প্রণয়ের সূচনা পর্ব – ৪৭

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪৭
___________________________
শান্ত চোখে সূচনার দিকে তাকিয়ে আছে প্রণয়।সূচনা ঘুমাচ্ছে, চোখে মুখে এতক্ষণ কেমন আতঙ্কের ছাপ থাকলেও এখন তা নেই।তখন রিয়াদ নামটা শুনে কেমন যেন হাইপার হয়ে গিয়েছিল সূচনা। রিয়াদ কে?বারবার জিজ্ঞেস করছিল,প্রণয় বহুকষ্টে বুঝিয়েছে রিয়াদ তার একজন ক্লাইন্টের নাম।তখন যেয়ে একটু শান্ত হয়েছে।সূচনা শান্ত হতেই প্রণয় জোর করে এনে শুইয়ে দিয়েছে। কম্ফোর্টার টা সূচনার গায়ে ভালো করে টেনে দিয়ে বেড থেকে উঠে পড়লো প্রণয়।নিঃশব্দে রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।রাতে বের হওয়া হয় না তার অনেকদিন।ক্লান্ত লাগছে তার,ঝামেলা লাগছে সব।ইচ্ছে করছে লং ড্রাইভে যেতে,রিফ্রেশমেন্ট দরকার একটু, কিন্তু এখন দূরে যাওয়া যাবে না,এমনি তেই সূচনা অসুস্থ কিছু টা,তারওপর সে না থাকলে..নাহ!তাই গেল না।বাগানে হাটাহাটি করতে লাগলো।
____________________________
–‘কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?

রুমে পা দিতেই প্রশ্ন টা কানে আসলো প্রণয়ের। তাকিয়ে দেখলো সূচনা আধশোয়া হয়ে আছে বেডে,কম্ফোর্টার টা একদম আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখা গায়ের সাথে।উৎসুক দৃষ্টি প্রণয়ের দিকে।প্রণয় এগিয়ে আসলো, ধীর গলায় বললো-

–‘বাগানে,হাটাহাটি করছিলাম একটু।

–‘ওহ।

–‘তুমি উঠে পড়লে যে?

সূচনা মিন মিনিয়ে বলতে লাগলো-

–‘ঘুম ভেঙে গেছে আর পাশে তাকিয়ে দেখলাম আপনি নেই তাই..

–‘তাই?

–‘…

–‘ভ য় হচ্ছিল?

–‘হু।

প্রণয় হাসলো, সূচনার পাশে বসলো।হাসি টেনে কিছু টা ফিসফিস করে বললো-

–‘ভালোবাসার মাঝে হালকা ভয় থাকলে, সেই ভালোবাসা মধূর হয়। কেননা, হারানোর ভয়ে প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়।”
আর বানীতে আপনার প্রিয় লেখক। বুঝেছেন মিসেস.রঙ্গন।

সূচনা হাসলো ঠোঁট প্রসারিত করে।বললো-

–‘উহুম সুন্দর লাগছে না শুনতে।মিস.রঙ্গন টাই সুন্দর।

–‘আপনি কি ভুলে যাচ্ছেন যে আপনি এখন ম্যারিড তার মানে মিসেস।

–‘তাহলে অন্য কিছু বলে সম্বোধন করুন লাইক কাপকেক,বউজান,প্রণয়ী।

–‘আচ্ছা ভাববো।

সূচনা আদুরে গলায় বললো-

–‘আচ্ছা। ঘুমাবেন না?আমার ঘুম পেয়েছে, একা একা ঘুম হবে না আমার।আপনিও ঘুমান।

–‘বাহ আজকে রোমান্টিক মুডে আছো দেখা যায়।

–‘একটু ও না।

–‘চলো ঘুমাই তাহলে।

সূচনাকে টেনে শুইয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়লো প্রণয়। কম্ফোর্টার দিয়ে একদম আপাদমস্তক ঢেকে ফেলল দুজনকে।দু হাতে টেনে সূচনাকে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসলো।গালে নাক ঘষতে শুরু করলেই সূচনা বললো-

–‘ঘুমানোর কথা বলেছিলাম আর আপনি..

–‘আজকে শীত লাগছে অনেক।

–‘লাগাম হীন হয়ে যাচ্ছেন দিনদিন।

–‘তোমার জন্য ই।জানো আজকে বছরের দীর্ঘতম রাত।আজকে রাতে অনেক সময় পাবো যদি..

–‘চুপ করুন।

সূচনার ধ ম ক শুনে প্রণয় শব্দ করে হাসলো যেন সূচনা কোনো রম্য গল্প শুনিয়েছে।ঘুম ছুটে গেছে সূচনার,দুজন খুনসুটি ঝগড়ায় মেতেছে। দুজন দুজনের উষ্ণতায় উষ্ণ হচ্ছে খানিক।হোক,রাত কা*টুক,ভালোবাসায় উষ্ণতা ছড়াক।
___________________________
কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের শুরু হলো আজ প্রণয়ের ডাকে।আলতো স্বরের নিজের নামটা উচ্চারিত হতেই সজাগ হলো সূচনা।চোখ পিটপিট করে তাকালো।শান্ত,স্থির একজোড়া চোখের চাহনি তার মুখশ্রীতে বিচরণ করছে।সূচনা ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো-

–‘শুভ সকাল।

প্রণয় বুকে হাত রেখে ফিল্মি স্টাইলে বললো-

–‘হায় মে মারজাওয়ান।

সূচনা ভ্রু কুঁচকালো।জিজ্ঞেস করলো-

–‘কেনো?

প্রণয় সূচনার ডান গালে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললো-

-*’তোমার ঘুম জড়ানো কন্ঠ এত মা/রাত্মক!উফফ।

সূচনা বিনিময়ে লাজুক হাসলো।সলজ্জ কন্ঠে বললো-

–‘সকাল সকাল আবার শুরু করে দিয়েছেন?

–‘কিছুই তো করলাম না।তুমি কি শুরু করার কথা বলছো বলো তো?

–‘আপনি খুব বা/জে।

–‘কেনো?

–‘এমনি।

–‘এমনি না কারনটা হচ্ছে ‘তুমি’।

–‘কেনো আমি কি করেছি?করেছেন তো আপনি।আপনার জন্য এখন সকাল সকাল আমার এই ঠান্ডার মধ্যে..

–‘উহুম.. তুমি করেছো..সব দোষ তোমার।তোমার রূপের আগুনে জ্ব লে পু ড়ে ছারখার হয়ে গেছি।আমার স্বভাব বা /জে হয়ে গিয়েছে।বারবার তোমাকে ছোঁয়ার,তোমার কাছে আসার।তাহলে বলো দোষ কার?তোমার না আমার?

সূচনা আবারও লজ্জায় কুকড়ে গেল।হুট করে মুখ লটকে নিল,থমথমে গলায় জিজ্ঞেস করলো-

–‘যদি আমি দেখতে অসুন্দর হতাম?

প্রণয় নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইলো কতক্ষণ। তারপর ধীর কণ্ঠে বললো-

–‘নারী তুমি বাহ্যিক দিক থেকে সুন্দর হও বা অসুন্দর
মনের দিক থেকে পৃথিবীর সেরা সুন্দরী হলেই হবে,আর আমি জানি তোমার মনের সৌন্দর্য, তার ঔজ্জ্বল্য।তুমি মনের দিক থেকে অসুন্দর হলেও আমি নিজের মতো করে গড়ে নিতাম কিন্তু আমার প্রয়োজন পড়েনি, কারণ তুমি সুন্দর,তোমার মন সুন্দর থেকেও সুন্দর। ‘

সূচনা হাসলো, চোখ থেকে দুফোঁটা পানি ও গড়িয়ে পড়লো।প্রণয় আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালো সূচনার কপালে,বললো-

–‘একটা প্রশ্নের উত্তর দিব,তাড়াতাড়ি উঠো যেতে হবে।

–‘প্রশ্নের উত্তর দিতে আবার কোথায় নিয়ে যাবেন?

–‘ওঠো তাড়াতাড়ি। গেলেই বুঝতে পারবে।

–‘আগে আপনি উঠুন।

–‘না..চলো একসাথে শাওয়ার নেই।

–‘ছিহহ।

প্রণয় সত্যি সত্যিই সূচনাকে কোলে নিয়ে নিল।কোলে নিতেই চমকে উঠলো সূচনা।ওয়াশরুমের সামনে যেয়ে নামিয়ে দিল কোল থেকে।শাড়ির অবস্থা বা জে হতেও বা জে।কোনোরকম পেচিয়ে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো সূচনা।লজ্জায় তার কুটিকুটি হওয়ার অবস্থা আর এদিকে প্রণয় হাসতে হাসতে শেষ।
____________________________
কুয়াশার জেরে আবছা চারপাশ।এক হাত দূরের জিনিস টাও বুঝতে হালকা কষ্ট হচ্ছে।এই কুয়াশার মধ্যে বাইরে এসেছে প্রণয় আর সূচনা। সূচনার ডান হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে প্রণয়।তারা এখন দাড়িয়ে আছে একটা কাঠগোলাপের বাগানে।বাগানই বলা যায়, প্রায় কয়েকটা কাঠগোলাপ গাছ আছে এখানে।অনেকগুলো কাঠগোলাপ আবরণ তৈরি করেছে শিশির ভেজা মাটিতে,এ যেন শুভ্র ফুলের মেলা।সূচনা বিমোহিত নয়নে তাকিয়ে আছে।এজন্য ই বুঝি প্রণয় এত তাড়াহুড়ো করে নিয়ে এসেছে তাকে।সূচনার হাত ছেড়ে দিয়ে এগিয়ে গেল প্রণয়।

একটা গাছের নিচ থেকে দেখে দেখে পরিষ্কার ফুল গুলো দুহাত ভর্তি করে কুড়িয়ে নিল, ধীর পায়ে এসে দাড়ালো সূচনার সামনে।একটা কাঠগোলাপ সূচনার কানে গুজে দিল,তার কানে আগে থেকেই ঠাই পেয়েছে একটা শুভ্র রঙা জবা।বাসা থেকে বেরোবার সময় প্রণয় গুজে দিয়েছে কানে।কানে ফুল গুজে দিয়ে বাকিগুলো হাতে ধরিয়ে দিল সূচনার।একহাত দিয়ে সূচনার চুল ঠিক করতে করতে বললো-

–‘শুভ্র শাড়িতে শুভ্র রাঙা ফুল কানে গুজে একদম শুভ্র মানবী লাগছে।এই শুভ্র মানবীকে ভালোবাসি।সেদিন জিজ্ঞেস করেছিলে না ‘ভালোবাসার রঙ কী?

–‘বলেছিলেন মানুষ ভেদে তাদের অনুভূতি ভিন্ন হয়,রঙ ভিন্ন হয়।

–‘হ্যা। শোনো.. কুয়াশায় মোড়ানো এই ভোরের পরশে ভেজা মাটিতে ছড়িয়ে আছে কত শুভ্র কাঠগোলাপ, তেমার হাতে হলো তাদের ঠাই,কানে ও জায়গা হলো দুটোর।ছুয়ে দেখো,অনুভব করে দেখো,যতটা শুভ্রতায় আচ্ছন্ন এই কাঠগোলাপ,এই জবা ঠিক ততটা শুভ্র তোমার প্রতি জাগা আমার একেকটা অনুভূতি, আমার ভালোবাসা। ফুল পবিত্রতার প্রতীক, আর তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা টাও পবিত্র,সব শুভ্র ফুলের মতো শুভ্র। এবার বলো ভালোবাসার রঙ কী?

সূচনা সহসা জবাব দিল-

–‘শুভ্র।

প্রণয় হাসলো,সূচনা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।কী সুন্দর লাগছে প্রণয়কে,প্রাপ্তির স্নিগ্ধ এক হাসি,সূচনা থমকে গেল একদম,কিছু বলতেও ভুলে গেল।প্রণয় অবশ্য আর তার কথা বলার অপেক্ষা করছে না।সে হাটা ধরেছে সূচনার বাহু ধরে,সূচনা পায়ে পা মিলিয়ে হাটছে।হাতের ফুলগুলো ছোট বাস্কেটটায় নিয়ে নিল,বাস্কেট টা ও প্রণয়ের গাড়িতে ই ছিল,প্রি প্ল্যান্ড নাকি।সূচনা বাস্কেট টা একহাতে নিয়ে আরেকহাতে জড়িয়ে ধরলো প্রণয় কে,নিজের মাথাটা প্রণয়ের বুকে রেখেই হাটতে লাগলো,প্রণয় হাসলো, সূচনা ও হাসছে। আজ অন্য রকম শান্তি লাগছে দু-জনের। প্রিয়রা কাছে থাকলে,তাদের সাথে সময় কাটালেই বুঝি শান্তি লাগে,হয়তো।
_______________________
বিকেলের সময় টায় বের হয়ে মহা ঝামেলায় পড়ে গেছে সূচনা,মিহু,তিথি আর ইরা।ইরা আর তিথি বলছিল বিকেলে বের হবে,অনেকদিন কোথাও যায় না তাই তো মিহুকেও কল করে আনিয়েছে।ভালো কথা বের হয়েছে কিন্তু জ্যামে পড়ে মেজাজ চরম খারাপ হয়ে গেছে। যদিও ঢাকা শহরে এই জ্যাম তো মানুষের নিত্য সঙ্গী।সে যাক তাদের সাথে প্রণয় ও এসেছে।টুকটাক খাওয়া ও হয়েছে, স্ট্রিট ফুড।সাড়ি বেধে দোকান বসেছে কয়েকটা,সেখানেই দাড়িয়ে একের পর এক চুড়ি, কানের দুল দেখে যাচ্ছে ইরা,মিহু,আর তিথি।হাজার থাকলেও এসব সামনে পড়লে মেয়েদের পক্ষে এড়িয়ে চলে যাওয়া দুষ্কর বিষয়।সূচনা সাইডে দাড়িয়ে আছে, অন্যমনষ্ক হয়ে।প্রণয়ের সকালে বলা কথাগুলো বারবার কানে বেজে উঠছে,বারবার মনে পড়ছে সকালের ঘটনা গুলো।প্রণয় তার বাহুতে হালকা ধাক্কা দিতেই সম্বিত ফিরে পেল সূচনা।তার দিকে তাকাতে যেয়ে দুর্ভাগ্যবশত দৃষ্টি পড়ে গেল সামনে।থমকানোর সাথে সাথে চমকে উঠলো।তার থেকে কয়েক হাত দূরে সাদা রঙা প্রাইভেট কারের বসা একজন মানব, জানালা দিয়ে দৃশ্যমান তার মুখশ্রী, তার দৃষ্টি স্পষ্ট সূচনার ওপর।চারচোখ এক হতেই সূচনা আ/ৎকে উঠেছে।এই মানুষটার অপ্রত্যাশিত আগমন কেন হলো?কী হবে সামনে?

#চলবে

নোট-০১- (আগামী পর্বে ইনশাআল্লাহ সূচনার অতীত পরিস্কার করবো।সূচনা কাকে দেখেছে? রিয়াদ কে?তাও আবছা পরিস্কার হবে।)

নোট-০২-(অনেকের মেজাজ খারাপ হয়,অনেকে রাগ করে গল্প পড়া ছেড়ে দিয়েছে,অনেকে অনেক বা জে কথাও শুনিয়েছেন দেরি করে দেই সেজন্য। কিন্তু আমার সমস্যার কথা তো আমি বলেছিলাম। আমার পরিবারের কেউ জানে না আমার লেখালেখির কথা। লেখালেখির জন্য আলাদা করে সময় আমাকে দেয়া হয় না।সব কিছু সামলে লেখালেখির জন্য আমার নিজেরই এজটু সময় বের করে নিতে হয়।অপেক্ষা করতে কারও ভালো লাগে না সেটা আমিও জানি।কিন্তু আমার দিকটা অন্তত একটু বুঝতে হবে।তাই না?যারা যারা পাশে ছিলেন বা আছেন তাদের কে অনেক শুকরিয়া।দোয়ায় রাখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here