প্রথম প্রেম পর্ব ৭

#প্রথম_প্রেম
৭ম পর্ব।

রুনা খানম মেয়ের রুমের দিকে যেতে লাগলেন তার হাতে উর্মির প্রিয় ডিম-পোলাও।

উর্মি বসে অংক করছিল, রুনা খানম পোলাও এর প্লেট পড়ার টেবিলে রাখলেন। রেখে উর্মির হাত ধরে এনে বিছানায় বসালেন, বললেন তোর সাথে কথা আছে বস,
– বলো।
– তোর চোখ এরকম ফুলে আছে কেন? তুই কি সারারাত কেঁদেছিস?
– না। এমনি, মাথা ব্যাথা করছে তাই।
– শোন, আমি তোর মা। আমার চোখ ফাঁকি দেওয়া সহজ না। দেখ, তুই আমার একমাত্র মেয়ে, তোর বাবার রাজকন্যা। তোকে নিয়ে আমার কতশত স্বপ্ন। তুই কেন এরকম মোহ তে ডুবেছিস? শাওন কি এমন ছেলে যে, তুই পাগল হয়ে গেলি। মাত্র স্কুলে, কল্রজে যাবি, ভার্সিটিতে পড়বি, তখন কত কত ভালো ছেলে দেখবি৷ এখন কেন? আমি তোকে বকাবকি করতে চাইনা, তোকে সুন্দর করে বললাম তুই এসব মাথা থেকে একদম ফেলে দেয়।

উর্মি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, কোন কথা বলছেনা।

শোন উর্মি চুপ করে থাকবিনা, বিরক্ত লাগে। আর পড়াশোনা কর৷ সময় আসলে ছেলের অভাব হবেনা। ফালতু ছেলে তোর মাথা নষ্ট করছে….

রুনা খানম যতই ভাবেন শান্ত হয়ে কথা বলবেন, তবুও তিনি রেগে যান, তিনি তাই তাড়াতাড়ি করে মেয়ের রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।

উর্মির রাতেও খেতে ইচ্ছে করে নি, এখনো করছেনা। পড়ছে শুধু মাত্র তার জন্য। খাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু খাওয়ার জন্য মুখে রুচি নেই। উর্মির দুচোখ বেয়ে পানি পরছে৷ শুধু ভয় হচ্ছে যদি সে এই কোয়ার্টার ছেড়ে চলে যায়!

রাজিব আর শাওন দু জন পাশাপাশি বসে আছে। শাওন তার দুঃখের সব কথাই বলে যাচ্ছে…

রাজীব বললো দেখ, তুই যদি মেয়েটিকে সত্যি পছন্দ করিস, ভালবাসিস তবে তুই তাকে ছেড়ে যাস না।
– আমি অবশ্যই মেয়েটিকে পাগলের মতো ভালবেসে ফেলেছি মনের অজান্তেই। কিন্তু ওর আর আমার মিল কখনোই সম্ভব নয়।
– দোস্ত, তুই ভালো ছাত্র, তুই পড়াশোনা করে একটা পর্যায়ে গেলে, অবশ্যই মেনে নিবে।
– সে অনেক দূরে…বর্তমান টাই যে খুব চিন্তার, এখন আমার ভাবী যে, কি প্যাচ করছে কে জানে।
– এই, তুই এতো ভয় পাস কেন? যদি বেড়িয়ে যেতে বলে চলে আসিস৷ আমি ম্যাচ দেখে দিব।
– আমি এখন উর্মির জন্যই ছেড়ে আসতে পারিনা দোস্ত।
– আরে, ব্যাটা তুই তো আরও বাচ্চা হয়ে যাচ্ছিস। যা, বাসায় যা, প্রেম করেছিস, ভালো করেছিস। বেশি ঝামেলা হলে জানাস, আপাতত দেখ বাসায় কি হয়। কিছু তো না ও হইতেও পারে।
– হুম….

দরজা খুলেই, মুন্নি বললেন এই যে, তোমার প্রেমিক পুরুষ ভাই এসেছে।
– কি বলছো ভাবী।

এই মুন্নি কি বলবে, তোর প্রেমের খবর নিয়ে মানুষ বাসায় আসছে, আর তুই আবার কি বলিস। আয় রুমে আয়, দেখি তুই কত বড় প্রেমিক হয়েছিস!
– ভাইজান, কি বলছেন!
– চুপ, একদম চুপ। আমার মান সন্মান নষ্ট করে কথা বলে, তোর হাঁটুর বয়েসী মেয়ের সাথে এগুলি কি? এই তুই জানিস তোফায়েল সাহেবের পরিবার কেমন! প্রেম একদিনে চলে যাবে। তোর কি যোগ্যতা আছে? হ্যা?

তুমি চিৎকার কর না তো, ঘরে আমার ছেলেরা আছে।
– তুমি অন্য রুমে যাও।

তোকে ভদ্র ভাবে বলি, দয়া করে তুই আমার বাসা থেকে চলে যা। আর দরকার ছাড়া আমার বাসায় আসার ও দরকার নাই। যে ভাই আমার সম্মান নষ্ট করে, সে থাকার দরকার নাই।
– ভাইজান
– আমি নামাযে যাবো, তারপরে তোর ভাবীর খালার বাসায় দাওয়াতে যাবো, এসে যেন তোকে না দেখি। আর এই তিন হাজার টাকা নিয়ে উঠে যা, কোথাও। যা!! আর কিছুই বলিস না, মাথা কাজ করছে না।

শাওন এক মিনিটে ডিসিশন নিল, সে সত্যি আর এই বাসায় থাকবেনা। কষ্ট হবে, খুব কষ্ট হবে। উর্মির জন্য ভেতর চৌচির হবে, খাওয়া-থাকার কষ্ট হবে, টাকা পয়সার চরম কষ্ট হবে। কিন্তু তবুও এভাবে, আর থাকা যায়না!

একটা চিঠি লিখে, তাদের বুয়া কে দিল শাওন। সে আবার উর্মিদের বাসায় সবসময় যাতায়াত করে। উর্মি কে আদর করে খুব। তাই শাওন খুব রিকুয়েষ্ট করে তাকে চিঠিটা দিতে বললো। এবং সব বই খাতা গুছিয়ে, তার ভাইয়ের রেখে যাওয়া তিন হাজার টাকা টেবিলে রেখেই, দুই ঘন্টার মধ্যে অজানা গন্তব্যে রওনা হলো শাওন।

পথিমধ্যে তোফায়েল সাহেবের সাথে দেখা, সে সালাম দিল। তিনি উত্তর নিলেন বিরক্ত হয়ে, কিন্তু বেশ উৎসুক চোখে বললেন কোথায় যাচ্ছ?
– এখান থেকে ভার্সিটি দূরে, তাই ভার্সিটির পাশে বাসা নিয়ে নিয়েছি, সেখানেই থাকবো।
-ভালো, যাও।

শাওন জানে এই মুহুর্তে তিনি এই খবরে সবচেয়ে খুশি হয়েছেন। তার মেয়ের পথের কাঁটা চলে যাচ্ছে, শাওন বার বার চার তলা বাসার দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে, তার এতো খারাপ এই জীবনে কখনোই কারো জন্য লাগেনি, তবে কি এর নাম ভালবাসা…

উর্নি চিঠি পেয়েই দরজা লাগিয়ে পড়া শুরু করলো…

প্রিয় উর্মি,
কেমন আছ? তুমি? তোমার সাথে আজ দুই দিন দেখা হয়নি, কথা হয়নি। প্রচন্ড খারাপ লাগছে। কিন্তু আমি জানি আমার উর্মি আমারই থাকবে যদি ছয় মাস ও কথা না হয়! কারণ সে আমাকে ভালবাসে। তুমি পড়াশোনা কর, তাড়াতাড়ি বড় হও। তখন আমি-তুমি সারাদিন ঘুরবো আর তোমার প্রিয় বাহন রিকশা দিয়ে পুরো ঢাকা শহর ঘুরবো। এখন আমাদের জন্য সময় টা খুবই খারাপ, তাই হয়তো আমরা কয়েকদিনের জন্য আলাদা হচ্ছি, আমাদের পরবর্তী সুন্দর সময়ের জন্য।
তুমি মন খারাপ করবেনা, আমি আজ কোয়ার্টার ছেড়ে চলে যাচ্ছি, তুমি সাবধানে থাকবে, আর আমার থাকবে। এই শাওন চির জীবন শুধুই তোমার। আর প্লিজ কাঁদবেনা, মন খারাপ করবেনা। সময় ভালো হলে, কল দিবে। আমি তোমার কন্ঠস্বরের অপেক্ষায়। আবারও বলছি আমি আছি, এবং থাকবো। পড়াশোনা করবে, খাবে এবং আমাকে ভালবাসবে।
ইতি।
তোমার প্রিয়জন

উর্মি হাউমাউ করে কাঁদছে, মনে হচ্ছে তার ভেতর টা ছিঁড়ে যাচ্ছে। কেন সে ছাদে গেল, যদি সে ছাদে না যেতো তাহলে তো এমন সমস্যা হতোনা! তার কি আর শাওনের সাথে দেখা হবে? নাকি কালকের দেখাই ছিল শেষ দেখা। উর্মির কান্না কোন ভাবেই থামছেনা।

শাওন ও সব ব্যাগ বই খাতা নিয়ে ভ্যানে চড়ে বসেছে, সে এখনো জানেনা সে কোথায় যাবে? উর্মির সাথে কি তার আর দেখা হবে, প্রচন্ড রোদের মধ্যে ও আকাশের দিকে তাকিয়ে হাজারো প্রশ্ন করছে সে, এফিকে তীব্র রোদে ও হালকা বাতাসে ভ্যান চলছে খুব দ্রুত…..

চলবে….

আন্নামা চৌধুরী।
১৬.০৭.২০২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here