বিষাক্ত প্রেম পর্ব ১২

#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট: ১২

সেহের জানালার পাশে সিংগেল সোফার উপর দু ‘পা তুলে বসে আছে বাম হাতে চায়ের কাপ আর অন্যহাতে চামচ যা অনবরত চায়ের কাপে ঘুরাচ্ছে । তার নজর চায়ের কাপে কিন্তু মন অন্যকোথাও ।পাশেই তার মা বসে আছে তার দিকে বেশ বিরক্ত ভরা চাহনি নিক্ষেপ করছে ।মেয়ের এমন বেখেয়ালী আর নিরবতা দেখে বেশ চেচিঁয়ে বলল

-“এতগুলো কথা জিগাসা করলাম তুমি কোন কিছুর হ্যা ,না জবাব দিলে না !
তুমি কি আদো আমার কথা শুনতে পারছো সেহের?”

সেহের এবার চামচটা ঘুরানো বন্ধ করে তা ছেড়ে দেয় ফলে কাপের কোনার সাথে চামচটা বারি খেয়ে টং করে একটা শব্দ হয় ।সেহের হালকা ফিরে মায়ের দিকে আড় চোখে তাকায় ,মিহি বেগম মেয়েকে দেখে বেশ ঘাবড়িয়ে যায় চোখ জোড়া রক্ত লাল হয়ে বেশ ফুলে আছে দেখে মনে হচ্ছে এখনি বুঝি চোখ ফেটে রক্ত বেয়ে পড়বে ।
এতক্ষণ সেহেরের পাশ ফিরে ছিলো এলোমেলো চুলে মুখটা আড়াল ছিলো তাই চোখে পড়েনি ।মেয়ের এমন অবস্থা দেখে মিহি বেগম বেশ ঘাবড়িয়ে যায় ভীত কন্ঠে মেয়েকে জিগাসা করে

-“মা কি হয়েছে তোর ?
কান্না করছিস কেন মা ?”

সেহের শান্ত গলায় উত্তর দেয়
-“কে বলেছে আমি কান্না করছি ?
আমি কান্না করছি না তো !”

মিহি বেগম বললো

-“তোমার রক্তলাল চোখ আর সেই চোখের জল বলছে তুমি কান্না করছো ।”

সেহের তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে

-“আমরা যা কিছু দেখি তা কি সবসময় সত্যি হয় মা ?
যদি তাই হতো তাহলে মানুষের বহুরূপ হতোনা !
তুমি চিন্তা করোনা মা আমার কিছু হয়নি মাথা ব্যথা ছিলো তাই চোখমুখ এমন হয়ে আছে ।”

মিহি বেগম মেয়ের কাধেঁ হাত রেখে বললো

-“সেহের আমি তোমাকে পেটে ধরেছি তুমি আমাকে পেটে ধরোনি ,তুমি ভাবলে কি করে তুমি আমাকে মিথ্যা বুঝ দিবে আমি তা বিশ্বাস করে নিবো ?
সেহের সত্যিটা কি আমাকে বলো ,আমি তোমার মা সেহের ।কেউ কিছু বলেছে ?”

সেহের মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়

-“না মা আমাকে কেউ কিছু বলেনি আর আমি কোন মিথ্যাও বলছিনা ।
সত্যি আমার মাথা ব্যথা করছে ।”

সেহেরের মা পাশ থেকে বলে

-“এত কান্না করলে তো মাথা ব্যথা করবেই ।”

সেহের এবার বেশ বিরক্ত বোধ করছে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছেড়ে মায়ের দিকে তাকায় তার পর বলে

-“মা তুমি কি জানো বলছিলে ?”

-“বাহ্ আমার মেয়ে দেখছি বেশ বড় হয়ে গেছে আজকাল কথা এড়াতে শিখে গেছে ।
বায় দ্য ওয়ে আমি যা বলছিলাম আজ সন্ধ্যায় তোমাকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে ।”

সেহের মায়ের কথায় বেশ অবাক চোখে তার দিকে তাকায় ।মিহি বেগম মেয়ের এমন চাহনি দেখে বিছানায় রাখা ব্যাগটি দেখিয়ে বললো

-“এখানে শাড়ি আছে শাড়িটা পড়ে রেডি থেকো ।
আশাকরি তোমার এসবে কোন আপত্তি নেই !”

সেহের মলিন হেসে উত্তর দেয়
-“সব তো তোমরাই করছো আমার কোন কিছুতেই কোন আপত্তি নেই তোমারা যা ভালো মনে কর তোমরা করো ।
কিন্তু মা শাড়ি পড়াটা কি খুব জরুরী ?”

-”হ্যা ,পাত্রপক্ষ দেখছে আসছে আমি চাই তুমি এই শাড়িটাই পড়ো ।”

-“এতে কি আমার সুন্দর্য বেড়ে যাবে হুট করে কি মানুষ থেকে পরী হয়ে যাবো ?
আমার দুটো ডানা গজাবে ?”

মিহি বেগম মেয়ের এমন কর্কশ কথায় বেশ খেপে যায় মেয়ের দিকে ‌অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুম থেকে চলে যায় ।
যাওয়ার আগে বলে যায় সন্ধ্যায় যেন টিপটপ ভাবে রেডি থাকে ।সেহের মায়ের যাওয়ার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ।তবে কি তাকে কেউ বুঝবে না ?

সেহের আয়নার সামনে বসে আছে তার মা যেমনটা চেয়েছে ঠি ক সেই ভাবেই সে সেজেছে ।আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে ।আয়নার সেই মেয়েটিকে গোলাপী জামদানী দামী জুইলারী আর এই দামী সাজসজ্জায় কতই না সুন্দর লাগছে কিন্তু এই সাজসজ্জার পিছনের লোকানো কষ্টটা কারো চোখে পড়বেনা ।উপরের সৌন্দর্য সবার চোখে পড়বে ভিতরের কষ্ট বেদনা কারো চোখে পড়বেনা ।
মানুষ রাগ জ্বেদের বসে সব করতে পারে তার দ্বারা সব সম্ভব ।নিজেকে শেষ করে দিতে পারে আবার নতুন রূপে গড়েও তুলতে পারে ।
নিজেকে অগোছালো করে ফেলতে পারে আবার নতুন রূপে সাজাতেও পারে !
সেহেরের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে নিজেকে নতুন ভাবে গোছানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ।
কিছুক্ষণ পরই আফিয়া এসে জানায় পাত্রপক্ষ চলে এসেছে সেহের কথাটা শুনে কোন রিয়েক্ট করেনা সেই আগের ভঙ্গিতে সে আয়নার সামনে বসে আছে ।
আফিয়া সেহেরের কাছে এসে তার মাথায় শাড়ির আচঁল টেনে ঘুমটা দিয়ে দেয় ।সেহের এবার ও কোন রিয়েক্ট করে না ।তারপর আফিয়া সেহেরকে নিজের সাথে নিচে নিয়ে যায় ।

সিড়ি দিয়ে সেহেরকে নিচে নামতে দেখে মিহি বেগম সোফা থেকে উঠে ঐদিকে এগিয়ে যায় সেহেরকে নিয়ে এসে ছেলে পক্ষের সামনাসামনি বসায়। সেহের নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে ।
হঠাৎই সামনে থেকে এক মহিলা বলে

-“বাহ্ আমার মাকে তো বেশ মিষ্টি লাগছে !”

কন্ঠটা সেহেরের বেশ পরিচীত মনে হচ্ছে আগে কয়েকবার সে শুনেছে এই কন্ঠ মাথা তুলে তাকাতেই দেখে আরহামের মা বসে আছে পাশেই আরহাম বসে আছে ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ।এসব দেখে যেন সেহের আসমান থেকে পরে । কি দেখছে এসব ?
আরহাম আর তার পরিবার এখানে কেন ?
তাহলে কি আরহামই পাত্র !
সেহের মায়ের দিকে তাকাতেই তার মা ইশারা করে চুপ থাকতে ।

আরহামের মা মুচকি হেসে বলে

-“মেয়ে তো আমাদের আগের থেকেই পছন্দ আর সব কিছু যেহেতু পূর্বেই ঠি ক ছিলো আর এখন এখানে সবাই উপস্থিতও আছে তো আমরা চাইছিলাম আজই আকদ করে রাখতে ।”

সেহেরের বাবা সম্মতি জানিয়ে বললো

-“জ্বি বেয়াইন আপনি ঠি ক বলেছেন ।আজ যেহেতু সবাই এখানে উপস্থিত আছে তো আজই আকদ হলে ভালে হবে পরে না হয় বড় করে অনুষ্ঠান করবো আকদের ।”

সবাই কথাটা শুনে বেশ খুশি হয়ে যায় ।আরহাম সেহেরের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে । আরহামের মা আরহামের হাতে আংটি দিয়ে বলে সেহেরকে পড়িয়ে দিতে ।আরহামে যেই আংটিটা পড়াতে যাবে তার আগেই সেহের নিজের হাত টান দিয়ে ছাড়িয়ে বেশ রেগে চেচিঁয়ে বললো

-“আমি এই বিয়ে করতে পারবোনা !”

সেহেরের কথায় হল রুমের সবাই বেশ অবাক হয়ে যায় ।বিষ্ময়ের চোখে সেহেরের দিকে তাকিয়ে থাকে ।মুহূর্তেই আরহামের মুখের সেই হাসি মিলিয়ে যায় রাগে কপালের রগ ফুলে উঠে ।

সেহেরের বাবা সেহেরের কাছে যেয়ে বলে

-“এসব তুমি কি বলছো সেহের ?
তুমিই তো বলেছিলে তুমি বিয়েতে রাজি !”

-“হ্যা বাবা আমি বলেছি আমি বিয়েতে রাজি কিন্তু এটা তো বলিনি আমি উনাকে বিয়ে করতে চাই ।”

-“কেন আরহামকে বিয়ে করতে তোমার সমস্যা কি ?সব দিক থেকে সে পার্ফেক্ট !”

-“কারন আমি ইয়াশ কে ভালোবাসি আর আমি শুধু তাকেই বিয়ে করবো ।”

সেহেরের কথায় যেন সবাই আসমান থেকে পরে ।সেহেরের বাবা রাগি গলায় বলে

-“এসব তুমি কি বলছো সেহের ? তোমার মাথা তো ঠি ক আছে ?
কে এই ইয়াশ ?”

সেহের শান্ত গলায় বলে

-“কানাডাই আমাদের পরিচয় হয় । ইয়াশ ও তার ফেমিলি কানাডায় থাকে । আমাদের সম্পর্কের ১ বছর চলছে যদি আপনাদের বিশ্বাস না হয় তাহলে ছোট আন্টির কাছে ফোন করে জেনে নিতে পারেন আন্টি ইয়াশ কে খুব ভালো করে চিনে ।”

সেহের আর ১ সেকেন্ড ও দেরী না করে উপরে চলে যায় ।সবাই তার যাওয়ার দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ।
আরহাম শান্ত দৃষ্টিতে সেহেরের দিকে তাকিয়ে তার প্রত্যেকটা কথা গভীর ভাবে শুনছিলো ।
সবাই ভীত চোখে আরহামের দিকে তাকিয়ে আছে কারন তার রাগ জ্বেদ সম্পর্কে সবাই অবগত ।
আরহাম কোন শব্দ না করে সেহেরের পিছু পিছু উপরে সেহেরের রুমের দিকে যায় ।
সেহের রুমে যেয়ে বেশ বিরক্ত নিয়ে কানের দুল গুলো খুলে বেডে ছুড়েঁ মারে যেই রুমের দরজা আটকাতে নিবে ঠি ক সে সময় কেউ বাহির থেকে আটকায় সেহের মাথা বের করে উকিঁ দিয়ে দেখে আরহাম রক্তলাল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে সেহের ভয়ে ভয়ে ডোক গিলে দরজা ছেড়ে দিয়ে এক পা এক পা করে পিছাতে লাগে ।আরহাম রুমে ডুকে ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে সেহেরের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার দিকে পা বাড়ায় ।

চলবে ……❤️

সামনে বড় ঝাটকা আসছে😴

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here