#প্রেম_ছোয়ালে
Part:02
Writer:Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
দেখতে দেখতে পথের সীমা শেষ হলো।অবসান হলো আশফির অপেক্ষা র।নীলির অপেক্ষা র।আর আহসান এর
গাড়ি থামলো।সামনে ছোট একটা পার্ক ।চারপাশে গাছপালা।ফুলের বাগান ।
পরিবেশটা খুব মনোরম ।নীলির খুব ভালো লাগলো দেখে।আহসান যে আজকে তাকে এই ভাবে সারপ্রাইজ দেবে তা সে ভাবতে পারে নি
–নীলি,,
–হুম বলুন
–জায়গা টা পছন্দ হয়েছে
“”আপনার কোন কিছুই আমার ভাল লাগে না ম্যানেজার ।আপনি শুধু আপনার ব্যাংকের টাকার হিসেবের মতো খারাপ না,আপনার ঐ বোকা বোকা কবিতা র মতো বিশ্রী।আপনাকে দেখে আমার কি মনে হয় জানেন পচা ডিম একটা আস্ত সদ্য পচা ডিম।যার বাইরে থেকে থেকে মনে হয় নিখুঁত আর ভেতরে পুরো ঘোলাটে পোকায় খেয়ে ফেলে নৌকা নিয়ে সাঁতার কাটার মতোন””
না আজ আর নীলি আহসান কে এই জবাব দিল না।শুধু একটু মুচকি হাসি উপহার দিল।যদিও আহসান ভেবেছিল তার হলদে পাখিটা আজ শেষ বারের মতো তাকে ঐ বকা গুলোই দেবে
–আপনি কি গাড়ি নিয়ে ,গাড়ি র ভেতরে বসে বাইরে থেকে পার্কে র দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করতে চাইছেন ম্যানেজার সাহেব
–আচ্ছা আরেক বার ম্যানেজার সাহেব বলে ডাকবে নীলি
নীলির বিরক্তি চরম পর্যায়ে ।আজ সকাল থেকে এই লোকের বোকা বোকা কথা তার মাথা খেয়ে ফেলছে
নীলি কিছু না বলে দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে ধম করে জোরে দরজা লাগিয়ে দিল।যেন আহসানের ওপর সমস্ত রাগ সে দরজাটার ওপর ঝেরেই মেটালো
এদিকে
আশফি সামনের পথে চেয়ে আছে।দূর থেকে দেখতে পাচ্ছে তার প্রিয় মানুষটিকে ।কতোদিন পরে দেখছে সে আজ তাকে।কিন্তু একি।তার প্রিয় মানুষটিকে যে সে নীল শাড়ি আর চুলের খোপাতে দেখতে পছন্দ করে।হলুদ রঙ তো তার পছন্দ নয়।আর চুলগুলো যে খোলা
“হয়তো আমার অভিমানী নীল পরীটা আজ এভাবে এসেছে আমাকে রাগ দেখাতে।সমস্যা নেই সব অভিমান আজ ধুয়ে দেব আমি প্রেমের ছোয়াতে”–নিজের মন কে এই সান্ত্বনা দিয়ে মুচকি হাসলো আশফি
এদিকে
আহসান গাড়ি থেকে নামলো।তার পা যেন চলছে না।তবুও তাকে আজ চলতে হবে।তার হলদে পাখিটা যখন তার সাথে ভালো নেই তখন তার উচিত তার ভালো থাকার ব্যবস্থা করার।শত হলেও ভালোবাসে ।ভালোবাসার জন্য না হয় এটুকু করবে।আজ থেকে প্রতি রাতে সিগারেট এর ধোয়া তে নিজের কষ্ট গুলো কে পুড়তে দেবে।তাতে কি তার হলদে পাখিটা তো ভালো থাকবে অন্য কারোর বুকে।তার বুক টা না হয় ফাকাই থাকলো।ভেতর টা না হয় জ্বলেই গেল
নীলি দূরে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছে নীল পানজাবি পড়ে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে ।মুখটা বোঝা যাচ্ছে না।কিন্তু তাদের দিকে ফিরেই যে দাঁড়িয়ে আছে সেটা বুঝছে
–আচ্ছা ঐ লোকটি এভাবে আমাদের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেন।তার কি হিংসে হচ্ছে আমাদের দেখে
হঠাত্ করে আহসান এসে নীলির হাত ধরলো
–চলো
–হুম চলুন
–আচ্ছা নীলি তোমাকে তো আমি প্রতিবছর বিবাহ বার্ষিকী তে কিছু দিয়েছি তাই না
–হ্যাঁ, কেন
–আর সব সময় তুমি ওগুলোকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ছো
নীলি আর উওর দিতে পারছে না।আসলেই এটা সত্যি ।সব সময় আহসানের দেওয়া সব উপহার সে এভাবেই ছুড়ে ফেলেছে
–আজ আমি তোমাকে আরো একটা উপহার দেব।এটাই হবে আমার দেওয়া তোমাকে শেষ উপহার
–শেষ উপহার মানে
–তুমি দেখো এই উপহার তুমি ছুড়ে ফেলতে পারবে না।আজীবন আগলে রাখবে
–কি এমন উপহার বলুন তো
দেখতে দেখতে তারা যে আশফির সামনে চলে এসেছে সেটা নীলির খেয়াল নেই।সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আহসানের কথা শুনতে ব্যস্ত
আহসান নীলি কে সামনে তাকাতে ইশারা করলো
নীলি সামনে তাকিয়ে অবাক।এতোটাই অবাক সে আহসানের হাতটা ও ছেড়ে দিয়ে ছে।সামনে দাঁড়িয়ে আছে তাই সেই মানুষটি যার সাথে কথা না বললে দেখা না করলে একসময় তার দিন কাটতো না।আজ অনেক দিন পর আবার তার সামনে সেই মানুষটি ।আচ্ছা আহসান কি তাকে এজন্য এখানে নিয়ে এসেছে।এটাই কি তার সেই উপহার যা সে ফেলতে পারবে না
মুচকি হেসে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে আশফিও তাকিয়ে আছে নীলির দিকে।আজ কতোদিন পর দুজনের চোখাচোখি
আশফি এসে একদম নীলির সামনে দাঁড়ালো
দুজনের মাঝে বিব্রত বোধ করছে আহসান।নিজেকে মনে হচ্ছে তাদের পথের বাধা
–কেমন আছো নীল পরী
আশফি র কথাটা যেন নীলির বুকে গিয়ে বিধলো ।আজ কতো দিন পর সেই চিরচেনা কন্ঠস্বর
আহসান নীলির এক হাত দিয়ে আশফি র একহাতে ধরিয়ে দিল
–নেও ।আজ আমার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস টাকে তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি ।কখনো কষ্ট দিও না আমার হলদে পাখিটা কে।মনে রেখো ও তোমার কাছে ভালো থাকবে বলেই আমার খাঁচা থেকে ওকে আমি মুক্ত করে দিয়ে ছি।ও যেন কষ্ট না পায় ।রানী করে রেখো ওকে তোমার নীড়ে
–কথা দিলাম রাখবো।নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে ।আর আঘাত আসতে দেব না আর কষ্ট পেতে দেব না আমার জন্য ।কিন্তু তুমি তোমার মূল্যবান জিনিস ছাড়া কি ভালো থাকবে
–হুহ ।থাকবো।না হয় থাকাটা শিখে নেব।তবুও আমার হলদে পাখিটা ভালো থাক আমার আর কিছু চাই না
নীলি অবাক দৃষ্টিতে আহসানের দিকে তাকিয়ে আছে।কেমন মানুষ উনি যে শুধু তার ভালো থাকার জন্য ই নিজের স্ত্রী কে তুলে দিল অন্য কারোর হাতে
পকেট থেকে একটা খাম বের করলো আহসান ।সেটা নিয়ে আশফির হাতে দিল
–এই নেও।আমাদের ডিভোর্স পেপার।আমি সাইন করে দিয়ে ছি।নীলি র টা নেওয়ার সুযোগ হয় নি।আজ থেকে আর তোমাদের দুজনের মাঝে কেউ থাকবে না।ভালো থেকো
–তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ দেব জানি না।আমার নীল পরিকে এতোদিন এভাবে আগলে রাখার জন্য নাকি আজকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য
–ধন্যবাদ দিতে হবে না আসি।ভালো থেকো
আহসান পেছনে ফিরে তার পথে চলে যাচ্ছে
–ম্যানেজার সাহেব
নীলি র ডাক শুনে দাঁড়িয়ে গেল আহসান
–আপনার পানজাবি র ডান পকেট এ তো ডিভোর্স পেপার রেখেছিলেন।আপনার বাম পকেট টা একটু দেখবেন তো।কিছু পান কি না
নীলি র কথা শুনে আহসান পিছনে ফিরলো
–ভালো থাকবেন
মুচকি হেসে নীলি বিদায় দিল আহসান কে।আহসান ও একটা শুকনো হাসি দিয়ে গাড়ি র দিকে রওনা দিল।নীলি ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আহসান এর যাওয়ার দিকে
তারপর আশফির থেকে নিজের হাতটা ছারিয়ে নিল
আশফি বলা শুরু করলো
–নীলি আমাকে ক্ষমা করে দেও
–আচ্ছা আশফি গল্প এর শেষ টা যেখানে হয় তার উৎপত্তি কোথা থেকে বলতে পারো
–গল্প এর সূচনাতে, কেন
–কিন্তু আশফি আমার তো সেটা হলো না।আমার তো গল্প এর সমাপ্তি থেকেই শুরুটা হলো
–কি বলছো তুমি
–আচ্ছা মনে পড়ে আশফি তোমার আমার গল্প এর শুরু টা
–হ্যাঁ মনে আছে।রিদয়ে গেথে আছে তোমার আমার প্রেমের গল্প
সেই পাঁচ বছর আগে
যেদিন মাইশা এসে আমাকে বলেছিল
–ভাইয়া আজ কলেজ এর ফাংশন আছে।শেষ হতে হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যাবে।তুই আমাকে নিয়ে আসবি।একা আসতে আমার ভয় করে
চলবে————