#বর্ষনের_শেষে
পর্বঃ৫
#সাদিয়া_চৌধুরী_তাহমিনা
পুরো সন্ধা থেকে রাত পর্যন্ত ভাবনায় বিভোর ছিলো অরিন।তারিন আর তারেক কি তার সাথে মজা করছে।এই উপহার গুলো কি তারাই দিচ্ছে।তবে নাম্বার?সেই নাম্বার টা কার।এসব ভাবনাকে পাশে ফেলে ফোন হাতে নিলো সে।নাম্বারটায় ডায়াল করলে আবারও বন্ধ পেল।তাই ফোন রেখে তারিনের রুমের দিকে হাটা ধরলো।তারিনের রুমে অনেকেই আছেন।তারিন সহ সবাই মিলে বরের কাপড় প্যাকিং করছেন।কাল সকালেই সব তারেকদের বাসায় চলে যাবে।অরিনকে দেখে অরিনের ছোট চাচি বললেন
“কিরে অরিন এসেছিস। দেখতো মা প্যাকিং ঠিক ঠাক হচ্ছে কিনা”
মুচকি হেসে অরিন বিছানার উপরে থাকা সব কিছু দেখছে।তখন তারিন বললো
“আপু আমরা যে তোর পক্ষ থেকে দুলাভাইকে একটা থাল পাঠাচ্ছি অইটা তুই প্যাক কর ভালো হবে”
তারিনের মুখপানে তাকিয়ে আছে অরিন।একবার মনে হয় তারিন আর তারেক কিছু একটা করছে কিন্তু পরে তাদের কথা বার্তায় তা মনে হয় না।সে কী তারিনকে জিজ্ঞেস করবে।কী করবে ভাবতে পারছে না।অরিনের কোন রেসপন্স না পেয়ে তারিন বললো
“কিরে আপু কি ভাবছিস”
“নাহ কিছু না এমনি।দেয় আমার হাতে প্যাকিং করার জন্য যা যা লাগে সব দেয় আমি করে দিচ্ছি”
অরিনের হাতে সব কিছু দিয়ে ব্যস্ত ভঙিতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো তারিন।কপালে চিন্তার ছাপ ফুটিয়ে প্যাকিং এ মন দিলো অরিন।তৎক্ষনাৎ বড় চাচার ছোট ছেলে রাইয়ান রুমে প্রবেশ করলো।অরিন আর রাইয়ান দুজনেই সমবয়সী।তাকে দেখে অরিন বললো
“কিরে তোকে তো আজ দেখলামি না।বাসায় কি থাকিস না নাকি”
“আর বলিস না একটু ঝামেলায় আছি তাই বাসা থেকে সকালে বের হয়ে গিয়েছিলাম আর এখন আসলাম”
“এখন সব ঝামেলাকে ছুড়ে ফেলে দেয় ভাই।আমার বিয়েতে তোকে পুরো পুরি সময় দিতে হবে”
“তা তো দেবই।বাই দা ওয়ে তারিন কই”
“তারিন বোধহয় রান্না ঘরে”
তারিনের কথা বলতে না বলতেই হাতে হাবি জাবি কীসব নিয়ে রুমে ঢুকলো তারিন।সব কিছু বিছানায় রেখে বললো
“বোনরে বিয়ে তোর আর সব কষ্ট আমার।দেখিস আমার বিয়েতে আমি একটা কাজ ও করবো না সব তুই করবি”
তারিনের কথায় অরিন হেসে দেয়।পাশ থেকে রাইয়ান বলে
“কবে করবে বিয়ে”
রাইয়ানকে এতক্ষণ দেখেনি তারিন। কথা কানে যেতেই পাশে তাকিয়ে রাইয়ান কে দেখে মুহূর্তেই তারিনের মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।পরেই কেমন যেন রাগী রাগী ভাব চলে আসলো মুখে।রাইয়ানের কথার জবাব না দিয়ে অরিনকে বললো
“আপু আমি নিচে যাই আর তোকে এই রুমে থাকতে হবে না। নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে রেস্ট নে”
অরিনকে এক প্রকার জোর করেই তার রুমে পাঠিয়ে দিয়ে নিচে চলে গেলো তারিন।অরিন আগা মাথা না বুঝে বোকার মতো রুমে বসে আছে।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো রাত ৮ টার উপরে বাজে।কিছু একটা ভেবে তারেককে কল দিলো।তারেক ফোন রিসিভ করলে অরিন বললো
“কি করছো”
“কি আর করবো বলো।বাসায় এতো এতো মেহমান তার উপর বাচ্চারা তো আছেই কি যে বিরক্তি লাগছে”
তারেকের কথা শুনে কোন কথা বললো না অরিন।সে চুপচাপ ফোন ধরে বসে আছে।অরিনের এমন নিশ্চুপতা দেখে তারেক বললো
“কি হয়েছে অরিন এমন চুপচাপ যে”
“না এমনি”
“কিছু তো হয়েছে”
দম ফেলে মনে সাহস নিয়ে অরিন বললো
“তোমাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করবো আশা করি সত্য কথা বলবে”
“আচ্ছা সত্য কথাই বলবো কিন্তু হয়েছেটা কি”
“তোমার আর তারিনের মধ্যে কি চলে”
“মানে!তারিনের সাথে আবার আমার কি চলবে।আজিব।তুমি কি বলতে চাইছ অরিন”
“দেখো গত কয়েকদিন যাবত আমার সাথে উল্টা পাল্টা কীসব ঘটছে তা তো তুমি দেখছই।তাছাড়া তোমাকে দেয়া আমার ফোন থেকে যে সকল মেসেজ তা আমি দেইনি।সব কেমন রহস্যময়।আমি তোমাকে এভাবে বলতে চাই নি। তবে,,কাল যখন তুমি রাগ করে বের হয়ে গেলে তারপর তারিন ও চলে গেলো কিন্তু বারান্দা থেকে তোমাদের হাসা হাসি দেখে আমি আর সন্দেহ না করে থাকতে পারছি না”
“অরিন তুমি বুঝতে পারছ তুমি কি ভাবছ।তারিন আমার ছোট বোনের মতো।আর কালকে তো আমি চলেই যাচ্ছিলাম কিন্তু তারিনের কাছে আমার একটা শপিং ব্যাগ ভুলে রয়ে গেছে তাই সে নিচে গিয়ে ডেকে দিয়েছে।তখন আমি রেগে ছিলাম বলে সে আমাকে বুঝিয়েছে তোমার সাথে যেন রাগ না করি।”
“এখানে এতো হাসির কি আছে তারেক”
“আরে হাসির কথা উঠেছে তাই হেসেছি।আমরা তো অনেক্ষন দাঁড়িয়ে কথা বলেছি।আর শেষে আমরা আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া একটা মজার ঘটনা মনে পরতেই হেসে উঠলাম।আর তুমি কিনা এসব ভাবছ।ছিহ! শুনো জানিনা তোমার সাথে কি হচ্ছে না হচ্ছে তবে বলবো তুমি কিছু লুকিয়ে থাকলে আমাকে দয়া করে জানিয়ে দিও প্লিজ।”
তারেক আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে কল কেটে দিলো।অরিন তব্দা খেয়ে বসে আছে।তার মানে তারেক আর তারিন কিছু করছে না।আর সে কী না কী সব ভেবেছিলো।নিজের কাছেই নিজেকে বড্ড বাজে লাগছে সেখানে তারেক কী ভাববে।তৎক্ষনাত মনে পরলো তারেক তাকে একটা চিঠি দিয়েছিলো সেদিন আর বলেছিলো কে যেন তাকে দিয়েছে।বিষয়টা ক্লিয়ার, তারেক কে যে এই চিঠিটা দিয়েছে সেই আসল ড্রামাবাজ।উত্তেজনায় বিভুর হয়ে তারেককে আবার কল দিলো।কিন্তু তারেকের ফোন বন্ধ।তারেক হয়তো এসব বলায় রেগে গেছে।এখন অরিন কী করবে?তবে যাই হোক না কেন বিয়েতে কোন ঝামেলা না হলেই হবে।পরে নাহয় সব কাহিনীর আসল রহস্য উদঘাটন করা যাবে।কিন্তু এর আগে যদি আরও কোন নতুন কাহিনীর আবির্ভাব হয়।নাহ আর কিছু ভাবতে পারছে না অরিন।এই সকল ঘটনার খোলস কবে যে খুলবে তা হয়তো উপর ওয়ালাই জানেন।
(চলবে)
[ইচ্ছে ছিলো বড় করে দেয়ার।কিন্তু প্রচন্ড মাথা ব্যাথা থাকায় বেশি লিখতে পারি নি।তাই দুঃখিত।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]