#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪৬
_____________________________
–‘ ৩০ ডিসেম্বর কী কোনো বিশেষ কিছু আছে ইরা?
পড়ার টেবিলের চেয়ারে বসে গল্পের বই পড়ছিল ইরা।বিকেলের অলস প্রহরে একটু সময় কাটাতেই বই পড়ার প্রয়াশ।সূচনা বিছানায় বসেছিল,তাকে দেখে বই রেখে সূচনার সাথে কথা বলতে মন দিতেই সূচনা প্রশ্ন টা করে বসলো।সূচনার হেন প্রশ্নে ইরার মুখের রঙ পাল্টে গেছে, কেমন যেন লাগছে তাকে।সূচনা জবাব না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো-
–‘বললে না? ৩০ডিসেম্বর কী বিশেষ কিছু আছে? তোমার ভাইয়ার?
ইরা কোনোরকমে জবাব দিল-
–‘ না তো ভাবি,তেমন কিছু নেই।কেন? হ..হঠাৎ এই তারিখের কথা জিজ্ঞেস করছো কেন?
সূচনা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো মিনিট দুয়েক তারপর বললো-
–‘আমাদের রুমের শেলফে রাখা কোনো এক টা বইয়ের মধ্যে একটা কাগজ পেয়েছিলাম, সেখানে তারিখ টা দেখেছি আর কিছু আকা ও ছিল সেখানে।
–‘একজন মহিলা ফ্লোরে পড়ে আছে আর তার সামনে একজন পুরুষ দাড়িয়ে আছেন।এমন?
সূচনা কিঞ্চিৎ অবাক হলো, বুঝতে পারলো ইরা জানে এ ব্যাপারে কিছু।এদিকে ইরার হুশ হয়েছে সে কি বলে ফেলেছে তা বুঝতেই জিভ কা/মড়ে ধরেছে।সূচনা পুনরায় জিজ্ঞেস করলো-
–‘হ্যা। তো ঔ তারিখে কি?
–‘কি..কিছু না ভাবি আমি তো জানি না।
–‘তাহলে বললে কিভাবে সেই কাগজে কি আকা ছিল?
ইরা চুপ করে রইলো কয়েক পল তারপর আনমনে বললো-
–‘ঔ তারিখে ভাইয়ার জন্মদিন।
সূচনা অবাক হলো,জিজ্ঞেস করলো –
–‘জন্মদিন তো সেটা নিয়ে এত লুকোছাপা কেন?
–‘কারণ…ঔদিন..
বলতে বলতে থেমে গেল ইরা কথা ঘুরিয়ে ফেললো।বললো-
–‘কারণ ভাইয়া সেলিব্রেট করা পছন্দ করেন না।তাই বলেনা।
সূচনার বিশ্বাস হলো না একদম।জিজ্ঞেস করলো-
–‘শুধু কী ওনার জন্মদিন নাকি অন্য কিছুনও আছে?
–‘ ন..না শুধু জন্মদিন ই।
–‘তাহলে সেই কাগজে…
–‘ভাবি প্লিজ আমাকে এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করো না। আমাকে কেন কাউকেই কিছু জিজ্ঞেস করো না।
ইরা উচ্চ স্বরেই কথাগুলো বললো।সূচনা আর কিছু বললো না।ইরা একটু পর সূচনার কাছে এসে বললো-
–‘আ’ম সরি ভাবি কিন্তু তুমি প্লিজ এই ব্যাপারে আর কিছু জানতে চেয় না।
সূচনা জোরপূর্বক হাসলো,মিহি স্বরে বললো-
–‘ঠিক আছে।
প্রসঙ্গ বদলাতে সূচনা মুগ্ধর ব্যাপারে কিছু কথা বললো।স্বাভাবিক হলো ইরা কিন্তু সূচনার সন্দেহ বাড়লো তরতর করে।সেদিন প্রণয়ের অমন ব্যবহারে রা/গ হয়েছে ঠিক ই তবুও সে জানতে চায় ৩০ ডিসেম্বরে কী আছে আর ঔ কাগজ টা ধরার পর কেন এত রিয়েক্ট করলো প্রণয়।বলা হয় নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি ই মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে।সূচনার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়।দুইদিন সব রকম চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে এটা নিয়েই ভেবেছে কিন্তু কিছুই পায়নি উত্তর হিসেবে।প্রণয় না বললে জানতে পারবে না আর প্রণয় বলবে না সহজে।তার মতে ছাদের সেই রুমটাতেই কিছু পাওয়া যাবে। কিন্তু যাবে কিভাবে?ইরার কাছ থেকে কিছু জানতে পারবে ভেবে জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু হতাশ হলো। সূচনা আপাতত এটাই ভাবছে ৩০ ডিসেম্বর শুধু প্রণয়ের বার্থডে না অন্য কিছু ও আছে।কিন্তু কী সেটাই বের করতে হবে।
___________________________
–‘আপনি কী আমার কাছ থেকে কিছু লুকোচ্ছেন?
বাইরে থেকে এসেছে বিধায় ফ্রেশ হতে গিয়েছিল প্রণয়।রাত নয়টার মতো বাজে।ওয়াশরুম থেকে প্রণয়ের বের হওয়ার অপেক্ষায় ই ছিল সূচনা।প্রণয় বের হতেই সাথে সাথে প্রশ্ন টা করে বসলো সূচনা।প্রণয় অবাক হয়েছে বটে, টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করলো-
–‘হঠাৎ এমন প্রশ্ন করার কারণ?
–‘পাল্টা প্রশ্ন কেন করছেন?আমার প্রশ্নের জবাব দিন।
সূচনার কণ্ঠে কিঞ্চিৎ রা/গের আভাস টের পেল প্রণয়।সূচনার সামনে যেয়ে তার দুই বাহুতে হাত রেখে মিহি হেসে জিজ্ঞেস করলো-
–‘কী ব্যাপার আজ টেম্পারেচার এত হাই কেন?
–‘আবার ও প্রশ্ন করছেন?আমার প্রশ্নের জবাব দিন প্রণয়।
–‘কি হয়েছে বলো তো?
মেজাজ খারাপ হলো সূচনার।দুই বাহু থেকে হাত সরিয়ে চলে যেতে নিলে প্রণয় খপ করে হাত ধরে ফেললো। সূচনার দু হাত চেপে মুড়ে ধরলো পেছনে। বা দিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে সূচনা।প্রণয় নরম স্বরে বললো-
–‘এদিকে তাকাও তো।
সূচনা তাকালো না,প্রণয় আবারও বললো-
–‘এদিকে তাকাও।
–‘ না।
–‘তাকাবে না?
–‘না।ছাড়ুন আমায়।
–‘ছেড়ে দিব?
–‘হ্যা।
সূচনার বলার সাথে সাথে ই প্রণয় ছেড়ে দিল তাকে।সূচনা বিস্ময় নিয়ে তাকালো তার দিকে। বললো-
–‘ছেড়ে দিলেন?
–‘তুমিই তো বললে।
–‘আমি বললেই ছেড়ে দিতে হবে?
–‘হ্যা অবশ্যই। তোমার কথা শুনতে হবে না।
সূচনা কপোট রা/গ দেখিয়ে বললো-
–‘যদি কখনো বলি আমি আপনার সাথে থাকব না ছেড়ে দিন আমায়। তাহলে কি ছেড়ে দিবেন?
প্রণয় নিষ্পলক চোখে তাকালো সূচনার দিকে। চাহনি অন্য রকম তার,রা/গ ভুলে মনে ভয়ের সঞ্চার হলো সূচনার।প্রণয় এগোলো, দুহাত সূচনার কটিতে রেখো কটিবন্ধ করলো।একেবারে গায়ে গা মিলিয়ে দাড়িয়েছে সে।ঝুকে সূচনার কানের সামনে মুখ নিয়ে হিম হওয়া কণ্ঠে বললো-
–‘তোমার আমার বিচ্ছেদ হবে,তবে তা হবে সাময়িক।কোনো এক সাঝ বেলায় নিস্তব্ধ প্রকৃতির নির্মল পরিবেশে আবারো দেখা হবে আমাদের,আবারো হারাবো দুজন-দুজনায়,ডুব দিব ফেলে আসা দিনে,সাজাবো নতুন স্মৃতি, ঘটাবো আবার নতুন #প্রণয়ের_সূচনা।বুঝেছো?
সূচনা জবাব দিল না,চোখ বন্ধ করে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো,ঠোট জোড়া কা/পছে তার,চোখের পাতা ও তিরতির করে কা/পছে।প্রণয়ের কণ্ঠ অদ্ভুত মাদকতায় ভরা,সূচনাকে ঘায়েল করার জন্য তার বলা কথাই যথেষ্ট আর এদিকে সে পরিমানের চেয়েও বেশি লজ্জা পায়।
–‘তোমার ক*ম্পিত ঠোঁটজোড়া আমাকে টানছে নারী,রাত করে শাওয়ার নিতে তোমার কষ্ট হবে কিন্তু আমার ঘাড়ে যেন না পড়ে দোষ,সব দোষ তোমার তিরতিরিয়ে কা*পতে থাকা ঠোঁটজোড়ার।তার মধ্যে চোখ পড়েছে আমার,নেশা ধরেছে।
সূচনা ভড়কালো,দু হাত দিয়ে ধাক্কা দিল প্রণয়ের বুকে।লাভের লাভ কিছু হলো না উল্টো আরও চেপে ধরলো প্রণয়।প্রণয়ের প্রশস্ত বুকেই থেমে গেল সূচনার হাত জোড়া আর তার দৃষ্টি ও থামলো সেখানেই।প্রণয় সন্তপর্ণে ঠোট ছোয়ালো সূচনার ঠোঁটে,ঠোটে উষ্ণ ছোয়া পেতেই সূচনা খাম/চে ধরলো প্রণয়ের টি-শার্টের কলার।সাথে সাথে ছাড়েনি প্রণয়,সময় নিয়েছে মিনিট দুয়েক।তারপর ছেড়ে দিয়ে পূর্বের ন্যায় ঘোর লাগা কণ্ঠে বললো-
–‘ইউর লিপস ড্রাইভ মি ক্রেজি কাপকেক।
প্রণয়ের উক্ত বাক্য শুনতেই লজ্জায় সিঁটিয়ে গেল সূচনা।ভাড় ছেড়ে দিল,মাথাটা প্রণয়ের বুকে গিয়ে ঠেকলো একদম।প্রণয় হাসলো,যাক প্রসঙ্গ পাল্টাতে পেরেছে।নাহলে প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া অব্দি জিজ্ঞেস করতেই থাকতো।
____________________________
–‘তার খোজ পেয়েছি, তার নাম রিয়াদ হাসান।সে এক বছর আগে পুরো পরিবার সমেত আমেরিকা তে চলে গেছে। পরিবারে তার বাবা-মা, স্ত্রী আর জমজ দুইটা ছেলে আছে।আনান সিদ্দিকীর ভাগ্নে সে,আনান সিদ্দিকী আমেরিকা তে তাদের সাথেই থাকতেন।আনান সিদ্দিকীর মৃত্যুর খবর শুনে সবাই দেশে ফিরেছেন।গুলশানে তাদের নিজস্ব ফ্লাটে উঠেছেন।ভাই রিয়াদের ক্ষমতা যা আমেরিকা তেই, দেশে তার তেমন কোনো পরিচিতি ও নেই। তার কোনো স্টেপ নিতে হলে বুঝে শুনে নিতে হবে,অনেক সময় ও নিতে হবে।ততদিনে আমরা কিছু করতে পারি।
তন্ময় মুখস্থ করা স্পিচের মতো এক নাগাড়ে বললো কথাগুলো। প্রণয় স্বাভাবিক গলায় বললো-
–‘করতে পারি।কিন্তু রিয়াদ সাহেবের সাথে তো আমার আরেকটা হিসেব বাকি।তার ওয়াইফকে নিয়ে আসতে হবে।কি যেন নাম.. হ্যা মাহিরা।তাকে আর সাথে আর একজন আছে এদের দুজনকে চাই।ব্যবস্থা করো নিয়ে আসার।
–‘ঠিক আছে কিন্তু আরেকজন টা কে?
–‘স্নেহা…আমার বউয়ের শুভাকাঙ্ক্ষী।
–‘ভাবীর শুভাকাঙ্ক্ষী?
–‘হ্যা।তার বাসার এড্রেস, কলেজ সব ইনফরমেশন মেইল করে দিব- গেট হার এজ সুন এজ পসিবল।
–‘ঠিক আছে।
–‘আচ্ছা শোন মিহু কেমন আছে?
–‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।
–‘ও আসে না এখন বাসায়, কল ও করে না,অনলাইন ও আসেনা।কী হয়েছে ওর?
–‘কী আর হবে আম্মুর সাথে ঝ/গড়া হয়েছে। সারাদিন ঘাপটি মেরে রুমে বসে থাকে,পিহু ও কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।আমরা একসাথে থাকলে কত ভালো হত তাই না ভাই?
–‘আমরা একসাথেই আছি,তুই ছায়ার মতো থাকিস তো সারাক্ষণ আমার সাথে। মিহু ইদানীং আসে না, পিহু তো একবারো আসেনি বাসায়।কলে ও কথা হয়না অনেকদিন।এজন্য মিস করছিলাম আর কি।
–‘হুম।কথা বলবে এখন?
–‘না থাক রাত করে ডিস্টার্ব করিস না।কালকে সময় করে আমি কল দিব।
–‘আচ্ছা।
–‘রাখি তাহলে।
–‘ঠিক আছে…আল্লাহ হাফেজ।
সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলো,প্রণয় বিরস মুখে ফাকা রাস্তার দিকে তাকালো,হলুদ সোডিয়াম আলোয় আচ্ছাদিত রাস্তাটা,কুয়াশা পড়েছে আজ অনেক।বড় করে শ্বাস ছাড়লো। ব্যালকনি থেকে চলে যাওয়ার জন্য পেছনে ঘুরতেই প্রণয়ের পা থেমে গেল।সামনে সূচনাকে দেখে হালকা অবাক হয়ে বললো-
–‘তুমি?
সূচনা প্রতিক্রিয়া দেখালো না শুধু অস্ফুটে স্বরে জিজ্ঞেস করলো-
–‘রি..রিয়াদ কে প্রণয়? আপনি কোন রিয়াদের সাথে কথা বলছিলেন?আপনি রিয়াদ নামে কারো সাথে কথা বলছিলেন কেন?কেন কথা বলবেন?বলবেন না একদম।
#চলবে