পবিত্র সম্পর্ক পর্ব ৫+৬

#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ০৫

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রায়হানকে দেখতে না পেয়ে আঁতকে উঠলো সাদিয়া। কেন যেন একটু ভয় কাজ করতে লাগল মনে। বিয়ের পরদিন সকালে রায়হানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যেখানে সে বলেছিল, বিয়ের পর প্রত্যেকটা দিন ঘুম থেকে উঠে সাদিয়ার মুখটাই দেখতে চায় ; কিন্তু এখন তাকেই দেখতে পাচ্ছে না সাদিয়া। মনটা বড্ড খারাপ হয়ে গেল সাদিয়ার।
মন খারাপ নিয়ে বিছানা থেকে নামতে যাবে তখনি খাটের সাথে থাকা কর্ণার টেবিলের উপর চোখ যায়। দেখে, একটা রঙিন চিরকুট যার উপরে একটা গোলাপ রাখা।
সাদিয়া গোলাপটা হাতে নেয়। দেখে, গোলাপটা একদম টুকটুকে লাল এবং তাজা পাঁপড়িগুলো। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগেই গাছ থেকে তুলে আনা হয়েছে । সাদিয়া চিরকুট হাতে নিয়ে দেখলো, লাল রঙের চিরকুটের মধ্যে
ব্লু মার্কার দিয়ে বড় করে লেখা,
“SORRY”
তার একটু নিচে কালো কলম দিয়ে লেখা,
“স্যরি, স্যরি জান। তোমাকে না জানিয়ে চলে যেতে হলো। এখন তুমি হয়তো ভাবছো, আমি বলেছিলাম বিয়ের পর প্রতিটি সকালে ঘুম থেকে উঠে তোমায় দেখতে চাই। আমি ঠিকই দেখেছি সকালে ঘুম থেকে উঠে তোমায়। কিন্তু খুব জরুরি একটা কাজ ছিল যার জন্য তোমাকে না জানিয়ে চলে যেতে হলো। তুমি হয়তো ভাবছো, ‘কি এমন কাজ ছিল যে তোমায় না জানিয়ে যেতে হলো?’

কীভাবে বুঝছে তখন যে আমি এখন এটাই ভাববো। আর দেখো আমার ভাবনাটাও মিলে গেল। আল্লাহ!
সাদিয়া এসব ভেবে আবার পড়তে আরম্ভ করলো,

“কাজটা কি সেটা এখানে লিখে হয়তো তোমায় বোঝাতে পারব না, বাসায় এসেই না হয় সব খুলে বলবো। এসব কথা ছাড়ো,
“দেখ টেবিলে তোমার জন্য ‘চা’ রাখা আছে টি-ফ্লাক্সে রেখেছি যাতে ঠান্ডা না হয়ে যায়। চা খাও ভালো লাগবে, মাইন্ড ফ্রেশ হয়ে যাবে। তখন আপাতত একা-একা ভেবো, স্বপ্নের রাজ্য আর রাজা নিয়ে।”

সাদিয়া চিরকুট পড়া শেষ করে টেবিলের দিকে তাকালো। চায়ের কাপ, টি-ফ্লাস্ক, পাশে ছোট একটা চিরকুটে লেখা ‘ভালোবাসি’ দেখে নিমিষেই সমস্ত সুখ এসে সাদিয়ার চারিপাশে জড়ো হল। চায়ের কাপে চা ঢেলে চুমুক দিতেই বাইরে থেকে একজন মহিলার গলা শোনা গেল। সে কর্কশ গলায় বলছে, “ছেলেকে কী মেয়ে বিয়ে করিয়েছেন রে বাবা। শেষে ধর্ষিতাকে ঘরের বউ করে আনলেন! ” মহিলাটার কথা শুনে আগের দিনের ঘটনা মনে পরে গেল সাদিয়ার, চোখের সামনে ভাসতে লাগল সেদিন রাতের ঘটনা।
“আমি কি ভুল করলাম রায়হানকে বিয়ে করে! কিন্তু তখন যে আমার কিছুই করার ছিল না। বিয়েতে রাজি না হলে রায়হান নিজের কোন ক্ষতি করে দিত। আমার জন্য এখন শুধু রায়হানকে না ওর পুরো পরিবারকেও মানুষ কথা শোনাতে বাদ রাখবে না। আমিই না হয় লোকজনদের কথা শুনতাম নিজেকে কেন জড়ালেন আপনি? ”
সাদিয়া কাঁদতে শুরু করল ওর শাশুড়ির গলা শুনতে পাচ্ছে। সে বলছে,
“জ্বি, আপনার কথাগুলো এতক্ষণ শুনলাম কিছু বলিনি। আমি চাইনি আপনি আমাদের বাড়ি এসে অপমানিত হয়ে জান। কিন্তু এতটুকু না বললেই নয় আপনার মত কিছু মানুষরা ধর্ষকদের তেমন খারাপ চোখে দেখেন না, খারাপ চোখে দেখেন ধর্ষিতাদের যেখানে ধর্ষিতার কোন দোষ নেই সব দোষ ধর্ষকের। আর হ্যাঁ! আপনি বলছিলেন না, আমি ধর্ষিতাকে কেন ঘরের বউ করে আনলাম! কেন-না তার মত ভালো মেয়ে আমি আজও দেখিনি। সে আপনার মেয়ে, বউয়ের মত নয় যে, অন্য ছেলেদের সাথে দিনের পর দিন ঘুড়ে বেরায়। জানি কারো নামে কিছু বলা গীবত তাও বলছি সেদিন রায়হানের সাথে বাসায় ফিরছিলাম তখন দেখলাম ; আপনার বৌমা অন্য একটা ছেলের সাথে হাত ধরে রাস্তায় হাঁটছে আবার জানু, সোনা বলছে তখন আমাদের দেখে কথা কাটিয়ে পালিয়েছে। আর আপনার মেয়ের কথা কি বলবো! সে তো আমার ছোট ছেলের পিছনে কত দিন যে ঘুরেছে আমি একদিন থ্রেট দিয়ে দিছি।
আমার বৌমার মত মেয়ে লাখে একটা, ওর সম্পর্কে বলার আগে কমপক্ষে হাজার বার ভাববেন। নিজের ঘর ঠিক করুন আগে তারপর অন্যকে দোষ দিবেন। আপনি এখন আসতে পারেন।

মহিলা মুখ কালো করে সেখান থেকে চলে গেল। রেহানা বেগম সাদিয়ার কাছে যেতেই দেখে খাটে বসে কাঁদছে সাদিয়া। রেহানা বেগম সব বুঝে যায়। সাদিয়ার কাছে এসে বলে,
“ওই মহিলার কথা শুনে কাঁদছিস? ”
সাদিয়া কান্না থামিয়ে দিল কিছু বললো না।
তাই দেখে রেহানা বেগম সাদিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
“বাইরের মানুষের কথায় কান দিতে হয় নারে মা আমার। তুই ওই মহিলার কথাই শুনেছিস শুধু আমারটা শুনিসনি? ”
সাদিয়া হ্যাঁ সূচক মাথা নাঁড়ে। রেহানা বেগম আবারো বলতে আরম্ভ করে,
“আমি তোকে আমার ঘড়ের বৌ করতে পেরে খুব খুশি। তাছাড়া আমার ছেলে যে তোকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। তাই বলছি তুই বাইরের লোকের কথায় কান দিস না। আমরা তোকে খুব ভালোবাসি। ”
সাদিয়া “মা” বলে হাউ-মাউ করে উঠলো। রেহানা বেগম চোখের পানি ছেড়ে দিল। বলল, “তোর মুখে আজ ‘মা’ ডাকটা শুনে আজ আমার মেয়ের অভাবটা পূরণ হলো। ”



রাত প্রায় দশটা বাজতে চললো রায়হানের আসার এখনো কোন খবর নেই। সাদিয়া, আমজাদ চৌধুরি, রেহানা বেগম ও হৃদয় ড্রয়িং রুমে বসে আছে। সাদিয়ার বেশ ভয় করছে এখন। সেই সকালে বেরিয়েছে, সারাটাদিন পেরিয়ে রাত গভির হতে লাগলো এখনো লোকটা ফিরছে না তার উপর মোবাইলেও পাওয়া যাচ্ছে না তাকে।

— ছেলেটা এখনো বাসায় আসছে না কেন? ( আমজাদ চৌধুরি )
— আসবে কী করে! ঘরে ফিরে এমন একটা বৌ-য়ের মুখ দেখতে হবে যে।
— তুই আবারও শুরু করলি? রায়হান এসে এসব শুনলে আবার উপড়ে পরবে। ( রাহেলা বেগম )
কথা শেষ হতে না হতেই কলিং বেল বেজে উঠলো। সাদিয়া শন্ত গলায় বলল,
— বাবা একটু যেয়ে দেখবেন আসলে রাত করে কে না কে আসে আমার ভয় করে।
“আচ্ছা আমি দেখছি”– বলে দরজা খুলতে চলে যায় আমজাদ চৌধুরি । রায়হানকে দেখে একের পর এক প্রশ্ন ছুড়তে থাকে তারা। সাদিয়া চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। রায়হানের আব্বু-আম্মুর কথা শেষ হলে সাদিয়া বলে,
— আপনি হাত মুখ ধুয়ে, চেন্জ করে আসুন আমি আপনার জন্য খাবার বাড়ছি।
— তুমি রান্না করেছো নাকি?
— না,আসলে আমি চেয়েছিলাম কিন্তু মা মানা করে বললো ; আমার শরীরটা নাকি তার কাছে ভালো ঠেকছে না তাই আর রান্না করতে পারিনি।
— হ্যাঁ খাবো, তবে তার আগে একটু ভিতরে চলো তোমার সাথে কথা আছে।
— কথা পরে বললে হতো না, আগে খেয়ে নিতেন। নাহ মানে আমরা কেউই খাইনি, আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
— ওহ, আচ্ছা তাহলে তোমরা বসো আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।
— হুম আসেন। বাবা-মা চলুন ভাইয়া আপনিও চলুন।।
— আপনাকে বলতে হবে না। আমি যাবো কি যাবো না সেটা আমার ব্যপার। ( হৃদয় )
সবাই একসাথে খেতে বসেছে শুধু সাদিয়া ছাড়া। তাই দেখে রাহেলা বেগম বলল,
— কিরে মা তুই বসছিস না কেন? বসে পর।
— না মা, আপনারা আগে খেয়ে নিন আমি পরে খেয়ে নিব। এখন আপনাদের বেঁড়ে দেই। ( সাদিয়া )
— আমরা সবারটা সাবাই নিয়ে খাব, তুমি আমাদের সাথে বসো ( আমজাদ চৌধুরি )
— তুমি কি হিন্দি সিরিয়ালের মত শুরু করলে নাকি? ( রায়হান )
— আমি টিভি দেখি না।

সবার কথা শুনে একসাথে বসতে হলো সাদিয়াকে। রায়হান যেন লজ্জা-সরম ঙেঙ্গে সাদিয়াকে বলে উঠলো,
— আমি অনেক টায়ার্ড। সাদিয়া তুমি আমাকে খাওয়ায়ে দাও।
সাদিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে একবার রাহেলা একবার আমজাদ চৌধুরির দিকে তাকালো।
হৃদয় বড় ভাইয়ের এরুপ কাজ দেখে মুচকি হেসে ফেলল। সাদিয়ার লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে আমজাদ চৌধুরি ওকে স্বাভাবিক করার জন্য বলল,
— খাওয়ায়ে দাও তো বৌমা। আমি কতো তোমার শাশুড়ি মায়ের হাতে খেয়েছি। আর ও প্রায়ই খেতে ইচ্ছে না করলে ওর মাকে খাওয়ায়ে দিতে বলে।
— ধুর! তুমিও না ছেলে মেয়েদের সামনে কী সব বলছো। ( রাহেলা বেগম )
— সাদিয়া তুমি জানো না! স্বামীর কথা শোনা স্ত্রীর কর্তব্য। আর জানো স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে খাওয়ায়ে দিয়ে সোয়াব পাওয়া যায়।

সাদিয়া ওর নিজের প্লেটটা সরিয়ে অন্য আরেকটা প্লেটে ভাত নিতে গেলে রায়হান ওর হাত ধরে ফেলে। মুখ গম্ভীর করে বলে,
— অন্য প্লেটে ভাত বাড়ছো কেন? তোমার প্লেটে কী হয়েছে, সেটা সরিয়ে রাখলে কেন? দুজন একসাথে একটা প্লেটে খাবো। তোমার প্লেটটা নাও।

সাদিরা আর কোন কথা না বলে ওর নিজের প্লেট নিল। কোন কথা বললে আবার কি না কি বলে বাবা- মায়ের সামনে। তাই চুপ করে রায়হানকে খাওয়ায়ে দিতে লাগল আর নিজেও খেতে লাগল। এভাবে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলো।


খাওয়া দাওয়ার পর রায়হান সাদিয়াকে নিজের কক্ষে নিয়ে আসলো। সাদিয়া ওর জরুরি কাজের কথা জানতে চাইলে রায়হান বলল,
“তুমি তো পর্দায় থাকো কোন ছেলের সামনে যাও না তেমন। তোমার সাথে যাদের ঘনিষ্ঠ কোন সম্পর্ক নেই। মাঝে মাঝে তাদের সাথে দেখা হয়েছে বা তাদের কণ্ঠ তুমি বেশ কয়েকবার শুনেছ তাদের ভয়েস রেকর্ডস করে ; এনেছি যাতে তুমি সেই ধর্ষককে খুব সহজেই চিনতে পারো ”

রায়হান ওর জন্য সারা দিন এত কষ্ট করেছে ভাবতে পারছে না সাদিয়া। সে তার ভালোবাসার মানুষটাকে যে বা যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের ধরার জন্য কত কি করছে। রায়হানকে যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে সাদিয়া। ওর ভালোবাসার গভীরত্ব খুঁজতে গেলে হয়তে সাদিয়া নিজেই হারিয়ে যাবে। এসব ভাবছে সাদিয়া।

রায়হান বেশ কিছু ভয়েস রেকর্ড শোনালো যার একটার সাথেও সেই ধর্ষকের কোন মিল পেল না সাদিয়া। রায়হান বললো,
— এটাই লাস্ট ভয়েস, যাকে আমার সন্দেহ হয়েছে। আমাকে দেখেই ঘাবড়ে গেছে সে। আমি তার সুক্ষ্ম কপালে ঘাম দেখেছি। তার ভয়ার্ত মুখটা দেখেছি।
— কে?
— ভয়েসটা শোন বুঝতে পারবে।

সাদিয়া ভয়েসটা শুনেই ভয় পয়ে গেল। সেই একি ভয়েস, একি ভাবে তার কথা বলার স্টাইল সেই ধর্ষকটার মত। সাদিয়া এবার তাকে চিনতে পারলো মুখ দিয়ে একটা নাম শুধু উচ্চারন করলো, ” ঈশান ”

রায়হান বলল, ” হুম ঈশান। তোমার ছাত্রী মিম এর ভাই। এই কি সেই পশুটা?
সাদিয়া রায়হানের বুকে হেলে পরে কেঁদে উঠে বলে, হুম এই সে। এই সেই পশুটা। ”


কলিং বেল বাজছে !!! বিরক্ত নিয়ে কলিং বেল খুলে কাউকে দেখতে পেয়ে ” সাদিয়া ” বলে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারায় রেহানা বেগম।
রায়হান, সাদিয়া দৌড়ে সেখানে পৌঁছায়।
মিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে সাদিয়াও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

চলবে….#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ০৬

সেদিন নিজেকে কোথায় ধর্ষন করা হয়েছিল সে জায়গাটি মনে করতে পারছে না সাদিয়া।
সাদিয়া উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে, ওর মাথায় চাপ পড়তে পারে ভেবে রায়হান ওকে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,
—“শান্ত হও তুমি। একটু শান্ত হও তারপর ঠান্ডা মাথায় ভাববে। দেখবে সব মনে পরে যাবে। ”
—“আমি কেন কিছু মনে করতে পারছি না? গাড়িতে আমারে টেনে তুলল তারপর আমি ছুটার জন্য চেষ্টা করছিলাম তারপর আমার হাত মুখ চেপে ধরল…. আর কিছু মনে পরছে না কোথায় জায়গাটি। ”
—“একটু ভাবার চেষ্টা করো প্লিজ ” ( মনে মনে –এটা যে একটা মেয়ের মান-সম্মানের ব্যাপার)
—“আমারা কিছু মনে পরছে না। ”
—“জায়গাটা না চিনো তাতে সমস্য নেই কিন্তু সেখানে এমন কিছু দেখেছ কি যা দ্বারা যায়গা টাকে চিনতে পারি। যেমন : আশেপাশে কোন সাইনবোর্ড এমন ধরনের কিছু?”
—“হ্যা, লোকটা আমার মুখে বেশ বড় একটা পাথর মারতে চেয়েছিল এর মানে আশেপাশে পাথর ছিল, আমি পাহার দেখতে পেয়েছি কিছু। ”
—“এমন তো একটাই যায়গা আছে ‘ ‘নুলিয়া ছড়ি’ আর জায়গাটা তোমাদের বাসা থেকে বেশি দূরেও না। এক ঘন্টার রাস্তা হবে হয়তো।”
—“আমি জানি না।
—“আচ্ছা, এসব বাদ দাও আর একটু ঘুমাও। সকালে নামাজ পড়তে উঠবে তো?”
—“সাদিয়া হুম বলে শুয়ে পড়ল।”


মাঝ রাতে, ওয়াশরুমে যাবার জন্য চোখ খুলে পাশে তাকিয়ে সাদিয়াকে দেখতে না পেয়ে আঁতকে উঠল রায়হান। বুঝে ফেলল সাদিয়া কোথায়, প্রতিদিন রাতে যেখানে যায় আজও হয়তো সেখানে গেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, বেড থেকে উঠে, ছাদের দিকে হাটা শুরু করল রায়হান। ছাঁদে উঠতেই তার এক কোনে বসা সাদিয়ার আর্তনাদ শুনতে পেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেরে সেদিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলল রায়হান।
এ আর নতুন কি? প্রতি রাতেই সকলে ঘুমিয়ে পড়লে ছাদে বসে কাঁদে সাদিয়া। চিৎকার করে বলে “আল্লাহ কেন আমার সাথে এমনটা হলো আমি তো কোন পাপ করিনি। কোন পাপের শাস্তি স্বরূপ তুমি আমাকে এই শাস্তি দিলে।” রায়হান প্রতিদিন এসব দেখে কিন্তু কখনো সাদিয়াকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে নি কেননা রায়হান মনে করে সাদিয়ার কাছ থেকে ওর এই অধিকারটা কেড়ে নেয়া ঠিক হবে না। দিনের বেলা বুকের ভিতরে কষ্ট চেপে রেখে সবার সামনে হাসিখুশি থাকে যাতে ওর ভেতরের কষ্টটা কেউ বুঝতে না পারে। আর দিন শেষে সে কষ্টটা কান্না হয়ে বের করে দেয়। এখন সাদিয়া যদি জানতে পারে রায়হান ওকে কান্নারত অবস্থায় প্রতিদিন দেখে তাহলে হয়তো মন খুলে কাঁদতেও পারবে না। বুকের ভিতর কষ্টটা চাপে রাখবে যার ফল ভালো হবে না। তাই রায়হান ওকে এভাবে দেখেও ওকে বোঝানোর বা শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে না। আর এসব বিষয়ে যেন রায়হান কিছুই জানে না এমন ভবে থাকে।


সকালে সবাই একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট করে। সাদিয়া খাবার-দাবার সব গুছিয়ে ঘরে এসে দেখে রায়হান ঘরে নেই। ‘রায়হান দেখা না করেই চলে গেল’– ভেবে মন খারাপ করে ওয়াশ রুমে চলে গেল।
রায়হান আজ কত দিন ধরে অফিসে যায় না। অফিসের নাম করে সাদিয়ার অপরাধীদের খুঁজতে বের হয়। তাই আজ ঘরে বসেই অফিসের সব কাজ-কর্ম ঠিক ভাবে চলছে কি না তা দেখার কথা ভাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। লেপটপ হতে নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। সিঙ্গেল সোফায় বসে টি-টেবিল এর উপর পা রেখে কাজ করতে থাকে। সূর্যের আলো শরীরের উপর এসে পরছে রায়হানের। খুব গরম লাগছে বলে ঘরে যাবার জন্য পা বাড়ায়। বারান্দার দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকতে যাবে তখনি সাদিয়াকে একটা টা-ওয়ালে পরে ড্রেসিংটেবিল এর সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবার হয়ে যায়। হা করে তাকিয়ে থাকে।
সাদিয়া ড্রেসিংটেবিল এর আয়নায় ছেলেদের মত কাউকে আপছা দেখতে পেয়ে, পিছু ঘুড়ে জোরে চিৎকার দিতেই রায়হান দৌড়ে এসে ওর মুখ চেপে ধরে। বলে,
—“আরে বাবা আমি, চিৎকার দিচ্ছ কেন? সবাই কি ভাববে।”
—“আ…আ…আপনি না অফিসে চলে গেলেন? ”
—“অফিসে চলে গেলে তোমার সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে? ভুত?”
—“না মানে আমি ভেবেছি আপনি চলে গেছেন। তাই চেনজ না করেই বেরিয়ে গেছি।”
—“আমি থাকলে চেনজ না করে বের হওয়া যায় না বুঝি?”
—” নাহ, ছাড়ুন আমায়। চেনজ করতে যাবো।”
রায়হান সাদিয়ার এ কথা শুনে ওর কোমরে চেপে নিজের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরল। বলল,
—“আমি আমার বউকে ধরে রেখেছি তাতে তোমার কি?”
—“ইশশ, ছাড়ুন বলছি। নয়তো চিৎকার দিব।
—“চিৎকার দিবে কি করে? যদি তোমার ঠোঁট জোরা আমার ঠোঁটে জোড়ার দখলে থাকে।”
বলে রায়হান সাদিয়ার ঠোঁটে ঠোট স্পর্শ করতে যাবে। সাদিয়া আঙ্গুল দিয়ে রায়হানের ঠোঁট চেপে ধরে বলে,
—“আপনি…. হুহ, শয়তান একটা।”
—“এখনো দেখলাম কই আমার শয়তানপনা? দেখাবো কি? ”
সাদিয়া রায়হানকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলল, “প্রয়োজন নেই। ” তারপর জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। রায়হান ধপ করে খাটের উপর শুয়ে পরল তারপর সাদিয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল।


রায়হান হাটতে হাটতে রান্নাঘরে গেল। দেখল সাদিয়া রান্না করছে। রান্নাঘরের ভিতরে না ঢুকে বাইরে দাঁড়িয়া সাদিয়াকে দেখতে লাগল। হঠাৎ সাদিয়ার চোখ দরজায় পড়তেই রায়হানকে ওর দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখল। খালি গায়ে সুধু একটা ট্রাউজার পরা রায়হানকে দেখে সাদিয়ার অদ্ভুত অনুভূতি হলো। রায়হানের লোমশ বুকের দিকে তাকাতেই কেঁপে উঠল সাদিয়া। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলে উঠল,
—“কিছু লাগবে কি?”
সাদিয়ার কথায় রায়হানের হুশ ফিরল। বলল,
—“হুম লাগবে তো, তোমাকে।”
—“আমাকে দিয়ে কি করবেন ?”
—“জেনেও না বোঝার ভান করাটা তোমার একটা খারাপ অভ্যাস।”
—“এই অভ্যাসটা সবার বেলায় নয় শুধু আপনার বেলায়। ”
—“ওহ, তাই নাকি ?”
—“হুম, খালি গায়ে কেন আপনি ?”
—“গরম লাগছে খুব। আচ্ছা প্রশ্নটা কেন করলে বলো তো হুম।”
—“বাকা হাসি দেয়া বন্ধ করুন আমি এভাবেই জিজ্ঞেস করেছি। ঘরে এসি থাকতে আপনার তো গরম লাগার কথা না। ঘড়ে চলুন আমি শরবত বানিয়ে আনছি। ”
—“আচ্ছা যাচ্ছি। ”
—“কি হলো যান।”
—“আরে বাবা যাচ্ছি। ”
বলে রায়হান মন খারাপ করে চলে গেল। সাদিয়া মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। ভাবতে লাগল, — আজ উনি এত রোমান্টিক মুডে কেন ? আমার পিছন পিছন ঘুরছে সারাদিন ? আমার মত একটা ধর্ষিতাকে উনি এতটা ভালোবাসতে পারে, সত্যি খুব ভাগ্যবতী আমি। ”


মিমের ব্যাপারটা সকলে জানিয়েছে হৃদয়। কিন্তু কেউই হৃদয়ের কথা শুনতে রাজি নয়। হৃদয়ের মত একটা রাগি, বদমেজাজি ছেলের সাথে মিমের জীবনটা কিছুতেই জরাতে চায় না কেউ। সাদিয়া তো কিছুতেই রাজি নয়। হৃদয় বলে মিমকে পেলে ও ভালো হয়ে যাবে, বদমেজাজ তো দূরের কথা উচ্চ-শরে কথা পর্যন্ত বলবে না। তাও সবাই মিমকে হৃদয়ের সাথে বিয়ে দিতে নারাজ। রায়হান বলেছে
—“তুই আগে বেকার না ঘুরে কাজ কর, একটা চাকরির ব্যবস্থা কর, নিজের ব্যবহার/স্বভাব পরিবর্তন কর তারপর সবাই ভাববো। এমটা না হলে সাদিয়া ওর বোন মিমকে তোর কাছে বিয়ে দিবে না।”
—“হ্যাঁ, আমি রাজি কাল-থেকেই চাকরির খোঁজে বেরোন। ”


সাদিয়া হৃদয়ের কথা শুনে ঘড়ে এসে সেসব ভাবতে থাকে তখনি রায়হান ঘড়ে ঢুকে। রায়হানকে দেখে সাদিয়া বলে,
—“আপনি তো আজ সারাদিন বাসায়ই তাই না?”
—“হুম কিন্তু সন্ধ্যায় একটু বেরোব।”
—“ওহ, আচ্ছা।”
সাদিয়া ভাবছে — “রায়হান সন্ধ্যায় বেড়িয়ে যখন রাতে ফিরবে তখন চমকে দিবে রায়হানকে। যে লোকটা ওকে এত ভালোবাসে সে একটু ভালোবাসা তো সাদিয়ার কাছ থেকে ডিসার্ভ করে।”


রায়হান বাসা থেকে বের হয়েছে অধ-ঘন্টা আগে। ও এখনো গাড়িতে, গন্তব্য নুলিয়া ছড়ি কিন্তু গন্তব্যে এখনো পৌছাতে পারে নি। নিজের সাথে করে ইমরান হোসেনের ফোনটা নিয়ে এসেছে যাতে করে ওই লোকটার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। হঠাৎ ইমরান হোসেন এর মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। রায়হান গাড়ি সাইড করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে ইমরান হোসেনের মোবাইলে ফাহিম বলে কউ একজন মেসেজ দিয়েছে। লিখেছে,
—“কিরে তুই এখন কই? মেয়েটাকে উঠায় নিয়ে আসছি। কাজ তাড়াতাড়ি খতম করতে হবে। তাড়াতাড়ি আয়।”
রায়হান বুঝতে পারল ওই লোকটার নাম ফাহিম। রায়হান “ওকে” লিখে একটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিল।


রায়হান ওকে এত ভালোবাসে তার বদলে সাদিয়া কিছুই দেয় নি রায়হানকে তাই আজ রায়হানকে ছোট্ট একটা সারপ্রাইজ দিতে চায় সাদিয়া। সাদিয়ার জন্য রায়হানের কেনা বেশ কিছু শাড়ি থেকে কালো একটা শাড়ি বের করল। ঘন কুচি দিয়ে শাড়িটা পরে নিল সাদিয়া। শাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে কালো কাচের চুড়ি ও কালো দুল নিয়ে আসল তারপর সেগুলো পরে নিয়ে কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ পরল। চোখে মোটা করে কাজল দিল। বাঁধা চুলগুলো ছেড়ে আয়নায় তাকিয়ে যেন নিজেকেই চিনতে পারছে না সাদিয়া। হয়তো রায়হানের জন্য সেজেছে বলে এতটা সুন্দর লাগছে।
রায়হান ওকে দেখে কি বলবে? রায়হান জানতে চাইলে কেন সেজেছে তখন ও কি উত্তর দিবে রায়হানকে নিয়ে সাদিয়া এসব ভাবতে থাকে তখনি চার্জে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠলো সাদিয়া সেটা কানে ঠেকাতেই চিৎকার দিয়ে মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দিল ফ্লোরে। বাসা থেকে বের হয়ে গড়িতে উঠে গাড়ি চালাতে বলল ড্রাইভারকে, গন্তব্য এপোলো হস্পিটাল।



কাঁদতে কাঁদতে চোখের কাজল লেপ্টে গেছে সাদিয়ার। ঘর থেকে বেরোবার সময় হাতে থাকা কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে হাতে বিঁধেছে, হাত থেকে এখনো রক্ত ঝরছে। সাদিয়া একটু পর পর ড্রাইভারকে বলছে, “গড়ি-টা একটু জোরে চালান। একটু জোরে চালান। ” ড্রাইভার এর থেকে আর জোরে চালাতে পারছে না এই ভেবে যে, এর থেকে জোরে চালালে হয়তো এক্সিডেন্ট হয়ে যাব। বেশ কিছুক্ষণ পর! গাড়ি স্থীর হলে গাড়ি থেকে নেমে এক দৌড় দিতেই খালি পায়ে কিছু একটা ঢুকে গেল সাদিয়া “আহ” বলে একটা চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পড়ল। পিন-টার দিকে তাকাতেই দেখল একটা পিন ঢুকে গেছে তার থেকে রক্ত বের হচ্ছে। কাঁপা হাতে পীনটা বের করে উঠে দাঁড়ালো পা প্রচন্ড রকমের ব্যাথা করছে সাদিয়ার। ব্যাথা নিয়েই ছুটে হসপিটালের ভিতর ঢুকে “রায়হান নামের প্যাশেন্ট কোন কেবিন এ আছে”– জিগ্যেস করে, ছুটল সেই কেবিনের দিকে। কেবিনের সামনে পৌছাতেই বাবা, সৎ মা ও সৎ বোনকে দেখে চমকে গেলো। সাদিয়া একটু এগোতেই সৎ বোন মাইশা এসে সাদিয়াকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। সাদিয়া তোয়াক্কা না করে কেবিনের ভিতর ঢুকে পড়ল। কেবিন এ ঢুকতেই বেডে শোয়া রায়হানকে দেখল, রায়হানের দুটো পা ফুল ব্যান্ডেজ করা। বা-হাতটা ব্যান্ডেজ করা। মাথায় ব্যান্ডেজ করা। এসব দেখে সাদিয়া “আল্লাহ” বলে কেঁদে উঠল। শরীর যেন এক জায়গায় জমে গেছে সাদিয়ার। পা খোঁড়াতে খোঁড়াতে রায়হানের কাছে গেল। সাদিয়া রায়হানের দিকে আরেকবার তাকাল, রায়হানের উপর ওর হাতটা রাখতে চাইলো কিন্তু যায়গা পেল না। শব্দ করে কেঁদে উঠল সাদিয়া।

রায়হানের ঘুমন্ত নিস্পাপ মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে সাদিয়া। হঠাৎ রায়হান ধীরে ধীরে চোখ খুলল। সাদিয়ার মিলিন মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে জিগ্যেস করল,
—“কি হয়েছে? ”
—“আপনার নিজের শরীরের অবস্থা ঠিক নেই আর আপনি আমকে জিগ্যেস করছেন আমার কি হয়েছে? সন্ধ্যায় তো সুস্থ বাসা থেকে বের হলেন এসব কি করে হলো? কি কররে হলো?”
বলে সাদিয়া বেডে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলো। রায়হান ঘন্টা চার-এক আগের ঘটনা গুলো মনে করতে লাগল,


সাদিয়াকে যেখানে ধর্ষন করা হয়েছিল সেখানে পৌছাতেই রায়হান দেখতে পেল তিনজন লোক গাছের সাথে বেধে রাখা মেয়েটার সাথে অসভ্যতা-মো করতে লাগল। শুকনো পাতার কড়মড় আওয়াজে তিন জন পিছন ফিরে তাকিয়ে রায়হানকে দেখতে পেল। রায়হান দেখল তিনজনের মুখেই মাক্স পরানো। একজনের হাইট, হেয়ার স্টাইল দেখে রায়হান বুঝতে পারল ওইটা ফাহিম। রায়হানকে দেখে তিনজন হো হো হো করে হেসে উঠল। ফাহিম বলে উঠল,

—“আরে তুই এসেছিস? কখন থেকে তোর জন্য ওয়েট করছি। ভাবলাম তুই আসবি তারপর তোকে উপরে পাঠিয়ে শান্তিতে মেয়েটাকে খাবো। তই তো মেয়েটাকে বেধে রাকছি। ওই দেখ… ”

রায়হান ওদিকে তাকাতেই সাদিয়ার সৎ বোন মাইশাকে দেখে চমকে গেল। মনে মনে বলল,
—“ওরা মাইশাকে উঠিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিল?”

রায়হানের সাথে তাদের কিছুক্ষণ হাতা-হাতি হলো। রায়হান একাই তিনজনের উপর ভারি পড়ল। রায়হানের ক্রোধের কাছে ওরা টিকতে পারল না। রায়হান গাছের সাথে বেধে থাকা সাদিয়ার সৎ বোন মাইশাকে ছাড়ানোর সময় গড়ি থেকে হকি বের করে মাথায় আঘাত করতেই রায়হান পিছু ফিরে তাকালো তখনি আরেকজন মুখের মধ্যে আঘাত করতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। ফাহিম বলে উঠল,

—“তোকে মারার সব বন্দ-ব্যবস্থা করেই এখানে এসেছি। ইমরানের মৃত্যুর খবর শুনেই বুঝে গেছি সেদিন আমি যার সাথে কথা বলেছিলাম সে ইমরান ছিল না অন্য কেউ মানে তুই ছিলি। আর তুই এখানে নিশ্চই আসবি সেটাও জানতাম। আমার বন্ধুটাকে মেরে ফেলেছিস তুই তোকে কি জীবিত রাখা যায় বল।”

বলেই তিনজন মিলে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে লাগল রায়হানকে। প্রতিটা আঘাতে চিৎকার করতে লাগল রায়হান।

বাঁধন হালকা মনে হতেই মাইশা দেখল গিট খোলা। “এর মানে তখন গিট খুলতে পেরেছিল রায়হান”– ভেবে বাঁধন খুলে পালিয়ে যায় মাইশা। প্রথমে বাসায় যায় মাইশা। বাবা-মাকে সব খুলে বলে তারপর তাদের নিয়ে থানায় যায়। থানা থেকে “নুলিয়া ছড়ি” এসে দেখে রায়হান আব-চেতন অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। তারপর এপোলো-তে নিয়ে আসে রায়হানকে।


সাদিয়া রায়হানকে কিছু ভাবতে দেখে বলল,
—“বললেন না যে কি করে হলো এসব?”

সাদিয়ার কথায় ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো রায়হান। বলল,
—“উত্তরটা আমি দিতে পারবো না। আর যদি উত্তরটা দিই ও মিথ্যা বলতে হবে আর আমি তোমাকে মিথ্যা বলতে চাই না তাই প্লিজ আমাকে আর এ প্রশ্নটা আর করো না।”

সাদিয়া ভাবছে, “কি হয়েছে যা আমাকে বলা যাবে না?”
রায়হান সাদিয়ার পড়নে শাড়ি, হতে চুড়ি, কানে দুল, চোখে কাজল দেখে মুচকি হেসে প্রশ্ন করল,
—“আমার জন্য সেজেছিলে বুঝি?”
—“না মা…মা…মানে…”
—“বুঝছি আমার জন্যই সাজছিল।”
—“আপনি কি শুরু করলেন? আপনার আবস্থা দেখে আমার কান্না পাইতাছে আর আপনি আছেন আমার সাজ নিয়ে।”
—“আমি অসুস্থ আমার সুস্থতার জন্য কিছু চাই। তুমি কি চাইলে দিবা না?”
—“হ্যাঁ, অবশ্যই দিব।”
—“ব্যাথায় শরীরে জ্বর চলে আসছে, মুখটা তেতো তেতো লাগছে একটা চুমু দাও না।”

সাদিয়া রায়হান এমন কিছ চাইবে মোটেও জানত না। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
—“এখন কেউ চলে এলে?”
—“দিবা না তাই তো। আমি মরে গেলে বুঝতে?”

সাদিয়া রায়হানের ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে বলল,
—” এ কথা জীবনেও মুখে আনবেন না। ”

রায়হান ডান হাতটা দিয়ে সাদিয়ার হাত ধরে হালকা টান দিতেই সাদিয়া রায়হানের উপর ঝুকে পড়ল। রায়হান বলল,
—“চুমু দাও নয়তো আবার বলবো। ”

সাদিয়া চোখ বন্ধ করে রায়হানের ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়া-তেই রায়হান ডান হাত দিয়ে ওর মাথাটা পিছন থেকে চেপে ধরল। সাদিয়ার ঠোঁট জোরা নিজের ঠোঁটের সংস্পর্শে নিয়ে নিল। কিছুক্ষণ পর রায়হান ওর মাথার উপর থেকে হাত সরাতেই সাদিয়া যেন হাঁপাতে লাগল। রায়হান সাদিয়াকে দেখে মুচকি হেসে বলল,
—“এখন থেকে অভ্যাস করে নাও। হাঁপালে চলবে? ”

সাদিয়া রায়হানের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেল। তখনি কেবিন এর দরজায় নক করে সাদিয়ার বাবা-মা আর সৎ বোন মাইশা কেবিন এর ভিতর ঢুকল। তাদের দেখে সাদিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। সাদিয়ার বাবা সাদিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে রায়হানের কাছে বসল। বলল,
—“এখন কি একটু ভালো লাগছে বাবা?”
—“সামান্য একটু ব্যাথা আছে নয়তো আমি ভালো আছি।”
—” তুমি আজ আমার ছোট মেয়ের জন্য যা করলে নিজের ছেলে হলেও করতো না হয়তো।

সাদিয়ার সৎ মা সালমা বেগম বলে উঠল,
—“তোমার রিন জীবনে শোধ করতে পারবো কি না জানি না। আমার মেয়েটার জীবনটা আজ তুমি বাঁচালে বাবা।”

সাদিয়া এসব শুনে কিছুই বুঝতে পারলো না, “রায়হান কিভাবে মাইশার জীবন বাঁচালো? বাবা-মা এসব কি বলছে কিছুই মাথায় ঢুকলো না। মাইশাকে বাঁচাতে গিয়েই কি রায়হানের এ অবস্থা হলো ” — ভেবে রায়হানের দিকে তাকালো সাদিয়া।

সাদিয়াকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রায়হানের মুখটা মিলিন হয়ে গেল। রায়হান চায়নি সাদিয়া এসব জানতে পারুক কিন্তু তারা তো সব বলে দিল সাদিয়ার সামনে।

মাইশা তখনি বলে উঠল,
—“আপনি আজ নিজের জীবন ঝুঁকি নেয়ে আমাকে বাঁচালেন নয়তো ওই ধর্ষক গুলা এতক্ষণে আমার সাথে কি কি করতো… ছিঃ….” (মাইশা)
—“কি বলছে বাবা-মা আর মাইশা? মাইশাকে বাঁচাতে গিয়ে আপনার এই অবস্থা আর আপনি এত বড় একটা কথা আমার থেকে লুকাতে চাইছিলেন। কেন? কেন লুকাতে চাইছিলেন? ”

সাদিয়া কষ্ট পেয়েছে বুঝতে পেরে রায়হান উঠে বসতে চাইলো ঠিক তখনি বা হাতে ব্যাথ্যা পেল। সাদিয়া দ্রুত রায়হানের কাছে গেল রায়হানকে ধরে আস্তে আস্তে শুয়ি-য়ে দিয়ে বলল,
—“উঠছিলেন কেন?”
—“বিশ্বাস করো সাদিয়া আমি তোমার থেকে ব্যাপারটা লুকাতে চেয়েছি কারন তুমি এমনিতেই নিজেকে এবং সাদিয়াকে নিয়ে ডিপ্রেশনের এই ব্যাপারটা শুনলে হয়তো তোমার উপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে তাই। তুমি আমাকে ভুল বুঝো-না প্লিজ।

—“তুই দুলাভাইকে ভুল বুঝিস না আপু আমার জন্যই আজ উনার এ অবস্থা।”(মাইশা)
—“আমি আপনাকে ভুল বুঝিনি। আপনার যদি কিছু হয়ে যেত।”
—“আমার কিছু হয়নি তো এই যে পা ব্যান্ডেজ দেখছো, ভাঙ্গে-নি কিন্তু ছিলে গেছে মাত্র।”
—“হাত আর মাথা ?”

রায়হান কিছু বলার আগে বলে উঠল সাহেলা বেগম,
—“হাতটা ভেঙ্গে গেছে আর মাথাটা ফেটে গেছে বলে জানিয়েছে ডাক্তার।”


—“আচ্ছা আন্টি মনে আছে আপনার নিজের মেয়ের সাথে যা হতে চলেছিল তা সাদিয়ার সাথেও হয়েছিল। আপনি সেদিন ওকে কত কি বলেছিলেন নষ্টা, ধর্ষিতা আরো কত কি! আজ যদি মাইশার সাথে এটা হয়ে যেত তাহলে কি মাইশা-কেও এটা বলতেন? মনে তো হয় না।”
—“আমার ভুল হয়ে গিয়েছিল বাবা। আমাকে মাফ করে দাও। সাদিয়া মা আমার ক্ষমা করে দে আমায়। এই মাকে ক্ষমা করি না?”

সাদিয়া তাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিল। মাইশা পিছন থেকে বোনকে জরিয়ে ধরে বলল আমাকেও মাফ করে দে আপু আমিও তো তোকে সেদিন কত কথা শুনিয়েছি। তাদের কথা শুনে সাদিয়ার বাবা বলে উঠল,

—“কখনো কাউকে কিছু বলতে হয় না। কাউকে কিছু বলার আগে ভাবতে হয় এটা যদি আমার সাথে হতো। নিজেকে সেই ব্যক্তির জায়গায় রেখে বিবেচনা করলে কেউই একটা মানুষের ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য করতে পারবে না।”
—“ঠিক বলেছেন আঙ্কেল।”

তারা তাদের করা কাজের জন্য লজ্জা বোধ করল। তখনি রায়হানের মোবাইলে একটা ফোন আসল, সাদিয়া ফোনটা কানে ঠেকাতেই আমজাদ চৌধুরি বলল,

—“বাসায় মাক্স পরা লোক তিনজন লোক এসেছিল কিছু না বলে। ঘরের জিনিসপত্র ভেঙ্গে আমাদের একটা ঘড়ে আটকে মিমকে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল। হৃদয়ও সে সময়ে বাসায় ছিল না কাজের খোঁজে বাইরে গিয়েছিল। কারা ছিল কিছু বুঝতে পারলাম? সাদিয়া ফ্লোরে বসে পরল। সবাই অবাক হয়ে সাদিয়ার দিকে তাকালো।

চলবে….

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here