#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_৩
স্যার স্যার বাহিরে একটা বাচ্চা মেয়ে দারোয়ান চাচার সাথে ঝগড়া করছে,,
বহু বছর পর ছেলের সাথে বসে একসাথে সাথে নাস্তা করছিলেন ফায়াজ সাহেব!টেবিলে সাজানো ছিলো হরেক রকম নাস্তা,খাওয়ার মাঝেই সে অনেক কথা বললেও তার ছেলে সামির ছিলো একদম নিশ্চুপ।কথার মাঝেই বাড়ির ম্যানেজার হন্তদন্ত হয়ে এসে বলে, ‘কোন পিচ্চি মেয়ে নাকি বাড়ির দারোয়ানের সাথে ঝগড়া করছে,’ কথাটা শুনে সামির খাওয়া ছেড়ে ম্যানেজারের দিকে তাকায়।ফায়াজ অবাক হয়ে বলে,
-মেয়ে?কোন মেয়ের এতো বড় সাহস যে আমাদের বাড়ি এসে ঝগড়া করে যায় তাও আবার বাড়ির দারোয়ানের সাথে?
-স্যার জানিনা,মেয়েটা স্কুল ড্রেস পড়া মাঝে মাঝে দেখি এখান দিয়ে যেতে।শুনেছিলাম দারোয়ানের সাথে কিসের যেনো শত্রুতা!
-দেখতে হবে তো মেয়েটাকে,,
বলেই হাত ধুয়ে উঠে পরে দেখার জন্য কে সেই মেয়ে!বাবার পেছনে পেছনে সামিরও যায় কেনো যায় সে নিজেও জানেনা।সিঁড়ি পেরিয়ে বাড়ির মেইন গেইটের দিকে যেতেই পেছন থেকে সেই গার্ডটা বলে উঠে,
-স্যার এই গেট না পেছনের বাগান গেইটে।
বাগান গেইটের কথা শুনে সামিরের ভ্রু কুঁচকে যায় তাই তো বলি একটা মেয়ে দু টো পুরুষের সাথে কিভাবে ঝগড়া করে,আর বাগান গেইটে তো শুধু একটাই দারোয়ান।
ফায়াজ সাহেবের আগেই সামির বাগানের দিকে চলে যায়।ফায়াজ বুঝতে পারে বাগানের কথা শুনে ছেলে তার ক্ষেপেছে,,
কিন্তু সেখানে এসেও লাভের লাভ কিছুই হলো না,তাদের আসার আগেই মেয়ে চলে গেছে।দারোয়ান কে কিছু জিজ্ঞেস করলে সে আহামরি কিছু বলে না সামিরের ভয়ে।শুধু বলে “মেয়েটা বাগানের কালো গোলাপ চেয়েছিলো আমি দেই নি তাই ঝগড়া করেছে,স্যার বাচ্চা মেয়ে ছেড়ে দিন”
এতে সবাই শান্ত হলেও সামিরের মেজাজ হয়ে যায় ১৮০ ডিগ্রি,আজ পর্যন্ত ওর মা ছাড়া কেও এই গাছকে ছোয় নি পর্যন্ত আর এই মেয়ে কিনা এই গাছের ফুল নিতে চায়,,এই মেয়েকে তো সে দেখে নিবে!
____________
আকাশে তপ্ত রোদ একদম খারাভাবে কিরণ দিচ্ছে,দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখন সময় বারোটা।এই রোদে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বার বার হাতের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর বিরক্তে “চ” উচ্চারণ করছে মারজিয়া।সেই কখন থেকে পুতুলের জন্য অপেক্ষা করছে সে,কিন্তু তার আসার নাম নেই,কে জানে এতক্ষণ কি করছে ওও।’এইই আবার ওকে বাড়ির গার্ডরা ধরে পিটাচ্ছে না তো?হায় আল্লাহ তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। নানা রকম চিন্তা মাথা দিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে!
মারজিয়া পুতুলের স্কুলের ফ্রেন্ড,আর কেও না জানলেও মারজিয়া, পুতুল এর এই কালো গোলাপ ওয়ালা বাড়ির রহস্যটা যানে।তারা দু জন মিলে অনেক চেষ্টা করেছে এই গোলাপ নেয়ার জন্য কিন্তু প্রতিবারের মতো তারা দারোয়ানের সাথে গন্ডগোল বাধিয়ে তারপর আসে।
এমনি তো গরম তারমধ্য ভয়,সব মিলিয়ে ঘেমে একাকার হয়ে আছে মারজিয়া।কিন্তু পুতুল তো আর আসে না,
অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্কুল ব্যাগ সামনে দু হাতে চেপে ধরে দৌড়ে দৌড়ে এখানেই আসছে পুতুল।দু বেনি করা কাধ পর্যন্ত চুল গুলো দু সাইড দিয়ে উড়ছে,দেখে মনে হচ্ছে ছয় বছরের বাচ্চা চুরি করতে গিয়ে ধরা পরেছে তাই এভাবে দৌড়াচ্ছে।দৌড়াতে দৌড়াতে পুতুল মারজিয়ার সামনে এসে হাপানি রোগীদের মতো হাপাতে থাকে।মারজিয়া তার চোখ ছোট ছোট করে কোমড়ে এক হাত গুজে দিয়ে বলে,,
-ও মা ম্যাডাম এতো তাড়াতাড়ি এসে পড়লেন যে,,একটু পরে আসলেই পারতেন।
পুতুল তার ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলে,,
-আরে আর বলিস না প্রতিবারের মতো আজকেও ওই বে’ডার সাথে ঝগড়া লেগেছে,,আমি বুঝি না বাপু একটা ফুল দিয়ে দিলে কি এমন ক্ষতি হয়?তবে আমি এই পুতুল হাল ছাড়ছি না।শুধু মাত্র একটা ফুল চেয়েছি তাই দেয় নি একদিন ওই গাছটাই আমি নিয়ে নিবো দেখিস!
পুতুলের কথা শুনে মারজিয়া ব্যঙ মেরে বলল,
-হুম হয়েছে তুই এই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই সপ্ন দেখতে থাক আমি যাই!
-আচ্ছা যা এখন সোজা বাসায় যাবি বাসায় গিয়ে ব্যাগ রেখেই ফ্রেশ হতে যাবি পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে ২মিনিটে তিন রাস্তার মোড়ে এসে দাড়াবি না হলে তোর খবর আছে,,,
-ইশশ আসছে মামার বাড়ির আবদার নাকি?আমি এখন সোজা বাসায় যাবো গিয়ে একটা লম্বা ঘুম দেবো।আহহ,,এমনি যেই গরম তার মধ্যে এই খারা রোদের মাঝে তুই আমাকে কতক্ষণ দাড় করিয়ে রেখেছিস জানিস?
-বোন প্লিজ আসিস আমার কাজ আছে এই কালো গোলাপ তো আমি নিবোই তাও আজি সেটা যে কোনো উপায়ে,,,
পুতুলের কথা শুনে মারজিয়া হাই তুলতে তুলতে বিড়বিড় করে বলে,,
-”হা এই কথাটা গত ছয় মাস ধরে শুনতে শুনতে আমার কান বুড়ো হয়ে গেছে,”
পুতুল অসহায়ের ভঙ্গিতে বলল,,
-প্লিজ দোস্ত,,,,,
হয়ে গেলো, মারজিয়াকে মন গলানোর জন্য শুধু এতুটুকুই যথেষ্ট ছিলো।এটাই নতুন না হত ছয় মাস ধরেই মারজিয়াকে এমন ব্রেইন ব্লাকমেইল করেই সব সময় রাজি করায়।আজো তাই হলো,,
মারজিয়া এক বিরক্তিকর শ্বাস নিয়ে বলল,
-আচ্ছা যাবো,,,কিন্তু আমাকে এক ঘন্টা টাইম দিতে হবে,,
মারজিয়ার কথায় পুতুল খুশিতে গতগত করতে করতে মারিজিয়ার স্কার্ফ এর মধ্যের গাল চেপে ধরে বলে,,
-থাংসু জান্স
-হুম এখন আমায় বাড়িতে যেতে দে,,
-আচ্ছা যা
তারপর তারা দু জোন দু রাস্তা দিয়ে বাড়ি চলে যায়।
দুপুরের দিকে মারজিয়া আর পুতুল আবার বের হয় তাদের গন্তব্য স্থানে,,মারজিয়া পুতুলকে এই গেটাপে দেখে তো অবাকের চরম সীমায় চলে গেছে।প্রথমে তো সে চিনতেই পারছিলো না পরে যখন মুখ দেখে তখন চিনতে পারে।পুতুলের পড়নে তার ভাবির নীল বোরকা সাথে ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকা সাথে একটু লম্বা দেখানোর জন্য পড়েছে হিল!ছোট মোট পুতুলকে এভাবে দেখেলে ওই বাড়ির এমপি কেনো তার মা বাবাকে চিনতেও লাগবে অনেক সময়।
কিছুক্ষণ হাটার পর মারজিয়া একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে গেলো,আর পুতুল সামনে হাটা দিলো।খুব সাবধানতা বজায় রেখে বাড়ির বাগান গেটে যেয়ে পৌছায় পুতুল।সেখানে যেতেই তার চোখ তো চড়কগাছ!গেইটে দারোয়ান নেই,তার মানে এই সময় এখানে কেও নেই?”এতো দেখছি মেঘ না চাইতেও বৃষ্টি”
আর কোনো দিকে না তাকিয়ে তুরুতুরু করে সোজা গেইটের ভেতর চলে গেলো আশে পাশে সামনে পেছনে কেও আছে নাকি সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।দৌড়ে একেবারে কালো গোলাপ গাছের নিচে দাঁড়ায়!এদিকে যে রাস্তায় তার বোরকার একটা পিন পরে যায় সেটা খেয়াল করে নি।গোলাপ গাছের উপরে তাকিয়ে তার চোখ চক চক করে উঠে বাহির থেকে যতটা না সুন্দর তার চেয়ে সামনাসামনি দ্বিগুণ সুন্দর!মনে হচ্ছে এখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেই যাই সারা জীবন।
এভাবে প্রায় পাঁচ মিনিট থাকার পর তারমনে হয় সে এখানে ফুল দেখতে না নিতে এসেছে,,তাই নিজের হিল খুলে পাশে রেখে ফুল পারার জন্য লাফাতে থাকে,কিন্তু অনেক লাফালাফি করেও ফুল কেনো একটা গাছের পাতাও নড়াতে পারে নি।লাফানোর ফলে পুতুলের ওড়না দিয়ে বাঁধা হিজাব প্রায় খুলেই গেছে কিন্তু সে টের পায় নি,এখন পুতুলের খুব কান্না আসছে, এত দিন অপেক্ষা করে আজকে সুযোগ পেলো তাও হাত ছাড়া হয়ে যাবে?
কিছুক্ষণ অভাবেই ঠোঁট উল্টিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে পুতুল!চোখে টলমল পানি,,মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে ভাসিয়ে দিবে।অসহায় ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার লাফানো শুরু করে ফুল পাড়ার জন্য। তখন পেছন থেকে কেউ বলে উঠে,
-আমি কি সাহায্য করবো।
পুতুল ফুল নিতে এতোই মগ্নছিলো যে পেছনে যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে সেটা সে খেয়ালি করে নি!
পেছনে কোনো পুরুষালী কন্ঠ শুনে পুতুল পেছনে তাকায়!তাকিয়ে দেখে সেদিনের ওই ইমনের চামচাটা,,কিন্তু এই বেডা এখানে কি করে?পুতুল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
-এই এই তুই ওই ইমনের চ্যালা না?হুম চিনছি,,কিন্তু এখানে কি করিস?নিশ্চয় এই গাছেরফুল ছিড়তে এসেছিস?
একেই তো তার প্রিয় ফুল চুরি করতে এসেছে তার উপর তাকে চুরির অপবাদ দিচ্ছে,তাও আবার তুই তুকারি করে কার না কার চ্যালা নামে সমন্বয় করে?তাও আবার সেদিনের সেই ফাজিল মেয়েটা। এমনি বাগানে কাওকে আসতে দেখে তার রাগ উঠে গেছে তার মধ্যে পুতুলের এই কথাটা যেনো সামিরের কাছে,’আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো’
সামিরের উত্তর দেওয়ার সময় না দিয়েই পুতুল বলতে থাকে,,
-থাক থাক আর বলতে হবে না বুঝছি!আজকে আপনাকে আর কিছু বলবো না চুরি করতে যখন এসেই পড়েছেন তখন আর খালি হাতে আপনাকে ফিরতে দিবো না।কিন্তু আমার সর্ত মানতে হবে,,এমনি তো আপনি অনেক লম্বা হুম ঠিক আছে।নিন এখন গাছ থেকে ফটাফট কয়টা ফুল ছিঁড়ে নিন আমি এদিকটাই পাহাড়া দিচ্ছি আর হ্যাঁ আমাকেও কিন্তু দিতে হবে।
সামির আঙ্গুল উঁচিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পুতুল সামিরের আঙুল ধরে টানতে টানতে বলে,
-প্লিজ ভাইয়া আপনি হয়তো আমার আব্বুর শত্রুর ভাই বন্ধু চ্যালা যাই হক হতে পারেন তবে আমার তো আর না।প্লিজ এই পিচ্চিটার উপর একটু দোয়া মায়া করে কয়টা ফুল ছিঁড়ে দেন না।সত্যি বলছি আপনার বা আপনার ওই বস ইমনের নামে আমি আর জীবনেও বিচার দিবো না প্রমিস,,পিলিস.!
মুখ কাদো কাদো করে কথা গুলো বলল পুতুল!সামির তার চেয়ে বেশি লম্বা হওয়ায় গলা উঁচু করে কথা বলতে হয়েছে।
হঠাৎ থমকে গেলো সামির!কি ছিলো এই মেয়ের মুখে,চোখ গুলো পানিতে টলমল করছে।মনে হচ্ছে এখন ফুল না দিলে কেঁদে একদম ভাসিয়ে দিবে,,একদম ছোট বাচ্চাদের মতো বায়না ধরেছে।মুহুর্তের জন্য সামিরের মনে হয়েছিলো পুরো গাছটা এই সামনে থাকা মায়াবিনীকে দিয়ে দিতে।কিন্তু পরক্ষণেই আবার মনে পড়লো এই ফুলগুলো ছোয়া তো দূর তাকানো সবার জন্য নিষেধ আর সেখানে কিনা এই মেয়ে চুরি করতে এসেছে?এর তো শাস্তি পাবেই!পরক্ষনেই সামিরের মুখ আবার রাগে লাল হয়ে গেলো,কপালের রোগ গুলো ফুলে উঠেছে যা একদম স্পষ্ট!
-হ্যা সামির বাবা এই সেই মেয়ে যে আপনার ফুল নিতে চেয়েছিলো।কত বড় সাহস এই মেয়ের আমাকে গেইটে না দেখেই ঢুকে পড়েছে।ভালোই ভালোই বলেছিলাম এই ফুলে নজর না দিতে,এখন লও ঠ্যালা সামির বাবার হাতে ধরা পড়ছো এখন আর তোমার নিস্তার নাই!
বলেই পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে হাসতে লাগলো ওই দারোয়ানটা।পুতুল পেছনে তাকিয়ে দেখে কে এই কথাগুলোর মালিক।এতক্ষণে সে কিছু না বুঝতে পারলেও এই ছোট মাথায় এতটুকু বুঝে যায় যে এই ছেলে কোনো ইমন ফিমনের চ্যালাপেলা না,এই ছেলেই এমপির একমাত্র ছেলে ‘সামির’ যার কথা বাবার নামে অনেক শুনেছে কিন্তু দেখা হয় নি কখনো।অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে সে, আশে পাশে তাকিয়ে দেখে পলানোর কোনো পথ নেই,তাই আবার মাথা উঁচু করে সামিরের দিকে কাদো কাদো হয়ে তাকায়।দেখে সামির ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে হাত ভাঝ করে দাঁড়িয়ে আছে,তার মুখের রিয়েকশন কিছুটা এরকম “কি ব্যাপার বাচ্চু এখন কই পালাবা?আজ তো তোমার খবর আছে,”
-আসলে ইয়ে মানে ভা ভাইয়া
বলেই সামিরের এক বাহু ধাক্কা দিয়ে এক দৌড়ে রাস্তায় চলে আসে পুতুল।তার ওরনা আর জুতা সেখানেই পরে আছে,,গেইটের বাহিরে এসে এক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে আবার দৌড় দিতে নিবে তখনি পায়ে কিছু একটা খুব বাজে ভাবে বিধে যায়।টালসামলাতে না পেরে পুতুল সেখানেই বসে পরে।
এতক্ষণে সামির আর দারোয়ান এখানে এসে পড়েছে,,
চলবে,,#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_৪
পা থেকে পিন ছুটাতেই গল গল করে র’ক্ত পড়তে শুরু করে পা থেকে,হাত দিয়ে পা চেপে ধরার সাথে সাথে পেছন থেকে কেউ হাত ধরে দাড় করিয়ে দেয়।ফলে পায়ে চাপ লাগে।ওই হাত ধরেই সামির পুতুলকে টানতে টানতে আবার সেই বাগানে নিয়ে যায়,,পুতুল ব্যথায় কাত’রাচ্ছে কিন্ত সেদিকে খেয়াল নেই সামিরের।পুতুলের হাত ধরে বাগানের একটা বড় গাছের নিচে দাঁড়ায় সামির!পেছন থেকে দারোয়ানটা বলে উঠে,,
-বড় সাহেব কে ডেকে দিবো?
সামির পুতুলের দিকে তাকায় দেখে পুতুল পায়ের দিকে তাকিয়ে কান্না করছে,মনে হয় ভয়ে কান্না করছে।একবার ওই বড় গাছটায় আরেকবার পুতুলের চোখের দিকে তাকিয়ে পেছনের দারোয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-কাউকে ডাকার দরকার নেই,আপনি দড়ি নিয়ে আসেন।
-ছাইড়া দেও মাইয়াটারে পিচ্চি মানুষ তাই বুঝে নাই এরপর থেকে আর এমন করবো না।
-আপনাকে এতো বুঝতে হবে না আঙ্কেল আপনি দড়ি নিয়ে আসেন।
দারোয়ান মাথা দুলিয়ে তার ঘর থেকে একটা মোটা দড়ি নিয়ে সামিরের হাতে দিতে দিতে বলে,
-আরেকবার ভাইবা দেখো বাবা মেয়েটার বয়স কম অনেক ভয় পায়তাছে!
সামির রাগ চটা স্বরে বলে,
-কেন চুরি করা মাথায় আসার সময় ভয় করে নি?আপনি এখন যান এখান থেকে,,
দারোয়ান আর কিছু বলে না মাথা নিচু করে চলে যায়,
এদিকে এতক্ষণে এদের কথাকপন কিছুই কানে যায় নি পুতুলের।ব্যথাটা পা থেকে একদম মাথায় উঠে গেছে মনে হচ্ছে এখনি ঢলে পড়বে।সামনে কি হচ্ছে এতটুকু দেখার ক্ষমতা নেই তার।
সামির পুতুলকে গাছের সাথে বাধার আগেই পুতুল মাটিতে পড়ে যায়।সামির আঁতকে উঠে ‘ভয়ে মরে টরে গেলো নাকি এই মেয়ে’ হাটু ভাঝ করে নিচে বসে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছে।এখন কি করবে সে?
গালে হাত দিয়ে ডাকতে থাকে, “এই মেয়ে এই মেয়ে উঠো!দেখো একদম নাটক করবে না আমার সাথে,,আমি জানি তুমি বাচার জন্য এমন করছো তাই বলছি এখনো সময় আছে।”
কিন্তু পুতুলের ওঠার নাম নেই,,হঠাৎ সামিরের চোখ যায় পুতুলের পায়ের দিকে।বাগানের মাটি দিয়ে পায়ে মাখামাখি,তবুও লাল টকটকে র’ক্ত গুলো স্পষ্ট! দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো ধারালো জিনিস দিয়ে ব্যথা পেয়েছে।তাই হয়তো এমন চিৎকার করছিলো।কিন্তু এখন একে নিয়ে কি করবে সেই চিন্তায় পরে যায় সামির।
এভাবে অনেক্ষণ চিন্তা করার পর কোনো উপায় না পেয়ে,পুতুল কে কোলে করে নিয়ে তার রুমে যায়।আসার সময় দু তিনটে গার্ডও তাদের দেখে নেয় আর অবাক ও হয়।সামির এদেকে পাত্তা না দিয়ে পুতুলকে বিছানায় শুয়ে দেয়,,পায়ে ব্যান্ডেজ করার সময় তার চোখ যায় পুতুলের কপালে, যেখানে কা’টা দাগ!তারমানে সেদিনের কাটা এখনো সারে নি নাকি?আর কোনো কিছু না ভেবে সেখানেও একটা ট্যপ লাগিয়ে দেয়।আর অপেক্ষা করতে থাকে তার।জ্ঞান ফিরার।
পুতুলের জ্ঞান ফিরেছে,পিটপিট করে চোখ খুলতেই নিজেকে একটা নতুন ঘরে আবিষ্কার করে যেই ঘর সে তার কোনো জন্মেই দেখে নাই।তারমানে তখন সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল?
পায়ে তাকিয়ে দেখে ব্যান্ডেজ করা,’কে করেছে এমপির ছেলে?না সে তো করবে না,আব্বু যদি জানে আমাকে তো মেরেই ফেলবে।কিন্তু এটা আবার কার ঘর,’
আশে পাশে চোখ বুলাতেই দেখতে পায় জানালার পর্দার দিকে মুখ ঘুড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেও একজন।গায়ের টি শার্ট দেখে পুতুল শিউর এটা ওই এমপির ছেলে যাকে কিনা সে এতোদিন ইমনের সঙ্গী ভেবেছিলো!তখন তো দড়ি দিয়ে বাধতে চেয়েছিলো এখন না জানি এই ঘরে কি করে,,
পুতুল চুপিচুপি বিছানা থেকে দৌড় দিতে যাবে তার আগেই তার মনে হলো সে হাওয়ায় ভাসছে,আবার পেটে প্রচন্ড চাপ লাগছে।ভয়ে চোখ খিচে নেই,এক চোখ খুলে একবার নিজের পেটে আরেকবার পেছনের মানুষটিকে দেখার চেষ্টা করে।না যা ভেবেছিলো তাই ‘সামির’!তার মানে সামির তাকে দেখে নিয়েছে এখন কি হবে?পুতুল আবার চোখ খিচে নেয়,
সামির ওই হাত দিয়েই তাকে বিছানায় ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।সামির পুতুলের দিকে তাকিয়ে হাত ভাঝ করে ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
-তো কি যেনো বলছিলেন ম্যাডাম, আমি কার যেনো ও হ্যা ইমন নামের কোন ছেলের চামচা,আর কি কি যেনো আমার গাড়ির মতো তিন চারটে গাড়ি বাসায় ধুলো পরে আছে।আর তোমার সাহস হয় কি করে আমার বাগানের ফুল চুরি করতে এসেছো,তাও আবার আমার সাথে তুই তুকারি করে আমাকে চোর বলে?আজ পর্যন্ত কেও এই গাছের একটা পাতাও নিতে পারে নি আর তুমি কিনা এই পুরো গাছটাই নেয়ার চ্যালেঞ্জ করছো?বাহহ তোমার সাহস আছে বলতে হবে,,তো ম্যাডাম এখন আপনাকে কি করা যায় বলুন তো.!
সামিরের নীরবে হুমকির স্বরুপ কথা গুলো শুনে পুতুলের রীতিমতো হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গিয়েছে,সে ভয়ে ভয়ে কোনো মতে বাচার জন্য বলতে থাকে,
-দেখুন ভাইয়া সরি,আমি সত্যি সরি আর হবে না এমন। দেখুন মানুষ মাত্রই তো ভুল!আর আমি তো একটা ছোট বাচ্চা,সত্যি আর হবে না এমন আর যদি এমন করে থাকি তাহলে এই আপনি,আপনি নিজে আমার নাম বদলে দিবেন।প্লিজ ভাইয়া এই প্রথম এই লাষ্ট!
পুতুলের এই কথা গুলো শুনে সামিরের খুব হাসি পাচ্ছে সঙ্গে ভালো লাগছে,একদম বাচ্চাদের মতো অনুরোধ করছে না হলে এখনি কেঁদে ভাসিয়ে দিবে।কিন্তু এইসব ভালোলাগা সব সাইডে রেখে রাগ দেখিয়ে পুতুলকে অনেক্ষণ শ্বাসালো!সবার শেষে বলল,
-এখন তোমাকে মাফ করে দিলাম নেক্সটাইম যদি তোমাকে এই বাড়ির আশেপাশে দেখি তাহলে খবর আছে,আর ভুলেও যেনো আমার সামনে না পড়,মাইন্ড ইট!এখন যাও,,
হাফ ছেড়ে বাচে পুতুল!বিছানা থেকে নেমে দৌড় দিতে যাবে তার আগেই ব্যান্ডেজ করা পায়ে ব্যথা পায়।কিন্তু আপাতত সেটাকে পাত্তা না দিয়ে আবার দৌড় দিতে যাবে তার আগেই সামির পুতুলের হাত খপ করে ধরে ফেলে।আকস্মিক হাতে কেও চেপে ধরায় আতকে উঠে পুতুল।এখন আবার না জানি কি বলে,ভয়ে চিৎকার দেওয়ার আগেই সামির ধমকের স্বরে বলে,
-এই মেয়ের জ্ঞান বুদ্ধি দেখি কিছুই নেই।এখন কি ড্যাংড্যাং করে বাড়ি সবার সামনে দিয়ে বাহিরে যাবে নাকি?ডাফার!
পুতুলে আস্তে আস্তে পেছনে কাধ ঘুরিয়ে বলে,
-তাহলে কোথা দিয়ে যাবো?
-যাবে সেখান দিয়েই যাবে,এখন বেশি কথা না বলে আমার পিছু পিছু আসো।
পুতুল বিনা বাক্যে সামিরের পিছে পিছে যেতে থাকে।সামির খুব সাবধান হয়ে করিডর পার করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই একজন মহিলাকে সেখান দিয়ে যেতে দেখা যায়,দেখে মনে হচ্ছে বাড়ির কাজে
লোক।তাকে দেখেই সামির নিজের এক হাত দিয়ে পুতুলকে তার পেছনে পিঠের সাথে লাগিয়ে দেয়।সামিরের হাত লাগে পুতুলের পেটে,পুতুলের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।কিন্তু কিছু বলে না,
বাড়ি থেকে বের হয়ে আবার পুতুল দৌড় দিতে নেয়,কিন্তু তার আগেই সেই তখন কার মতো পুতুলের হাত ধরে নেয় সামির।পুতুলের এখন খুব বিরক্ত লাগছে,কিসের জন্য যে এ বাড়িতে আসলো উফফফ..!
সামির দাঁত কামরে আস্তে আস্তে বলে,
-এই মেয়ে এখন আবার কই যাও?
পুতুল তো অবাক নিজেই বাড়িতে যেতে বলে,আবার নিজেই এখন বলছে ‘কই যাও?’
-কেন বাড়ি.!
-এভাবে এই অবস্থায় যাবে নাকি?আর এখন গেইট দিয়ে বের হতে পারবে তুমি?সত্যি তোমার মাথায় একটুও ঘিলু নেই,
পুতুল মাথা নিচু থেকে চোখ উচিয়ে সামিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
-তো এখন আমি কি করবো?
-কি করবে মানে?আমার সাথে যাবে,তুমি এখানেই দাড়াও আমি গাড়ি নিয়ে আসছি।
পুতুল আর কিছু বলে না,”নিজের জান বাচানো ফরজ” ভেবে।কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হতেই সামির গাড়ি নিয়ে এসে পড়ে,এটা সেদিনের গাড়ি না।তবে এই গাড়িও তাদের বাসায় আছে হহু..!
পুতুল গাড়ির সামনে এসে পেছনের দড়জা খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না,কিছুতেই খুলতে পারছে না,দু হাত দিয়ে চেষ্টা করেও সে ব্যার্থ!এটা আর নতুন না সবসময় এমন হয় কোনো দিনো সে গাড়ির দরজা খুলতে পারে না শক্তিতে কুলোয় না।সববারি তাদের গার্ডরা খুলে দেয়,কিন্তু এখন কি করবে সে?
এদিকে সামিরের পুতুলের করা এমন কান্ড দেখে খুব হাসি পাচ্ছে,কিন্তু এখন নিজের হাসি চেপে রেখে বিরক্তি নিয়ে নিজে গাড়ি থেকে বের হয়ে পুতুলের সামনে এসে তার হাত ঝটকা মেরে ছাড়িয়ে নিযে দরজা খুলে দিতে দিতে বলে,
-এতটুকু কাজ ই পারে না আবার আসছে ফুল চুরি করতে গাধী!যাও বস।
পুতুল কোনো কিছু না বলে চুপচাপ গাড়ির পেছনের সিটে বসে পরে।সামিরো ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়,কিছু রাস্তা যেতেই সামনে মারজিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পুতুল দিশেহারা হয়ে পেছন থেকে সামিরের কাধ চাপরাতে চাপরাতে বলে, “এইযে এখানেই রাখুন ওইযে আমার বান্ধুবি এখন আমি তার সাথেই বাসায় যেতে পারবো”
সামির বিরক্তি নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে একটা হিজাব পড়া একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আর কিছু না বলে গাড়িটা তার সামনে এনে দাড় করিয়ে ভেতর থেকেই পেছনের দরজা খুলে দেয়।
পুতুল চট করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে,সামিরও আর কিছুনা বলে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায়।
মারজিয়া কতক্ষণ চুপ করে বোঝার চেষ্টা করে কি হচ্ছে টা কি!পুতুলের দিকে একবার ভালো করে নজর দিয়ে দেখে,সে যাওয়ার সময় যেভাবে গিয়েছিলো এখন তার কানি কোনাও নেই,বোরকা ওড়না হিজাব কিছুই নেই,শুধু স্কার্ট আর টপ্স পড়া।পায়ে ব্যান্ডেজ কপালে কাটা যায়গায় ট্যাপ লাগানো।মারজিয়া চিন্তায় পড়ে যায়, পুতুলের কাধ ঝাকাতে ঝাকাতে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে,
পুতুল আস্তে আস্তে সব বলে।সব শুনে মারজিয়া তো অবাকের চরম পর্যায়ে,এতকিছু হয়ে গেলো আর সে কিনা হুদ্দাই এখানে অপেক্ষা করছিলো?
-হয়েছে?হয়েছে এইবার তোর শিক্ষা,এ জনমে আর কোনো ফুলের নাম নিস না বোন।এই অবস্থায় গ্রামের কেউ দেখে নিলে কি হবে একবার ভেবে দেখেছিস?এই বিভিন্ন বিপদ আর কাটা ছেড়া করেই তোর জীবন যাবে।যাহ এখন যা করবি কর,আমি এর মধ্যে নেই।
-আরে ধুর যা হবে পরে দেখা যাবে এখন বাসায় চল ভাবির সাহায্য নিতে হবে।
-হুম চল।
তারপর তারা হেটে পুতুলদের বাসায় যায়,এই টাইমে বাসায় পুরুষ বলতে কেউ নেই তাই হাফ ছেড়ে বাঁচে পুতুল।মারজিয়া আর ভাবির সাহায্য নিয়ে পায়ের ব্যান্ডেজ আর কপালের ট্যপ খুলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।এতক্ষণে ভাবির বিশাল বকুনি খেতে হয়েছে।
চলবে..!