#প্রেমময় প্রহর (deewana 2)
Urme prema (sajiana monir)
পর্ব :১৮
পৃথিবী সব চেয়ে সুন্দর অনুভূতি হলো বাবা – মা হওয়া ।প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে এই অনুভূতিটা আর এই সময়টা সর্বোচ্চ ভালোলাগার ।
সায়নের কোলে তার মেয়ে ।সায়ন ছলছল দৃষ্টিতে নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে একদম মায়ের মত হয়েছে সেই চোখ সেই মুখ পুরো মায়ের অবিকল ।
সায়ন এই কথাটা চিন্তা করেই একবার রিদ্ধির দিকে তাকালো অচেতন অবস্থায় বেডে শুয়ে আছে কিছু সময় আগে এই রুমে তাকে শিফ্ট করা হয়েছে ।ডক্টোর বলেছে রিদ্ধি এখন বিপদ মুক্ত তা শুনে সবাই চিন্তা মুক্ত হয় ।
সায়ন ধীরে ধীরে রিদ্ধির পাশে যেয়ে বসে তার কোলে তার নবজাতক শিশুটা ।সায়নের এই অনুভূতিটা প্রথমবারের না এই অনুভূতিটা আদির জন্ম নেওয়ার সময়ও সে অনুভব করছে আর এই অনুভূতিটা তাকে পুরোপুরি পরিবর্তন করে দিয়েছে তাকে তার সংসার জীবনের প্রতি আরো শক্ত মজবুদ করে বেধেঁ দিয়েছিলো !
আজ যেন সেই অনুভূতিটাকে নতুন করে সে অনুভব করছে ।
কেবিনের চার পাশের পর্দা মেলে রাখা তাই রুমটা হালকা অন্ধকার আচ্ছন্ন রিদ্ধির হাতে উপর হাত রাখতেই রিদ্ধি সায়নের হাতের পরশে নড়ে উঠে ।সায়ন আগ্রহের চোখে রিদ্ধির দিকে তাকিয়ে আছে আবছা আবছা চোখে রিদ্ধি চোখ খুলে সায়নকে আর তাদের সন্তানকে দেখে মুখে কোনে হাসি ফুটে উঠে ।রিদ্ধি নিজে উঠে বসতে নেয় তার আগেই সায়ন তাকে থামিয়ে দেয় রিদ্ধিকে আস্তে আস্তে তাকে ধরে বসায় রিদ্ধি হালকা হেলান দিয়ে বসে ।
সায়ন চিন্তিত হয়ে বলে
-“এখন কেমন লাগছে ?”
রিদ্ধি হালকা হাসির রেখা টেনে বলে
-“এখন কিছুটা ভালো লাগছে ।”
সায়ন রিদ্ধির আরো কাছে বসে রিদ্ধি হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে নিজের কপালের সাথে রিদ্ধির কপাল ঠেকিয়ে বলে
-“থ্রেংকিউ এত সুন্দর একটা গিফ্ট দেওয়ার জন্য আমার জীবনটাকে এত সুন্দর করার জন্য ।”
রিদ্ধি উত্তরে নিচের দিকে তাকিয়ে লজ্জা মেশানো মুচকি হাসি হাসে ।সায়ন রিদ্ধির কপালে বেশ কিছু ঠোঁটের স্পর্শ ছুয়িঁয়ে দেয় রিদ্ধি চোখ বন্ধ করে সায়নের ভালোবাসার পরশ গুলো অনুভব করে !
রিদ্ধির জ্ঞান ফিরেছে তা জানতেই সায়রা দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে ভিতরে ডুকে দেখে সায়নের কোলে বাবু ঘুমিয়ে আছে আর সায়ন রিদ্ধির সাথে কথা বলছে সায়রা নিজের এক্সসাইডমেন্ট আর ধরে রাখতে পারেনা দৌড় দিয়ে তার রিদ্ধি দি কে জরিয়ে ধরে অভিন্দন জানায় আর শুরু হয়ে যায় দু বোনের গল্প অন্যদিকে সায়ন আর আরসাল দু বোনকে দেখে হাসছে ।এক এক করে সবাই রুমে এসে রিদ্ধির সাথে দেখা করে যায় ।
সবাই কে সায়রা বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে সে রিদ্ধির সাথে থাকবে বলে ।সায়ন আর সায়রা রিদ্ধির সাথে হসপিটালে আছে ।সায়ন কে রিদ্ধির সাথে রেখে সায়রা ডক্টোরের কাছে যায় চেকআপ করতে আজ কাল তার মাথা কেমন জানো জিমজিম করে মাছের গন্ধ একদম সয্য করতে পারে না কেমন জানো গাঁ গুলিয়ে আসে ।টক জিনিসের প্রতি খুব নেশা হয়ে যাচ্ছে তার ।
তার কাছে মনে হচ্ছে তার মধ্যে নতুন অস্তিত্ব বেড়ে উঠছে তা সিউর না সে তাই প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে যাচ্ছে সে ।আরসালকে এসব কিছু জানায়নি সে জানালে খুব বেশি চিন্তা করবে এসব নিয়ে আগে না হয় সে সিউর হোক তারপর সবাই কে ব্যপারটা জানাবে ।
ডক্টোরের চেম্বারের সামনে বেন্চে বসে আছে সে এর পরের সিরিয়ালই তার ।ফোন সময় দেখছে আর বার বার এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে ।হঠাৎই ডক্টোরের চেম্বার থেকে ৭ মাসের প্রেগনেন্ট একটা মেয়ে বের হয় সায়রার পায়ের সাথে বেজে পড়ে যেতে নেয় সায়রা সাথে সাথে ধরে ফেলে ।সায়রা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখে এই গরমের মধ্যে শরীরে কালো চাদর জড়ানো চোখে বড় বড় সানগ্লাস পড়া ।সায়রা তা দেখে কিছুটা চমকিয়ে যায় ।তারপর নিজেকে সামলিয়ে মেয়েটাকে জিগাসা করে
-“সরি !
আপনি ঠি ক আছেন তো ?”
মেয়েটা যেন সায়রার কথায় বেশ থতমত খেয়ে যায় তোতলাতে তোতলাতে উত্তর দেয়
-“হ্যা আমি ঠি ক আছি ।”
তারপর সায়রার হাত ঝারি দিয়ে ফেলে দ্রুত পায়ে সেখান থেকে চলে যায় ।মেয়েটার এমন ব্যবহারে সায়রা বেশ আশ্চার্য হয় ।
সায়রার কাছে মেয়েটার কন্ঠ কেমন যেন চেনা চেনা লাগছিলো যেন কোথাও শুনেছে কিন্তু কোথায় শুনেছে তা মনে করতে পারছেনা সে !
হঠাৎ নার্স এসে সায়রাকে ডাকতেই সায়রার ধ্যান ফিরে এসব চিন্তা ভাবনা ছেড়ে সে ডক্টোরের চেম্বারে চলে যায় ।
মুন বেশ ব্যস্থ নিজের পড়াশুনা নিয়ে সামনেই টেস্ট এক্সাম আর এখন পর্যন্ত সে কিছুই শেষ করতে পারেনি ।এর মধ্যেই রিদ্ধির বেবী হয়েছে নিজের বোনটার কাছে না যেয়েও সে পারেনা ।সব কিছু মিলিয়ে বেশ চাপে আছে সে ।তার উপর নিজের মনের সাথে প্রতি নিয়তো যুদ্ধ করে যাচ্ছে ।মানুষ যা চায় তা সব সময় পাবে তা হয় না ।অনেক সময় মন এমন কিছু এমন কাউকে চায় যে তার জন্য নিষিদ্ধ হয় ।হ্যা মুনের কাছে নিহাল নিশিদ্ধ মুন যে তার বাবা মাকে কথা দিয়েছে তাদের মন মত তাদের পছন্দের ছেলেকেই সে বিয়ে করবে ।কখনো তাদের উপর কোন প্রকার কথা বলবেনা তাদের সিন্ধান্তকেই মাথা পেতে সে গ্রহন করবে ।
সে ক্ষেত্রে নিহালকে ভালোবাসলে তারা কোন দিন মেনে নিবে না এই ঘটনাটা তাদের ইগোতে আঘাত করবে আর তারা কোন দিন সম্পর্কের জন্য রাজি হবে ।মুনের দেওয়া কথা খেলাফ হবে তা যা মুন কোন ভাবেই চায় না ।তার উপর তার এই প্রেম ভালোবাসা খুব বেশি ভয় লাগে নিজের আসেপাশে বান্ধুবীদের জীবন দেখে তার এই সম্পর্কে একটা বাজে ধারনা হয়ে গেছে তার কাছে প্রেম ভালোবাসাকে ঠক মনে হয় ।সে চায়না এসবের পাল্লায় পড়ে নিজের জীবন শেষ করে দিতে জীবনে কোন দাগ লাগাতে সে মটেও ইচ্ছুক না ।কিন্তু অন্যদিকে তার মন বার বার নিহালের দিকে ছুটে চলে সে না চাইলেও নিহালের কথা তার মাথায় চলে আসে ।নিহালের সামনে গেলে সে যেন পাল্টিয়ে যায় অন্যকোথাও হারিয়ে যায় দিন দুনিয়া সব কিছু ভুলে যায় ।নিজের মধ্যে থাকে তার মধ্যে কাপাঁকাপিঁ শুরু হয়ে যায় ।
প্রতি নিয়তো মন আর মস্তিস্কের মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকে মন বলে নিহালের কাছে ছুটে যেতে আর মস্তিষ্ক বলে তার থেকে দূরে থাকতে ।
এক দোটানায় পড়ে গেছে সে ।
আজ পুরো চারদিন পর রিদ্ধি আর তার সন্তান আজ বাসায় ফিরছে সবাই বেশ হাসি-খুশি ।সায়রা বাড়িতে আগেই চলে এসেছে বাড়ির সাজসজ্জা করার জন্য ।সায়ন রিদ্ধি কে নিয়ে পরে বাড়িতে আসবে ।
সায়রা বেশ দৌড়াদৌড়ি করছে একবার ডেকোরেশনের কাজে সায়রীকে সাহায্য করছে আবার কখনো রান্না ঘরে মুনতাহা বেগম কে সাহায্য করছে ।সায়রার বাড়ির মানুষ সবাই অনেকক্ষন আগেই চলে আসছে সায়রার মা সাবিহা বেগম মেয়েকে মন ভরে দেখছে ।তার মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে সংসার সামলাচ্ছে !
নিজের পরিবার কে আগলে রাখছে একজন পার্ফেক্ট গৃহিনী হওয়ার চেষ্টা করছে ।যেই মেয়েকে খাবার মুখে উঠিয়ে দিতে হতো আজ সেই মেয়ে সংসার সামলাচ্ছে ।উনার ছোট অগোছালো মেয়েটা আজ কতটা গোছালো হয়ে গেছে তা ভাবতে ভাবতেই চোখে খুশির জল চলে আসে ।
হয়তো এটাই জীবন প্রত্যেকটা মেয়েকেই একদিন পরিবর্তন সংসারী হতে হয় এটাই জীবনের নিয়ম !
সায়রা আজ বেশ খুশি কাল রাতেই হাতে রিপোর্ট পেয়েছে আর রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে সায়রা প্রেগনেন্ট ।একটা মেয়ের জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ অনুভূতি হলো তার মা হওয়ার অনুভূতি ।সায়রা কাউকে বিষয়টা জানায় নি শুধু রিদ্ধি জানে ।আর রিদ্ধিকে প্রমিজ করিয়েছে যেন ব্যপারটা কাউকে না জানায় ।সায়রা সবার আগে আরসালকে জানাতে চায় তাকে সারপ্রাইজ দিতে চায় এই মুহূর্তটাকে আরো স্পেশাল করতে সায়রা রুমের বারান্ধায় খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করেছে পুরো রুম খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে ।
আজ তার আরসালকে সবচেয়ে বড় গিফ্ট দিতে চলছে সায়রা ।
কিছুক্ষনের মধ্যেই রিদ্ধি আর সায়ন বাড়িতে চলে আসে তাদের কোলে নতুন অতিথী সায়রা রিদ্ধিকে আসতে দেখেই ছোট অতিথীকে তার কোলে তুলে নিয়ে বেশ কিছু চুমু দিতে শুরু করে আর হেসে হেসে বেবীর সাথে কথা বলতে লাগে তা শুনে সবাই হাসতে শুরু করে কিন্তু সায়রাক সেদিকে কোন খেয়ালই নেই সে নিজের ভাগনীর সাথে কথা বলে যাচ্ছে ।রিদ্ধি বাড়িতে সবার সাথে দেখা করে ফ্রেশ হতে চলে যায় ।
এদিকে সায়রা বেবীকে সামলাচ্ছে ।আর সবার সাথে কথা বলছে ।ড্রইং রুমে সোফায় সবাই একত্রে বসে আড্ডা দিচ্ছে ।কিছুক্ষনের মধ্যেই রিদ্ধি আর সায়ন চলে আসে ।সবাই একত্র বসে ছোট অতিথীর নাম সিলেক্ট করতে শুরু করে ।এক এক জন এক এক নাম বলছে সবাই নিজের পছন্দ মত নাম বলছে ।কারো নামই পছন্দ হচ্ছে না ।এত সময় আদি চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবাইকে দেখছিলো আর সবার কথা শুনছিলো সবার নাম নিয়ে এমন চিল্লাচিল্লি দেখে আদি দু কানে হাত চেপে ধরে চিৎকার করে বলে
-“সবাই চুপপপপপ হও !”
হঠাৎ আদির এমন চিৎকারে সবাই চুপ হয়ে যায় সবাই অবাক চোখে আদির দিকে তাকিয়ে আছে ।
আদি সবাই কে চুপ থাকতে দেখে আদো আদো আওয়াজে বলতে শুরু করে
-“আ..আমার বোনের নাম আ…আমিই রাখবো !
তোমার শু..ধু ঝগড়া কর তোমাদের দ্বারা তা হবে না ।”
আদির কথা শুনে সবাই ঘর কাপিঁয়ে হাসতে শুরু করে তা দেখে আদি মুখ কালো করে ফেলে মুখ ফুলিয়ে বসে পড়ে তা দেখে সায়রা সবাই থামিয়ে বলতে লাগে
-“আপনারা সবাই পচাঁ না বুঝে হাসেন আমার বাবাই তার বোনের নাম রাখবে !”
তারপর সায়রা আদির দিকে তাকিয়ে বলে
-“বলতো বাবাই বেবীর নাম কি রাখা হবে ?”
আদির মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে উঠে সে খুশিতে তারাতারি বলল
-“আমার বোনের নাম আদিবা হবে !
আদির বোন আদিবা ।”
সবাই আদির রাখা নাম শুনে বেশ প্রশংসা করতে লাগে ।
জীবন এমনই কখনো সুখে আবার কখনো দুঃখে ভরা যেই কোন সময় জীবন ঘুরে যায় ।তার মোর পাল্টিয়ে ফেলে ।
কখন কার জীবনে কি অপেক্ষা করছে তা জানেনা ।
যে কোন সময়ই একটা ঝড় সব কিছু উলোট পালোট করে দেয় মানুষকে নিশ্ব করে দেয় ।
সায়রা বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আরসাল এখনো বাড়িতে ফিরে নি সেই সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছে এখনো ফিরেনি ।বিকেলে ফোন দিলে আরসাল জানায় তার ফিরতে দেরী হবে ।বলেই ফোন কেটে দেয় সায়রা আর কথা বাড়ায়নি কিন্তু আরসালের বিকেলের ব্যবহারটা তা বেশ অবাক করে দিয়েছিলো সায়রাকে কিন্তু পরক্ষনেই ব্যস্থতার কারনে এমন করেছে ভেবে তা নিয়ে চিন্তা করা ছেড়ে দেয় ।
এখন শুধু তার ফিরার অপেক্ষা করছে সে ।হঠাৎই ডোর বেল বেজে উঠে সায়রার মন আনন্দে নেচে উঠে কাজের মেয়ে দরজা খুলতে গেলে সায়রা তাকে থামিয়ে নিজেই চলে যায় দরজা খুলতে ।
সায়রার চেহারায় আনন্দের হাসি তার চোখে মুখে খুশি ফুটে উঠেছে ।বড় এক শ্বাস নিয়ে সায়রা দরজার দিকে এগিয়ে যায় ।দরজা খুলে আরসালকে দেখতেই তাকে জরিয়ে ধরতে নেয় হঠাৎ কেউ আরসালের পিছন থেকে বেরিয়ে আসে যা দেখেই সায়রা স্থব্দ হয়ে যায় ।চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তার ।
মুহূর্তেই তার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় ।চোখের সামনে সব যেন কালো হয়ে আসছে তার !
#প্রেমময় প্রহর (deewana 2)
Urme prema (sajiana monir)
পর্ব :১৯
সায়রা চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে আরসালের দিকে তাকিয়ে আছে ঠি ক তার পিছনেই নিহা দাড়িয়ে ।
নিহা নিচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে আরসালের অসহায় দৃষ্টি সায়রার দিকে ।
সায়রা রেগে কান্না করতে করতে বলে
-“আরসাল এই বাজে মেয়ে আপনার সাথে কেন ।
ওকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন এখনি এই মেয়েকে এই বাড়ি থেকে বের করে দিন !”
আরসাল শান্ত স্বরে বলে
-“সায়রা নিহা এখন থেকে এই বাড়িতেই থাকবে ।”
এই কথা শুনে সায়রা আগের তুলনায় আরো বেশি রেগে বলে
-“এখানে থাকবে মানে !
আরসাল আপনি কি পাগল হয়েছেন এই মেয়ে খুব ডেন্জারাস এখানে থাকলে কারো না কারো ক্ষতি করবে আমার কাছ থেকে আপনাকে কেড়ে নিবে ।
আমি আর আপনাকে হারাতে পারবো না এখনি এই মেয়েকে এই বাড়ি থেকে বের করে দিবো ”
কথা গুলো সায়রা বলেই নিহার হাত চেপে ধরে টেনে হিচড়ে গেটের দিকে নিয়ে যেতে লাগে সায়রা যেন নিজের মধ্যে নেই তাকে বেশ অস্বাভাবীক আর অগোছালো লাগছে ।
আরসালকে হারানোর ভয় তাকে এতটা অস্বাভাবীক আর অগোছালো করে দিয়েছে ।
সায়রার এমন পাগলামি দেখে আরসাল তারাতারি করে সায়রাকে আটকায় ।সায়রা আরসালের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর বলছে
-“আরসাল আপনি আমাকে কেন আটকাচ্ছেন আমার হাত ছাড়ুন প্লিজ !
আমি এই মেয়েকে এই বাড়িতে ডুকতে দিব না এই মেয়ে নিশ্চই কোন কুমতলব নিয়ে এসেছে ।”
আরসাল সায়রাকে আটকাতে না পেরে হ্যাচকা টান মারে যা সায়রা সামলাতে না পেরে নিচে পরে যেতে নেয় কিন্তু টেবিল ধরে নিজেকে সামলিয়ে নেয় ।সায়রা আরসালের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ।এ কোন আরসালকে দেখছে সে ?
যে কিনা নেহাকে এক সেকেন্ডের জন্য সয্য করতে পারেনা সেই আরসাল আর এই নেহার জন্যই তার সাথে এমন বিহেভ করছে !
সায়রা বেশ রেগে গেল নিজের হাটের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে আরসালের কাছে যেয়ে জোরে জোরে চিৎকার করতে করতে বলে
-“কি এমন কারন যে আপনি ওর জন্য আমার সাথে এমন ব্যবহার করছেন ?
এই মেয়েকে এই ভাবে প্রটেক্ট করছেন ?
বলুন আমাকে !
কি হলো বলুন “
আরসাল সায়রার কথায় চুপ থাকতে না পেরে রেগে জোরে চিৎকার করে বলে
-“কারনটা হলো ও আমার বাচ্চার মা হতে চলেছে !
শুনেছো তুমি ?”
আরসালের কথাটা সায়রা স্থব্দ করে দিলো সায়রার পুরো দুনিয়া যেন থমকিয়ে যায় ।শরীরের শক্তি যেন নিমিষেই শেষ হয়ে গেল টেবিলটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে নিচে পড়া থেকে আটকায় !
আরসালের চেহারায় স্পষ্ট অপরাধ বোধ কাজ করছে সায়রা নিশব্দে কান্না করছে তার শরীর বেশ দূর্বল হয়ে যাচ্ছে যেন এখনি নিচে পড়ে যাবে।
আরসালের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে কিন্তু পরক্ষনেই নিহাকে দেখতেই তার রাগে শরীরের রক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছে আর তার উপর তো আরসালের এসব কথা আছে যা সায়রার মাথা পুরো বিগড়ে দিয়েছে ।
সায়রা রেগে নিহার কাছে যেয়ে তার হাত মোচড় দিয়ে বাড়ি থেকে টেনে বের করতে নেয় এমন সময় আরসাল রেগে এসে সায়রার গালে জোরে চড় বসিয়ে দেয় ।ঘটনা টা এত তারাতারি যায় যে সবাই থমকিয়ে যায় ।আরসাল ও এমন করতে চায়নি কিন্তু নিহা গর্ভবতী আর এই অবস্থায় সায়রা তার সাথে এমন ব্যবহার করছে তাই আরসাল রেগে সায়রার গালে থাপ্পর বসিয়ে দেয় ।আরসালের নিজের উপর কন্ট্রোল ছিলো না এমন কিছু করে বসবে তার ধরনা ছিলোনা ।
সায়রা আরসালের এমন ব্যবহারে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে ।রিদ্ধি সায়রার কাছে এসে সায়রাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সায়রা সেখান থেকে কান্না করতে করতে দৌড়ে চলে যায় ।আরসালের ভিতরে সব জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে এই প্রথমবার সায়রাকে এতটা আঘাত করেছে সে !
এই মুহূর্তে নিজেকে শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে ।এতসময় বাড়ির মানুষ সবটা দেখছিলো সবাই বাকরুদ্ধ এসবে কি বলবে কি করবে তা তারা বুঝতে পারছেনা ।আরসাল এমন কাজ করেছে তা এখনো কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না ।
সায়রার মা বাবা আর বাড়ির সবাই বেশ রেগে আছে তাদের মেয়ের সাথে এসব কিছু তারা মেনে নিবেনা ।তাদের সামনে তাদের মেয়ের উপর হাত তুলেছে আরসাল তারা বেশ ক্ষেপে আছে ।
সায়রার বাবা মা সিদ্ধান্ত নিলো তাদের মেয়েকে নিজেদের সাথে নিয়ে যাবে আর এক মুগূর্তের জন্যে এই বাড়িতে রাখবেনা ।আর যাই হোক তাদের মেয়েকে তো সতীনের সংসার করতে ফেলে যেতে পারেনা ।
পুরো বাড়িতে মুহূর্তেই উৎসবমুখর সময়টা শোকে পাল্টিয়ে যায় ।সায়রার বাবা মা পরিবারের সবাই বেশ রেগে আছে আরসালের এসব ব্যবহারের জন্য তারা তাদের মেয়েকে কোন ভাবেই এখানে রেখে যাবেনা নিজেদের সাথেই নিয়ে যাবে ।আরসালের বাবা মা তাদের কে শান্ত করার চেষ্টা করছে বোঝাচ্ছে ।অন্যদিকে আরসাল সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে যে সায়রা কে সে কোথাও যেতে দিবেনা সায়রা তার সাথেই এই বাড়িতে থাকবে ।সায়রা তার বউ আর সে নিজের বউ কে কোথাও নিয়ে যেতে দিবেনা ।
এই নিয়ে বাড়িতে খুব বাজে পরিস্থিতী সৃষ্টি হয়েছে আরসালের মা ছেলের রাগ আর জ্বেদ সম্পর্কে জানে তাই কোন রকম সায়রার পরিবারকে এ বলে বাড়িতে পাঠায় যে কাল সকালে সায়রা চাইলে তাকে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিবে ।সবাই কোন মতে রাগটা দমিয়ে সেখান থেকে চলে যায় ।
আরসালের বাবা মা বেশ অবাক ছেলে এমন কাজে তারা বুঝতে পারছেনা কি সত্যি আর কি মিথ্যা ।
কিন্তু তাদের মন বলছে আরসাল এমন কিছু করতে পারেনা ।
বারান্ধার সাজসজ্জা গুলো অগোছালো রুমের সাজসজ্জাগুলোও কেমন অগোছালো হয়ে রয়েছে সায়রা নিজের হাতে যেমন সাজিয়েছে তেমনি নিজের হাতেই সব শেষ করে দিয়েছে ।একটা মেয়ে সব সয্য করতে পারে কিন্তু নিজের স্বামীর সাথে অন্যকোন মেয়েকে কখনোই সয্য করতে পারেনা ।সব মেনে নিতে পারলেও নিজের স্বামীর উপর অন্যকারো অধিকার কোন দিন মেনে নিতে পারেনা !
সায়রা অন্ধকার ঘরে দেয়ালের সাথে হ্যালান দিয়ে বসে আছে চোখ দিয়ে জল পড়ছে বার বার তার শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছে আরসাল ঐ মেয়েটার জন্য তার সাথে কি করে এই সব ব্যবহার করতে পারে !
সায়রার খুব রাগ হচ্ছে চিৎকার করে কান্না করছে এক সময় কান্না করতে করতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে যায় ।
গভীর রাতে আরসাল চাবি দিয়ে দরজা খুলে রুমের ভিতর প্রবেশ করে ।ভীতরে প্রবেশ করতেই তার বুক কেপেঁ উঠে পুরো অন্ধকার রুম তার মনে ভয় ডুকে যায় সায়রা নিজের কোন ক্ষতি করে বসেনী তো আবার ?
তারাতারি করে রুমের লাইটের সুইচের কাছে যেতে নেয় হঠাৎ পায়ে কিছু বারি খেয়ে শব্দ হয় আরসালের বুঝতে বাকি রইলোনা কি হয়েছে ।তারাতারি করে রুমের লাইট অন করে দেখে সায়রা মাটিতে ঘুটিশুটি শুয়ে আছে তা দেখে আরসাল কিছুটা সস্থির নিশ্বাস ছাড়ে ।তারপর আলতো পায়ে সায়রার কাছে এগিয়ে যায় ।সায়রার কাছে বসতেই দেখে সায়রার চোখ এখনো ভেজা ।আরসালের বেশ কষ্ট হচ্ছে সায়রাকে এই অবস্থায় দেখে সে ছোট একটা নিশ্বাস ছাড়ে তারপর সায়রাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দেয় ।
সায়রাকে বিছানায় শুয়িয়ে পুরো রুমটার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় নিচে গোলাপের পাপড়ি পড়ে আছে মোমবাতির কাচের স্টেন্ড গুলো ভেঙ্গে ঘরে ছড়িয়ে আছে দেখে মনে হচ্ছে সায়রা কোন সার্প্রাইজ প্লান করছিলো কিন্তু আরসালের জন্য সব তছনছ হয়ে গেল !
আরসাল রুমের কাচের টুকরো গুলো পরিষ্কার করে লাইট অফ করে সায়রার পাশে শুয়ে পরে ।
ড্রিম লাইটের আলোতে সায়রার শুকনো মুখটা দেখা যাচ্ছে আরসালের বুক ফেটে চিৎকার করে কান্না আসছে কিন্তু তা করতে পারছেনা কারন সে পুরুষ ।
মেয়েরা কষ্ট পেলে কান্না করে তা প্রকাশ করতে পারে কিন্তু পুরুষের জন্য কান্না করা যে নিষিদ্ধ !
পুরুষের চোখে অশ্রু আসলে তাকে পুরো দুনিয়া যে কাপুরুষ বলে ।
কিন্তু তা বলে যে পুরুষের কষ্ট হয়না তা নয় তারা তো আর পাথরের তৈরী নয় তারাও তো মানুষ তাদেরও তো একটা হৃদয় আছে তাদের ও কষ্ট হয় কষ্ট পেলে পুরুষদের চোখেও অশ্রু আসে কিন্তু তা সবার সামনে প্রকাশ করেনা সবার আড়ালে নিজের জল ফেলে !
আরসালের ক্ষেত্রেও তাই দুনিয়ার সামনে কঠোর হলেও তার হৃদয় সায়রার সামনে বরাবরই দূর্বল ।সায়রার কষ্ট যে সে সয্য করতে পারেনা ।তার সায়রা কষ্ট পেলে যে তার পুরো দুনিয়া অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়ে যায় ।
আজ সে নিজের ভালোবাসাকেই আঘাত করেছে আজ তার জন্যই সায়রা আজ তার জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাত পেয়েছে ।
মাঝে মাঝে পরিস্থিতী এত কঠিন হয়ে যায় যে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক কিছু করতে হয় ।নিজের ভালোবাসাকেও আঘাত করতে হয় ।আজ আরসাল পরিস্থীর সামনে সত্যি অসহায় ।
আরসাল সায়রার ঘুমন্ত চেহারার হাজার চুমু তার আঘাত করা গালে একেঁ দেয় তারপর তার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে ।আরসালের চোখ থেকে অশ্রু ঝোড়ছে আর সেই অশ্রুতে বালিশ ভিজছে ।
সকাল ৮ বাজতে চলছে বারান্ধার রকিং চেয়ারে বসে আছে নিহা ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির শয়তানি হাসি হাতে জুসের গ্লাস ।মুখে হাসি থাকবেই না কেন ? সে যা চেয়েছে তাই তো হচ্ছে এত এত বছরের পরিকল্পনা তার সফল হচ্ছে এবাড়িতে তার রাজত্ব চলবে খুব শিঘ্রই এই বাড়ির প্রতিটা লোক তাদের কর্মের ফল পাবে পুরো সংসার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে তার দেওয়া ওয়াদা সে রাখবে সবাইকে শাস্তি দিবে সে ।এসব ভাবতে ভাবতেই আবার শয়তানী হাসি তার চেহারায় ফুটে উঠে !
হঠাৎই সায়ন এসে নিহার গলা চেপে ধরে নিহার শ্বাস আটকিয়ে যায় চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায় ।নিহা ছটফট করছে ছাড়া পাবার জন্য তা দেখে সায়ন ছেড়ে দেয় ।
নিহা বড় বড় শ্বাস নিতে লাগে ।
সায়ন রেগে বলতে শুরু করে
-“রাস্তার মেয়ে আমার বাড়িতে উঠে এসে পড়েছিস ?
আমার জীবন নষ্ট করে তোর মন ভরে নি এখন আমার ভাইয়ের জীবনের পিছনে পড়েছিস ।
আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো কখনো তোকে ভালোবেসে ছিলাম কিন্তু তুই যে এতটা নষ্টা আর লোভী তা আমার জানা ছিলো না ।”
নিহা শব্দ করে হেসে বলে
-“তাই বুঝি সায়ন ?
নিজের বয়সের চেয়ে বড় বয়সের মেয়েকে ভালোবেসেছো তুমি !
আমার তোমার প্রতি কোন দিন কোন রকম ইন্টারেস্ট ছিলোনা আমার টার্গেট সবসময় আরসালের দিকে ছিলো ।তোমার কি আছে এই বাড়ি ঘর প্রোপার্টি সব কিছু তো আরসালের আর আমার তাকেই প্রয়োজন ।সেই রাতে বউয়ের সাথে ঝগড়া করে বউয়ের বিরহে ভালো একটা কাজ করেছো তুমি আমার কাছে এসে ।যদি সে রাতে তুমি আমার কাছে না আসতে তাহলে আজ আমি এখানে কি করে থাকতাম বলো !”
সায়র নিহার চুলের মুঠি ধরে বলতে শুরু করে
-“বাজে লোভী মেয়ে আমার সুযোগ নিয়ে তুই আমার ভাইয়ের জীবনে প্রবেশ করতে চাইছিস তুই ?
তার জীবন নষ্ট করতে চাইছিস !”
নেহা বাকাঁ হেসে বলে
-“সেই সুযোগ তোমার জন্যই পাওয়া সত্যি সায়ন তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ তোমার জন্যই আজ আরসালের এত কাছে আসা ।
(পেটের উপর হাত রেখে )তোমার এই বাচ্চার পরিচয় এখন আরসাল দিবে আর আমি আরসালের বউয়ের পরিচয় পাবো সায়রা বাড়ির বাহিরে থাকবে ।
যদি তুমি তোমার বড় ভাইয়ের সংসার বাচাঁতে চাও তাহলে তোমার সংসার ভাংবে আর তোমার রিদ্ধি এত বড় সত্য নিতে পারবে তো ?
ডাক্টারের কথা মনে আছে তো ?
রিদ্ধি কোন বড় ধরনের আঘাত পেলে মরে যাবে তুমি কি চাও তোমার বউ মরুক আর তোমার ছোট ছোট বাচ্চারা মা হারা হোক ?
যা যে ভাবে চলছে চলতে দেও এতেই সবার মঙ্গল !
কাউকে তো এই বাচ্চার দায় ভার নিতে হবে তোমাদেরই বংশধর আমার পেটের এই সন্তান ।
ছোট ভাইয়ের ফুলের মসুল তো বড় ভাইকে দিতেই হবে তাই তো তোমার ভাই আমাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে এই সন্তানকে পিতৃ পরিচয় দিতে ।”
সায়ন নিহার চুল ছেড়ে রেগে বলল
-“আজ আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছ তুমি , কিন্তু মনে রেখ এর ফল তোমাকে ভোগ করতে হবে আমি যেমন আমার কর্মে ফল ভোগ করছি তেমনি তুমিও ভোগ করবে ।সেরাতে নেশাগ্রস্থ মাতাল অবস্থায় কি হয়েছে আমার মনে নেই কি সত্যি কি মিথ্যা আমার জানা নেই কিন্তু মনে রেখ যদি এসব মিথ্যা আর বানোয়াট হয় তোমার সাথে কি হবে আর আরসাল তোমাকে কি করবে তা তোমার ধারনা নেই তুমি আরসালকে ব্লাকমেইল করে এই বাড়িতে এসেছো এই আরসালই তোমাকে জমের ঘরে চৌদ্দ শিকের পিছনে ফেলবে মনে রেখ !”
বলেই সেখান থেকে রেগে হুরহুর করে চলে যায় সায়নের শেষের কথাগুলো নিহার মনে ভয় তৈরী করে দেয় যা স্পষ্ট তার চোখে মুখে ফুটে উঠে !
সায়রা ঘুম থেকে উঠে ছোট ছোট চোখ করে তাকাতে দেখে আরসাল তার পাশে শুয়ে আছে আরসালের দৃষ্টি একদম তার দিকে পলক ফেলছেনা সে চোখ জোড়া কেমন যেন লাল রং ধারন করেছে ।
আগে হলে সায়রা কিছু জিগাসা করতো সায়রাকে কিন্তু কালকে রাতের ঘটনার পর থেকে সায়রা বেশ শিতল হয়ে গেছে আরসালের দিকে একবার তাকিয়ে সাথে সাথে তার পলক ফিরিয়ে নেয় সেখান থেকে তারপর বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায় !
সায়রার এই চাহনি আরসালের বুকে যেয়ে লাগে চিনচিন যন্ত্রনা হচ্ছে সেখানে ।
আজ আরসাল সত্যি অসহায় সে চাওয়ার পরও কোন সত্যি সে জানাতে পারছেনা সায়রাকে ।
কিছু সময় পূর্বেই সায়রার মা সাবিহা বেগম এসেছেন বাড়িতে ডুকেই কারো সাথে কোন কথা না বলে সোজা নিজের মেয়ের রূমে চলে যায় সে ।
তিনি এই বাড়ির প্রত্যেকের উপর বিষন রেগে আছে বিশেষ করে আরসালের উপর !
আরসালের নামটাও তার কাছে এই মুহূর্তে বিষের মত মনে হচ্ছে হবে নাই বা কেন তার মেয়েকে যে সে ধোকা নিয়ে অন্য মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে ।
সাবিহা বেগম রুমে প্রবেশ করতে দেখে সায়রা উদাসীন মনে বিছানা গুছাচ্ছে সাবিহা বেগমের মেয়ের এমন উদাসীন চেহারা দেখে চোখ ভরে আসে ।তিনি ভিতরে প্রবেশ করেই বলতে শুরু করে
-“সায়রা এখনি তৈরী হয়ে নেও তুমি আমার সাথে বাড়িতে যাবে এই নরকে আর এক মূহুর্তের জন্যও তোমাকে থাকতে হবেনা ।
আমি তোমাকে নিতে এসেছি তৈরী হও !”
সায়রা মায়ের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ে এ কি বলছে তার মা !
সায়রার মা আবার বলতে শুরু করে
-“আমার এই বিয়েতে প্রথম থেকেই মত ছিলনা আমি জানতাম তুমি সুখি হবেনা এই ছেলের সাথে ।
সায়রা আমরা মধ্যবিত্ত সাধারন লোক হতে পারি কিন্তু নিজেদের মেয়েকে রাখার মত ক্ষমতা আমাদের আছে তোমাকে আর এক মুহূর্ত এই নরক যন্ত্রনায় থাকতে দিবোনা !
থাকতে হবেনা ঐ বেঈমানের সঙ্গে ।
তারাতারি রেডি হয়ে নেও তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি !”
সায়রা নিচু কন্ঠে বলে
-“ মা আমি কোথাও যাবোনা !”
সায়রার রেগে বলে
-“কি বলছো সায়রা ?”
-“হ্যা মা তুমি যা শুনছো তাই !
আমি কেন এই বাড়ি ছেড়ে যাবো আমি আরসালের বৈধ স্ত্রী এটা আমার বাড়ি আমার ঘর আমার বর আর আমি আমার স্বামীকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা ।
হ্যা এটা সত্যি আমি আরসালের উপর রেগে আছি অনেক বেশি রেগে আছি তাই বলে কি আমি তাকে ছেড়ে চলে যাবো ?
মা আমি আমার আরসালকে চিনি এইসবের পিছনে কোন কারন আছে যার জন্য এসব করছে আরসাল ।তার চোখে আমি অসহায়ত্ব দেখেছি মা ।
সে বাদ্ধ হয়ে এসব করছে কিছু তো আছে যা আরসাল লোকাচ্ছে ।
আরসাল কোন বিপদে আছে আর আমি তাকে এই বিপদের মধ্যে ফেলে কোন ভাবেই যাবোনা !
আর রইলো কালকের তার করা ব্যবহার ? তার জন্য আমি আরসালকে ক্ষমা করবোনা তাই বলে তাকে ছেড়ে ও যাবোনা !
আর মা তুমিই তো বলতে যে বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িই মেয়েদের নিজ বাড়ি তারাই আপনজন আমি আমার বাড়ি আপনজন আর স্বামীকে বিপদে রেখে কি করে পালাতে পারি ?
ঐ মেয়ে সুবিধার না মা নিশ্চিত কোন কুমতলবে এসেছে আর আমার বিশ্বাস এই বাচ্চাও আরসালের না সত্যিটা কি আমাকে জানতে হবে ।”
সাবিহা বেগম ছলছল দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে মনে মনে ভাবছে “আজ তার মেয়েটা সত্যি খুব বড় হয়ে গেছে তার পরিবারের ঢাল হতে শিখে গেছে ।
চলবে…….❤️