পর্ব ২+৩
#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ২
সবাই একে একে ঘর ছেড়ে দিলো, যাওয়ার আগে ওই মাঝ বয়সী মহিলাটি স্বামী নিয়ে কি সব জ্ঞান দিয়ে গেলো যা মাথার কয়েকফুট উপর দিয়ে গেলো রুশির। এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও এবার ওর ভয় করছে খুব। অচেনা জায়গায় অচেনা মানুষের ভীরে নিজেকে কেমন অগোছালো লাগছে। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে সামনের ছেলেটার সারা রুমজুড়ে পায়চারি করা দেখছে, লোকটিকে খুব অস্থির দেখাচ্ছিল কিন্তু ভয়ে মুখের দিকে তাকাতে পারছেনা , কে জানি লোকটি মাস্ক খুলেছে কিনা। কিন্তু ছেলেটার সাথে কথা বলা প্রয়োজন ভেবে উঠে দাঁড়ালো, হাত কচলে কিছু বলবে তার আগেই ছেলেটি খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওকে, আচমকা এমন ঘটনায় ভেবে রাখা কথাগুলো কণ্ঠনালীতেই আটকে গেল বের হওয়ার সুযোগ পায়নি বয়কি। স্তব্ধ হয়ে গেলো সময়, পুরো ঘর জুড়ে ঘন ঘন নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া বাকি সবটাই স্তব্ধ হয়ে রইল। মাতাল করা ঘ্রাণ নাকে বারি খাচ্ছে আর জীবনের প্রথম কোন ছেলের এতটা কাছে ভাবতেই শরীর কেঁপে উঠলো। চেনা নেই জানা নেই না কথা বলেছে, এই লোকটি আমার নাম মনেও রেখেছে কিনা সন্দেহ আর বিয়ে না হতেই নিজের অধিকার ফলাতে চলে এসেছে?
ভাবতেই রাগে গা রি রি করছে। রুশির গায়ে পড়া লোক একদমি পছন্দ না।
পাশের বাড়ির ছেলে সামাদকে বেশ পিটিয়েছিল একদিন। ওর অপরাধ ছিলো লাভ লেটার দিয়েছিলো আর রুশি উত্তর না দেয়াতে হাত চেপে ধরেছিলো, এতেই রাগ উঠে গিয়েছিল আর সেই কি মার দিয়েছিলো। এই নিয়ে শালিসিও বসে ছিলো আর ছোট মায়ের কাছে মারও খেয়েছিলো । তাই এমন আচমকা আক্রমণ সেই রাগটাকে দিগুণ করে দিলো, গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে খুব জোরে থাপ্পড় মারলো ছেলেটিকে, রাগে শরীর থরথর করে কাঁপছে। ছেলেটিকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো
” মেয়ে মানুষ দেখলে হুশ থাকে না তাইনা? আপনারা সকল পুরুষরাই এক, মেয়েদের ভোগের সামগ্রী ছাড়া আর কিছু ভাবেন না, আপনাদের কাছে বিয়ে মানে তো শুধু বাহানা, আসলে আপনারদের আর রেপিস্টের মাঝে পার্থক্য কি? বিয়ে নামক সমঝোতা যে মেয়েটা কিছু চাইলেও বলতে পারবে না! এই জন্য ছেলেদের দেখতে পারিনা আমি,ছেলে মানেই ছুকছুকানি স্বভাব, আপনা..”
কথা শেষ করার আগেই কানে ঝনঝন করে কিছু পড়ার আওয়াজ এলো, পাশে ফিরে নিচে তাকাতেই দেখে কাচের মগ টুকরো টুকরো কাচে পরিণত হয়েছে, উপরে তাকাতেই আবছা আলোয় দুটি রক্তচক্ষু দেখতে পেলো। ছেলেদের প্রতি নিজের ক্ষোভ আর বাবার প্রতি আক্ষেপ থেকে খুব বেশিই কথা শুনিয়ে ফেলেছে লোকটিকে,নিজের দিকে এগুতে থাকা লোকটিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে
” দে..দেখুন আমি… ”
“ব্যস অনেক বলেছ আর আমি অনেক শুনেছি, তুমি জানো তুমিই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা আমার সামনে উচ্চস্বরে কথা বলে এখনো বেঁচে আছো, তুমি যদি ছেলে হতে I swear আমি তোমার জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলতাম কিন্তু মেয়ে বলে তুমি পারবে পেয়ে তা ভেবোনা শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে। কি যেন বলছিলে ছেলে মানেই ছুকছুকানি স্বভাব, স্বামী আর রেপিস্ট এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এতক্ষণ তো স্বামী হিসেবে ছিলাম এখন রেপিস্ট কি করে তা হারে হারে টের পাবে তুমি ”
রুশিকে হেচকা টানে নিজের একদম কাছে টেনে নেয় ছেলেটি…
“এন আর ইউ অকে?এন এই… তুমি কি কি বাজে স্বপ্ন দেখেছো? ”
” ইয়া সুজি, আই এম অকে, রিলাক্স আমি ঠিক আছি, জাস্ট একটা বাজে স্বপ্ন দেখেছি ”
” তুমিতো প্রায়ই এমন ঘুমের মাঝ থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠো, করবার বললাম ভালো সাইক্রেটিস্ট দেখাও কিন্তু তুমি আমার কথা শুনলে তো।”
” লিসেন এই ফালতু কাজে টাকা নষ্ট করার মানেই হয় না, আমাকে রুহানের ভবিষ্যতের কথাতো ভাবতে হবে তাইনা?তাছাড়া আমি আমি সত্যিই ঠিক আছে এমন নাইটমেয়ার তো অনেকেই দেখে, ইট ডাসেন্ট মেটার সো জাস্ট চিল”
” সেই একি কথা তোমার, আরে আমিও তো আছি তাইনা রুহানের জন্য, এত ভাবো কেন তুমি ”
” আমার মত সিংগেল মাদার হলে বুঝতে ছেলের জন্য টেনশন করা কাকে বলে ”
” অকে মেরি মা আব চুপ হো যা, তাড়াতাড়ি উঠো। নয়টায় শো আর এখন আটটা বাজে ”
” অহ শিট, আমি এখন ফ্রেশ হচ্ছি, তুমি রুহানকে একটু উঠিয়ে ফ্রেশ করিয়ে দাও ”
এই হলো সুজি পুরো নাম সুজাতা সেন তবে সবাই সুজি বলেই চেনে তাকে। আরজে সুজি আমার অচেনা শহরের একমাত্র সঙ্গী। সেই একরাত আমার জীবনের খাতাই বদলে দিয়েছিলো, বাস্তবতা নামক শব্দাটাকে হারে হারে বুঝিয়েছিলো। প্রায়শই সেই লোকটির কথা মনে যে কি না তার একরাতের স্বামী ছিল যার ভারত্ব এখনো বইছি।
সেইদিন ভোর হয়েছিলো ঠিক তবে নিয়ে এসে তুমুল বহমান ঝড় যা আমার জীবকে লণ্ডভণ্ড করতে যথেষ্ট ছিলো। ভোরের চোখ মেলার পর সেই ছেলের দেখা পায়নি সে তবে অনামিকা আংগুলে তার পরিয়ে দেয়া আংটি ঠিকি ঝুলছিলো। উঠে বসে পাশের টেবিলে বিরিয়ানির পেকেট দেখতে পেয়েছিলো আর সাথে একটি চিরকুট যাতে লিখা ছিলো “খাবারটা খেয়ে নিও এবং নিজের খেয়াল রেখো আর এদিকটা সামলে নিও ”
চিরকুট পড়ে ও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো,লোকটি সত্যিই ওকে ফেলে চলে গেলো?একবারো ভাবলো না আমার কথা?খাবারটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে ঢুকরে কেঁদে উঠেছিলো সেদিন তবে তার আহাজারি দেখার মানুষ ছিলো না সেদিন।
“এন, চলে এসেছে নাম। তাড়াতাড়ি যা না হয় ডিটি স্যার বকা দিবে ”
” হুম, অল দ্যা বেস্ট ”
” সেম হেয়ার ”
–
–
–
“গুড মর্নিং কলকাতা, দিস ইজ আরজে আনাম উইথ ইউ, অয়েলকাম বেক টু মাই শো ‘লাইফলাইন’। আপনার লাইফের প্রিয় ব্যাক্তিটিকে নিয়ে যদি কিছু বলার থাকে বা তাকে ইম্পর্টেন্ট কোন মেসেজ দেয়ার থাকে তাহলে এসএমএস করে জানান Mirchi Fm
আমার সকাল হাসে তোমার চিলেকোঠায়
আর একফালি সুখ মনের আঙিনায়
আমি ঘুম হয়ে তাই, তোমার চোখেতে
ভালোবাসার স্বপ্ন এঁকে যাই (x2)
জানি না বুঝিনা কেনো মন মানে না
এই মন শুধু তোমাকে চায় (x2)
আমার সকাল হাসে ..
মন আমার কেন সে দূর অজানায় হারালো
ভালোবেসে তোমায়
তোমাতে বিলীন হয়ে আজ লিখেছি
প্রেমের কবিতা
ওগো বন্ধু আমার,
ওগো বন্ধু আমার তুমি সেই কবিতা
ছন্দে গড়া পুঁতির মালা।
জানি না বুঝিনা কেনো মন মানে না
এই মন শুধু তোমাকে চায় (x2)
আমার সকাল হাসে ..
ইয়াহ মি, আরজে আনাম, কলকাতা শহরের নামকরা আরজে যার কিনা শতশত ফ্যান। প্রতিদিন কম করে হলেও শ খানেক প্রোপোসাল পাই অথচ কেউ হয়তো ভাবতেই পারবে না এই মিষ্টি কন্ঠের পেছনে লুকিয়ে আছে বড্ড অসহায় একটি মেয়ে। এই কলকাতা শহরে আমি ভিন্দেশীয় মানুষ। খুব মিস করি নিজের দেশকে…
🌸🌸🌸
ডেস্কের উপর হাত মুঠো করে বসে আছে সায়ান জামিল খান, তার পেছনে একটি মেয়ে কাধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো
“স্টপ দ্যা মিটিং রাইট নাউ ”
“বাট স্যার দিস ইজ এন ইম্পর্টেন মিটিং ফর আজ, হাউ কেন ইউ… ”
” স্টপ সাহিল, সায়ান জামিল খান যা বলে তাই করে, কয়েককোটি টাকা লস হলে এসকে ইন্ডাস্ট্রি পথে বসবে না ”
বলেই চেয়ার থেকে উঠে গেলো আর বের হওয়ার আগে অই মেয়েকে বললো
” আই ডোন্ট লাইক দোজ কাইন্ড অফ গার্লস হু সিডিউস গাইস ফর আ ব্লাডি কন্ট্রাক্ট, স্টে এওয়ে ফ্রম মি,আই কান্ট বিলিভ মিস্টার হিল কেন হায়ার আ গার্ল লাইক ইউ টু উইন আ কন্ট্রাক্ট ( আমি ওইসব মেয়েদের পছন্দ করিনা যারা একটা সাধারণ চুক্তির জন্য ছেলেদের সিডিউস করে, আমাকে থেকে দূরে থাকুন। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না মিস্টার হিল সামান্য চুক্তির জন্য আপনার মত মেয়েকে ভাড়া করবে)”
সায়ান জামিল খান, ময়মনসিংহের বিখ্যাত খান বংশের ছোট সাহেব সে। ঢাকায় বিশাল বিজনেস তাদের, এসকে ইন্ডাস্ট্রি যার ব্রাঞ্চ বিদেশেও রয়েছে। দেশে বিদেশে কম সুন্দরি মেয়ে দেখেনি, বিদেশে পড়াশোনা করাকালীন অনেক মেয়ে স্বেচ্ছায় তার বিছানার সঙ্গী হতে চেয়েছে তবে কারো দিকে বিশেষ নজর দেয়ার সময় পায়নি। নিজের মুসলিম হওয়ার পরিচয় ভুলে যাইনি কিন্তু সেই রাতে…
সেই রাতের কথা মনে হতেই গাড়ির স্টেয়ারিংয়ে জোড়ে ধাক্কা মেরে উঠলো, ডেম ওই মেয়ে…
#পর্বঃ৩
যুক্তরাষ্ট্রের গোল্ড স্ট্যাট বলা হয় ক্যালিফোর্নিয়াকে, সেই রাজ্যের বৃহত্তম শহর হচ্ছে সপ্নের শহর লস এঞ্জেলস যাকে অনেকে সিটি অব এঞ্জেলস হিসেবে চিনে। সেই শহর হলিউডের প্রাণভোমরা হিসেবেও পরিচিত। সেখানে নাইট ক্লাবগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে “এলিভেট লঞ্জ ”
রাত-১.৩০
লস এঞ্জেলসের এলিভেট লঞ্জ নাইট ক্লাবে বসে রেড ওয়াইন ড্রিংক করছে সায়ান। বিজনেস ডিল ক্যান্সেল হওয়ার পর থেকে এখানে এসে একের পর এক ড্রিংক করে যাচ্ছে সে।তার বন্ধু এরেন তাকে বাধা দিয়েও থামাতে পারছে না
” হে এসকে, হোয়াই আর ড্রিংকিং ঠু মাচ টুডে? ”
” বিকজ আই এম মিসিং হার ভেরি মাচ, হোয়াই জাস্ট শি লেফট মি, হোয়াই?”
” লুক ডুড, সো মেনি বিউটিফুল লেডিস আর এরাউন্ড ইউ এন্ড ইউ আর মিসিং দেট দেম গার্ল!”
লস এঞ্জেলসের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় “ইউভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ” থেকে পড়াশুনা করেছে সে, সবাই তার নাম সায়ান জামিল খান উচ্চারণ করতে পারতো না তাই এসকে হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলো। কত মেয়ে তার দিওয়ানা ছিলো তখন,প্রতিদিন নিজের ডেস্কে লাভ লেটারের মেলা বসতো। দেখতে ফর্সা, হাইট ৬’১” আর কিলার স্মাইল অনেককে ঘায়েল করতো, আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে বাদামি চোখ দুটি। দেখলে কেউ বলবেই না সে বাংলাদেশি, কেমন একটা বিদেশী বিদেশী ভাব।
আর সে কিনা চার বছর ধরে একটা মেয়েকে পাগলের মতো খুজে বেড়াচ্ছে? খুজে বেড়াচ্ছে তার এক রাতের বউকে, সেদিন রাগের মাথায় মেয়েটির সাথে ওমন আচরণ করা উচিৎ হয়নি, সেদিন রাগের মাথা মেয়েটিকে নিজের করে নিলেও এখন বুঝতে পারছে যে ওই পরিস্থিতিতে সবাই এমন রিয়াক্টি করতো। তবে তার ও দোষ ছিলো না। ওইখানের মহিলাটি তাদের জানালা দিয়ে দেখছিল বলেই হুট করে জড়িয়ে ধরেছিল সে কিন্তু ওইটুকুন মেয়ে তাকে চড় মেরেছিল, কি সাহসী তার বউ। মুচকি হেসে গ্লাসে চুমুক দিলো সে।
সেদিন রাতে যখন মেয়েটি যখন ফুফিয়ে কাঁদছিলো তখন তারও বুকে চিনচিন ব্যাথা হচ্ছিলো, বড্ড অসহায় লাগছিল নিজেকে। রাগের মাথায় কত বড় ভুলটাই করেছিলো। সকালে মেয়েটির অজান্তেই নিজের কনিষ্ঠা আংগুলের আংটিটি খুলে অনামিকাতে পরিয়ে দিয়েছিল, কারণ দিদানকে বলতে শুনেছে যে প্রথমরাতে মেয়েরা স্বামী থেকে উপহার আশা করে। আচ্ছা তার বউ উঠে যখন আংটিটি দেখেছিলো তখন সে কি আশ্চর্য হয়েছিলো? খুশিতে তার চোখ থেকে দু ফোটা নোনাজল কি বেরিয়েছিল। খুব ইচ্ছে ছিলো তার ঘুমন্ত মুখটি দেখার কিন্তু তার আগেইতো চলে যেতে হলো।
ফোন বের করে কোথাও একটা ফোন করলো সায়ান,
“এনি নিউজ অফ হার?”
অপর পাশ থেকে কিছু একটা বললো তাতেই রেগে দাঁড়িয়ে ফোনটা আছাড় মারলো
“ইউজলেস সবকটা ইউজলেস ”
সায়ানের এইরকম হুটহাট রাগের সাথে বেশ পরিচিত এরেন, ইউনিভার্সিটি লাইফ থেকে চিনে সায়ানকে কিন্তু কখনো কোন মেয়ের জন্য ডেস্পারেট হতে দেখে নি ওকে, তাও আবার তার জন্য যাকে সে দেখেইনি।
” লেটস গো এস”
” আই এম নট ড্রাংক এরেন, আই কেন গো বাই মাইসেল্ফ ”
কোর্টটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো সায়ান, আজকাল রেড ওইয়ান এর নেশাও ধরে না তাকে কারণ সেতো ডুবে আছে তার শ্রেয়সীর নেশায় যা মদের নেশাকেও হার মানায়। সে ভালো করে দেখেনি মেয়েটিকে তবে তার ছোয়া পুরো অংগ জুড়ে ছড়িয়ে আছে, তার বিশ্বাস মেয়েটি তার সামনে আসলে ঠিক চিনতে পারবে তাকে কারণ আবছা আলোয় দেখা চেহারা এখনো ভুলেনি সে। গাড়ি থেকে নেমে সোজা ফ্লাটে ভিতর চলে গেলো, এই ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকার সুবাদে এখানে নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে তার, এই শহরটি তার সেকেন্ড হোম প্রায়শই বিজনেস এর সুবাদে এখানে আসা হয়। কোর্টটা সোফায় ফেলে বিছানায় গিয়ে জুতাসহ শুয়ে পড়লো, আজকে সে থাকলে কি এত রাতে ফিরার জন্য খুব করে বকতো? জানা নেই এই প্রশ্নের জবাব তাকে পেলে পাওয়া যাবে, পালিয়ে বেড়াবে কোথায়? পাখি যতই উড়ে বেড়াক দিনশেষে তাকে নিড়েই ফিরতে হয়, তার পাখিটাকেও যে ফিরতে হবে তার কাছে শুধু মাত্র তার কাছে।
🌸🌸🌸
ক্যালিফোর্নিয়ায় এখন গভীর রাত হলেও কলকাতা শহরে এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো বলে। বাস জার্নিতে প্রচণ্ড ক্লান্ত শরীরটি যেন আর চলতে চায়না রুশির। তবুও যে চলতে হবে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে গলির শেষ মাথায় চাইল্ড কেয়ার যেখানে তার প্রাণভোমরা রয়েছে। রুহান তার একমাত্র ছেলে, গত মাসে তার তিন বছর শেষ হয়ে চারে পা দিলো, তবে চার বছরের বাচ্চার তুলনায় সে একটু বেশিই মেচিউরড। চোখে চশমা পরে আর এতটুকু বয়সে কি সুন্দর গুছিয়ে কথা বলে। না চোখে কোন সমস্যা নেই কিন্তু জনাবের স্পষ্ট কথা চশমা পড়তে ভালো লাগে তাই চশমা কিনে দিতে হবে। ব্যস তার কথা ফেলার সাধ্য কি আর আছে!
চাইল্ড কেয়ারে ঢুকতে ছোট দুটি হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রুশিকে
“মাম্মা, রুহান মিসড ইউ সো মাচ”
” আই মিসড ইউ ঠু বেবি, আচ্ছা আজকে কি কি শিখলে?”
“অনেক কিছু, আচ্ছা মাম্মা জানো কালকে কুশান এর বাবা তাকে নিতে আসছে তাহলে আমার বাবাই আমাকে নিতে আসে না কেন? তুমি সবসময় আসো কেন? আর বাবাই বাসায় ও কেন আসেনা? ”
এই প্রশ্নের জবাব তার কাছে নেই, কি করে তার বাবা তাদের ছেড়ে চলে গেছে আর ফিরে আসেনি। ছোট্ট শিশুটার মনে বাবার প্রতি ঘৃণা জন্মাক সেটা সে চায়না। বড় হলে এমনিই বুঝতে পারবে সব।
*মাকে চুপ থাককে দেখে রুহান বুঝতে পারলো যে তার মা তার প্রশ্নে কষ্ট পেয়েছে তাই সে আর কোন দিন এই প্রশ্ন করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করলো
“মাম্মা, রুহান আইস্ক্রিম খেতে চায়”
” ওকে বেবি, চলো মাম্মা আইস্ক্রিম কিনে দিবে”
“মাম্মাকে বাবাই সম্পর্কে বলা যাবে না আর, বাবাই খুব পচা রুহানকে একটুও মিস করে না, রুহান হেটস বাবাই(মনে মনে)”
আইস্ক্রিম এর দোকানের পাশের দোকানের রিমোট কন্ট্রোল গাড়িটির দিকে তাকিয়ে আছে রুহান।প্রতিদিন এই গাড়িটির দিকে তাকায় সে আর কিনার প্রবল বাসনা জাগে তার কিন্তু সে মাম্মাকে বলবে না কারণ মাম্মার কাছে ওতো টাকা নেই আর সে না কিনে দিতে পারলে কষ্ট পাবে। কিন্তু তবুও গাড়িটা কিনার লোভ সামলাতে পারেনা সে। একদিন সে টাকা জমিয়ে গাড়িটি কিনবে বলে প্রতিদিনের মতো আজোও নিজেকে আশ্বাস দিল।
দুই অচেনা শহরে দুইজন মানুষ, কেউ কাউকে খুজে বেড়াচ্ছে আর কেউ বা মনের অজান্তেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে তার থেকে। কি হবে এই লুকোচুরি খেলার শেষ?
#চলবে💔