#প্রেম_সায়রের_ছন্দপাত
#সাদিয়া_নওরিন
পর্ব—-১৫
সকালের প্রথম সূর্যকিরণ জানালার কাচ ছুঁইয়ে একদম ইরশাদের মুখের ওপর ছেয়ে গেছে। রোদ পড়েছে তার চোখে মুখে।আর এতে হালকা কুঁচকে উঠলোতার ব্রুজোড়া।কিন্তু পরমুহূর্তেই আবারও ব্রু জোড়াকে স্বাভাবিক করে ঘুমে নেতিয়ে পড়লো সে।
মিটমিট চোখে মুগ্ধতা নিয়ে ইরশাদের মুখপানে তাকিয়ে রই আরশী। তাকাতে তাকাতে নেশা লেগে যায় যেন তার চোখে। ভারী হয়ে উঠে তার চোখের পাতাদ্বয়ও।কিন্তু তবুও যেন তৃষ্ণা মিটে না তার! অপলকে চেয়ে রয় সে ইরশাদের মিষ্টি মুখপানে। তৈলাক্ত স্কিন ইরশাদের। পুরো চেহারায় তেল চিটচিটে ভাব হয়ে আছে তার, যা সূর্যের কিরণে চিকচিক করছে। হলদে সূর্য কিরণে নাকের ওপর জমে থাকা ঘামগুলোও মনে হচ্ছে মুক্তোদানার মতো! কপালের একাংশ ঢেকে আছে সিল্কি লম্বা চুলে। আর আলতো ঘাড় কাত করে শুয়ে থাকা ইরশাদকে এখন মনে হচ্ছে একদম প্রিন্সের মতো৷ সে যেন এক সূর্যকুমার, যার পুরো চেহারা সোনালী কিরণে মাখামাখি!
আরশী আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে ইরশাদের মুখের কাছে। আলতো হাতে সরিয়ে দেয় সে ইরশাদের কপালে উপছে পড়া চুলগুলোকে। তারপর গভীর দৃষ্টিতে তাকে একদম কাছ থেকে দেখতে থাকে! ইরশাদের বুকের কাছে খুলে থাকা দুইটি বোতামের পাশ গলিয়ে উঁকি দিচ্ছে তার ফর্সা বুকটি! আরশী কিছুখন ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে রয় সেদিকে! শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে যায় এতে তার!
খনিকপর, আরশী নিজেকে শাসায়। এ কাজ অনৈতিক! একদমই অন্যতিক! কিন্তু চোখগুলো, এ যে বড্ড বেহায়া!তারা যেন আজ তাকে বারবার বলছে,
” বরের বুক দেখছিস,বাইরের পুরুষের তো না।আর কিছুক্ষণ মন ভরে দেখ!”
মুখের ওপর উপড়ে পড়া গরম নিশ্বাসে ঘুম ভাবটা হালকা হয়ে এলো ইরশাদের। আড়মোড়া ভেঙে আদো আদো চোখ খুলে সামনে তাকালো সে! আর সাথে সাথেই হলো তাদের শুভদৃষ্টি! বড় বড় চোখে বিছানো পাপড়ির অদ্ভুত খেলা চলছে আরশীর চেহারায়! তার ছোট নাকটি একদম ইরশাদের ঠোঁটের সামনেই! অপলকে চোখজোড়া মিটমিটিয়ে সামনে তাকিয়ে রইলো ইরশাদ। সকালটা যে এতোটা মিষ্টি হবে তার জিবনে, তা যেন একদমই জানা ছিল না তার!সে ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আরশীর দিকে!
ইরশাদের মোহনীয় দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আরশী আলতো কেঁপে উঠলো! সরে যেতে চায়লো সে ইরশাদ থেকে দূরে। এতে কয়েকগুচ্ছ চুল গড়িয়ে এসে পড়লো তার চোখের একাংশে। আরশী ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দিতে চায়লো তাদের। কিন্তু তারা ও যে বড্ড জেদি!
আচমকা আলতো হাতে আরশীর চুলে হাত দিল ইরশাদ। বড় বড় চোখ করে বিষ্মিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো এতে আরশী! ইরশাদ কিছু হয় নি এমনভাবেই আরশীর চুলগুলো তার কানের পেছনে গুঁজে দিল। তারপর মাথা ঝাঁকিয়ে সামনের দিকে তাকালো।অন্যদিকে এতে লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো আরশী!
ঘুম ভাঙ্গতেই ধরফরিয়ে উঠে বসলো বন্যা। পাশে গায়ের সাথে লাগানো পুরুষালি হাত দেখে চমকে উঠলো সে! হকচকিয়ে কিছু বলার আগেই সাগরের চেহারাটা চোখে পড়লো তার।আর সাথে সাথে নাক ফুলিয়ে, সে লাগিয়ে দিল সাগরের হাতে এক চড়! এতে ধরফরিয়ে উঠে বলে উঠলো সাগর,
—– আরে, চোর চোর.
—– চোর না শালা, তোর জম।
নাক ফুলিয়ে বলল বন্যা। সাগর সেদিকে আদো আদো চোখ খুলে তাকিয়ে বলল
—- ইশ্, বেবি। ইউ আর দ্যা প্রিট্রিএস্ট গার্ল ইন দ্যা ওয়াল্ড।
—– তুই কি দেশি বোতল খাইছিস রে সাগরকলা? মেয়াদ উর্ত্তীন গান্জা সেবন করার আগে আমারে শুধাইলেই তো পারবি। বেটা আহাম্মক
সাগরের নেশা ভাবটা যেন মুহূর্তেই কেটে গেল।সে তাড়াতাড়ি পুরো চোখ খুলে বলে উঠলো,
—– বন্যা। কিরে এতো চ্যাঁতেছিস কেন?
—– তুই আমার পাশে এলি কিভাবে?
—— কালকেই তো তুই ঘুমের ঘোরে হাত ধরে টেনে নিয়ে এলি আমায়।
—- আমিহ্!
বন্যা বিষ্ময়ে থ বনে রইলো। সে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই পাশের অসমঞ্জস্যতা চোখে পড়লো তার। ইরশাদ আরশীর সাথে আর ইরহাম আরেকটি মেয়ের সাথে! সে সেদিকে হা হয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,
—– কিরে কালকে কি জায়গা বদল ঝড় আসছিল!
—- কেন!
—– সামনের সব উল্টোপাল্টা!
সাগর আলতো ব্রু কুঁচকে কিছু বলার জন্য সামনে তাকাতেই সেও অবাক হয়ে গেল! ঠিক তখনই ইরশাদ দাড়িয়ে বলে উঠলো তারা যশোর বেনাপোলে চলে এসেছে।এখানে কাস্টমসের কাজগুলো শেষ করতে নামতে হবে তাদের।সবাই নিজেদের ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়লো। সাগর হাতটি বাড়িয়ে বন্যার ব্যাগটি নিতে চায়লো কিন্তু বন্যা সাফ মানা করে দিল তাকে। সাথে চোখ রাঙ্গিয়ে এইটা ও বলল,
—– আমার হাত আছে। আমি লুলা না।
সাগর হতাশাজনক ভাবে মাথা ঝাঁকালো। মেয়েটা সবসময় মুখে বিচুলিপাতা নিয়ে রাখে কেন বুঝতেই পারে না সে! যখনই মুখ খুলে তার শরীরটা যেন চুলকে উঠে!
গাড়িতে যেই ডিপার্চার ফর্ম দেওয়া হয়েছিল তা পূরণ করে বাকি অনানুষ্ঠানিকতা সারলো তারা।ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করেই পাশে একটি ধাবায় চটপট খাবার খেয়ে ঢুকল তারা৷ খাবার আসতেই তাদের তাড়া দিল ইরশাদ। যাতে তাড়াতাড়ি শেষ করে খাবারদাবার । কিন্তু তিতাস অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে। ইরশাদ সেদিকে না তাকিয়েই খেতে খেতে বলল,
—- বলি ফেল।
—– এতো হুড়াহুড়ি করে খেলে খাবারগুলো পেটের ভেতরেই দাঁড়িয়ে থাকে ইয়ার।আর আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। খুব জ্বালা হয় তখন।
—— তো তুমি ঘুমপাড়ানি গান শুনাতে পারো না৷ ওরা ঘুমিয়ে পড়বে।
ঠোঁট চেপে হাসিটা আটকে বলল তিশা।
কিন্তু ইরশাদ তাদের রসিকতায় একদমই নাক গলাল না। সে গম্ভীরভাবেই বলল,
—– তাই তো বললাম কম খা। কিছুখন পর আমরা কলকাতা শহরে পৌঁছে যাবে।ওখানে নিউমার্কেটের কাছে অনেক হোটেল আছে।ওখানে পেট ভরে খাস। সারাদিন খেলেও কিছু বলবো না তখন তোকে। কিন্তু এখন আর্লি খেতে হবে৷ না হয় বাস রেখে চলে যাবে আমাদের
—– তো বাসটা ছেড়ে দি না।
আয়েস ভাবে দু’হাতে দুপাশে ছড়িয়ে বলল ইরহাম। ইরশাদ সেদিকে তাকিয়ে ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়লো। তারপর বলল,
—– বাস ছাড়লে আমাদের কিছু ভোগান্তি সহ্য করতে হবে।প্রথমত শেয়ার অটোতে নওঁগা পর্যন্ত গিয়ে ট্রেনে করে শিয়ালদাহ যেতে হবে।তারপর আরেকটা অটোতে হোটেলে।
—- তো অটোতে যায়।
—– কচু। এখানে অটোর দালাল অনেক। পরে খরচ নিয়ে ঝামেলা হবে। এমনিতে এখান থেকে ডাইরেক্ট অটোতে ১৬০০ রুপি নিবে। আরো বেশী নিবে কিনা জানা নেই আমার।চায়লে যেতে পারো।
তিতাস ঘোর বিপত্তি জানালো। তার মতে এতো ঝামেলা আর এক্সট্রা খরচ করার চেয়ে সেইম বাসেই উঠা মঙ্গল।তারপর আর কোন কথা বাড়ালো না কেউ৷ ওখান থেকেই তারা সাতটা সিম কিনে নিল নিজেদের জন্য। একেকটা সিম ১৫০ রুপি করে। তবে সিম ওপেন করার পর সবাই একপ্রকার খুশি হয়ে গেল।কারণ ১০০ রুপি টকটাইম পেয়েছে তারা, সাথে দুই জিবি নেট ও ফ্রি। সবাই এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে বাসে চড়ে বসলো।
সবাই বাসে উঠতেই আবার বাস চলতে শুরু করলো তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে৷ যশোর রোড ধরে যাচ্ছে তারা এখন। এখানকার প্রকৃতিও যেন বাংলা মা কে স্বরণ করিয়ে দেয়। বাংলাদেশের প্রকৃতির সেই নির্মল বাতাস এখনো অনুভব করছে তারা এখানকার বাতাসে।মনে হচ্ছে ইন্ডিয়া নয় যেন বাংলাদেশেই আছে তারা
চলবে
(