছো আমাকে এভাবে? আমার মনে অবস্থাটা কি একটুও বোঝ না?”
বলে সাদিয়া দিকে তাকাল রায়হান। সাদিয়া কোন সাড়া না পেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাদিয়ার হাতটা ছেড়ে দিল। “আমার ঘুম আসছে। আমি ঘুমোতে গেলাম তুমি আসো।” বলে ঘরের দিকে পা বাড়ালো রায়হান।
“সত্যি তো বলছেন উনি? আজ উনার যায়গায় অন্যকোন পুরুষ মানুষ হলে হয়তো জোর করোই নিজের হক আদায় করে নিত নয়তো নিজের অধিকার দেখিয়ে জোর করে হলেও ভোগ করে নিত। কিন্তু উনি তো সবারচেয়ে আলদা। তাই তো এতটা ভালোবাসি। আজ আর ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না আপনাকে? আপনার তো কোন দোষ নেই। কেন আমি কিছু ধর্ষকের কারনে আপনাকে কষ্ট দিব? আর পরিক্ষা নিব না আপনার ধৈর্যের। এতদিন খুব বেশি অন্যায় করে ফেলেছি আপনার প্রতি। আজ আর নয়।”, ভেবেই রায়হানের পথ আঁটকে দাঁড়ালো সাদিয়া।
লজ্জায় রায়হানের চোখাচোখি হতে পারল না। নীচে তাকিয়ে বলল, “এতকিছু বলে কোথায় এখন যাচ্ছেন? শুধু আপনারই সব চাই আমার কিছু চাইনা বুঝি?”
রায়হান সাদিয়ার এরুপ কাজে কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সাদিয়া মুখ তুলে রায়হানের দিকে চোখাচোখি হয়ে তাকাল। বলল,
“আমারও যে একটা বাবু চাই।”
সাদিয়া কথা শুনে রায়হান এতটা খুশি হলো যা লিখে প্রকাশ করার মত নয়। মুচকি হেসে সাদিয়াকে কাছে টেনে নিল রায়হান। নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে সাদিয়ার কপালে চুমু এঁকে দিল। সাদিয়া বলল,
“আপনি আমাকে অভিশাপ দিতে চেয়েছিলেন? আপনার সাথে কথা নেই। ”
সাদিয়ার কথা শুনে ভেবাচেকা খেয়ে গেল রায়হান। মূহুর্তে কি হয়ে গেল? ভেবে সাদিয়কে ছেড়ে দিল। জিজ্ঞেস করল, “তোমাকে? আমি? আর অভিশাপ? কী বলছো তুমি?”
“আপনি জানেন না? আমাদের রাসুলুল্লাহ (স.) এরশাদ করেছেন, যখন স্বামী স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে আর সে তা অস্বীকার করে এবং স্বামী নারাজ অবস্থায় রাত কাটায়, ফেরেশতারা ভোর হওয়া পর্যন্ত তাকে মনে সেই স্ত্রীকে অভিশাপ দিতে থাকে। এবার বুঝলেন কিভাবে অভিশাপ দিতে যাচ্ছিলেন।”
রায়হান হেসে “ওহহ আচ্ছা” বলে সাদিয়াকে কোলে তুলি নেয়। বারান্দা থেকে ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
আজ দুটো ভালোবাসা মানুষ এক হতে যাচ্ছে। দুজনের চাওয়া পাওয়া পূরণ হতে যাচ্ছে। আর অপরদিকে ইকবাল হাসান পরিকল্পনা করছে ওদের শেষ করার।
।
।
।
সাড়া বাড়ি জমকালো বাতিতে সাজানো হয়েছে। পুরো বাড়ি জুড়ে বাচ্চা থেকে শুরু করে বড়দেরও হৈচৈ। দিনের বেলায়ও বাতি জ্বলছে। এটা অপচয় ছাড়া কিছুই না।
ছাঁদে হলুদের সব আয়োজন করা হয়েছে। রায়হান হৃদয়ের হলুদ হয়ে গেছে। এবার সাদিয়া আর মিমের হলুদ দেওয়ার জন্য সকলে বসে আছে। একজন মিমকে নিয়ে আসল ছাঁদে। অরেকজন এসে জানাল সাদিয়া ঘরে নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই সারা বাড়ি কেম নিস্তব্ধ হয়ে গেল। সাদিয়াকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। এখানে সেখানে লোকজন বলাবলি করছে বিয়ের আগে কনে কোথায় হাওয়া হলো? কেউ কেউ কটুক্তি করে কথা শোনাচ্ছে। কেউ কেউ সাদিয়াকে নিয়ে চিন্তাও প্রকাশ করছে।
সাদিয়াকে খুজে না পেয়ে অবস্থা খারাপ রায়হানের। ইকবাল হাসানই সবকিছু করছে ভেবে বাড়ি থেকে বেরোবে রায়হান তখনি একজন এসে রায়হানের হাতে ওর ফেনটা দিয়ে বলল। “কেউ একজন বিডিও কল করে আপনাকো চাইছে। ”
রায়হান ফোনটা হাতে নিতেই দেখল ইকবাল হাসান। রায়হানকে দেখে সে হাসলো। বলল, “তোর বউকে দেখবি? দ্বারা…”
বলে একটা রুমে ঢুকল। ইকবাল ব্যাক ক্যামারটা দিতেই রায়হান দেখল, খাটের সাথে বাঁধা নগ্না অবস্থায় থাকা একটি মেয়ে। রায়হানের কলিজা কেঁপে উঠল। অস্ফুটে বলল, ‘সাদিয়া।’
ইকবাল হাসান বলল, বউকে বাঁচাতে হলে এখুনি রুমে যা দরজাটা বন্ধ করে সিলিং এ দড়ি বেঁধে ফাঁসিতে ঝুলে পর। তোর মৃত্যুর খবর শোনার আগ পর্যন্ত ওকে ছাড়ছি না।” ফোন কেটে গেল।
নিরুপায় রায়হান ইকবালের কথা মত ফাঁসিতে ঝুলে পরল। ইকবাল হাসানের কাছে ফোন আসতেই খুশিতে সে বারান্দা থেকে রুম রুমে ঢুকল। শার্ট খুলে ছুড়ে মারল বেঁধে রাখা সাদিয়ার মুখের উপর। প্যান্টের বেল্ট খুলে সমনে এগলো।
চলবে…..
[ বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটির ক্ষমা করবেন। ১৮+ আনার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখীত। ]