#বর্ষনের_শেষে
পর্বঃ৮
#সাদিয়া_চৌধুরী_তাহমিনা
রুমময় পায়চারি করছে অরিন।এখন রাত বাজে ১০ টা ১৭।আজ তাদের রিসিপশন ছিলো।অনুষ্ঠান শেষে বাসায় আসার ঘন্টা খানেক পর সে এসেছিলো।হ্যাঁ সেই অচেনাই এসেছিলো।রহস্যটা উদঘাটন হওয়ায় হয়তো পরবর্তী বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে।কিন্তু এখন তার ভয় হচ্ছে তারেককে নিয়ে।তারেক কী তার কথা বিশ্বাস করবে?এই আরিফের বাচ্চাটা এখনো কীভাবে তার পেছনে লেগে আছে সেটাই ভাবতে পারছে না।এখন অরিনের একটাই চিন্তা তারেককে সব বুঝিয়ে বলা।অরিনের ভাবনার মাঝেই তারেক ভিতরে ঢুকলো।অরিনকে এভাবে পায়চারি করতে দেখে বাকা হেসে বললো
“কী ব্যাপার এভাবে অস্থির হয়ে আছ কেন?
আমতা আমতা করে অরিন বললো
” তোমাকে আরিফের সম্পর্কে সবটা খুলে বলবো তাই?”
“কী আর বলবে বলো।তুমি আমায় মিথ্যা বললে কেন অরিন।তুমি বলেছিলে তোমার আগে কারো সাথেই রিলেশন ছিলো না কিন্তু আরিফ”
“আমাকে একবার সুযোগ না দিলে কীভাবে বলবো তোমায়।আমি এখনো বলছি আমার কারো সাথেই রিলেশন ছিলো না”
তারেক অরিনের কথা মানতে নারাজ।সে অরিনের কোন কথাই শুনছে না।তারেককে বুঝাতে না পেরে অরিন কেঁদেই দিলো।অরিনের কান্নায় বিচলিত হলো তারেক।সে ভাবেনি অরিন এভাবে কেঁদে দিবে।তাই কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো
“আচ্ছা বলো, অামি শুনবো”
কান্না থামিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে অরিন বললো
“আরিফ আমার ক্লাসমেট ছিলো।যদিও বয়সে আমার থেকে দু বছরের বড়।বাবার অফিসের কাজে আমরা খুলনা ছিলাম দু বছর।সেখানে পড়ালেখার জন্য ভর্তি হলে আরিফের সাথে দেখা।শুনেছিলাম আরিফ আমাকে পছন্দ করে।কিন্তু তা পছন্দ করাতে সীমাবদ্ধ ছিলো না।তা আস্তে আস্তে জ্বালাতনে পরিনত হয়।সে খুব ডিস্টার্ব করতো আমায়। এই অসহ্য জ্বালাতন টানা দেড় বছর সহ্য করার পর সিদ্ধান্ত নেই একদিন তার সাথে বাইরে মিট করবো।যেখানে তাকে বুঝিয়ে বলবো।হ্যাঁ সেদিন সে আমার সামনে বুঝেছিলো।অনেক ফ্রিলি কথা বলেছিলাম সেদিন।হাসি মজায় সময় অতিবাহিত হয়।আসার সময় পাশ থেকে সে ডাক দিলে আমি তাকাতেই ক্যামেরা বন্দি হয় তার আর আমার সেল্ফি।এর পর তার সাথে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা কাটা কাটি হয় যার ফলে সে বলেছিলো আমাকে নাকি ভবিষ্যতে শান্তি দিবে না।এতোদিন ঠিকই ছিলো কিন্তু এখন,,,”
অরিন থামতেই তারেক বলে
“এখন বুঝলাম কিন্তু তোমার বর্তমানে তোলা ছবি তার কাছে কীভাবে গেল আর আমাকে করা তোমার সে সকল মেসেজ?তুমি না দিলে কে দিবে শুনি?সে সাথে আসল কথা হলো তোমার বিয়ে কার সাথে হচ্ছে এই ব্যাপারে সে জানলো কীভাবে?যাই হোক কিছু কথা কাল সকালে বলবো।এখন ভালো লাগছে না”
তারেকের কথায় আর কোন প্রতিউত্তর করলো না অরিন।সকালে কী বলবে আবার।এই তারেকটাও কেমন যেন।বলতে পারলেও এখন সে কিছু বলবে না।৯/১০ দিন ধরে এমন রহস্যের উপর ভাসতে ভাসতে অরিন ক্লান্ত।তবুও কিছু জানার আগ্রহে কালকে সকালের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে।
সকালের নাস্তা সেরে রুমে তারেককে নিয়ে আসে অরিন।সাথে তারিনও আসে।তারিন কালকের ব্যাপারে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে।তাই সে এসেছে সাথে।অরিন বিছানায় তারেককে বসিয়ে বললো
“বলো কী বলবে”
অরিনের কথায় তারিন ও তারেককে বলার জন্য তাড়া দিচ্ছে।সোজা হয়ে বসে তারেক বললো
“কালকের সেই অচেনা অর্থাৎ আরিফ আমাদের বিয়ের আগে আমার সাথে মিট করেছিলো”
তারেকের কথায় অরিন তারিন দু জনেই অবাক হলো।অরিনের আগেই তারিন বললো
“কেন মিট করেছিলো দুলাভাই?”
“এই ত প অরিনকে যেন বিয়ে না করি হেন তেন এসব বুঝাতে।কিন্ত তারিন একটা খটকা কিন্তু এখনো থেকেই যায়”
দু বোন একজন আরেকজনের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে বললো
“কী খটকা”
“অরিনের নাম্বার থেকে আমার ফোনে উল্টা পাল্টা মেসেজ দিতো কে?”
অরিনের মুখটা আবারও ভয়ে চুপসে যায়।সে ভেবেছিলো রহস্যের গন্ধ এখানেই শেষ কিন্তু এখন আরেকটা শুরু।কিছুক্ষণ পর তারিন বললো
“এই ব্যপারে আমি আমাদের বাসার একজনকে সন্দেহ করছি”
“কাকে”
অরিনে আর তারেকের কৌতুহলী চাহিনিকে উপেক্ষা করে কেমন মন মরা হয়ে গেলো তারিন।তারা আবারো জিজ্ঞেস করতেই বললো
“রাইয়ান ভাইয়া”
“ধুর রাইয়ান হবে কেন?”
অরিনের কথায় হাসলো তারিন।তারপর বললো
“মনে আছে আপু তোর আকদ এর দিন আমি বাহিরে গিয়েছিলাম কিন্তু আসার পর আমার চোখ মুখ ফুলা ছিলো”
“হ্যাঁ আছে তো”
“আমি সেদিন রাইয়ান ভাইয়ার কথা অনুযায়ী তার সাথে দেখা করতে সামনের গাছতলায় গিয়েছিলাম একটা দরকারে”
তারিনের কথার আগা মাথা বুঝতে পারছে না অরিন।তারেক তো একদমি বুঝছে না।অরিন বললো
“তার সাথে বাইরে দেখা করার কী আছে।যা বলার ক্লিয়ার করে বল”
“রাইয়ান ভাইয়া আমায় সেদিন গাছতলায় যেতে বলেছিলো আপু।সে আমার কাছে একটা হেল্প চায় আর হেল্পটা হলো আমি যেন কিছু একটা ভেজাল লাগিয়ে তোর বিয়ে ভেঙে দেই।আমার হাতে একটা ফাইল দিয়েছিলো সেখানে নাকি তোর কী কী আছে তা দুলাভাইকে দেখালেই বিয়ে ভেঙে যাবে।”
“কী বলছিস তারিন।রাইয়ান আমার ঘরের মানুষ হয়ে কিনা সেই আরিফের চামচামি করেছে”
“হ্যাঁ রে আপু।আর আমি মানি নি বলেইতো আজ আমার সাথে সব সম্পর্ক ভেঙে দিলো।বিচ্ছেদ নামক শব্দটাকে আমার জীবনে এনে দিলো”
তারিনের শেষের কথা শুনে তারেক অরিন দুজনেই যেন আসমান থেকে পরলো।এ কোন মহা ঝামেলা।আগে রহস্য বের হলো না আর এখন রহস্যের সাথে সাথে এমন কিছু কথা শুনছে যা আগে কল্পনাও করে নি।মুখ বাকিয়ে তারেক বললো
“বিচ্ছেদ মানে!তোমার আবার কারে সাথে বিচ্ছেদ হলো তারিন?”
তারিন কী করবে বুঝতে পারছে না।সে কী বলে দিবে।যদি আপু বকা দেয়।মা বাবাকে বললে তো সে শেষ।তার এমন অসহায় চেহারা দেখে অরিন বললো
“আরে কিছু হবে না বল”
“আমার রাইয়ান ভাইয়ার সাথে রিলেশন ছিলো আপু”
তারিনের কথায় ধপ করে বিছানায় বসে পরলো অরিন।তার আপন ছোট বোন তার ঘরের আরেকটা মানুষের সাথেই রিলেশনে আছে আর সে কিছুই জানে না।তা ও অন্য কেউ হলে কথা ছিলো।কিন্তু এ তো রাইয়ান যে কিনা ছেলে হিসাবে অরিনের বেস্ট ফ্রেন্ড।অবাক হয়ে তারেক বললো
“আর কী শুনার বাকি আছে।এ আমি কোথায় আসলাম শুধু কাহিনীই বের হয়”
তারেক আর অরিনের এমন রিয়েকশনে চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে তারিনের।অরিন বোনের দিকে তাকিয়ে বললো
“যা তো আমার চোখের সামনে থেকে যা।আমাকে আগে কিছু বলিস নি আর এখন সব শেষ হওয়ার পর এসে বলছিস।ফুট”
অরিনের কথায় চলে গেছে তারিন।এদিকে তারেক তব্দা খেয়ে বসে আছে।এভাবে বসে থাকলে তো আর চলবে না।রাইয়ানকে জিজ্ঞেস করতে হবে।সে জন্য তারিনের হেল্প প্রয়োজন।অরিনকে রেখে তারিনের রুমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো তারেক।
————-
মেসেজ দাতাকে ধরার জন্য বুদ্ধি দিয়েছে তারিন।প্ল্যান অনুযায়ী রাইয়ানকে বুঝতে দেয়া যাবে না তারা যে বুঝে গেছ এসবে রাইয়ান জড়িত।তাই তারেক,অরিন তারিন আর রাইয়ান মিলে ঘুরতে যাবে বলে ঠিক হলো।তারেকই প্রথম ঘুরতে যাওয়ার কথা তুলেছে।পার্কের সবুজ স্নিগ্ধতাকে উপেক্ষা করে ইট কংক্রিটের তৈরি বসার জায়গায় গিয়ে বসলো তারা।আশেপাশে তেমন মানুষ নেই।নিরবতা ভেঙে তারেক বললো
“তোমার জন্য বেশ দুঃখ হচ্ছে রাইয়ান”
“কেন?”
“ওই যে অরিনের বিয়ে ভাঙার জন্য কতো কিছুই করলে কিন্তু আফসোস লাভ হলো না”
“মানে?”
তারেক কিছু বলার আগেই ক্ষেপে গেলো অরিন।রাগী গলায় বললো
“একদম মানে মানে করবি না।তুই কীভাবে পারলি আমার ভাই হয়ে আরিফকে সাহায্য করতে।মিথ্যা বলবি না তুই আমার ফোন থেকে তারেককে মেসেজ দিয়েছিলি তাই না?”
রাইয়ান অবাক হয়ে গেছে।সে ভাবেনি এভাবে সবাই বুঝে যাবে।তাই আর না লুকিয়েই বললো
“হ্যাঁ আমিই দিয়েছি”
“বাহ চমৎকার।তুই এতোটা বাজে আগে জানতাম না।আমার সাথে তুই এসব করেছিস কিন্তু তারিনের কী দোষ ছিলো।তার সাথে ব্রেক আপ করলে ভেবেছিলি সে তোর কথার পাল্লায় পরে যাবে?”
রাইয়ান একবার অরিনের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার তারিনের দিকে তাকাচ্ছে।অরিন তো তাদের রিলেশনের কথা জানতোই না।তারমানে তারিন সব বলে দিয়েছে।তারিনের দিকে রাইয়ান রাগী চোখে তাকাতেই তারিন ঝাঝালো কন্ঠে বললো
“খবরদার রাগ দেখাবে না।এখন আর আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড নই।বিচ্ছেদ হওয়ায় ভালোই হয়েছে।তোমার মতো ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখা অসম্ভব”
রাইয়ান কিছু বলতে চাইলে অরিন তাকে থামিয়ে দেয়।আরও কিছু কথা শুনিয়ে রাগে সেখান থেকে চলে আসে সে।সাথে তারিন ও চলে আসে।শ্বাস ফেলে তারেক বললো
“কিছু করার আগে পরবর্তীতে কী হবে তা একটু ভেবে দেখা উচিত।”
রাইয়ানকে কথাটি বলে তারেকও আর এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়ালো না।চলে আসলো তারা।অরিনরা কাল সকালে তাদের বাসায় চল যাবে।অরিনের এখন ভাবনা শুধু সেই ঘর আর পরিবার নিয়ে।সেখানে গিয়ে কাল থেকে পুরো পুরি নিজের সংসারে লেগে যেতে হবে তাকে।কে জানে সেখানে কোন ঝামেলার সৃষ্টি হয় কীনা
(চলবে)
(ভালো ভাবে রিচেইক করা হয়নি।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)