#প্রেম_সায়রের_ছন্দপাত
#সাদিয়া_নওরিন
পর্ব—– ২৭
—— টেবিলের নিচে কি কুতকুত খেলা চলে?
তিতাস এমন কথায় তটস্থভাবে আরশীর হাত চেপে ধরা ইরশাদের হাতটিতে চিমটি দিয়ে বসলো আরশী। ইরশাদ ব্যাথায় শব্দ করতে গিয়েও চেপে গেল তা। আর এতে মিটিমিটি হাসি দিয়ে তার পানে তাকালো তিশা। ইরশাদ তিশাকে দেখেনি এমন ভান করে দাড়িয়ে পড়লো চেয়ার ছেড়ে। আর এতে খিলখিলিয়ে হেঁসে দিলো তিশা। ইরহাম হঠাৎ উঠে বেরিয়ে গেল রেস্তোরাঁ ছেড়ে৷ আর সেদিকে আড়চোখে তাকালো ইরশাদ। বিষয়টি তাকে অবাক করলেও বুঝতে দিল না সে বিষয়টি কাউকে।
একে একে সবাই উঠে পড়লো খাবার শেষ করে। আর তারপর তারা নিজেদের হোটেলের দিকে রওনা দিল।
গভীর রাত, একফালি চাঁদ উঠেছে গগনে। জোৎস্না ঈষৎ। কামরার গোলাপি পর্দা ভেদ করে প্রবেশ করছে সেই রশ্নি। শিতল বাতাস বহমান কামরাজুড়ে। মোহনীয় পরিবেশের এই শিতলতা যেন মনের মাঝে সৃষ্টি করছে প্রেমের সায়র। সাগরের কৃতকাজের বিপক্ষে বন্যার হৃদয়ে বেড়ে উঠা অসহ্যকর এই অনুভূতি ছটফটানির সৃষ্টি করছে আজ বন্যার কোমল মনে। শেষে মন মস্তিষ্কের যুদ্ধ শেষে উঠে বসলো সে বিছানা ছেড়ে।তারপর শিয়রের কাছে রাখা ফোনটি হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো সে তাদের তিনজনের একসাথে তোলা সব ছবিগুলো।
কয়েকটি ছবিতে তার প্রতি সাগরের বাড়াবাড়ি রকমের ভালোবাসাটা গভীরভাবে প্রকাশ পাচ্ছে! আর বন্যা তা বিস্মিত হয়ে দেখলো। বন্যা আজ অবাক হয়ে আরো লক্ষ্য করলো, সাগরের ভালোবাসা মাখা চক্ষুদ্বয়ের সামনে ইরশাদের মিষ্টি মুখমন্ডলটাও ফিকে লাগছে তার কাছে! আনমনে মুচকি হাসালো বন্যা। আজ তার অনুভব হলো, মরিচিকার পেছনে ছোটাটা কতোটা অন্যেয় হয়েছে তার।
হঠাৎ তার ফোনে সাগরের ম্যাসেজ দেখে অবাক হয়ে গেল বন্যা! খাবার খেয়ে উঠার সময় হুট করেই সবার অলক্ষে তার হাতে সিমটি গুঁজে দিয়েছিল সাগর! আর তারপর বন্যা বিস্মিত হয়ে কিছু বলার আগে আবার হাটা ধরেছিল সে সামনে। বন্যা অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল তার যাওয়ার পানে! কিন্তু সাগর তাকে আরো অবাক করে দিয়ে, পিছন ফিরে বলেছিল সিম টা তার ফোনে ডুকাতে!
সাগরের পাঠানো দ্বিতীয় এসএমএসের শব্দে ঘোর কাটলো বন্যার। সে ম্যাসেজটি ওপেন করতেই দেখলো,
” ঘুমিয়ে পড়েছো?”
” কি রাগ করে রিপ্লাই করছো না। এখনো রেগে আছো আমার ওপর? আসলে তোমাকে এভাবে জোরে স্পর্শ করাটা ঠিক হয় নি আমার। কারো সম্মতি ছাড়া তাকে হুট করে নিজের ইচ্ছামতো স্পর্শ করাটা বেআইনি। সত্যই আমি দুঃখিত”
চোখের কোণে চিকচিক করছে বন্যার আনন্দাশ্রু। সে আলতো হাতে অশ্রুটুকু মুছে লিখলো
——- আগে তো কতোবার স্পর্শ করতে। আজ হঠাৎ এই কথা?
——– উভয়ের মাঝে পার্থক্য আছে।
—- তাই নাকি? দেখি বলো তো শুনি। কেমন পার্থক্য!
—– একই কথা আর কতোবার বলবো। বললাম তো এমনটা আর হবে না। আমাকে ক্ষমা কর।
তড়িৎ লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো বন্যা। তার বড্ড রাগ হলো হঠাৎ
“কেন আর করবে না সে এমন! একশ বার করবে। কোটি বার করবে”
এইসব ভাবতে ভাবতে এবার লিখলো সে,
—– কেন? যা ইচ্ছে তা করবে আর তারপর বলবে কখনো করবো না।তা তো হবে না। একদম আমার চোখের সামনে আসো এখন তুমি।আমি সামনাসামনি মাফ করবো তোমায়।
—– এখন! রাত বারোটা বাজে!
—— তাতে কি। বাইরে আসো। আমি আসছি।
সাগর উঠে দাড়িয়ে ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়লো। নিজের ভাগ্যের ওপর প্রচন্ডমাত্রায় বিরক্ত হলো আজ সে। তার বলা নরমাল একটি কথার শাস্তিও নেহাৎ কম নয় বন্যার কাছে। আর তার ওপর বন্যার হাতে দাগ বসে গেছে এমন ভাবে স্পর্শ করেছে সে আজ! কিকরবে সে? হোটেলে সবার সামনে কি মারবে তাকে! এইসব ভাবতে গিয়ে গা হাত কাঁপতে লাগলো সাগররে!
গুটিগুটি পা ফেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে বন্যা। বুকের ভেতরটা অদ্ভুত ভাবে তোলপাড় করছে আজ তার। গা হাত কেঁপে ঝিম ধরে উঠছে । আর অনুভব হচ্ছে দেহে শিতলতা! সামনে কয়েককদম দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সাগর। কিন্তু তার অনুভব হচ্ছে বহুমাইল দূরে সে! সাগরের একদম কাছে এসে ধরতে চায়লো সে সাগরকে। কিন্তু তার তপ্ত নিঃশ্বাসের সংস্পর্শে চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকালো সাগর। বন্যা লজ্জায় মাথা নুইয়ে চুপটি করে রইলো! সাগর বিস্মিত দৃষ্টি ফেলল তার পানে।তারপর বলল,
—– হঠাৎ এখানে ডাকলে। রাত অনেক হয়েছে, ঘুম পায়নি ?
মাথা নুইয়ে দুপাশে মাথা ঝাঁকালো বন্যা। কন্ঠনালী আজ রুদ্ধ তার। মনে সৃষ্টি প্লাবনে বিক্ষত হচ্ছে তার হৃদয়, আর সে হয়েছে বাকহীন!
সাগর ব্রু কুঁচকে বন্যার দিকে তাকালো।তারপর আবার প্রশ্ন ছুড়লো,
—– কি হলো! কিছু বলছো না যে?
বন্যা চোখ বুঝে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলছে। অস্বাভাবিক গানিতিক হারে হাতের কাঁপুনি বাড়ছে তার! হঠাৎ তার হাতদুটো নিজের হাতের মাঝে নিল সাগর। তারপর গভীর দৃষ্টি ফেলে শীতল স্বরে বলল,
—– কি হয়েছে তোর? এতো কাঁপছিস কেন? শীত করছে? জ্বর ভাব লাগছে?দেখি
মাথায় আর গলায় সাগরের শিতল হাতের স্পর্শে আরো শিহরিত হলো বন্যা। গভীর আবেশে আবিষ্ট হতে লাগলো সে! আর প্রায় আচমকা সাগরের তার গলা থেকে সরিয়ে নেওয়া হাতটি শক্তভাবে চেপে ধরলো সে!
সাগর আজ বিষ্ময়ে থ বনে আছে। বন্যার কোন কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না তার আজ। বন্যার এমন অদ্ভুত ব্যবহার আাশার সঞ্চার করছে তার হৃদয়ে। আর সাথে সৃষ্টি তা সৃষ্টি করছে হৃদয়ে একরাশ ভয়ের! আর তাই সে কাঁপা কন্ঠে বলল,
—– কিরে বল। কি হলো?
—– আমাকে আর তুই বলবে না তুমি । কারো প্রেমের সায়রে ভেসে বেড়ানো মানুষটি বুঝি “তুই” সম্মোধনের মাধ্যমে প্রেমালাপ করে?
চোখ বড় বড় করে বন্যার দিকে তাকালো সাগর। অতিচাপে অকেজো হয়ে গেল যেন তার মস্তিষ্ক হুট করে! সে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠলো,
—- কি বললে?
—- আমি এককথা বারবার বলি না।
লাজুকদৃষ্টিতে মাথা নুইয়ে বলল বন্যা।তারপর দৌড়ে পালাতে চায়লো সে সেখন থেকে। কিন্তু আচমকা তাকে শক্ত করে ধরে খুব জোরে নিজের দিকে টান দিল সাগর। একদম বুকের ওপর উপচে পড়লো এতে বন্যা। লজ্জায় আড়ষ্ট নত হয়ে গেল তার মস্তক। সাগর গভীর আবেগী দৃষ্টিতে তার থুঁতনি ধরে মাথাটি আলতোভাবে তুলে বলল,
—— কিন্তু আমি যে এই বাক্য বারবার শুনতে চায়। মাতাল হতে চায় সেই রিনিঝিনি ছন্দপাতে!
—–তোমাতে হারিয়ে তোমার প্রেম সায়রে বৃষ্টি হয়ে নামবো আমি। আমি চায়, আমার প্রতিটি পদধ্বনি তোমার কর্ণে ছন্দপাতের মতো প্রতিয়মান হবে!
এক ছুটে পালায় বন্যা ছাড়া পেতেই। আর পলকহীন দৃষ্টিতে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয় সাগর। বুকের ভেতরটা প্রশান্তির নির্মল বায়ুতে আবিষ্ট হয়ে আছে যেন সাগরের। সে প্রাণ ভরে শ্বাস নেয়। এই বাতাসে প্রেম প্রেম সুভাস পায় সে! যাতে মন হয়ে উঠে প্রেমময়।
পরের দিন সকাল সাতটায় সবাই বেরিয়ে পড়লো কাশ্মীরের অন্যতম টুরিস্ট স্পট পেহেলগামের উদ্দেশ্যে। যেহেতু তারা হাইচটি আগেই ভাড়া করেছিল সেই হিসেবে তারা সেইম গাড়িতে করেই পেহেলগামের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। পুরো গাড়ি জুড়ে ইরশাদ আরশীর আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল ডুবিয়ে রাখলো। আর কিছু সময় পরপর হুটহাট চুমু দিতে লাগলো সে আরশীর হাতে। আর তার এই কাজে অদ্ভুত আবেশমেশানো ভালোলাগা কাজ করতে লাগলো আরশীর মাঝে। সে মুঁখে লাজুক হাসি ঝুলিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখায় মন দিল।
কিছুদূর পথ অতিক্রম করে হুট করে গাড়ি থেমে গেল। সবাই বিস্মিত হয়ে তাকালো ড্রাইভারের দিকে। কিন্তু পরক্ষণে “ওয়াও ” শব্দ তুলে পাশে তাকাতে বলল তিশা। আর তার স্বরে সবাই তাকালো পাশে। আর সাথে সাথে মুগ্ধতা আবিষ্ট করতে শুরু করলো তাদের হৃদয়!
সারি সারি লাল রঙের ফল ধারণ করে সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে আপেলের অনেকগুলো গাছ। পুরো রাস্তা জুড়ে একের পর এক আপেলের বাগান।যেন আপেলের মেলা। যেকেউ গাছ থেকে নিজের পছন্দের আপেলটি ছিঁড়ে খেতে পারে এখানে।
সবাই হুড়োহুড়ি করে নেমে গেল গাড়ি ছেড়ে। মেয়েরা আপেল খাওয়ার থেকেও, আপেলের সাথে ছবি তোলায় বেশী মন দিল। তামিম সেদিকে তাকিয়ে ফ্রেস একটি আপেলে কামড় বসিয়ে দিল।তারপর মুচকি হেঁসে বলল,
—– ফরমালিন ছাড়া মিষ্টি খাবার। আগে পেটপুজা কর, তারপর না হয় রং করিও।
তিশা প্রতিউত্তরে ভেঙ্চি উপহার দিয়ে, আবার ছবি তোলায় মন দিল।
অন্যদিকে ইরশাদ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরশীর মিষ্টি মুখটির দিকে। গালের দুপাশ কেমন লাল হয়ে আছে তার।আর হাসলে গোলাপি ঠোঁটটি দৃশ্যমান হয়। এতে ইরশাদের দৃষ্টিভ্রম হয় অতিরিক্ত ! ইরশাদ বিরবিরিয়ে সেদিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
” রূপসী আমি ব্যার্থ,
এ সৌন্দর্যের সাথে যে কারো তুলনা করা নিরার্থ।
ললনার সৌন্দর্যে পড়েছে আজ সব সৌন্দর্য ঢাকা,
তোমার সুবাসের কাছে সব সুবাসের তুলনায় বৃথা!
বাগান পেরুতেই তাদের দৃষ্টিতে ধরা দিল এক শুভ্র সৌন্দর্য। লালের পর দৃষ্টি যেন সাদাতেই আঁটকে গেল সবাই! এজন্যই হয়তো ভূস্বর্গ বলা হয় কাষ্মীর নগরীকে। এই বরফে ঢাকা পর্বত, বরফ গলা পানির সেই নদী এ যেন সৌন্দর্যের এক নতুন রুপ। দৃষ্টিতে কেবল পুলক ধরা দেয়এই দৃশ্য। আর ব্যাক্তিমনকে করে তুলে আবেগী! প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শ্রষ্টার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাবোধে আবিষ্ট করে ব্যাক্তি হৃদয়কে। তার সৃষ্টি যে অপরুপ, অতুলনীয়।
পেহেলগাম পৌঁছেই তাদের জনপ্রতি দশ রুপি করে টোল দিতে হলো। এইখানে বাসে ও টেক্সিতে আসা যায়।তবে এই যাতায়ত অতিরিক্ত ব্যায়বহুল আর সময়সাপেক্ষ।
তাদের গাড়ি একটু সামনে এসে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো। সামনে কেবল বিশাল বিশাল পাহাড়। সেদিকে তাকিয়ে নাকমুখ কোঁচকালো বন্যা।আর তারপর বলল
—— এতো দূর এই পাহাড় দেখাইতে আনছোস তোরা আমাদের। এই পাহাড় তো আমার দেশে আরো বেশী আছে।
—— অর্ধেক জেনে লাফাস কেন তুই? ঝিম মারি থাক না। দেখ না সবাই কি বলে।
হুট করেই বলে উঠলো সাগর। আর সাথে সাথে চোখ বুঝে পাশ ফিরে গেল সে। বন্যার অগ্নিদৃষ্টি সহ্য করার মতো ক্ষমতা আপাতত নেই তার কাছে। কিন্তু তাকে ছাড় দিল না বন্যা। বরং উঁচু হিল দিয়ে খুব জোরে চাপা দিল সে তার পায়ের ওপর! “কোৎ” শব্দ করতে গিয়ে নিজেকে শামলে নিল সাগর। আী তারপর দাঁত দিয়ে জিহবা চেপে ব্যাথা নিরাময়ের চেষ্টা করতে লাগলো সে।
তাদের অবস্থা দেখে ঠোঁট চেপে হাসলো ইরহাম তারপর বলল,
—– বাকি পথটা আমরা ঘোড়ার গাড়িতে যাব। বাইসর পর্যন্ত
—- ঘোড়ার গাড়ি!
একসাথে চমকে বলে উঠলো মেয়ে তিনজন। তিতাস সেদিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি কানে আঙ্গুল চেপে বলল,
—– ওফ কানে তালা ধরিয়ে দিলে তোমরা।আমরা থাকবো তো তোমাদের সাথে কিছু হলে তো দেখবই
তার কথায় ইতস্ততভাবে একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল কন্যা ত্রয়। কিন্তু ঘোড়ার কাছে গিয়েই বাঁধলো বিপত্তি। তারা ঘোড়ার গাড়ি নয় বরং ঘোড়ায় চড়ে যাবে নতুন স্পটে! বন্যা সেদিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,
—- আল্লাহ এইটা তো প্লাস্টিকের ঘোড়া না! জ্যান্ত! অরজিনাল।
—— তুই কি ভাবছিলি ফয়েজলেকের “আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরি” বলা ঘোড়াগুলো দিয়ে এতো রাস্তা পাড়ি দেওয়াবে তোকে?
মুখে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বলল ইরশাদ। কিন্তু তার কথার প্রতিউত্তরে আরশী একদম গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে পড়লো তার। তারপর আমাতাআমাতা করে বলল,
——- এতোগুলো পাহাড় পাড়ি দিয়ে নিয়ে যাবে! যদি ফেলে দেয়! চলনা আমরা হেঁটে হেঁটে যায়।
—— মাথা খারাপ! এতো পথ হাঁটা সম্ভব নয়।আর ঘোড়াগুলো শক্তভাবে ধরে বসবে তুমি।ওকে?
পরপর ঢোক গিলে আলতো মাথা নাড়লো বন্যা আর আরশী।
তিতাস পিটপিট চোখ ফেলে তাকিয়ে আছে কেবল ঘোড়ার কালো চোখ গুলোর দিকে। ভয়ে হিম ধরছে তার শরীরে। কিন্তু নিজের দূর্বলতাটা বন্ধুদের সামনে প্রকাশ করলো না সে।বরং একদম চুপ থেকে সামনে পা বাড়ালো সেও
শেষে সাড়ে সাতশ রুপি করে প্রতিটি ঘোড়া দর করে ঘোড়ায় চেপে বসলো সবাই। ইরশাদ আরশীকে যতোসম্ভব মনোবল দিয়ে ঘোড়ার পিঠে তুলে দিল। অন্যদিকে বন্যা ঘোড়ার পিঠে উঠতে উঠতে মিনমিনিয়ে বলল সাগরকে
—— এই ট্রিপে যদি আমি মরে যায়। খবরদার তুমি অন্যমেয়েকে বিয়ে করবা না।
—— তো আমি কি অবিবাহিত বিধবা হয়ে থাকবো?
করুণ কন্ঠে বলল সাগর। আর সাথে সাথেই ধপ করে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো বন্যা। সে দাঁতে দাঁত চেপে নাক ফুলিয়ে বলল,
—– ওহ, তার মানে তুমি দোয়া করছো যাতে আমি মরে যায় তাই না?
—- আরে না না জান
—– চুপ, তোর জান পরাণ তোর বুকের ভেতরই রেখে দে। আমি যদি এই পথ পার হতে পারি, স্পটে পৌঁছেই তোর জান বাইর করে নিব আমি দেখিস। আমাকে ধোঁকা দিতে চাওয়া?
বন্যা নাক ফুলিয়ে ঘোড়া চালানো শুরু করলো। আর হেবলার মতো তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো সাগর। বাতাস কেটে তীব্র বেগে ছুটে চলেছে ঘোড়াগুলো। তাদের স্পিডে যেন বাতাসের গতি!আর দেড় ঘন্টা সময় পর তারা পৌছে গেল তাদের গন্তব্যে।
বাইসরের এই জায়গাটি মিনি সুইজারল্যান্ড হিসেবে সুপরিচিত। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৩০ রুপি।
ভেতরে ডুকতেই সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়ানো পাইনগাছগুলো দৃষ্টি আকর্ষন করলো তাদের। সাথে আছে বিশাল পর্বত যার চূড়ায় বরফের মেলা! আরশী পুলকিত ভাবে দেখতে লাগলো জায়গাটি! অতিসুন্দর এই জায়গাটি হৃদয় হরণ করেছে যেন তাদের! অনেকগুলো ছবি তোলা আর মজা করার মাধ্যমে আরো একঘন্টা সময় অতিক্রম করলো তারা সেখানে। আর তারপর আবার ঘোড়ায় চড়ে ফিরে এলো তারা আগের জায়গায়। জায়গাটির সৌন্দর্য যেন একদম হৃদয়ে গেঁথে রইলো তাদের।
পেহেলগামে পৌছেই তারা একটি হোটেলে রুম বুক করলো। যেহেতু আরো অনেকজায়গা ঘুরাঘুরি বাকি তাদের, তাই এখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিল সবাই। মেয়ে ছেলে আলাদা ভাবেই লিফট চেপে উপরে উঠে এলো আর তারপর নিজ নিজ কক্ষের দিকে পা বাড়ালো।
আচমকা আরশীর কক্ষের দরজার কাছ থেকে আরশীর হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে তাকে এক কর্ণারে নিয়ে এলো ইরশাদ! বিষ্মিত ভাবে ইরশাদের দিকে তাকালো এতে আরশী।
” কি হলো” ইশারায় জিঙ্গেস করার আগেই আরশীর দুগালে লম্বা দুটি চুমু একে দিল ইরশাদ! স্তব্ধ হয়ে ইরশাদের দিকে তাকাতেই ফিসফিসানো মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো ইরশাদ,
—— তোমার ললাটে চুম্বনের বড্ড লোভ আমার সখী, কবে হবে আমার এই স্বপ্ন সত্যি?
স্বর্শকাতুর এই স্বর এফোঁড় ওফোঁড় করে চলল আরশীকে। সে চোখ বুঝে উপভোগ করতে লাগলো এই সময়টি! আর ডুবতে শুরু করলো সে এই সময়ে!
চলবে