#প্রণয়ের_ত্রিভুবন
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ০৩
পিহুকে নিয়ে ক্যানটিনের পাশে থাকা বেঞ্চগুলোতে পা ঝুলিয়ে বসে আছে শুভ্রিলা। হাতের কাপে থাকা চায়ের গরম গরম ধোঁয়ায় হাতের দিতে মগ্ন। সাথে ক্যামপাসের চাঞ্চল্যকর পরিবেশ উপভোগ করা হচ্ছে। আকাশের ছড়াছড়িভাবে থাকা শুভ্র মেঘগুলো জানান দিচ্ছে আজকের আবহাওয়াটা দারুন।
পিহু তার প্রাণপ্রিয় বয়ফ্রেন্ডের কথা একাধারে বলেই চলছে। সে কি গুনগান! পিহুর কথা কর্ণপাত করছে কিন্তু চুপচাপ আছে শুভ্রিলা। অপপাত কথা বলতে ভালো লাগছে না আর। এহমারের কাছে তখন নম্বর চাইলেও দেয় নি। শুভ্রিলা এই প্রথম কারো কাছে নির্লজ্জের মতো নম্বর চেয়েছে। তবুও এহমার দিতে সম্মতি জানায়নি। অতএব, কিছুটা রেগে গিয়েছিলো শুভ্রিলা। কয়েকটা ক্লাসও হয়ে গেলো তাও এহমার একটি বারের জন্য তার সাথে কথা বলেনি। এমনকি তার দিকে তেমন তাকায়নি। আজকের এতো সাজগোজ সব যেনো মাটি হয়ে গেলো! ব্যাপারটা ভাবতেই শরীরের সর্বাঙ্গে যেনো কাটার মতো বিধঁছে। হঠাৎই মাথায় বুদ্ধি খেলে যায় তার। পিহুকে ডেকে ফিসফিসিয়ে বলে,’যে হালেই হোক না কেনো, ছেলেটাকে শায়েস্তা করতে হবে!’
পিহু খানিকটা অবাক হয়ে তার দিকে দৃষ্টি দেয়। চোখের চশমাটা ঠিক করে পড়ে নেয়। ঠোঁট উল্টিয়ে শুভ্রিলাকে বলে,
— ‘তোমার মাথা ঠিক আছে তো? ওই ছেলেটাকে তুমি ঠিকমতো জানও না, তার পেছনে এভাবে লেগে থাকা কি ঠিক হবে? আর ছেলেটারই বা কি দোষ? ‘
–‘আজকে তার কাছে বেয়াড়ার মতো নম্বরটা চাইলাম কিন্তু ব্যাটা তা দিলো কই? ‘ শুভ্রিলার কথায় ক্ষোভের প্রকাশ হয়।
–‘তা তোমাকে সে চিনে না বলেই দিতে সাহস পায় নি। আর আজকালকার জেনারেশন যেমন…! তাতে এভাবে কাউকে হুট করে নম্বর দেওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমার মনে হয় এহমার ভুল কিছু করে নি।’
–‘ওকে ফাইন। তুমি কিছু করবে না মানে আমাকে হেল্প করবে না তাই তো? ‘ স্ট্রেটকাটে বলে শুভ্রিলা। শুভ্রিলার কথায় সামান্য ভরকে যায় পিহু। গলা খাঁকারি দিয়ে অস্থিরতার কন্ঠে বলে,
–‘উহু! আমি কখন বললাম সাহায্য করবো না? সাহায্য করতে পারি তবে…
–‘তবে? পিহুর উত্তর শেষ না হতেই শুভ্রিলা বলে।
–‘তবে ধরা পড়ে গেলে আমার কোনো দোষ নেই কিন্তু।’ (পিহু)
–‘ ইয়াপ! তোমার কোনো দোষ নেই। চিন্তা নট! বাই এনি চান্স তুমি যদি ধরা পড়েও যাও, দ্যান আমার কথা বলবা, আমিও দেখবো ব্যাটা কি করতে আসে’
ব্যাঙ্গ করে বলে শুভ্রিলা। ভেতরে ভেতরে এক অন্যরকম উত্তেজনার মাদল বাজছে তার। তার কথায় মাথা দোলায় পিহু। মেয়েটার আচরণ বোধগম্য হচ্ছে না তার।
———————————-
একটা সিএনজিতে করে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছে এহমার। পেছন পেছন আরেকটা সিএনজি নিয়ে তার পিছু নেয় পিহু। প্রথম থেকেই সিএনজি চালককে বুঝিয়ে দেওয়া আছে, ওই সিএনজির পিছু করতে। এহমারের সিএনজিটা সামনে এগোতে থাকে । সাথে আগায় পিহুরও। হঠাৎ প্রচন্ড জ্যাম এ আটকা পড়ে যায় সিএনজিগুলো। প্রায় একই দেখতে সিএনজিগুলোর মধ্যে ঠিক কোথায় এহমার বসে আছে তা দেখা কষ্টসাধ্যই। তবুও এহমারকে খুঁজতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে পিহু। শেষমেশ সিএনজি থেকে বেড়িয়ে ভিড় ঠেলে সামনে এগোয় সে। সব সিএনজিগুলোর দিকে একবার করে পরখ করে নেয়। হঠাৎ চোখ আটকে যায় সাইডের দিকে দাড় করানো ওই সিএনজিটায়। যেটার ভেতরে বসে এহমার ফোনে কথা বলছে৷ সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে আছে এহমার। এহমারককে দেখা মাত্র পিহু চটপট ছুটে যায় নিজের সিএনজিটার দিকে। অস্থিরতার সাথে চালককে সামনে আগাতে বলে।
তার কথা মতো চালক টেনেটুনে এহমারের সিএনজিটার পেছনে নিয়ে গিয়ে থামায়। সেখান থেকে নেমে পড়ে এহমার। চৌরাস্তার মোড়টায় নেমে গিয়েই সেখানে প্যাডেল চলতে শুরু করে সে। ফটাফট সিএনজি চালকে ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে নেমে পড়ে পিহু। উদ্দেশ্য তার পিছু নেওয়া। এহমার এক সময় দ্রুত চলতে শুরু করে।ব্যাপারটা বুঝতে পারলে পিহু তার পেছনে রীতিমতো দৌড়াতে শুরু করে।
চলবে,,,