#পরিসংখ্যান
পর্ব-৫
#tani_tass_ritt
“আমি মাহিদ আর রুপশার বিয়ে দিতে চাই।”
এটা শুনে মাহিদ রুপশা শাফিন ৩ জনই শক খেলো।রুপশা অসহায়ের মতো শাফিনের দিকে তাকিয়ে আছে।শাফিন রুপশার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।
এইদিকে মাহিদের তো মাথা ঘুরছে।কিভাবে সম্ভব এটা।সে তার দাদার উপর কথাও বলতে পারবেনা।আবার তরিকে ছাড়া থাকাও তার দ্বারা সম্ভব না।আর সব থেকে বড় ব্যাপার রুপশাকে সে তার ছোট বোনের মতো মনে করে।আর রুপশার থেকেও তো এমন কিছুর সাইন কোনোদিন পায়নি সে।তার সবার আগে রুপশার সাথে কথা বলতে হবে।
মাহিদের দাদা শরিফ সাহেবের কথা শুনে সবাই বেশ খুশি হলো।
“মাহিদ দাদুভাই তুমি রাজি তো?”
মাহিদ শুকনো একটা হাসি দিলো।রুপশা আর থাকতে না পেরে সেখান থেকে চলে গেলো।
“এমা রুপশা কোথায় গেলো।” শরিফ সাহেব বললেন।
“আরে লজ্জা পেয়েছে মনে হয়।নিজের বিয়ের কথা এভাবে শুনে যে কোনো মেয়েই লজ্জা পাবে।” রুপশার মা বললেন।
তারপর এক এক করে সবাই শরিফ সাহেবের রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
শাফিন যেয়ে পুকুর পাড়ে বসে আছে।তার ভেতর টা তোলপার হয়ে যাচ্ছে।সে কি করবে বুঝতে পারছেনা।নিজেকে বুঝাতে চেষ্টা করছে।কিন্তু কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছেনা।
একটু পর রুপশাকে আসতে দেখে শাফিন উঠে চলে যেতে নিলে রুপশার ডাকে যেতে পারলোনা।
“আমি কাল থেকে দেখছি আপনি আমাকে ইগ্নোর করছেন? এর মানে কি জানতে পারি?”
“কই ইগ্নোর করছি! তেমন কিছুনা।বাই দা ওয়ে কংগ্রেস। ”
রুপশা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।
“মজা নিচ্ছেন আমার সাথে? আপনি এই দুদিনেও আমার ফিলিংস বুঝতে পারেন নি?”
“এগুলো কি বলছো তুমি আজব।আমি কি বুঝবো?”
“আমি ঘুড়িয়ে পেচিয়ে কথা বলতে পারিনা তাই সরাসরি আপনাকে বলছি।আমি আপনাকে পছন্দ করি। এখন থেকে না অনেক আগ থেকে।আপনাকে আমি আগেও দেখেছি।আপনি হয়তোবা আমাকে খেয়াল করেননি।মাহিদ ভাইয়ার ফোন থেকে চুরি করে আপনার ছবি নিয়েছি।আর এইবার আপনার সাথে সময় কাটিয়ে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
এটা শুনার পর শাফিন হা করে তাকিয়ে আছে।সে খুশি হবে নাকি কি করবে বুঝতে পারছে।সে ২ মিনিট সময় নিলো নিজেকে বুঝাতে।যত যাই হোক সে এতো বড় পাপ করতে পারবেনা সে।
“দেখো রুপশা আমি তোমার ফিলিংসকে সম্মান করি।কিন্তু আমি অলরেডি অন্য কারো সাথে কমিটেড।সে আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।আমি তোমাকে এক্সেপ্ট করতে পারবোনা।ছরি।”
রুপশা এতো বড় ধাক্কা খাবে সে কল্পনাও করতে পারেনি।
“এগুলো কি বলছেন আপনি? তাহলে আমি আমার জন্য আপনার চোখে যে ভালোলাগা দেখেছি সেটা কি ছিলো? ”
“হ্যা একজন মানুষ হিসেবে আমার তোমাকে পছন্দ।আমি তোমাকে এমন কোনো সাইন দেইনি যাতে তোমার এমন মনে হয় যে আমি তোমাকে ভালোবাসি।আর আমি আমার ৪ বছরের সম্পর্ক রেখে তোমার সাথে এই ৪ দিনের পরিচয়ে কিছু করতে পারবোনা।পারলে আমাকে মাফ করে দাও।” বলেই শাফিন সেখানে থেকে চলে গেলো রুপশাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।
রুপশা পাথরের মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে।তার সাথে কি হয়ে গেলো বুঝে উঠতে পারছে না।
এইদিকে শাফিনের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো নিজের অজান্তেই।সে নিজেও বুঝতে পারছেনা তার সাথে হচ্ছেটা কি।আজই তাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে।সে কাউকে ঠকাতে পারেনা আর যাইহোক। সে মাহিদকে খুঁজতে লাগলো।
তখনি মাহিদ তাকে ডাক দিলো।
“এই শাফিন তুই রুপশাকে দেখেছিস?”
“হ্যা পুকুর পাড়ে দেখেছিলাম।।দোস্ত আমার তোর সাথে কিছু কথা আছে।”
“ভাই পরে তোর সব কথা শুনবো।এখন আমাকে রুপশার কাছে যেতে হবে।”বলেই মাহিদ পুকুর পাড়ের দিকে পা বাড়ালো।
শাফিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে চলে গেলো সব গোছগাছ করতে।
মাহিদ দেখলো রুপশা পুকুর পাড়ে বসে আছে।
” রুপশা আমার তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।”
“জি ভাইয়া ”
“দাদাভাই কি বলেছে তা তো শুনেছিস।?”
রুপশা চুপ করে রইলো।
“তুই কি চাস।”
“আমার চাওয়াতে কার কি ই বা আসে যায়?”
“মানে? ”
“না কিছুনা ”
“আচ্ছা তাহলে আমি ই বলছি।আমি খুব ভালো করে জানি তোর আমার জন্য কোন ফিলিংস নাই।এমনকি আমার ও তোর জন্য ঐরকম কোনো ফিলিংস নাই।তুই একদম চিন্তা করিস না আমি সব ঠিক করে দিবো।”
এবার রুপশা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না।
মাহিদ কে ধরে হুহু করে কেঁদে দিলো।
“ধন্যবাদ ভাইয়া।আমাকে তুমি এর থেকে উদ্ধার করো প্লিজ।”
মাহিদ রুপশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
দূর থেকে দাড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছে শাফিন।তার বুকের ভিতর কেমন যেনো চিনচিন ব্যাথা করছে।
***********************
এইদিকে তাহিয়াকে মিষ্টি খাওয়ানো দেখে তরিও আব্দার করলো তাকেও মিষ্টি খাইয়ে দিতে হবে।
সাহের নেহাতই মজার ছলে তরিকেও খাইয়ে দিলো।
তখনি রিমনের কল এলো রাহিয়ার ফোনে।
“হ্যালো রিমন ভাই”
রিমন নামটা শুনেই তাহিয়া খপ করে রাহিয়ার হাত থেকে ফোন টা নিয়ে নিলো।
“ভাইয়া আমি তোমাকে কতবার কল দিয়েছি!রিসিভ করোনি কেনো? তুমি জানতে না যে আজ আমার রেজাল্ট দিবে?” গাল ফুলিয়ে বললো তাহিয়া।
“সরি পিচ্চি। আমি একটু বিজি ছিলাম।আর আমি আপনার রেজাল্ট দেখেছি।অনেক ভালো করেছেন।তো আপনার কি চাই বলেন?”
“উম পরে বলবো।আগে তুমি জলদি করে বাসায় আসো।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। আসবো।”
“ওকে টাটা ” ফোনটা কেটে দিলো তাহিয়া।
এইদিকে রাহিয়াকে দেখার সুযোগ রিমন মিস করবে কিভাবে।বেশ খুশি হয়ে গেলো তাহিয়া তাকে ইনভাইট করেছে বলে।
এইদিকে রিমনকে নিয়ে তাহিয়ার এতো আদিক্ষেতা দেখে সাহেরের গা জ্বলে যাচ্ছে।সে কোনো রকম নিজেকে সামলে নিলো।
“তো আজকের প্ল্যান কি?” সাহের বললো।
“ঐটা তো তাহিয়া ঠিক করবে।আফটার অল আজ তো ওর ই দিন।” রাহিয়া বললো।
“আগে রিমন ভাই আসুক তারপর সব বলবো।”
সাহেরের ব্যাপারটা একদম পছন্দ হলো না।
***************************
মাহিদ রুমে এসে দেখলো শাফিনের ব্যাগ গোছাচ্ছে।
“ভাই তুই ব্যাগ গোছাচ্ছিস কেন? কই যাচ্ছিস তুই? ”
“দোস্ত আমাকে আজই ঢাকা যেতে হবে ।তুই না হয় কদিন পর আয়।”
“একদম না।আমিও যাবোনা আর তুইও যেতে পারবিনা।আমরা কত প্ল্যান করে এখানে এসেছি।তা তো কিছুই করা হয়নি। সবাই মিলে কক্সবাজার যাবো কাল।এমনিতে দাদাভাই এইসব উল্টাপাল্টা কথা বলে সব নষ্ট করে দিয়েছে।রুপশার মনটাও খারাপ।ঘুরতে গেলে ভালো লাগবে।”
রুপশা যাবে এটা শুনে শাফিন আরো না যাওয়ার জন্য জোর করলো।
“তোরা যা প্লিজ।আমি ঢাকা যাই।মাও একা বাসায়।বুঝিস ই তো।”
“নাহ আমি কিছুই শুনতে চাইনা।” বলেই মাহিদ শাফিনের ব্যাগ থেকে সব কাপড় বের করতে লাগলো।
দরজার আড়াল থেকে রুপশা সবটা শুনে ফেললো।
*************************
রিমন আসতে আসতে বিকাল হয়ে গেলো।
রিমনকে দেখে তাহিয়া তো সেই খুশি। রিমন এক গাদা চকলেট নিয়ে এসেছে।
“এই নে পিচ্চি তোর গিফট।”
তাহিয়া খেয়াল করলো সব চকলেট তার পছন্দের নয়।বেশির ভাগই রাহিয়ার পছন্দের।কিন্তু সে ব্যাপারটা আমলে নিলোনা।রিমন চকলেট এনেছে এই খুশিতেই নাচতে লাগলো।
“আরে তরি বেবি তুমি আছো বলবে না? তাহলে তোমার জন্য ও চকলেট নিয়ে আসতাম।”
“থাক থাক বললেই আর কি হবে।আমার দিকে কারো নজর আছে নাকি।আমিতো বানের জলে ভেসে এসেছি।”মুখ বাকিয়ে বললো তরি।
তরির কথা শুনে সবাই এসে দিলো।
“হইছে তোর আর ড্রামা করতে হবেনা।ড্রামা কুইন কোথাকার।” রাহিয়া বললো।
“তো তাহিয়া তোমার কি চাই শুনি।”
তাহিয়া কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
“আমাকে কক্সবাজার ঘুরতে নিয়ে যাও।”
এটা শুনে রাহিয়া ঢোক গিললো।এই মেয়ে বলে কি।
“তোর কি মনে হয় বাবা মা পারমিশন দিবে?”
“এই জন্যই তো রিমন ভাইকে ডাকা।” বলেই চোখ টিপ দিলো তাহিয়া।
রাহিয়ার সাথে কক্সবাজার যাবে এটা মনে করেই রিমনের মনটা ভালো হয়ে গেলো।
“যাহ খালা খালুকে রাজি করার দায়িত্ব আমার।”এটা শুনে তাহিয়া খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।
” তরি না গেলে আমি যাবোনা ” রাহিয়া বললো।
“কিরে তরি তুই যাবিনা? ”
“বোন বাবা মাকে ম্যানেজ কেমনে করবো?”
“ঐটা আমার উপর ছেড়ে দে।”
“আচ্ছা সাহের ভাইয়াকে বললে কেমন হয়?” রাহিয়া বলেই তরির দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দিলো।
“ভালো হয়।ছেলেটা ভালোই।ওকে ফাইন কাল রাতে তাহলে আমরা রওনা হচ্ছি।আমার গাড়িতেই যাবো।এখন যাই খালা খালুকে রাজি করাই গিয়ে।” বলেই রিমন চলে গেলো।
এইদিকে রাহিয়া শাফিনের কথা ভাবছে।শাফিন গেলে মন্দ হতোনা।আড্ডা টাড্ডা শেষ হওয়ার পর তরিও বাসায় চলে গেলো।রিমনও সাথে গেলো।
রাতে রাহিয়া শাফিনকে কল দিলো।
“কেমন আছো?”
“ভালো রাহিয়া।”
“তুমি ঢাকা কবে আসছো?”
“আজই আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মাহিদ বলছে যে ও নাকি কক্সবাজার যাবে।”
“হ্যালো হ্যালো হ্যালো।আমি কিছু শুনতে পাচ্ছিনা।শাফিন বুঝতে পারলো নেটোয়ার্ক প্রবলেম।তাই সে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো কথা বলতে।
সে পুকুর পাড়ে চলে গেলো।হঠাৎ তার মনে হলো কেউ তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে।সে ছাড়ানোর চেষ্টা করে পারছেনা।এইদিকে রাহিয়া হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে।শাফিন কোনো রকম ছাড়িয়ে পিছনে ঘুরে একটা থাপ্পড় মারলো।
রুপশা গালে হাত দিয়ে শাফিনের দিকে চেয়ে আছে।
“এগুলো কি রুপশা? কেউ দেখলে কি মনে করবে? আজব তো।আমি তোমাকে বলেছিনা আমাদের মাঝে কিছু হবে না। তোমার কি কথা কানে যায়না।আমার ৪ বছরের সম্পর্ক আর কদিন পর আমরা বিয়ে করবো।”
এটা শুনে রুপশা হুহু করে কাঁদতে লাগলো শাফিনকে জড়িয়ে ধরে।
হঠাৎ শাফিনে ফোনের দিকে চোখ পরতেই সে ভয় পেয়েগেলো কেননা ফোন এখনো কাটা হয়নি। সে ভয়ে ভয়ে ফোনটা কানে নিলো।
হ্যালো হ্যালো করেও কোনো উত্তর পেলো না।সে ফোন কেটে আবাত ব্যাক করলো।
কিছুক্ষণ পর রিসিভ করে,
“সরি সরি আম্মু ডেকেছিলো।তাই ফোন রেখেই চলে গিয়েছিলাম”
এটা শুনে শাফিন স্বস্তি পেলো।
“আচ্ছা তুমি এখন ঘুমাও কাল কথা হবে।বাই।”
এইদিকে রুপশা শাফিনকে ছাড়ছেই না।
“দেখো রুপশা পাগলামি করোনা প্লিজ।তুমি আরো ভালো ছেলে পাবে।”
“আমার তোমাকেই চাই।”
এবার শাফিনের রাগ উঠে গেলো।সে রুপশাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।রুপশা টাল সামলাতে না পেরে পানিতে পরে গেলো।
রুপশার পরে যাওয়ায় শাফিনের টনক নড়লো। সে সাথে সাথে পানিতে ঝাপ দিলো।
রুপশাকে কোনো রকম ধরে পানি থেকে নিয়ে উপরে আসলো।
“আই রুপশা তোমার কি হয়েছে তাকাও।”
রুপশার কোনো রেসপন্স না পেয়ে শাফিন এবার ভয় পেয়ে গেলো।সে ডাকডাকি করছে কিন্তু রুপশা উঠছে না।
ভয়ে শাফিনের হাত পা কাঁপছে।মনে হচ্ছে সে কিছু হারিয়ে ফেলছে।
হঠাৎ রুপশা হাসতে লাগলো। এটা দেখে শাফিনের রাগ এবার সপ্তম আসমানে।
সে আবার রুপশাকে একটা থাপ্পড় মারলো।
“এই ফাযিল মেয়ে।মজা নিচ্ছিলে আমার সাথে তাইনা।আর একটু হলে আমার জান টা বেরিয়ে যেতো।বলেই রুপশাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।”
রুপশাও টাইড করে শাফিনকে ধরে আছে।এভবেই কিছুক্ষণ যাওয়ার পর শাফিন বুঝতে পারলো সে কত বড় ভুল করছে।সে রুপশা কে ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে এলো।
রুপশা শাফিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো।
***************************
এইদিকে সকাল থেকেই গোছগাছ শুরু হয়ে গেলো রাহিয়াদের বাসায়।রাহিয়া,রিমন,তাহিয়া,সাহের, তরি তারা আজ কক্সবাজার যাচ্ছে।এটার জন্য বাসায় বেশ হৈচৈ পরে গিয়েছে।তরি সকাল সকাল রাহিয়াদের বাসায় এসে হাজির ব্যাগট্যাগ নিয়ে।
তরি তাহিয়ার রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু কথা শুনতে পেলো।যা শুনে সে ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেলো।
চলবে….