প্রণয়ের রং
পর্ব – ০৬
ছবিটা অন্য কারোর নয়। ওর আর শুভ্রের ছবি।
গতকাল সে পরে যেতে নিলে যখন শুভ্র ওর কোমড় জড়িয়ে আকড়ে ধরেছিল ওকে সেই মুহুর্তের ছবি। কেউ একজন লুকিয়ে লুকিয়ে ছবি তুলেছে। সে ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছে __
” ভার্সিটির সিনিয়র – জুনিয়র ছেলে – মেয়ের খোলা আকাশের নিচে নষ্টামি ”
নিমিতার খুব কান্না পাচ্ছে। অজানা ভয় কাজ করছে মনে। কে করলো এতো বড় ক্ষতি? বাবা – মা যদি দেখে ফেলে?
____” বাবা-মা দেখলে কি করবো? কি বলবো তাদের? কি মনে করবে আব্বু? ”
বলেই ডুকরে কেদেঁ উঠলো সে। হিচকি এসে গেছে কাদঁতে কাদঁতে।
___” শুভ্র জানে এই ছবির বিষয়ে? আমার ওর সাথে কথা বলতে হবে। চল…”
ভার্সিটিতে এসে এদিক-ওদিক পাগলের মতো খুঁজে যাচ্ছে দুজনে শুভ্রকে।
ক্যান্টিনের কাছে আসতেই দেখলো কদম গাছটার নিচে শুভ্র ও তার দুটো বন্ধু দাড়িয়ে আছে। কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে সে। দেখে মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে। কপালের রগ ফুলে উঠেছে। চোখ দিয়ে যেন আগুন বেরোবে।
নিমিতা ও নিতু সামনে এসে দাড়ালো ওদের।
নিমিতার চোখে পানি চিকচিক করছে। নাকটা লাল হয়ে আছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। খুব কষ্টে কান্না আটকে রেখেছে সে।
___” কিচ্ছু বলতে হবে না। আমি সব ঠিক করে দিবো। বিশ্বাস রাখো আমার উপর। ”
খুব শান্ত গলায় অভয় দিয়ে বললো শুভ্র।
___ ” এখানেই দাড়াও। কোথাও যেতে হবে না। ৫ মিনিট সময় দাও আমায়। সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
কিছুক্ষণ পর তিনটে মেয়ে মেয়ে এলো। ওদের মধ্যে দুজন মিলে অন্য একজনকে এক প্রকার টেনে এনে দাড় করালো ওখানে।
মেয়েটা শুভ্রের ক্লাসমেট। ওর নাম মিম। শুভ্রকে পছন্দ করে। কয়েকবার প্রোপজও করেছে। শুভ্র পাত্তা দেয়নি ওকে।
___” তুমি করেছো এসব? উত্তর দাও। ”
___” হ্যাঁ। আমিই করেছি। ”
শুভ্রের চোখে চোখ রেখে উত্তর দিলো মিম।
সঙ্গে সঙ্গে শুভ্র কষিয়ে থাপ্পড় বসালো মিমের গালে।
নিমিতা শুভ্রের এমন কাজে কেমন হকচকিয়ে গেল। তার কি বলা বা করা উচিত সে বুঝতে পাচ্ছে না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছে সবটা।
___” তুই এতোটা নিচু মানের কাজ করবি ভাবতেও পারিনি। সাহস কি করে হয় তোর?”
খুব জোরে চিৎকার দিয়ে বললো শুভ্র।
ওর চিৎকারে মিম তো কেঁপে উঠেছেই ওদিকে নিমিতা ও নিতুও ভয়ে জমে গেলো।
শুভ্রের রাগ এর আগেও তো দেখেছে নিমিতা। কিন্তু আজকে ওই যে হয় না ” ফায়ার ম্যান ” টাইপ। যারা রেগে গেলে পুরো গায়ে আগুন ধরে যায়। হাত দিয়ে, চোখ দিয়ে আগুন বেরোয়। একদম অমন মনে হচ্ছে শুভ্রকে। আবারও শুভ্রের চিৎকারে নিমিতার ধ্যান ভাঙলো।
___” আমি তোকে পাত্তা দিই নি। তোর সমস্যা আমায় নিয়ে। তুই কোন সাহসে নিমিতার নামে বাজে কথা বললি? ”
___” তো কি করবো আমি? আমি কি বুঝি না তোমার মনে ওর জন্যে কি আছে? সহ্য করতে পারি না আমি ওকে তোমার পাশে। যা করেছি বেশ করেছি। ”
মিমও সমান তেজে উত্তর দিলো।
শুভ্র এবার উল্টো হাতে আরেকটা থাপ্পড় লাগালো।
___” তুই জানিস আমি তোর কি করতে পারি? কার দিকে হাত দিছোস তুই? জ্যান্ত পুতে ফেলবো মাটিতে। ”
শুভ্রের ধমকে মিম এবার ভয় পেয়ে গেলো। সে খুব ভালো করেই জানে শুভ্র কি করতে পারে। মিম কাঁদতে শুরু করলো।
___”আমার অনেক হিংসে হচ্ছিলো ওকে তোমার সাথে দেখে।
সরি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আর এমন করবো না। প্লীজ আমায় মাফ করে দাও। ”
ওর কান্নায় নিমিতার মন গলে গেলো। প্রথমে অনেক রাগ হলেও এখন সবটা শুনে মায়া হচ্ছে। মেয়েটা কতো ভালোবাসে শুভ্রকে। যাই হোক মাফ তো করাই যায়।
শুভ্র কিছু বলবে তার আগেই নিমিতা বলে উঠলো ___
___” শুনুন। মাফ করে দিন। উনাকে বলুন পোস্ট আর ছবি ডিলিট করতে তাহলেই হবে। ”
___” তুমি চুপ থাকো। আমি দেখছি না ব্যাপারটা? তুমি চেনো না ওকে। এগুলো সব ওর নাটক। ”
ধমকে উঠলো শুভ্র।
___” আমি বলছি তো মাফ করতে। উনি আর এমন কিছু করবেন না। ”
___ ” ওকে। এবার ছেড়ে দিলাম। আর কোনোদিন এমন কিছু করলে মেরে ফেলবো একদম। চলে যা সামনে থেকে। ”
মিমের দিকে তাকিয়ে বললো শুভ্র।
মিম কাঁদতে কাদঁতে চলে গেলো।
নিমিতা শুভ্রের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
___” কি দেখছো? ”
শুভ্রের কথায় চোখ নামিয়ে নিলো নিমিতা।
___” ধন্যবাদ। ”
বলেই নিতুর হাত ধরে দ্রুত চলে এলো ওখান থেকে।
ক্যান্টিনে এসে বসলো দুজন। ঢকঢক করে দু গ্লাস পানি খেয়ে ফেললো নিমিতা।
___” দোস্ত তুই ঠিক আছিস?”
প্রশ্ন করলো নিতু।
___” হুম.. ”
___” শুভ্র ভাই যেভাবে থাবড়া লাগালো বেচারির ২-৪ টা দাঁত বুঝি পরেই গেছে। ”
___” মজা করিস না। উনার এই রুদ্র-রুপ দেখে আমার হাত-পা এখনও অসার হয়ে আছে। ”
___” তবে যাই বল। বেশ করেছে মেয়েটাকে চড় দিয়ে। বেয়াদব মেয়েলোক। ”
___” হুম। ”
___” কিন্তু আমি আরও একটা কথা ভাবছি। ”
___” কি?”
___” আমার কেন জানি মনে হচ্ছে শুভ্র ভাইয়া তোরে পছন্দ – টছন্দ করে। নয়তো তুই ভাব একবার.. তোর ছবি এভাবে দেয়ায় কি হাল করলো মেয়েটার। ”
গালে হাত দিয়ে চোখ গোল গোল করে বললো নিতু।
___” না তেমন কিছু না। এমনিই এসব ভাবছিস। একটু বেশিই বুুঝোস তুই। ”
মুখে না না করলেও নিতুর কথায় ওর মন কেমন অস্থির লাগছে। পেটের ভেতর যেন হাজারো প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে। সত্যিই কি শুভ্র ওকে পছন্দ করে?
চলবে…
নিমিতা আনাম