#বর্ষণের সেই রাতে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ২১
.
গাড়িতে মাথা নিচু করে বসে আছে অনিমা। আর আদ্রিয়ান চুপ করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে চলেছে ওকে। অনিমার ব্রেক টাইমে ওর অফিসে ঢুকে সবার সামনেই হাত ধরে টেনে নিয়ে এসছে ওকে। মেয়েটার চুপ থাকা সহ্য হচ্ছেনা ওর আর, আদ্রিয়ান এবার ধমকের সুরে বলল
— ” আমি অনেকক্ষণ যাবত তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি উত্তর দাও।”
অনিমা নিচু কন্ঠে বলল
— ” আমিতো বলেছি আমার কিচ্ছু হয়নি আমি ঠিক আছি।”
আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল
— ” দেখো ডোন্ট ওয়ান্ট টু বি ওভার স্মার্ট ওকে? এ কয়দিনে খুব ভালোকরে চিনেছি আমি তোমাকে। কিছুতো হয়েছে সেটা আমি নিশ্চিত, কিন্তু সেটা কী? ”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল
— ” আপনি ভূল ভাবছেন। আসলে দুদিন ধরে আব্বুর কথা একটু মনে পরছে তাই আরকি।”
আদ্রিয়ান চোখ ছোট ছোট করে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— ” আই সেইড ডোন্ট ওয়ান্ট টু বি ওভার স্মার্ট।”
অনিমা এবার মাথা নিচু করে বসে আছে। আদ্রিয়ান একটা ছোট্ট শ্বাস ছেড়ে বলল
— ” শোনো আজ রাতে আমার শো আছে তাই ফোন সাইলেন্ট থাকবে, দরকার হলে একটা মিসডকল দিয়ে রেখো আমি ব্যাক করব।”
অনিমা মাথা নেড়ে গাড়ি থেকে নামতে গেলেই আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে বলল
— “কিছু বললেনা খুব ভালো কথা। কিন্তু এরপর যদি তোমার কোনো ক্ষতি বা বিপদ হয়, আই উইল নট স্পেয়ার ইউ, মাইন্ড ইট।”
এটুকু বলে হাত ছেড়ে দিলো আদ্রিয়ান অনিমা নামতেই ও গাড়ি স্টার্ট করে চলে গেলো। আর অনিমা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ওর যাওয়ার দিকে। আর মনে মনে বলল আই এম সরি আদ্রিয়ান, কিন্তু আমাকে এটা করতেই হলো আপনার ভালোর জন্যে।
____________
এদিকে রিকের ফার্মহাউজে বসে ভাঙা হাত নিয়ে রিকের আসার অপেক্ষা করছে অর্ক। আসলে গতকাল সন্ধ্যায় কয়েকজন লোক এসে ওকে মেরে ওর ডান হাত ভেঙে দিয়ে গেছে আর একটা হুমকি চিঠিও ধরিয়ে দিয়ে গেছে। এখন ওর মনে একটা কথাই চলছে কার লোকেরা এসে ওর হাতটা ভেঙে দিয়ে গেলো, আর হুমকি চিঠি দিয়ে গেলো ? রিকের লোক? কিন্তু রিক তো কোলকাতা ছিলো একটু আগে বাংলাদেশে ল্যান্ড করল। অনিমার সাথে ও কেমন বিহেভ করে সেটাতে রিক জানেনা, তাহলে? এসব ভাবতে ভাবতেই রিক চলে এলো। রিককে দেখেই অর্ক দাড়িয়ে গেলো। রিক অর্কর ভাঙা হাতের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
— ” তোমার হাতের এই অবস্হা কে করল?”
অর্ক বুঝতে পারলো যে রিক এসব করেনি তাহলে কে করল? তবুও সিউর হতে বলল
— ” আসলে পরে গেছিলাম বাথরুমে। আচ্ছা আপনি কী আমায় কোনো চিঠি দিয়েছেন?”
রিক বসে বিরক্ত হয়ে বলল
— ” ফোন, ম্যাসেজের এতো সিস্টেম থাকতে আমি চিঠি দেবো কোন দুঃখে, তাও তোমাকে?”
অর্ক এবার সিউর হলো যে রিক এসব করায়নি। রিক গম্ভীর কন্ঠে বলল
— ” কী বলতে এসছো সেটা বলো?”
— ” আপনাকে একটা খবর দেবার আছে, মানে অনিমার খবর পেয়ে গেছি।”
রিক হেসে দিলো অর্কর কথায়। রিকের হাসি দেখে অর্ক অবাক হলো। হাসি থামিয়ে রিক বলল
— ” অনিমার খোজ আরো পাঁচ দিন আগেই পেয়েছি। কী করছে, কোথায় করছে, কীভাবে করছে সব খবর আছে আমার কাছে। আর আজকেই আমি যাচ্ছি ওকে অানতে। নতুন কিছু বলার থাকলে বলো নইলে যাও।”
অর্ক একটু নিরাশ হলো, কোথায় ভাবলো যে এই খবর দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতাবে সেটা আর হলোনা। রিক বুঝলো অর্ক আর কিছু বলবেনা তাই উঠে বেড়িয়ে গেলো।
অর্ক সেই চিঠিটা বের করে ভাবলো কে হতে পারে? রিকের চেয়েও ভয়ংকর আদোও কেউ আছে? যে এমন হাড় হিম করা হুমকি দিতে পারে? চিঠিতা খুলে আরেকবার পরলো অর্ক তাতে লেখা আছে
” ইচ্ছেতো করছে তোর গলা কেটে দেই। কিন্তু আমার জানতে পারা এটা তোর প্রথম ভূল তাই শুধু হাতটা ভাঙলাম। ওর হাতে যতোটা না লেগেছে তার থেকে একশগুন বেশি আমার বুকে লেগেছে। এরপর ওর গায়ে হাত দেওয়াতো দূর ওর দিকে তাকালে শুধু চোখ দুটো উপড়াবো তাইনা তোর শরীরের একটা রগও অক্ষত থাকবেনা, আই প্রমিস।”
লেখাটা পরে বড়সর একটা ঢোক গিলল অর্ক। আর ভাবতে লাগল কে এই অজ্ঞাত ভয়ংকর ব্যাক্তি?
_____________
অনিমা ডেস্কে গিয়ে বসতে না বসতেই তীব্র বলল
— ” কীরে কী হয়েছে? ভাইয়া তোকে এভাবে টেনে নিয়ে গেলো কেনো?”
অনিমা একটা শ্বাস নিয়ে বলল
— ” আমার কী হয়েছে সেটা জানতে।”
অরুমিতা হতাশ কন্ঠে বলল
— ” সেটাতো আমরাও জানতে চাইছি। কী হয়েছে তোর?”
হঠাৎই তীব্র কিছু একটা ভেবে বলল
— ” এই এক মিনিট? পেপারে তোর ছবি ছেপেছে, তারমানে রিক তোর খোজ পেয়ে যাবে বা গেছে! এইজন্যেই তুই এতো আপসেট? সিট আগে কেনো মাথায় আসেনি?”
অনিমা ছলছলে চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল
— ” কালকে অর্ক ভাইয়াও এসছিলো।”
অরুমিতা অবাক হয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— “কী ওই জানোয়ারটা মানে তোর মামাতো ভাই এসছিলো? এইজন্যেই তোর চোখমুখ এমন ছিলো?”
তীব্র ডেস্কে একটা পাঞ্চ মেরে বলল
— ” এরা কী চায়টা কী? একটা মেয়ের জীবণকে নরক বানিয়ে রেখেছে।”
অরুমিতা অনিমার কাধে হাত রেখে বলল
— ” এডি কে বলেছিস কিছু?”
অনিমা মাথা নাড়ল। অরুমিতা রেগে গিয়ে বলল
— ” সমস্যা কী তোর বলতো? কী শুরু করেছিস তুই? ওনাকে সবটা বললেও তো উনি কিছু একটা করতে পারবেন, এভাবে চুপ করে থাকার মানে কী? কী পেয়েছিস কী তুই? কেনো করছিস এসব?”
অনিমা এবার চেচিয়ে বলে উঠল
— ” কারণ আমার খুজ সখ হয়েছে ঐ রিকের কাছে যাওয়ার, দিনরাত ওর টার্চার সহ্য করার। সেইজন্যেই করছি এসব। হয়েছে?”
বলেই কেদে দিলো অনিমা তীব্র উঠে গিয়ে ওকে একহাতে জরিয়ে ধরল। অনিমা কাদতে কাদতেই বলল
— ” হতে পারিনি আমি এতোটা স্বার্থপর। কারণ আমি চিনি আদ্রিয়ান কে। এসব শুনলে ও চুপ থাকবে না। রঞ্জিত চৌধুরী, রিক চৌধুরীর সাথে লড়তে নেমে যাবে। ঢাল হয়ে দাড়াবে আমার সামনে। কিন্তু আমিতো জানি ওই রঞ্জিত চৌধুরীরা কতো ভয়ংকর, কতোটা নৃশংস। আদ্রিয়ান ওদের মতো ক্রিমিনাল নয়, আর না এসব খুনখারাপিতে থাকে। তাহলে কীকরে লড়বে ওদের সাথে? যদি রিক আমাকে ধরেও নেয় তো আমি ওকে বুঝিয়ে দেবো যে আদ্রিয়ানের সাথে আমার তেমন কিছুই নেই, ওকে যাতে কিছু না করে, তার বিনিময়ে যদি আমায় সারাজীবণ রিকের কাছে থাকতে হয় থাকবো আমি, তাহলে রিক ঠিক শুনবে আমার কথা এটুকু জানি আমি। কিন্তু আদ্রিয়ান নিজে এসবে জরালে ওকে ছাড়বেনা ওরা। আমি নিজের চোখে আমার আব্বুর মৃত্যু দেখেছি, আদ্রিয়ানের মৃত্যু দেখতে পারবোনা। পারবোনা আমি।”
বলেই আরো জোরে কাদতে লাগল। এবার অরুমিতাও এসে জরিয়ে ধরল ওকে। এইরকম একটা মেয়েকে কেউ এতো কষ্ট কীকরে দিতে পারে সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা অরুমিতা আর তীব্র
_____________
রাতে অনিমা ফ্লাটে এসে দরজা খুলতে গিয়ে দেখলো দরজাটা খোলা এতে বেশ অনেকটাই অবাক হলো ও। ওতো দরজাটা তালা লাগিয়ে গেছিলো খুললো কে? অনিমার আস্তে করে দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকলো, লাইট অফ তাই সব অন্ধকার, ভেতরে ঢোকার পর কয়েক কদম এগোতেই দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ হয়ে গেলো। অনিমা চমকে পেছনে তাকালো তাড়াতাড়ি দরজার কাছে গিয়ে দেখলো দরজাটা বন্ধ, ভয়ে ওর আত্না শুকিয়ে আসছে। কে? দরজাটা কে বন্ধ করলো? ও দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল
— ” হ্যালো? দরজাটা কে বন্ধ করলেন? দেখুন এটা ভালো হচ্ছেনা কিন্তু। খুলুন দরজা। আজব তো এসব কেমন মজা? দরজা খুলুন।”
কিন্তু কারো কোনো সারা না পেয়ে ভয় পেয়ে গেলো ও। কে এমন করল? হঠাৎ করেই রুমে লাইট জ্বলে উঠলো, অনিমা পেছনে ঘোরার আগেই কেউ বলে উঠল
— “কেমন আছো বেইবি?”
কন্ঠটা শোনার সাথে সাথেই অনিমা শিউরে উঠলো, ওর শরীরের রক্ত যেনো হিম হয়ে আসছে, পেছনে তাকিয়ে দেখার মতো সাহস হচ্ছেনা ওর। ও এসে গেছে? এখানে পৌছে গেছে ও? নাহ নিশ্চই কোনো স্বপ্ন দেখছে ও, এটা হতেই পারেনা। এক্ষুনি ওর স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে, কিন্তু এই স্বপ্ন ভাঙছে না কেনো? ও আর পারছেনা এই স্বপ্ন সহ্য করতে। এসব ভাবতে ভাবতেই পেছন থেকে আবার আওয়াজ এলো
— ” কী হলো আমার মুখটা কী এতোই বাজে যে পেছন ঘুরে দেখতেও চাইছোনা?”
অনিমা হালকা কেপে উঠল, তারপর ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকালো। আর পেছনে তাকিয়েই অনিমা চমকে গেলো। কারণ রিক সিংগেল সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে, ওর মুখে বাকা হাসি। অনিমার হাত পা কাপঁতে শুরু করল, ওর পুরো শরীর যেনো জমে গেছে, নরার সামান্য শক্তিও পাচ্ছেনি এইমুহুর্তে ওর। তিনবছর পর আবার এই লোকটার সম্মখিন হলো ও। রিক আস্তে করে উঠে এগোতে লাগল অনিমার দিকে, অনিমা নিজের অজান্তেই পিছিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। রিক অনিমার দিকে এগোতে এগোতে বলল
— ” তুমি পিছিয়ে যাচ্ছো কেনো? কতোদিন পর দেখা হলো আমাদের কোথায় ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করবে তা না।”
রিকের এই ঠান্ডা গলাও অনিমার কাছে খুব ভয়ংকর লাগছে, ওর শ্বাস আটকে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে কেউ ওর শ্বাসনালী কেটে দিয়েছে। ও কয়েক কদম পিছিয়েই ছুটে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করতে লাগল আর চেচাতে শুরু করলো। রিক হাত ভাজ করে দেখছে অনিমাকে, অনিমার এই প্যানিক হয়ে যাওয়াটা বেশ ইনজয় করছে ও। মেয়েটা এখনও একি রকম ভয় পায় ওকে। আর ওর এই ভয় পাওয়াটা রিক কে অদ্ভুত শান্তি দেয়। অনেক্ষণ দরজা ধাক্কিয়ে কারো কোনো সারা না পেয়ে অনিমা আস্তে আস্তে পেছনে তাকালো, রিককে ওর দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ও ভয়ে দরজার সাথে লেগে দাড়িয়ে রইলো। রিক এসে অনিমার পাশ দিয়ে দরজায় হাত রেখে বলল
— ” বাইরে আমার লোক দাড়িয়ে আছে, আমি বলার আগে ওরা দরজা খুলবে না।” অনিমা অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো রিকের দিকে। গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না এখন। রিক মুখে হাসি রেখেই বলল
— ” কী ভাবছো? কেনো তাইতো? আসলে তোমার সাথে অনেক কথা আছে আমার, কেও যাতে ডিসটার্ব করতে না পারে সেইজন্যেই এই অবস্হা। ”
অনিমা এখোনো ভীত চোখে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। রিকের এই শান্ত কন্ঠের সাথে পরিচিত ও, এর আগে রিক যতোবার ওর সাথে শান্ত কন্ঠে কথা বলেছে, ঠিক তার পরেই ওর ওপর দিয়ে ভয়ংকর কিছু গেছে। রিক অনিমাকে ধরতে গেলেই অনিমা রিককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে ওর রুমের দিকে যেতে নিলো কিন্তু তার আগেই রিক ওর হাত ধরে ফেলল, তারপর নিজের দিকে টেনে ওর দুই বাহু ধরে বলল
— ” কী করছো বলোতো? আমি কোথায় তোমার সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলতে চাইছি আর তুমি ছোটাছুটি করেই যাচ্ছো।”
অনিমা এবার ভয়ে কেদে দিলো, ভয়ে নিজেকে রিকের কাছ থেকে সরিয়ে নিতে চাইছে কিন্তু রিক ছাড়ছেনা। অনিমার কান্না দেখে রিক বলল
— ” আরে বাবা এভাবে ভয় কেনো পাচ্ছো? আমিকি মেরেছি তোমাকে? আর ভয় পাওয়ার নাটক কেনো করছো? তুমিতো এখন খুব সাহসী হয়ে গেছো তাইনা? আমাকে এখন আর তুমি ভয় পাও নাকি? আমার কাছ থেকে পালিয়েছো দেখো কী সুন্দর করে চোখে কাজল দিয়েছো, নিজের বার্থডে সেলিব্রেট করছো তাও অন্য ছেলের সাথে, তারওপর তাকে জরিয়ে ধরছো।”
এটুকু হাসি মুখে বললেও এরপরেই রিকের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো, চোখ লাল হয়ে উঠল, মুখে আবার সেই হিংস্রতা ফুটে উঠেছে। রিককে এভাবে দেখে অনিমা কেপে উঠলো। রিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল
— “যদি সত্যিই আমাকে ভয় পেতে এসব করতে পারতে? বলো পারতে? ”
এটুকু বলে ওকে ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলে দিলো। অনিমা সোফার কর্ণারে পেটে বারি খেয়ে সোফায় পরলো, যার ফলসরূপ পেটের সাইডে বেশ ব্যাথা পেলো ও। অনিমা পেট চেপে ধরে কান্নাজরিত চোখে রিকের দিকে তাকালো। কিন্তু রিকের একটুও মায়া হলোনা। রিক এসে অনিমার পাশ দিয়ে সোফার ওপর এক পা রেখে আরেক হাত দিয়ে ওর গাল চেপে ধরে বলল
— ” খুব সাহস হয়ে গেছে তাইনা? একবারো মাথায় আসেনি আমি জানতে পারলে কী করবো? কে দিলো এতো সাহস ঐ রকস্টার?”
অনিমা নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে, তবুও হিচকি উঠে গেছে ওর। রিক ওর গাল ছাড়তেই ও সোফার ওপর দু পা উঠিয়ে একটু গুটিয়ে বসে অস্ফুট স্বরে বলল
— ” প্লিজ ছেড়ে দিন আমাকে।”
রিক হেসে দিলো অনিমার কথায় তারপর অনিমার দিকে হালকা ঝুকে বলল
— “তোমাকে যদি ছাড়ারি হতো তাহলে পাঁচ বছর আগেই ছেড়ে দিতাম। আমার নজর একবার যেই জিনিসের ওপর পরে সেটা আমি নিজের করেই ছাড়ি।”
— ” আমি কোনো জিনিস নই।”
রিক ধমক দিয়ে বলল
— ” ওই একদম মুখে মুখে কথা না ওকে? বেশি কথা বললে কথা বলার অবস্হাতেই রাখবোনা তোমাকে।”
অনিমা বুঝতে পারছে রিকের হাত থেকে আজ ওর নিস্তার নেই। নাহ ও যাবেনা এই লোকটার সাথে, কিছুতেই না। ওকে যেভাবেই হোক বাঁচতেই হবে। অনিমা ওর শরীরের সব শক্তি দিয়ে রিককে ধাক্কা দিলো। রিক ভাবতেও পারেনি অনিমা এই মুহূর্তে এটা করবে, প্রস্তুতি একেবারেই না থাকায় এই ধাক্কায় নিচে পরে গেলো রিক। অনিমা দৌড়ে ওর রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো। দরজার দিকে তাকিয়ে পেছাতে পেছাতে খাটে ধপ করে বসে পরল শব্দ করে কেদে দিলো ও। এদিকে রিক উঠেই দরজা জোরে ধাক্কানো শুরু করলো, রিকের মেজাজ অতিরিক্ত মাত্রায় খারাপ হয়ে আছে। এই মেয়ের এতো সাহস কীকরে হয়? ওকে ধাক্কা মারে তার ওপর দরজাও লক করে রেখেছে? রিক রাগে গজগজ করে বলল
— ” অনিমা দরজা খোলো। ভালো হচ্ছেনা কিন্তু খোলো দরজা। খোলো! নইলে তোমার কপালে কী আছে তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা। ওপেন দা ডোর।”
রিকের কথা আর দরজায় বারি পরার আওয়াজে ভয়ে বারবার কেপে উঠছে অনিমা, বেডের ওপর গুটিসুটি মেরে বসে ফুপিয়ে কেদে চলেছে। কী করবে ও এখন? রিক ক্রমাগত দরজায় বাড়ি মেরেই যাচ্ছে আর নানারকম হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। অনিমার মাথা কাজ করছেনা, ভয়ে জমে যাচ্ছে, হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান এর কথা মনে পরল, ওকে ফোন করবে? কিছু না ভেবেই কাধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে ফোনটা বের করল অনিমা। বারবার কল দেওয়ার পরেও আদ্রিয়ান ফোনটা রিসিভ করছেনা, এদিকে রিক দরজায় আঘাত করেই চলেছে। অনিমা ভাবছে আদ্রিয়ান ফোনটা ধরছেনা কেনো? এমনিতে তো কল করতে না করতেই ফোনটা রিসিভ করে ফেলে আজ কী হয়েছে? তারপর ওর মনে পরলো যে আদ্রিয়ান বলেছিলো আজ ওর শো আছে। এটা মনে পরতেই অনিমা ফোনটা খাটে ছুড়ে ফেলে ফ্লোরে বসে পরলো।
এদিকে আদ্রিয়ান স্টেজে দাড়িয়ে শো করছে। কিছুক্ষণ পরেই শো শেষ হবে, ওর পার্সোনাল ফোন ওর প্যান্টের পকেটে বারবার ভাইবারেট হচ্ছে কিন্তু স্টেজে চলতি গান ছেড়ে ও ফোন পিক করতে পারছেনা। কিন্তু ওর কেমন একটা ফিল হচ্ছে, ভেতরটা অস্হির লাগছে। বারবার মন বলছে ওর গানটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ করা দরকার, খুব দরকার কিন্তু কেনো এমন মনে হচ্ছে আদ্রিয়ান জানেনা।
রিক দরজায় জোরে একটা বারি দিয়ে বলল
— ” অনিমা ফর লাস্ট টাইম বলছি ভালোয় ভালোয় দরজা খোলো, তোমার ফ্লাটের মেইনডোর খুলতে পেরেছি এটা খোলা বড় ব্যাপার হবেনা আমার কাছে, দরজা খোলো।”
অনিমা কাদতে কাদতে চিৎকার করে বলল
— ” প্লিজ চলে যান, প্লিজ! আমি যেতে চাইনা আপনার সাথে, দয়া করুন আমায়।”
এই কথাগুলো রিকের রাগ আরো বাড়িয়ে দিলো, রিক রেগে গিয়ে বলল
— ” এভাবে শুনবে না তুমি তাইনা? ঠিকাছে নাও জাস্ট ওয়েট। ”
কিছুক্ষণ পর একটু অন্যরকম শব্দ হতে লাগল দরজায় ভয়ে অনিমার পুরো শরীর কাপছে, ফ্লোরে হাটু গুটিয়ে বসে কেদে চলেছে ও। ওর মনে হলো আদ্রিয়ানকে একটা মেসেজ করা উচিত, ও উঠতে নেবে হঠাৎ ফোন বেজে উঠল, আদ্রিয়ান হ্যা নিশ্চই আদ্রিয়ানই ফোন করেছে, একটু আশার আলো দেখলো অনিমা, উঠে তাড়াতাড়ি ফোন ধরবে তার আগেই ধরাম করে দরজাটা খুলে গেলো।
.
#চলবে…
.
(